hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৩২
ত্রয়োদশ অধ্যায় প্রাদেশিক মুসলিম রাজ বংশ
বঙ্গদেশঃ সুলতানাতের পতনের ফলে কেন্দ্রীয় শাসন ক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন অংশে কতকগুলো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। বঙ্গদেশই সর্বপ্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

১২০১ খৃস্টাব্দে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী নদীয়া অধিকার করে বঙ্গদেশের প্রথম শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। কিন্তু বলবনের সময়ে তুঘ্রীল খাঁর নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষিত হলে সুলতান নিজপুত্র বুগরা খানকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। অবশেষে ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ পূর্ব বঙ্গে এবং আলাউদ্দিন আলী শাহ পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে অবিভক্ত বাংলাদেশ দুই স্বাধীন সুলতানের শাসনাধীনে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ (১৩৫৩) দুই দেশের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে অখণ্ড বাংলার স্বাধীন সুলতানরূপে নিজেকে ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তস্যপুত্র সেকেন্দার শাহ সুলতান হয়েছিলেন। তিনি আদিনাতে (পাণ্ডুয়ার নিকটবর্তী) এক সুবৃহৎ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার পরবর্তী সময়ে রাজা গণেশ নামে এক ব্রাহ্মণ জমিদার ১৪০৯ খৃস্টাব্দে সিংহাসন দখল করেন। অনেক পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকের মতে তিনি দুই ক্রীড়নক, সুলতানের নামে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।

এই গণেশকে কেন্দ্র করেই ইতিহাসে এক উপভোগ্য অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে। মুসলমানদের গৌড়বঙ্গ বিজয়ের দু'শ বছরেরও অধিক পরের ঘটনা। তখন গণেশ ইলিয়াস শাহী বংশের প্রধান মন্ত্রীত্বের পদে নিয়োজিত ছিলেন। সুলতান সাইফুদ্দিন হামজার দুর্বলতার অজুহাতে গণেশ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্বয়ং একদিন সিংহাসন দখল করে বসেন। বলাবাহুল্য, এই গণেশই সুলতানকে রাজ্য শাসনের মোহে নানা অপকীর্তিতে ডুবে থাকতে প্ররোচিত করতেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে উৎকোচ দান করে অর্থলোভী মুসলমান জমিদার ও আমীর ওমরাহদের মুখ বন্ধ করেন এবং পরে মুসলমান প্রজাবৃন্দের ওপর অকল্পনীয় অত্যাচার শুরু করেন। তখন অনন্যোপায় প্রজাবৃন্দ শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা বদরুল ইসলাম সাহেবের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেন। মাওলানা সাহেব মুখপাত্র হিসেবে গণেশের দরবারে উপস্থিত হলেন ও অত্যাচারে বিরত থাকতে নির্দেশ দিলেন। কিন্তু উদ্ধত রাজা তার কোন কথায় কর্ণপাত না করে তাকে কুর্ণিশ করতে বললেন। মাওলানা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, রাজাকে কুর্ণিশ নয়, বরং রাজাই কোন শাইখুল ইসলাম রাজদরবারে এলে সিংহাসন থেকে নেমে মুকুট হাতে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবে- এটাই হলো ‘রাজানুমোদিত নীতি’।

কোনক্রমেই যখন পেরে ওঠা গেল না তখন রাজা গণেশ এক কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। একটা নিম্নদ্বারবিশিষ্ট জনশূন্য কক্ষে আলোচনার জন্য মাওলানা সাহেবকে আমন্ত্রণ জানানো হল। মাওলানা সাহেব এসে দেখলেন গণেশ ভেতরে বসে। আর এই নীচু দ্বার দিয়ে মাথা হেঁট করে প্রবেশের অর্থই হলো তাকে প্রণাম করা। অতএব গণেশের এই সুপরিকল্পিত চাতুর্য উপলব্ধি করে মাওলানা পেছন হেঁটে ঘরে প্রবেশ করেন। অপমান আর ক্রোধের বশে রাজা গণেশ সেই দিনই হযরত মাওলানা বদরুল আলম সাহেব ও আরও কয়েকজন বিজ্ঞ আলেমকে নদীগর্ভে ডুবিয়ে হত্যা করান।

অতঃপর নিরুপায় মুসলমান সমাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেই সময়ে ওলীকুল শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ নূর কুতুবুল আলম সাহেবের দারস্থ হন। মনীষী কুতুবুল আলম তখন ইব্রাহিম শারকীকে বাংলাদেশ আক্রমণ করতে নির্দেশ দেন। হযরতের আদেশ পেয়ে বিরাট সৈন্য বাহিনী নিয়ে শারকীয় ফিরোজপুরে শিবির স্থাপন করেন। এই সংবাদে ভীত হয়ে রাজা গণেশ মনীষীর আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মনীষী তাঁকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলেন। স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নিজে মুসলমান না হয়ে পুত্র যদুকে তার হস্তে সমর্পণ করে সস্ত্রীক কাশীযাত্রা করেন। এই যদুই পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালালুদ্দিন মহাম্মদ শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন।

ডাঃ কিরণচন্দ্র চৌধুরী এমএএলএলবি,ডি,ফিল লিখেছেন, “যদু ইসলাম গ্রহণ করে জালালুদ্দিন মহম্মদ শাহ নাম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর যদু অত্যন্ত অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। বিশেষভাবে হিন্দুদের ওপর অবিচার ও অত্যাচার তিনি অপ্রতিহতভাবেই চালিয়ে ছিলেন।” ডাঃ চৌধুরীর এই উদ্ধৃতিতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ধর্ম মানেই অত্যাচারী এবং অমুসলিম বিদ্বেষী ধর্ম। কিন্তু মাছি মারা কেরানী সাম্প্ৰয়িক মনোভাবাপন্ন না হয়ে যারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাঁরা প্রত্যেকেই (মুসলিম অমুসলিম যাই হোন) এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, ইসলামের কোথাও অমুসলমানদের ওপর অত্যাচার করার নির্দেশ নেই। যুগে যুগে দেশে অসংখ্য অমুসলমান মনীষী ইসলামের মধুর ও অনুপম আদর্শে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে এই যে, যদুর ধমনীতে কোন মুসলমানী রক্ত প্রবাহিত নয়; বরং তিনি কেবল মাত্র হিন্দু ছিলেন না পাকা ব্রাহ্মণ ঘরের ছেলে ছিলেন। অতএব তিনি যদি অপ্রতিহতভাবে অত্যাচারই করে থাকেন যদি হিন্দু বংশ ধ্বংস করার জন্য রক্ত মেতেই উঠে থাকে তবে তার জন্য দায়ী তার বর্ণশ্রেষ্ঠ রক্ত, দায়ী তার পূর্ব সমাজ, তার পূর্ব সভ্যতা, তার পূর্ব ধর্ম, দায়ী তিনি নিজে; ইসলাম নয়। ডঃ সুকুমার সেন তাঁর সম্বন্ধে বলেন, “গৌড়ের সিংহাসনে আরোহণ করে তিনিও হিন্দু কবি ও পণ্ডিত দিকের পৃষ্ঠপোষকতায় পরখ হননি। যদুর অনুগৃহীত পণ্ডিত দিগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ছিলেন বৃহস্পতি মহিন্তা। (বাংলা সাহিত্যের কথা- ডক্তর শ্রী সুকুমার সেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্করণ ১৯৩৯)

যাইহোক, যদু ওরফে জালালুদ্দিন মহম্মদ শাহের পর তাঁর পুত্র শামসুদ্দিন আহমদ সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হন। কিন্তু গুপ্ত ঘাতকের হাতে তার মৃত্যু হলে রাজা গণেশের বংশের পতন ঘটে এবং পুনরায় ইলিয়াস শাহী বংশের অভ্যুদয় হয়। ইলিয়াসের পৌত্র নাসীরুদ্দিন অতঃপর তাঁর পুত্র রুকনুদ্দীন বরাবক শাহ এবং তারপর হাবসী রাজারা ১৪৯৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। শেষে আলাউদ্দিন হুসেন সিংহাসনে বসলেন। উড়িষ্যার সীমান্ত হতে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তার সামাজ্য পরিধি বিস্তৃত ছিল। ডাঃ এবিএম হাবিবুল্লাহ বলেন, “একমাত্র আসাম ব্যতীত সকল অভিযানই সার্থকমণ্ডিত হয়েছিল।”

তার সময়ে শ্রীচৈতন্যদেবের মতবাদ প্রচার করেন, বাংলা সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। জ্যৈষ্ঠপুত্র নসরত খাঁ তার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সাহিত্য ও শিল্পানুরাগী ছিলেন। গৌড়ে দুটি মসজিদ নির্মাণ করান, একটির নাম ‘বড়সোনা’ ও অপরটি ‘কদম রসূল’। একজন প্রাসাদ রক্ষী দ্বারা ১৬৩২ খৃস্টাব্দে তিনি নিহত হলে গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ বাংলাদেশে হুসাইন শাহী বংশের শেষ স্বাধীন সুলতানরূপে সিংহাসন লাভ করেন। অতঃপর শের ১৫৩৮ খৃস্টাব্দে গৌর অধিকার করলে তিনি বঙ্গদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শেরশাহের মৃত্যুর পর সোলাইমান কররানী বঙ্গদেশ অধিকার করে আফগান বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭৬ খৃস্টাব্দে আফগান বংশের পতন হলে বাংলাদেশ মুঘল অধিকারভুক্ত হয়।

জৌনপুরঃ তুঘলক বংশের শেষ সুলতানের রাজত্বকালে সরওয়ার ওরফে খাজা জাহানের নেতৃত্বে জৌনপুরও স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৩৯৯ খৃস্টাব্দে সরওয়ারের মৃত্যুর পর তাঁর পোষ্যপুত্র সিংহাসন লাভ করেন। কিন্তু তিনিও ১৪০০ খৃস্টাব্দে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অবশেষে সুলতানের ছোট ভাই শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক এব্রাহীম শাহ সিংহাসনে সমাসীন হন। তার শাসনকালে জৌনপুর মুসলিম সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ‘আতানা মসজিদ’ তাঁর স্থাপত্য শিল্পের প্রকৃষ্ট নিদর্শনস্বরূপ আজও বিদ্যমান। ১৪৪০ খ্রীস্টাব্দে এব্রাহীম শাহের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র মহাম্মদশাহ সিংহাসনে বসেন। বিখ্যাত ‘লাল দরজা’ তারই নির্মিত। অবশেষে বাহলোন লোদী কর্তৃক জৈনপুরের শেষ স্বাধীন নবাব হুসাইন শাহ বিতাড়িত হলে এর স্বাধীনতার অবসান ঘটে।

মালবঃ আলাউদ্দিন খলজী অধিকৃত মালবও সর্বশেষে দিলওয়ারের নেতৃত্বাধীনে স্বাধীন হয়ে পড়ে। দিলওয়ারের পর পুত্র হুসাং খান সিংহাসন অধিকার করে রাজধানী মণ্ডুতে স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু মন্ত্রী মাহমুদ খাঁ তাঁকে হত্যা করে ১৪৩৬ খৃস্টাব্দে বলপূর্বক সিংহাসন দখল করেন। তাঁর সময়ে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করত। মালবের মুসলমান শাসকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তারপর শান্তিপ্রদ নীতির মধ্য দিয়ে গিয়াসুদ্দিন সিংহাসনে বসলেন। দ্বিতীয় মাহমুদ ছিলেন এই বংশের শেষ সুলতান। তাঁর সময়েই গুজরাটের বাহাদুর শাহ মণ্ডু অধিকার করে মালব রাজ্যের স্বাধীনতা খর্ব করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে যথাক্রমে মুঘল সম্রাট হুমায়ুন কর্তৃক ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে শেরশাহ কর্তৃক ১৫৪২ খৃস্টাব্দে এবং আকবর কর্তৃক ১৫৬১ খৃস্টাব্দে মালব অধিকৃত হয়।

গুজরাটঃ গুজরাটও শেষে স্বাধীনতা লাভ করে। সুলতান আলাউদ্দিন খলজী দ্বারা ইহা প্রথম বিজীত হয় ১২৯৭ খৃস্টাব্দে। তখন থেকেই এটা মুসলমান শাসনাধীনে শাসিত হয়ে আসছিল। ১৪০১ খৃস্টাব্দে জাফর খান মুজাফফর শাহ উপাধি বরণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার পর তার পৌত্র আহমদ শাহ সিংহাসনে বসেন। অনেকের মতে ইনিই গুজরাটের প্রতিষ্ঠাতা। এঁর পৌত্র মাহমুদ বিগরহ্ পরবর্তী শ্রেষ্ঠ সুলতানরূপে অভিষিক্ত হন। ১৫১১ খৃস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র দ্বিতীয় মুজাফফর সিংহাসনে বসে মেবারের রাজা সংগ্রাম সিংহকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। অতঃপর পৌত্র বাহাদুর শাহ গুজরাটের সুলতান হন। এই প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাট পর্তুগীজদের বিশ্বাসঘাতকতায় ১৫৩৭ খৃস্টাব্দে মৃত্যু সংবরণ করলে গুজরাট বিশৃঙ্খলার এক কেন্দ্রস্থানে পরিণত হয়।

কাশ্মীরঃ মুসলিমপ্রধান কাশ্মীর ১৩৪৯ খৃস্টাব্দ অবধি হিন্দু শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হলেও শাহ মির্জা, শামসুদ্দিন নাম নিয়ে ১৩৪৯ খৃস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করে মুসলিম শাসনের গোড়া পত্তন করেন। কাশ্মীরে শাসককুলের মধ্যে জয়নুল আবেদীন ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন এবং প্রজাদের করভার লাঘব করেন। তাঁর সময় ‘মহাভারত’ ও ‘রাজতরঙ্গিনী’ পারস্য ভাষায় অনূদিত হয় এবং অনেকগুলো আরবী ও পারস্য ভাষার গ্রন্থ হিন্দীতে ভাষান্তরিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীগণের অক্ষমতার সুযোগ নিয়ে হুমায়ুনের এক আত্মীয় হায়দার মির্জা ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৫৪০) কাশ্মীর অধিকার করেন। ১৫৮৬ খৃস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর এটা অধিকার করেন।

বাহমনী রাজ্যঃ সুলতানী শাসনের দুর্বলতার সুযোগে যে সমস্ত প্রাদেশিক রাজ্যসমূহ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাহমনী রাজ্য তার মধ্যে অন্যতম। হাসান আবুল মুজাফফর আলাউদ্দিন বাহমন শাহ উপাধি ধারণ করে বাহমনী বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। অনেকে মনে করেন হাসান গঙ্গ বামনী নামে এক ব্রাহ্মণ্য জ্যোতিষীর ভৃত্য ছিলেন এবং ঐ পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারেই তাঁর বংশের নামকরণ হয়েছে। কিন্তু এই মতের পেছনে কোন ঐতিহাসিক সমর্থন নেই। কারণ পরবর্তী ঐতিহাসিকগণ এই প্রচলিত গল্পকে স্বীকার করেন না এবং কোন কোন ঐতিহাসিক উপাদান হতেও এর যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় না।

যাইহোক, আলাউদ্দিন শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র প্রথম মহম্মদ শাহ সিংহাসন লাভ করে সুন্দর সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। পরবর্তী বাদশাহ দ্বিতীয় মুহম্মদ শাহও শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। ফিরোজ শাহও (অষ্টম শাসক) ছিলেন একজন সুশাসক। তারপর তাঁর ভাই সিংহাসনে বসেই বিজয়নগর আক্রমণ করে সেখানকার রাজাকে অনাদায়ী কর দিতে বাধ্য করান। তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আলাউদ্দিন সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন কঠোর শাসক, শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ও বিদ্যোৎসাহী। ১৪৫৭ খৃস্টাব্দে তাঁর পুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। মহাম্মদ গাওয়ান নামক জনৈক সহৃদ ব্যক্তিটি তাঁর শিশুপুত্র নিজাম শাহের রাজকার্য পরিচালনা করতেন। শেষে ঐ শিশু সম্রাটের মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা তৃতীয় মুহাম্মদের রাজত্বকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে ভূষিত হন। কিন্তু “শত্রু দাক্ষিণাত্য দলের” ষড়যন্ত্রে তিনি সুলতান কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। Meadows Taylor বলেন, "with him depertid all the cohesion and Power of the Bahmani Kingdom. অর্থাৎ, তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে বাহমনী রাজ্যের সংহতি ও ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে গেল। তিনি ছিলেন তদানীন্তন সময়ের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, একজন সমর কুশলী সেনাপতি, একজন সুদক্ষ শাসক ও বিজেতা। তিনি সাম্রাজ্যের প্রত্যেক বিভাগের কিছু কিছু সংস্কার সাধন করে উন্নতি বিধানের ব্যবস্থা করেন। বিদরে এক বিরাট কলেজ নির্মাণ তার অক্ষয়কীর্তি। মুহাম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর শিশু সুলতান মামুদের রাজত্বকালে প্রাদেশিক রাজাদের স্বাধীনতা ঘোষণা, দাক্ষিণাত্য ও বিদেশীদের মধ্যে দলাদলি, সুযোগ্য মন্ত্রী মাহমুদ গাওয়ানের মৃত্যু ইত্যাদি কারণে বাহমনী রাজ্য ধ্বংসের মুখে পতিত হয় ও পতন ঘটে। অতঃপর বাহমনী রাজ্য বেরার, বিরাজপুর, আহম্মদনগর, গোলকুণ্ডা ও বিদর এই পাঁচ ভাগে খণ্ড হয়ে পাঁচটি স্বাধীন সুলতানের অধীনে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথাক্রমে ১৪৮৪ খৃস্টাব্দে ফতেউল্লাহ ইমাদ শাহ কর্তৃক ইমাদ শাহী বংশের, ১৪৮৯ খৃঃ ইউসুফ আদিল কর্তৃক আদিল শাহী বংশের, ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ নিজাম শাহ কর্তৃক নিজাম শাহী বংশের, ১৫১২ খৃঃ কুলি কুতুব শাহ কর্তৃক কুতুবশাহী বংশের এবং ১৫২৬ খৃঃ আমীর ফরিদ শাহ কর্তৃক ফরিদ শাহী বংশের অভ্যুদয় হয়।

এমনিভাবে তফদি নদীর তীরে অবস্থিত খন্দেশ রাজ্য ও মালিক রাজার নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। অবশ্য ১৬০১ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবর আসিরগড় দুর্গ অধিকার করে পরে খন্দেশ নিজের সাম্রাজ্য সীমার অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন