hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অন্য-পথের-কন্যারা

লেখকঃ Mrs. Carol. L. Anway M.S. Ed.

৭৫
আমার আদি পরিবার (Family of Origin)
একজন ‘অনুশীলনকারী মুসলিম হওয়াটা আমার বাবা-মার সাথে আমার সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। ইসলামের প্রতি আমার বাবা-মার ধারণা বেশ নেতিবাচক এবং তারা এটাকে একটা অত্যাচারী এবং গোঁড়া ধর্ম বলে মনে করেন। সাধারণভাবে তারা কোন ধর্মকেই মহান কিছু মনে করেন না, আর বিশেষভাবে তারা ইসলামকে নারীদের প্রতি খুবই অত্যাচারী বলে মনে করেন। তবুও আমার একমাত্র সহোদরা বোন আমার সিদ্ধান্তকে বেশ সমর্থন করে থাকে।

আমি আশা করি, ভবিষ্যতে কখনো আমি হয়তো আমার বাবা-মার সাথে একত্রে বসে ইসলাম এবং আমার জীবনে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। আমরা অনেক পরেই এই আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু তাতে খুব সামান্যই অগ্রগতি লাভ করতে পেরেছি। মুসলিম হওয়াটা যে আমাকে প্রশান্তি ও আনন্দ দিয়েছে এবং আমার জীবনকে অনির্ণেয় এক গভীরতা দিয়েছে- এটা বুঝতে তারা অক্ষম বলে মনে হয়। আমি যা, তা থেকে ইসলাম কোন কিছু কেড়ে নেয়নি, বরং তার সাথে শুধু নতুন মাত্রা যোগই করেছে। আমার এই সিদ্ধান্তকে আমার মাবাবা কেবল তাদের ও আমার ঐতিহ্যের প্রত্যাখ্যান বলে মনে করে থাকেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, আমি এক ধরণের সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ত্যাগ করেছি এবং সে জন্য তারা নিজেদের দোষ দেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, আমার ব্যাপারে তারা ব্যর্থ হয়েছেন- ব্যর্থ হয়েছেন আমাকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিতে এবং ব্যর্থ হয়েছেন আমাকে। নিজ সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণ আবদ্ধ রাখতে। আমি আশা করি, একদিন তারা আমার সিদ্ধান্তকে মেনে নেবেন- হয়তো বা তা তারা অনুধাবন করবেন না, কিন্তু অন্ততঃ তা মেনে নেবেন।

ইসলাম নিয়ে আমার এবং আমার মা-বাবার মাঝে অস্বস্তিকর অনেক বিষয় রয়েছে। যা কিছু বাহ্যত আমাকে (বা আমার সন্তানদের) ভিন্নরূপে (মুসলিম) প্রকাশ করে, তার সবকিছুই তাদের অপছন্দ। আমাকে বা আমার মেয়েদের নিয়ে জনসমক্ষে যেতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন, কারণ আমরা হিজাব (আমি) পরি অথবা শালীন পোশাক পরি (আমার মেয়েরা তাদের পোশাকের সাথে লম্বা প্যান্ট পরে থাকে)। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে মদ্যপান না করতে বলাতে তারা মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন। তারা ইতিপূর্বে তাদের সাথে মদ নিয়ে আসতেন। আমার মাথায় ওড়না থাকলে তারা চেষ্টা করতেন আমার ছবি না তুলতে। আমাদের বাচ্চাদের মুসলিম নাম তারা পছন্দ করেন না এবং আমাদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর এ নিয়ে তারা আমার সাথে প্রচুর বাক-বিতন্ডা করেছেন। আমার স্বামী এবং আমি যে জোর দিয়ে বলি, পরিবারের অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশী, তাতে তারা অসন্তুষ্ট বোধ করেন। তারা মনে করেন বাড়ি বসে থেকে (যদিও আমি পার্ট-টাইম কাজ করি। আর পরিবারমুখী হয়ে, আমি নিজেকে এক রকম সস্তায় বিক্রি করে দিয়েছি। তারা আমার একটা পেশাগত সমৃদ্ধি বা CAREER আশা করতেন। বিশ্বের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তারা অস্বস্তিবোধ করেন এবং সেটাকে তারা অবাস্তব ও আদর্শবাদী বলে মনে করেন। আমাদের খুব রক্ষণশীল মনে করলেও, আমরা রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই সঠিক বলে তারা মনে করেন। সত্যি বলতে কি, বেশীরভাগ সময়েই আমি নিশ্চিত হতে পারি না যে, তারা আমাকে কি ভাবছেন। কারণ তারা কখনই তা খোলাখুলি প্রকাশ করেন না। আমাদের মাঝে যে সমস্ত অস্বস্তিকর, বিস্ফোরক আর মতপার্থক্যসূচক আলাপ-আলোচনা হয়েছে তা থেকে আমি বুঝতে পারি যে, তারা আমার সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করেন না এবং জীবনের জন্য আমি যা কিছু বেছে নিয়েছি তা নিয়ে তারা হতাশ। যদিও কখনই তারা মনে হয় আমাকে বলতে পারেন না যে, কেন? আমি মনে করি তার কারণ হচ্ছে যে, আদর্শভিত্তিক, নৈতিক, শ্লীল এবং যুক্তিযুক্ত কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে তর্ক করতে তারা অপারগ- এবং এটা এমনই একটা বিষয়, যা ছোটবেলা থেকেই তারা আমাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন কেবল সেটাকে তারা ইসলাম নামে ডাকেননি)।

উৎসব উদযাপনের ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রথম সন্তানের বেলায় চেষ্টা করেছি, বাবা-মার সাথে CHRISTMAS উদযাপন করা চালিয়ে যেতে। আমরা ব্যাপারটাকে নানা-নানীকে তাদের উৎসব পালনে সাহায্য করা' বলে ব্যাখ্যা করতাম এবং ইসলামে নবী JESUS (Pbuh)-এর গুরুত্ব নিয়েও এ উপলক্ষে আলাপ করতাম। এটা অবশ্য অনেক কারণেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেনি। আমাদের বাচ্চা সত্যি সত্যি কোন কিছুর পার্থক্য বোঝার জন্য খুবই কম বয়সী ছিল তখন, অন্য সব CHRISTMAS উদযাপনকারীর মতো হবার স্বাভাবিক শিশুসুলভ বাসনা তাকে CHRISTMAS-এর প্রচলিত জনপ্রিয় ধারণার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। ‘আমরা বনাম ওরা’ ধরণের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ওর ভিতরে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও চাপ সৃষ্টি করে আমার মা-বাবা আমার ছেলের ভিতরে আমেরিকান আচার-আচরণ ঢোকানোর চেষ্টা করতেন। আমাদের পরবর্তী সন্তানদের জন্মগ্রহণের পর্বে আমরা বুঝতে পারলাম যে, তাদের বেলায় ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের কাম্য নয়, আর তাই আমরা পর্যায়ক্রমে CHRISTMAS-এর জন্য আমার বাবা-মার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত ছিল যা আমার বাবা-মাকে হতাশ এবং রাগান্বিত, দুটোই করেছিল। এখন তারা আমার বোনের স্বামী-সন্তানদের সাথে CHRISTMAS উদযাপন করেন।

আমরা, আমার বোন, বাবা-মা এবং তাদের বাবা-মায়ের মাঝে যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে CHRISTMAS কার্ড পাঠাই, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই এবং CHRISTMAS-এর দিন ফোন করে থাকি। রমজানের শেষে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও আমরা আমার পরিবারকে চিঠি বা কার্ড পাঠাই। আমার পরিবার CHRISTMAS-এ আমাদের কার্ড পাঠায়। আর আমার বোন রমজানে অনেকবার ফোন করে খবর নিয়ে থাকে। আমরা কেমন সময় কাটাচ্ছি। অন্য খৃস্টান উৎসবগুলো অবশ্য (যেমন EASTER) আগেও আমাদের পরিবারে উদ্যাপন করা হতো না, সুতরাং সেগুলো এখন কোন সমস্যা নয়। আমার মা HALLOWEEN উপলক্ষে (যা আমরা উদযাপন করি না, কিন্তু আমার মা-বাবার কথা ভেবে আমরা এটাকে এক ধরণের না দেখার চেষ্টা করি) VALENTINE'S DAY উপলক্ষে এবং ওদের জন্মদিন উপলক্ষে, তার নাতি-নাতনীদের কার্ড পাঠিয়ে থাকেন। আমরা আমাদের ইসলামিক উৎসবসমূহে আমার মা-বাবাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে খুবই ভালো লাগতো, কিন্তু তারা এই ধারণায় খুব স্বস্তি বোধ করেন না। তারা যখন আমাদের এখানে বেড়াতে আসেন, তখন আমরা যদি মুসলিম বন্ধুদের কোন সমাবেশে যেতে চাই, তবে তারা সেখানে যেতে চান না, আর তাই আমার বাবামাকে সম্মান দেখাতে ঐ সময় আমরা সাধারণতঃ বাড়িতেই থাকি, যদি না কোন কর্মকান্ডকে এড়িয়ে যাওয়া নিতান্ত অসম্ভব হয়।

আমরা যখন আমার বাবা-মার কাছে বেড়াতে যাই তখনও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, বেশীর ভাগের উৎসই হচ্ছে আমাদের জীবনধারাকে তাদের অনুমোদন না করা। বিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একেবারে আলাদা- রাজনীতি থেকে শুরু করে জীবনে স্বাধীনতা ও বস্তুবাদের ভূমিকা ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রেই। আমাদের অবশ্য বাবা-মায়ের সাথে অনেক সুন্দর সময়ও কাটে এবং আমরা তাদের সাথে একটা ঘনিষ্ঠ ও পরস্পরকে সম্মান-দেখানো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।

আমার স্বামী উভয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে আমার স্বামীর সাথে আমার পরিচয় ঘটে, যখন আমি কলেজে ছিলাম। তার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য আমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করেছিল সেগুলো ছিল তার উদ্যম, সততা, দয়াপরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, বুদ্ধিমত্তা আর সার্বিকভাবে তার চরিত্রের দৃঢ়তা। সে কে এবং কি ছিল তা সে জানতো, তবু সে বিনয়ী ছিল। তার চরিত্রের দৃঢ়তা এবং অন্যের প্রতি তার দয়া ও দানশীলতাকে আমি বিশেষ প্রশংসার চোখে দেখতাম। সে খুবই সহনশীল এবং দ্র ছিল, আর তথাপি তার ভিতরে শক্তি ও দৃঢ়তা ছিল।

আমার ইসলাম গ্রহণে আমার স্বামীর একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে, কারণ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সে সমর্থ ছিল, আর আমাকে ইসলাম এবং তার সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সে অনেক সময় ব্যয় করেছিল। তার সব ইসলামিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সে আমাকে সর্বদাই অন্তর্ভুক্ত করতো এবং ভাষা ও সংস্কৃতি এ দুটোরই ব্যাখ্যাকারী হিসেবে কাজ করতো। সে ইসলামকে আমার জন্য উন্মুক্ত করেছিল এবং ইসলামে আমার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভে আমাকে সাহায্য করেছিল। সে কখনই কোন পর্যায়ে আমাকে ধর্মান্তরিত হতে চাপ দেয়নি। সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণভাবে আমার নিজস্ব।

আমার পরিবার তাকে আমার বন্ধু হিসেবে খুব একটা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, তবে আমাদের বাগদানের পরে সব ঠিক হয়ে যায়। মানুষ হিসেবে তাকে তারা খুবই পছন্দ করে, তবে আমার মুসলিম হবার ব্যাপারে আমার মগজধোলাই করার জন্য তাকে তারা দোষারোপ করে থাকে। খুব সহজে প্রভাবিত হবার জন্য আমাকেও তারা দোষারোপ করে। আমরা অনুশীলনকারী মুসলিম হবার আগে পর্যন্ত আমার বাবা-মার সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। আমাদের ছোট শহরের আদালত ভবনে এক নাগরিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ইরানে আমাদের অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে (আত্মীয়দের মাঝে যারা ধর্মীয় মুরুব্বী’ তারা যাতে আমাদের হয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন। আমাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়েছিল। আমাদের নাগরিক আনুষ্ঠানিকতায় কোন ইসলামিক উপাদান ছিল না আর আমাদের ইসলামিক অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই মৌলিক ও বিবাহের চুক্তিপত্র, মতদান (ইচ্ছার ঘোষণা) এবং জনসমক্ষে আমাদের বিবাহের ঘোষণা।

আমার স্বামীর দেশ আমরা চেষ্টা করি ইসলামিক আদর্শ অনুযায়ী সংসার চালাতে এবং ইরানী সংস্কৃতি যেহেতু মূলতঃ ইসলামিক সংস্কৃতি, আমাদের সংসারে তার প্রতিফলন ঘটে। বাড়িতে আমরা ফাসেিত কথা বলি এবং প্রায়ই ইরানী খাবার খেয়ে থাকি যদিও TAC0, SPACHETTI এবং STIR-FRY-ও খুবই প্রিয় (ROAST ও HAMBURGER সহকারে)। ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য আমরা আপাততঃ যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাই, আর তাছাড়া আমাদের এদেশে শোধ করতে হবে এমন শিক্ষার্থী-ঋণও রয়েছে। আমরা অনুভব করি যে, আমরা আমাদের এখানকার দায়দেনা ভুলে যেতে পারি না, আর আমরা যদি ইরানে থাকতাম, তবে জীবন ধারণ করা এবং দেনা শোধ করা একসঙ্গে দুটো চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হতো। আমরা অবশ্য অপর একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাবার কথাও ভেবেছি। আমার স্বামী একজন ইরানী নাগরিক।

আমার স্বামীর পরিবার আমার স্বামীর পরিবারের সব সদস্যের সাথেই আমার দেখা হয়েছে এবং তার (বিরাট) বর্ধিত পরিবারের কিছু সদস্যের সাথেও আমার দেখা হয়েছে। এক গ্রীষ্মে যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসেন, তখন আমাদের বিয়ের আগেই আমার শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথে আমার পরিচয় হয়। তারা আমাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন, যদিও তা তাদের জন্য কষ্টকরই হবার কথা, কারণ তারা খুবই ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ছিলেন, অথচ আমি ছিলাম আপনার ২০ বছর বয়স্কা কোএডুকেশন কলেজের মেয়েরা স্বাভাবিকভাবে যা হয় তা। আমাকে আমার শ্বশুরকূল কর্তৃক চমষ্কারভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও তারা আমাদের অনেক কাজের পন্থা সম্বন্ধে মতানৈক্য দেখিয়েছেন- যেমন গ্র্যাজুয়েট হবার আগেই বিয়ে করা এবং আমার স্বামী গ্র্যাজুয়েট স্কুলে থাকতে থাকতেই আমাদের তিনটি সন্তান লাভ করা। যাহোক, তারা কখনোই তাদের উদ্বেগ ফলাও করে প্রকাশ করেননি। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাদের সাথে প্রায় এক বছর থেকেছে এবং পরবর্তী বছরের জন্য একই গলির অপর একটি বাসায় থেকেছে। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল, যদিও তাতে চড়াই-উত্রাই দুটোই ছিল। আমি আশা করি, আমরা যদি ইরানে যাই তবে আমি তাদের মাঝে সঠিক ও মানানসই হবো এবং তাদের বর্ধিত পরিবার আমাকে সুন্দরভাবে ও সম্মান সহকারে গ্রহণ করবে। আমার অবশ্য ইরানী সংস্কৃতি বা আচার-আচরণ নিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে, বিশেষতঃ ঐসব ক্ষেত্রে, যেগুলো ইসলামের মাপকাঠি থেকে বিচ্যুত। বর্ধিত পরিবারের তরফ থেকে কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে, তা হয়তো আমার স্বাধীনতা এবং আত্মনির্ভরশীলতা উদ্ভূত হবে।

শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তারা তাদের বাচ্চাদের সাথে এক অদ্ভুত সুন্দর উপায়ে ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন- যা অন্যদের সম্মান করতে শেখায় এবং নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে। একটা বাচ্চা-কেন্দ্রিক ও ধর্ম-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি কিভাবে কাজ করে, তা দেখতে পারাটা সত্যিই আনন্দদায়ক। আমেরিকান সংস্কৃতির বিপরীত চরিত্রের গুণে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমার মাঝে আমেরিকান সভ্যতার কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্যও আমাকে দারুণ রকম প্রশংসা করেছেন। ইরানী ও আমেরিকান সভ্যতার সব রকম তুলনা ও বৈপরীত্যের পর্যবেক্ষণের পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ইসলাম যে সবকিছুতে মধ্যপন্থাকে ঠিক পথ মনে করে থাকে, তা সত্যিই সঠিক।

নারী হিসেবে আমার স্থান একজন মুসলিম নারী হিসেবে, আল্লাহ্ মানবকূলের একজন সদস্য হিসেবে আমাকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, আমি তার পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করি। আমি কিভাবে আমার জীবন যাপন করি এবং আমার কর্তব্য কত ভালোভাবে পালন করতে পারি, সে জন্য আমি কেবল আল্লাহর কাছেই দায়ী থাকবো। একজন মুসলিম নারী হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অধিকারটি আমি ভোগ করি, তা হচ্ছে আল্লাহর সামনে সমতার অধিকার। ইসলামে নারীকে দেয়া অন্যান্য অধিকারের মাঝে রয়েছেঃ উপার্জন করার এবং আমাদের নিজের অর্থ নিজের কাছে রাখার অধিকার, নিজের সম্পত্তি ধরে রাখার বা ত্যাগ করার অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার, তালাক চাওয়ার ও দেয়ার অধিকার, নিজের সাথী নির্বাচনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার এবং বাচ্চাদের অভিভাবকত্বের অধিকার।

যাহোক, ইসলাম যেহেতু একটি সঠিক এবং সুবিচারক ধর্ম, তাই আমার অধিকারসমূহের সাথে সাথে আমার কর্তব্য ও দায়িত্বসমূহও আসে। ইসলামিক সমাজের সব স্তরে- ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে স্বামী/ স্ত্রীর সম্পর্ক, পিতা-মাতা/ সন্তানের সম্পর্ক, কর্তা/ কর্মচারীর সম্পর্ক এবং সমাজ। সমাজের সদস্যের মাঝে সম্পর্ক- এ সবই অধিকার ও কর্তব্যের বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তব্য বা দায়িত্ব ছাড়া কোন অধিকার এর অস্তিত্ব নেই; তেমনি সংশ্লিষ্ট অধিকার ছাড়াও কোন দায়িত্বের অস্তিত্ব নেই। একটা উদাহরণ ঃ স্ত্রী হিসেবে আমার একটা অধিকার হচ্ছে আমার স্বামীর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সমর্থন লাভ করা- যা হচ্ছে আমার স্বামীর কর্তব্য। তেমনি, আমার কর্তব্য হচ্ছে তার অর্থনৈতিক সঙ্গতির মাঝে জীবন যাপন করা- অভিযোেগ বা লোভ ছাড়া এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদসমূহের যত্ন নেয়া। আমার স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে আমার প্রতি সৌজন্য ও সম্মানসূচক ব্যবহার করা এবং একইভাবে তার প্রতিও সম্মানসূচক আচরণ করা আমার কর্তব্য। সমাজের একজন সদস্য হিসেবে একই সমাজের আরেকজন সদস্যকে সাহায্য করাটা আমার কর্তব্য এবং সমাজের অন্যান্য সদস্য তথা সমাজের প্রশাসনও একইভাবে আমার প্রয়োজনের সময় আমাকে সাহায্য করতে বাধিত। অধিকার ও দায়িত্বের এই সম্পূরক সম্পর্ক নিয়ে অমুসলিমদের মাঝে (এবং কিছু মুসলিমদের মাঝেও) বিরাট ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে- অধিকার ও দায়িত্ব এক সাথে একটি একক হিসেবে আসে এবং তাদের আবশ্যক গুণাবলী নষ্ট না করে একের থেকে অপরকে আলাদা করা যায় না।

আমার বিয়েতে একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আমার কোন অনুভব হয় না। ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ের কোন ক্ষেত্র আমার জন্য রুদ্ধ বলেও আমি অনুভব করি না। ইসলামের শিক্ষা সম্বন্ধে অজ্ঞতা বা ভুল ধারণা রয়েছে এমন সমাজে অজ্ঞতা ও ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে এমন বিয়ে হয় যেগুলোতে কিছু মেয়েদের অবস্থান/মর্যাদা সম্বন্ধে আমি উদ্বিগ্ন বোধ করি। এমন অনেক মুসলিম সমাজ রয়েছে, যেখানে মেয়েদের মর্যাদা ও ভূমিকা সংক্রান্ত ইসলামিক মানদন্ড থেকে বিচ্যুতির ফলে (এবং অন্যান্য ব্যাপারের বেলায়ও বিচ্যুতির ফলে), মেয়েদের ভূমিকা অনেকাংশেই চাপা পড়ে গিয়েছে। সাংস্কৃতিক ইসলাম' বা প্রচলিত ইসলাম প্রায়শঃই ইসলাম থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ওহী নাজিল হবার পটভূমি থেকে অথবা বর্ণনার পটভূমি থেকে যথাক্রমে কোরআনের আয়াত ও হাদীসকে আলাদা করে নিয়ে, সেগুলোকে পিতৃতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীকে সমর্থন করতে ব্যবহার করা হয়। অশিক্ষিত পুরুষ এবং নারীরা প্রায়ই ইসলামের বিধি-নিষেধ বুঝতে অক্ষম, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের সমাজের প্রচলিত আচার-আচরণকে অনুসরণ করে থাকে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন