HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নির্বাচিত হাদীস চতুর্থ খণ্ড

লেখকঃ ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
নির্বাচিত হাদীস চতুর্থ খণ্ড

80 টি হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও মূল্যবান শিক্ষণীয় বিষয়

মূল আরবী ভাষায় প্রণীত:

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

বাংলা অনুবাদ

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين , والعاقبة للمتقين , والصلاة والسلام , على سيد الأنبياء والمرسلين , وعلى آله وأصحابه وأتباعه إلى يوم الدين , أما بعد :

অর্থ: সকল প্রশংসা সব জগতের সত্য প্রভু আল্লাহর জন্য, এবং যিনি নাবী ও রাসূলগণের সর্দার, তাঁর জন্য এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ ও তাঁর অনুসরণকারীগণের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত অতিশয় সম্মান এবং শান্তি তথা সালাত ও সালাম অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আল্লাহর রাসূলের হাদীসের বড়োই গুরুত্ব রয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআনের পর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় উৎস হলো আল্লাহর রাসূলের হাদীস। সুতরাং এই হাদীসের প্রচারে ও প্রসারে ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক কার্যকর বহুমুখী মাধ্যম এবং পদ্ধতি অবলম্বন করা মুসলিম জাতির অপরিহার্য একটি কর্তব্য। এই কর্তব্য সঠিক পন্থায় পালন করার প্রতি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উৎসাহ প্রদান করেছেন। এবং যারা এই পবিত্র হাদীসের যত্ন নিবে, তাদের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করেছেন:

" نضَّرَ اللهُ امْرَأً , سَمِعَ مِنَّا حَدِيْثاً؛ فَبَلَّغَهُ؛ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَحْفَظُ مِنْ سَامِعٍ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 232, وجامع الترمذي , رقم الحديث 2657, واللفظ لابن ماجه , قَالَ الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن صحيح , وقال العلامة محمد ناصر الدين الألباني عن هذا الحديث بأنه : صحيح أيضاً ).

অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার কোনো একটি হাদীস শ্রবণ করবে এবং সেই হাদীসটি শ্রবণ করার পর অন্য কোনো ব্যক্তিকে পৌঁছিয়ে দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের নেয়ামত প্রদানের সাথে সাথে বিশেষ সৌন্দর্য প্রদান করবেন। কেননা যে ব্যক্তিকে সেই হাদীসটি পৌঁছে দেওয়া হবে, সেই ব্যক্তি হতে পারে উক্ত হাদীসটির অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 232, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2657, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

তাই আমি মহান আল্লাহর সাহায্যে এই বইটিতে 80টি হাদীস চয়ন করে একত্রিত করেছি। এই হাদীসগুলির যোগাযোগ রয়েছে তিনটি বিষয়ের সাথে:

1-সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ।

2- সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ মোতাবেক আমল বা কার্য সম্পাদনের প্রতি উৎসাহ প্রদান।

3-ইসলামের প্রকৃত আদর্শ মোতাবেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

এই হাদীসগুলি হতে শিক্ষণীয় বিষয়গুলিও তুলে ধরেছি। যাতে মুসলিম সমাজ আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শ্রদ্ধান্বিত ভালোবাসার সহিত প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে তাঁর অনুসরণ করে দুনিয়া ও পরকালে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হয়।

উক্ত হাদীসগুলির শিক্ষণীয় বিষয়গুলি উপস্থাপন করার সময় আমার নিজেস্ব প্রচেষ্টার সাথে সাথে ওই সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের মতামত অনেক সময় সামনে রেখেছি, যে সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের ইসলামী বিধি-বিধানের বিশদ বিবরণ বা ব্যাখ্যা দানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। যেমন:- আল্লামা ইয়াহইয়া বিন শারাফ আন্নাওয়বী, আল্লামা হাফেজ আহমাদ বিন আলী বিন হাজার আলআসকালানী এবং অন্যান্য আরো ওলামায়ে ইসলাম। আল্লাহ তাঁদের সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

আল্লাহর সাহায্যে আমি এই নির্বাচিত হাদীস - চতুর্থ খণ্ড বইটির পূর্বে আরো নির্বাচিত হাদীসের তিনটি খণ্ড লিখেছি, যা এই ক্ষেত্রের সকল মনোযোগী ও আগ্রহীগণের চিত্তাকর্ষক সাব্যস্ত হয়েছে।

আমি মহান আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই বইটিকে তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায় কবুল করেন।

হাদীস বর্ণনার নিয়মকে লক্ষ্য রেখে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত মনে করছি, আর সে বিষয়টি হলো এই যে, সহীহ বুখারী কিংবা সহীহ মুসলিম গ্রন্থের হাদীস উল্লেখ করার সময় হাদীসের হুকুম সহীহ অথবা হাসান (সঠিক বা সুন্দর) বলে বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন হয় নি। যেহেতু ইসলামী উম্মতের সকল ওলামা উক্ত দুইটি গ্রন্থের সমস্ত হাদীসকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সুনান আবু দাউদ, জামে তিরমিযী, সুনান নাসায়ী এবং সুনান ইবনু মাজাহ গ্রন্থগুলির হাদীস উল্লেখ করার সময় আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণীর মতামত সামনে রেখে হাদীসের মান নির্ণয় করেছি । এবং প্রয়োজনে ইমাম তিরমিযীর বিবৃতিগুলিও তুলে ধরেছি। যেহেতু তিনি তো হলেন এই বিদ্যার বিরাট নিপুণ ইমাম। আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি করুণা করুন।

সবশেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পালা:
রাবওয়া দাওয়া,এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয় (রাবওয়া ইসলামিক সেন্টার) রিয়াদ এর প্রধান পরিচালক মাননীয় শাইখ খালেদ বিন আলী আবালখ্যাইল সাহেব আমাদেরকে দাওয়াতী কার্যক্রমে আন্তরিকতা, দৃঢ়তা এবং বিচক্ষণতা বজায় রেখে অগ্রসর হওয়ার প্রতি সর্বদা উৎসাহ প্রদান করার জন্য তাঁকে শ্রদ্ধাসহকারে আমি ধন্যবাদ জানায়।

অনুরূপভাবে রাবওয়া দাওয়া,এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয় (রাবওয়া ইসলামিক সেন্টার) এর দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ (জালীয়াত বিভাগের) পরিচালক মাননীয় শাইখ নাসের বিন মুহাম্মাদ আলহোওয়াশকেও শ্রদ্ধাসহকারে আমি ধন্যবাদ জানায়। কেননা মানব সমাজে আল্লাহর রাসূলের হাদীস প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি হলেন বড়োই আগ্রহী ও উদ্যোগী।

তদ্রূপ আমি যে সমস্ত লোকের নিষ্ঠিত পরামর্শ অথবা মতামত কিংবা প্রচেষ্টার দ্বারা উপকৃত হয়েছি, তাঁদের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইলো। তবে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

রাবওয়া দাওয়া,এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্য়ালয় (রাবওয়া ইসলামিক সেন্টার) এর দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ (জালীয়াত বিভাগের) এর সকল ওলামায়ে কেরাম এবং সম্মানিত ভাই আব্দুল আজীজ মাদয়ূফ। আল্লাহ তাঁদের সকলকে দুনিয়াতে ও পরকালে ইসলাম এবং মুসলিমগণের পক্ষ হতে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

وصلى الله وسلم على نبينا محمد , وعلى آله وأصحابه , وأتباعه , والحمد لله رب العالمين .

অর্থ: আল্লাহ আমাদের নাবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন । সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।

মূল আরবী ভাষায় ভূমিকার কথা এখানেই শেষ হয়ে গেলো। তবে আমার সম্মানিতা স্ত্রী উম্মে আহমাদ সালীমা খাতুন বিনতে শাইখ হুমায়ন বিশ্বাস এর কথাও এখানে উল্লেখ করা উচিত মনে করছি;যেহেতু তিনি এই বইটির মুদ্রণ দোষ-ত্রুটি ঠিক করার বিষয়ে আমাকে অনেক সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। তাই আমি তাঁকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পেশ করার বিষয়টি ভুলতে পারলাম না। মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর এই সাহায্য ও সহযোগিতার উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

এই বইয়ের বাংলা তরজমা বা অনুবাদ আমাকেই করতে হয়েছে। তাই এখানে অনুবাদের পদ্ধতির বিষয়ে একটি কথা বলতে চায়;আর তা হলো এই যে,

অনুবাদের পদ্ধতি
এই বইটির অনুবাদ পদ্ধতি একটু আলাদা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; কেননা অত্র বইটিতে আরবি ভাষার ভাবার্থের অনুবাদ বাংলা ভাষার ভাবার্থের দ্বারা করা হয়েছে। তাই কোনো সম্মানিত পাঠকের মনে অনুবাদ সম্পর্কে কোনো প্রকার সংশয় জেগে উঠলে, ওলামায়ে ইসলামের বিশদ বিবরণ বা ব্যাখ্যা আরবী ভাষায় একটু গভীরতার সহিত দেখে নিলে সর্ব প্রকার সংশয় দূর হয়ে যাবে। এবং এই বইটির বাংলা অনুবাদ নির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত হবে বলেই আশা করি ইনশা আল্লাহ। তবে এই বইটির দোষ-ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা এবং মুদ্রণ প্রমাদ প্রভৃতি একেবারেই নেই, এই দাবি আমি করছি না। তাই এই বিষয়ে যে কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব এবং মতামত আমার নিকটে সাদরে গৃহীত হবে ইনশা আল্লাহ।

প্রণয়নকারী

ড: মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

তাং 7/2/1436 হিজরী {29/11/2014 খ্রিস্টাব্দ }

মহান আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করা
1 - عَنْ عُثـْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 41 - (26), ).

1 - অর্থ: ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি

" لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ "

( অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য বা মাবূদ নেই”)।

এর সঠিক জ্ঞানার্জন করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 41 -(26) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

ওসমান বিন আফফান বিন আবীল আস আলকুরাশী। হস্তী বাহিনীর ছয় বছর পর তিনি মাক্কা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পরে পরেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি হলেন আমীরুল মুমিনীন এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে তৃতীয় খলিফা। তিনি নিজ স্ত্রী আল্লাহর রাসূলের মেয়ে রোকাইয়্যাকে সঙ্গে করে সর্ব প্রথম আবিসিনিয়ায় বা ইথিওপিয়া দেশে হিজরত করেন। তিনি নিজের জান ও মাল দ্বারা ইসলামের সাহায্য করেন। তিনি তাবুক যুদ্ধে সৈন্য বাহিনী তৈরীর জন্য 950টি উষ্ট্র এবং 50 টি ঘোড়া প্রদান করেন। 20 হাজার দিরহাম মুদ্রা দিয়ে মাদীনায় রোমা কুয়া ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য তিনি সাদাকা জারিয়া হিসেবে দান করে দেন। মাসজিদে নবাবী প্রশস্ত করণেও তিনি 25 হাজার দিরহাম মুদ্রা দান করেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর মৃত্যুর পর মুসলিম জাহানের তিনি তৃতীয় খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি পবিত্র কুরআন একত্রিত করার কাজ সম্পন্ন করেন। তাঁর খেলাফতের সময় এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকা মহাদেশে মহা বিজয়ের র্কাযক্রম সম্পাদিত হয়। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হচ্ছে 146 টি। তিনি মাদীনায় স্বীয় বাসভবনে দুষ্কৃতিকারী পাপাচারিদের হাতে সন 35 হিজরীতে 80 অথবা 90 বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি নিজের অন্তরে একত্ববাদের কালেমা, কালেমায়ে তাওহীদকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে এবং শিরক, কুফরী ও মহা পাপগুলি বর্জন করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

2। মুসলিম ব্যক্তির অপরিহার্য কর্ম হলো এই যে, সে যেন একত্ববাদের কালেমা, কালেমায়ে তাওহীদকে বাহ্যিক, আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক দিক দিয়ে বাস্তবায়িত করে এবং অন্তরে সঠিক পন্থায় কালেমায়ে তাওহীদকে স্থাপিত করে।

3। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন একত্ববাদের কালেমা, কালেমায়ে তাওহীদের প্রভাবকে রক্ষা করার জন্য শিরক, কুফরী ইত্যাদি বর্জন করে।

সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত পাঠ করার মর্যাদা
2 - عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ البَقَرَةِ فِيْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 5009, وصحيح مسلم , رقم الحديث 256 - (808), واللفظ للبخاري ).

2 - অর্থ: আবু মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির সমস্ত প্রকার অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দুইটি আয়াতই যথেষ্ট হয়ে যাবে”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5009 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 256 -(808), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু মাসউদ ওকবা বিন আম্‌র্‌ আল আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবী। তিনি আকাবার দ্বিতীয় বায়আত (আনুগত্যের শপথ গ্রহণ) এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই দ্বিতীয় বায়আত (আনুগত্যের শপথ গ্রহণে) অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব চেয়ে কম বয়সের সাহাবী। এবং সর্বপ্রথমে তিনি ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তিনি আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি কূফা শহরে চলে যান এবং সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। তাই আমীরুল মুমেনীন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যখন সিফ্‌ফিন্‌ অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এবং সিফ্‌ফিন্‌ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তখন তিনি তাঁকে কূফা শহরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন।

হাদীস গ্রন্থে তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 102 টি। তিনি মাদীনাতে 41 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।



* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত প্রত্যেক রাতে পাঠ করার বিষয়টি হলো: সুখময় জীবন লাভ এবং সমস্ত প্রকারের অমঙ্গল থেকে সুরক্ষিত হওয়ার উপাদান।

2। সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত প্রত্যেক রাতে পাঠ করলে মহান আল্লাহর সাথে মুসলিম ব্যক্তির ভরসা সঠিক পন্থায় দৃঢ় হয়।

3। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই দুইটি আয়াত মুখস্থ করা উচিত। উক্ত আয়াত দুটি হলো এই যে, মহান আল্লাহ বলেছেন:

ﭽ ﮗ ﮘ ﮙ ﮚ ﮛ ﮜ ﮝ ﮞﮟ ﮠ ﮡ ﮢ ﮣ ﮤ ﮥ ﮦ ﮧ ﮨ ﮩ ﮪ ﮫﮬ ﮭ ﮮ ﮯﮰ ﮱ ﯓ ﯔ ﯕ ﯖ ﯗ ﯘ ﯙ ﯚ ﯛ ﯜﯝ ﯞ ﯟ ﯠ ﯡ ﯢ ﯣﯤ ﯥ ﯦ ﯧ ﯨ ﯩ ﯪ ﯫﯬ ﯭ ﯮ ﯯ ﯰ ﯱ ﯲ ﯳ ﯴ ﯵ ﯶ ﯷﯸ ﯹ ﯺ ﯻ ﯼ ﯽ ﯾ ﯿ ﰀﰁ ﰂ ﰃ ﰄ ﰅ ﰆﰇ ﰈ ﰉ ﰊ ﰋ ﰌ ﰍ ﰎ ﭼ , ( سورة البقرة , الآيتان ٢٨٥ ٢٨٦ ).

ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহর রাসূল তদীয় প্রতিপালকের পক্ষ হতে তৎপ্রতি যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতি। তারা সবাই সঠিক পন্থায় ঈমান স্থাপন করেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা সবাই বলে: আমরা মুসলিম জাতি আল্লাহর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করি না। কেননা আমরা তো সকল রাসূলগণের প্রতি সঠিক পন্থায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তারা আরো বলে: আমরা আমাদের প্রতিপালকের বাণী শুনেছি এবং তা সাদরে বরণ করেছি। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদেরকে আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতেই হবে। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ করেন না। সুতরাং সে ব্যক্তি যে সমস্ত সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, সে সমস্ত সৎকর্ম তার কল্যাণের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। এবং যে সমস্ত অপকর্ম সম্পাদন করেছে, সে সমস্ত অপকর্ম তার অমঙ্গলের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। তারা আরো বলে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যায় অথবা ভুল করি, তাহলে আপনি আমাদেরকে উভয় বিষয়ের শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা প্রদান করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর এমন বোঝার ভার অর্পণ করবেন না, যেমন বোঝার ভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর এমন গুরুভার অর্পণ করবেন না, যে গুরুভার বহন করার শক্তি আমাদের নেই। এবং আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি কৃপা করুন। আপনি আমাদের সহায়ক। অতএব আপনি অমুসলিম সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় আমাদেরকে সাহায্য করুন”।

(সূরা আল্ বাকারা, আয়াত নং 285 হতে 286 পর্যন্ত)।

যত্নসহকারে আল্লাহর রাসূলের হাদীস প্রচারকের মর্যাদা
3 -عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " نضَّرَ اللهُ امْرَأً , سَمِعَ مِنَّا حَدِيْثاً؛ فَبَلَّغَهُ؛ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَحْفَظُ مِنْ سَامِعٍ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 232, وجامع الترمذي , رقم الحديث 2657, واللفظ لابن ماجه , قَالَ الإمام الترمذي عن هذا الحديث : حسن صحيح , وصححه الألباني ).

3 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার কোনো হাদীস শ্রবণ করবে এবং সেই হাদীসটি শ্রবণ করার পর অন্য কোনো ব্যক্তিকে পৌঁছিয়ে দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের নেয়ামত প্রদানের সাথে সাথে বিশেষ সৌন্দর্য প্রদান করবেন। কেননা যে ব্যক্তিকে সেই হাদীসটি পৌঁছে দেওয়া হবে, সেই ব্যক্তি হতে পারে উক্ত হাদীসটির অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 232, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2657, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু], তিনি ওই সমস্ত সাহাবীদের মধ্যে একজন, যাঁরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে মর্যাদা সম্পন্ন ও ফাকীহ এবং কুরআন তেলাওয়াতে সর্বোত্তম কারী ছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 848 টি। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সমস্ত যুদ্ধে তিনি যোগদান করেছেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণের পর শামদেশে ইয়ারমূকের যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা প্রদানের জন্য কূফা শহরে প্রেরণ করেছিলেন। ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে সেখানে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। ওসমান বিন আফফান তাঁকে আবার মাদীনায় আসতে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তিনি মাদীনায় সন 32 হিজরীতে 60 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এবং মাদীনার বিখ্যাত আলবাকী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির ভাবার্থ হলো এই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের নির্ভরযোগ্য হাদীসের যত্নসহকারে প্রচার করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও পরকালে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করবেন এবং তাকে জান্নাতের সুখ বা নেয়ামত প্রদানের সাথে সাথে বিশেষ সৌন্দর্যে সুশোভিত করবেন।

2। যারা আল্লাহর রাসূলের হাদীসের প্রতি আন্তরিকভাবে ও সততার সহিত নির্ভেজাল পন্থায় যত্নবান হতে পারবে। তাদের জন্য এই হাদীসটির মধ্যে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর এই দোয়া রয়েছে যে, তারা জান্নাতের সুখ বা নেয়ামত লাভ করার সাথে সাথে বিশেষ সৌন্দর্য লাভ করবে।

3। বৈধ ও চিত্তাকর্ষক বিভিন্ন প্রকারের মাধ্যম এবং পদ্ধতির দ্বারা আল্লাহর রাসূলের নির্ভরযোগ্য হাদীসের যত্নসহকারে প্রচার করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে।

শিরক ও তার অমেধ্য থেকে একত্ববাদের (তাওহীদের) রক্ষণাবেক্ষণ
4 - عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " لاَ تَقُوْلُوْا : مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلاَنٌ؛ وَلكِنْ قُوْلُوْا : مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ شَاءَ فُلاَنٌ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 4980, وصححه الألباني ).

4 - অর্থ: হুজায়ফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “হে মুসলিম সমাজ! তোমরা কোনো সময় এই কথা বলবে না যে, আল্লাহ এবং অমুক ব্যক্তি যা ইচ্ছা করেছে। কিন্তু এই কথা বলতে পারবে যে, আল্লাহ অতঃপর অমুক ব্যক্তি যা ইচ্ছা করেছে”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4980। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান বিন হোসাইল আল আবসী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন সম্ভ্রান্ত ও সাহসী সাহাবী ছিলেন। তিনি অনেক দেশ বিজয়ের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর গোপন কথার তিনি সংরক্ষণকারী সাহাবী। এই কারণে তাকে সাহিবু সির্‌রি রাসূলিল্লাহ বলা হয়। হাদীস গ্রন্থে তাঁর 255 টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। খন্দকের যুদ্ধে এবং খন্দকের যুদ্ধের পর যে সমস্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে,সে সব যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে তাঁর বিরাট মর্যাদা ও উচ্চ স্থান ছিল। তিনি ইরাকে সন 36 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। সকল প্রকার শিরক ও তার অমেধ্য সমস্ত বস্তু থেকে বিশুদ্ধ একত্ববাদের মতবাদটির রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তিনিই হলেন সৃষ্টি জগতের মঙ্গলদায়ক আশ্রয়স্থল, তাঁর অস্তিত্ব, সত্তা, নাম, গুণাবলী, কর্ম এবং আদেশ প্রদানে কোনো অংশীদার নেই।

3। সর্বশক্তিমান আল্লাহর একত্ববাদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করা হতে এই হাদীসটি সতর্ক করে।

মানুষ তার সমস্ত অবস্থায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মুখাপেক্ষী
5 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , أَنَّهَا سُئِلَتْ عَمَّا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُوْ بِهِ اللهَ؛ قَالَتْ : كَانَ يَقُوْلُ : " اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 66 - (2716),).

5 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কিসের দ্বারা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেন? তিনি বললেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই দোয়াটির দ্বারা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করতেন:

" اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় চাচ্ছি যে কর্ম সম্পাদন করেছি তার অমঙ্গল হতে এবং যে কর্ম বর্জন করছি তারও অমঙ্গল হতে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 -(2716) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয়:

উম্মুল মুমেনীন আয়েশা বিনতে আবী বাক্‌র আসসিদ্দীক [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হিজরতের পূর্বে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি মাদীনায় হিজরত করার পর নয় বছর বয়সে আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সংসার আরম্ভ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল 18 বছর। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমতি, জ্ঞান এবং রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি। দানশীলতা ও উদারতায় তাকে উত্তম নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 2210 টি। তিনি রামাজান বা শাওয়াল মাসের 17 তারিখে মাদীনাতে সন 57 অথবা 58 হিজরীতে রোজ মঙ্গলবার মৃত্যুবরণ করেন। আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর জানাজার নামাজ পড়িয়েছিলেন এবং তাঁকে আল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহা] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন সকল প্রকারের পাপ বর্জন করে। কেননা পাপ হলো তার অমঙ্গল ও দুর্ভাগ্য সৃষ্টি করার উপাদান।

2। মানুষ নিজের পাপের অমঙ্গল হতে সুরক্ষিত হওয়ার জন্য পরাক্রমশালী আল্লাহর শরণ নেওয়ার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। কেননা মানুষ তো তার সমস্ত অবস্থায় তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মুখাপেক্ষী।

3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মঙ্গলদায়ক আশ্রয়স্থল হলো এক মাত্র পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ, সৃষ্টি জগতের অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তু নয়।

১০
সচ্চরিত্রের উপর অবিচল থাকার প্রতি উৎসাহ প্রদান
6 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : " إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ القَائِمِ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 4798, وصححه الألباني ).

6 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এই কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: “প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি নিজের সচ্চরিত্রের দ্বারা দিনে অধিক নফল রোজা ব্রত পালনকারী এবং রাত্রিকালে তাহজ্জুদের অধিক নফল নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির সমতুল্য মর্যাদা লাভ করে থাকে”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4798 আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। সচ্চরিত্রের বিষয়টি মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমানের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। সুতরাং যে মুসলিম ব্যক্তির হৃদয়ে ঈমান যতো ভালো থাকবে, তার চরিত্র এবং আচরণ ততোই ভালো হবে। এবং যে মুসলিম ব্যক্তির হৃদয়ে ঈমান যতো খারাপ থাকবে, তার চরিত্র এবং আচরণ ততোই খারাপ হবে। কেননা মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমানের সম্পর্ক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে বেশ মজবুতভাবে স্থাপিত করে রাখা হয়েছে।

2। সচ্চরিত্ররের উপর সব সময় অবিচল থাকার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে।

3। সঠিক ঈমান ও সৎকর্মের সাথে সাথে সচ্চরিত্ররের বিষয়গুলি হলো মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।

১১
ইসলাম অভিসম্পাত এবং গালিগালাজ করার ধর্ম নয়
7 -عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لاَ يَكُوْنُ اللَّعَّانُوْنَ شُفَعَاءَ وَلاَ شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 85 - (2598),).

7 - অর্থ: আবুদ্দারদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “অতি অভিসম্পাতকারীরা কিয়ামতের দিবসে সুপারিশকারী এবং সাক্ষ্যপ্রদানকারী হতে পারবে না”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 85 -(2598) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবুদ্দারদা, তিনি ওয়াইমের বিন কাইস আল্‌ খাজরাজী আল আনসারী, একজন বিখ্যাত সাহাবী। বদরের যুদ্ধের দিন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এই উম্মতের একজন বিশিষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি ( حكيم هذه الأمة ) হিসেবে তিনি উপাধি লাভ করেছেন। দামেশকে তিনি বিচারপতি ও পবিত্র কুরআনের কারীগণের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবদ্দশাতে পবিত্র কুরআনের একত্রিকরণ, সংরক্ষণ সংক্রান্ত এবং মুখস্থকরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 179 টি হাদীস পাওয়া যায়। তিনি সন 32 হিজরীতে অথবা 31 হিজরীতে 72 বছর বয়সে তৃতীয় খলিফা ওসমান বিন আফ্‌ফানের শাহাদতবরণের তিন বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির ব্যাখ্যার বিবরণে কতকগুলি উক্তি রয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি উক্তি পেশ করা হলো:

ক। অতি অভিসম্পাতকারীরা এই দুনিয়াতে সাক্ষ্যপ্রদানকারী হতে পারবে না; কেননা তাদের সাক্ষ্য ইসলামী আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না; তাদের পাপ ও দুর্ব্যবহারের কারণে।

খ। তারা (অতি অভিসম্পাতকারীরা) আল্লাহর পথে পবিত্র জেহাদে শহীদ হওয়ার সুযোগ পাবে না।

গ। তারা (অতি অভিসম্পাতকারীরা) কিয়ামতের দিবসে ওই সময় সুপারিশকারী হতে পারবে না, যে সময় ঈমানদার মুসলিমগণ অন্য ওই সকল মুসলিমগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করার জন্য সুপারিশ করবে, যে সমস্ত মুসলিমগণ জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে।

2। এই হাদীসটি অতি অভিসম্পাত করা হতে কঠোরতার সহিত সতর্ক করা হয়েছে; কেননা অতি অভিসম্পাত করার বিষয়টি সচ্চরিত্র এবং সুনীতির অনুকূলে পড়ছে না।

3। ইসলাম একটি সৎকর্ম ও আল্লাহর আনুগত্যের কাজে সহযোগিতা এবং পরস্পর সহানুভূতিশীল হওয়ার ধর্ম, অভিসম্পাত এবং গালিগালাজ করার ধর্ম নয়।

১২
ইসলাম একটি লজ্জা উপলব্ধি, সদয় হওয়া এবং উত্তম আচরণের ধর্ম
8 - عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَا كَانَ الفُحْشُ فِيْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ، وَمَا كَانَ الحَيَاءُ فِيْ شَيْءٍ إلاَّ زَانَهُ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 1974, و سنن ابن ماجه , رقم الحديث 4185, واللفظ للترمذي , قَالَ الإمام الترمذي : هذا حديث حسن غريب , وصححه الألباني ).

8 - অর্থ: আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে বস্তুর মধ্যে অশ্লীলতা বা কঠোরতা থাকবে, সে বস্তুটি বিকৃত ও অকল্যাণকর হয়ে যাবে, আর যে বস্তুটির মধ্যে লজ্জা-শরম পাওয়া যাবে, সে বস্তুটি সুন্দর ও মঙ্গলদায়ক হয়ে যাবে”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1974 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 4185। তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু হামজা আনাস বিন মালিক আল আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন বিশিষ্ট সাহাবী। হিজরতের 10 বছর পূর্বে মাদীনাতে তাঁর জন্ম হয়, ছোটকালে নাবালক অবস্থাতেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে ধারাবাহিক ভাবে 10 বছর যাবৎ থেকে তাঁর খাদেম-সেবক হিসেবে সর্বোত্তম উপাধি লাভ করেন। এবং আল্লাহর রাসূলের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাঁর দেখমতে রত থাকেন। অতঃপর দামেশকে চলে যান, সেখান থেকে বাসরায় গমন করেন। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 2285 টি। তিনি বাসরা শহরে একশত বা তার অধিক বয়স প্রাপ্ত হয়ে সন 93 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। ইসলাম হলো একটি লজ্জা উপলব্ধি, সদয় হওয়া এবং উত্তম আচরণের ধর্ম; তাই এই ধর্ম মানুষকে নিষ্ঠুর ও অশালীন কথা, কাজ এবং গুণাবলী হতে সতর্ক করে।

2। আল্লাহর ধর্ম ইসলামে লজ্জা অনুভব করার বিষয়টি হলো একটি সুন্দর এবং প্রশংসনীয় গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত বিষয়; তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন এই সুন্দর প্রশংসনীয় গুণের দ্বারা অলংকৃত ও সুসজ্জিত হয়।

3। লজ্জা অনুভব করার বিষয়টি মুসলিম ব্যক্তিকে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে সজাগ বা সচেতন রাখে এবং তাকে পাপ বা অসৎকর্ম হতে বিরত রাখে।

১৩
পানাহারের পর পঠনীয় দোয়া
9 - عَنْ ‏‏أَبِيْ أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ ‏‏ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : ‏ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏إِذَا أَكَلَ أَوْ شَرِبَ قَالَ : " الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَ وَسَقَى،‏‏ وَسَوَّغَهُ،‏ ‏وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجا ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 3851, وصححه الألباني ).

9 - অর্থ: আবু আইয়ুব আল্ আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন পানাহার করতেন তখন এই দোয়াটি বলতেন:

" الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَ وَسَقَى،‏‏ وَسَوَّغَهُ،‏ ‏وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجا ".

অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি খাদ্য দ্রব্য ও পানীয় দ্রব্য প্রদান করেছেন। এবং সেগুলিকে গলাধঃকরণ করিয়েছেন। অতঃপর দেহ থেকে সেগুলির বের হওয়ার পথও করে দিয়েছেন”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 3851। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু আইয়ুব আল্ আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু], তিনি হলেন খালিদ বিন য্যাইদ বিন কোল্যাইব আল্ খাজরাজী, একজন বিশিষ্ট ও বিখ্যাত সাহাবী। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াত বা অঙ্গীকারে যোগদান করেছিলেন এবং বদরের যুদ্ধে, ওহুদের যুদ্ধে এবং আরো সমস্ত যুদ্ধে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর পথে ধৈর্যের সহিত জেহাদ করতে ভালো বাসতেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন হিজরত করে মাদীনা শহরে আগমন করেছিলেন, তখন তিনি এই সাহাবীর বাড়িতেই অবস্থান করেছিলেন। এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বাড়িঘর এবং মাসজিদ নির্মিত হওয়া পর্যন্ত তিনি সেই সাহাবীর বাড়িতেই অবস্থান করেছিলেন।

তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 155 টি।

আবু আইয়ুব আল্ আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু], ইয়াজিদের নেতৃত্বে কনস্টানটিনোপল (বর্তমানে তুরস্ক দেশের ইস্তাম্বুল নগরী) শহরের যুদ্ধের সময় 52 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জানাজার নামাজ পড়িয়েছিলেন সেই যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ইয়াজিদ। এবং তাঁকে কনস্টানটিনোপল (বর্তমানে তুরস্ক দেশের ইস্তাম্বুল নগরী) শহরের প্রাচীরের নিকটে সমাহিত করা হয়েছিলো।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। জীবনযাত্রার সমস্ত ভালো ও পবিত্র রুজি বা জীবিকা সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত; তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন মহান আল্লাহর প্রশংসা করে এই সমস্ত নেয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার কারণে।

2। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাতে গভীরভাবে গবেষণা করে তার তত্ত্বজ্ঞান লাভ করা মহান আল্লাহর একটি বড়ো উপাসনা বা ইবাদত।

3। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন তার সৃষ্টিকর্তা এবং রুজিদাতা মহান আল্লাহর সঠিক জ্ঞানলাভ করে, তাঁর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাঁকে না ভুলে।

১৪
আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম বাক্য
10 - عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ : أَيُّ الْكَلاَمِ أَفْضَلُ؟ قَالَ : " مَا اصْطَفَى اللهُ لِمَلائِكَتِهِ أَوْ لِعِبَادِهِ : سُبْحَانَ اللهِ وَبَحِمْدِهِ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 84 - (2731), ).

10 - অর্থ: আবু জার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, সর্বোত্তম বাক্য কোন্ কথাটিকে বলা যায়? তিনি উত্তর প্রদান করে বললেন:

“যে কথাটি মহান আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাগণের জন্য অথবা তাঁর বান্দাগণের জন্য মননীত করেছেন:

" سُبْحَانَ اللهِ وَبَحِمْدِهِ "

অর্থ: “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর প্রশংসার সহিত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 84 -(2731) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু জার তিনি জুন্দুব বিন জুনাদা আল্‌ গিফারী, একজন গৌরবময় বিখ্যাত সাহাবী, তিনি ওই সমস্ত সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন, যাঁরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। দানশীলতা ও উদারতায় তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন; তাই তিনি ধন-সম্পদ কিছুই জমা রাখতেন না, মাদীনাতে তিনি ফতোয়া দেওয়ার কাজে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 281 টি হাদীস পাওয়া যায়।

অতঃপর তিনি শাম দেশে যাত্র করেন, অবশেষে আর্‌রাব্‌জা (মাদীনা হতে রিয়াদ পথে 100 কিলোমিটার দূরে) নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং সেখানেই তিনি 31 হিজরীতে অথবা 32 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর জানাজার নামাজ পড়িয়েছিলেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটি " سُبْحَانَ اللهِ وَبَحِمْدِهِ " বাক্যটির দ্বারা আল্লাহর প্রশংসার সহিত তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করার মর্যাদা বর্ণনা করে।

2। মহান আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকার বিষয়টি হলো মানসিক শান্তি এবং আত্মিক আনন্দের উপাদান।

3। এই হাদীসটি " سُبْحَانَ اللهِ وَبَحِمْدِهِ " বাক্যটির দ্বারা আল্লাহকে অধিকতর স্মরণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।

১৫
ইসলাম ধর্মে নতুন কর্মের উদভাবন বিপথগামী হওয়ার উপকরণ
11 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 18- (1718), وصحيح البخاري , رقم الحديث 2697, واللفظ لمسلم ).

11 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের কর্ম হিসেবে এমন কোনো কর্ম সম্পাদন করবে, যে কর্মের বিষয়ে আমাদের প্রকৃত ইসলাম ধর্মের কোনো উপদেশ নেই। তাহলে সেই কর্মটি পরিত্যাজ্য বলেই বিবেচিত হবে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 18-(1718) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2697, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ধর্মের কর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মে নতুন কোনো কর্মের উদভাবন করার বিষয়টি হলো ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্যুতি হওয়া এবং বাতিল পন্থার অনুগামী হওয়ার অন্তর্ভুক্ত।

2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীস মেনে চলার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে এবং তাতে কোনো প্রকার বিকৃতি বা নিষ্ক্রিয় করার পথ অবলম্বন করা থেকে সতর্ক করে।

3। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের কর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মে নতুন কোনো কর্মের উদভাবন করার বিষয়টি হলো মুসলিম জাতির অধঃপতনের উপাদান এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হতে বিপথগামী হওয়ার উপকরণ।

১৬
আল্লাহর নাবীর অধিকাংশ সময়ের দোয়া
12 - عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَللَّهُمَّ ! ﭽﯜ ﯝ ﯞ ﯟ ﯠ ﯡ ﯢ ﯣ ﯤ ﯥ ﯦ ﭼ , ( البقرة : ٢٠١ ).

( صحيح البخاري , رقم الحديث 6389, وصحيح مسلم , رقم الحديث 23- (2688), واللفظ للبخاري ).

12 - অর্থ: আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অধিকাংশ সময়ের দোয়া ছিলো:

اَللَّهُمَّ ! ﭽ ﯜ ﯝ ﯞ ﯟ ﯠ ﯡ ﯢ ﯣ ﯤ ﯥ ﯦ ﭼ, ( سورة البقرة الآية ٢٠١ ).

অর্থ: “হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে সর্ব প্রকারের কল্যাণ প্রদান করুন এবং পরকালেও সর্ব প্রকারের কল্যাণ প্রদান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড হতে পরিত্রাণ দান করুন”। (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত নং 201)।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6389 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 23 -(2688), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 8 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। যে ব্যক্তি জেনে শুনে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সততা ও একনিষ্ঠতার সহিত ঈমান, আমল এবং চরিত্র ঠিক রাখতে পারবে, সে ব্যক্তি দুনিয়াতে এবং পরকালে সুখ, শান্তি এবং নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে।

2। এই দোয়টির মধ্যে সর্ব প্রকার মঙ্গল নিহিত রয়েছে; তাই মুসলিম ব্যক্তি যেন এই দোয়াটি অধিকতর পাঠ করে। এবং হারাম ও সন্দেহের বিষয়গুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করে।

১৭
আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হলো মাসজিদ
13 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 288 -(671), ).

13 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হলো মাসজিদ। আর সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান হলো বাজার”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 288 -(671) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু হুরায়রা আব্দুর রহমান বিন সাখার আদ্‌দাওসী আল ইয়ামানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি আল্লাহর রাসূলের সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী। তাঁর কুনিয়াত (ডাকনাম) আবু হুরায়রা হিসেবে বিখ্যাত। এর কারণ হলো যে, তিনি বিড়াল নিয়ে খেলা করতেন ও কতকগুলি লোকের ছাগল চরাতেন। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজয়ের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি 4 বছর পর্যন্ত নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে অতিবাহিত করেন, তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যেখানে অবস্থান করতেন তিনিও সেখানে থাকতেন। আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হাদীসের জ্ঞান লাভ করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অসাধারণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই কারণে তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে প্রচুর জ্ঞানার্জন করে, সাহাবীগণের মধ্যে সবচাইতে বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর উপাধি লাভ করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 5374 টি। সন 57 হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং মাদীনার প্রসিদ্ধ কবরস্থান আল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। পৃথিবীর মধ্যে মাসজিদগুলি হলো আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার স্থান। আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ বিষয় হলো পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ।

2। মাসজিদসমূহের সম্মান করা অপরিহার্য; তাই সমস্ত মাসজিদ পরিষ্কার এবং সুবাসিত করে রাখা ওয়াজিব। এবং অপ্রীতিকর গন্ধ ও ময়লা পোশাক পরিধান করে মাসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়।

3। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান হলো সাধারণতঃ বাজার; কেননা সচরাচর বাজার হলো প্রতারণা, ঠকবাজি, মিথ্যা শপথ ইত্যাদির জায়গা এবং আল্লাহর জিকির থেকে বিরত থাকারও স্থান।

১৮
ঘৃণিত ব্যাধি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা
14 -عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ : " اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُنُونِ , وَالْجُذَامِ، وَالْبَرَصِ، وَسَيِّئِ الأَسْقَامِ ".

( سنن النسائي , رقم الحديث 5493, سنن أبي داود , رقم الحديث 1554, واللفظ للنسائي , وصححه الألباني ).

14 - অর্থ: আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই দোয়াটি পাঠ করতেন:

" اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُنُونِ , وَالْجُذَامِ، وَالْبَرَصِ، وَسَيِّئِ الأَسْقَامِ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকটে বাতুলতা বা উম্মত্ততা, কুষ্ঠরোগ, ধবল এবং সকল প্রকারের ঘৃণিত ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।

[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 5493 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1554, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান নাসায়ী থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 8 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই সমস্ত ঘৃণিত ব্যাধি থেকে আল্লাহর কাছে এই জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন যে, এই সমস্ত ব্যাধি হলো কঠিন ভয়াবহ। মানুষ এই সমস্ত ব্যাধিকে খুব ঘৃণিত ব্যাধি মনে করে; কেননা এই সমস্ত ব্যাধি মানুষের প্রকৃত অবস্থা পরিবর্তন করে দেয় এবং নষ্ট করে দেয়।

2। মানুষের স্বাস্থ্য সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত; সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন নিজের স্বাস্থ্য সঠিক পন্থায় রক্ষা করে এবং নিজের শরীরের সুস্থতা প্রাপ্ত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; কেননা এই সমস্ত ঘৃণিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে মানুষ নিজের অধিকারগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

3। মানুষের স্বাস্থ্য সঠিক পন্থায় রক্ষা করার কতকগুলি উপাদান রয়েছে। সেই উপাদানগুলি হলো প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ম বা কানুন ও বিধিব্যবস্থা। এবং মানুষ যেন তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বশ্যতা ও দাসত্ব স্বীকার করে। এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য মহান আল্লাহ যে সমস্ত নিয়ম বা কানুন ও বিধিব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেই সমস্ত নিয়ম বা কানুন ও বিধিব্যবস্থা নিজের স্বাস্থ্যরক্ষার নিমিত্তে মেনে চলা আল্লাহর বশ্যতা ও দাসত্ব স্বীকার করার নিদর্শন।

১৯
আরাফার দিনে রোজা রাখার মর্যাদা
15 - عَنْ أَبيْ قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَه ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 749, وصحيح مسلم , جزء من رقم الحديث 196- (1162), واللفظ للترمذي , وقَالَ الإمام الترمذي عن هذا الحديث : بأنه حديث حسن , وصححه الألباني ).

15 - অর্থ: আবু কাতাদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: আমি আল্লাহর কাছে আশা পোষণ করি যে, আরাফার দিনের একটি রোজা তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 749 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 196 -(1162) এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু কাতাদাহ বিন রিব্‌য়ী আল আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন মহাগৌরবময় সাহাবী। তিনি ইসলামের বড়ো বড়ো যুদ্ধ ও অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজে পাহারা দিতেন ও তত্ত্বাবধান করতেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে পারস্যের যুদ্ধের জন্য সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি সেই দেশের বাদশাহকে নিজ হাতে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর স্থান ও তারিখের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বলা হয়েছে যে তিনি সন 38 হিজরীতে কূফা শহরে মৃত্যুবরণ করেন এবং আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, তিনি মাদীনায় সন 54 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আরাফার দিনে হজ্জ সম্পাদনের কাজে রত থাকা ব্যক্তিগণ ছাড়া অন্য মুসলিমগণকে আরাফার দিনে রোজা রাখার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে।

2। আরাফার দিনের একটি রোজা তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের পাপের কাফ্ফারা হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো ছোটো ছোটো পাপের কাফ্ফারা এবং বড়ো পাপের ক্ষমা প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তওবার আনুষঙ্গিক বিষয়ের সহিত তওবা করার প্রয়োজন রয়েছে।

3- ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর নিকটে সৎকর্মের দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি উচ্চমর্যাদা লাভ করতে পারবে।

২০
শুধু শুক্রবারে বা জুমার দিনে রোজা রাখা ভালো কর্ম নয়
16 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " لاَ يَصُوْمُ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ , إلاَّ يَوْما قَبْلَهُ , أَوْ بَعْدَهُ " .

( صحيح البخاري , رقم الحديث 1985, وصحيح مسلم , رقم الحديث 147- (1144), واللفظ للبخاري ).

16 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যেন শুধু জুমার দিনে রোজা না রাখে। তবে যদি সে জুমার দিনের সাথে সাথে একদিন আগে কিংবা একদিন পরে রোজা রাখে তাহলে তা অবৈধ নয়”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1985 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 147 -(1144), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে শুধু শুক্রবারে বা জুমার দিনে রোজা রাখবে। তবে কোনো ব্যক্তির কোনো রোজা রাখার অভ্যাস থাকলে, সে ব্যক্তি শুধু জুমার দিনে রোজা রাখতে পারবে।

2। শুক্রবার বা জুমার দিনটি হলো দোয়া, জিকির এবং আল্লাহর উপাসনা বা ইবাদতে মগ্ন থাকার দিন এবং পবিত্র ও হালাল রুজি উপার্জন করার দিন; সুতরাং শুধু এই দিনে রোজা রাখা ভালো কর্ম নয়। তাই মহান আল্লাহ বলেছেন:

ﭽ ﭨ ﭩ ﭪ ﭫ ﭬ ﭭ ﭮ ﭯ ﭰ ﭱ ﭲ ﭳ ﭴ ﭼ , ( سورة الجمعة , الآية 10).

ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব যখন জুমার নামাজ পড়া শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর প্রদত্ত জীবিকার্জনের কাজে তৎপর থাকবে। এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে” । (সূরা আল জুমুয়া, আয়াত নং 10 এর অংশবিশেষ) ।

২১
আল্লাহর কাছে কতকগুলি লোকের গৃহীত দোয়া
17 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " ثََلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيْهِنَّ : دَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ , وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ , وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 1905, وسنن أبي داود , رقم الحديث 1536, و سنن ابن ماجه , رقم الحديث 3862, واللفظ للترمذي , قَالَ الإمام الترمذي : هذا حديث حسن , وحسنه الألباني ).

17 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে, আমি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “তিন জনের দোয়া সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়: অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতার বদ দোয়া”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1905 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1536 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3862, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণীও হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর নিকটে সব সময় গৃহীত হয়ে থাকে, সে অত্যাচারিত ব্যক্তি যদি একজন অমুসলিম বা কাফের হয় তবুও আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে থাকেন; কেননা আল্লাহ তার জন্য তথা সকলের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করা পছন্দ করেন।

2। মুসাফির ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর নিকটে সব সময় গৃহীত হয়ে থাকে; তাই মুসাফির ব্যক্তির জন্য এটা উচিত যে, সে যেন সফরের অবস্থায় অধিকতর সময় দোয়া করার মাধ্যমে কাটায়। আর খাস করে ওমরা এবং হজ্জ পালন করার জন্য সফর হলে, সেই সফরে দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ আরো বেশি থাকে।

3। সন্তানের মঙ্গলের জন্য পিতার দোয়া আল্লাহর নিকটে সব সময় গৃহীত হয়ে থাকে; কেননা পিতা তো তার সন্তানের জন্য আন্তরিকতার সহিত প্রাণ খুলে উদার চিত্তে স্নেহ ও দয়ার সহিত দোয়া করে থাকে।

অনুরূপভাবে সন্তানের অমঙ্গলের জন্য পিতার দোয়া আল্লাহর নিকটে সব সময় গৃহীত হয়ে থাকে; তাই পিতার জন্য এটা উচিত যে, সে যেন তার সন্তানের জন্য বদ দোয়া করা থেকে বিরত থাকে।

২২
আল্লাহর রাসূলের অতিশয় সম্মান প্রদর্শনে সীমা অতিক্রম করা হতে সতর্কীকরণ
18 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا , وَلاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا، وَصَلُّوْا عَلَيَّ؛ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 2042, وصححه الألباني ).

18 -অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের বাড়িগুলিকে কবরস্থানে পরিণত করবে না এবং আমার কবরকে তোমরা উৎসব স্থলে পরিণত করবে না। তবে হ্যাঁ! তোমরা আমার জন্য দরূদ পাঠ করবে তথা অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে। কেননা তোমরা যেখান থেকেই আমার জন্য দরূদ পাঠ করবে তথা অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে। সেখান থেকেই তা আমার কাছে পৌঁছে যাবে”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2042, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। বাড়িগুলির মধ্যে নফল নামাজ, আল্লাহর জিকির, দোয়া এবং পবিত্র কুরআন পাঠ করা হতে বিরত থাকা উচিত নয়। সুতরাং বাড়িগুলিকে এই সমস্ত আমল হতে বিরত রেখে কবরস্থানের সমতুল্য করে রাখা বৈধ নয়।

2। এই হাদীসটি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কবরকে ঈদের মত জনসমাবেশে বা উৎসব স্থলে পরিণত করতে নিষেধ করেছে। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। অথবা তারা যেন নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান করতে গিয়ে তাতে সীমা অতিক্রম না করে।

3। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সমাধি বা কবরের জন্য অথবা অন্যান্য কবরের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ; কেননা কোনো কবরের জন্য সফর করার অর্থই তো হলো সেই কবরকে ঈদের মত জনসমাবেশে বা উৎসব স্থলে পরিণত করা।

4। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা উচিত যে, সে যেন আনন্দের সহিত, ভালোবাসার সহিত এবং সম্মানের সহিত আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাত বা দরূদ পাঠ করে।

২৩
বিনা প্রয়োজনে ছবি বা চিত্রায়ন করা হতে সতর্কীকরণ
19 - عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : " إنَّ أشدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : اَلْمُصَوِّرُوْنَ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 5950, وصحيح مسلم , رقم الحديث 98 - (2109), واللفظ للبخاري ).

19 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “আল্লাহর নিকটে কিয়ামতের দিনে ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদের কঠিন ও সর্বাধিক শাস্তি হবে”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5950 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 98 -(2109), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে।

2। এই হাদীসটির মধ্যে জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করা হতে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে; কেননা এর দ্বারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়। এবং জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করার বিষয়টি হলো আল্লাহর সাথে শিরক স্থাপন করার একটি মাধ্যম এবং উপাদান।

3। এই হাদীসটিকে লক্ষ্য করে একথাও বলা হয় যে, যারা আল্লাহর সাথে শিরক স্থাপন করার জন্য মূর্তি বা প্রতিমা তৈরি করে, তাদের জন্য এই হাদীসটি প্রযোজ্য। সুতরাং মূর্তি বা প্রতিমা নির্মাতাদের জন্য এই হাদীসটি খাস রয়েছে। তাই তারাই কেয়ামতের দিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।

২৪
জান্নাত লাভের উপাদান
20 - عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ؛ فَقَالَ : " اتَّقُوْا اللهَ رَبَّكُمْ , وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ , وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ , وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ , وَأَطِيعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ، تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 616, قَالَ الإمام الترمذي عن هذا الحديث : بأنه حسن صحيح , وصححه الألباني ).

20 - অর্থ: আবু উমামা আল্ বাহেলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি বিদায়ী হজ্জের সময় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে ভাষণ দিতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হয়ে জীবনযাপন করো, এবং তোমরা তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ পড়তে থাকো, রমাজান মাসের রোজা রাখতে অবিচল থাকো, মালের জাকাত প্রদান করার জন্য সজাগ থাকো, এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক তোমরা তোমাদের নেতা ও শাসকগণের আনুগত্য করতে থাকো। তবেই তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাত লাভ করতে পারবে”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 616, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু উমামা সুদায় বিন আজলান বিন অহাব্‌ আলবাহেলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন সম্মানিত ধর্মপরায়ণ সাহাবী। সাহাবীগণের মধ্যে তিনি একজন বড়ো যোদ্ধা ছিলেন; জেহাদ করতে তিনি খুব ভালো বাসতেন; তাই তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে থেকে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে তাঁর বৃদ্ধা মাতার সেবা যত্নের জন্য তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উপদেশ অনুসারে শুধুমাত্র বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি।

তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের সঙ্গে থেকেও তাঁদের যুগে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 205 টি। তিনি শামদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং শামদেশের মাটিতেই তিনি হিম্‌স্‌ শহরে সন 81 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। পরকালে জান্নাত লাভের উপাদান হলো: আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়া, পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা, রমাজান মাসের রোজা রাখা এবং মালের জাকাত প্রদান করা।

2। তাকওয়া বা আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়ার ভাবার্থ হলো এই যে, মহান আল্লাহর ভয়, ভালোবাসা এবং অতিশয় শ্রদ্ধাসহকারে তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।

3। মুসলিম জাতির নৃপতিগণ, শাসকগণ বা রাষ্ট্রের প্রধানগণ এবং ইসলাম ধর্মের ধর্মপরায়ণ বিদ্বানগণ এবং মুসলিম জাতির যে কোনো কাজের নেতাগণের আনুগত্য করা অপরিহার্য। তবে এই আনুগত্য প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার যেন বিপরীত না হয়; কেননা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অবাধ্যতার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির আনুগত্য করা বৈধ নয়।

২৫
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অশালীন কর্ম ও আচরণ হতে সতর্ক করে
21 - عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَيْسَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ الْمَدْحُ مِنَ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ مَدَحَ نَفْسَهُ، وَلَيْسَ أَحَدٌ أَغْيَرَ مِنْ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 32- (2760), وصحيح البخاري , رقم الحديث 5220, واللفظ لمسلم ).

21 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর চেয়ে অধিকতর প্রশংসা প্রিয় আর কেউ নেই। তাই আল্লাহ নিজেই স্বয়ং সত্তার প্রশংসা করেছেন। এবং আল্লাহর চেয়ে অধিকতর ঈর্ষাপরায়ণও আর কেউ নেই। তাই তিনি অশালীন বস্তু হারাম বা অবৈধ করে দিয়েছেন”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 32 -(2760) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5220, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। নিশ্চয় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সুন্দরভাবে সুন্দর প্রশংসা করা ভালবাসেন। এবং তিনি তাঁর আনুগত্য, উপাসনা এবং স্মরণের মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার বিষয়টিকেও ভালবাসেন; তাই মুসলিম ব্যক্তির একটি উত্তম কাজ হলো এই যে, সে যেন তার পালনকর্তার অধিকতর সুন্দরভাবে সুন্দর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কর্মে রত থাকে। যাতে তার পালনকর্তার সাথে তার সুসম্পর্ক সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত থাকে।

2। কোনো ব্যক্তি যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহর সুন্দরভাবে সুন্দর প্রশংসা করতে থাকে, আল্লাহ তখন তাকে পুণ্যবাণ বা পুণ্যাত্মা করেদেন; সুতরাং সেই ব্যক্তি এর দ্বারা নিজেই উপকৃত হয়ে থাকে। কেননা মহান আল্লাহ তো সৃষ্টিজগৎ হতে অভাবমুক্ত। কোনো ব্যক্তি মহান আল্লাহর সুন্দরভাবে সুন্দর প্রশংসা করলে বা না করলে তাতে আল্লাহর কোনো মঙ্গলসাধন বা ক্ষতিসাধন হয় না।

3। পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ কঠিন তীব্র ঈর্ষাপরায়ণ; সুতরাং তাঁর চেয়ে অধিকতর কঠিন তীব্র ঈর্ষাপরায়ণ আর কেউ নেই।

মহান আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে ঈর্ষাপরায়ণ, এর মানে হলো এই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ পছন্দ করেন না যে, কোনো মানুষের কোনো প্রকার অকল্যাণ হোক কিংবা ক্ষতিসাধন হোক অথবা তার প্রতি কোনো প্রকার আক্রমণ হোক বা তার কষ্ট হোক, তার ধর্মের দিক দিয়ে বা জানও মানের দিক দিয়ে কিংবা তার মন বা বুদ্ধির দিক দিয়ে; তাই মহান আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন: ব্যভিচার, চুরি, অপহরণ, সুদ, মাদক দ্রব্য সেবন করা এবং সমস্ত প্রকারের অশালীন আচরণ ও অনৈতিক পথ অবলম্বন করা।

4। ন্যায় পন্থায় ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সৎলোক এবং পুণ্যবান লোকের প্রশংসা করা একটি পুণ্যের কাজ এবং সৎকর্ম; সৎলোক এবং পুণ্যবান লোকের মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।

5। যখন অন্যায় পন্থায় অন্ধভাবে আন্দাজ করে কোনো অসৎলোকের প্রশংসা করা হবে কিংবা যে ব্যক্তি নিজের প্রশংসা শুনলে অহংকারে পড়ে যাবে, সেই লোকের বা ব্যক্তির প্রশংসা করা কোনো সময় বৈধ নয়; কেননা এই অন্যায় প্রশংসার দ্বারা সমাজের ক্ষতিসাধন হবে এবং যে ব্যক্তির কোনো মর্যাদা নেই বা সম্মান নেই, তাকে অন্যায়ভাবে মর্যাদা বা সম্মান দেওয়া হবে; এই অবস্থার কারণে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

" إذَا رَأَيْتُمُ الْمَدََّاحِيْنَ فَاحْثُوْا فِيْ وُجُوْهِهِمُ التُّرَابَ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 69- (3002),).

অর্থ: “তোমরা যখন মানুষের সামনে প্রশংসাকারীদেরকে দেখতে পাবে, তখন তাদের মুখে মাটি রেখে দিবে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 69 -(3002) ]।

কিন্তু কোনো সৎলোক এবং পুণ্যবান লোকের সামনে ন্যায় পন্থায় তাঁর প্রশংসা করলে কোনো বাধা নেই; কেননা তিনি তো নিজের প্রশংসা শুনলে অহংকারে পড়ে যাবেন না; যেহেতু তাঁর মধ্যে পূর্ণরূপে তাকওয়া (অর্থাৎ: আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়ার বিষয়টি), বুদ্ধি এবং আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান বিদ্যমান রয়েছে।

২৬
কোনো মুসলিম ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবের উপরে অন্য কোনো ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হারাম
22 - عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : " لاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ , وَلاَ يَخْطُبْ بَعْضُكُمْ عَلَى خِطْبَةِ بَعْضٍ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 49 -(1412), ), وصحيح البخاري , رقم الحديث 5142, واللفظ لمسلم ).

22 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো এক ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করবে না। এবং তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো এক ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবের উপরে অন্য কোনো ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাব দিবে না।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 49 -(1412) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5142, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আব্দুল্লাহ বিন ওমার ইবনুল খাত্তাব একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি নাবালক অবস্থাতেই তাঁর পিতা দ্বিতীয় খলিফা ওমার ইবনুল খাত্তাব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখনই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার পূর্বেই তিনি মাদীনায় হিজরত করেন। তিনি সর্ব প্রথমে খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মিশর, শামদেশ, ইরাক, বাসরা ও পারস্যের বিজয়েও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সুদর্শন, সাহসী ও সত্য প্রকাশকারী সাহাবীগণের মধ্যে জ্ঞানী এবং বিদ্বান বা বিদ্যাবান হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে 2630 টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি ইবাদত ও পরহেজগারিতায় ছিলেন অনুকরণীয় সাহাবী। তিনি সন 73 হিজরীতে 86 বছর বয়সে মাক্কায় মৃত্যুবরণ করেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোনো ব্যক্তির তথা মুসলিম ব্যক্তির ক্রয়-বিক্রয়ের উপরে অন্য কোনো ব্যক্তির ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম।

2। এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, কোনো ব্যক্তির তথা মুসলিম ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবের উপরে অন্য কোনো ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া অবৈধ।

3। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষকে সচ্চরিত্র বা ভাল আচরণ এবং পরিষ্কার হৃদয়ের উপর অবস্থিত হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে; যেন মুসলিম সমাজের সকল সদস্যগণের মধ্যে থেকে পরস্পর শত্রুতা এবং ঝগড়া-বিবাদের অবসান ঘটে যায়।

২৭
নিশ্চয় আল্লাহ সেই প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঠিক ভক্ত
23 - عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَقُوْلُ : " إنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ، الْغَنِيَّ، الْخَفِيَّ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 11- (2965),).

23 - অর্থ: সায়াদ বিন আবি ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ সেই প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঠিক ভক্ত, সৃষ্টিজগতের অমুখাপেক্ষী এবং আত্মগোপনকারী”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 11 -(2965) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু ইসহাক সায়াদ বিন আবী অক্কাস আজ জহরী আল কুরাশী একজন মহাবিখ্যাত সাহাবী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হিজরতের 23 বছর পূর্বে মাক্কা মহানগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং সেখানেই তিনি প্রতিপালিত হন ও বড়ো হন। তিনি ইসলাম ধর্ম আবির্ভূত হওয়ার প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যে দশজন সাহাবীকে দুনিয়াতেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই দশজন সাহাবীগণের মধ্যে হলেন তিনি একজন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যে ছয়জন সাহাবীগণের মধ্যে থেকে একজনকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মুসলিম জাহানের খলিফা ও শ্রেষ্ঠনৃপতি নিযুক্ত করার জন্য একটি পরিষদ বা সভা গঠন করেছিলেন, সেই ছয়জন সাহাবীগণের মধ্যে সায়াদ বিন আবী ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ছিলেন অন্যতম একজন মহাসাহাবী।

তিনি মাদীনায় হিজরত করেন। এবং বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মায়ের পিতৃব্যপুত্র ছিলেন। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে মামা বলেই ডাকতেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন তাঁর মামাদের অন্তর্ভুক্ত যদিও তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মায়ের সহোদর ভাই ছিলেন না।

সায়াদ বিন আবি ওয়াক্কাস ছিলেন একজন বিরাট সাহসী ও যোদ্ধা সাহাবী। এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বড়ো বড়ো নেতাদের অন্তর্গতই ছিলেন তিনি। আবু বাকর ও ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] দুই খলিফার আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রমে তাঁর মহা অবদান রয়েছে। ওমার এবং ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর আমলে তাঁকে কূফা শহরের আমির বা শাসক নিযুক্ত করা হয়েছিল।

সায়াদ বিন আবি ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] পারস্য এবং ইরাক সাম্রাজ্যের যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর প্রধান নেতা ও সেনাপতি ছিলেন। এবং আল্লাহর করুণায় তিনি কাদসিয়ার যুদ্ধে পারস্য এবং ইরাক সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও পরাস্ত করে জয়লাভ করেন। মাদায়েনের যুদ্ধেও তিনি জয়লাভ করেন। তিনি মহান আল্লাহর কাছে এমন পবিত্র মানুষ ছিলেন যে, আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে নিতেন। তাঁর মহামর্যাদার সমস্ত কথা এখানে উল্লেখ করার সুযোগ নেই বলে এই বিষয়টিকে অধিক দীর্ঘ করলাম না।

অতঃপর সাহাবীগণের মধ্যে যখন ফেতনা এবং শত্রুতা সৃষ্টি হয়, তখন তিনি রাজনীতির কাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম পরিত্যাগ করে মাদীনা শহর থেকে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে অবস্থান করেন। এবং নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আদেশ প্রদান করেন যে, তারা যেন সাহাবীগণের মধ্যে যে ফেতনা এবং শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ফেতনা এবং শত্রুতার কোনো সংবাদ বা রাষ্ট্রীয় কোনো খবর তাঁর কাছে না পৌঁছায়।

হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 270 টি হাদীস পাওয়া যায়।

তিনি একজন বেঁটে আকারের মানুষ ছিলেন। তিনি মাদীনা শহর থেকে সাত মাইল দূরে আকীক নামক জায়গাতে তাঁর প্রাসাদে সন 55 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখান থেকে তাঁর দেহ মাদীনা শহরে নিয়ে আসা হয় এবং মাদীনা শহরের শাসক মারওয়ান ইবনুল হাকাম তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান। এবং তাঁকে মাদীনার আল বাকী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। হিজরতকারী সাহাবীগণের মধ্যে তিনিই সব শেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করা অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয় বিষয়; তাই সকল মানুষের উচিত যে, তারা যেন সামাজিকভাবে সমাজের সদস্যদের সাথেই জীবনযাপন করে।

2। মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করা অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয় বিষয়, কিন্তু এই মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করার কারণে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা, অমান্যতা অথবা নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করা হয়, তাহলে সামাজিকভাবে সমাজের সদস্যদের সাথে জীবনযাপন ত্যাগ করে সকলকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বা একক ভাবে জীবনযাপন করাই হলো উত্তম পন্থা। বিশেষ করে তাদের জন্য এই বিধানটি বেশি উপযোগী বা প্রযোজ্য যারা নিজেকে আল্লাহর অবাধ্যতা কিংবা পাপের কাজ থেকে এবং সন্দেহযুক্ত বিষয় ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়।

3। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা অপরিহার্য কিন্তু এই বন্ধন রক্ষা করার কারণে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা, অমান্যতা অথবা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করা হয় তাহলে; এই ক্ষেত্রে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা না করাই উত্তম পন্থা; কেননা ইসলাম ধর্মের একটি বিধান রয়েছে:

قاعدة : " درء المفاسد مقدم على جلب المنافع ".

অর্থ: “মঙ্গল আনয়নের চেয়ে অমঙ্গল দূরীকরণেরই বেশি দরকার”।

(সুতরাং যে জিনিসে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল বেশি আছে, সে জিনিসটি বর্জনীয়। এবং যে জিনিসে অমঙ্গলের চেয়ে মঙ্গল বেশি আছে, সে জিনিসটি গ্রহণীয়।)

4। এই হাদীসটির ভাবার্থঃ আল্লাহ সেই প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঠিক ভক্ত। আল্লাহর সঠিক আত্তাকী বা ভক্ত ব্যক্তি বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য বা করণীয় কাজগুলি সম্পাদন করে এবং বর্জনীয় অবৈধ বস্তুগুলি পরিত্যাগ করে। আর আলগাণী বা সৃষ্টিজগতের অমুখাপেক্ষী ব্যক্তি বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তির আত্মা প্রকৃতপক্ষে তৃপ্ত, সেই তৃপ্ত আত্মার মানুষই আল্লাহর কাছে প্রিয়; কেননা সে তো শুধু মাত্র আল্লাহরই মুখাপেক্ষী ব্যক্তি আর অন্য কোনো সৃষ্টি বস্তুর মুখাপেক্ষী নয়। এবং আলখাফী বা আত্মগোপনকারী বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলে তার বিষয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করে না এবং উপস্থিত থাকলে তাকে কেউ চিনতে পারে না। অথচ সে আল্লাহর কাছে মহামর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি এবং সে প্রকৃতপক্ষে জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ স্থানের অধিকারী ব্যক্তি ।

২৮
সূরা আল মুলকের মর্যাদা
24 -عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : " إِنَّ سُوْرَةً فِي الْقُرْآنِ ثَلاَثُوْنَ آيَةً , شَفَعَتْ لِصَاحِبِهَا؛ حَتَّى غُفِرَ لَهُ , ﭽ ﭑ ﭒ ﭓ ﭔ ﭼ ". ( سورة الملك : ١ ).

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 3786, و سنن أبي داود , رقم الحديث 1400, وجامع الترمذي , رقم الحديث 2891, واللفظ لابن ماجه , قَالَ الإمام الترمذي عن هذا الحديث : بأنه حديث حسن , وصححه الألباني ).

24 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “পবিত্র কুরআনের মধ্যে ত্রিশটি আয়াত বহনকারী একটি সূরা আছে। উক্ত সূরাটি তার সংরক্ষণকারীর জন্য সুপারিশ করার ফলে সে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছে। উক্ত সূরাটির নাম হলো:

ﭽ ﭑ ﭒ ﭓ ﭔ ﭼ ". ( سورة الملك : ١ )

ভাবার্থের অনুবাদ: “মহামহিমান্বিত সেই সত্তা মঙ্গলদায়ক, যাঁর হাতে রয়েছে সর্বময় কর্তৃত্ব”।

(সূরা আল্ মুলক, আয়াত নং 1 এর অংশবিশেষ)।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3786, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1400 এবং জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2891। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা সূরা আল্ মুলক এর কতকগুলি মর্যাদার বিষয় প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয়।

2। যে ব্যক্তি যত্নসহকারে এই সূরাটি পাঠ করবে ও তার উপদেশগুলি মেনে চলবে এবং একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতার সহিত আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আনুগত্য করবে, সেই ব্যক্তির পাপমোচনের জন্য এই সূরাটি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।

3। যত্নসহকারে এই সূরাটির পঠনপাঠন, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা, গবেষণা এবং অনুধাবন করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে।

২৯
নামাজের যত্নবান হওয়া অপরিহার্য
25 - عَنْ بُرَيْدَةِ بْنِ الحُصَيْبِ الْأَسْلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اَلْعَهْدُ الَّذِيِ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ : اَلصَّلاَةُ؛ فَمَنْ تَرَكَهَا؛ فَقَدْ كَفَرَ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 2621, وسنن ابن ماجه , رقم الحديث 1079, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث : بأنه حسن صحيح غريب , وصححه الألباني ).

25 - অর্থ: বোরাইদা ইবনুল হোসাইব আল্ আসলামী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আমাদের এবং তাদের মধ্যে যে বিষয়টির প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সে বিষয়টি হলো নামাজ। তাই যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করে দিবে, সে ব্যক্তি একজন অমুসলিম অথবা কাফের হয়ে যাবে”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2621 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1079, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

বোরাইদা ইবনুল হোসাইব আল্ আসলামী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন সম্মানিত সাহাবী। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মাক্কা ত্যাগ করে মাদীনা অভিমুখে হিজরত করে যাওয়ার সময় রাস্তায় তার সাথে এবং তার গ্রামবাসীর সাথে দেখা হয়। তাদের সংখ্যা ছিলো তখন 80 জন। সেই সময়েই তারা সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাদের সাথে সেখানে এশার নামাজ পড়েছিলেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 177 টি।

বোরাইদা ইবনুল হোসাইব আল্ আসলামী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নিজের গ্রামেই থাকেন। ওহুদের যুদ্ধের পর তিনি মাদীনায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে উপস্থিত হন। এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে থেকে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি বাসরা শহরে গমন করেন এবং সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আল্লাহর পথে জেহাদ করার উদ্দেশ্যে আবার খোরাসান চলে যান। তারপর তিনি মার্ভ অঞ্চলে গিয়ে অবস্থান করেন এবং সেখানেই ইয়াজিদ বিন মোয়াবিয়ার খেলাফতের আমলে 62 অথবা 63 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে এই বিষয়টি নির্ধারিত রয়েছে যে, নামাজ হলো মুসলিম এবং অমুসলিম ব্যক্তির মধ্যে তফাত করার একটি প্রকাশ্য নিদর্শন।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোনো সময় নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে অবহেলা করা বৈধ নয়।

3। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের আত্মা হলো নামাজ। সুতরাং নামাজ বর্জন করে দেওয়ার পর বা নামাজ পরিত্যাগ করার পর প্রকৃত ইসলামের আর্ কোনো প্রকাশ্য নিদর্শন থেকে যায় না।

৩০
প্রকৃত ইসলাম একটি উদার ধর্ম
26 - عَنْ مُعَاذٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ؛ فَكَانَ يُصَلِّي َالظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيْعًا , وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيْعًا .

( صحيح مسلم , رقم الحديث 52- (706),).

26 - অর্থ: মোয়াজ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তাবূক যুদ্ধের অভিযানে বের হয়েছিলাম। তাই সেই অভিযানে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জোহর ও আসরের নামাজ একত্রিত করে পড়তেন এবং মাগরিব ও এশার নামাজও একত্রিত করে পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 52 -(706)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

মুয়াজ বিন জাবাল বিন আমর্‌ বিন আওস, আবু আব্দুর রহমান আল্‌ আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে মর্যাদা সম্পন্ন ছিলেন। আকাবার বায়আত অনুষ্ঠান, বদরের যুদ্ধ সহ আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সমস্ত যুদ্ধে তিনি যোগদান করেন। তিনি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র 18 বছর।

তিনি সাহাবীগণের মধ্যে শরীয়তের হালাল-হারাম সম্পর্কে ছিলেন অধিক জ্ঞানের আধার। হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 157 টি হাদীস পাওয়া যায়।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে ইয়ামান দেশের আমীর নিযুক্ত করেই সেখানে পাঠিয়েছিলেন, এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণের পর তিনি আবার মাদীনায় ফিরে আসেন। অবশেষে তিনি শাম দেশে অবস্থান করেন এবং সেখানেই সন 18 হিজরীতে অথবা 17 হিজরীতে 34 বছর বয়সে মহামারী রোগে (প্লেগে) মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জোহর ও আসরের নামাজ এবং মাগরিব ও এশার নামাজ অগ্রিম এবং বিলম্বের সহিত একত্রিত করে পড়া বৈধ বা জায়েজ।

2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম একটি সহজ ও উদার ধর্ম। তাই এই ধর্মে কোনো প্রকারের জটিলতা বা অসুবিধা এবং কষ্টের বিষয় নেই। এই জন্য প্রকৃত ইসলাম ধর্মে কতকগুলি নামাজ একত্রিত করে পড়ার বিধান এসেছে।

3। এই হাদীসটির মধ্যে এবং আল্লাহর বাণী:

ﭽ ﮢ ﮣ ﮤ ﮥ ﮦ ﮧ ﮨ ﮩ ﭼ , ( سورة النساء : ١٠٣ )

ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে ঈমানদার মুসলিমগণের উপর নির্দিষ্ট নামাজ পড়া ফরজ বা অপরিহার্য করা হয়েছে”।

(সূরা আন্ নিসা, আয়াত নং 103 এর অংশবিশেষ)।

এর মধ্যে কোনো প্রকারের অসঙ্গতি বা পরস্পরবিরোধিতা নেই। কেননা নামাজ একত্রিত করে পড়ার বিধানটি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থার জন্য প্রযোজ্য, সাধারণ অবস্থার জন্য নয়। এবং সেই ব্যক্তির জন্যও নয় যে ব্যক্তি অকারণে নামাজ একত্রিত করে পড়ার অভ্যাসে অভ্যাসিত।

৩১
মানব জীবনের প্রধান লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ
27 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : " مَنِ الْتَمَسَ رِضَا اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللَّهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ، وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ؛ وَكَلَهُ اللَّهُ إِلَى النَّاسِ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 2414, سكت الإمام الترمذي هنا ولم يقل عن هذا الحديث شيئا , وصححه الألباني ).

27 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভকে মানুষের সন্তুষ্টিলাভের উপর প্রাধান্য দিবে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ মানব সমাজ হতে অমুখাপেক্ষী করে দিবেন। এবং যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টিলাভকে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উপর প্রাধান্য দিবে, তাকে মানুষের অন্যায়-অত্যাচারের উপর ন্যস্ত করে দিবেন”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2414, ইমাম তিরমিযী হাদীসটির বিষয়ে কিছু বলেন নি। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। সকল জাতির মানব সমাজের পালনকর্তা ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আনুগত্যকে সকল জাতির মানব সমাজের আনুগত্যের উপর প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য।

2। আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের প্রকৃত মাধ্যম হলো একনিষ্ঠতার সহিত তাঁর আনুগত্য এবং দাসত্ব স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে মেনে চলা।

3। যে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে দুনিয়া ভোগের সামগ্রীর দ্বারা বিক্রি করে দিবে, মানুষকে ভয় করবে এবং আল্লাহকে ভয় না করে তাঁকে অমান্য করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্মান নষ্ট করে তাকে অপমানিত করবেন এবং তার সমস্ত বিষয়কে অমঙ্গলদায়ক করে দিবেন।

৩২
প্রকৃত ইসলাম হলো সচ্চরিত্রের একটি ধর্ম
28 - عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ , وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ؛ تَمْحُهَا , وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 1987, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن صحيح , وحسنه الألباني ).

28 - অর্থ: আবু জার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বলেছেন: “তুমি যেখানেই থাকবে, সেখানেই আল্লাহকে ভক্তিসহকারে তাঁর সঠিক ভক্ত হয়ে জীবনযাপন করবে এবং পাপের কাজ সংঘটিত হয়ে গেলে, তার সঙ্গে সঙ্গে এমন পুণ্যের কাজ করবে, যা পাপকে মিটিয়ে দিবে এবং লোকের সাথে সব সময় চরিত্র ভালো রাখবে”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1987, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 10 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। তাকওয়া (অর্থাৎ: আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়ার বিষয়টি), বাস্তবায়িত হয়: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর আদেশ পালনে রত থেকে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বা বারণকৃত জিনিস থেকে বিরত থেকে নিজের আত্মাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা ও যত্ন করার মাধ্যমে।

2। যে আচরণকে প্রকৃত ইসলাম এবং সঠিক বুদ্ধি ভালো বলে স্বীকৃতি দেয়, তাকেই বলে সচ্চরিত্র বা সৎস্বভাব। এবং সচ্চরিত্র বা সৎস্বভাবের প্রভাব হলো: কাউকে কষ্ট না দেওয়া, লোকের উপকার করা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করা।

3। অধিকতর সৎকর্ম করলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়। মানুষের জন্য মহান আল্লাহর এটি একটি বড়ো অনুগ্রহ।

4। প্রকৃত ইসলাম হলো সচ্চরিত্রের একটি ধর্ম। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষকে তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র এবং সৎস্বভাব বজায় রাখার উপদেশ প্রদান করে। সুতরাং ইসলামের প্রতি দাওয়াত প্রদান, শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের সকল বিষয়ে সচ্চরিত্র বজায় রাখা অপরিহার্য।

৩৩
রুকূ ও সিজদাতে পঠনীয় দোয়া
29 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَقُوْلُ فِيْ رُكُوْعِهِ وَسُجُوْدِهِ : " سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 794, وصحيح مسلم , رقم الحديث 217 - (484), واللفظ للبخاري ).

29 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রুকূ এবং সিজদাতে এই দোয়াটি পাঠ করতেন:

" سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ".

অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি এবং আমার এই পবিত্রতা ঘোষণা হলো আপনার প্রশংসার সহিত। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 794 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 217 -(484), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুসরণ করে এই দোয়াটি রুকূ এবং সিজদাতে পাঠ করা উচিত:

" سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ".

2। রুকূ ও সিজদাতে দোয়া এবং তাসবীহ পাঠ করার বিষয়টি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কর্ম দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।

3। রুকূ ও সিজদাতে অনেক রকম দোয়া এবং তাসবীহ পাঠ করার বিষয়টি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু এখানে আমি এই বিষয়টিকে অতি সংক্ষেপে পেশ করলাম।

৩৪
মাসজিদ ও তার আবাদকারীর মর্যাদা
30 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : " مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ، أَعَدَّ اللهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنَ الْجَنَّةِ، كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 662, وصحيح مسلم , رقم الحديث 285- (669), واللفظ للبخاري ).

30 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি মাসজিদে আসে অথবা মাসজিদ থেকে যায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে আতিথেয়তার সামগ্রী প্রস্তুত করেন। সে যখনই মাসজিদে আসে অথবা মাসজিদ থেকে যায়”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 662 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 285 -(669), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর কাছে মাসজিদের মহামর্যাদা রয়েছে এবং যে ব্যক্তি মাসজিদে এসে আল্লাহর উপাসনা বা ইবাদত অথবা জিকির এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, সেই ব্যক্তিরও মহান আল্লাহর কাছে মহামর্যাদা রয়েছে।

2। মহান আল্লাহর তৈরি করা জান্নাতের প্রতি এই ভাবে ঈমান স্থাপন করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য যে, জান্নাত হলো আল্লাহর সৃষ্টিজগতের অন্তর্গত বস্তু। জান্নাত এখন বিদ্যমান রয়েছে। এই জান্নাত কোনো দিন ধ্বংস হওয়ার নয়। সুতরাং এই জান্নাত হলো অনন্তকাল টিকে থাকার বস্তু। তাই এই জান্নাতের কোনো দিন অধঃপতন হবে না। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এই জান্নাতে বিভিন্ন রকম নেয়ামত তৈরি করেন, যখনই তাঁর প্রিয় বান্দা বা ভক্তরা আল্লাহর কোনো ইবাদত বা উপাসনা পুনরায় সম্পাদন করেন।

3। মাসজিদগুলিকে আল্লাহর আনুগত্য ও উপাসনার মাধ্যমে আবাদ করে রাখার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির এটা উচিত যে, সে যেন মাসজিদগুলির সম্মান রক্ষা করে। এবং সুন্দর জামাকাপড় পরিধান করে সুগন্ধি বা মধুর গন্ধযুক্ত হয়ে ভদ্রতার সহিত মাসজিদগুলিতে প্রবেশ করে। আর নোংরা বা ময়লা জামাকাপড় পরিধান করে, খারাপ গন্ধ বা দুর্গন্ধ নিয়ে কোনো দিন মাসজিদগুলিতে যেন সে প্রবেশ না করে। অতঃপর মাসজিদগুলিতে প্রবেশ করার পর তাতে যেন সে কোনো প্রকার অসার, অযথা কাজ না করে এবং বাজে কথা না বলে।

4। এই হাদীসটিতে ( غَدَا وَرَاحَ ) শব্দ দুটির দ্বারা মাসজিদে আসা এবং মাসজিদ থেকে যাওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে।

৩৫
ক্রয়বিক্রয় সংক্রান্তে সহজকরণের মর্যাদা
31 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا؛ أَقَالَهُ اللَّهُ عَثْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 2199, وسنن أبي داود , رقم الحديث 3460, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).

31 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির বিক্রীত বা ক্রীত বস্তু প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা অথবা প্রস্তাব গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তার ভুল-ভ্রান্তির শাস্তি হতে মুক্তি প্রদান করবেন”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2199, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 3460। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আল্ ইকালা (অর্থাৎ: বিক্রীত বা ক্রীত বস্তু প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা গ্রহণ করা) ওলামায়ে ইসলামের পরিভাষায় হলো:

ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতি দ্বারা তাদের ক্রয়বিক্রয়ের চুক্তিভঙ্গ ও বরখাস্ত করা এবং তাদের ক্রয়বিক্রয়ের প্রভাব বাতিল ও বিলুপ্তি করা।

2। ইসলাম ধর্মে আল্ ইকালার (অর্থাৎ: বিক্রীত বা ক্রীত বস্তু প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা গ্রহণ করা) বিধানটি এসেছে মানুষের উপকার,সাহায্য,সহানুভূতির উদ্দেশ্যে এবং জটিলতা বা অসুবিধা দূরীকরণের জন্য। তাই মানুষের ভুল-ভ্রান্তির বিষয়গুলি ক্ষমা করে দেওয়া প্রকৃত ইসলামের বিধান মোতাবেক একটি প্রয়োজনীয় জিনিস।

3। ইসলাম ধর্মে আল্ ইকালার (অর্থাৎ: বিক্রীত বা ক্রীত বস্তু প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা গ্রহণ করা) বিধানটির পদ্ধতি হলো এইরূপ:

কোনো ক্রয়কারী ব্যক্তি অন্য কোনো বিক্রয়কারী লোকের কাছ থেকে কোনো বস্তু ক্রয় করার পর লজ্জিত বা অনুতপ্ত হয়েছে; সেই ক্রীত বস্তুতে কোনো দোষ বা খুঁত থাকার জন্য অথবা ক্রয়কারী ব্যক্তির কাছে সেই ক্রীত বস্তুর প্রয়োজন অথবা তার মূল্য না থাকার কারণে। তাই ক্রয়কারী ব্যক্তি উক্ত ক্রীত বস্তুটি বিক্রয়কারীকে ফেরত দিবে এবং বিক্রয়কারী ব্যক্তি উক্ত বিক্রীত বস্তুটি ফেরত নিবে।

4। ইসলাম ধর্মে আল্ ইকালার (অর্থাৎ: বিক্রীত বা ক্রীত বস্তু প্রত্যর্পণ করার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা গ্রহণ করা) বিধানটি এসেছে প্রকৃতপক্ষে ক্রয়কারীর প্রতি বিক্রয়কারীর অনুগ্রহ হিসেবে; কেননা ক্রয়বিক্রয়ের কাজ তো সম্পন্ন হয়ে গেছে; তাই বিক্রয়কারীর সমর্থন ছাড়া এই কাজ একাই ক্রয়কারীর দ্বারা সম্পাদিত হবে না।

৩৬
লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে দেওয়ার সাথে সাথে আরো কিছু অংশ বেশি প্রদান করার প্রতি উৎসাহিত করা
32 - عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا وَزَنْتُمْ فَأَرْجِحُوْا ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 2222, وصححه الألباني ).

32 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা যখন কোনো জিনিস কোনো ব্যক্তিকে ওজন করে দিবে, তখন তাকে ওজনে কিছু বেশি প্রদান করবে”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2222, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

জাবের বিন আব্দুল্লাহ আল্‌ আন্‌সারী একজন বিখ্যাত সাহাবী। তিনি তার পিতাসহ আকাবার রাতে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এবং বাইয়াতে রিজওয়ানেও তিনি উপস্থিত (শামিল) ছিলেন। তিনি বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1540 টি। তিনি সন 73 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মহান আল্লাহর সাথে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির সুসম্পর্ক স্থাপিত রয়েছে। তাই তার মধ্যে সর্বদা বিরাজ করে ন্যায়বিচার ও সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তবে ন্যায়বিচারের বিষয়টির যোগাযোগ রয়েছে মানসিক অবস্থার সাথে এবং সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার যোগাযোগ রয়েছে সঠিক বুদ্ধির সাথে। তাই প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি কোনো লোকের অধিকার নষ্ট করে না বা কোনো ব্যক্তিকে ওজনে কোনো দিন কিছু কম দেয় না।

আর তাতফীফ বলা হয়: ওজন করার সময় লোকের কাছ থেকে নিজের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নেওয়া। এবং অন্য লোকের অধিকার নষ্ট করে তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে না দেওয়া বা তাদেরকে ওজনে কম দেওয়া।

2। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন নিজের অন্তরকে উদারতায় পূর্ণ করে রাখে। আর নিজের ভালো আচরণ ও উদারতার দ্বারা মানুষের উপকার করে। এবং তাদেরকে তাদের অধিকার বা প্রাপ্য সম্পূর্ণরূপে দেওয়ার সাথে সাথে আরো কিছূ অংশ বেশি প্রদান করে।

3। যে ব্যক্তি ওজনে কম দেয় তার সাথে যারা আদান-প্রদান করে বা দেওয়া-নেওয়া করে তাদেরকে সে তাদের প্রাপ্য সব সময় কম দিয়ে থাকে। এবং সে যখন তাদের কাছ থেকে কিছু ক্রয় করে, তখন সে নিজের প্রাপ্য তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। এবং সে যখন তাদের কাছে কিছু বিক্রয় করে, তখন সে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সব সময় কিছু কম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্য মুসলিম ব্যক্তি ক্রয়বিক্রয় এবং আদান-প্রদান বা দেওয়া-নেওয়ার সময় সততা বজায় রাখে; সুতরাং সে কোনো মানুষকে প্রতারিত করে না বা ধোঁকা দেয় না।

৩৭
মুসলিম জাতি একটি অট্টালিকার ন্যায়, যার একটি অংশ অন্য অংশটিকে মজবূত করে ধরে রাখে
33 - عَنْ أبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اَلْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْياَنِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضاً ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 2446, وصحيح مسلم , رقم الحديث 65 - (2585), واللفظ لمسلم ).

33 - অর্থ: আবু মুসা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “একজন প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি অন্য একজন প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির জন্য একটি অট্টালিকার ন্যায়, যার একটি অংশ অন্য অংশটিকে মজবুত করে ধরে রাখে”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2446 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 65 -(2585), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু মুসা আব্দুল্লাহ বিন কাইস বিন সোল্যাইম আল আশয়ারী আল ইয়ামানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি মাক্কায় উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অত:পর আবার ইয়ামানে ফিরে গিয়ে আবিসিনিয়া (অথবা ইথিওপিয়া আফ্রিকার একটি দেশ) অভিমুখে যাত্রা করেন। খাইবার বিজয়ের পর তিনি আবার মাদীনায় আসেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে সকলের চেয়ে অতি সুন্দর কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন। এবং তিনি ইবাদতের ক্ষেত্রে, জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের বিষয়ে এবং পরহেজগারীতায় প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। তিনি কূফা শহরে অথবা মাদীনায় সন 44 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটি মহাহাদীস, এই হাদীসটি মুসলমানদেরকে ভাই ভাই হয়ে, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল হয়ে, ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতির সহিত সমব্যথী হয়ে জীবনযাপন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং তাদের মধ্যে থেকে প্রতিটি ব্যক্তি নিজের জন্য যে জিনিসটি পছন্দ করবে, তার অন্য ভাই এর জন্য সেই জিনিসটিই পছন্দ করবে। আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই ভাবেই মুসলমানদের বিবরণ পেশ করেছেন।

2। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, মুসলমানরা যেন একে অপরকে অনুগ্রহ করে এবং তারা সবাই যেন মিলিত হয়ে, ঐক্য বজায় রেখে বা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করে, একটি অট্টালিকার ন্যায়, যার একটি অংশ অন্য অংশটিকে মজবুত করে ধরে রাখে।

3। এই হাদীসটি মুসলমানদেরকে উপদেশ প্রদান করে যে, তারা সবাই যেন নিজেদের মধ্যে একতা ও সহযোগিতা, ইসলাম ধর্মের কাজে সাহায্য, পবিত্র কুরআনের আলোকে ঐক্যের প্রতীক মজবুত করে রাখে। এবং তারা যেন নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ছত্রভঙ্গ না হয়ে যায়।

৩৮
যে ব্যক্তি দুনিয়ার অমঙ্গল হতে সংরক্ষিত থাকবে, সে ব্যক্তি নিশ্চয় কল্যাণময় জীবন লাভ করতে পারবে
34 - عَنْ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ أَيْمُ اللهِ لَقَدْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : " إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ , إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنُ , إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنُ , وَلَمَنْ ابْتُلِيَ؛ فَصَبَرَ فَوَاهًا ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 4263, وصححه الألباني ).

34 - অর্থ: মেকদাদ ইবনুল আসওয়াদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়ার অমঙ্গল হতে সংরক্ষিত থাকবে, সে ব্যক্তি নিশ্চয় কল্যাণময় জীবন লাভ করতে পারবে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার অমঙ্গল হতে সংরক্ষিত থাকবে, সে ব্যক্তি নিশ্চয় কল্যাণময় জীবন লাভ করতে পারবে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার অমঙ্গল হতে সংরক্ষিত থাকবে, সে ব্যক্তি নিশ্চয় কল্যাণময় জীবন লাভ করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার অমঙ্গলে পড়ে নিপীড়িত হবে এবং তাতে ধৈর্যধারণ করবে। সে ব্যক্তির ধৈর্যধারণ অতি মঙ্গলময় কর্ম বলে বিবেচিত হবে”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4263। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আলমেকদাদ বিন আমর, তিনি আল-মেকদাদ ইবনুল আসওয়াদ আলকিনদী নামে প্রসিদ্ধ এবং তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্য প্রাপ্তদের অন্যতম একজন সাহাবী। তিনি ইসলামের প্রথম অশ্বারোহী যোদ্ধা। এবং তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সম্মানিত ও উত্তম সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাকে জিহাদের জন্য আহ্বান করা হলে তিনি তাতে দ্রুত সাড়া দানকারী ছিলেন এমনকি তিনি তার জীবনের শেষ দিকেও জিহাদের জন্য অগ্রগামী ছিলেন । আর ইসলামে তিনিই সর্বপ্রথম অশ্বারোহী সৈন্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এবং তিনি বদর, ওহুদ এবং খন্দক সহ সমস্ত যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন।

তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলা 42 টি।

আলমেকদাদ সাহাবী মহা দানশীল পরোপকারী ছিলেন। নিজের সম্পদ থেকে তিনি হাসান ও হোসাইন [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা]কে ছত্রিশ হাজার এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রীদের প্রত্যেককে সাত হাজার দিরহাম করে দেওয়ার জন্য অসিয়ত করেছিলেন।

আলমেকদাদ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] আমীরুল মুমেনীন ওসমান বিন আফফান এর খেলাফতের যুগে 70 বছর বয়সে মাদীনা হতে তিন মাইল দূরে জুর্ফ নামক স্থানে 33 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর তাকে মাদীনায় নিয়ে আসা হয় এবং ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তার জানাজার নামাজ পড়ান এবং আলবাকী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। তাকওয়া বা আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়ার দ্বারা ফেতনা হতে নিরাপত্তা, শান্তি ও সহজলভ্য জীবিকা এবং সর্ব প্রকার মঙ্গল ও দেশে অধিকতর কল্যাণ অর্জিত হয়।

2। ইসলাম হলো: রহমত, শান্তি এবং নিরাপত্তার ধর্ম; তাই মহান আল্লাহ মুসলিম জাতিকে অমঙ্গলে বা বিপদে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক করেছেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেছেন:

ﭽ ﯱ ﯲ ﯳ ﯴ ﯵ ﯶ ﯷ ﯸ ﯹ ﯺ ﯻ ﯼ ﯽ ﯾ ﯿ ﭼ , ( سورة الأنفال , الآية ٢٥ ).

ভাবার্থের অনুবাদ: “তোমরা সতর্ক হয়ে যাও সেই শাস্তি হতে, যা বিশেষভাবে তোমাদের জালিম লোকদেরকেই শুধু আক্রমন করবে না । আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর”।

(সূরা আল আনফাল, আয়াত নং 25) ।

3। ফিতনা বা অমঙ্গল আপতিত হওয়ার সময় ধৈর্যধারণ করা, সৎ কাজের আগ্রহী হওয়া এবং আল্লাহর ইবাদতরত থাকা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির অপরিহার্য কাজ।

4। ফাওয়াহা এর অনেক অর্থ রয়েছে, তার মধ্যে হলো এই যে, দুনিয়ার অমঙ্গলে পড়ে নিপীড়িত হওয়া এবং তাতে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক আপসোস ও দুঃখ প্রকাশ করা। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, দুনিয়ার অমঙ্গলে পড়ে নিপীড়িত হয়ে ধৈর্যধারণ করতে পারলে এই ধৈর্যধারণই হবে সর্বোত্তম ও অতি মঙ্গলময় কর্ম। আর এই অর্থটিই বেশি উপযোগী।

৩৯
মজলিশের ভুলভ্রান্তির ক্ষমা পাওয়ার দোয়া
35 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ جَلَسَ فِيْ مَجْلِسٍ؛ فَكَثُرَ فِيْهِ لَغَطُهُ؛ فَقَالَ قَبْلَ أنْ يَقُوْمَ مِنْ مَجْلِْسِهِ ذَلِكَ : سُبْْحَانَكَ اللَّهُمّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأتُوْبُ إِلَيْكَ , إِلاَّ غُفِرَ لَهُ ماَ كَان َ فِيْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 3433, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث : بأنه حسن صحيح غريب , وصححه الألباني ).

35 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো সভায় বা মজলিশে বসবে, অতঃপর তাতে অতিরিক্ত অসার বা আজেবাজে কথা বলবে এবং উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পূর্বে এই দোয়াটি পাঠ করবে:

" سُبْْحَانَكَ اللَّهُمّ وَبِحَمْدِكَ , أَشْهَدُ أنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأتُوْبُ إِلَيْكَ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি এবং আমার এই পবিত্রতা ঘোষণা হলো আপনার প্রশংসার সহিত। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই পানে তওবা করে প্রত্যাবর্তন করছি”।

আল্লাহ তার সেই সভায় বা মজলিশের কৃত অপরাধ বা ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিবেন”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 3433, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন সর্বশক্তিমান আল্লাহকে প্রতিটি জায়গায় স্মরণ করে। সুতরাং সে আল্লাহকে স্মরণ করবে যে কোনো সভা,মিটিং, প্রোগ্রাম, আলোচনার স্থান, সফর, বাসস্থান,দাওয়াত এবং ভোজ ও ওয়ালিমার অনুষ্ঠানসমূহে তথা তার জীবনের সমস্ত শাখা-প্রশাখায়।

2। এই দোয়াটি কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে কোনো সভাতে অংশগ্রহণ করে সেখানে জিহ্বা বা জিবের পাপে লিপ্ত হয়ে পরচর্চা করা, চুগলি করা, মানুষের খুঁত প্রকাশ বা দোষ বাহির করার অনুমতি প্রদান করে না।

3। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই দোয়টি মুখস্থ করা এবং যে কোনো সভার শেষে পাঠ করা হলো একটি উত্তম কাজ ও সৎকর্ম।

৪০
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকার এবং উত্তরাধিকারীর বিধান
36 - عَنْ أُسَامَةَ بنِ زيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ , وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 6764, وصحيح مسلم , رقم الحديث 1 - (1614), واللفظ للبخاري ).

37 - অর্থ: উসামা বিন য্যায়দ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো অমুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এবং কোনো অমুসলিম ব্যক্তিও কোনো মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে না”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6764 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 1 -(1614), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয় সাহাবী উসামা বিন য্যায়দ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] । তার পিতা য্যায়দ বিন হারেসা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর খাদেম ছিলেন, তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে স্বীয় পিতা-মাতা ও পরিবারের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

উসামা সকল প্রকার মহাগুণের অধিকারী ছিলেন;তাই তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হৃদয়ের নিকটবর্তী হতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।

এই মহাসাহাবী অত্যন্ত বুদ্ধিমান, অত্যন্ত সাহসী এবং অত্যন্ত বিচক্ষণ ছিলেন; তাই সমস্ত কার্যক্রম সঠিক পন্থায় তিনি সম্পাদন করতেন। সকল প্রকার কলুষ বিষয় হতে তিনি মুক্ত ছিলেন। সকল মানুষের কাছে তিনি অতি প্রিয় ছিলেন। এবং আল্লাহরও তিনি সঠিক ভক্ত ছিলেন। তাই তাকে অল্প বয়সে যখন তার বয়স বিশ বছরে উপনীত হয় নি, তখনই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে একটি যুদ্ধে সৈন্যদের সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। এবং সেই সৈন্যদের মধ্যে ছিলেন আবু বাকর, ওমার এবং আনসার ও মুহাজিরদের বড়ো বড়ো নেতাগণ।

সেই সেনাবাহিনী মাদীনা শহর থেকে বের হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মৃত্যুবরণ করেন।

অতঃপর আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] সেই সেনাবাহিনীকে উসামা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর নেতৃত্বে প্রেরণ করেন। এবং আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে মাদীনায় তার সাথে রেখে যাওয়ার জন্য উসামা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করেন।

উসামা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর নেতৃত্বে এই সেনাবাহিনী জয়লাভ করে নিরাপদে যুদ্ধলব্ধ বা গানীমাতের মালসহ ফিরে আসেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 118 টি।

ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর শাহাদাত বরণের পরবর্তী ফেতনা থেকে উসামা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] নিজেকে সমস্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে দূরে রাখেন। অতঃপর তিনি দামেস্কের নিকটবর্তী এক এলাকায় বসবাস করতে থাকেন। এবং সেখান থেকে মাদীনায় ফিরে এসে জুর্ফ নামক স্থানে 61 বছর বয়সে 54 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এবং তাঁকে মাদীনায় দাফন করা হয়।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকারী কোন অমুসলিম ব্যক্তি হতে পারবে না। আর কোন অমুসলিম ব্যক্তিও কোন মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবে না। তাতে কোন অমুসলিম ব্যক্তি উত্তরাধিকারের সম্পদ বন্টনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করুক বা না করুক। আর এটাই হলো মুসলিম ওলামাদের অধিকাংশের মত। আর এটাই হলো সঠিক বিষয়।

অনুরূপ মুর্তাদেরও বিধান। অর্থাৎ কোন মুর্তাদ মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না, আর কোন মুসলিমও মুর্তাদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না ।

2। আবার কতকগুলি আলেমের মতে মুসলিম ব্যক্তি কাফেরের উত্তরাধীকারী হতে পারবে, আর এর বিপরীত হতে পারবে না । অর্থাৎ কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধীকারী হতে পারবে না। তবে যদি সেই অমুসলিম ব্যক্তিটি উত্তরাধীকার বন্টনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে, তবে সে উত্তরাধীকারী হয়ে যাবে বা হতে পারবে ।

3। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি সুন্দর দিক ও বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এই ধর্ম উত্তরাধিকার এবং উত্তরাধিকারীর বিধান সঠিক পন্থায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছে।

অন্য দিকে হিন্দুত্ববাদের পবিত্র বেদে তা বর্ণনা করা হয় নি।

৪১
আল্লাহর নিকটে মুসলিম ব্যক্তির বিনয় এবং অভাব প্রকাশ করা উচিত
37 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ؛ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ، يَقُوْلُ : اَللَّهُمَّ ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 128- (588), وصحيح البخاري , رقم الحديث 1377, واللفظ لمسلم ).

37 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি নামাজের (শেষ) তাশাহহোদ পাঠ করবে, তখন যেন সে চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য এই দোয়টি পাঠ করে:

اَللَّهُمَّ ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করি জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডের শাস্তি হতে, কবরের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের অমঙ্গল হতে এবং মাসীহ দাজ্জালের অমঙ্গলজনক পরীক্ষা হতে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 128 -(588) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1377, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই চারটি বিষয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা করার দোয়াটির দ্বারা আল্লাহর নিকটে মানুষের বিনয়, অভাব, অধীনতা এবং দাসত্ব প্রকাশ করা হয়।

2। তাশাহহোদের শেষ বৈঠকে এই দোয়াটি পাঠ করা মুস্তহাব।

3। এই হাদীসটির দ্বারা দাজ্জালের ফেতনা, পরীক্ষা ও অমঙ্গলের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। আর আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করার পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা বড় ফেতনা হবে সেই দাজ্জালের ফেতনা; কেননা মহান আল্লাহ সেই দাজ্জালকে এমন শক্তি দান করবেন, যাতে সে ফেতনা ও অমঙ্গল সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।

4। প্রকৃত পক্ষে কবর বলতে, বারজাখ জগতে রূহ অবস্থানের স্থানকে বুঝানো হয়।

আবার কোনো কোনো সময় কবর বলতে কোনো ব্যক্তিকে দাফন করার স্থানকেও বুঝানো হয়।

তবে প্রার্থনাকারী যখন এই প্রার্থনাটি করে:

اَللَّهُمَّ ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ 000

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করি কবরের শাস্তি হতে”।

তখন এই প্রার্থনার দ্বারা বারজাখ জগতের শাস্তিকে বুঝানো হয়। যে শাস্তি মৃত্যুবরণ করার পর থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিবস পর্যন্ত নির্দিষ্ট রয়েছে।

৪২
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নিয়তের গুরুত্ব ও মর্যাদা
38 - عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى نِيَّاتِهِمْ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 4230, وصححه الألباني , وصحيح مسلم , جزء من رقم الحديث 83 - (2878), واللفظ لابن ماجه ).

38 - অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কেয়ামতের দিন সকল জাতির মানব সমাজকে একত্রিত করা হবে তাদের নিয়তের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য করে”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 4230, আল্লামাহ নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন। এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 83 -(2878) এর অংশবিশেষ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 32 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ধর্মে নিয়তের মহা মান, মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে । তাই নিশ্চয় প্রত্যেকটি কর্ম বা আমল সঠিক হওয়ার মূল ভিত্তি হলো পবিত্র ও বিশুদ্ধ নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহর বিধান মোতাবেক হওয়া।

2। নিয়ত বলা হয়: কোনো কর্ম সম্পাদনের সাথে সাথে ইচ্ছা পোষণ করা বা মনে ধারণ পোষণ করা । যদি কোনো কর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা পোষণ করা হয় কিন্তু কর্ম সম্পাদন পরে হয়, তাহলে তাকে সঙ্কল্প বা সিদ্ধান্ত বলা হয়। সুতরাং নিয়তের তাৎপর্য হলো এই যে, কোনো কর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা পোষণ করার সাথে সাথেই কর্ম সম্পাদন করা।

3। নিশ্চয় কুরআন এই নিয়তকে অনেক ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছে: পরকালের ইচ্ছা পোষণ করা, আল্লাহর চেহারা বা দিক চাওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার দৃঢ় ইচ্ছা রাখা ইত্যাদি।

৪৩
আল্লাহর নিকটে রাত্রিকালে প্রার্থনা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
39 -عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " إِنََّ مِنَ اللَّيْلِ سَاعَةً، لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا، إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 167 - (757), ).

39 - অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: রাত্রিকালে অবশ্যই এমন একটি সময় রয়েছে যে, সেই সময়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে যা কিছু মঙ্গলদায়ক বস্তু প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই প্রদান করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 167 -(757) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 32 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। দোয়া কবুল হওয়ার সময়টি পেয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাত্রিকালের যে কোনো সময়ে দোয়া করার প্রতি এই হাদীসটিতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

2। রাত্রিকালের যে কোনো সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার সময়টিকে মহান আল্লাহ গোপনে রেখেছেন, যাতে করে আল্লাহর অনুগত মানব সকল সেই সময়টিকে পাওয়ার জন্য রাত্রিকালের যে কোনো সময়ে দোয়া করার চেষ্টা করে। যেমন তিনি জুময়ার দিনের প্রার্থনা কবুল হওয়ার সময়টিকে গোপনে রেখেছেন, যাতে করে আল্লাহর অনুগত মানব সকল সেই সময়টিকে পাওয়ার জন্য সারা দিনের যে কোনো সময়ে প্রার্থনা করতে থাকে।

3। রাত্রিকালের যে কোনো সময়ে প্রভাত বা ফজরের আভা উদয় হওয়া পর্যন্ত দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা বা এস্তেগফার করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। তবে রাত্রিকালের প্রথমাংশের চেয়ে শেষাংশে নামাজ পড়ার জন্য এবং দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা বা এস্তেগফার করার জন্য হলো উত্তম সময়।

৪৪
বিপদ থেকে পরিত্রাণের সর্বোত্তম উপাদান হলো নামাজ
40 - عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ النَّبيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى .

( سنن أبي داود , رقم الحديث 1319, وحسنه الألباني ).

40 - অর্থ: হুজায়ফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সামনে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা বিষণ্ণতা উপনীত হতো, তখন তিনি নামাজ পড়তেন।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1319, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 4 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার উত্তম সহায়ক হলো নামাজ। তবে এই নামাজে নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই; তাই এতে মুসলিম ব্যক্তি তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন বৈধ দোয়া করবে। এই বিষয়টির সত্যায়নে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন:

ﭽ ﮰ ﮱ ﯓﯔ ﯕ ﯖ ﯗ ﯘ ﯙ ﯚ ﭼ, ( سورة البقرة , الآية 45).

ভাবার্থের অনুবাদ : “তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য ধৈর্যধারণ ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো! আর নিশ্চয় নামাজ হলো আল্লাহর সঠিক অনুগত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলের কাছে একটি কঠিন কাজ”।

(সূরা আলবাকারা, আয়াত নং 45) ।

وقال تعالى : ﭽ ﯰ ﯱ ﯲ ﯳ ﯴ ﯵﯶ ﯷ ﯸ ﯹ ﯺ ﯻ ﭼ , ( سورة البقرة , الآية 153).

ভাবার্থের অনুবাদ: “হে ঈমানদার মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য ধৈর্যধারণ ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো! নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য সাহায্যকারী”। (সূরা আলবাকারা, আয়াত নং 153) ।

তাই সমস্ত বিপদ, অশান্তি এবং অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণ ও রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম উপকরণ হলো নামাজ।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যিনি আমাদের নাবী এবং সকল নাবীগণের সর্দার ও বিশ্ব পালনকর্তার প্রিয় ব্যক্তির সামনে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা বিষণ্ণতা উপনীত হতো, তখন তিনি নামাজ পড়তেন; তাই এই বিষয়ে আমাদের উচিত যে, কঠিন পরিস্থিতি বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা বিষণ্ণতা উপনীত হওয়ার সময় আমরাও তাঁর অনুসরণ করে নামাজ পড়বো।

3। ( إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ ) : এর অর্থ হলো এই যে, যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা বিষণ্ণতা কিংবা কঠিন পরিস্থিতি উপনীত হতো।

৪৫
সাদা রং এর কাপড় সাধারণ পরিধান ও কাফনের জন্য হলো সর্বোত্তম কাপড়
41 -عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اِلْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمْ الْبَيَاضَ؛ فَإِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ , وَكَفِّنُوْا فِيْهََا مَوْتَاكُمْ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 994, وسنن أبي داود , رقم الحديث 3878, و سنن ابن ماجه , رقم الحديث 1472, وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن صحيح , واللفظ للترمذي , وصححه الألباني ).

41 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের সাদা রং এর কাপড় পরিধান করো। কেননা সাদা রং এর কাপড় হলো তোমাদের সর্বোত্তম কাপড়; অতএব এই সাদা রং এর কাপড়ের দ্বারাই তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদেরকে কাফন দিবে”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 994, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 3878 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1472, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] একজন বিশিষ্ট ও প্রসিদ্ধ সাহাবী। তাঁর কুনিয়াত (ডাকনাম) আবুল আব্বাস। ইমামুত্‌ তাফসীর হিসেবে তিনি উপাধি লাভ করেছেন। তিনি আল্লাহর রাসূলের চাচাতো ভাই। হিজরতের তিন বছর পূর্বে তিনি মাক্কাতে শেবে আবী তালেব নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন, হাশিম বংশের লোকেরা উক্ত স্থান থেকে বেরিয়ে আসার আগেই। অতঃপর নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে থেকে জ্ঞানার্জন করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1660 টি। আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুবরণের সময় তাঁর বয়স ছিল 13 বছর। আলী বিন আবী তালেব [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] তাঁকে বাসরা শহরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি সন 68 হিজরীতে তায়েফ শহরে 70 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা]

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাদা রং এর কাপড় সাধারণ পরিধান ও কাফনের জন্য হলো উত্তম ও মুস্তাহাব বা ভালো কাপড়; যেহেতু সাদা রং এর কাপড় অন্য রং এর কাপড় চেয়ে অধিকপবিত্র ও উত্তম। এই জন্য যে তাতে রয়েছে সুন্দরতা ও উৎকৃষ্টতা। এবং এই কাপড়কে অধিকপবিত্র এই জন্য বলা হয় যে, এই কাপড়ে কোন প্রকার মাটি বা ময়লা অথবা কোন প্রকার অপবিত্র বস্তু লাগলে, তা সহজই স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এবং তা ধৌত করে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা হয়; তাই সাদা রং এর কাপড় বেশি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে।

2। এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, সাদা রং এর কাপড়ের বিষয়ে পুরুষের বিধান নারীর বিধানের মতই; তাই এই বিষয়ে পুরুষ ও নারীদের বিধানের মধ্যে কোনো পার্থক্যের কোন সহীহ হাদীস বা দলিল নেই। যে ব্যক্তি পার্থক্যের দাবী করবে, তার জন্য প্রমাণ বা সহীহ হাদীস অথবা দলিল উপস্থাপন করা অপরিহার্য হয়ে যাবে।

আর এই বিধানের ক্ষেত্রে নারীরা হলো পুরুষদের মতই। তাই এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পুরুষদের জন্য যে বিধান সাব্যস্ত করেছেন, নারীদের জন্য সেই বিধান প্রযোজ্য। তবে যদি নারীদেরকে সেই সাধারণ বিধান থেকে আলাদা করার কোন দলিল থাকে, তাহলে সেটা হবে স্বতন্ত্র বিষয়।

৪৬
সরস টাটকা খেজুর দ্বারা রোজা ইফতার করা উত্তম
42 - عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، يَقُوْلُ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يُفْطِرُ عَلَى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ؛ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ؛ فَعَلَى تَمَرَاتٍ؛ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ؛ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 2356, وجامع الترمذي , رقم الحديث 696, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن غريب , واللفظ لأبي داود , وحسنه الألباني وصححه ).

42 - অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মাগরিবের নামাজ পড়ার পূর্বে বা আগে কতিপয় সরস টাটকা খেজুর দ্বারা রোজা ইফতার করতেন। যদি সরস টাটকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো খেজুর দ্বারা রোজা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না থাকতো, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে রোজা ইফতার করতেন।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2356 জামে তিরমিযী, হাদীস নং 696, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 8 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মাগরিবের নামাজ পড়ার পূর্বে বা আগে কতিপয় সরস টাটকা খেজুর দ্বারা রোজা ইফতার করা উত্তম। যদি সরস টাটকা খেজুর না থাকে, তাহলে শুকনো খেজুর দ্বারা রোজা ইফতার করা উত্তম। যদি শুকনো খেজুরও না থাকে, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে রোজা ইফতার করা ভালো। যদি উল্লিখিত বস্তুর মধ্যে থেকে কিছুই না থাকে, তাহলে আল্লাহর প্রদত্ত যে কোনো হালাল বা বৈধ খাদ্য বা পানীয় বস্তুর দ্বারা রোজা ইফতার করে নেওয়াই ভালো।

2। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে রোজা হলো: মহান আল্লাহর এমন একটি ইবাদত বা উপাসনা, যেই ইবাদত বা উপাসনাতে ফজরের আভা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা ভঙ্গকারী সমস্ত বস্তু বর্জন করে নিরম্ব উপবাস থাকা।

৪৭
নামাজের অবস্থায় সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করা অপরিহার্য
43 - عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :" أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الْجَبْهَةِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ , وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 812, وصحيح مسلم , رقم الحديث 230- (490), واللفظ للبخاري ).

43 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আমি নামাজের অবস্থায় সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আর দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না রাখি”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 812 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 230 -(490), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 41 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজের অবস্থায় সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করা অপরিহার্য বা ওয়াজিব। আর এই সাতটি অঙ্গ হলো: নাক সহ কপাল, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ।

2। নামাজ পড়ার সময় কেউ যদি সিজদা অবস্থায় এক পা বা উভয় পা জমিন থেকে উপরে উঠিয়ে রাখে, তাহলে তার নামাজ পূর্ণ এবং সঠিক হবে না। অনুরূপভাবে কেউ যদি সিজদার সাতটি অঙ্গের মধ্যে থেকে কোন একটি অঙ্গ ব্যতীত বা ব্যতিরেকে সিজদা করে, তাহলে তারও নামাজ সঠিক হবে না।

3। উল্লিখিত সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করা অপরিহার্য। আর এই বিধানটি নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। তাই নারী-পুরুষ সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য যে, তারা যেন সবাই উল্লিখিত সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করে। এবং এই বিষয়ে কোনো প্রকারের অবহেলা করা বৈধ নয়। তবে নাক ও কপাল একই অঙ্গ বলে বিবেচিত হবে।

৪৮
মহান আল্লাহ হৃদয়সমূহের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক
44 - عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ : إِنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : " إنَّ قُلُوْبَ بَنِيْ آدمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلبٍ وَاحِدٍ , يَصْرِفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ " ، ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ ". ( صحيح مسلم , رقم الحديث 17 - (2654),).

44 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এই কথা বলতে শুনেছেন যে, “আদম সন্তানের হৃদয়সমূহ দয়াময় আল্লাহর আঙ্গুলসমূহের মধ্যে থেকে দুইটি আঙ্গুলের দ্বারা একটি হৃদয়ের মত নিয়ন্ত্রিত। তাই তিনি তাঁর ইচ্ছা মত হৃদয়গুলিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে আবর্তিত করেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন:

" اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ ".

অর্থ: হে আল্লাহ! হে হৃদয়সমূহের নিয়ন্ত্রক! আপনি আমাদের হৃদয়সমূহকে আপনার আনুগত্যের উপর নিয়ন্ত্রিত করে রাখুন”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17 -(2654) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস আল কোরাশী আসসাহমী একজন সম্মানিত সাহাবী, তিনি তাঁর পিতা আমর ইবনুল আস [রাযিয়াল্লাহু আনহু]এর পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ আলেম এবং ইবাদত ও পরহেজগারিতায় ছিলেন অনুকরণীয় সাহাবী। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 700 টি।

তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে অনেকগুলি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপরিচালনার দিক দিয়ে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও তিনি বিশেষ দক্ষতা রাখতেন; তাই মোয়াবিয়া [রাযিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে কূফা শহরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন একটি নির্দিষ্ট কালের জন্য।

তিনি মিশর দেশের জামে আল্‌ ফুস্‌তাতে আমর ইবনুল আস মাসজিদে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে হাদীস বর্ণনা করতেন; তাই তাঁর কাছ থেকে মিশর, শামদেশ এবং মাক্কা-মাদীনার বহু শিষ্য হাদীসের জ্ঞানার্জন করেছেন।

তিনি মিশরে সন 65 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে তাঁর ঘরেই তাঁকে দাফন করা হয়। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। সুতরাং বলা হয়েছে যে, তিনি শামদেশে অথবা মাক্কা শহরে মৃত্যুবরণ করেছেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর প্রকৃত ধর্ম ইসলামে সঠিক পন্থায় অটল থাকার জন্য উপযুক্ত উপায় এবং উপকরণ গ্রহণ করার জন্য প্রয়াস করা অপরিহার্য বা জরুরি। কেননা প্রয়াস ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। আর কর্ম হিসেবে কর্মের ফলাফল প্রকাশ পায়, এবং যে কোনো জিনিস বা বস্তু এবং কর্ম তার উপকরণের সাথে সংযুক্ত। আর মহান আল্লাহর নীতি স্থায়ী, অপরিবর্তনীয় সুতরাং তার কোনো পরিবর্তন নেই।

2। কোন ব্যক্তি যখন তার প্রতিপালক, তার সৃষ্টিকর্তা এবং তার রুজিদাতা মহান আল্লাহ সম্বন্ধে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, তখন মহান আল্লাহ তার অন্তরে বা হৃদয়ে প্রদান করবেন নিরাপত্তা, শান্তি, আনন্দ এবং আরাম।

এবং কোনো ব্যক্তি যখন তার প্রতিপালক, তার সৃষ্টিকর্তা এবং তার রুজিদাতা মহান আল্লাহ সম্বন্ধে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না, তখন মহান আল্লাহ তার অন্তরে বা হৃদয়ে প্রদান করবেন ভয়, উদ্বেগ এবং অশান্তি। কেননা সমস্ত লোকের হৃদয়গুলি রয়েছে মহান আল্লাহর হাতে, কোনো ব্যক্তির হাতে নয়।

3। মহান আল্লাহর আঙ্গুল রয়েছে। এই বিষয়টির প্রতি ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য। তবে মহান আল্লাহর আঙ্গুলগুলির স্বরূপ এবং পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর আঙ্গুলগুলির তুলনা করা যাবে না এবং সেগুলিকে ক্রিয়াহীন বা নিষ্ক্রিয় কিংবা অস্বীকার করাও চলবে না ।

৪৯
দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসার অবস্থায় পঠনীয় দোয়া
45 - عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 897, وسنن أبي داود , رقم الحديث 874 , وسنن النسائي , رقم الحديث 1145, واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).

45 - অর্থ: হুজায়ফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসার অবস্থায় এই দোয়াটি বলতেন:

" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ".



অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা প্রদান করুন! হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা প্রদান করুন”!

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 897, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 874 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1145, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 4 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজের অবস্থায় দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসার অবস্থায় পঠনীয় দোয়া হলো:

" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ".

2। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]হতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসার অবস্থায় অনেক রকম দোয়া পাঠ করার বিবরণ অনেকগুলি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টিকে সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে অন্য হাদীসগুলির কথা উপস্থাপন করলাম না।

৫০
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হলো সকল জাতির মানব সমাজের জন্য সুখময় জীবন লাভের সঠিক উৎস
46 - عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ فِيْ صَلاَةِ اللَّيْلِ : " رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَارْزُقْنِيْ وَارْفَعْنِيْ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 898, وسنن أبي داود , رقم الحديث 850 و جامع الترمذي , رقم الحديث 284, واللفظ لابن ماجه , قَالَ الإمام الترمذي : هذا حديث غريب , وصحح الألباني حديث ابن ماجه والترمذي ).

46 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] রাত্রিকালের নামাজে দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বলতেন:

" رَبِّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاجْبُرْنِي وَارْزُقْنِي وَارْفَعْنِي ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা প্রদান করুন! আমার প্রতি করুণা করুন! আমার অভাব দূর করে আমাকে সুখদায়ক জীবনযাপন করার সঠিক উপাদান দান করুন! আমাকে রুজি দান করুন! আমাকে সুস্থতা প্রদান করুন এবং আমাকে দুনিয়াতে ও পরকালে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন!

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 898, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 850, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 284, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী সুনান ইবনু মাজাহ এবং জামে তিরমিযীর হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 41 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই দোয়াটির মধ্যে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের প্রয়োজনীয় মঙ্গল ও সুখের সকল প্রকার উপাদান রয়েছে। এবং সর্ব প্রকার অমঙ্গল থেকে সংরক্ষিত হওয়ার উপযুক্ত উপকরণও রয়েছে।

2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হলো সকল জাতির মানব সমাজের জন্য সুখময় জীবন লাভের সঠিক উৎস। সুতরাং যে ব্যক্তি এই ধর্মের অনুগামী হতে পারবে, সে ব্যক্তি সুখময় জীবন লাভ করতে পারবে। এবং যে ব্যক্তি এই ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে যাবে, সে ব্যক্তি কষ্টের জীবন লাভ করবে।

৫১
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য মৌলিক বিষয়সমূহ
47 - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ؛ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عليه السلام؛ فَقَالَ : مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ : " الْإِيمَانُ : أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ , وَبِلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ , وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ " ، قَالَ : مَا الْإِسْلَامُ؟ قَالَ : " الْإِسْلَامُ : أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ , وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ , وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ , وَتَصُومَ رَمَضَانَ " ، قَالَ : مَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ : " أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ؛ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ", قَالَ : مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ : " مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا : إِذَا وَلَدَتِ الْأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الْإِبِلِ الْبُهْمِ فِي الْبُنْيَانِ , فِيْ خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللَّهُ، ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ﭽ ﯫ ﯬ ﯭ ﯮ ﯯ ﭼ , ( لقمان : ٣٤ ) الآية، ثُمَّ أَدْبَرَ، فَقَالَ : " رُدُّوهُ " ؛ فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا؛ فَقَالَ : " هَذَا جِبْرِيلُ، جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 50, وصحيح مسلم , رقم الحديث 1 - (9), واللفظ للبخاري ).

47 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদিন প্রকাশ্যে জনগণের সামনে বসে ছিলেন। ইতি মধ্যে মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: ঈমান কাকে বলা হয়?

নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উত্তরে বললেন: “ঈমান হলো এই যে, আপনি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর সাথে পরকালের সাক্ষাত, তাঁর রাসূলগণ এবং মৃত্যুবরণের পর পুনরুত্থিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন”।

মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আবার নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলেন: ইসলাম কাকে বলা হয়?

নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উত্তরে বললেন: “ইসলাম হলো এই যে, আপনি আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করবেন এবং তাঁর সাথে কোনো প্রকারের অংশীদার স্থাপন করবেন না, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবেন, ফরজ জাকাত প্রদান করবেন এবং রমাজান মাসের রোজা পালন করবেন”।

মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: ইহসান কাকে বলা হয়?

তিনি উত্তরে বললেন: “ইহসান হলো এই যে, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করবেন যে, আপনি যেন তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এই বিষয়টি যদি সম্ভবপর না হয়। তাহলে আপনি আপনার হৃদয়ে এই ধারণা পোষণ করবেন যে, তিনি আপনাকে অবশ্যই প্রত্যক্ষ করছেন”।

মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে?

তিনি উত্তরে বললেন: “এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে বেশী কিছু অবগত নন। তবে আমি আপনাকে কেয়ামতের কতকগুলি নিদর্শন পেশ করছি:

যখন কৃতদাসী তার অভিভাবকের জন্ম দিবে এবং যখন কালো উটের রাখালগণ অট্টালিকা নির্মাণের কাজে পরস্পর গর্ব করবে।

যে পাঁচটি বস্তুর জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর আয়ত্বাধীন, সেই পাঁচটি বস্তুর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলো কেয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার জ্ঞান”। অতঃপর নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই আয়াতটি পাঠ করলেন:

ﭽ ﯫ ﯬ ﯭ ﯮ ﯯ ﭼ , ( لقمان : ٣٤ ) الآية،

ভাবার্থের অনুবাদঃ “নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই রয়েছে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার জ্ঞান”।

(এই আয়াতের শেষ পর্যন্ত। সূরা লোকমান, আয়াত নং 34 এর অংশবিশেষ)।

অতঃপর মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] চলে গেলেন; তাই নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাহাবীগণকে বললেন: তাঁকে ফিরিয়ে আনা হোক! কিন্তু সাহাবীগণ আর কিছুই প্রত্যক্ষ করতে পারলেন না; সুতরাং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন:

“ইনি হলেন জিবরীল, তিনি মানব জাতিকে প্রকৃত ধর্মের কথা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন” ।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 50 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 1 -(9), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এটি একটি মহাহাদীস, এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের সমস্ত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য মৌলিক বিষয়সমূহ।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে ঈমান ও আমল প্রকৃত ইসলাম ধর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। সুতরাং ঈমান ছাড়া আমল এবং আমল ছাড়া ঈমান গ্রহণযোগ্য নয় এবং সঠিক পন্থাও নয়। কেননা প্রকৃত ইসলাম হলো ঈমান ও আমলের সমষ্টি। তাই পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে আমল বা সৎকর্ম সম্পাদন প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আমল বা সৎকর্ম সম্পাদন করা অন্তরের প্রকৃত ঈমানের ফলাফল।

3। এই হাদীসটির দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ঈমানের সাথে জড়িত রয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক কথা, কর্ম এবং নিয়ত। অতএব অন্তরে ঈমান স্থাপন করার অর্থ হলো: আল্লাহর প্রতি অন্তরে অটল বিশ্বাস স্থাপন করা, এই বিশ্বাসের মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান করা এবং এই বিশ্বাস অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে নিজেকে পরিচালিত করা।

৫২
আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার মর্যাদা
48 - عَنْ أَبِيْ طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِيْ وَجْهِهِ؛ فَقُلْنَا : إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِيْ وَجْهِكَ ! ؛ فَقَالَ : إِنَّهُ أَتَانِيَ الْمَلَكُ؛ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ ! إِنَّ رَبَّكَ يَقُوْلُ : أَمَا يُرْضِيْكَ؟ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّيْ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا , وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا ".

( سنن النسائي , رقم الحديث 1283, وحسنه الألباني ).

48 - অর্থ: আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদা আনন্দময় চেহারাসহ আগমন করলেন। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার চেহারায় আনন্দের নিদর্শন উপলব্ধি করছি! সুতরাং তিনি বললেন: “আমার কাছে এক্ষনিই একজন ফেরেশতা এসেছিলেন এবং এই কথা বলে গেলেন: হে মুহাম্মাদ! আপনার পালনকর্তা বলেছেন: আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, আপনার জন্য যে ব্যক্তি একবার সালাত পাঠ করবে তথা অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান প্রার্থনা করবে, তার প্রতি আমি দশটি রহমত ও বরকত বা কল্যাণ অবতীর্ণ করবো। এবং যে ব্যক্তি আপনার প্রতি একবার সালাম পেশ করবে, তার প্রতি আমি দশবার শান্তি অবতীর্ণ করবো”।

[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1283, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু তালহা য্যাইদ বিন সাহাল ইবনুল আসওয়াদ আল আনসারী একজন বিখ্যাত গৌরবময় সাহাবী। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মামা গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং তিনি আকাবার শপথ বা চুক্তিতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। আর সেই চুক্তির সময় যে বারোজন নাকীবকে কিংবা নেতাগণকে নির্বাচিত করা হয়েছিলো তাঁদের মধ্যে তিনিছিলেন একজন অন্যতম সাহাবী। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে তথা সমস্ত যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। বিশিষ্ট সাহসী যোদ্ধা এবং তীর-বর্শা নিক্ষেপে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর তিনি বড়ো অনুরাগি ছিলেন। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ও তাঁকে এতই ভালবাসতেন যে , তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। তাই তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁর বাড়ীতে উপস্থিত হতেন। আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু]নিজ হাতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কবর (লাহদ কবর) খনন করেছিলেন।

তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 92 টি।

আবু তালহার মৃত্যু 32 অথবা 34 হিজরীতে শাম দেশে হয়েছে। অন্য মতে মাদীনাতে 70 বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। কোন কোন মতে তিনি 51 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। তবে তাঁর প্রতি সালাত বা দরূদ পাঠ করার উত্তম পন্থা হলো নিম্নরূপ:

" اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 3370, وصحيح مسلم , رقم الحديث 66 - (406), واللفظ للبخاري ).

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3370 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 -(406), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

2। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি আল্লাহর সালাত বা দরূদ এর অর্থ:

معنى صلاة الله على الرسول : تعظيم الله للرسول , وثناؤه عليه .

এর অর্থ হলো: আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে অতিশয় সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করা।

এবং

معنى اللهم صل على محمد : اللهم عَظِّمْهُ في الدنيا والآخرة بما يليق به .

এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে তাঁর উপযুক্ত সম্মান দুনিয়াতে এবং পরকালে প্রদান করুন।

3। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর প্রতি সালাম পাঠ করার বিষয়টি শরীয়ত সম্মত একটি কাজ। এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহর বাণীর দ্বারা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন:

ﭽﭲ ﭳ ﭴ ﭵ ﭶ ﭷﭸ ﭹ ﭺ ﭻ ﭼ ﭽ ﭾ ﭿ ﮀﭼ, ( سورة الأحزاب , الآية 56(

ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে অতিশয় সম্মান করেন। এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর নিকটে নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অতিশয় সম্মান প্রার্থনা করেন। সুতরাং হে ঈমানদার মুসলিম জাতি! তোমরাও নাবী মুহাম্মাদ এর অতিশয় সম্মান করো ও তাঁর প্রতি যথাযথভাবে সালাম পেশ করো”। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং 56)।

এই আয়াতের সঙ্গে একটি হাদীস সংযুক্ত রয়েছে, আর তা হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:



" إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".

( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).

অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।

(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।

আমাদের নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর একটি অধিকার বা প্রাপ্য তাঁর উম্মতের উপর হলো এই যে, তাঁর উম্মতের প্রতিটি মানুষ যেন তাঁর প্রতি সালাম পেশ করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, সে যেন আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাধারণভাবে যে কোনো সময়ে সালাম প্রেরণ করে কিংবা কতকগুলি নির্দিষ্ট সময়ে সালাম প্রেরণ করে যেমন, নামাজের তাশাহহোদ পাঠের সময় এবং মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বা মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম প্রেরণ করা। এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুপস্থিতিতেও তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর অথবা তাঁর জীবদ্দশাতেও তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার বিধান নির্ধারিত রয়েছে। তবে এই বিধানটি শুধু মাত্র তাঁরই জন্য প্রযোজ্য এবং কেবল মাত্র তাঁরই বৈশিষ্ট্য। অন্য কোনো মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং এটা অন্য কোনো মানুষের বৈশিষ্ট্যও নয়। তাই অন্য কোনো নির্দিষ্ট মানুষকে তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতি সালাম পেশ করা বৈধ নয়। শুধু মাত্র নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে যে, তাঁকে তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সালাম দেওয়ার মর্যাদা লাভ করে থাকে এবং তাঁর প্রতি তার এই সালাম পেশ করাও হয়। যদিও সে আল্লাহর রাসূলের জীবদ্দশাতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের দূরত্ব অতিক্রম না করে থাকে অথবা যদিও সে তাঁর মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর কবরের নিকটে উপস্থিত না হয়ে থাকে।

4। সালাম এর ভাবার্থ হলো: সকল প্রকারের অমঙ্গল এবং দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্তি, শান্তি, পরিত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রাপ্ত হওয়া।

5। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি হলো এই যে,

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ .

অর্থ: “হে নাবী আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”।

পাঠ করা।

অথবা

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ .

অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।

বলে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা।

কিংবা

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ .

অর্থ: “হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।

পাঠ করে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা উচিত।

নচেৎ

اَلسَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ .

অর্থ: “আল্লাহর নাবীর প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।

উচ্চারণ করেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা যেতে পারে।

তবে মুসলিম ব্যক্তির সঠিক ভাবে জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের এই সালাম ফেরেশতাগণের মাধ্যমে আমাদের নাবীর প্রতি পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। যেমন এর পূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সেই হাদীসটি হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

" إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِيْنَ فيِ الأرْضِ يُبَلِّغُونِيْ مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ ".

( سنن النسائي , رقم الحديث 1282, وصححه الألباني ).

অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে এমন কতকগুলি ভ্রমণকারী ফেরেশতামণ্ডলী নির্ধারিত রয়েছেন, যাঁরা আমার প্রতি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেন”।

(সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন) ।

6। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ বা বৈধ নয় যে, সে সম্মিলিতভাবে, একযোগে একসুরে কোন একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ বা প্রেরণ করবে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন সুরে, পৃথকভাবে এবং স্বতন্ত্রপদ্ধতিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অধিকতর সালাম প্রেরণ করবে। কেননা সম্মিলিতভাবে, একযোগে, একসুরে কোন একটি নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম পেশ বা প্রেরণ করার নিয়মটি ইসলামী শরীয়ত বা বিধানের মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই এককভাবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বেশি বেশি বা অধিকতর সালাম পেশ বা প্রেরণ করাই উচিত।

৫৩
সম্মানিত ও সমাদৃত কাজে ডান হাত ব্যবহার করা উচিত
49 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , قَالَتْ : كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيُمْنَى لِطَهُورِهِ وَطَعَامِهِ، وَكَانَتْ يَدُهُ الْيُسْرَى لِخَلائِهِ، وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 33, وصحيح البخاري , رقم الحديث 168, وصحيح مسلم , رقم الحديث 66- (268), وجامع الترمذي , رقم الحديث 1888, وسنن ابن ماجه , رقم الحديث 3288, واللفظ لأبي داود , وصححه الألباني ).

49 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ডান হাত ছিলো পবিত্রতার্জনের জন্য এবং পানাহারের জন্য। পক্ষান্তরে বাম হাত ছিলো শৌচ কার্য সম্পাদনের জন্য এবং অসম্মানজনক কাজের জন্য।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 33, সহীহ বুখারী, হাদীস নং 168, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 - (268), জামে তিরমিজী, হাদীস নং 1888 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3288, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি স্থায়ী বিধান হলো এই যে, সম্মানিত ও সমাদৃত কাজে অথবা যে বিষয়টির দ্বারা সম্মান ও মর্যাদাদান করা হয়: যেমন জামাকাপড়, পাজামা, মোজা পরিধান করা। এবং মাসজিদে প্রবেশ, মেসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার করা, চোখে কাজল বা সুরমা লাগানো, নখ কাটা, মোচ ছাঁটা, চিরনির দ্বারা মাথার চুল আঁচড়াবার সময়, বগলের চুল উপড়ানো বা তুলে ফেলার সময়, মাথার চুল মুণ্ডন এবং নামাজ শেষে সালাম ফেরানো, পবিত্রতার্জন করার সময়, দেহের অঙ্গগুলি ধৌত করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা উত্তম। অনুরূপভাবে শৌচাগার বা টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময়, পানাহার ও মুসাফাহা করার সময় এবং হাজরে আসওয়াদস্পর্শ করার সময় এবং আরো ইত্যাদি সেই সমস্ত কাজে ডান হাত কিংবা দিক থেকে আরম্ভ করা উত্তম বা মুস্তাহাব যে সমস্ত কাজে সম্মান ও মর্যাদাদান করা হয় ।

2। তবে যে সমস্ত কাজে সম্মান ও মর্যাদাদান করা হয় না যেমন, শৌচাগার বা টয়লেটে প্রবেশ করা, মাসজিদ থেকে বের হওয়া, নাক পরিষ্কার করা, মলত্যাগের পর মলদ্বার ইত্যাদি পরিষ্কার করা, জামাকাপড়, পাজামা, মোজা ইত্যাদি খোলার কাজগুলি বাম দিক থেকে সম্পাদন করা উত্তম বা মুস্তাহাব। আর এই বিধানটির উদ্দেশ্য হলো ডান দিকের সম্মান ও মর্যাদাদান করা।

3। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির একটি অপরিহার্য বিষয় হলো এই যে, তারা যেন প্রকৃত ইসলাম ধর্মের কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঠিক পন্থায় অনুসরণ করে।

৫৪
প্রয়োজন ছাড়া অকারণে লোকের অর্থ বা সম্পদ যাচন করা হতে সতর্কীকরণ
50 - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا؛ فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 105 - (1041),).

50 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট হতে তাদের মাল যাচন করবে, সে প্রকৃতপক্ষে আগুনের অঙ্গার যাচন করবে। সুতরাং সে এখন অল্প যাচন করুক অথবা বেশি যাচন করুক”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 105 -(1041)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। যে ব্যক্তি অকারণে এবং বিনা প্রয়োজনে লোকের অর্থ বা কোনো সম্পদ যাচন করবে, তার জন্য এই হাদীসটির মধ্যে কঠোরতার সহিত সতর্কবাণী এসেছে। এবং এর দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হয় যে, অকারণে এবং বিনা প্রয়োজনে লোকের অর্থ বা কোনো সম্পদ যাচন করা একটি বড়ো পাপ।

2। যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন এবং অভাব লোকের সামনে পেশ করবে, তার প্রয়োজন এবং অভাব কোনো দিন পূরণ হবে না। তাই সে সব সময় লোকের কাছে যাচন করতেই থাকবে এবং তার পেট পূরণ হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর আস্থা রাখবে এবং তাঁর উপর নির্ভর করবে বা ভরসা রাখবে এবং জীবিকার্জন বা রুজিরোজগারের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আল্লাহর অনুগ্রহে তার অভাব দূর হয়ে যাবে। কেননা মহান অল্লাহ বলেছেন:

ﭽ ﮧ ﮨ ﮩ ﮪ ﮫ ﮬﮭ ﭼ , ( سورة الطلاق , الآية 3 ).

ভাবার্থের অনুবাদঃ “আর যে ব্যক্তি সঠিক পন্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে, সে ব্যক্তি নিজের মধ্যে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে যে, তার সাফল্য ও কার্যসিদ্বি বা অভিষ্টলাভের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট”।

(সূরা আত তালাক, আয়াত নং 3 এর অংশবিশেষ)।

৫৫
চাশতের নামাজ পড়ার বিধান
51 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلّي الضّحَى أَرْبَعًا , وَيَزِيدُ مَا شَاءَ اللّهُ .

( صحيح مسلم , رقم الحديث 79- (719),).

51 - অর্থ: আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পূর্বাহ্নের বা চাশতের চার রাকাআত নামাজ পড়তেন এবং আল্লাহর যা ইচ্ছা হতো, সেই মোতাবেক তিনি পূর্বাহ্নের বা চাশতের নামাজ চার রাকাআতেরও বেশি পড়তেন।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 79 -(719) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। সালাতুল আওয়াবীন নামে একটি নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে। সেই নামাজটিকে পূর্বাহ্নের বা চাশতের নামাজ বলা হয়। এই নামাজের সময় হলো: সূর্য উদয়ের পর নামাজ পড়ার মাকরূহ সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সূর্যটি যখন এক বল্লম বা এক বর্শা উপরে উঠে যাবে, তখন থেকে নিয়ে সূর্য আকাশ থেকে হেলে পড়া বা ঢলে যাওয়ার আগের মূহুর্ত পর্যন্ত। এই নামাজটি পড়া মুস্তাহাব বা একটি উত্তম কর্ম।

2। এই নামাজের রাকাতের সংখ্যা: সর্ব নিম্ন হলো দুই রাকাত এবং সর্বোত্তম হলো: দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত। আর সর্বাধিক রাকাত হলো আট রাকাত।

আবার অনেক আলেমের মতে: এই নামাজের রাকাতের অধিক সংখ্যার সীমা নির্ধারিত নেই। অতএব মুসলিম ব্যক্তি তার ইচ্ছা মত যতো রাকাত নামাজ পড়ার ইচ্ছা করবে ততো রাকাত নামাজ পড়তে পারবে। তবে এই নামাজগুলি দুই দুই রাকাত করে পড়তে হবে।

৫৬
ওজু এবং পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের মর্যাদা
52 - عَنْ عُثـْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : " مَنْ أَتَمَّ الْوُضُوْءَ , كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ تَعَالَى؛ فَالصَّلَوَاتُ الْمَكْتُوْبَاتُ , كَفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 11 – ( 231),).

52 - অর্থ: ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি যত্নসহকারে সঠিক ভাবে পূর্ণরূপে এমন পদ্ধতিতে ওজু করবে, যেমন পদ্ধতিতে আল্লাহ তাকে ওজু করার আদেশ প্রদান করেছেন। তাহলে ফরজ নামাজগুলির মধ্যবর্তী সময়ের পাপগুলি মোচনের জন্য এই সমস্ত নামাজগুলি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 11 -(231) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। ওজু হলো এমন একটি মহা ইবাদত বা উপাসনা যার মধ্যে মহান আল্লাহ মহা পুণ্য বা সওয়াব নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই এর দ্বারা পাপের ক্ষমা হয় এবং মর্যাদা উচ্চ হয়। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন এই ইবাদতটির যত্ন করে এবং এর আদবকায়দা, শর্তসমূহ আর ওজু বিনষ্টকারী বিষয়গুলির সঠিকভাবে জ্ঞান লাভ করে।

2। এই হাদীসটি পরিপূর্ণভাবে ও সুন্দরভাবে ওজু করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। এবং বিনয়নম্রতা ও একাগ্রতার সহিত নামাজ পড়ার প্রতিও উৎসাহ প্রদান করে।

3। এই হাদীসটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মর্যাদা বর্ণনা করে। আর সেই মর্যাদা হলো এই যে, এই নামাজের দ্বারা সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হয়। তবে এই পাপগুলি বলতে ছোটো পাপলিকে বুঝানো হয়েছে। তাই বড়ো পাপের ক্ষমা অর্জনের জন্য সঠিক পন্থায় সত্য তওবা করা অপরিহার্য।

৫৭
রোজা রাখার জন্য উত্তম সেহরি হলো খেজুর
53 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " نِعْمَ سُحُوْرُ الْمُؤْمِنِ : اَلتَّمْرُ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 2345, وصححه الألباني ).

53 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির রোজা রাখার জন্য উত্তম সেহরি হলো খেজুর”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2345, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মুসলিম ব্যক্তির রোজা রাখার জন্য উত্তম সেহরি হলো খেজুর। তাই খেজুর দিয়ে অথবা খেজুর সহকারে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব বা উত্তম। কিন্তু এই সুন্নাতটি হতে অনেক লোকই বেখেয়াল। এবং তারা মনে করে যে, খেজুর শুধু রোজা ইফতার করার জন্য সুন্নাত।

2। খেজুর হলো একটি কল্যাণকর ফল। তাই খেজুর দিয়ে অথবা খেজুর সহকারে সেহরি খাওয়ার বিষয়টি হলো কল্যাণের উপর কল্যাণ লাভ করা কিংবা বরকতের উপর বরকত লাভ করা।

3। সেহরি খাওয়ার বিষয়টি অন্যান্য ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করার কাজে সহায়ক হয়। তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন সর্বদা সেহরি খাওয়ার বিষয়ে তৎপর থাকে। বেশি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে যেমন সেহরি খাওয়া হয়, তেমনি অল্প খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেও সেহরি খাওয়া হয়। সুতরাং যেমন খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে সেহরি খাওয়া হয়। সেই রকমভাবে এক ঢোক পানি পান করার মাধ্যমেও তা হয়। তবে খেজুর দিয়ে অথবা খেজুর সহকারে সেহরি খাওয়ার বিষয়টি হলো সর্বোত্তম সেহরি।

৫৮
আমীন (آمِينَ) বলার মর্যাদা
54 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " إِذَا قَالَ أَحَدُكُمْ : آمِينَ , وَقَالَتِ الْمَلَائِكَةُ فِي السَّمَاءِ : آمِينَ؛ فَوَافَقَتْ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى؛ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 781, وصحيح مسلم , رقم الحديث 72- (410), واللفظ للبخاري ).

54 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি নামাজের মধ্যে বলবে: আমীন ( آمِينَ )!

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি এই দোয়া কবুল করুন।

এবং আসমানে ফেরেশতাগণও বলবেন: আমীন ( آمِينَ )!

তখন উভয় আমীন ( آمِينَ ) একই সঙ্গে উচ্চারিত হলে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপগুলি ক্ষমা করে দেওয়া হয়”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 781 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 72 -(410), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। নামাজের মধ্যে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন ( آمِينَ ) বলার অর্থ হলো এই যে, হে আল্লাহ! আমি সূরা আল ফাতিহার মাধ্যমে যে দোয়াটি আপনার নিকটে করেছি, সেই দোয়াটি আমার আপনি কবুল করুন।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজ পড়ার অবস্থায় ইমাম, মোকতাদী এবং একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন ( آمِينَ ) বলা একটি ভালো কাজ।

3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান স্থাপন করা উচিত।

৫৯
প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির পরিচয়
55 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ , وَالْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِم ".

( سنن النسائي , رقم الحديث 4995, و صحيح مسلم , رقم الحديث 65 - (41), , واللفظ للنسائي , وحسنه الألباني ).

55 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ব্যক্তি তাকেই বলা যাবে, যার হস্ত এবং জিহ্বার অমঙ্গল হতে সকল জাতির মানব সমাজ নিরাপদে থাকবে এবং প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি তাকেই বলা যাবে, যার অমঙ্গল হতে সকল জাতির মানব সমাজের জান ও মাল নিরাপত্তায় থাকবে”।

[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 4995 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 65 -(41)। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তি যেন সকল প্রকারের আমানত রক্ষা করে এবং আদান-প্রদান বা দেওয়া-নেওয়ার সময় সর্বদা সততা বজায় রাখে। এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজেকে পরিচালিত করে। আর মানুষের জান ও মানের প্রতি জুলুম বা অন্যায় আচরণ না করে।

2। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে। এবং মানুষের অধিকারগুলির সংরক্ষণ করে। আর তাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হতে বিরত থাকে। সুতরাং তারা তার অমঙ্গল ও অন্যায় আচরণ থেকে সব সময় নিরাপদে থাকে।

3। এ ইহাদীসটি প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির একটি প্রকাশ্য ও বাস্তব পরিচয় পেশ করেছে। আর সেই পরিচয় হলো এই যে, সকল জাতির মানব সমাজ তার অমঙ্গল থেকে নিরাপত্তায় থাকবে। অনুরূপভাবে প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির একটি গুপ্ত পরিচয়ও পেশ করেছে। আর সেই পরিচয় হলো এই যে, সকল জাতির মানব সমাজের জান ও মাল তার অশান্তি ও অকল্যাণ থেকে নিরাপদে থাকবে।

৬০
ঘর-বাড়িগুলিকে আল্লাহর উপাসনা, জিকির এবং পবিত্র কুরআন পাঠের মাধ্যমে আবাদ রাখা উচিত
56 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : لاَ تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ؛ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ ". 

( صحيح مسلم , رقم الحديث 212 - (780), ).

56 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের নিজেদের ঘর-বাড়িগুলিকে কবরস্থানে পরিণত করবে না। যে বাড়িতে সূরা আল বাকারা পাঠ করা হয়, সেই বাড়ি থেকে শয়তান নিশ্চয় পলায়ন করে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 212 -(780) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঘর-বাড়িগুলিকে আল্লাহর উপাসনা, জিকির এবং পবিত্র কুরআন হতে সূরা বাকারা পাঠ করার মাধ্যমে আবাদ রাখা প্রকৃত ইসলামের শরীয়ত সম্মত একটি কাজ। তাই যে বাড়িতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেই বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।

2। কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা উচিত নয় যে, সে নিজের ঘর-বাড়িকে আল্লাহর উপাসনা, জিকির এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হতে বিরত রেখে কবরস্থানের মত করে রাখবে। যাতে বাড়ির বসবাসকারীগণ মৃত ব্যক্তিদের মত না হয়ে যায়।

৬১
নামাজে পঠনীয় একটি জিকিরের মর্যাদা
57 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " إِذَا قَالَ الْإِمَامُ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ؛ فَقُوْلُوْا : اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ؛ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ؛ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 796, وأيضاً صحيح مسلم , رقم الحديث 71- (409),).

57 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “ইমাম যখন বলবেন:

" سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ "

( অর্থ: “আল্লাহ সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন, যে ব্যক্তি তাঁর প্রশংসা করে”। )

তখন তোমরা সকল মোক্তাদীগণ বলবে:

" اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "

( অর্থ: “হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রকৃত প্রভু! সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্য”।)

কেননা যে ব্যক্তির এই উক্তিটি ফেরেশতাগণের উক্তির সাথে একই সঙ্গে উচ্চারিত হবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপগুলিকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 796 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 71 -(409)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর অনুগ্রহ অনন্ত। তাই তিনি মানুষের অতি সহজ কাজের মাধ্যমে মানুষের অনেক পাপ ক্ষমা করে দেন। সুতরাং মোক্তাদী যখন বলবে:

" اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "

এবং এই উক্তিটি ফেরেশতাগণের উক্তির সাথে একই সঙ্গে উচ্চারিত হবে, তখন তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপগুলি ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

2। নামাজী ব্যক্তি যদি ইমাম হয় অথবা একায় নামাজ পড়ে, তাহলে সে নামাজ পড়ার সময় যখন রুকু থেকে তার মাথা উপরে উঠিয়ে দাঁড়াবে তখন সে বলবে:

" سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ "

কিন্তু নামাজী ব্যক্তি যদি মোক্তাদী হয়, তাহলে সে ব্যক্তি

" سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ "

পাঠ করবে না। তবে ইমাম যখন

" سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ "

পাঠ করা শেষ করবে, তখন মোক্তাদী বলবে:

" اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "

এবং

" سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ "

এর অর্থ হলো: “আল্লাহ সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন, যে ব্যক্তি তাঁর প্রশংসা করে”।

৬২
কিভাবে রমাজান মাসের প্রবেশ ক্রিয়া সাব্যস্ত হবে?
58 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : ذَكَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْهِلاَلَ؛ فَقَالَ : " إِذَا رَأَيْتُمُوْهُ فَصُوْمُوْا , وَإِذَا رَأَيْتُمُوْهُ؛ فَأَفْطِرُوا؛ فَإِنْ أُغْمِيَ عَلَيْكُمْ فَعُدُّوْا ثَلَاثِينَ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 20- (1081), ).

58 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একদা চাঁদের আলোচনা করেছিলেন, অতঃপর তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যখন রমাজান মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, তখন রোজা রাখতে শুরু করবে এবং যখন শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, তখন রোজা রাখা ছেড়ে দিবে। কিন্তু যদি কোনো সময় তোমাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় এবং চাঁদ দেখতে সক্ষম না হও, তাহলে মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে নিবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 20 -(1081)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা বুঝা যায় যে, রমাজান মাস প্রবেশ করেছে কি না, এই রকম সন্দেহের দিনে রোজা রাখা বৈধ নয়। এবং রমাজান মাসের নবচন্দ্র শাবান মাসের ত্রিশ তারিখের রাত্রিতে বা নিশাকালে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে দেখা না যায়, তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ তারিখে রমাজান মাস প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করে রোজা রাখা জায়েজ নয়।

2। রমাজান মাস প্রবেশ না করার পূর্বে রমাজান মাসের রোজা রাখা ওয়াজেব বা অপরিহার্য নয়। এবং রমাজান মাস প্রবেশের বিষয়টি সাব্যস্ত হয় রমাজান মাসের নবচন্দ্র প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে অথবা উক্ত নবচন্দ্র প্রত্যক্ষ করার সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে। তবে যদি রমাজান মাসের নবচন্দ্র শাবান মাসের ত্রিশ তারিখের রাত্রিকালে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে অথবা কুয়াশার কারণে দেখা না যায়, তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে নিতে হবে। তার পর রমাজান মাসের রোজা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে।

৬৩
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মজলিশের আদবকায়দা
59 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ عَنْ مَجْلِسِهِ , ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ؛ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 3717, وصحيح مسلم , رقم الحديث 31 - (2179) واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).

59 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি নিজের বসার জায়গা হতে উঠে গিয়ে আবার সেখানে ফিরে আসবে, তখন সেই ব্যক্তি উক্ত জায়গাতে বসার অধিকতর অধিকারী হবে”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3717 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 31 -(2179) এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন যে কোনো সভার বা মজলিশের আদবকায়দা রক্ষা করে চলে। সুতরাং তাতে এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যার দ্বারা সভার লোকজনের কষ্ট হয়।

2। যে কোনো সভার বা মজলিশের আদবকায়দার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয় হলো এই যে, মজলিসে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি যখন তার কোনো প্রয়োজনীয় কাজ বা ওজু কিংবা পবিত্রতার্জনের কাজের জন্য নিজের বসার জায়গা হতে উঠে গিয়ে আবার সেখানে ফিরে আসবে, তখন সেই ব্যক্তি তার উক্ত জায়গাতে বসার অধিকতর অধিকারী হবে।

৬৪
নিজের স্ত্রী ও শিশুদের খোরপোশ জোগানোর জন্য টাকাপয়সা ব্যয় করার মর্যাদা
60 - عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْبَدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : " إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا أَنْفَقَ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 48- (1002), وصحيح البخاري , رقم الحديث 55, واللفظ لمسلم ).

60 - অর্থ: আবু মাসউদ আলবাদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে ও আশায় নিজের পরিবার পরিজনের জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ খরচ করবে, তখন তা সাদকা হিসাবেই পরিগণিত হবে”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 48 -(1002) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 55, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 2 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশ জোগানোর সুব্যবস্থা করার জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করার মধ্যে মহা মর্যাদা রয়েছে। এবং নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশ জোগানোর সুব্যবস্থা করার জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করার বিষয়টি হলো আল্লাহর রাস্তায় অথবা অসহায়দের দান প্রদান করার চেয়ে অধিকতর উত্তম। কেননা নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করা হলো ওয়াজেব বা অপরিহার্য বিষয়। এবং নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততি ছাড়া অন্যদের জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য বিষয় নয়। আর যে বিষয়টি পালন করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য নয়, সে বিষয়টির চেয়ে, যে বিষয়টি পালন করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য সে বিষয়টি পালন করা অধিকতর উত্তম।

2। পুণ্য লাভের উদ্দেশ্য ও আশার ভাবার্থ হলো এই যে, নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশের জন্য একজন মুসলিম ব্যক্তি যা কিছু ব্যয় করবে, তার প্রতিদান শুধু মাত্র মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া বা নেওয়ার আশা রাখবে।

নিজের স্ত্রীর জন্য এবং শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশ এবং তাদেরকে বড়ো করে তোলার জন্য যে সমস্ত টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়, সে সমস্ত টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ সবই উত্তম দান প্রদানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

এই ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ করার পদ্ধতিটি হলো এই যে, মুসলিম ব্যক্তি যখন নিজের স্ত্রীর জন্য এবং শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশ এবং তাদেরকে বড়ো করে তোলার জন্য যে সমস্ত টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করবে, তখন সে নিজের অন্তরে এই ধারণা পোষণ করবে যে, নিজের স্ত্রীর জন্য এবং শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশের বিষয়টি মহান আল্লাহ তার প্রতি ওয়াজেব বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। সুতরাং সে নিজের স্ত্রীর জন্য এবং শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশের সমস্ত খরচ বহন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের আশা পোষণ করবে। এই আশা পোষণ না করলে সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভ করার এতে সুযোগ পাবে না।

3। টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ খরচ করার ভাবার্থ হলো এই যে, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী বৈধ মাল বৈধ পন্থায় বৈধ কর্মে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা।

৬৫
জান্নাতলাভের একটি উপকরণ
61 -عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَتِرَ مِنَ النَّارِ , وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ؛ فَلْيَفْعَلْ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 66- (1016), وصحيح البخاري , رقم الحديث 1413, واللفظ لمسلم ).

61 - অর্থ: আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি জাহান্নামের অগ্নি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ক্ষমতা রাখে, সে যেন নিজেকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্ত করে, যদিও তা একটি মাত্র খেজুরের একাংশ দান প্রদানের মাধ্যমে হয়”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 -(1016) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1413, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু তারিফ ও আবু ওয়াহাব, আদী বিন হাতেম বিন আব্দুল্লাহ আততায়ী। তিনি ছিলেন একজন মহাদানবীর ও বুদ্ধিমান সাহাবী। এবং তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে ও পরে তাঁর আততায়ী বংশের প্রধান ব্যক্তি ও নেতা ছিলেন।

তিনি ভদ্র, দয়ালু, দয়াশীল, বড়ো বক্তা এবং বাকপটু ও তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেওয়ার প্রখরবুদ্ধির অধিকারী ছিলেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রত্যাশী ছিলেন। যেন সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর আল্লাহর রাসূলের সাথে সহযোগিতা করেন।

আদী বিন হাতেম আততায়ী সপ্তম হিজরীতে সর্ব প্রথমে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে আগমন করেন। তবে তার আগমন ছিল আল্লাহর রাসূলের অবস্থার সমস্ত বিষয়ে জ্ঞানলাভ করার উদ্দেশ্যে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে নয়। তিনি যখন মাদীনায় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তাঁর মাসজিদে সাক্ষাৎ করলেন এবং দেখলেন যে, আল্লাহর রাসূলকে রাজা বা নেতা হিসেবে আখ্যাত বা প্রখ্যাত করা হয় না, তখন তিনি জানতে পারলেন যে, আল্লাহর রাসূল কোনো রাজত্ব বা নেতৃত্বের প্রত্যাশী নন। তারপর আল্লাহর রাসূল তাকে নিজের বাসভবনে বা বাসগৃহে নিয়ে গেলেন, এবং তার যথাযথভাবে সম্মান করলেন এবং তাকে সঠিক পন্থায় মর্যাদা প্রদান করলেন। এবং ইসলামের প্রতি আহ্বান জানালেন; সুতরাং তিনি স্বেচ্ছাক্রমে স্বাধীনভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন এবং সঠিকভাবে ইসলামের উপরে অটল থাকলেন ।

আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর যুগে ইসলাম ত্যাগ বা রিদ্দার ফিতনা কঠোরভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো, সে সময় আদী বিন হাতেম আততায়ী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]এর মহা ভূমিকা ও মহা অবদান ছিলো, প্রকৃত ইসলাম ধর্মের সংরক্ষণের বিষয়ে। সুতরাং তিনি নিজেই তাঁর স্বজাতিকে নিয়ে এবং নিজের বংশের লোকজনকে নিয়ে ইসলাম ধর্মের উপর স্থায়ীভাবে অটল ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি ইসলামের মহা বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এবং তিনি ইরাক, মাদায়েন, কাদেসীয়াসহ অন্যান্য বিজয়েও উপস্থিত ছিলেনে এবং অংশগ্রহণ করেছেন।

ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] আদী বিন হাতেম আততায়ী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]এর অনেক প্রশংসা করেছেন। তাই এই বিষয়ে হাদীস গ্রন্থে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তাতে থেকে কিছু কথা এখানে অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমি এক দল লোকের সাথে ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] আমলে তাঁর নিকটে আগমন করেছিলাম, তাই তিনি একজন একজন করে সকলের নাম উল্লেখ করে সকলকে আহ্বান করছিলেন। তখন আমি বললাম: হে আমিরুল মুমেনিন! আপনি কি আমাকে চিনতে পারেন নি? তিনি উত্তরে বললেন: হ্যাঁ! আমি আপনাকে ভালোভাবে জানি; কেননা বিভিন্ন প্রকারের মানুষ যখন ইসলাম হতে বিমুখ হয়েছে, তখন আপনি ইসলামের অনুগামী হয়েছেন, যখন তারা পশ্চাদগামী হয়েছে, তখন আপনি অগ্রগামী হয়েছেন, যখন তারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছে, তখন আপনি আপনার অঙ্গিকার রক্ষা করেছেন, এবং যখন তারা ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন আপনি ইসলামকে রক্ষা করেছেন।

ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর মুখ থেকে যখন আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর এই বিভূষিত প্রশংসা শুনলেন, তখন তিনি বললেন: তাহলে আমার নাম আপনি উচ্চারণ করুন বা না করুন আমি আর কোনো পরোয়া করিনা। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 4394]।

আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে এটাও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, আমি যখন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর আমলে তাঁর নিকটে আগমন করেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন:

সর্ব প্রথমে যে অনুদানটি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এবং তাঁর সাহাবীগণের মুখ উজ্জ্বল করেছিলো, তা হলো আততায়ী গোত্রের অনুদান, যেই অনুদানটি আপনি স্বয়ং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে নিয়ে এসেছিলেন।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 196 -(2523)]।

অতঃপর আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কুফায় অবস্থান করেন এবং আলী বিন আবি তালেবের সহযোগিতার কাজে তৎপর থাকেন।

তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 66 টি।

আদী বিন হাতেম [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কুফায় অনেক দিন অবস্থান করেন এবং সেখানেই 120 বছর বয়সে 67 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা সাদকা বা দান প্রদান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এবং অতি অল্প বস্তু হলেও সাদকা বা দান প্রদান করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কেননা অতি অল্প বস্তু সাদকা বা দান প্রদান করার মাধ্যমে জাহান্নামের অগ্নি হতে মক্তি লাভ করাও সম্ভব।

2। এই হাদীসটির ভাবার্থ হলো এই যে, হে মুসলিম সমাজ! তোমরা সাদাকা অথবা দান প্রদানের মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে একটি পর্দা ও প্রতিবন্ধ তৈরি করো। যদিও সেই সাদাকা অথবা দান অতি অল্প ও সামান্য পরিমাণেও হয়। যেমন একটি মাত্র খেজুরের একটি অংশ অথবা অর্ধেক অংশ কিংবা একটি খেজুরের একটি ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। কেননা একটি খেজুরের ক্ষুদ্র অংশবিশেষের দ্বারা একটি ছোটো শিশুর ক্ষুধা নিবারণ করা যেতে পারে। সুতরাং সামান্য বস্তুকেও অবহেলা করা বৈধ নয়। এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষার অর্থ হলো পাপের ক্ষমা ও মার্জনা প্রাপ্ত হওয়া।

3। এই হাদীটির মধ্যে খেজুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং অন্যান্য কোনো খাদ্যের কথা উল্লেখ করা হয় নি যেমন, এক লোকমা খাদ্য। এই জন্য যে, সেই সময় হিজাজবাসীদের তথা মাক্কা ও মাদীনাবাসীদের প্রধান খাদ্য ছিলো খেজুর। তাই খেজুরের কথা এই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

4। জান্নাত লাভ করার উপকরণ অনেকগুলি রয়েছে। তার মধ্যে থেকে একটি বিষয় হলো এই যে,

অভাবগ্রস্ত বা দরিদ্র লোকদের দারিদ্র দূর করা। এবং তাদের উপকার করা বা তাদেরকে দান প্রদান করা। যদিও তা অল্প বস্তু হয়।

আর এই অল্প বস্তুর দ্বারা দরিদ্র লোকদের উপকার করার বিষয়টি হলো মহান আল্লাহর দয়া বা অনগ্রহ। কিন্তু এই বিষয়টি অধিকাংশ লোক জানে না এবং মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে না।

৬৬
বিশুদ্ধ হজ্জ ও উমরা পালন করার মর্যাদা
62 -عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا , وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 1773, وأيضاً صحيح مسلم , رقم الحديث 437- (1349), واللفظ للبخاري ).

62 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “একটি উমরা পালন করার পর আরেকটি উমরা পালন করলে, উভয় উমরার মধ্যবর্তী সময়ের কৃত পাপগুলির জন্য উভয় উমরা কাফফারা হয়ে যায়। এবং সঠিক ও বিশুদ্ধ হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1773 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 437 -(1349), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বেশি বেশি উমরা পালন করা একটি মুস্তাহাব বা উত্তম কর্ম। কেননা একটি উমরা পালন করার পর আরেকটি উমরা পালন করলে, উভয় উমরার মধ্যবর্তী সময়ের কৃত পাপগুলির জন্য উভয় উমরা কাফফারা হয়ে যায়। তবে জেনে রাখা দরকার যে, উক্ত পাপগুলি বলতে ছোটো ছোটো পাপ বুঝানো হয়েছে। কেননা বড়ো বা মহা পাপ মোচনের জন্য তওবার নিয়ম ও নির্দিষ্ট শর্তাবলি অনুযায়ী সঠিক পন্থায় তওবা করা অপরিহার্য।

2। এই হাদীসটির দ্বারা বিশুদ্ধ হজ্জ ও উমরা পালন করার মহা মর্যাদার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এবং এটাও প্রমাণিত হয় যে, একটি উমরা পালন করার পর আরেকটি উমরা পালন করলে, উভয় উমরার মধ্যবর্তী সময়ের কৃত পাপগুলির জন্য উভয় উমরা কাফফারা হয়ে যায়। আর সঠিক ও বিশুদ্ধ হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।

3। সঠিক ও বিশুদ্ধ হজ্জ বলা হয় সেই হজ্জকে, যে হজ্জ সম্পূর্ণরূপে ইসলামের শিক্ষা ও তার নিয়ম অনুযায়ী সম্পাদিত হয়।

৬৭
পবিত্র রমাজান মাসের মহা মর্যাদা
63 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِيْنُ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 3277, وصحيح مسلم , رقم الحديث 1 - (1079), واللفظ للبخاري ).

63 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যখন রমাজান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3277 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 1 -(1079), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। রমাজান মাসের মহা মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয় হলো এই যে, এই মাসে জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের প্রত্যাশী হবে এবং জাহান্নাম থেকে পরিন্ত্রাণ কামনাকারী হবে, সে ব্যক্তি যেন একনিষ্ঠতার সহিত সৎ কর্ম সম্পাদনে তৎপর থাকে।

2। প্রকৃতপক্ষে শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। কিন্তু শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার কারণে কোন প্রকার অন্যায় ও পাপের কাজ সংঘটিত হবে না এমন কথা নয়। কেননা অন্যায় ও পাপের কাজ সংঘটিত হওয়ার অন্যান্য কতকগুলি উপাদানও আছে। সেই উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে: পাপাত্মা, বদভ্যাসের মানুষ এবং অতিশয় পাপীলোক।

3। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার দ্বারা পবিত্র রমাজান মাসের মহা মর্যাদা সাব্যস্ত করা হয়। এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার মাধ্যমে ঈমানদার মুসলিমগণকে শয়তানদের কষ্টদায়ক আচরণ, অমঙ্গল এবং প্রভাব থেকে রক্ষা করা হয়।

৬৮
ফজরের আভা প্রকাশ হওয়ার পূর্বে ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করা অপরিহার্য
64 - عَنْ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ؛ فَلاَ صِيَامَ لَهُ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 730, وسنن أبي داود , رقم الحديث 2454, وسنن النسائي , رقم الحديث 2334 , واللفظ للترمذي , وصححه الألباني ).

64 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঊষাকাল বা ফজরের আভা প্রকাশ হওয়ার পূর্বে বা রাত্রির অবসান ঘটার পূর্বে রোজা রাখার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা করবে না, তার রোজা সঠিক বলে বিবেচিত হবে না”।

[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 730, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2454 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 2334, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয়:

উম্মুলমুমেনীন হাফসা বিনতে আমীরুলমুমেনীন ওমার ইবনুল খাত্তাব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং খুনাইস বিন হুজাফা আসসাহমী আলবাদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর তিনি স্ত্রী ছিলেন। তাই খুনাইস বিন হুজাফা আসসাহমী আলবাদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] কে সঙ্গে করে আবিসিনিয়া তথা ইথিওপিয়া দেশে হিজরত করেন, সেখান থেকে আবার মাদীনার প্রতি হিজরত করেন। এবং মাদীনায় আগমন করার পর তিনি বদর ও ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ওহুদের যুদ্ধে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

এবং তিনি তার স্ত্রী হাফসা বিনতে ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে পতিহীনা বা বিধবা হিসেবে রেখে যান। সেই সময় হাফসা বিনতে ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু]এর বয়স ছিল বিশ বছর। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যখন তাঁর তরুণী ওযুবতী কন্যা হাফসার অবস্থা দেখলেন যে, সে এখন পতিহীনা। এবং বৈধব্যের অবস্থা তার জীবনের সুখ, শান্তি এবং আনন্দকে গুপ্তভাবে হত্যা করছে, তখন তিনি অতিশয় ক্লেশপ্রাপ্ত, ক্লিষ্ট, জর্জরিত এবং ব্যথিত চিত্ত নিয়ে অস্থীর হয়ে পড়েন। এবং তিনি যখনই তাঁর যুবতী কন্যা হাফসাকে এই বৈধব্যের অবস্থায় দেখতে পেতেন, তখনই তিনি তাঁর মনের স্থিরতা হারিয়ে ফেলতেন ও ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। কেননা তাঁর এই কন্যা তার স্বামীর জিবদ্দশায় তার স্বামীর সাথে অতি শান্তির সহিত মঙ্গলদায়ক দাম্পত্যের জীবনের সুখভোগ করতেন। তাই হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর যখন ইদ্দত শেষ হয়ে গেলো, তখন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর কন্যা হাফসার পুনর্বিবাহের বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। অতঃপর নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হাফসাকে বিবাহ করার পয়গাম বা প্রস্তাব দিলেন এবং ওমার তাঁর কন্যা হাফসার বিবাহ নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে দিয়ে দিলেন। এবং তিনি তৃতীয় হিজরীতে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শ্বশুর হওয়ার উচ্চ মর্যাদা লাভ করলেন।

হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 60 টি।

হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর সব চেয়ে বড়ো মর্যাদা হলো এই যে, যখন পবিত্র কুরআনের হাফেজগণ মৃত্যুবরণ করেন, তখন আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর খেলাফতের আমলে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন অংশ সাহাবীগণের কাছ থেকে নিয়ে তিনি পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করেছিলেন। সেই পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম ফর্মুলা ও সুত্রটি সযত্নে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] কেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কেননা তিনি একজন শিক্ষিতা ভদ্রা মহিলা ছিলেন এবং ভালোভাবে লেখাপড়া জানতেন। তাই তিনিই পবিত্র কুরআনের ছিলেন রক্ষিণী। সুতরাং পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম ফর্মুলা ও সুত্রটি তাঁরই কাছে ছিলো সযত্নে, ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর খেলাফতের আমল পর্যন্ত। অতঃপর ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর কাছ থেকে পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম ফর্মুলা ও সুত্রটি নিয়ে তার অনেকগুলি অনুলিপি বা প্রতিলিপি করে প্রতিটি শহরে ও দেশে প্রেরণ করেন। যাতে সব দেশগুলিতে একই পদ্ধতিতে পবিত্র কুরআন পাঠ করা হয়। অতঃপর ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম ফর্মুলা ও সুত্রটি হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] কে প্রত্যর্পণ করেন। সুতরাং এই পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম ফর্মুলা ও সুত্রটি তার কাছেই থাকে এবং তার মৃত্যুবরণ করার সময় এটি তার ধর্মপরায়ণ ও কর্তব্যপরায়ণ ভাই আব্দুল্লাহকে প্রদান করেন।

উম্মুলমুমেনীন হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] ইবাদত, কুরআন পাঠ এবং আল্লাহর জিকিরের সহিত রাত্রি অতিবাহিত করতেন। তিনি সন 41 হিজরীতে অথবা 45 হিজরীতে মাদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। এবং মাদীনার আমীর বা শাসক মারওয়ান তার জানাজার নামাজ পড়ান।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। রমাজান মাসের ফরজ রোজা রমাজান মাসেই হোক বা রমাজান মাসের কাজা রোজা যে কোনো সময়ে হোক, অথবা মানতের রোজা হোক কিংবা কোনো কাফফারার রোজা হোক, সমস্ত ক্ষেত্রে ঊষাকাল বা ফজরের আভা প্রকাশ হওয়ার পূর্বে বা রাত্রির অবসান ঘটার পূর্বে রোজা রাখার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা ও নিয়ত করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য। আর অভিপ্রায় বা ইচ্ছা ও নিয়তের স্থান হলো অন্তর তাই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বৈধ নয়।

2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফরজ রোজার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা ও নিয়ত সারা দিনের সমস্ত অংশে স্থায়ীভাবে অব্যাহত থাকা অপরিহার্য। তাই কোনো ব্যক্তির নিয়ত দিনের কোনো একটি অংশে স্থায়ীভাবে অব্যাহত না থাকলে তার রোজা হবে না। কিন্তু নফল বা সুন্নাত রোজার জন্য এই নিয়মটি প্রযোজ্য নয়। তাই দিনের কোনো একটি অংশে নফল বা সুন্নাত রোজা রাখার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা ও নিয়ত করলে তা প্রযোজ্য হবে বলেই বিবেচিত। তবে এর শর্ত হলো এই যে, দিনের কোনো একটি অংশে নফল বা সুন্নাত রোজা রাখার নিয়ত করার পূর্বে রোজা বিনষ্টকারী সমস্ত বস্তু তথা পানাহার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

৬৯
ফজরের নামাজে পবিত্র কুরআন পাঠের নিয়ম
65 - عَنْ أَبِيْ بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْغَدَاةِ مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ آيَةً .

( صحيح مسلم , رقم الحديث 172 - (461), وصحيح البخاري , رقم الحديث 541, واللفظ لمسلم ).

65 - অর্থ: আবু বারজা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ফজরের নামাজে ষাট হতে একশটি আয়াত পাঠ করতেন।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 172 -(461) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 541, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

তিনি হলেন আবু বারজা নাজলা বিন ওবাইদ আল-আসলামী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । সঠিক মত মোতাবেক তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে মাক্কা বিজয়ের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি বাসরায় অবস্থান করেন। সেখান থেকে তিনি খোরাসানে আসেন। তারপর তিনি মার্ভ চলে যান। অবশেষে তিনি আবার বাসরা শহরে ফিরে আসেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 40 টি। অতঃপর আবু বারজা নাজলা বিন ওবাইদ আল-আসলামী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মোয়াবিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই বাসরা শহরে সন 60 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আবার এই কথাও বলা হয়েছে যে, তিনি সন 64 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। ফজরের নামাজকে সলাতুল গাদা বলা হয়। এই নামাজে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ষাট হতে একশটি আয়াত পাঠ করতেন।

2। জামাতে নামাজ পড়ার সুন্নাত নিয়ম মোতাবেক যেন উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি দুর্বল তার সাধ্যানুযায়ী নামাজ পড়ানো হয়। কেননা কোনো ইবাদত বা উপাসনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর দুর্বল মুসল্লিদেরকে লম্বা লম্বা নামাজ ও দীর্ঘ উপাসনার জন্য বাধ্য করে কষ্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এবং তাদেরকে বিরক্ত করারও দরকার নেই। কেননা প্রকৃত ইসলাম ধর্মে অল্প কয়েকটি আয়াত পাঠ করে হালকা করে ফরজ নামাজ পড়া যেতে পারে। যেহেতু জামাআতের সাথে লম্বা করে নামাজ পড়ার চেয়ে হালকা করে নামাজ পড়ার বেশি মর্যাদা রয়েছে। যাতে একজন অথবা একাধিক দুর্বল মুসল্লিদেরকে বিরক্ত করা হতে বিরত থাকা সম্ভব হয়।

3। মাসজিদের ইমামের একটি উচিত কাজ হলো এই যে, তিনি যেন সকল মুসল্লিদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে তাদের হৃদয়কে ধীরে ধীরেসুন্নাতের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। তাদেরকে কষ্ট দেওয়া অথবা তাদেরকে বিরক্ত করার চেয়ে এটাই হলো উত্তম পন্থা। তবে খেয়াল রাখা দরকার যে, বিভিন্ন মাসজিদের অবস্থা বিভিন্ন প্রকার। তাই হতে পারে কোনো এক মাসজিদে লম্বা নামাজ বা উপাসনা উপযোগী। আবার অন্য মাসজিদে লম্বা নামাজ বা উপাসনা উপযোগী নয়। দুই মাসজিদের অবস্থা আলাদা আলাদা হওয়ার কারণে এই তফাত প্রকাশ পায়। সুতরাং প্রত্যেক ইমাম আপন আপন মাসজিদের মুসল্লিগণের খেয়াল রাখবেন। তাই নামাজ অতি লম্বা কিংবা অতি হালকা করে পড়া উচিত নয়।

৭০
আল্লাহর জন্য সিজদা করার মর্যাদা
66 -عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " تأكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلاَّ أثَرَ السُّجُوْدِ؛ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُوْدِ ".

( سنن ابن ماجه , رقم الحديث 4326, وصحيح البخاري , جزء من رقم الحديث 7437, وصحيح مسلم , جزء من رقم الحديث 299 - (182), واللفظ لابن ماجه , وصححه الألباني ).

66 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আদম সন্তানের দেহের সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করবে না। কেননা আল্লাহ জাহান্নামের অগ্নির জন্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে স্পর্শ করা হারাম করে দিয়েছেন”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 4326, সহীহ বুখারী, হাদীস নং 7437 এর অংশবিশেষ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 299 -(182) এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা আল্লাহর জন্য সিজদা করার মর্যাদা সাব্যস্ত হয়। তাই মুসলিম ব্যক্তির দেহের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করবে, কিন্তু তার সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে স্পর্শ করবে না। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির নাক সহ কপাল, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের পাতা, এই সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করবে না। কেননা এই সকল সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের জন্য হারাম বা অবৈধ করে রেখেছেন। সুতরাং সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি ছাড়া অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করবে । কেননা জাহান্নামের অগ্নির জন্য এটাই হলো মহান আল্লাহর আদেশ। এবং জাহান্নামের অগ্নি মহান আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বা কোনো অঙ্গকে স্পর্শ করবে না।

2। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ তাঁর প্রকৃত অনুগত সকল মানুষকে তাঁর ইবাদত ও উপাসনার মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তাই মহান আল্লাহ তাদের ইবাদত ও উপাসনাগুলিকে তাদের জান্নাত লাভের মাধ্যম নিরূপণ করে দিয়েছেন। এবং তাদের জান্নাতের সুখ ও নেয়ামত লাভের সাথে সাথে মহান আল্লাহ তাদেরকে প্রদান করবেন বিশেষ সুশোভিত, সুষমামণ্ডিত আকৃতি এবং সৌন্দর্য। সুতরাং এই সৌন্দর্য তাদের সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিতে পরকালে নির্ধারিত থাকবে। আর এটি হলো আল্লাহর জন্য সিজদা করার একটি মহা মর্যাদা।

৭১
ঈদের দিন ঈদগা যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করার তাৎপর্য
67 - عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيْدٍ , خَالَفَ الطَّرِيْقَ .

( صحيح البخاري , رقم الحديث 986).

67 - অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: যে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঈদের দিন ঈদগা যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 986]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 38 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। ঈদের দিন ঈদগা যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করার তাৎপর্য বা রহস্য এটা হতে পারে যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে দুটিই পথ বা রাস্তা যাতায়াতের সাক্ষ্য প্রদান করবে। কেননা এই পৃথিবীর মাটি কেয়ামতের দিন ভাল বা মন্দ যা কিছু কাজ তার উপরে করা হয়েছে, সেই সমস্ত বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করবে।

2। ইসলাম ধর্মের কর্মের বিষয়ে মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন তার ক্ষমতা অনুযায়ী আল্লাহর নাবীর অনুসরণ করে। যদিও তাঁর কর্মের কোনো তাৎপর্য জানতে সক্ষম না হয়।

৭২
নামাজের চাবি হলো: পবিত্রতার্জন করা
68 - عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُوْرُ، وَتَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيْمُ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 61, وجامع الترمذي , رقم الحديث 3, وسنن ابن ماجه , رقم الحديث 275, قَالَ الإمام الترمذي : هذا حديث بأنه : أصح شيءٍ في هذا الباب وأحسن , وحسنه الألباني وصححه ).

68 - অর্থ: আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “নামাজের চাবি হলো: পবিত্রতার্জন করা, নামাজে প্রবেশ করার বাণী হলো:

আল্লাহু আকবার ( اَللَّهُ أَكْبَرُ ) বলা।

এবং নামাজ থেকে বের হওয়ার বাণী হলো:

( اَلسَّلاُمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ )

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলা বা পাঠ করা”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 61, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 3 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 275, ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে এই অধ্যায়ের অত্যাধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ ( সুন্দর সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবুল হাসান আলী বিন আবু তালেব বিন আব্দুল মুত্তালিব আল্‌ হাশিমী আল্‌ কুরাশী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। তিনি হিজরী সালের 23 বছর পূর্বে রজব মাসের 13 (এবং 17/3/599 খ্রিস্টাব্দ) তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং তিনি আল্লাহর রাসূলের চাচাতো ভাই এবং জামাতা বা জামাই হলেন। বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথমে তিনিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

মহান আল্লাহ যখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]কে হিজরত করে মাদীনা যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেছিলেন, তখন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] নিজের জীবন ও আত্মাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জন্য উৎসর্গ করে দিয়ে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বিছানায় শয়ন করেছিলেন। তাই কুরাইশ বংশের লোকজন ভেবেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের বিছানায় শুয়ে আছেন। তাই পরবর্তী সময়ে তাঁরা যখন জানতে পারলেন যে, তাঁদেরকে ধোঁকার মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং আল্লাহ রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পরিবর্তে তাঁর বিছানায় আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] শুয়ে আছেন, তখন তাঁরা আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]কে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁদেরকে কোনো পরোয়া করেন নি। এবং যে সমস্ত লোকের আমানত আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে ছিলো, সেই সমস্ত লোকের আমানত আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উপদেশ অনুসারে তাঁদেরকে ফেরত দেওয়ার কাজে রত হয়ে গিয়েছিলেন।

আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর চেহারা দেখতে অতি সুন্দর ছিলো, এমন মনে হতো যে, তিনি যেন পূর্ণিমা রাতের একটি সুন্দর চাঁদ। তিনি ইসলামী রীতিনীতি অনুসারে বাদী-বিবাদীর মধ্যে সঠিক ফায়সালা, ফতোয়া প্রদান, পবিত্র কুরআনের সঠিক জ্ঞান, ব্যাখ্যা ও ভাবার্থ প্রদানে বিখ্যাত ছিলেন। যেমনকি তিনি বীরত্ব, শক্তি, পরোপকার, প্রখর বুদ্ধি, বক্তৃতা এবং অলঙ্কারপূর্ণ ভাষাজ্ঞানের বিষয়গুলিতেও ছিলেন বিখ্যাত। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 536 টি।

তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উপদেশ অনুযায়ী তিনি শুধুমাত্র তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সেই সময় নিজের পরিবার-পরিজনের সংরক্ষণের দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত করেছিলেন।

যে দশজন সাহাবী জান্নাতবাসী হওয়ার সুসংবাদ এই দুনিয়াতেই পেয়ে গেছেন, সেই দশজন সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত তিনি একজন। তিনি হলেন আমীরুল মুমিনীন এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা। তিনি ওসমান বিন আফ্‌ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর শাহাদাত বরণ করার পর সন 35 হিজরীতে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হওয়ার জন্য মাদীনাতে বায়াআত বা আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর কূফা শহরকে তিনি মুসলিম জাহানের রাজধানী নির্ধারণ করেন। তাঁর খেলাফত পাঁচ বছর তিন মাস ছিলো। তাঁর আমলে সারা মুসলিম জাহানে রাজনৈতিক অস্থিরতার অবস্থাটিই ছিলো বিরাজমান। একজন বিদ্রোহীর হাতে তিনি ফজরের নামাজে সন 40 হিজরীতে (661 খ্রিস্টাব্দে) রমাজান মাসে শাহাদতবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্রতার্জন না করে যে কোনো নামাজ পড়া হারাম বা অবৈধ। এই বিষয়ে কোনো ফরজ নামাজ বা কোনো নফল নামাজের মধ্যে কিছুই তফাত নেই। অনুরূপভাবে পবিত্র কুরআন পাঠের সিজদা, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সিজদা এবং জানাজার নামাজের মধ্যেও কোনো পার্থক্য নেই। তবে কতকগুলি ওলামায়ে ইসলাম বলেছেন যে, পবিত্র কুরআন পাঠের সিজদা এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সিজদার জন্য পবিত্রতার্জন করা শর্ত নয় বা অপরিহার্য নয়।

2। এই হাদীসটির মধ্যে নামাজের তাকবীরে তাহরীমা এবং নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানোর বিষয়টি নামাজের সাথে জড়িত রয়েছে। কেননা তাকবীরে তাহরীমার দ্বারা নামাজের পূর্বে যা কিছু হালাল ছিল তা সব হারাম হয়ে যায়। এবং তাসলীম বা নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানোর দ্বারা নামাজের কারণে যাকিছু হারাম হয়ে ছিল তা সবই হালাল হয়ে যায়।

3। এই হাদীসটিতে নামাজে প্রবেশ করাকে তাহরীম বলা হয়েছে। কেননা এর দ্বারা পানাহার সহ অন্যান্য আরো দুনিয়ার সব কিছুই মুসল্লির জন্য হারাম হয়ে যায়। তাই তাকবীর বা আল্লাহু আকবার ( اَللَّهُ أَكْبَرُ ) বলা ছাড়া নামাজে প্রবেশ করা যায় না। তাই নামাজে প্রবেশ করার সময় নিয়ত সহকারে আল্লাহু আকবার পাঠ করে নামাজে প্রবেশ করতে হবে।

4। সালামের মাধ্যমে মুসল্লি নামাজ থেকে বের হয়। এবং নামাজের মধ্যে দুনিয়ার যা কিছু মুসল্লির জন্য হারাম হয়ে ছিলো, এর দ্বারা তা সবই হালাল হয়ে যায়।

তাই আততাসলীম বলতে ডান দিকে একবার এবং বাম দিকে একবার:

( اَلسَّلاُمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ )

“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” পাঠ করা বুঝানো হয়েছে।

৭৩
আশূরার রোজা রাখার প্রতি উৎসাহ প্রদান
69 - عَنْ أَبيْ قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " صِيَامُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهُ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 752, وصحيح مسلم , جزء من رقم الحديث 196- (1162), وسنن أبي داود , جزء من رقم الحديث 2425, واللفظ للترمذي , ولم يحكم الإمام الترمذي هذا الحديث بشيءٍ , وصححه الألباني ).

69 - অর্থ: আবু কাতাদা আল্ আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আশূরার রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশা পোষণ করি যে, তিনি আশূরার একটি রোজার দ্বারা গত এক বছরের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন”।

[জামে তিরমিজী, হাদীস নং 752, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 196 - (1162) এর অংশবিশেষ এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2425 এর অংশবিশেষ। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটির বিষয়ে নিজের কোনো মন্তব্য পেশ করেন নি। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 15 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আশূরার রোজা রাখার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। কেননা এই হাদীসটির দ্বারা জানা যায় যে, মহান আল্লাহ এই আশূরার একটি দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের পূর্ণ এক বছরের পাপগুলিকে ক্ষমা করে দেন। যদিও এই সমস্ত পাপ বলতে ছোটো ছোটো পাপ বুঝানো হয়েছে।

2। মুহার্রাম মাসের 9 এবং 10 তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব অথবা উত্তম। কেননা আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই আশূরার দিনে স্বয়ং রোজা রেখেছেন এবং 9 তারিখে রোজা রাখার আশা পোষণ করেছেন। তবে আশূরার দিন হিসেবে শুধু মাত্র মুহার্রাম মাসের 10 তারিখে এক দিন একটি রোজা রাখাও চলবে। তাই মুহার্রাম মাসের শুধু 10 তারিখে রোজা রাখা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বিষয় নয়।

3। আশূরার রোজা রাখার সঠিক নিয়ম হলো এই যে, শুধু মাত্র মুহার্রাম মাসের 10 তারিখে এক দিন একটি রোজা রাখা যাবে। এবং মুহার্রাম মাসের 10 তারিখের রোজা রাখার সাথে সাথে 9 তারিখেও রোজা রাখা উত্তম। অতঃপর মহান আল্লাহর মুহার্রাম মাসে যত বেশি রোজা রাখা যাবে, ততই উত্তম কর্ম বা পুণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।

৭৪
হাসিমুখে আনন্দের সহিত সাক্ষাৎ করার মর্যাদা
70 - عَنْ أَبيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ لِيَ النبيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لاَ تَحْقِرَنَّ مِنْ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا , وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 144 - (2626), ).

70 - অর্থ: আবু জার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বলেছেন: “তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে কোনো সময় তুচ্ছ মনে করবে না। যদি তোমার পক্ষে পুণ্যের কোনো কাজ সম্পাদন করা সম্ভবপর না হয়, তাহলে তুমি কমপক্ষে তোমার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা হতেও বিরত থাকবে না”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 144 -(2626)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 10 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার অন্য মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে প্রফুল্ল মনে, সুপ্রশস্ত হৃদয়ে, উজ্জ্বল ও হাসিমুখে আনন্দের সহিত সাক্ষাৎ করা উচিত।

2। কোন মুসলিম ব্যক্তির যদি স্বামী অথবা স্ত্রী থাকে, কিংবা তার সন্তানসন্ততি এবং ছাত্র, ছাত্রী ও কর্মী বা শ্রমিক থাকে, তাহলে এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী সে যেন তাদের সাথে প্রফুল্ল মনে, উজ্জ্বল ও হাসিমুখে আনন্দের সহিত ভালো আচরণ বজায় রাখে। কেননা এরা তো সবাই মানুষ, এদের সকলের অনুভূতি, আশা, আকাঙ্খা রয়েছে। অতএব হাসিমুখে আনন্দের সহিত এদেরকে সালাম দেওয়ার জন্য বলবে:

اَلسَّلاُمُ عَلَيْكُمْ

আসসালামু আলাইকুম! আপনারা সবাই কেমন আছেন? হয়তো আনন্দিত ও ভালোই আছেন সবাই? কোন জিনিসের প্রয়োজন আছে কি আপনাদের?

এই পদ্ধতিতে তাদের সাথে আচরণ করলে, নিশ্চয় তাদের মনে আনন্দ, প্রফুল্ল, শান্তি এবং ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।

3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোনো ব্যক্তির সাথে প্রফুল্ল মনে, উজ্জ্বল ও হাসিমুখে আনন্দের সহিত সাক্ষাৎ করলে এই উত্তম আচরণটির মাধ্যমে দানখয়রাত করার মত পুণ্য লাভ হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:

" تبسُّمُكَ في وجْهِ أخيكَ لَكَ صدقةٌ " ...

অর্থ: “তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে আনন্দের সহিত সাক্ষাৎ করলে দানখয়রাত করার মত তোমার পুণ্য লাভ হবে”।

[জামে তিরমিজী, হাদীস নং 1956, ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটির বিষয়ে হাসান গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

সুতরাং মৃদু হেসে কোমলভাবে কথা বলার বিষয়টির মধ্যেও রয়েছে দীপ্তি, সৌন্দর্য, আনন্দ এবং জাঁকজমক। এবং এইগুলির মাধ্যমে মানুষের কাছে প্রেরণ করা হয় প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, আরাম এবং আনন্দের বার্তা।

৭৫
সুন্নাত বা নফল নামাজ বাড়িতে পড়াই বেশি উত্তম
71 - عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : " صَلاةُ الْمَرْءِ فِيْ بَيْتِهِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاتِهِ فِيْ مَسْجِدِيْ هَذَا إِلاَّ الْمَكْتُوبَةَ ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 1044, وصحيح البخاري , جزء من رقم الحديث 731, واللفظ لأبي داود , وصححه الألباني ).

71 - অর্থ: জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আমার মাসজিদে কোনো ব্যক্তির ফরজ নামাজ পড়া ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত বা নফল নামাজ তার বাড়িতে পড়াই বেশি উত্তম”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1044 এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 731 এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

জ্যায়দ বিন সাবেত ইবনুদ্ দাহহাক আল্ আনসারী একজন মহা বিখ্যাত ও মহা সম্মানিত সাহাবী, যিনি আল্লাহর রাসূলের ওহী বা ঐশী বাণীর লিপিকার ছিলেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি একটি এতিম বা অনাথ কিশোর ছিলেন। এবং তখন তার বয়স 11 বছরের বেশি ছিল না। সেই সময় তার পরিবারের লোকজন যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তখন তিনিও তাদের সাথে সাথে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন তার মধ্যে দেখতে পেলেন জ্ঞানার্জন, শিক্ষাদীক্ষা, শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন ও লেখাপড়ার আগ্রহ, জ্ঞান সংরক্ষণের যোগ্যতা ও সঠিক বোধশক্তি এবং বিদ্যার্জনের কামনা, তখন তিনি তাকে ওই সমস্ত ওহী বা ঐশী বাণীর লিপিবদ্ধ করার জন্য নিয়োগ করলেন, যে সমস্ত ওহী বা ঐশী বাণী তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হতো। এবং জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু]এই মহাদায়িত্ব এবং মহাকার্য সঠিক পদ্ধতিতে পালন করেন।

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]আবার যখন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজা ও নেতাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য লিখিত দাওয়াত দানের ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তিনি জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু]কে সেই সমস্ত রাজা ও নেতাদের কতকগুলি ভাষা শিক্ষা ও ভাষার জ্ঞান লাভ করার আদেশ প্রদান করেন। তাই তিনি অল্প সময়ের মধ্যে কতকগুলি ভাষার শিক্ষা ও ভাষার জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অতএব তিনি আরবি ভাষার সাথে সাথে যে সমস্ত ভাষার শিক্ষা ও জ্ঞান লাভ করেছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে: পারস্যের ফার্সি ভাষা এবং সুরিয়ানী ভাষা অর্থাৎ প্রাচীন সিরিয় ভাষা (Syriac language) ইত্যাদি।

জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর মহা গুণাবলি ছিলো: তাঁর জ্ঞান এবং সাহিত্যের দ্বারা তিনি মাদীনা শহরের মধ্যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন। এবং সকল মুসলিমগণের মধ্যেও তিনি সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। কেননা সাধারণ ভাবে ছিলেন তিনি মহা জ্ঞানি, মহা বুদ্ধিমান এবং পবিত্র কুরআনের রক্ষক ও হাফেজ। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনাও করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে পবিত্র কুরআনেরও জ্ঞান লাভ করেছেন।

ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর খেলাফতের আমলে যখন হজ্জ পালনের যাত্রা করতেন, তখন তিনি জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু]কে মাদীনার শাসক হিসেবে খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করতেন। এবং তাঁকে তিনি বিচারপতি হিসেবেও নিয়োগ করেছিলেন এবং তাঁর এই কাজের জন্য তাঁর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

আবু বাকর ও ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা]এর খেলাফতের আমলে জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর সাথি ও সহচরদের সঙ্গে পবিত্র কুরআন একত্রিত করণের মহা দায়িত্ব পালন করেছেন। হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছে থেকে বর্ণিত 92 টি হাদীস পাওয়া যায়।

জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] সন 45 হিজরীতে 56 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বাড়িতে নফল বা সুন্নাত নামাজ পড়া বেশি উত্তম। কেননা বাড়িতে নফল বা সুন্নাত নামাজ পড়ার মাধ্যমে একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা এবং বিনয়নম্রতা উত্তম পন্থায় বজায় রাখা যায় এবং লৌকিকতা থেকে বেশি দূরে থাকা যায়। কিন্তু যে সমস্ত নফল বা সুন্নাত নামাজ জামাতের সাথে পড়তে হয় যেমন, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের নামাজ এবং এস্তেস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ ইত্যাদি, সেই সমস্ত নামাজ মুসলিম ব্যক্তির জন্য জামাতের সাথে মাসজিদে পড়াই উত্তম।

2। মুসলিম ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নাবীর মাসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়া প্রকৃত ইসলামের বিধানসম্মত একটি সৎকর্ম। তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন আল্লাহর নাবীর মাসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ে। অনুরূপভাবে যে সমস্ত নামাজ প্রকৃত ইসলামের বিধানসম্মত জামায়াতের সাথে পড়া প্রযোজ্য যেমন, ঈদের নামাজ, এস্তেস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের নামাজ এবং তারাবীর নামাজ। এই সমস্ত নামাজ মুসলিম ব্যক্তির জন্য জামাতের সাথে মাসজিদে পড়াই উচিত। তবে নফল এবং সুন্নাত নামাজগুলি বাড়িতে পড়াই বেশি উত্তম।

৭৬
চারটি বাক্য উচ্চারণ করার মর্যাদা
72 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لأَنْ أَقُوْلَ : سُبْحَانَ اللهِ , وَالْحَمْدُ للهِ , وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ , وَاللهُ أَكْبَرُ , أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 32 - (2695), ).

72 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আমার এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করা:

" سُبْحَانَ اللهِ , وَالْحَمْدُ للهِ , وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ , وَاللهُ أَكْبَرُ ".

অর্থ: “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সব চেয়ে বেশি মহান ও শ্রেষ্ঠতর”।

সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যে সমস্ত বস্তুর উপর সূর্যোদয় হয়”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 32 -(2695)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এই চারটি বাক্যের মধ্যে এমন মহামর্যাদা রয়েছে, যা অন্য বাক্যগুলির মধ্যে নেই। এই বাক্য চারটি হলো:

" سُبْحَانَ اللهِ , وَالْحَمْدُ للهِ , وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ , وَاللهُ أَكْبَرُ ".

2। উক্ত বাক্য চারটিকে অধিকতর পাঠ করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। কেননা এই বাক্য চারটির পাঠকারীর জন্য মহান আল্লাহ মহাপুরস্কার রেখেছেন এবং মহাপুণ্যও রেখেছেন।

৭৭
কেয়ামত সংঘটিত হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকদের উপর
73 - عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ إِلاَّ عَلَى شِرَارِ النَّاسِ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 131 - (2949), ).

73 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মহাপ্রলয় বা কেয়ামত সংঘটিত হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকদের উপর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 131 -(2949)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হলেন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।

এই সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাপ্রলয় বা কেয়ামত এমন লোকদের উপর সংঘটিত হবে, যারা মানব জাতির মধ্যে সব চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট। সুতরাং তাদের মধ্যে কোনো প্রকার মঙ্গল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকবে না। আর তাদের মধ্যে ব্যাপক হারে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।

2। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম সমাজের লোকজনের উপর মহাপ্রলয় বা কেয়ামত সংঘটিত হবে না। যেহেতু কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তারা মৃত্যুবরণ করবে। কেননা মহান আল্লাহ সেই সময় এক প্রকার সুশীতল বায়ু প্রেরণ করবেন। এই বায়ুর মাধ্যমে সমস্ত ঈমানদার মুসলিমগণের মৃত্যু ঘটবে। সুতরাং সেই সময় পৃথিবীতে কোনো ভালো লোক থাকবে না, শুধু মাত্র খারাপ লোক অবশিষ্ট থেকে যাবে, তখন হঠাৎ করে আকস্মিকভাবে তাদেরই উপরে মহাপ্রলয় বা কেয়ামত সংঘটিত হবে।

3। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম সমাজের মধ্যে যারা মহান আল্লাহর বিশেষ সাহায্য প্রাপ্ত সম্প্রদায় বা দলের লোকজন এই পৃথিবীতে সত্যের উপর সর্বদা অটল থাকবে। তারাও এই পৃথিবীতে সেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবে, যেই নির্দিষ্ট সময়ে মহান আল্লাহ এক প্রকার সুশীতল বায়ু প্রেরণ করবেন, এবং সেই বায়ুর মাধ্যমে সমস্ত ঈমানদার মুসলিমগণের মৃত্যু ঘটবে। তবে মহাপ্রলয় বা কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই সমস্ত ঈমানদার মুসলিমগণের মৃত্যু ঘটবে।

৭৮
একজন মুসলিম ব্যক্তি অন্য আরেক জন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা হারাম
74 - عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ , وَمَنْ كَانَ فِيْ حَاجَةِ أَخِيْهِ , كَانَ اللهُ فِيْ حَاجَتِهِ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 6951, وصحيح مسلم , رقم الحديث 58- (2580), واللفظ للبخاري ).

74 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “একজন মুসলিম ব্যক্তি অন্য আরেক জন মুসলিম ব্যক্তির ভাই। সুতরাং সে তার প্রতি অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়েও দিবে না। এবং যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মেটাবে, সেই ব্যক্তির অভাব আল্লাহ মেটাবেন”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6951 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 58 -(2580), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য অন্য আরেক জন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি অত্যাচার বা জুলুম করা হারাম এবং অবৈধ। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে কোনো অত্যাচারীর হাতে তার প্রতি অত্যাচার করার জন্য ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নয়। তাই তাকে অত্যাচারীর অত্যাচার হতে রক্ষা করা এবং তার সাহায্য করা ওয়াজিব এবং অপরিহার্য।

2। সাধ্যানুযায়ী মানুষের সহযোগিতা করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় পড়লে, তার প্রয়োজন পূরণ করে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা মুসলিমগণের প্রতি ওয়াজিব।

3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় বা বুঝা যায় যে, মুসলিমগণের অন্তরকে আনন্দিত করার কাজটিকে আল্লাহ পছন্দ করেন। এবং তাদেরকে দুঃখ বা কষ্ট দেওয়ার কাজটিকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। তাই মুসলিমগণের কাজ হলো এই যে, তারা যেন মুসলিমগণকে আনন্দিত রাখার চেষ্টা করে এবং তাদেরকে দুঃখিত করার চেষ্টা না করে।

৭৯
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মজলিশের আদবকায়দা
75 -عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَقُوْلُ : " خَيْرُ الْمَجَالِسِ أَوْسَعُهَا ".

( سنن أبي داود , رقم الحديث 4820, وصححه الألباني ).

75 - অর্থ: আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এই কথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “মজলিশগুলির মধ্যে সেই মজলিশটি বেশি উত্তম, যেই মজলিশটি বেশি প্রশস্ত বা বিস্তৃত”।

[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4820, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:

আবু সাঈদ আল্‌ খুদরী হলেন সায়াদ বিন মালেক বিন সিনান আল্‌ খাজরাজী আল্‌ আনসারী। তিনি একজন মহাবিখ্যাত সাহাবী। খন্দকের যুদ্ধে তিনি সর্ব প্রথমে অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর সাথে তিনি 12টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1170 টি।

আবু সাঈদ আল্‌ খুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মাদীনায় সন 74 হিজরীতে 86 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। তাঁকে আল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। মজলিশ সব সময় প্রশস্ত এবং বিস্তৃত হওয়া উচিত। কেননা মজলিশ প্রশস্ত হলে তাতে অনেক মানুষ আরাম, শান্তি এবং আনন্দের সহিত বসতে পারবে। এবং তাতে কোনো প্রকার উদ্বেগ, অশান্তি ও কষ্ট হবে না। তাই প্রশস্ত, বিস্তৃত এবং বড়ো বৈঠক ও সভাগৃহ হলো সর্বোত্তম মজলিশ।

2। যে কোনো বৈঠকের বা মজলিশের বা সভার মধ্যে সঠিক জায়গা চয়ন বা নির্বাচন করে বসা উচিত। সুতরাং মানুষের যাতায়াত পথে বা রাস্তার উপরে অথবা কোনো বিশেষ ব্যক্তিগত স্থানে বসা উচিত নয়।

৮০
নামাজের রুকু ও সিজদায় পঠনীয় জিকির
76 - عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِيْ رُكُوْعِهِ وَسُجُوْدِهِ : " سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 223 - (487), ).

76 - অর্থ: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর স্বীয় নামাজের রুকু ও সিজদাতে এই বাণীটি পাঠ করতেন:

" سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি অতি নিরঞ্জন, পরম পবিত্র, আপনি ফেরেশতাগণ ও জিবরীল এর প্রকৃত প্রভু”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 223 -(487) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুসরণ করে মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সেও যেন স্বীয় নামাজের রুকু ও সিজদাতে কোনো কোনো সময় এই জিকিরটি পাঠ করে:

" سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ ".

2। সুব্বুহুন ( سُبُّوْحٌ ) এই শব্দটি তাসবীহ্ শব্দ থেকে এসেছে। এবং তাসবীহ্ এর অর্থ হলো: পরাক্রমশালী আল্লাহর অতিশয় সম্মান করা এবং যে সমস্ত বস্তুর তিনি উপযোগী নন, সেই সমস্ত বস্তু হতে তাঁর পবিত্রতা ও মহা উৎকৃষ্টতার ঘোষণা দেওয়া।

* কুদ্দুসুন ( قُدُّوْسٌ ) এই শব্দটির অর্থ হলো: পরাক্রমশালী আল্লাহ মহা পবিত্র এবং তিনি সমস্ত দোষ ত্রুটি এবং অসম্পূর্ণতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।

* আর্রূহ ( الروح ) এই শব্দটির অর্থ হলো: জিবরীল আলাইহিস সালাম। তাঁর সম্মানার্থে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার আর্রূহ ( الروح ) এই শব্দটির দ্বারা দেহের মধ্যে চৈতন্যময় সত্তা, আত্মা বা জীবাত্মাকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ সমস্ত ফেরেশতাদের এবং সকল আত্মা বা জীবাত্মার প্রতিপালক। এই বিষয়ের সঠিক জ্ঞান আল্লাহর নিকটে অধিকতর রয়েছে।

3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কোনো কোনো সময় তাঁর স্বীয় নামাজের রুকু ও সিজদাতে এই বাণীটি বা জিকিরটি পাঠ করতেন।

4। এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, নামাজের রুকু ও সিজদাতে আল্লাহর জিকির এবং দোয়া পাঠ করা বৈধ। কিন্তু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যেখানে বলেছেন:

" أَمَّا الرُّكُوْعُ؛ فَعَظِّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ، وَأَمَّا السُّجُوْدُ فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ؛ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 207 - (479),)

অর্থ: “সুতরাং তোমরা নামাজের রুকুতে মহান প্রতিপালকের অতিশয় সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার বাণী উচ্চারণ করবে এবং সিজদাতে অধিকতর দোয়া করবে। কেননা এই অবস্থায় তোমাদের দোয়া কবুল হওয়ার অনুকূলেই নির্দিষ্ট রয়েছে” ।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 207 -(479) ]।

উক্ত হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয় যে, সিজদাতে অধিকতর দোয়া করা উচিত। এবং অধিকতর রুকুতে মহান প্রতিপালক আল্লাহর অতিশয় সম্মান, প্রশংসা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কিংবা তাসবীহ পাঠ করা উচিত। সুতরাং নামাজের রুকুতে দোয়া করাও বৈধ যেমন সিজদাতেও মহান প্রতিপালক আল্লাহর অতিশয় সম্মান, প্রশংসা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কিংবা তাসবীহ পাঠ করা বৈধ।

* ( قَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ ) এর অর্থ হলো: নামাজের সিজদাতে অধিকতর দোয়া করা উচিত। কেননা এই অবস্থায় তোমাদের দোয়া কবুল হওয়ার অনুকূলেই সময়টি নির্দিষ্ট রয়েছে” ।

৮১
আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সর্ব প্রকারের মঙ্গল
77 - عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ؛ فَلْيَقُلْ : خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ؛ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ , وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاَللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ؛ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 6475, وصحيح مسلم , رقم الحديث 74- (47), واللفظ للبخاري ).

77 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন ভালো কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন নিজের প্রতিবেশীকে কোনো প্রকারের কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার অতিথির সম্মান করে”।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6475 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 74 -(47), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটি প্রকৃতপক্ষে মহাকল্যাণদায়ক আচরণ অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহিত করার একটি মহাবিধান। এই মহাবিধানটি জিভের সংরক্ষণ এবং উদারতা, বদান্যতা ও পরোপকারের জন্য উৎসাহ প্রদানের উৎস।

2। আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সর্ব প্রকারের মঙ্গল। এবং এই দুইটি জিনিস আল্লাহর মহা সম্মানের সহিত আল্লাহর জন্য মুসলিম ব্যক্তিকে সতর্ক ও সজাগ করে রাখে।

3। লোকের সাথে ভালো কথা বলার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। এবং আল্লাহ ও তদীয় রাসূল যে শিক্ষা প্রদান করেছেন, সেই শিক্ষা মোতাবেক কথা বলাকেই ভালো কথা বলা হয়। সেই শিক্ষা অপরিহার্য কর্ম বা কথার জন্য হোক অথবা উত্তম ও পছন্দনীয় মোস্তাহাব কর্ম বা কথার জন্য হোক।

4। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম প্রতিবেশীর অধিকারের সংরক্ষণের প্রতি এবং তার সম্মান রক্ষা করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করে। তাই মুসলিম ব্যক্তির একটি অপরিহার্য কাজ হলো এই যে, সে যেন তার সকল প্রকার মুসলিম ও অমুসলিম প্রতিবেশীর সম্মান রক্ষা করে, তার সহায়ক হয় এবং তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

5। অতিথির সম্মান করা আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান পরিপূর্ণতার নিদর্শন এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সচ্চরিত্রের একটি উত্তম ও স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য।

৮২
গাফিলতি থেকে সতর্কীকরণ
78 - عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : " لاَ يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ ".

( صحيح البخاري , رقم الحديث 6133, وصحيح مسلم , رقم الحديث 63- (2998), واللفظ للبخاري ).

78 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিশ্চয় বলেছেন: “প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি একই গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না” ।

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6133 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 63 -(2998), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 13 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি যেন সব সময় দৃঢ়, চতুর বা বিচক্ষণ এবং সতর্ক ও সজাগ থাকে। এবং সে যেন একই জায়গাতে দুইবার প্রতারিত না হয়। সুতরাং সে সব সময় গাফিলতি থেকে এবং বারবার একই ভুল করা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে।

2। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এটাও প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি যেন তার বুদ্ধি কাজে লাগায়। এবং যে কোনো কাজের উপকরণ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করে। এবং সমস্ত কাজের ফলাফলকে যেন তার উপকরণের সাথে সংযুক্ত করে রাখে। কেননা আল্লাহর নাবীর প্রতি ঐশীবাণীর আদেশ আসতো, তবুও তিনি যে কোনো কাজের সঠিক উপকরণ বা নিত্যসম্বন্ধযুক্ত কারণ কাজে লাগাতেন। সুতরাং তিনি ভালোভাবে পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতেন। আর শত্রুর অমঙ্গল হতে সংরক্ষিত হওয়ার জন্য সাধ্যানুযায়ী উপযুক্ত উপায় অবলম্বন করতেন।

৮৩
উপকারকের জন্য সর্বোত্তম দোয়া
79 -عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوْفٌ؛ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ : جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا؛ فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ ".

( جامع الترمذي , رقم الحديث 2035, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه : حسن جيد غريب , وصححه الألباني ).

79 - অর্থ: উসামা বিন য্যাইদ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তির উপকার করা হবে, সে ব্যক্তি উপকারকের জন্য “জাযাকাল্লাহু খায়রা”

" جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا ".

অর্থ: “আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও পরকালে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন”।

বলে দোয়া করলে, সে নিশ্চয় উপকারকের উত্তমরূপে প্রশংসা করতে সক্ষম হবে”।

[জামে তিরমিজী, হাদীস নং 2035, ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটির বিষয়ে হাসান জ্যাইয়েদ গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 36 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। যে ব্যক্তি নিজের উপকারককে পার্থিব জগতের কোনো পুরস্কার দিতে পারবে না। এবং বুঝতে পারবে যে, সে তার নিজের উপকারকের হক বা অধিকার তাকে সঠিকভাবে প্রদান করতে পারবে না। তখন সে তার উপকারককে উত্তম প্রতিদান প্রদান করার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত বা অর্পণ করবে। আল্লাহ যেন তাকে তার উপকারের উত্তম প্রতিদান সম্পূর্ণরূপে দুনিয়া এবং পরকালে প্রদান করেন। তাই তার জন্য এই দোয়াটি পাঠ করবে:

“জাযাকাল্লাহু খায়রা”

" جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا ".

এই দোয়াটি উপকারকের জন্য পাঠ করলে, উপকারককে সম্পূর্ণরূপে তার অধিকারের প্রতিদান সঠিকভাবে প্রদান করা হবে।

2। উপকারকের অবস্থা অনুযায়ী উপকারককে তার উত্তম প্রতিদান বা পুরস্কার প্রদান করা উচিত। কেননা মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যে, তার উপকারের পুরস্কার যেন তার উপকারের চেয়ে বেশি বা তার উপকারের ন্যায় বা সমতুল্য হয়। আবার মানুষের মধ্যে এমনও লোক আছে যে, তার উপকারের পুরস্কার যেন তার মঙ্গল ও কল্যাণের শুধু মাত্র দোয়া হয়। এই জন্য যে সে ব্যক্তি তার সমাজে ধনশালী এবং সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাশালী, তার উপকারের উত্তম প্রতিদান হলো, তার জন্য আন্তরিকতার সহিত দোয়া করা । এবং পার্থিব জগতের কোনো পুরস্কার বা কোনো সম্পদ তাকে প্রদান না করাই উত্তম।

উপকারকের জন্য সর্বোত্তম দোয়া হলো:

“জাযাকাল্লাহু খায়রা”

" جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا ".

পাঠ করা।

এই দোয়াটির অর্থ হলো: আল্লাহ আপনাকে আপনার উপকারের উত্তম প্রতিদান সম্পূর্ণরূপে দুনিয়া এবং পরকালে প্রদান করুন।

৮৪
তওবা করে আল্লাহর পানে ফিরে আসা অপরিহার্য
80 -عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوْبُوْا إِلَى اللهِ؛ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ".

( صحيح مسلم , رقم الحديث 42 - (2702),).

80 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “হে মানব সমাজ! তোমরা সবাই তওবা করে আল্লাহর পানে ফিরে এসো! আমিও প্রতি দিন একশতবার তওবা করে আল্লাহর পানে ফিরে আসি”।

[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 42 -(2702) ]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

1। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে তওবা হলো: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান এবং আল্লাহর সর্বোত্তম একটি ইবাদত বা উপাসনা। তাই মুসলিম ব্যক্তির যে কোনো পাপ থেকে অবিলম্বে তওবা করা অপরিহার্য ও ওয়াজিব।

প্রকৃত ইসলাম ধর্মে তওবার সংজ্ঞা:

তওবা হলো: প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী কতকগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক যে কোনো পাপ থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করার নাম।

2। সঠিক ও সত্য তওবা মানুষের পাপকে দূর করে, তার অন্তরকে পরিষ্কার করে, তার অপকর্মগুলিকে সৎকর্মে পরিণত করে, তার অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা সৃষ্টি করে এবং তওবাকারীকে তার কষ্টের জীবন থেকে পরিত্রাণ দেয় এবং তাকে সুখদায়ক জীবন প্রদান করে।

3। মানুষের প্রতি একটি অপরিহার্য বিষয় হলো এই যে, সে যেন আল্লাহর করুণা হতে কোনো সময় নিরাশ না হয়। কেননা মহান আল্লাহ তো তওবাকারীর তওবা কবুল করে থাকেন, যখন তওবাকারী সঠিক পন্থায় তওবা করে।

4। পাপ এবং অপকর্ম যত বড়োই হোক না কেন। সঠিকভাবে সমস্ত পাপ এবং অপকর্ম থেকে তওবা করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। তবে আল্লাহর নিকটে তওবা কবুল হওয়ার কতকগুলি শর্ত বা আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে, সেই বিষয়গুলি যেন প্রত্যেক ব্যক্তির তওবাতে পাওয়া যায়, উক্ত বিষয়গুলি নিম্নরূপ:

1। তওবা শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে হতে হবে, পার্থিব জগতের উদ্দেশ্যে বা মানুষের প্রশংসালাভের নিমিত্তে হওয়া বৈধ নয়।

2। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

3। পাপ সংঘটিত হওয়ার কারণে অনুতপ্ত বা লজ্জিত হতে হবে।

4। যে পাপ থেকে তওবা করা হচ্ছে, সেই পাপের দিকে পুনরায় না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প স্থির করতে হবে।

5। পাপ যদি অন্যের অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে সেই অধিকার তাকে ফেরত দিতে হবে।

6। তওবা কেয়ামতের পূর্বে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বে এবং মৃত্যুবরণের নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগেই হতে হবে।

والحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات , والصلاة والسلام على رسولنا محمد , وعلى آله وصحبه أجمعين .

অর্থ: এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যাঁর করুণায় বা অনুগ্রহে সমস্ত সৎকর্ম সম্পন্ন হয়। আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের প্রতি সালাত ও সালাম বা অতিশয় সম্মান ও শান্তি অবতীর্ণ হোক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন