hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৬৫
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমাদের দেশের নেতারা যাদের নেতা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম। ১৮৬১ খৃষ্টাব্দে জন্ম আর ১৯৪১ এ তাঁর মৃত্যু হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা প্রাচুর্য এত বেশী যে বিরুদ্ধে কোন সত্য তথ্যও মিথ্যার মত হবে বলেই অনেকেই কিছু বলতে সাহস করেন না। তিনি ডিগ্রিধারী শিক্ষিত না হলেও প্রকৃত যোগ্যতাযুক্ত সুপ্ত সনদে বিজড়িত ছিল তার প্রতিভা। বঙ্কিমের যেমন বন্দেমাতরম ধ্বনী ভারতে প্রতিধ্বনিত তেমনি রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণ মন অধিনায়ক’ গানটিও সারা ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। অতএব তার স্বাধীনতায় অবশ্যই যে অবদান থাকবে তা আশা করা খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু অন্য পক্ষ রবীন্দ্রনাথকে সাহসিকতার সহিত সমীক্ষা করে তার অন্য ইতিহাস খাড়া করতে প্রস্তুত। গোঁড়া হিন্দুদের ‘হিন্দু মেলায় তার হিন্দু মেলার উপহার’ পঠিত হয় তখন তার বয়স মাত্র চৌদ্দ। তার শেখার অন্যতম গুরু ছিলেন বঙ্কিম। বঙ্কিম ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটা নিবিড় যোগ ছিল। কিন্তু বঙ্কিমের মত তার লেখায় মুসলমান জাতি পীড়িত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ সকলের কাছেই প্রিয় হতে চেয়েছিলেন, আর সফলও হয়েছিলেন প্রায়। কবির আমলে কংগ্রেসকেও খুশী করতে এবং ইংরেজ সেবক বঙ্কিমেরও স্নেহ ভজন হতে এক ঢিলে দুই পাখী মারার মত ১৮৯৬ সালে কলকাতা কংগ্রেসের সভায় 'বন্দেমতরম' মন্ত্রটি শুধু পাঠ করেননি; বরং তাতে নতুন সুর সৃষ্টি করলেন এবং আজও সেই সুরে ঐ মন্ত্র বা গান পড়া চলছে। তখন হতে বঙ্কিম একেবারে রবীন্দ্রনাথের গুণ গাইতে দ্বিধা করতেন না। ফলে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের সুনজরে বিশেষভাবে ধরা পড়লেন। ইংরেজরা তখনই ঠিক করে ফেলল তাকে খুব উচ্চাসনে বসিয়ে তাকেও বঙ্কিমের মত সরকারের তোতা পাখি করা চলতে পারে। কবির কবি প্রতিভা যে জীবন্ত ও চলন্ত ছিল তাতে সন্দেহ ছিল না।

মুসলমান জাতির প্রকাশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ও রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদের তিলক ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে জেলে যান। তখন কবি অত্যন্ত দুঃখিত হন এবং ঐ হিন্দু মহাসভায় এক নম্বর নেতা তিলকের মামলা খরচা চালানোর জন্য একটি অর্থভাণ্ডার খোলেন। (দ্রঃ বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা, পৃঃ ৩২২) গোঁড়া হিন্দুরা যখন দেখলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান সবই প্রায় মুসলমানদের আর হিন্দু নেতাদের অবস্থা এক এক জনের এক এক রকম তখন তারা শিবাজীকে আকবরের মত সাজিয়ে গুজিয়ে ছত্রপতি বীর বলে ঘোষণা করতে চাইলেন। সেই জন্য ১৯০৪ অন্য মতে ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে শিবাজী যদিও মারাঠা তবুও তাকে হিন্দুরা ব্রাহ্মণের ভূমিকায় দাঁড় করতে শিবাজী উৎসব পালন করা হয়। এবং সেই উৎসব ভবানী পূজা করা হয়। ঐ রকম উৎসবেও কবি ‘শিবাজী উৎসব’ নামে স্বরচিত প্রবন্ধ পাঠ করেন। শুধু তাতেই শেষ নয়, যারা সেদিন হতে শিবাজীকে গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতায় প্রকাশ ও প্রচার করার দায়িত্ব নেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ প্রথমশ্রেণীর অর্গাইনাইজার। শিবাজীর প্রশংসা আর মুসলমান সম্রাটদের দুর্নাম করা যাদের ব্রত ছিল রবীন্দ্রনাথ সে দলের লোক নন বলেই জানতাম। কিন্তু লিখেছেন “ম্লেচ্ছ সেনাপতি এক মহাম্মদ ঘোরী-তস্করের মত আসে-আক্রমিতে দেশ”, (রবীন্দ্র রচনাবলী, অচলিত ১ম খণ্ড, বিশ্বভারতী, পৃঃ ৩০২)

শিবাজী সম্বন্ধে আলোচনা আওরঙ্গজেবের পাশে বিশেষভাবে হয়েছে তাতে শিবাজীর ডাকাতি জীবনের তথ্য ও প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ সত্য স্বীকার করেও তাঁর প্রতিশ্রুতির ভূমিকা পালন করেছেন। তাই শিবাজীর জন্য লিখেছেন “বিদেশীর ইতবৃত্ত দসুবলি করি পরিহাস অট্টহাস্য রবে তব পুণ্য চেষ্টা বত তস্করে নিষ্ফল প্রয়াস এই জানে সবে।”

তিনি আরও লিখেছেন “এক ধর্ম রাজ্য হবে এ মহাবচন করিব সম্বল।” কবিতার শেষে কবি বলেছেন “মারাঠা সাথে আজি হে বাঙালী, এক কণ্ঠে বল জয়ত্ব শিবাজী।”

১৯০৮ খৃষ্টাব্দে ৩০ এপ্রিল স্বাধীনতার জন্য ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন এবং তাঁর ফাসি হয়। আর ঐ ১৯০৮ সালেই ঠিক তার পরের মাসেই ‘চৈতন্য লাইব্রেরী হলে’ রবীন্দ্রনাথ “পথ ও পাথেয়” প্রবন্ধ পড়ে শোনান ২৫ মে। যদি খুলে না বলা হয় তাহলে মনে হবে ঐ প্রবন্ধে বুঝি ইংরেজ বিতাড়নের কথা ছিল, কিন্তু না। তাতে ছিল উল্টোই। “শ্বেত ও কৃষ্ণ, মুসলমান ও খ্রীষ্টান, পূর্ব ও পশ্চিম কেউ আমাদের বিরুদ্ধ নহে, ভারতের পুণ্য ক্ষেত্রেই সকল বিরোধ এক হবার জন্য শত শত শতাব্দী ধরিয়া অতি কঠোর সাধনা করিবে বলিয়াই.................।” যখন মানুষ একটি জিনিসই বুঝেছিল ইংরেজ চলে যাক। দেশ স্বাধীন হলেই শোষণ পরাধীনতার অশান্তি হতে, বিভেদের অশান্তি হতে রেহাই পাওয়া যাবে। তখন কবি যা বলেছেন “ইংরেজের প্রতি বিদ্বেষ সর্বসাধারণের প্রতি ঐক্য বনের সূত্র-এ কথাও গ্রাহ্য নয়, কেননা ইংরেজ দেশ ত্যাগ করিলে রক্ত পিপাসু বিদ্বেষ বুদ্ধি................পরস্পরে ক্ষতবিক্ষত করবে। সুতরাং বৈচিত্র্যের মধ্যে, প্রভেদের মধ্যে ঐক্যই একমাত্র কার্য"। অন্যত্র কবি বলেছেন, “একথা বলিয়া নিজেকে ভুলাইলে চলিবে না যে, হিন্দু মুসলমানের সম্বন্ধের মধ্যে কোন পাপই ছিল না, ইংরেজই মুসলমানকে আমাদের বিরুদ্ধ করিয়াছে।” বঙ্গভঙ্গ যখন রদ হয় তখন ১৯১২ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাস। কত রক্তারক্তি, গুলি, জেল প্রভৃতির তাণ্ডব নৃত্য। কবি তখন সপক্ষ-বিপক্ষ কোন পক্ষেই না গিয়ে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার জন্য খুব কর্মব্যস্ত ছিলেন। অর্থাৎ ঠিক ঐ সময়েও তিনি বিলেতে, বিলেতে একবার নয় বহুবার তাঁকে যেতে হয়েছে। এনয় যে তাঁর প্রতিভার বিচার হয়েছে তার লেখার ওপর তারপর তাঁকে তাঁর প্রাসাদে থাকা অবস্থায় পুরস্কৃত করা হয়েছে। বরং ১৯১২ তে বঙ্গভঙ্গ হয় আর ১৯১৩ তে তিনি দেশে ফেরেন অক্টবরে। আর তার পেছনে পেছনে নভেম্বর মাসেই তাঁর নোবেল প্রাইজের সংবাদ পৌঁছালো। কোন শর্ত হয়েছিল কিনা কোন রাজনৈতিক চক্রান্ত ছিল কিনা তা নিয়ে অনেকে মাথা ঘামালেও আমরা ওদিকে না গিয়ে; বরং তার লেখা ও কাজ দেখতে দেখতে এগিয়ে যাওয়াই ভাল মনে করি।

১৯১৪তে আবার আমেরিকা ও ইউরোপ ভ্রমণ আরম্ভ হয়। কোন ইঙ্গিতে কার হাত ছানিতে বারে বারে বিলেত যেতে হয়েছিল তাও বিতর্কিত ব্যাপার। বঙ্গভঙ্গ ঝামেলার কয়েক বছর পরে আবার ইংরেজদের সঙ্গে বিরাট ঝঞ্ঝাট আরম্ভ হয় অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের নামে। পরিণাম মারধর আচার-বিচার অনেক কিছু। ঠিক ঐ কাণ্ড ঘটার পূর্বেই বিলেত চলে গেলেন তিনি ১৯২০ সালে। ফিরলেন ১৯২১ সালে এসেই দেখলেন সকলের একবোল প্রায়। ইংরেজি স্কুল-কলেজ বর্জন কর বিলেতী সভ্যতা স্তব্ধ কর। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মিলন নামক প্রবন্ধ লিখে কলকাতা ইউনিভারসিটিতে পড়লেন তাতে তিনি বললেন, “বিদ্যার জোরেই ইউরোপ বড়, সুতরাং বিদ্যায়তন বর্জনে সমূহ ক্ষতি। বিদ্যায়তনকে বরং প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিলন ভূমি করতে হবে।” (কালান্তর বিশ্বভারতী, ১৩৫৫ সংস্করণ, পৃঃ ১৬৯)।

এমনকি “গান্ধীজির অসহযোগ নীতি যে সত্যের আহ্বান নয়” রবীন্দ্রনাথ তা স্পষ্ট ভাষায় বলেন। (দ্রঃ রবীন্দ্র রচনাবলী চতুর্বিংশ খণ্ড, পৃঃ ৩৩১-৩৩৪)

অনেকের মতে রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবের বিরুদ্ধবাদী ছিলেন। চোর, ডাকাত ও গুণ্ডাদের সম পর্যায়ভুক্ত বলে মনে করতেন স্বাধীনতা বিপ্লবীদের। “রাজনৈতিক খুন-জখম লুটপাটের জন্য যারা দায়ী তারাও অন্য অপরাধীদের চেয়ে কম ঘৃণ্য নয় বলে তিনি মনে করতেন।” (দ্রঃ বাঙ্গালী রাষ্ট্রচিন্তা, পৃঃ ৩৪৮)।

অথচ কবি অন্য স্থানে বলেছেন, “ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা- হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা-তোমার আদেশে যেন বাসনায় মম-সত্যবাক্য বলি ওঠে খর খড়গ সম-” এই পরস্পরবিরোধী দুটি কথার কোনটি সমাজ গ্রহণ করবে?

গান্ধীজি যখন প্রয়োজনে বিলেতী জিনিস বর্জন ও বিদেশী কাপড় পোড়ানের নীতি সমর্থন ও গ্রহণ করেন তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন, “গান্ধীনীতি সংকীর্ণ চিন্তাপ্রসূত জাতীয়তাবাদে প্রতিষ্ঠিত-ভারতের সনাতন, বৈশ্বিক ভাবধারা থেকে গান্ধীনীতি পৃথক। বিদেশী বস্ত্র পোড়ানোয় জাতি বিদ্বেষই প্রকাশ পায়।” (দ্রঃ বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা)

বঙ্কিম যাদের নিকট অনাদর্শ তাঁদের নিকট কবিকে তাঁর ভাব শিষ্য বলা কবির ওপর অবিচার করা হয়, যদি প্রমাণ না থাকে। তাই প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে “বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন” আমাদের সাহিত্য প্রাসাদের বড়ো সিংহদ্বারটা খুলিয়া দিয়াছিলেন। এখন আবার তাহার এক একটি মহলে চাবি খুলিবার সময় আসিয়াছে ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ অদ্য ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ নামক একটা প্রকাণ্ড রুদ্ধ বাতায়ন রহস্যাবৃত হর্ম্য শ্রেণীর দ্বারদেশে দণ্ডায়মান।” আজ ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার কদর্য প্রচলন যাতে ইতিহাসের ব্যভিচার বলা যায় তারও প্রবর্তনে রবীন্দ্রনাথের সীমাতিরিক্ত সমর্থন ছিল। অবশ্য তিনি জানতেন তাতে সামান্য ইতিহাস আর বাকি মিথ্যা, তুচ্ছ ও অলীক, অলিখিত লোক কথার ভেজাল ছাড়া কিছু নয়। তবুও তিনি ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ ত্রৈমাসিক পত্রিকার জন্য লিখেছেন, “এখন সংগ্রহ ও সমালোচনা ইহার প্রধান কাজ। সমস্ত জনশ্রুতি, লিখিত এবং অলিখিত তুচ্ছ এবং মহৎ, সত্য এবং মিথ্যা, অথবা অতিরঞ্জিত, যাহা কেবল স্থানীয় বিশ্বাসরূপে প্রচলিত তাহার মধ্যেও অনেক ঐতিহাসিক সত্য পাওয়া যায়। কারণ ইতিহাস কেবল তথ্যের ইতিহাস নহে, তাহা মানব মনের ইতিহাস, বিশ্বাস। আমরা একান্ত আশা করিতেছি, এই সংগ্রহ কার্যে ‘ঐতিহাসিক চিত্র’ সমস্ত দেশকে আপন সহায়তায় আকর্ষণ করিয়া আনিতে পারিবে।”

রবীন্দ্রনাথ তাঁর লিখিত “ইতিহাস" পুস্তকে লিখেছেন, “কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায়, নিরুৎসুক হিন্দুগণ মরিতে কুণ্ঠিত হন নাই। মুসলমানরা যুদ্ধ করিয়াছে, আর হিন্দুরা দলে দলে আত্মহত্যা করিয়াছে। মুসলমানদের যুদ্ধের মধ্যে একদিকে ধর্মোৎসাহ, অপর দিকে রাজ্য অথবা অর্থ লোভ ছিল, কিন্তু হিন্দুরা চিতা জ্বালাইয়া স্ত্রী-কন্যা ধ্বংস করিয়া আবাল বৃদ্ধ মরিয়াছে, মরা উচিত বিবেচনা করিয়া বাচা তাহাদের শিক্ষা বিরুদ্ধ সংস্কার বিরুদ্ধ বলিয়া। তাহাকে বীরত্ব বলিতে পারে, কিন্তু তাহাকে যুদ্ধ বলে না, তাহার মধ্যে উদ্দেশ্য অথবা রাষ্ট্রনীতি কিছুই ছিল না।” উপরোক্ত মন্তব্য মুসলমান জাতির সত্য প্রশংসা থাকলেও তিনি হিন্দু জাতিকেই মুসলমানের মত গড়ে তোলার জন্যই কষাঘাত করেছেন।

কবি প্রথমে জীবনে ‘হিন্দু মেলা’ বঙ্গদর্শনে বিজড়িত রক্ষণশীল গোঁড়া হিন্দু ধর্মে আত্মপ্রকাশ করে। অনেকের মতে পরে তার নিরপেক্ষতার অদ্ভুত নীতি ইংরেজ তোষণে পরিণত হয় এবং ইংরেজ জাতির সঙ্গে তথা ইউরোপে যোগাযোগের ব্যবস্থা হয় এবং নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত হন। পরে ইংরেজদের দেওয়া স্যার উপাধি ও নাইট উপাধিও প্রাপ্ত হন। জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজদের ভারতীয়দের ওপর পৈশাচিক অত্যাচারগুলি চালালোর প্রতিবাদে দেশে বিক্ষোভ এবং ক্রোধ চরম সীমায় পৌঁছায়। তখন রবীন্দ্রনাথের ওপর অনেকের ভক্তিতে ভাটা পড়ে। যেহেতু দেশ যখন রক্তাক্ত বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ তখন তিনি বিলেত গমন আর ডিগ্রি গ্রহণে ব্যস্ত। তখন কিন্তু কবি ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু নোবেল প্রাইজ ত্যাগ করা বা আরো অনেকে যা আশা করেছিলেন তা তারা পাননি। এখানে প্রশ্ন, তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ স্বাধীনতা চাননি? যদি তাই হয়, যদি তার স্বাধীনতায় অবদানের পরিবর্তে বাধাদানই বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে, তাহলে সারা ভারতে তাঁর বিখ্যাত রচনা “জনগণ মন অধিনায়ক জয়হে ...” গানটি জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেল কেমন করে? তাহলে কি বঙ্কিমের বন্দেমাতরমের মত এই সঙ্গীতের অবস্থা? স্বাধীনতা আন্দোলনে যারা লড়েছেন অস্ত্র দিয়েই হোক আর বক্তৃতা দিয়েই হোক, তাদের স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জেলে দেওয়া হয়েছে, ফাঁসি দেওয়া বা চাবুক মারা হয়েছে আর যারা কলম নিয়ে লড়েছেন তাদের লেখাও নিষাদ্ধ করা হয়েছে। অতএব ঐ বিপ্লব, যুদ্ধ ও জাগরণের সময় হিন্দু-মুসলমান দ্বারা সরাসরি পান নোবেল প্রাইজ, স্যার নাইট প্রভৃতি উপাধি আর বিলেতে গিয়ে ফুলের মালা আর মানপত্র এবং তা যে কেন তা সহজেই বোঝা যায়। তবে অনুমান করা আর প্রমাণ পাওয়া দুটি কিন্তু এক জিনিস নয়।

কবি রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত একটি বিতর্কিত বিষয়। কবি জানতেন মুসলমান জাতি আল্লাহ ছাড়া কোন বস্তু বা স্থানকে ভাগ্য বিধাতা বলে মেনে নিতে পারেন না তবুও তিনি তৈরি করলেন তার কবিতা “জনগণ মন অধিনায়ক জয়হে ভারত ভাগ্যবিধাতা ...।" কবি তাহলে এত বড় ভুল করলেন কি করে? একজন সুদক্ষ শিল্পীর এত বড় গলদ থাকা তো সম্ভব নয়। আমাদের বক্তব্য, কবির কবিতা লেখা ভুল হয়নি। আসলে যারা ঐ কবিতাটিকে জাতীয় সঙ্গীত বলে ভোটাভুটি করে ঠিক করেছেন, ভুল তাদের। আসল তথ্য প্রকাশ করলে আমাদের মহামান্য নেতাদের অনেকেই ইংরেজদের খাস দালাল ও কেনা গোলাম মনে হওয়া অসম্ভব নয়।

আমাদের ভারত স্বাধীনতার স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৪৭ খৃস্টাব্দে আর রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় ১৯৪১ খৃস্টাব্দে। অর্থাৎ স্বাধীনতার অর্ধযুগ পূর্বে। সুতরাং পরাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে তার দ্বারা ঐ কবিতাটি রচিত হয়েছিল। তাই জাতি, ধর্ম নির্বিশেষের জন্য জাতীয় সঙ্গীত সুন্দর হয়নি। আলোচনার আর একধাপ অগ্রসর হলে যা পাওয়া যাবে তাতে হয়তো রবীন্দ্রনাথ এবং আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারকদের প্রচারিত সম্মানের ভাবমূর্তি বিকৃত বিশ্রী হয়ে যেতে পারে।

১৯১২ সালে শোষণ, অত্যাচার আর অনাচারের প্রতীক ইংরেজ সম্রাট পঞ্চম জর্জের সম্মানেই ডিসেম্বরে দিল্লীর লাল কেল্লায় কবি ঐ ইংরেজ বাহাদুরকেই লিখিত কবিতা উপহার দিয়েছিলেন। “জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা”ই হচ্ছেন মহামতি পঞ্চম জর্জ। অন্য কেউ একই কবিতা লিখলে তাতে স্বাধীনতার শত্রু বা দালাল বলতে এতটুকু অত্যুক্তি থাকতো না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বলা কঠিন বৈকি! ভারতের কোন বীর সন্তান শোষক ইংরেজ সম্রাটকে ভারতের ভাগ্যবিধাতা বলে জয় হে, জয় হে, বলতে পারে কি? আমরা যাদের হোমরা চোমরা মনে করি সেই কবিত্য ও সাহিত্যিক ও লেখকদের বইগুলো বা লেখাগুলো নিষিদ্ধ হয়নি? লেখার দায়ে জেল তো হয়নি? তাহলে কি নিষিদ্ধ হওয়া ইংরেজের আমলে নিয়ম ছিল না? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ছিল। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম লিখিত ‘যুগবানী’ ১৯৩১ খৃস্টাব্দে নিষিদ্ধ হয়। ঐ সালেই ব্রজবিহারী বর্মণের তরুণ বাঙালী বই নিষিদ্ধ হয়। ১৯২০ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ১৭৪টি বাংলা বই নিষিদ্ধ হয়েছে। এর আগেও বাংলা বই নিষিদ্ধ হয়েছে। তার সংখ্যাও কম নয়। ১৯৩৪ সাল হতে এ পর্যন্ত শ আড়াই বই নিষিদ্ধ হয়। ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ১৬৬টি বাংলা বই নিষিদ্ধ হয়েছে।” (শ্রী শিশির করের লেখা হতে নেওয়া) বিজয় লাল চট্টোপাধ্যায়ের ‘কালের ভেরী’ বই নিষিদ্ধ হয়েছে। মুকুন্দ দাসের ভালো নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে। তার অনেক বই বাজেয়াপ্ত হয়। যথা ‘কর্মক্ষেত্র’, ‘মাতৃপূজা’ প্রভৃতি। তিনি গ্রামে গ্রামে তাঁর গান সাহসিকতার সঙ্গে শুনিয়ে বেড়াতেন আর তার ফলেই তার বই বাতিল। ১৯৩৪ সালে জেলদণ্ড আর জরিমানা লেগেছিল। তার নোবেল প্রাইজ পাওয়া টার্গেট ছিল না। তাই ইংরেজকে ভয় ও তোষণ দিয়ে পূজা করার প্রয়োজন ছিল না।

কবি নজরুলের ‘ভাঙ্গার গান’, ‘বিষের বাঁশী’, প্রভৃতি বইগুলো বাতিল হয়। এরা ছিলেন গরিব মানুষ। টাকার মারও হয়েছিল আর জেলখানায় পুলিশের প্রহারও খেতে হয়েছিল। এদের কাউকে বিলেতে খানা খেতে নেমন্তন করেনি। এমনিভাবে সাবিত্রি প্রসন্নর ‘রক্তরেখা’, ‘কালি কিংকরের’, ‘মন্দিরের চাবি’, যশোদা লালের ‘মায়ের ডাক’, মনীন্দ্র নারায়ণের ‘দেশের ডাক’ (জেলে শাস্তিপ্রাপ্ত), নগেন্দ্র নাথের ‘রক্ত পতাকা’। তাছাড়া মোহনের ‘মুক্তি পথে’ (জেল শাস্তিপ্রাপ্ত), বিমলা দেবীর ‘শিখি পুঞ্জ’, সুরেন্দ্রচন্দ্রের ‘হোল কী’। চারুবিকাশ দত্তের ‘রাজদ্রোহীর জবান বন্দী’ (জেল শাস্তিপ্রাপ্ত), পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস’, যেটিতে প্রমাণ করা হয়েছে ১৮৫৭’র বিপ্লব সিপাহীদের নয় বরং ওটিই হচ্ছে স্বাধীনতার শ্রেণীবদ্ধ সংগ্রাম। “ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম”। এই সমস্ত বই বাজেয়াপ্ত করেছিল ইংরেজ সরকার। কাউকেই স্যার, নাইট ও নোবেল প্রাইজ উপাধি দেওয়া হয়নি। রজনীকান্ত গুপ্তের ‘সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস’টি অনেক সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য নিষিদ্ধ হয়। জানা ন নিয়োগীর ‘দেশের ডাক’, ‘বিপ্লবী বাংলা’ এবং ‘বিলাতি বস্ত্র বর্জন করিব কেন?’ বই তিনটিই ইংরেজ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। এর কারণে বারে বারে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। সোমনাথ লাহিড়ীর ‘সাম্যবাদ’ বই বাজেয়াপ্ত হয় এবং লেখককে জেল খাটতে হয়। আসামের অমরেন্দ্র কৃষ্ণ সেনের ‘আমরা খেতে পাই না কেন?’ বইও সরকার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের তথাকথিত বেদ আনন্দ মঠের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।

আবদুস সামাদ ও আসিরুদ্দিনের যুক্তভাবে লেখা ‘হযরত আলী ও হনুমানের লড়াই', ১৯০৮ সালে কলকাতা হতে প্রকাশিত পুস্তকটি বাজেয়াপ্ত হয়। দুই লেখক এবং প্রকাশক আফাজুদ্দিন আহমাদকে শাস্তি নিয়ে হয়েছিল। এগুলোকে যা বলা হচ্ছে বাংলা বই-এর ক্ষুদ্র খতিয়ান। কিন্তু সারা ভারতের মুসলমান লেখকদের কয়েক সহস্র উর্দু বই, পত্রিকা ও পুস্তিকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক ভাষায় বহু বই সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। পরিশেষে এক দরিদ্র বলি লেখকের একটি বই বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা না বললে রবীন্দ্রনাথের বিষয় বলা পূর্ণাঙ্গ হবে না। ১৯৩৯ খৃস্টাব্দে ১৫ জানুয়ারি শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ বইটি ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। বইটি অবশ্য উপন্যাস তবু তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে লেখক বীরের মতো ইংরেজেকে আঘাত করেছেন। দরিদ্র শরৎ বাবুর বইটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক কারণে তিনি দুঃখিত যে এ রবীন্দ্রনাথ দ্বারা একটু ইংরেজকে সুপারিশ করিয়ে বইটি মুক্ত করার চিন্তা করেন। কারণ তখন ইংরেজ রাজত্বে রবীন্দ্রনাথের ‘নেম ও ফেমের’ ছড়াছড়ি।

কথাশিল্পী বিপ্লবী শরৎচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে পত্র লিখলেন কিন্তু ‘পথের দাবী’ বই ও পত্রের উত্তরে কবি যা লিখেছেন তা এ যুগের বেশির ভাগ মানুষকেই চমকে দেবে।

কল্যাণীয়েষু,

তোমার ‘পথের দাবী' পড়া শেষ করেছি। বইখানি উত্তেজক। অর্থাৎ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে পাঠকের মনকে অপ্রসন্ন করে তোলে।.... আমি নানা দেশে ঘুরে এলাম- আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এই দেখলাম একমাত্র ইংরেজ গভর্নমেন্ট ছাড়া স্বদেশী বা বিদেশী প্রচার বাক্যে বা ব্যবহারে বিরুদ্ধতা আর কোন গভর্নমেন্ট এতটা ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করে না।.....”

ইতি

তোমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২৭ মাঘ ১৩৩৬

উত্তরে শরৎচন্দ্র লিখেছেন .... “আপনি লিখেছেন ইংরেজ রাজ্যের প্রতি পাঠকের মন অপ্রসন্ন হয়ে ওঠে। উঠবারই কথা। কিন্তু এ যদি অসত্য প্রচারের মধ্য দিয়ে করার চেষ্টা করতাম তাহলে লেখক হিসেবে তাতে আমার লজ্জা ও অপরাধ দুই-ই ছিল। কিন্তু জ্ঞানত তা করিনি। করলে Politician Propaganda হত, কিন্তু বই হত না। নানা কারণে বাংলা ভাষার এ ধরনের বই কেউ লিখে না। আমি যখন লিখি এবং ছাপাই তার সমস্ত ফলাফল জেনেই করেছিলাম। সামান্য অজুহাতে ভারতের সর্বত্রই যখন বিনা বিচারে, অবিচারে অথবা বিচারের ভান করে কয়েদ, নির্বাসন প্রভৃতি লেগেই আছে তখন আমিই যেন অব্যাহতি পাবো, অর্থাৎ রাজ পুরুষরা আমাকেই ক্ষমা করে চলবেন, এ দুরাশা আমার ছিল না। আজও নেই.... আমার প্রতি আপনি অবিচার করেছেন। .... দেশের বাইরের অভিজ্ঞতাও আপনার অত্যন্ত বেশি, আপনি যদি শুধু আমাকে এইটুকু আদেশ দিতেন যে, এই বই প্রচারে দেশের সত্যিকার কল্যাণ নেই, সেই আমার সান্ত্বনা হত।” (দ্রঃ মনীন্দ্র চক্রবর্তী লিখিত দরদী শরৎচন্দ্র)

শ্ৰীমতী রাধারানী লিখিত এক পত্রে (সামতাবেড় ১০ অক্টোবর, ১৯২৭) শরৎচন্দ্র লিখেছেন, “... একটা কথা তোমাকে জানাই, কারুকে বোলো না। ‘পথের দাবী’ যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল তখন রবিবাবুকে গিয়ে বলি যে, আপনি যদি একটা প্রতিবাদ করেন তো কাজ হয় যে, পৃথিবীর লোকে জানতে পারে গভর্নমেন্ট কি রকম সাহিত্যের প্রতি অবিচার করছে। ... তিনি জবাবে লিখেন, পৃথিবী ঘুরে ঘুরে দেখলাম, ইংরেজ রাজশক্তির মত সহিষ্ণু এবং ক্ষমাশীল রাজশক্তি আর নেই। তোমার বই পড়লে পাঠকের মন ইংরেজ গভর্নমেন্টের প্রতি অপ্রসন্ন হয়ে উঠে। তোমার বই চাপা দিয়ে তোমাকে কিছু না বলা তোমাকে প্রায় ক্ষমা করা। এই ক্ষমার ওপর নির্ভর করে গভর্নমেন্টকে যা-তা নিন্দা করা সাহসের বিড়ম্বনা।” (দ্রঃ শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ, ১০ম সম্ভার) সবচেয়ে মজার কথা, এই লেখাটি গোপনপত্র হিসেবে দেয়নি বরং শরৎবুকে ছেপে বের করার জন্যই দিয়েছিলেন। কিন্তু বুদ্ধিমান লেখক তখন তা প্রকাশ করেননি। করলে যতটুকু বিপ্লব হিন্দু সমাজে চলছিল রবীন্দ্রভক্ত দেশবাসী সঙ্গে সঙ্গে অন্য পথে চলতো। তাই শরৎবাবু লিখেছেন “ভাবতে পারো বিনা অপরাধে কেউ কাউকে এত বড় কটুক্তি করতে পারে? এ চিঠি তিনি ছাপার জন্যই দিয়েছিলেন কিন্তু আমি ছাপাতে পারিনি এই জন্য যে, এত বড় সার্টিফিকেট তখুনি স্টেটসম্যান ইংরেজি কাগজওয়ালারা পৃথিবীময় তার করে দেবে এবং এই যে আমাদের দেশের ছেলেদের বিনা বিচারে জেলে বন্ধ করে রেখেছে এবং এই নিয়ে যত আলেম হচ্ছে সমস্ত নিষ্ফল হয়ে যাবে”। (দ্রঃ ঐ)

শরৎচন্দ্র আরও লিখেছেন, সে কী উত্তেজনা। কী বিক্ষোভ! রবীন্দ্রনাথ নাকি পথের দাবী পড়ে ইংরেজদের সহিষ্ণুতার প্রংশসা করেছেন। এই বইতে নাকি ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষের ভাব আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। আমার ‘পথের দাবী' পড়ে আমাদের দেশের কবির কাছে যদি এই দিকটাই বড় হয়ে থাকে, তাহলে স্বাধীনতার জন্য আর আন্দোলন কেন? সবাই মিলে তো ইংরেজদের কাঁধে করে নেচে বেড়ানো উচিত। হায় কবি, তুমি যদি জানতে তুমি আমাদের কত বড় আশা-কত বড় গর্ব, তাহলে নিশ্চয় এমন কথা বলতে পারতে না। কবির কাছে আমার ‘পথের দাবী’ এত বড় লাঞ্ছনা হবে এ আমার স্বপ্নের অতীত ছিল। কী মন নিয়েই যে আমি বইখানা লিখেছিলুম তা আমি কারুকে বুঝিয়ে বলতে পারব না’। (দ্রঃ শরৎচন্দ্রের টুকরো কথা, অবিনাশচন্দ্র ঘোষাল)

শরত্যাবু মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে বলেছিলেন, “আমার আর পাঁচখানা বই যদি সরকার বাজেয়াপ্ত করতো তাহলে আমার এত দুঃখ হত না।” (নিষিদ্ধ বাংলা পৃঃ ৩৩) শরৎ চন্দ্রের মৃত্যুর পূর্বে কেউ তাঁর স্বপ্নকে সফল করতে পারেননি; মৃত্যুর পরে যিনি করেছিলেন তিনি হচ্ছেন মেীলবি ফজলুল হক। তখন তিনি বাংলার মন্ত্রী ছিলেন। (দ্রঃ ঐ পৃঃ ৩৪)

রবীন্দ্রনাথকে জানতে গিয়ে শরৎচন্দ্রকে ও নজরুলকে আনতে হয়েছে। কিন্তু ররীন্দ্রনাথকে যে চোখে আমরা দেখি বা দেখানো হয়েছে, শরৎচন্দ্রকে কিন্তু তা হয়নি। শুধু জানি একজন কথাশিল্পী কিন্তু নজরুল, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, চিত্রয়ন দাস এরা যে স্বাধীনতা শিল্পী তা আমাদের অজানার মত। এই শরৎচন্দ্র, নজরুল, রবীন্দ্র ও বঙ্কিমের চরিত্র যদি পর্যালোচনার তুলাদণ্ডে ওজন করা হয় তাহলে কি দেখা যাবে না যে, সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র ইংরেজবিরোধী, তাঁর বই বাজেয়াপ্ত, তিনি জেল খাটতে প্রস্তুত, নিজে একজন বিপ্লবী। কিন্তু বঙ্কিমও একজন সাহিত্যিক, ইংরেজ প্রেমিক, ইংরেজ সরকারের মাইনে খাওয়া চাকর, ইংরেজ পক্ষে প্রকাশ্য লিখিত ওকালতি বা দালালিতে শীর্ষস্থানীয় আর দুজন প্রায় একই সময়ে ভারতের মাটিতে জীবন্ত। কিন্তু তাকে কতটা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা আজ হিসেবে দিন না হলেও আগামী কাল হয়ত হিসাব হবে বন্দেমাতরম চলবে কী করে? রবীন্দ্রনাথ একজন কবি বিরাট ধনী, জমিদার, পৃথিবী ঘোরার অর্থ তার ছিল। ইংরেজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ভূমিকা কতটা ছিল আর ইংরেজ পক্ষে স্বাধীনতা আন্দোলন স্তব্ধ করতে কতটা ভূমিকা ছিল তা উপরোক্ত তথ্যে উদ্ঘাটিত। ইংরেজ কর্তৃক নোবেল প্রাইজ, স্যার ও নাইট উপাধিপ্রাপ্ত এবং ‘জনগণমন অধিনায়ক’ কবিতাটি জাতীয় সঙ্গীতে মর্যাদাপ্রাপ্ত আর ইংরেজদের পক্ষ হতে সেই রক্তাক্ত আন্দোলনের সময় তিনি বার বার তাদের দেশে নেমন্তন্নপ্রাপ্ত মনীষী ছিলেন।

আর এদিকে নজরুল অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের অর্থাভাবী কবি। প্রকাশ্যে ইংরেজবিরোধী, তাই তাঁর বই বাজেয়াপ্ত আর হাতকড়া দিয়ে জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন, কারাগারে চাবুকের আঘাতপ্রাপ্ত। ইউরোপ বা বিলেত হতে নেমন্তন্ন হতে বঞ্চিত ইংরেজের দেওয়া নোবেল প্রাইজ স্যার, নাইট প্রভৃতি উপাধি হতে বঞ্চিত। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে উপযুক্ত মর্যাদায় আমরা যা দেয়ার তা দিয়েছি? জনগণমন কবিতা এত সমাদৃত কেন তা নতুন ছেলেমেয়েদের জানা নেই। কারণ সব জানা সত্ত্বেও ওপর মহল হতে এ কাণ্ড ঘটেছে। নীচু মহলের লোক তা যে বুঝতে পেরেছেন তাতে সন্দেহ নেই। নজরুলকে রবীন্দ্রনাথের পাশে যতটুকু জানতে পারা গেছে তার অন্যতম কারণ কমিউনিষ্ট জুজুদের এবং প্রাক্তন পূঃ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের অধিবাসীদের সম্মান প্রদর্শন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মে জীবন্ত জীবনী রেখে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় দরিদ্র ও অভাবী অবস্থায় পরলোকগমন করেন। যদিও তাঁর জন্য পৃথকভাবে লিখলাম না। তবে যা লেখা হয়েছে সেটাকে বৃহৎ গ্রন্থ রচনার কাঠামো করা যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন