hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

১২
তৃতীয় অধ্যায় মুসলমানদের ভারত আগমনের পূর্ণ তথ্য
মুসলমানদের ভারতে প্রথম পদার্পণ সম্বন্ধে দেশের প্রচলিত আটপৌরে ইতিহাসে পাওয়া যায়, ভারতে সর্বপ্রথম মুসলমান জাতির আগমনকাল মুহাম্মদ বিন কাসিমের সময় হতে। আসল ইতিহাস কিন্তু তা নয়; বরং আরও বহু তথ্যপূর্ণ ইতিহাস লুকিয়ে আছে ইতিহাসের ইতিহাসে।

আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রী বিনয় ঘোষ ও তার স্ত্রী ‘ইতিহাসের সিনিয়র শিক্ষয়ত্ৰী শ্ৰী বীনা ঘোষ এম এ বি-টি’র সহযোগিতায় লেখা ‘ভারত জনের ইতিহাস' হতে উদ্ধৃতি দিয়েছি। তাতে তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিদ্যা, নিরপেক্ষতা ও দুরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া গেছে যথেষ্ট। কারণ বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতির ইতিহাসে বিদ্বেষতার চিহ্ন পাওয়া যায়নি যদিও তারা হিন্দু ছিলেন না, বরং অহিন্দু বা তাঁর ভাষায় নাস্তিক প্রভৃতি। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে শ্রী ঘোষ মহাশয় নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেননি বলে অনেকের বিশ্বাস। তার প্রমাণ একটু পরেই আসবে।

আমরা আগেই আলোচনা করেছি, ইংরেজগণ তাঁদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে ইতিহাসে মুসলমান চরিত্রকে বিকৃত করেছিলেন এবং করিয়েছিলেন। আর হিন্দুমুসলমান বিরাট দুটি জাতির মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ রোপণ করতে পারলেই তাঁদের কৃতকার্যতা। তাঁদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি। তাই মুসলমানদের ইতিহাস লেখার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকে তাদের লেখায় প্রমাণ দিয়েছেন তারা মুসলমান জাতিকে কে কোন চোখে দেখেন! পুরস্কারপ্রাপ্ত বিনয় ঘোষও তার ব্যতিক্রম নন বলেই অনেকে মনে করেন। তিনি একজন ইতিহাস লেখক ও সরকারের দায়িত্ববহনকারী এবং শ্রীযুক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বা স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত। তাঁর স্ত্রীও একজন উচ্চ শিক্ষিতা এবং তিনিও দেশের ভাবী নাগরিক গড়ে তোলার জন্য নির্বাচিত নাম করা শিক্ষানিকেতনের শিক্ষয়িত্রী। এখন তাদের লেখাও যদি নির্ভেজাল দোষমুক্ত না হয় তবে সাধারণ লেখক-লেখিকা, শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর অবস্থা যে আরও ভয়াবহ হবে তাতে আশ্চর্য বা অবাক হওয়ার কী আছে? তাই এই আবশ্যকীয় অবতারণার প্রয়াস।

শ্ৰী ঘোষ তার ‘ভারত জনের ইতিহাসে’ একাদশ অধ্যায়ে ২৭৭ পাতায় শুরু করেছেন ইসলামের অভিযান। সেখানে মোটা অক্ষরে যা লেখা আছে একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখলেই তা গভীর সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত না মুক্ত তার বিচারের দায়িত্ব আমার সূক্ষ্মদর্শী পাঠক-পাঠিকার ওপরেই অর্পণ করলাম।

ঐ ইতিহাসে লিখিত আছে-“হযরত মুহাম্মদের মৃত্যুর পর যাহারা ইসলাম ধর্মের ধারক হইলেন তাহাদের বলা হয় খলীফা। এই খলীফাদের শাসনকাল ক্রমে একটা সুসংহত মুসলমান রাজশক্তির বিকাশ হইলে এবং তাহা আরবের বাহিরে পরিব্যাপ্ত হইল। বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ (ধর্মযুদ্ধ) ঘোষণা করা এবং তাদের ছলে বলে কৌশলে ধর্মান্তরিত করা ইসলামের প্রসার ও প্রতিষ্ঠার যুগে অন্যায় বলিয়া গণ্য হইত না।

তার পূর্বেই ইতিহাসের ঐ পাতাতেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে লেখক বলেছেন,...৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর উচ্ছ্বসিত তরঙ্গ আরবের ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করিয়া প্রচণ্ড বেগে চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। হিন্দুধর্ম বহু প্রাচীন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রাচীনতাও কম নয়। খ্রিস্টধর্মের ৬০০ বছরের বেশি হইয়াছে। কাজেই নবজাত ইসলাম ধর্মের দুর্বার প্রাণশক্তি অন্তত সাময়িকভাবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্মানুরাগীদের বেশ বিভ্রান্ত ও বিপর্যন্ত করিয়া ফেলিয়াছিল।”

যাহোক বাচ্চাদের বই হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বই পর্যন্ত পড়ে এটুকুই সাধারণত বলা হয়ে থাকে, ভারতে মুসলমানদের প্রথম অভিযান মুহাম্মদ বিন কাসিমের সময়। ভারতের ওপর লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে হিন্দু রাজা দাহিরের সময়ে মুসলমানগণ যেন বিনা কারণেই আকস্মিক আক্রমণ করেছিলেন, ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান সূক্ষ্মদর্শী গবেষক পণ্ডিতদের মতে, সিন্ধুস্তান হিন্দুস্তান বা ভারতবর্ষ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্বতন্ত্রস্থান। সিন্ধু বা হিন্দু নামটি মুসলমানদেরই দেওয়া। হযরত মুহাম্মদের (সা.) সময়েই ভারত সম্বন্ধে একদিন তার বিখ্যাত শিষ্য হযরত আবু হোরাইরা (রা.) জানিয়েছিলেন, “হিন্দ বিজয়ের সুসংবাদ”। তাই সাহাবী বা শিষ্য হযরত আবু হোরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদীস গ্রন্থে আছে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের হিন্দ অভিযানে নিশ্চিত ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, “যদি আমি সেই সময় জীবিত থাকি তবে আমি আমার প্রাণ ও সম্পদ-সম্পত্তি বা অর্থাদি ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করব না। আর যদি নিহতই হই তো সম্মানীয় স্বর্গীয় শহীদের সম্মান পাব, আর যদি নির্বিগ্নে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসি তাহলে আমি হতে পারব নরকমুক্ত– আবু হোরাইরা (রা.)।” নাসায়ী হাদীস গ্রন্থ হতে (২: ৬২ পৃঃ)।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় খালেদ ইবনে ওলিদ (রা.) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনিই ইসরাইল-আফগান ও নিজের গোত্রের লোকদের পত্র দিয়ে জানান যে, “সমস্ত ধর্মের প্রতিশ্রুত প্রতিক্ষীত পয়গম্বর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা বিশ্বের পাপীদের পরিত্রাণের পাথেয় নিয়ে শেষ নবী হয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার করছেন। আমি নিজে সেই শান্তি সাম্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি এবং আপনারাও সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আশা করি। আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টির কাছে নতিস্বীকার করাকে ইসলাম চিরতরে বন্ধ করেছে। সংশোধিত চরিত্রবান এবং সভ্য ও উন্নত হয়ে স্বর্গের অধিকারী হওয়ার পূর্ণ পদ্ধতি আমরা উপলব্ধি করে উপকৃত হচ্ছি। তাই আপনাদেরও মঙ্গল কামনায় এই পত্র প্রেরণ...।” (‘তারিখে জাহাকুশ’, ‘মজমাউল আনসা’ এবং ‘আছনাফুল মখলুকাত’ ইতিহাস গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)

অনুরূপ একটি পত্র পেয়ে ‘কয়স’ নামে একটি প্রভাবশালী নেতার নেতৃত্বে আফগানিস্তান হতে একটি দল মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং অনেক আলোচনার পর স্বেচ্ছায় ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে কয়সও হযরতের হাতে হাত দিয়ে ইসলামের ওপর আত্মসমর্পণ করলেন। হযরত তখন কয়সের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখলেন আবদুর রশিদ। কারণ প্রত্যেক মুসলমানের নাম মুসলমানের মত হওয়া একান্ত আবশ্যক। এবার আবদুর রশিদ (রা) সঙ্গে আর একজন সাহাবা বা সঙ্গী দিয়ে আদেশ দিলেন ইসলামের বাণী প্রচার করতে। তিনি নিজের দেশ অর্থাৎ আফগানিস্তানে ইসলাম ধর্ম প্রচার করে বহু গোত্রীয় অগোত্রীয় লোককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে ৭৮ বছর বয়সে পরবর্তীকালের কাজের দায়িত্ব জীবিত মুসলমানদের ওপর ন্যস্ত করে পরলোক গমন করলেন।

মুসলমানরা একহাতে তলোয়ার আর অপর হাতে কুরআন নিয়েই নাকি ইসলাম প্রচার করেছে বলে যা মিথ্যা অপপ্রচার আমাদের মধ্যে প্রচারিত তা কত অসার, অবাস্তব এবং পরিকল্পনাপ্রসূত ভারতে ইসলাম আগমনের প্রথম অভিযাত্রার ইতিহাস পাঠ করলেই প্রমাণিত হবে।

ভারত রাষ্ট্রের মাদ্রাজ তামিলনাড়ু প্রদেশের একটি জেলার নাম ‘মলাবার’ বা ‘মালাবার’। এই মালাবার ঘাটিটি আরবদের জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। কারণ, মাদ্রাজের এই বন্দরের উপর দিয়েই আরবরা চীনে যাতায়াত করতেন। যেমন করেই হোক সারা বিশ্বের প্রত্যেক স্থানে ইসলামের বাণীকে পৌঁছে দেওয়া তারা ফরয বা অবশ্য কর্তব্য বলে জানতেন। অবশ্য প্রত্যেক দেশ বা জাতিকে মুসলমান করা ফরয নয়, তবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী শুনিয়ে দেওয়া ফরয। তাই আরবরা রাতে নামায সাধনায় রত থাকতেন আর দিনে সিদ্ধান্ত শেষে বিশাল কর্ম-সমুদ্রে চালাতেন তাঁদের অব্যর্থ অভিযান। যাহোক, আরবরা এই জায়গাটিকে বলতেন ‘মাবার’, আরবীতে এর অর্থ অতিক্রম করে যাওয়ার স্থল-পারঘাট। আরব বণিক ও নাবিকেরা এই ঘাট পার হয়েই মাদ্রাজ ও মক্কার কাছে হেজাজ প্রদেশে যাতায়াত করতেন এবং মিসর হতে চীনে এবং যাত্রাপথের নগর ও বন্দরগুলোতে যাতায়াত করতেন। এ জন্যই ‘মাবার’ নাম রেখেছিলেন তাঁরাই। ঐ যাতায়াতের পথে মূল্যবান কর্তব্য ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করতেন। ফলে তাদের হাতেই বহু মানুষ মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল!

বিশ্বকোষের শ্রী সম্পাদক মশাই তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, “পরাবৃত্ত পাঠ জানা যায় যে চেরব রাজ্যের (ভারতের) শেষ রাজা চেরুমাল পেরুমাল ইচ্ছা করিয়া সিংহাসন ত্যাগ করিয়া মুসলমান ধর্মগ্রহণ অভিলাষে মক্কানগরীতে গমন করেন। (দ্রঃ বিশ্বকোষ ১৪: ২৩৪ পৃঃ)

তাছাড়া একজন মুসলমান ঐতিহাসিক লিখিত ‘তোহফাতুল মুজাহেদীন’ গ্রন্থেও পাওয়া যায়, “একজন রাজার মক্কা গমন, তার হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হওয়া এবং স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণের বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে। রাজা কিছুকাল হযরতের কাছে থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের সময় ‘শহর’ নামক স্থানে পরলোক গমন করেন।” (তোহফাতুল মুজাহেদীন দ্রষ্টব্য)

এখানে দেখা যাচ্ছে, উভয় লেখকের বক্তব্যের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে সামঞ্জস্য রয়েছে। অতএব অব্যর্থভাবে প্রমাণিত হচ্ছে মাদ্রাজেই প্রথমে ভারতের রাজা স্বেচ্ছায় মুসলমান হওয়ার জন্য মক্কায় গিয়েছিলেন। আরও প্রমাণ হয়, তরবারি দিয়ে ইসলাম প্রচারের মিথ্যা ঘৃণ্য অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তদুপরি আরও প্রমাণ হয়, রাজার মুসলমান হওয়ার আগেই হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহত্ব মহানুভবতা ও মর্যাদার কথা মুসলমান নাবিক বা তবলীগ জামাতের (ধর্ম প্রচারক দল) নিকট জ্ঞাত হয়ে, সাধারণ মুসলমানের মত তিনি তাদের হাতে দীক্ষা না নিয়ে মূল কেন্দ্রে গিয়ে মুখ্য আলোক উৎসে পৌঁছিলেন। অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকরা অনেকেই মুসলমান হয়েছিলেন অনেক পূর্বে।

একজন প্রাচীন ঐতিহাসিক ভারতীয়দের মুসলমান হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেছেন-“তাহার মধ্যে প্রধান হইতে বৌদ্ধ ও জৈনদের মতবাদ, তাহাদের ওপর হিন্দু পণ্ডিতগণের নিষ্ঠুর অত্যাচার এবং পক্ষান্তরে কয়েকজন মুসলমান সাধু পুরুষের সাক্ষাৎ লাভ ও তাহাদের মুখে হযরতের ও ইসলামের ধর্মের পরিচয় লাভ।”

‘সাধু পুরুষদের সাক্ষাৎ লাভ’ কথাটি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। মুসলমান ‘ফকির’ ও আওলিয়াগণের চরিত্র তাদের আধ্যাত্মিক অলৌকিক প্রভাবেও অনেকে মুসলমান হয়েছিলেন। সে সম্পর্কে পূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য পরিবেশন করতে হলে গ্রন্থ আরও বেড়ে যাওয়ার ভয়ে এখানেই সংযত হতে হচ্ছে।

মাদ্রাজের মালাবারের অধিবাসীদের ‘মোপলা’ বলা হয়। তাদের প্রধান কাজ ছিল তাবলিগী বা ধর্ম প্রচার। মোপলাদের সম্বন্ধে বিশ্বকোষ সম্পাদক মহাশয়ের লেখা হতে কিঞ্চিৎ তুলে ধরা হচ্ছে “ইহারা অধ্যবসায়শীল, কর্মক্ষম এবং বর্ধিষ্ণু... ইহাদের অবয়ব সুগঠিত ও বলিষ্ঠ... ইহারা দেখতে সুশ্রী....ইহাদের ন্যায় পরিশ্রমী দ্বিতীয় জাতি ভারতবর্ষে আর কোথাও দৃষ্ট হয় না... সাহসিকতায় ইহারা চির প্রসিদ্ধ... আরবীয় ধর্ম মতে দীক্ষাদানই ইহাদের প্রধান কর্ম। ইহারা শত্রু (গোঁফ দাড়ি) ধারণ করে, কেশকর্তন করে। সকলেই মস্তকে টুপি দেয়... ইহারা স্বভাবত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।” (বিশ্বকোষ ১৪: ৬১৭ পৃঃ দ্রঃ)

তাহলে আমরা বেশ বুঝতে পারছি ভারতে মুসলমান অভিযাত্রীদের আক্রমণের সময়, পদ্ধতি, কারণ ও রহস্য যেন হজম করে একটা গোলকধাঁধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এর পশ্চাতে কি কোন পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল না? অবশ্যই ছিল। যার ইঙ্গিত পূর্বেই করা হয়েছে এবং পরে আলোচনায় আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে বোধকরি।

মালবারেরই প্রাচীন নাম চেরর বা কেরল। ওখানে সেই যুগেই দশটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল যথাক্রমে কোবঙ্গ নূরে, কুইলনে, হিলি ধারায়া পর্বতে, পাকদূরে, মঙ্গলর নগরে, দরফতন নগরে, শালিয়াত নগরে, কুণ্ড পুরমে, যান্দারিনায়, কজর কোট প্রভৃতি স্থানে। বিশ্বকোষ প্রণেতা বলেন, “মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই এতদুদ্দেশে মুসলমান প্রভাব বিস্তৃত হইয়াছিল তাহাতে সন্দেহ নেই। (দ্রঃ ১৪ঃ ৬১৮ পৃঃ)

হযরত মুহাম্মদের (সা.) পরলোক গমনের মাত্র কয়েক বছর পর হতেই আবরদের ভারত যাতায়াত শুরু হয়। অবশ্য প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি। মহারাজা মনীন্দ্র কলেজের প্রিন্সিপ্যাল শ্রী অনিলচন্দ্র লিখিত ইতিহাসে পাওয়া যায়-“ভারত বর্ষে মুসলমান আক্রমণ বহুদিন পূর্বেই আরম্ভ হইয়াছিল। মুহাম্মদের মৃত্যুর আশি বছর যাইতে না যাইতেই আরবরা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে সিন্ধুদেশ অধিকার করে।... সিন্ধু দেশ আরবদের অধিকারে আসার ৩০০ বছর পরে গজনীর সুলতান মামুদ ভারতবর্ষ আক্রমণ করিয়া উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে এবং পাঞ্জাৰ অধিকার করেন। তখনও সিন্ধুদেশ আরবদের অধীন ছিল, কিন্তু উত্তরভারতে অন্যান্য প্রদেশ সমগ্র দক্ষিণ ভারতে হিন্দু রাজা স্বাধীনভাবে রাজত্ব করিতেছিলেন।” (ভারত ও পৃথিবী, ৯১ পৃঃ দ্রষ্টব্য)

সিন্ধু বিজয়ের আলোচনা করলেই মনে আসে হিন্দু রাজা শ্রী দাহির আর মুসলমান সুলতান মুহাম্মদ বিন কাসিমের কথা। কিন্তু মুহাম্মদ বিন কাসিমের অনেক পূর্বেই হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে হিজরি সনের ১৫ সালেই সিন্ধু অঞ্চল অভিযানের প্রয়োজন হয়েছিল। মুহাম্মদ বিন কাসিমের পূর্বে সিন্ধু অঞ্চলে অনেক আরবীয় তবলীগ জামাত বা অভিযাত্রী দল আগমন করেছিলেন। বিখ্যাত ইতিহাস ‘ফাতহুল বুলদান’-এর মূল্যবান তথ্যে জানা যায় যে, ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা.)-এর সময়ে ওসমান নামের এক বিজ্ঞ বীরকে ‘বাহরায়েন’ ও ‘আম্মানে’র গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ওসমান নিজের ভাইকে ‘বাহারায়েন’ নিজের পদে বহাল রেখে আম্মান হইতে একটি সৈন্যবাহিনী ভারত সীমান্তে পাঠান। ওখান হইতে অভিযান সমাপ্তির পর তাহার ভাই মুগীরাকে দেবল বা করাচিতে পাঠান। মুগীরা সাফল্য লাভ করেন যদিও করাচি অঞ্চলে তাঁকে বিপুল বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

এইবার তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান (রা.) (যিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর জামাতা) আবদুল্লাহ ইবনে আমরকে ইরাকের শাসনকর্তা করে পাঠান এবং তদানীন্তন ভারতের পূর্ণ সংবাদ সংগ্রহের আদেশ দেন। হাকেম নামক জনৈক ব্যক্তিকে ভারতের সংবাদ প্রেরকের দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে নিয়োগ করা হয় তিনি যে রিপোর্ট দেন তার ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, ভারতে আরব সৈন্য না যাওয়া উত্তম কারণ সেখানে তখন খাদ্য ও পানীয়ের অভাব ছিল। তাই হিজরি সনের ৩৮ সাল পর্যন্ত ভারতে অভিযান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এরপর চতুর্থ খলীফা হযরত আলীর (রা.) অনুমতিতে হারিস সিন্ধু সীমান্তে অভিযান করেন। ভারতে প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা লাভের বিরুদ্ধে ভারতের নেতাগণ প্রবল বাধা দান করেন কিন্তু সেই বাধা দুর্দমনীয় আরব সেনাদের কাছে টেকেনি। তুমুল যুদ্ধ হয়। উভয় পক্ষের হতাহতও হয়েছিল অনেক। অবশেষে মুসলমানদেরই জয় হল। বহু মাল সম্পদ আরবদের হস্তগত হয় এবং বহু ভারতীয় সৈন্য আরব সেনাদের হাতে বন্দি হয়। বন্দিদের হত্যা না করে তাদের খাওয়া পরার এবং আরও অন্য দায়িত্বসহ এক হাজার বন্দিকে আরব সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। অপর দিকে ‘কায়য়ান' নামক স্থানে মুসলমান বাহিনী যখন আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়, সেই সময়ে যুদ্ধের কোনও সম্ভাবনা নেই দেখে মুসলমান সৈন্যরা গর্ব ভরে কাল ক্ষয় করছিল। তাই আক্রমণ ও আঘাতের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করার মত কোন প্রস্তুতিই আরবদের ছিল না। তাই পরাজিত হতে হয়েছিল ভীষণভাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যুদ্ধ শেষে মুসলমান বন্দিদের নিষ্ঠুরভাবে নিহত হতে হয়েছিল।

তারপর ৪৪ হিজরি সনে আমীর মোয়াবিয়ার (রা.) শাসনকালে মোহাল্লাব ভারত সীমান্তে অভিযান করেন। তাঁর সঙ্গে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয় কিন্তু তার অগ্রসর-অনগ্রসরের সঠিক সংবাদ ইতিহাসে পাওয়া যায়নি বলে এখানে আন্দাজ-অনুমানে গ্রন্থকে কলঙ্কিত করা অপ্রয়োজন মনে করি।

যাহোক, মোহাল্লাবের মৃত্যুর পর মোয়াবিয়া (রা.) আবদুল্লাহ ইবনে সওয়ারকে ভারতের দিকে পাঠালেন। তিনি কয়েকটি যুদ্ধে জয়লাভ করে বেশকিছু মালপত্র উপঢৌকন নিয়ে আমীরের নিকট ফিরে গেলেন। পরে ডাকাতকর্তৃক তিনি শহীদ হয়েছিলেন।

তারপর রাশেদ একবার ভারতের দিকে ধাবিত হয়েছিলেন। অবশেষে ‘ময়দ দেবল’ নামক স্থানের যুদ্ধে তিনি নিহত হন, কিন্তু তার স্থানে সেনান এসে পুনরায় ঐ অঞ্চলে যুদ্ধের ডাক দেন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে তিনি ওখানেই দুই বছরকাল অবস্থান করেন।

তারপর জিয়াদের পুত্র আব্বাসও ভারত আক্রমণ করে বীরত্বের পরিচয় দেন। এরপর মুনজীর ইবনে জরুদ আব্দদীও ভারত সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বিজয় মাল্যে ভূষিত হন। বিজয়ী ও বীরত্ব এই জন্যই বলছি যে, তখনও এক রাজ্য হতে অপর রাজ্য আক্রমণ করা বীরত্ব বলেই বিবেচিত হতো। শুধু তাই নয়; বরং কোন রাজা কোন রাজাকে আক্রমণ না করলে অথবা কারোর আক্রমণ প্রতিহত করতে না পারলে তাকে কাপুরুষতার কলঙ্ক বইতেই হতো। তাই সেকালের নীতির ওপর এই যুগের নীতিকে কেন্দ্র করে মন্তব্য করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।

বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক বালাজুরীর বর্ণনায় জানা যায় যে, ইউসুফ ছকফীর পুত্র হাজ্জাজ এরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। হাজ্জাজ সিন্ধু অভিযানের জন্য হারুনের পুত্র মুহাম্মদ, উবাদুল্লাহ ও বোদাযালাক পরপর সিন্ধু অভিযাত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। প্রত্যেকেই বিক্ষিপ্তভাবে ও অপূর্ণভাবে বিজয়ী হলেও সমগ্র বা ব্যাপক বিজয়ের দিকে তারা মনোনিবেশ করেননি।

আরবের উমাইয়া বংশের খলীফা আল-ওয়ালিদের সিংহাসনে উপবেশন করার পরেই তাঁর বিখ্যাত সেনাপতি মুসার বীরত্ব ও সাধনার ফলস্বরূপ উপাস্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আফ্রিকা মহাদেশের দিকে ধাবিত হলেন। রাতে সাধনায় সঞ্চিত শক্তি নিয়ে দিনেরবেলায় বীরবিক্রমে আক্রমণের ফলে সমগ্র আফ্রিকা দখল করে নিলেন, অর্থাৎ ইসলামের মানবতা, উদারতা ও শক্তি সাহসের সাথে আফ্রিকাবাসী পরিচিত হয়ে ধন্য হলো।

এইবার বীর মুসা হঠাৎ দিনেরবেলায় ‘সালাতুল হাজাত' নামে একপ্রকার নামায সাধনা সম্পন্ন করে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে বললেন, “ওগো প্রতিপালক! ওগো পরিচালক! তুমি আমার ওপর যেমন অনুগ্রহ করেছ তার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। তুমি আমার সঙ্গীদেরও সাহসী ও বলশালী কর। এবং তাদের দ্বারা ইসলামকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা কর।” তারপর তাঁর সৈন্যদের মধ্যে সেরা সৈনিক তারিক’কে আলিঙ্গন করে আশীর্বাদ করলেন এবং স্পেনের দিকে পাঠালেন। জাদু খেলার মত স্পেন দেশ তারিকের অধীনে এসে গেল। শত্রু-মিত্র সকলেরই মুখে একই কথা- মুহাম্মদ (সা.)-এর দাবি সত্যই সঠিক।

তারপরেই কুতাইবা রাতের অন্ধকারে আরাধনান্তে- আর দিনে ‘সিয়াম’ সাধনা অর্থাৎ উপাস্যের উদ্দেশ্যে উপবাব্রত অবস্থায় অভিযান শুরু করলেন প্রাচ্য ভূমির উপর। কুতাইবা দিনের বেলায় উপবাস থেকেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন কিন্তু সৈন্যদের বলতেন, “আল্লাহর নামের কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর আর খুব খাও ও পান কর। ইসলাম ধর্মে যদিও বেশি খাওয়া, বেশি শোওয়া, বেশি কথা বলা ভাল নয়, কিন্তু প্রিয়নবীর আইনের অনুকূলেই আমি তোমাদের বেশি বেশি করে খেতে বলছি। কারণ যোদ্ধাদের জন্য ঐ আইনটি ছাড় আছে।”

যাহোক, অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিশাল মহাদেশের মধ্য পর্যন্ত এসে ইসলামের আলো জ্বলে উঠল। নতুন সভ্যতা, শিক্ষা ও ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হল এশিয়া মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেই বিখ্যাত কুতাইবার কত কামনা ও গবেষণার শেষে ডাঃ ঈশ্বরী প্রসাদ তাঁর ইতিহাসে লিখেছেন-“The earliest Muslim invaders of Hindustan were not the Turks but the Arabs, who issued out from their desert homes after the death of the great Prophet to spread their doctrine through out the world, which was, according to them "The key of heaven and hell" Whenever they went, there intrepidity and vigour roused to the highest pitch by their proud feeling of a common nationality and their zeal for the faith enabled the Arabs to make themselves masters of syria, palestine, Egypt, persia within the short space of twenty years. The conquest of persia made them think of their expansion eastword and when they learnt of the fabulous wealth and idolatry of India from the merchants who Sailed from Shraz and Hurmuz and landed on the Indian coast, They discounted the difficulties and obstacles which nature placed in their way, and determined to lead and expedition to India which at once received the sanction of religious enthusiasm and political ambition. The first recorded expedition was sent From Uman to pillage the cost of India in the year 636-37 A. D. during the Khilafat of Umar.

অর্থাৎ-হিন্দুস্তানের প্রথম মুসলমান বিজয়ীগণ তুর্কী ছিলেন না; বরং তাঁরা ছিলেন আরব জাতি। মহান নবীর পরলোক গমনের ঠিক পরেই এই আরব জাতি ইসলামের মতবাদের প্রচার ও প্রসারকল্পে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন। তবলীগ বা ধর্ম প্রচারের মধ্যেই আছে পরকালের ভালমন্দ, এই ছিল তাদের বিশ্বাস। এই আরবগণ যেখানেই গেছেন বিক্রমপূর্ণ দুর্জয় সাহসের পরিচয় দিয়েছেন সেখানে এবং জাতীয়তাবাদের গৌরবোল প্রেরণাকে কেন্দ্র করে এইভাবে সত্যের অনুসন্ধানপ্রাপ্ত আরবগণ মাত্র বিশ বছরের মধ্যে সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, মিসর ও ইরানের অধিকারী হতে পেরেছিলেন। পারস্য ইরান বিজয়ের পর আরবগণ তাঁদের এই বিজয়কে পূর্ব দিকে আরও সম্প্রসারিত করতে প্রয়াস পান। সিরাজ ও হরমুজের ব্যবসাদারগণ তখন ব্যবসায়ী কার্যোপলক্ষে ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে গমনাগমন করতেন। আরবগণ তাঁদের মুখ হতেই ভারতের ধর্মনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংবাদ পেয়েই ভারত অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এবং প্রথমে ৬৩৬-৩৭ খ্রিস্টাব্দে উমারের (রা.) খেলাফতকালে ‘ওমান’ হতে ভারতে প্রথম অভিযান হয়েছিল।

আরবী ৪০ হিজরিতে মুসলিম ধর্ম প্রচারকগণ (তবলীগ জামাত) ভারতবর্ষ পৌঁছেন। তাছাড়া ভারতের পশ্চিম উপকূলে বনি উমাইয়াদের আমলে খলীফা ওলিদের সময় ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয় হয় এবং সেটা খোরাসান প্রদেশের অংশরূপে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় পরিণত হয়।

যারা ভারতে এসেছিলেন তারা বেশির ভাগ ‘তাবেয়ীন’ বা ‘তাবেতাবেয়ীন’। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিষ্য বা প্রশিষ্যের সঙ্গ লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। হযরতের বাণী শুধু প্রচারে নয় তার প্রসারে এবং নিজেদের ভারতের অধিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা এখানে স্থায়ী বসবাস করেছিলেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দী খুব ভালভাবেই কেটেছিল, তৃতীয় শতাব্দীতে মুসলমান নামধারী ‘বাতেনী’ দলের প্রভাবে মুসলিম জাতি মুসলিম জগতের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পঞ্চম শতাব্দীতে সুলতান মাহমুদ গজনবী খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধু দখল করেন। ফলে ভারতের সঙ্গে পুনর্বার মুসলিম জাতির যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

তারপর সপ্তম শতাব্দীতে ভারতের প্রায় সকল অংশই মুসলমানদের দখলে আসে। তাঁরাই সর্বপ্রথম দিল্লিকে ভারতের রাজধানী নির্বাচিত করেন। এই সময় এশিয়ার অন্তর্গত খোরাসান, তুরস্ক প্রতি স্থান হতে বহু সৈনিক ব্যবসায়ী, আলেম ও বুযুর্গ স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন। আলেমদের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ বাদশাহদের রাজনীতি, সৈন্যদের বিক্রম, পীর বুযুর্গদের ইবাদত, সাধনা, চরিত্রবল ও আদর্শ স্থাপনা সব একত্রিত হয়ে ইসলাম ধর্ম সারা ভারত তথা এশিয়া তথা বিশ্বে ক্ষিপ্রগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। দেহের এক অঙ্গের সাথে অন্য অঙ্গের যেরূপ নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক, ঠিক তেমনি উপরোক্ত আগতদের বেলাতেও অনুরূপ এক নিগূঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন