hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

২৬
শাহজাহান
১৬২৭ খৃস্টাব্দ হতে ১৬৫৮ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল। বুন্দের খণ্ডের আফগান সর্দার খানজাহান লোদী বিদ্রোহী হন কিন্তু সম্রাট তাঁকে দমন করেন। তারপর ১৬৩২ খৃস্টাব্দে আহমদগর দখল করেন। বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার সুলতানদের তিনি শান্তিপূর্ণভাবে সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করবার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু তারা যুদ্ধই পছন্দ করেন। অবস্থা অশুভ বুঝে বিজাপুরের সুলতান বাৎসরিক ২০ লক্ষ টাকা কর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্ধি করলেন। এমনিভাবে ১৬৩৪ খৃস্টাব্দে বিজাপুরের আদিল শাহী ও গোলকুণ্ডার কুতুবশাহী সুলতানের সঙ্গে সন্ধি করে শাহজাহান নিজের আধিপদ্য বিস্তার করেন। ঐ সময় বঙ্গদেশে পর্তুগীজরা ঘাঁটি তৈরি করে বাণিজ্য ও অত্যাচারে বেশ উন্নতি করেছিলেন। তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন কাসিম আলি খাঁ। সম্রাট শাহজাহান তাঁকে আদেশ দিলেন হুগলী অবরোধ করে পর্তুগীজদের যেন উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। সম্রাটের আদেশে যুদ্ধ ঘোষিত হলো, পর্তুগীজরা পরাজিত ও বহু নিহত হয় এবং অজস্র পর্তুগীজ বন্দি হয়ে আগ্রায় প্রেরিত হয়।

শাহজাহানের পোশাক-পরিচ্ছদ একজন পূর্ণ মুসলমানের মতই ছিল এবং জাহাঙ্গীরের ধর্মীয় ভাবান্তর ও ইসলামে আত্মসমর্পণের ছাপ শাহজাহানের ওপরও পড়েছিল। তিনি যদি মাতাল ধর্মহীন, দাড়ি মুণ্ডিত আকবরের মত বা জাহাঙ্গীরের প্রথম অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারতেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ থাকতো না বরং তিনি বহু সুনামের অধিকারী হতে পারতেন। মিঃ ঘোষ খৃস্টান লেখক মিঃ স্মিথ, মিঃ ভিন্সেন্ট প্রমুখ ঐতিহাসিকের উদ্ধৃতি দিয়ে তার ইতিহাসে যা লিখেছেন তাও তাৎর্যপূর্ণ – “স্মিথ বলেছেন এবং ঠিকই বলেছেন বাদশাহ শাহজাহানের ঐশ্বর্য বিলাস, স্থাপত্য-প্রীতি, প্রাসাদ, দুর্গ, বিশেষ করে তাজমহল নির্মাণ অনেককে অবাক করে দিয়াছে কিন্তু এই বিলাসিতার অন্তরালে অনেক নিষ্ঠুর অত্যাচার ও নৃশংস হত্যা কদর্যতা লুকিয়ে রয়েছে!” (৪৩১ পৃঃ দ্রষ্টব্য)। কিন্তু দাড়িওয়ালা সম্রাটকে স্পষ্ট ভাষায় চরিত্রহীন না বললেও সরল পাঠক সহজে বুঝবেন না, সেই জন্য আবার লেখা হয়েছে মমতাজের মৃত্যু হয় ১৬৩১ খ্রীস্টাব্দে এবং তার পর জীবনের ৩৫ বছর শাহজাহান তাজমহলে সমাধিস্থ প্রিয় পত্নী মমতাজের ধ্যান করিয়া কাটাননি। স্মিথ বলছেন "During the remaining thirty five years of his life he disgraced himself by grass licentiousness gift of 79 farrators উচ্ছলতায় শাহজাহান নিজের জীবনকে কলুষিত করতে কুণ্ঠিত হননি।”

আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, মমতাজের মৃত্যুজনিত শোকে শাহজাহানের মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিয়েছিল এবং তিনি মমতাজের মৃত্যুর পর শুধু শোকে নয়, নানা শারীরিক ও মানসিক পীড়ায়ও পীড়িত ছিলেন, তাই দূরবর্তী শ্রেষ্ঠতম শাহজাদা আমগীরের মূল্যনির্ধারণ করতে না পেরে নিকটবর্তী অপদার্থ দারা শিকোহকেই আশাতিরিক্ত স্নেন ও সুযোগে সিক্ত করে সুপথের পরিবর্তে তাঁর ঐতিহাসিক মঞ্চ হতে পলায়নেরই পথ নির্মাণ করেছিলেন।

শাহজাহানের তাজমহল, দিল্লির লালকেল্লা, দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস, মতি মসজিদ, দিল্লির জুমআ মসজিদ, ময়ূর সিংহাসন প্রভৃতি শাহজাহানের অক্ষয় কীর্তি, যার সঙ্গে তাঁর স্থাপত্য শিল্প ও ধর্মানুরাগী মনেরও পরিচয় বিজড়িত।

একবার শাহহাজান রাতের স্বপ্নে একটি মসজিদ দর্শন করলেন। ঘুম ভাঙার পর তাঁর ইঞ্জিনিয়ারদের ডাকলেন এবং আদেশ দিলেন, আমার বর্ণনা অনুযায়ী আপনারা ঐ মসজিদের ছবি এঁকে আমায় দেখান। সকলেই বহুরূপে বহুভাবে কল্পিত মসজিদের একটা করে ছবি আঁকলেন বটে কিন্তু একটি ছবিও বাদশাহের মনের মত হলো না। সেই সময় মস্তবড় এক সাধক বা দরবেশ খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। অবশেষে তাঁরই শরণাপন্ন হতে হয় বাদশাহকে ঐ ছবির জন্য। দরবেশ বাদশাহকে জানালেন, ‘আমার অপেক্ষাও বড় দরবেশ যিনি আপনার রান্না করেন।’ বাদশাহ অবাক হয়ে দাড়িওয়ালা ছোট জামাপরা রাধুনীকে ডেকে ছবির কথা বলতেই তিনি বললেন, ‘আমার চেয়েও বড় বুযুর্গ যিনি আপনার পায়খানা পরিষ্কার করে।’ বাদশাহ অবাক হয়ে মেথরকে ডেকে বললেন, ‘আপনার মত মহান মানুষ নিজেকে গোপন রাখার জন্য এই কৃচ্ছ্রসাধনার ওপর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আর ক্ষমা চাইছি আপনাকে এর আগে চিনতে না পারার জন্য।’ মেথর ফকির তাঁর স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে বললেন, “উহা ‘মোফাত্তেশ’র (Engineer) আঁকতে পারবে কেন? উহা যে বেহেশতের মসজিদ। (দ্রঃ রাজমুকুট পৃঃ ১৩) মেথর ফকির একজন শিল্পীকে ডাকিয়ে আনলেন এবং নিজে একটি মসজিদ ছবি এঁকে তাঁকে দেখালেন। বাদশাহ খুব অবাক হলেন যে এ ছবি তার স্বপ্নে দেখা ছবির সাথে হুবহু সঙ্গতিপূর্ণ। ফকীর শেষ কথা বললেন, “ভ্রাতঃ স্মরণ থাকে, যে ব্যক্তির কখনও নামায কাযা হয়নি কেবল তিনিই এই মসজিদের প্রথম প্রস্তরখানি প্রথিত করবেন।” (দ্রঃ রাজমুকুট পৃঃ ১৩, ১৯২৩ খৃঃ মুদ্রণ) আরও কথিত আছে, ঐ ঘটনার পরের দিন হতে সেই ফকিরকে আর লোকালয়ে দেখা যায়নি।

দিল্লীর জুমআ মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনায় সম্রাট বহু আলেম সুফী আমীর ওমরাদের বললেন, “আমি এমন লোক দ্বারা মসজিদের প্রথম ইট বসাতে চাই, যার ১২ বছর কোনদিন তাহাজ্জুদের নামায কাজা হয়নি। প্রতিদিন গভীর রাতে নিয়মিতভাবে ঐ নামায পড়া বেশ কঠিন কাজ। তাই নানা কারণে কেউ এগিয়ে আসেন না। বাধ্য হয়ে বাদশাহ নিজেই প্রথম ইট বসালেন এবং কেঁদে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি জানতাম না যে, তুমি আমাকে এমনিভাবে প্রকাশ করে লজ্জিত করবে, হে আল্লাহ! তোমার শোকর (কৃতজ্ঞতা) যে আমার ১২ বছর তাহাজ্জুদ বাদ যায়নি।” লোকে প্রশ্ন করলেন, “বাদশাহ দিল্লির শাহী মসজিদ এত বিরাট উঁচু জায়গায় নির্মাণ করছেন কেন?” উত্তরে সম্রাট বলেছিলেন, “আমার মৃত্যুর পর আমার ছোট বড় প্রজারা যখন উচ্চ স্থানে স্থাপিত মসজিদে খোদাকে সেজদা করবে আমি তখন আমার প্রজাবৃন্দের পায়ের নিচে, অনেক নিচে কবরে তাদের দোয়ার ভিক্ষুক হয়ে প্রতীক্ষায় থাকব।”

দিল্লীর বুকে আজও সেই মসজিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদে অপবিত্র অবস্থায় প্রস্রাবান্তে শৌচাদি ব্যতিরেখে কোন মুসলমান পুরুষ ও নারীর প্রবেশ করার অনুমতি নিষিদ্ধ, কিন্তু আজ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পুরুষ ও স্ত্রী প্রতিদিন যেভাবে মসজিদে প্রবেশ, বিচরণ ও পর্যবেক্ষণ করেন তা যেকোন প্রকৃত মুসলমানের জন্যে হৃদপিণ্ডে আঘাত দেয়ার মত অপরাধ।

আজ আমাদের সূক্ষ্ম বিচার দণ্ড ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে গবেষণা করে দেখতে হবে যে, সারা ভারতের অধীশ্বর যে সম্রাট শাহজাহান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীকে কাছে পেয়েও, পাশে পেয়েও আল্লাহর স্মরণের জন্য মমতাজের সমস্ত আকর্ষণ উপেক্ষা করে তাহাজ্জোদের নামাজে মগ্ন হতে পারেন তিনি প্রকৃতপক্ষে উচ্ছল না, উচ্ছল তারাই, যারা তাঁর নির্মল নিষ্কলুষ চরিত্রের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করতে দ্বিধা করেননি? ১২ বছরের নিরবচ্ছিন্ন রাত্রি জাগরণের ইতিহাসটিকে হজম করতে পারলেই বাজিমাৎ হবে মনে করে যারা অবিশ্রান্ত বিষাক্ত কালি বর্ষণ করে গেছেন তাদের কোন ভূষণে ভূষিত করবেন তা সূক্ষদশী পাঠক-পাঠিকাদের বিবেচনাধীন।

শাহজাহানের শাসনকালে দু-একটি বিদ্রোহ ছাড়া শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়নি। B.P. Saksena বলেন, "In shahjahan's reign the Mughal Empire attained to the zenith of prosperity and affuence." অর্থাৎ শাহজাহানের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য ঐশ্বর্য এবং প্রাচুর্যের উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। ফরাসী ঐতিহাসিক ও পর্যটক ভার্নিয়ের বলেন, “শাহজাহান রাজা হিসেবে প্রজাদের শুধু শাসন করা নয়, পরিবার এবং সন্তানদের ন্যায় তিনি প্রজাদের শাসন করতেন।”

এরপর মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে আওরঙ্গজেব ও তার পরবর্তী বংশধরগণের ইতিহাস ইতিপূর্বেই আলোচিত হয়েছে বলে এখানেই এ অধ্যায়ের যবনিকা টানছি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন