hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অন্য-পথের-কন্যারা

লেখকঃ Mrs. Carol. L. Anway M.S. Ed.

৩২
আমেরিকান সমাজে মুসলিম জীবন ধারা
জীবনের প্রতিটি দিক- ব্যক্তিগত নৈতিকতা, রাজনীতি ও ব্যবসায় বাণিজ্য ইত্যাদি, সবকিছুর ব্যাপারেই ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে- ইসলাম হচ্ছে জীবনের একটা ধরণ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘উম্মার ধারণাটা একটা সম্প্রদায়, যেখানে ইসলামিক নীতিমালা দ্বারা ঘটিত একটা সমাজে কেবল আত্মাহরই ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলামের দেয়া জীবন ধারার ভিত্তিতে, বাস্তবে জীবন কেমনভাবে যাপন করতে হবে, তার ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় ও আলোচনা ব্যয় হয়। মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই শিখে নেয়- তাদের কি করণীয়আর সেই সমস্ত করণীয়কে জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবে, সে ব্যাপারেও তারা সিদ্ধান্ত নেয়।

একজন মেয়ে যখন মুসলিম হয়ে যায়, তখন তার পোশাকের যে আমূল পরিবর্তন ঘটে, সেটাই পরিবারবর্গ এবং আত্মীয়দের জন্য, মেয়ের পরিবর্তন মেনে নেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কাছে মনে হয়, এ যেন তারা যা বেছে নিয়েছে তা প্রকাশের একটা চরম পন্থা। কিছু মেয়েদের বেলায় তারা নিজেরা ঢোলাঢালা কাপড় চোপড় পরা এবং নিজেদের ঢেকে চলার ব্যাপারটা খুব সহজেই গ্রহণ করেছে, এসবকে জীবন যাপনের এক বাস্তব অংশে পরিণত করেছে- অন্য কিছু মেয়েদের বেলায়, তা করা খুব কঠিন ছিল।

কোরআনের যে অংশ এই ঢেকে চলার কথা বলে, তা এরকমঃ

“বিশ্বাসী (পুরুষদের) মানুষদের বলুন, তাদের দৃষ্টি নত করতে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করতে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্পূর্ণ অবগত। আর বিশ্বাসী নারীদের বলুন তাদের দৃষ্টি অবনত করতে। আর তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করতে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করতে কেবল যা (স্বাভাবিক) সাধারণভাবে দেখা যায় তা ছাড়া এবং তাদের ওড়না বুকের ওপর টেনে রাখতে আর তাদের সৌন্দর্য, কেবলমাত্র তাদের স্বামী, অথবা তাদের বাবা অথবা স্বামীর বাবা, অথবা তাদের ছেলেসমূহ, বা তাদের স্বামীর ছেলেসমূহ বা তাদের স্ত্রীগণ বা ক্রীতদাসসমূহ যাদের তাদের ডান হাত অধিকার করে, বা ভৃত্যসমূহ যাদের জৈবিক চাহিদা নেই অথবা ছোট বাচ্চারা ছাড়া যেন আর কাউকে প্রদর্শন না করে। আর তারা যেন সজোরে পদাঘাত না করে, যাতে তাদের লুকানো সৌন্দর্য পরিস্ফুটিত হয়। আর আল্লাহর। কাছে সবাই ক্ষমা চাও, হে বিশ্বাসীগণ, যাতে তোমরা সফল হও।” [২৪ঃ৩০-৩১)

কিভাবে ঢেকে চলতে হবে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন ইসলামী দেশের ঐতিহ্য রয়েছে। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ঢিলেঢালা পরিচ্ছদ (পাতলা স্বচ্ছ কাপড় হবে না এবং দৈহিক কাঠামো প্রস্ফুটিত করবে না) যা হাত এবং মুখমন্ডল ছাড়া বাকী সবই ঢেকে রাখবে। কোন কোন দেশে মুখও ঢেকে রাখা হয়। কেউ ফুল আঁকা ঝলমলে রঙের বা জরির কাজ করা ওড়না বা হিজাব পরে, আবার অন্যরা হয়তো কেবল সাদা, কালো, বাদামী, সবুজ ইত্যাদির গুরুগম্ভীর এক রঙা হিজাব বা ওড়না পরে (অথবা হাল্কা ছাপাও হতে পারে)। যারা এ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে, তারা কেবল একজন মেয়ে কিভাবে নিজেকে ঢেকে রাখে, তা দেখেই বলতে পারবে মেয়েটি কোন দেশের। তবে সব মুসলিম মেয়েই যে একখানা রুমাল দিয়ে মাথার চুল ঢেকে রাখবে তা নয়- কিন্তু বেশীর ভাগই দ্র পোশাক-আশাক পরতে চেষ্টা করে।

হিজাব পরা সহজ ছিল, কিন্তু মানুষজন প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো আমার কোন ধরনের অসুখ রয়েছে কিনা। এটা মনে হতো যে, তারা ধরেই নিচ্ছে- আমি আমার চুল হারিয়েছি এবং আমি আমার চুলবিহীন মাথাকে ঢেকে রাখছি। তারপর আমি যখন ধর্মীয় কারণটা ব্যাখ্যা করলাম, তখন তারা বলে- “তুমি বলতে চাও আমি আর কখনোই তোমার সুন্দর চুল দেখতে পাবো না?” ব্যাপারটা এমন ছিল যে, আমার নিজের ধর্ম পালন করার আমার ব্যক্তিগত মত যেন তাদের একটা সুখ অথবা সুবিধাকে হরণ করছে। আর তারা তা মেনে নিতে চাইছে না। তারা আসল ব্যাপারটাই বুঝতে অক্ষম।

মুসলিম হবার আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে, আমি আমার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়েছি। হিজাব বা ইসলামিক পোশাকই ছিল সংঘাতের মূল বিষয়। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য একটা সার্বক্ষণিক মনে করিয়ে দেয়ার এবং বিব্রত বোধ করার ব্যাপার। আমি যদি মুসলমান হতাম অথচ না ঢেকে থাকতাম, তাহলে আমার মনে হয় তারা সহজেই মেনে নিতে পারতো। আমি আশা করি তারা ইসলামকে বুঝবে এবং নিজে থেকেই পছন্দ করবে- আমার কথা ভেবে নয়।

একবার কিছুদিনের জন্য পালন করলে ইসলামিক ধর্মীয় আচারআচরণ মেনে চলা আমার জন্য আর কঠিন থাকেনি। হিজাব পরাটাই অভ্যস্ত হতে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছে। আমার জন্য এবং আমার চারপাশে যারা রয়েছে, তাদের জন্যও। আমি খুব ছোট্ট একটা শহরে থাকতাম এবং আমি সেখানে অনেক অচেনা দৃষ্টিতে চেয়ে দেখা অনুভব করতাম, আর অনেক মানুষই আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু আমাদের বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয়-শহরে বেশীরভাগ মানুষই এ সম্বন্ধে জানে এবং শহরে এখানে সেখানে হিজাব পরিহিত মেয়েদের দেখতে অভ্যস্ত। আমি হিজাব পরতে শুরু করি শীতকালে। তাই গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কোন ঝামেলা ছিল না। শীতে অনেকেই স্কার্ফ বা টুপি পরে থাকে। কিন্তু যখন গ্রীষ্মকাল এলো এবং আমি তখনও রুমাল (স্কার্ফ) পরে রইলাম, আমি জনমানুষের মাঝে আলাদা হয়ে গেলাম। কিন্তু ইসলাম মিশ খাওয়ার কোন ব্যাপার নয়- “যখন আমেরিকায় থাকবে, আমেরিকানদের মতো চলবে” এ ধরনের কোন ব্যাপার ইসলামে নেই। বরং ইসলাম হচ্ছে, তুমি যা বিশ্বাস কর এবং ঠিক মনে কর তার জন্য রুখে দাঁড়ানোর ব্যাপার, এমনকি অন্যরা যদি তা নাও করে, মুসলিম বা অমুসলিম তারা যাই হোক।

ধর্মীয় আচার-আচরণ জীবনে ধারণ করা আমার জন্য সহজই ছিল। নামাজ, রোজা ও মদ ত্যাগ করা, ইত্যাদি মেনে নিতে এবং এসবের সুফল ভোগ করতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। আমার সবচেয়ে বড় সগ্রাম মাথা ঢাকাহিজাব। এ সম্বন্ধে অবশ্য অন্য কেউ জানে না, যেহেতু আমি ব্যাপারটা গ্রহণ করেছি এবং ঢেকে চলার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি- শালীনতার কারণে।

শাহাদার ছ'মাস পরে আমি আমার প্রথম রমজান উদ্যাপন করি। হিজাবের ব্যাপারটা নিয়ে আমি চিন্তা ভাবনা করে আসছিলাম, কিন্তু ঐ পদক্ষেপ নিতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমি ইতোমধ্যেই শালীনতর ভাবে কাপড় পরতে শুরু করেছিলাম এবং সাধারণত কাঁধের ওপর থেকে একটা ওড়না পরে থাকতাম। আমি যখন এক মুসলিম বোনের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে বললেন, “তোমাকে শুধু ঐ ওড়নাখানাকে কাঁধের থেকে উঠিয়ে মাথায় টানতে হবে, আর তাহলেই তোমার ইসলাম সম্মতভাবে (কাপড়) পরিধান করা হয়ে গেল। আমি হিজাব পরতে প্রস্তুত, একথা প্রথমে অনুভব করিনি, কেননা আমি আমার বিশ্বাসে শক্তিশালী বোধ করিনি। আমি এর কারণ বুঝতাম, তার সাথে একমতও হতাম আর যে সমস্ত মেয়েরা হিজাব পরতো তাদের ভক্তির চোখে দেখতাম। তাদের এতে ধর্মপ্রাণ ও পবিত্র মনে হতো। কিন্তু আমার মনে হতো, আমি যদি তা করি, মানুষ তাহলে আমাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে । আর আমি তা সামলানোর জন্য তৈরি বা সমর্থ বলে মনে করলাম না।

রমজান আসার সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো এবং রমজানের প্রথম দিনে আমি ঘুম থেকে উঠে হিজাব পরে ক্লাসে যাই। আলহামদুলিল্লাহ্। এর পর থেকে আমি আর কখনো তা সরাইনি। রমজানের কিছু একটা আমাকে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করেছে এবং আমাকে মুসলিম হিসেবে গর্ববোধ করতে শিখিয়েছে। আমি অনুভব করলাম, আমি যে কারও প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।

ঢেকে চলা ছিল একটা খুবই ধীর গতিতে ঘটে চলা পরিবর্তন। প্রথমে জিন্স ছেড়ে লম্বা স্কার্ট এবং ফুলহাতা সার্ট ও ব্লেজার শুরু করি। তারপর যখন আমার প্রথম বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলো আমি ঠিক করলাম আমি লম্বা কাপড়ের সাথে ওড়না পরবো। আমি যেভাবে আমার কর্মস্থলে পোশাক পরতাম (গ্রীষ্মকালে ফুলহাতা ও জ্যাকেট) তাতে যে সব দৃষ্টি ও প্রশ্নের উদ্ভব ঘটতো, সেগুলোকে সামলে চলা খুবই কঠিন ছিল। সেজন্য সম্পূর্ণ ঢেকে চলার পর্যায়ে যাবার আগে আমি সময় নিয়েছি। একবার যখন সম্পূর্ণ ঢেকে চলতে শুরু করলাম তখন খুবই অস্বস্তি লাগতো আর অন্য সবার চেয়ে নিজেকে এতো পৃথক মনে হতো যে, আমি প্রায় হিজাব বাদই দিতে বসেছিলাম। যেন সবার কাছে প্রমাণ করতে (এমনকি অজানা জনদের কাছেও) যে আমি তখনও সেই আগের মানুষটিই ছিলাম। কিন্তু আমি হিজাব বজায় রেখেছি এবং স্বাভাবিকভাবেই তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। এখন কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে বা আমাকে নিয়ে পি করলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়, কিন্তু তাতে আরও বেশী করে ঢেকে চলার ইচ্ছাই হয় আমার। আমার ঢেকে চলার তিন বছর হলো।

"HIJAB DEFINITION AND DISCRIMINATION" ISLAMIC SISTERS INTERNATIONAL CUT CTCT FORTE (JANUARY '94) আলোচ্য বিষয়। কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হিজাবের জন্য বৈষম্যের শিকার হবার অভিযোগ করেছেন বহু মহিলা। কারো কারো জনসমক্ষে বিদ্রুপ, ঠাট্টা বা নাম ধরে’ (বিদ্রুপাত্মক) ডাকাডাকির ব্যাপার সামলানোর কষ্ট হয়েছে। একজন বলেছেন, তার মতে অমুসলিম মেয়েরাই মাথা ঢাকা দেখলে বেশী ক্ষেপে যায়, অমুসলিম পুরুষদের চেয়ে। এই সমস্ত রচনায় মেয়েরা হিজাবের ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উৎসাহিত করেছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অবশ্য করণীয়' বা 'ফরজ' কথাটাও ব্যবহৃত হয়েছে।

ম্যাগাজিনের সম্পাদিকা, যারা হিজাব পরে তাদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করার বা সরিয়ে রাখার যে পেশাগত প্রথা চলে আসছে, তার অবসান ঘটানোর জন্য সব বোনদের আন্দোলনে নামার আহবান জানিয়েছে এবং আমেরিকা বা কানাডায় বসবাস কালে যে সমস্ত অধিকার প্রাপ্য এবং নিশ্চিত বলে ধরা হয়, সেগুলো আদায়ের জন্য কাজ করার ডাক দিয়েছে। একটা তারিখ ঠিক করা হয়, যেদিন বোন হালাল এবং ইসলামিক পোশাক পরে তাদের দৈনন্দিন কাজে যাবেতারপর কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটলে, তা স্থানীয় সিনেটরকে লিখে বা ফোনে জানাবে। অথবা জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে লিখে বা ফোনে জানাবে- এভাবে এসবের প্রতিবাদ করা হবে এবং সঠিক স্থানে পিকেটিং এর ব্যবস্থা করা হবে। হিজাব ব্যবহার করা মেয়েরা যে শুধু হিজাব পরার পর তাদের অর্থবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনাই দিয়েছে তা নয়, কখনো কখনো যে নৈরাশ্য তাদের অনুভব করতে হয়, তার কথাও বলেছে। অনেক ধর্মান্তরিত মুসলিম মেয়েরা এই পশ্চিমা পরিবেশেও হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা মুসলিম সংসার প্রতিষ্ঠা করছে আর তারা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন যে, ইসলাম নারী হিসেবে তাদের যে অধিকার দেয়, তা যেন সত্যি সত্যি তাদের জীবনে বাস্তবায়িত হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের কিছু কাহিনী এখানে তুলে ধরা হলো।

ইসলামিক অনুশাসনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে হিজাব । আমার একটা অধিকার রয়েছে, একজন নৈতিক নারী হিসেবে গণ্য হবার এক টুকরো মাংস (চোখ দিয়ে গিলে খেতে চাওয়া) হিসেবেই কেবল নয়। মানুষজন আমার সাথে কথা বলার সময় আমার চোখে তাকায়। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, আমাকে ভদ্র মহিলা হিসেবে গণ্য করা হয়। এরকম মানুষ অবশ্য সব সময়ই কিছু থাকে, যারা আমাকে সমালোচনা করতে ঝাপিয়ে পড়ে। ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ, এমন গুটি কয়েক লোক না থাকলে, আমি কাজে যেতে আরো উৎসাহিত বোধ করতাম।

আমরা এমন একটা মুসলিম লোকালয়ে বাস করি, যেখানে সবাই একে অপরের সাথে দৃঢ় এবং নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। আমি শিশু উন্নয়নে ডিগ্রী প্রাপ্ত। আমি অনেক চাকরিই করেছি- সচিব থেকে শুরু করে স্কুলপূর্ব শিক্ষিকার- আমার হিজাব নিয়ে কোন সমস্যা ছাড়াই। আমি আমাদের জনগোষ্ঠীতে কর্মরত এবং এখনো স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করি।

হিজাবের জন্য অনেক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। নিশ্চিতভাবে, আমি এমন কোন চাকরি করতে পারবো না যাতে জনসংযোগের ব্যাপার রয়েছে।

মুসলিম নারী হিসেবে, আমার জীবনে, যে সমস্ত বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেগুলো ইসলাম বা মুসলিমদের তরফ থেকে আসেনি- এসেছে সেই সমাজ থেকে যেখানে আমরা বাস করি। আমেরিকায় একজনের মনে হতে পারে যে তার অবস্থা স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে যাওয়া মাছের মতো প্রতিনিয়ত হিজাবের ব্যাখ্যা দেয়া তেমন একটি ব্যাপার। হিজাবের জন্য আমাকে চাকরি দিতে অস্বীকার করা হয়েছে এবং এ ছাড়াও হিজাবের জন্য প্রকাশ্য বৈষম্যের শিকার হয়েছি আমি। সে যাই হোক, আমি হিজাবের জন্য সত্যি সত্যি কৃতজ্ঞ। এটা এমন একটা মুক্তি দান করে নারীকে, যা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলনরত মেয়েরা কখনোই জানবে না। আমি এরকম একটা স্পষ্ট এবং শক্তিশালী উপায়ে ইসলামকে প্রকাশ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করি। কেননা আমি যখনই বাইরে যাই, আমাকে দেখামাত্র বোেঝা যায়, আমি একজন মুসলিম।

আমার নারী জন্মের ধারণাই বদলে গিয়েছে। আমি টাইট প্যান্ট ও মিনি স্কার্টে আর স্বাধীনতা খুঁজে পাই না, যা হিজাব এবং শালীনতার মাঝে পাই। আমি এখন আর মনে করি না যে, সমান অধিকার লাভ মানে নারী ও পুরুষদের এক হয়ে যেতে হবে বরং তাদের এমন ভূমিকা রয়েছে যা নিজ নিজ প্রকৃতির জন্য একান্তভাবে মানানসই। একই সময় আমাদের সবার নিজস্ব ব্যক্তিগত মেধা রয়েছে। (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) এবং তার বিকাশের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

আমি ভাবি, অমুসলিমরা যদি বুঝতে যে হিজাব একজন মুসলিম নারী হবার ব্যাপারে একটা ছোট্ট অধ্যায় মাত্র। এটা খুবই খারাপ যে বেশীর ভাগ মানুষই “মলাট (পোশাক) দেখে বই (নারী) এর বিচার কর” নিয়মে বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা পোশাকের ধরণ দেখে ইসলামকে বিচার করে। যে সমাজ দাবী করে যে, তারা নারীদের জন্য এক অধিকতর স্বাধীন জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেখানে নারীদের প্রতি আমেরিকান পুরুষদের মনোভাব ঠিক তার উল্টোটাই করে মেয়েদের যৌন প্রতীকের বৈশিষ্ট্য দিয়ে অত্যন্ত নীচু অবস্থায় নামিয়ে দেয়া হয়। হিজাব পুরুষ কর্তৃক যৌন অভিলাষের দৃষ্টি দিয়ে নারীদের দেখার সম্ভাবনা দূর করে আর এও দাবি করে যে, একজন নারীকে যেন বস্তু হিসেবে না দেখে ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।

জরিপে মাত্র একজন মেয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, সে নেকাব পরে অর্থাৎ চোখ ছাড়া মুখমন্ডলের বাকি অংশ ঢেকে চলে। বর্তমানে সে একটা মুসলিম দেশে থাকে, কিন্তু সেখানে যাবার আগেও সে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় মুখ ঢেকে চলতো।

আমি মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব ঢেকে চলি- দস্তানা, মোজা, পুরো সরঞ্জাম সামগ্রী। বোরখার নীচে আমি চুল ঢাকার আরেকটি উপাধান পরি। আর মুখ ঢাকার জন্য নেকাব ব্যবহার করি। আমি অনেক সমস্যা আশা করেছিলামতাই বিশ্বাস করতে কষ্টই হয় যে, ব্যাপারটা আমার জন্য এতো সহজ হয়ে গেছে। আমি এমনকি সাড়ে তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রে মুখ ঢেকে চলাফেরা করেছি, কোন সমস্যা ছাড়াই। অনেক মানুষই ইসলাম সম্বন্ধে জেনেছে, কারণ তারা নেকাব সম্বন্ধে কৌতূহল বোধ করেছে। একটু গরম লাগে যদিও, কিন্তু তাপমাত্রা যখন joo°F বেশী হয়, তখন তো সবই পরতে গরম লাগে। আমি অন্য যে কোন পরিচ্ছদের চেয়ে এটাকে অনেক বেশী পছন্দ করি। বিশেষতঃ সেই সব মানুষ, যারা নেকাব এবং পরিচ্ছদের কারণটা বোঝেন তারা এ ব্যাপারে সমর্থন ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই একটা বিশেষ সমাদর লাভ করি, এখানে এবং যুক্তরাষ্ট্রেও। বৃদ্ধা মুসলিম মহিলারা আমার জন্য যে কোন কিছু করতে রাজী, অ্যারোপ্লেনে আমি সব সময় ভালো আসন পাই, মানুষজন লাইনে সব সময় আমাকে সামনে দাঁড়াতে দেন এবং কখনো-সখনো এদেশের দোকানদাররা আমাকে বিনামূল্যে এটা সেটা উপহার দেন।

DAWAH হচ্ছে সেই শব্দ যা খষ্টান অভিধানের "wITNEssING" বা "EVENGELISM" এর স্থলে ব্যবহৃত হয় (বাংলা দাওয়াত, ধর্মের পথে কাউকে আহবান করা)। হিজাব প্রায়ই একজন মহিলার জন্য, ইসলাম সম্বন্ধে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। কেননা একজন পুরুষের চেয়ে তাকেই প্রশ্ন করার সম্ভাবনাটা বেশী। যেমন আমাদের জরিপের একজন মেয়ে লিখেছে- “আপনি আমাদের এক মাইল দূর থেকেও দেখতে পাবেন, কিন্তু একজন পুরুষকে দেখে সত্যিকার অর্থে বোঝা যাবে না সে মুসলিম কিনা।

কি অনুমোদিত আর কি নিষিদ্ধ, তা বাস্তবে প্রয়োগ করা আমি শিখেছি এবং এখনো শিখছি। ঢেকে চলা অভ্যস্ত হওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু এখন আমি একজন গর্বিত মুসলিম এবং সঠিক সময়ে, আমি মনে করি DAWAH বা মানুষকে ধর্মের দিকে আহবান করা হবে আমার জীবনের পন্থা। আমাকে বৈষম্যমূলক মনোভাবকে তুচ্ছ করতে হবে, অথবা সেগুলোকেই উল্টোভাবে আমার বিশ্বাসকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কারণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

পোশাক আশাক ছাড়াও গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচার-আচরণ যা ইসলামিক সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করবে (বিভিন্ন মুসলিম দেশের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এবং পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পছন্দের প্রভাব অনুযায়ী) সে অনুযায়ী জীবন যাপনে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণভাবে পুরুষ ও নারীর মাঝে ব্যবহার ও পোশাক আশাকের শালীনতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ এবং নারী একে অপরের সাথে কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়, একে অপরকে প্রলুব্ধ করা বা ব্যক্তিগত ইঙ্গিতবহ কথাবার্তা যাতে না হয় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রেখে। পূর্বে বর্ণিত কোরআনের অংশ অনুযায়ী যারা নিকট আত্মীয় নয়, এমন পুরুষ এবং নারীরা চেষ্টা করবে যেন দু’জনের তৃতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতিবিহীন অবস্থায় একত্রে অবস্থান করা হয়।

মুসলিম হবার পর, মেয়েদের অনেকেই, চাকরি করার চেয়ে ঘরে থাকতেই পছন্দ করেছে। বিশেষতঃ তাদের যদি বাচ্চা থেকে থাকে। অন্যরা হয় এখনো কাজ করছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। প্রত্যেক মেয়েকেই একটা ধারণা লাভ করতে হয়, যে সে তার অবস্থানে কিভাবে নিজেকে একজন মুসলিম নারী হিসেবে প্রকাশিত করবে।

আমি আমার জীবনে যে সমস্ত পরিবর্তন এনেছি, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে পুরুষদের সাথে আমি কিভাবে কথা বলছি, সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। আমাকে প্রজ্ঞার সাথে ব্যাপারটা সামলাতে হয় কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে আলাপ পরিহার করে।

আমি আগের মতো কোন পুরুষ বন্ধুকে সম্ভাষণ জানাতে পারি না অথবা চলতে চলতে দেখা হয়ে গেলে, দু’এক কথা আদান-প্রদানের জন্য থামতে পারি না। এমনকি আমার স্বামীর জন্য তার কর্মস্থলের বাইরে গাড়িতে বসে যখন অপেক্ষা করি, তখন তার বন্ধুদের বা সহকর্মীদের সাথে আলাপ-সালাপও হবার নয়।

ধর্মীয় আচার-আচরণ কঠিন নয়, তবে কিছু পশ্চিমা ধারণা ভাঙ্গাটা কঠিন এবং তা আপনাকে আপনার ধর্মীয় কর্তব্য থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ ঃ একজন মুসলিম অভদ্র হবে না এবং তার বিশ্বাষে,সে দৃঢ় হবে। একজন ভালো মুসলিম হওয়া আমার কাছে কঠিন মনে হয়, যখন আমি কাউকে (যারা অভদ্র) চলে যেতে বলতে চাই। এছাড়া পশ্চিমা টিভিও ইসলামিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হতে পারে। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টের।

আমার জীবনের প্রথম রমজান মাসে, আমরা একত্রিত হতাম এবং শাইখ (বয়স্ক জন বা আধ্যাত্মিক মুরুব্বী) তখন নানা বিষয়ে বয়ান করতেন। এই সমস্ত বয়ানগুলো এতো পবিত্র এবং অর্থবই ছিল যে, সেগুলো মানুষের ভিতরের পঙ্কিলতার বিপরীতে, স্পষ্টতঃই আলাদাভাবে জ্বলজ্বল করতো। আর আমি মনে করি, এই বাস্তবতাই আমাদের ইসলামিক অনুশীলনকে সীমাবদ্ধ করে রাখছে। নবী মুহাম্মদ (দঃ)-এর উদাহরণ অনুযায়ী অনুশীলন ও জীবন ধারণ কিভাবে এতো দুরূহ হতে পারে? মনে হয়, আমাকে অনুধাবন করতে হবে যে, আমেরিকান নৈতিকতা ইতোমধ্যেই এতো নীচে নেমে গেছে। আমার নিজের বাবা-মাকে আমার ধন্যবাদ জানানো উচিত আমাকে একটা সুন্দর এবং মৌলিক নীতি আশ্রিত উপায়ে বড় করার জন্য- যেখানে দুর্নীতি ও ঈর্ষা, রাগ ও ঘৃণা, ধৈর্যহীনতা ও অন্যান্য মানবিক কুটিলতা উপস্থিত ছিল না।

আমি যখন মুসলিম হলাম, তখন আমার মাঝে আগে থেকেই যে বিশ্বাসসমূহ সঞ্চিত ছিল, তা প্রকাশের নির্দেশিকা পেলাম। তবু পরিবর্তনগুলো বেশ শক্তই ছিল। ক্লাস বা কাজ থেকে বেরিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া কঠিনই ছিল। যখন আমার পোশাক বদলে গেল (মাথা ঢাকা শুরু করলাম), তখন আমি অনেক বন্ধু হারালাম । এছাড়া পুরুষ বন্ধুদের ব্যাখ্যা করতে হলো যে, আমি আর তাদের সঙ্গে আগের মতো দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবো না। আমাকে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনের শ্যেন দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়েছে, যারা আমার পরিবারকে বলেছে- আমি নরকের আগুনে পুড়বো।

আমি যত বেশী ধর্মের মাঝে প্রবেশ করেছি, ততই নির্মল এবং মিতবাক হয়েছি। আমি খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছি। মুসলিম হবার আগে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু পরে আমি বেশ তাড়াতাড়িই স্ত্রী এবং মা হয়েছি।

ইসলাম আমাকে এমন একটা অবস্থা উপহার দিয়েছে, যে অবস্থায় আমি সেই সমস্ত বিশ্বাসসমূহ- যা আমার মাঝে আগে থেকেই ছিল- যেমন শালীনতা, দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে। ইসলাম আমাকে বিয়ে এবং দুইটি সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে সুখী হবার পথও দেখিয়েছে। ইসলামের আগে আমার নিজের সংসার হবে এমন কোন রকম আকাথাই আমার ছিল না। কারণ আমি বাচ্চাদের অপছন্দ করতাম।

যত খারাপ সময়ই আসুক না কেন, এখন আমার একটা অবলম্বন রয়েছে। আমি কখনো নিঃসঙ্গ বা হতাশা বোধ করি না, কারণ আমি জানি আল্লাহ আমার কাছেই আছেন এবং আমি জানি তিনি আমাকে আরো শক্তিশালী করে তোলার জন্য পরীক্ষা করছেন। মুসলিমদের মাঝের ভ্রাতৃত্ববোধ, খারাপ সময়ে আমার জন্য সান্ত্বনা হিসেবে কাজ করেছে।

বাড়িতে মেয়েদের ভূমিকা, ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার, আর বাচ্চাদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব ও বাড়ি গুছিয়ে রাখার দায়িত্বকে মুসলিম নারীরা খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকে। প্রায়ই মায়েরা বাচ্চাদের জন্য বাড়িতেই স্কুল খোলে। কিছু ধর্মান্তরিত মেয়েদের বাবা-মায়েরা মেয়েরা বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেনে বিচলিত হন। তারা ভয় পান যে, এর ফলে হয়তো একটা মেয়ের প্রতিভাসমূহের পূর্ণ বিকাশের সুযোগ থাকবে না। এই ভয়টা আরো প্রকট হয়, যেখানে মেয়ের বাবা-মা, তার পড়ালেখার খরচ অতীতে বহন করেছেন।

একজন মুসলিমকে বিয়ের পর (এমনি অনেক ক্ষেত্রে, একজন মুসলিমের সাথে পরিচিত হবার পরই), মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই জেনে যায় যে একজন মুসলিমকে শূকরের মাংস বা শূকর মিশ্রিত কোন খাদ্য দেয়া যাবে না। প্রায়ই দেখা যায়, ধর্মান্তরিত হতে না হতেই মেয়েরা শুধু মাত্র হালাল মাংস এবং খাবার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। হালাল মানে হচ্ছে ইসলামিক নিয়মে জবাই করা। মুসলিম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকলে এসব মেনে চলতে, কোন দম্পতির বেশ একাগ্রতা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়- কেননা হালাল মাংস সবখানে পাওয়া যায় না এবং যখন পাওয়া যায় তা অন্য মাংসের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়। মেয়েরা প্রায়ই তাদের স্বামীদের পছন্দের এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারসমূহ রান্না করতে শেখে।

শুধুমাত্র মুসলিমদের জবাই করা হালাল মাংস খাবার কোরআনিক আদেশ মানা সহজই ছিল। আমি জানতাম বাইবেলও শূকর খেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করতাম- খৃষ্টানরা কেন ঐ নিয়ম মানে না। আমার স্বামীর নিজ হাতে জবাই করা এবং ইসলাম সম্মত উপায়ে হালাল মাংস খেতে আমার এক ধরনের গর্ববোধ হয়, কারণ সে আল্লাহর আদেশ পালন করছে এবং আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। আমরা অন্য মুসলিমদের সাথে মাংস ভাগ করে খেতাম। আর আমার ভালো লাগতো এই ভেবে যে, অন্য মুসলিমদের আল্লাহর নিয়ম মানতে সাহায্য করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা।

আমার পরিবারের কাছে বেড়াতে যাবার একটা অস্বস্তি ছিল- কেবল হালাল মাংস খাবার আমাদের সংকল্প। আমরা যেহেতু যে কোন কিছু খেতেই একটু অস্বস্তিবোধ করতাম, আমরা আমাদের খাবার সাথে নিয়ে যেতাম। যদিও তাদের জবাই করার ইসলামিক নিয়ম সম্বন্ধে আমরা ব্যাখ্যা করেছি, তবু আমাদের নিজের খাবার নিয়ে যাওয়াটা তাদের ব্ৰিত করতো। তারা মনে করতো এটাও আরেকটা প্রত্যাখ্যান, বুঝিবা তাদের খাবার আমাদের উপযোগী নয় বা অপরিষ্কার বলে মনে করছি আমরা। যাহোক তারা যখন আমাদের সাথে দেখা করতে আসে, আমি যা রান্না করি- তাই খায় তারা, আর আমাদের সময়টাও অধিকতর খুশী এবং স্বল্প অস্বস্তির মধ্যে অতিবাহিত হয়।

ধর্মান্তরিত মেয়েরা যখন তাদের মুসলিম হিসেবে (ধর্ম) বিশ্বাসের যাত্রায় সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এবং উন্নতি লাভ করতে থাকে, তখন তারা নিজ জীবন ধারায় যে সমস্ত পরিবর্তন আনে, এগুলো তার মাত্র কয়েকটি। যাত্রার প্রথম অংশে মনে হয় মেয়েরা একে অপরকে সহায়তা ও সমর্থন করে থাকে। বিভিন্ন মুসলিম উপদলের কাছে, ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ যদিও এক- কিন্তু কিভাবে এই সমস্ত আচার-আচরণকে দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারে ভিন্নতা রয়েছে। এ সমস্ত ধ্যান-ধারণাকে খুঁটিনাটিসহ কোন পর্যায় পর্যন্ত মানা হবে এবং কিভাবে এসবের ব্যাখ্যা করা হবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এবং সভ্যতা থেকে সভ্যতায় ভিন্নতর হতে পারে।

মিসর এবং সৌদি আরবে অবস্থান আমাকে বেশ প্রবলভাবেই প্রভাবিত করেছে। আর এ থেকে আমি জেনেছি যে, ইসলামিক ধ্যান-ধারণার প্রয়োগ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভিন্ন হয়। কিন্তু সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনে আমরা ধর্মকে কিভাবে ধারণ করছি এবং নিশ্চিত করা যে, সব সময় আমরা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই ধর্মের পথে এগুবো ।

মুসলিমদের কাছে ‘ঠিক কাজ করাটা খুবই জরুরী, যতক্ষণ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কোন কাজটি ঠিক। তারা ইসলাম ধর্মকে একটা সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা বলে মনে করে, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র নিয়েই যার দিক-নির্দেশনা রয়েছে- ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনসহ। মেয়েরা, তাদের বেছে নেয়া বিশ্বাসের জগতকে ভালোভাবে জানার এবং বোঝার জন্য তথ্য অনুসন্ধান করতে অনেক এবং বিভিন্ন সূত্রের সাহায্য নিয়েছে। এইসব মেয়েরা অন্ধভাবে কিছু মেনে নিয়েছে বলে মনে হয় না, বরং জানতে এবং প্রশ্নের উত্তর পেতে তারা অনেক সময় ব্যয় করেছে, যাতে তারা অধিকতর জ্ঞানসমৃদ্ধ উপায়ে ধর্মের অনুশীলন করতে পারে।

আমি বইয়ের মাধ্যমে এবং অন্য মুসলিমদের কাছ থেকে শিখেছি, কিভাবে মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে হয়। ভালো বইসমূহে কি পাওয়া যাবে আর যাবে না, কিভাবে একজন পোশাক পরবে, কি কি বস্তু কারো ঘরে থাকা উচিত নয় ইত্যাদির বর্ণনা থাকে। একজন নতুন মুসলিমকে বই এবং অন্য মুসলিমদের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো জেনে নিতে হয়। কারণ কোরআন এবং হাদীস থেকে সবকিছু জানতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি অবশ্যই কোরআন ও হাদীস পড়েছি, অন্ধভাবে কিছু গ্রহণ করিনি। কেউ আমাকে যখন কিছু বলেছে, কখনো আমি চেয়েছি, নিজেই চিন্তা করে দেখতে যে ব্যাপারটা পড়ে আমিও ঐ একই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাই কিনা।

কিভাবে মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ করতে হয়, তা আমার সৌদি বান্ধবীই আমাকে শিখিয়েছে। কিভাবে নামাজ পড়তে হয়, কিভাবে অজু করতে হয় এবং কিভাবে অন্য মুসলিমদের সাথে সামাজিকতা রক্ষা করতে হয়। বিয়ে-শাদী ও সন্তান থেকে শুরু হাদীস ও ফিকহ পর্যন্ত আমার সব ইসলামিক প্রশ্নের উত্তরই সে দিয়েছে। সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে কোরআনের একখানা আরবী-ইংরেজী সংস্করণসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামিক বই আমি সংগ্রহ করেছিলাম। জীবনযাত্রা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করা আমার জন্য সহজই ছিল। কারণ আমার পূর্ববর্তী জীবনও খুব একটা লাগামছাড়া ছিল না। আরবী ভাষাটাই খুব সম্ভবতঃ আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার ছিল। নামাজ পড়া, রোজা রাখা ও হিজাব পরা, এ সবই আমার জীবনে সহজভাবেই এসেছে।

আমাকে সত্যি সত্যি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে শিখতে হয়নি, কারণ আমার জীবন যাত্রা, আগে থেকেই একজন মুসলিমের জীবন যাত্রাই ছিল। আমি নৈতিক বিবেচনায় পোশাক পরতাম, শূকর খেতাম না, মদ্যপান করতাম না আর আমার আশপাশের মানুষের প্রতি আদর্শ যে আচরণ আমার হওয়া উচিত, তাই করতাম। সত্যি কথা বলতে কি আমাকে মুসলিম হতে কেউ সাহায্য করেনি। আমি নিজে থেকেই শিখেছি। আমাকে শুধু আমার ছুটির ও উপাসনার দিন বদলাতে হয়েছে। এটা আমার জন্য সহজই ছিল, কারণ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখন তা আমার জন্য জীবনের বিধান হয়ে যায়। আসলে আমি এই ব্যাপারটা উপভোগ করি যে, ইসলাম একজন অনুশীলনরত মুসলিম হওয়াটাকে কত সহজ করে দেয়।

একজন মুসলিম হিসেবে আমি জীবন যাপন করতে শিখেছি অন্য মুসলিমদের কাছ থেকে। আমরা খুব জ্ঞানী দুই দম্পতির সাক্ষাৎ লাভ করেছিলাম, যারা আমার স্বামীকে এবং আমাকে এমন সব ব্যাপারে শিক্ষা দিয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জানা আবশ্যক। ইসলামের বহু ব্যাপার যদিও জটিল নয়, কিন্তু একটা অনৈসলামিক সমাজ সেগুলোকেও জটিল বলে মনে করায়। আমি এও মনে করি যে, এদেশের কোন অংশে কে বাস করছে, তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। বেশীর ভাগ বড় শহরে, বিশেষ করে উত্তরে, বড় আকারের মুসলিম বসতি রয়েছে। এতে হালাল মাংসের মতো জিনিসগুলো পেতে সুবিধা হয়। এসব অঞ্চলে অমুসলিমরাও মুসলিম বেশভূষা এবং কিছু ইসলামিক রীতিনীতি সম্বন্ধে অবগত; আর তাই তারা বোধহয় অপেক্ষাকৃত বেশী সহিষ্ণু এবং আমাদের উপস্থিতিতে কম আতংকিত। আমি দেখি, মুসলিম পরিবারসমূহের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখলে অনেক মুশকিলই আসান হয়ে যায় ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন