মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৩৩ সালে পরলোক গমন করেন। রামমোহনকে হিন্দু সমাজের সংস্কার সাধনে বিশেষ ঐতিহাসিক ভূমিকায় দেখতে পাওয়া যায়। তবুও ঐতিহাসিক তথ্যের ওপর দণ্ডায়মান হয়ে বলা যায় যে, তার পূর্বেও হিন্দু ধর্ম বিশেষ করে ব্রাক্ষণ্যবাদের বিপরীত অনেক পথ ও মতের প্রচারক বা প্রচারের সন্ধান মেলে। যথা-কর্ত্তাভজা, বাউল, দরবেশ, সাঁই, ন্যাড়া, সংযোগী, জগমোহনী, সাহেব ধনী, বলরামী, সহজী, বিশ্বাসী, খুশী, যদু পাতিয়া প্রভৃতি অমুসলমান দল। এরা প্রত্যেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও ধর্মে ও সমাজে পছন্দসই স্থান না পেয়েই স্বধর্ম বিরোধী হয়ে ওঠে। দু-একটি দল রাজনৈতিক বললেও ভুল হয় না। বহু প্রাচীন মত যা আকবরের সময় ইরান হতে আমদানি হয়েছিল তাদেরই বিবর্তনবাদ বিশেষ করে আউল বাউল ও ভণ্ড মারফতি ফকিরের দলগুলো ধর্ম বলে প্রচারিত হলেও এগুলো আসলে ইসলাম ধর্মের ক্ষেতের আগাছা।
উপরোক্ত দলগুলোর জন্য প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অমলেন্দু দের মতানুযায়ী বলা যায় যে, “অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের মধ্যে কয়েকটি ধর্মীয় দল পৌঁত্তলিকতার বিরুদ্ধে একেশ্বরবাদের সপক্ষে জাতিভেদ প্রথা ও অন্যান্য কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে প্রয়াসী হয়।” (দ্রঃ বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, পৃঃ ১-২) ফলে হিন্দু ধর্মের ক্ষয়িষ্ণুতা একটু কমে যায়। কাশীর রাজার মুখ্য সচিব শ্রী শীতল সিং এবং সেখানকার কলেজের লাইব্রেরীর অধ্যক্ষ মথুরানাথ পার্সী ভাষায় অনেকগুলো বই লিখেছেন এবং তাতে অনেক সম্প্রদায়ের মতামত, আচরণ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করেছেন। ঐ সমস্ত লেখক তাঁদের লেখাতে স্বাভাবিকভাবেই নিজস্ব প্রভাব প্রকাশে সক্ষম হন। পরে পার্সী ভাষা বিলোপ হতে লাগলো, ও একশ্রেণীর মুসলমান ঐগুলোকে কেন্দ্র করে স্বধর্মে বিভ্রান্ত হতে হতবাধ্য হয়েছে। কারণ তাদের অনেকের নিকট এই কুসংস্কার বদ্ধমূল ছিল যে যা আরবী, ফারসী ভাষায় লেখা থাকে তাই পবিত্র, তাই নির্ভুল এবং গ্রহণযোগ্য। ফলে আউল বাউল প্রভৃতি দলগুলো না হিন্দু না মুসলমানরূপে পরিণত হয়। তাছাড়া তাদের অধিকাংশ লোকের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মানবতাশূন্য।
আমরা কবির ভাষায় ছোটবেলা হতেই আউল বাউল প্রভৃতি দলের লোকের ওপর শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ভেতরের ইতিহাস এদের অত্যন্ত নোংরা, কদর্য বরং কুপরিকল্পনাপ্রসূত। এই প্রকার আউল বাউল, জিকির, নিরঞ্জন, শাহ সাহের প্রভৃতি দল হিন্দু বা মুসলমান ছিল না। এরা গীত বা গানের মাধ্যমে বাহ্যিক উদারমতের প্রচারক ছিল। কালে বিবর্তনে আজ বাউলকে হিন্দু বলা হয় আর মারফতি ফকির ও আউলকে অনেকে নির্বুদ্ধিতার কারণে মুসলমান মনে করেন। আসলে তারা উৎকট গোপনবাদী দল। (ক্ষিতিশ মোহন লিখিত “ভারতীয় মধ্য যুগে’ পুস্তক দ্রঃ)।
রামমোহনের সমসাময়িক কুষ্টিয়া জেলার দেউরিয়া গ্রামের লালন শাহও একজন বিখ্যাত বাউল কবি ছিলেন এবং তারই পাশের গ্রামে হরিশঙ্করপুরের মকসুদ সইও একজন কুখ্যাত বাউল গায়ক ছিলেন। এঁদের অনেক তথ্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৪২ সালে প্রকাশিত মহম্মদ মনসুর উদ্দিন সম্পাদিত ‘হারানো লোকসঙ্গীত সংগ্রহ’ সংকলনে পাওয়া যায়। এইসব যথেচ্ছাচারী দলের প্রভাব সর্ব ভারতে বহুল প্রচারিত হয়েছিল। তবে এদের প্রায় সকলেই ছিল মূর্খ নিরক্ষর প্রভৃতি নিম্ন মানের মানুষ। অবশ্য কতিপয় শিক্ষিত বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তান এতে যোগদান করে। উদ্দেশ্য ছিল অনুপযুক্তদের মাঝে নিজেকে উপযুক্তরূপে প্রতিষ্ঠিত করে নেতা হয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার উৎকট বাসনা। একদিকে এরা পেত সম্মান অন্যদিকে ঐ শাহ সাহেব বাউল আউল মারফতি সাই-এর দল তাদের প্রশংসা করে সাধারণ মানুষকে নিজেদের দিকে প্রলোভিত, প্রভাবিত আর আকর্ষিত করতো।
এছাড়া ব্রাক্ষণদের গোঁড়ামীর জন্য চারদিকে একটা আন্দোলনের চাপা পড়া আগুন যেন ধিকিধিকি জ্বলছিল। মাঝে মাঝে তার বহ্নি প্রকাশ হতো। যেমন ইংরেজি ১৭৭১ সালে দেধরাজ ব্রাক্ষণ হয়েও বৈশ্যকন্যা বিবাহ করেন এবং পৌঁত্তলিকতা ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শেষে অনেক কারণে বা অনেকের আবেদনের ফলে অঞ্চলে শান্তি রক্ষার জন্য ঝাঝারের নবাব জনাব নজারত সাহেবের আদেশে তাকে কারাগারে আটক করা হয়। পরে তিনি মুক্ত হন এবং পুনরায় তাঁর পূর্ব প্রচার শুরু করেন। তাঁর নীতিতে মুসলমান ধর্মের গাঢ় রঙ দেখা যায়। কিন্তু তিনি পর্দা প্রথার সমর্থক ছিলেন না এবং রামায়ণ মহাভারতকেও সঠিক ও নির্ভুল মনে করতেন না। (“ভারতীয় মধ্যযুগে” পুস্তক দ্রঃ)।
ঠিক ঐ সময় আর একজন সাধক পলটু সাহেব ফৈজাবাদ আইরওলার অধিবাসী গোবিন্দর শিষ্য ছিলেন। পলটু বানিয়া বংশের লোক। তিনি ব্রাক্ষণদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর মূল কথা ছিল-“নীচ জাতিকে নষ্ট করিল উচ্চ জাতিরা, এবং নিজেরাও নষ্ট হইল।” “ভগবান কোন সম্প্রদায় বিশেষের সম্পত্তি নহেন।” এইভাবে সারা ভারতে অন্তত নামকরা দুইশজন হিন্দু বিভ্রান্ত হয়ে নানা পথে স্বধর্মের বিরোধী হয়ে ওঠেন। তাঁরা ইসলাম ধর্মের প্রভাবে প্রতাপে বা প্রচারে আকর্ষিত হলেও ইসলাম গ্রহণকারী বলে স্বীকার করে মুসলমান হিসেবে নিজেদের প্রচার করতেন না। এসব সম্বন্ধে অনেক তথ্য পাওয়া যায় I.N Sarlar-এর লেখা In Indo Iranica তে। এদের প্রচারে প্রায় লক্ষ লক্ষ লোক দলভুক্ত হয়ে পড়েছিল। এঁরা না মুসলমান আর না হিন্দু ভাব নিয়ে থাকতেন। আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন তাঁর পুস্তক ‘ভারতীয় মধ্য যুগে’র ভূমিকার তাদের সংখ্যা পঁয়ত্রিশ হাজার লিখেছেন। আসলে তিনি ১৯১১ সালে Census of India অবলম্বন করেই পঁয়ত্রিশ হাজার লিখেছেন। কিন্তু এমন বেশির ভাগ লোকই ছিল, যারা কাগজ বা কলম, সরকার আর সরকারি কাগজপত্রের ধার ধারতো না। লেখাপড়াও জানতো না। আবার টিপ দিতেও আপত্তি ছিল। সেই সমস্ত লোকের তালিকা নির্ধারণ করা ঐ রকম সেন্সসের দ্বারা সম্ভব ছিল না।
পরে রাজা রামমোহন যে ব্রাহ্ম ধর্ম সষ্টি করেন তার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ধর্মের ক্ষয়রোধ করে আবার নতুন জীবন ধারা ফিরিয়ে আনা। তবে যাইহোক, তার ব্রাহ্ম ধর্মে ঐ প্রকার পৈশাচিক এবং নোংরামীর স্থান ছিল না। এটা ছিল একটা মুসলমান ধর্মের হিন্দুয়ানি রূপ। তবে তিনিও তার ধর্ম প্রচারে কৃতকার্যতা লাভ করতে পারেননি। প্রমাণস্বরূপ ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা দেখলেই যথেষ্ট হবে। ১৯১১ খৃষ্টাব্দে সর্ব ভারতীয় লোকসংখ্যার মধ্যে ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল সারা ভারতে মাত্র পাঁচ হাজার পাঁচ শত চারজন। (Census of India, 1911. Vol-1, Part-1, Page-123, Calcutta ফাইল দ্রষ্টব্য)
ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে রামমোহনের মনোভাব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে শ্রী সুপ্রকাশ রায়ের লেখা ‘ভারতের কৃষক।’
বিদ্রোহ এবং রমেশ চন্দ্র মজুমদারের লেখা ‘রামমোহন’ ইত্যাদি প্রামাণিক পুস্তক হতে প্রমাণিত হয় যে, রাজা রামমোহন রায়ের ইংরেজপ্রীতি যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। তিনি ইংরেজ রাজত্বকে স্বাগতম জানিয়েছিলেন। ভারবর্ষে “ব্রিটিশ কলোনাইজেশন” অর্থাৎ ব্রিটিশ উপনিবেশকে তিনি সমর্থন করতেন। নিঃসন্দেহে এই অভিযোগ যেকোন ক্ষেত্রে সত্য হলে তাকে স্বাধীনতা আনন্দোলনের নেতা বলে বরণ করে নেয়ার তো কোন কথাই ওঠে না বরং তাঁকে স্বাধীনতার শত্রু বলতে প্রকৃত বুদ্ধিজীবীদের কাউকে বিরত রাখা সম্ভব নয়।
রামমোহনের দাবি ছিল অসভ্য ভারতে ইংরেজ না থাকলে ভারত সভ্য হবে না। ইংরেজদের টিকিয়ে রাখতে এবং ইংরেজদের অত্যাচারের হাতিয়ার ছিল জমিদার শ্ৰেণী। তিনি ছিলেন এই জমিদারী প্রথার একজন পাকা সমর্থক।
ইংরেজ আমলে নিষ্ঠুর নীলকরদের অত্যাচারকেও তিনি প্রশংসা করতে ছাড়েননি। তার মতে ‘নীল করে’রা দেশের উপকার করেছে। ইংরেজের ভারত আক্রমণ এবং ছলে বলে কৌশলে ভারতকে গ্রাস করার অন্যায়কে দোষ না দিয়ে তাদের অপরাধকে চাপা দিয়ে রামমোহন বলেছেন, দেশীয় শাসকদের পারস্পরিক কলহ, ভারতের তদানীন্তন নেতাদের কাপুরুষতা, সামরিক শক্তি বিশেষ করে নৌবিভাগের, দৌর্বল্য প্রভৃতি কারণে ইংরেজ আধিপত্য স্থাপিত হয়। অবশ্য কথাগুলো অনেকাংশে সঠিক হলেও তাই বলে ভারতবাসীর কাপুরুষতাকে মোটেই স্বীকার করা যায় না।
Susovan Chandra Sarkar fefero Rammohan Roy on India Economy তে রামমোহনের দোষগুলো ওজুহাতের আচ্ছাদনে ঢেকে ফেলার প্রয়াস পেয়েছে। যেমন বলা হয়েছে তিনি ইংরেজদের টিকে থাকা চেয়েছিলেন বটে, কিন্তু মাত্র কয়েক যুগের জন্য, চিরদিনের জন্য নয়। ইংরেজের ওপর বিদেশী বলে যারা ঘৃণাপোষণ করেন আসলে তার ন্যায্য কারণ হচ্ছে এই যে, ইংরেজ এদেশকে নিজের মনে করতে পারেনি, তাই বাস করার চেষ্টাই করেনি। শুধু এখানকার সম্পদ শোষণ করে বিলেতকেই সমৃদ্ধশালী করেছে।
মিঃ সরকারের ঐ পুস্তকে আরও পাওয়া যায় যে, রামমোহন ইংরেজ জাতিকে ভারতের উন্নতির জন্য বসবাস করার অনুরোধ করেন এবং ভারতবাসীকেও নানাভাবে নানা দিকে নানা পদ্ধতিতে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে প্রয়াস পান। B.N.Ganguli মশাই তাঁর পুস্তকে রামমোহনের উপরোক্ত অভিযোগকে ঢাকা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী। ইংরেজ কর্তৃক নীলচাষ সারা ভারতে এক অত্যাচারের ইতিহাস, নিপীড়ন আর শোষণের ইতিহাস। কিন্তু রামমোহন লর্ড উইলিয়াম বেনটিক এবং শ্রী দ্বারকানাথের মতে মত মিলিয়ে সুরে সুর মিলিয়ে এই মত সমর্থন করতেন যে, ইংরেজ কর্তৃক নীলচাষে দেশের কল্যাণ হয়েছে বা হবেও, যেহেতু জমির দাম বৃদ্ধি হবে এবং ভারতবাসী তাদের কাছে চাকরি পাবে বা পাচ্ছে আর রাস্তা-ঘাটের উন্নতি হয়েছে এবং আরও হবে। তবে অত্যাচার যদিও স্বীকার করা হয় তবে তার চেয়েও তুলনামূলকভাবে ভারতবাসীর লাভ অনেক বেশি। তাই ইংরেজ শাসনকে তিনি “বিধাতার আশীর্বাদ” বলে মনে করতেন। অথচ H.C. Sarkar লিখিত Life and. letters, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ভারতের শিল্প বিপ্লব ও রামমোহন’, হুমায়ুন কবীরের সুবিখ্যাত পত্রিকা “চতুরঙ্গ” এর ১৯৬৬ সালে বৈশাখ ও চৈত্রের লেখা হতে বেশ প্রমাণ করা যায় যে, শুরু হতেই ইংরেজদের নীলচাষ অভিযান অত্যাচারের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল।
ইংরেজ জানতো ভারতবাসীর বেশ একটা অংশ লবণ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে, যাদের বলা হতো মলাঙ্গী। তবুও তারা বিলেত হতে লবণ আমদানি আরম্ভ করে দিল। বলাবাহুল্য ইংরেজ প্রেমিক রামমোহনই ইংরেজকে বিলেত হতে লবণ আনতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে নিচের একটি উদ্ধৃতি খুবই অনুধাবনযোগ্য।
“ইংরেজ স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যেই রামমোহনের মত ব্যক্তি ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন বাংলা দেশে লবণ প্রস্তুত বন্ধ করে ইংলণ্ড থেকে লবণ আমদানির। হয়েছিলও তাই। এর ফলে একদিকে দেশীয় লবণ শিল্পের উচ্ছেদ হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ লবণ শিল্প শ্রমিক বেকার হয়েছিল এবং অন্যদিকে রামমোহনের শ্রেণীভুক্ত ব্যবসায়ীরা সেই ব্যবসায়ে অংশ গ্রহণ করে। ইংরেজের মুনাফার এক ক্ষুদ্র অংশ নিজেদের পাতে উঠিয়েছিলেন। রামমোহনের ও তাঁর শ্রেণীভুক্ত অন্যদের এই কর্মের ফলে দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ না ঘটে তার ধ্বংসের পথই প্রস্তুত হয়েছিলো।” (দ্রষ্টব্য The Economic History of India, Romesh Dutta, vol-2.p-103-10)।
ভারতীয় লবণ ও বিদেশী লবণের মধ্যে মূল্যের বিশেষ পার্থক্য ছিল না। কিন্তু ইংরেজ এক প্রকার বিনা লাভে বা অল্প লাভেই লবণ আমদানি করে। উদ্দেশ্য ছিল গরিব ভারতবাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিলেই ইংরেজদের ওটা একচেটিয়া হবে, ফলে শোষণ আর শাসনের অবস্থা আর একধাপ উন্নত হবে। তাই ইংরেজ চেয়েছিলো দরিদ্র ভারতীয় লবণ ব্যবসায়ীদের লবণের কাজ ছাড়িয়ে দিয়ে অন্যদিকে অন্যকাজে জুড়ে দিয়ে ব্যবসা হাত করা এবং ইচ্ছামত দর চড়ানোর রাস্তা খোলা। এক্ষেত্রেও রামমোহন মলাঙ্গীদের মিষ্ট পরামর্শ দেন যে, তারা বেকার হলেও তাদের জন্য অন্য কাজ দেওয়া যেতে পারে। যথা বাগানের মালী, বাড়ির চাকর, দিনমজুর প্রভৃতি।
ইংরেজের ওপর সাধারণ দরিদ্র শ্রেণীর নাগরিকদের অনেক অভিযোগ ছিল। রাজা রামমোহন তার যে সমস্ত উত্তর দিয়েছিলেন তাতে অভিযোগগুলোও স্মরণ করা যেতে পারে আর রামমোহনের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের পরিমাণ ও গভীরতাও উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। অভিযোগকারীদের উত্তরে রামমোহন বলেন– সাধারণ লোকের উন্নতি না হওয়ার কারণ তারা সরকারের সমন্ধে অজ্ঞ এ এবং উদাসীন। যেসব অত্যাচার তারা ভোগ করেন তার জন্য দায়ী সরকার নয় বরং সরকারি কর্মচারী। আর চাকরি না পাওয়ার কারণ ইংরেজের অধীনে চাকরি করা তারা অসম্মানবোধ করেন। ফলে যারা সরকারের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন তাঁরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারির মালিক হয়েছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে সম্পদশালী হয়েছেন। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন “বৃটিশ শাসন দেশের পক্ষে আশীর্বাদস্বরূপ”। আর যারা খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি তাঁরা আজ অনুন্নত। এর জন্য দায়ী তারা নিজেরাই, সরকার নয়। S.C. Sarkar এর On India Econamy পুস্তকে রামমোহনের লেখা উল্লিখিত আছে
"But I have no hesitation in Stating, with reference to the general feeling of the more intelligent part of the native community, that the only course of policy which can ensure their attachment to any form of the governmant would be; that of making them eligible to gradual promotion, accarding to their respective abilitics and merits, to Situations of trust and respectability in the State."
যাইহোক, রামমোহন নাস্তিক ছিলেন না অবশ্যই। এর অনেক প্রমাণ তার লেখা এবং কর্মের মধ্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া ইংরেজি ১৮৩৩ সালে ইংলণ্ডের কমিউনিস্ট নেতা মিঃ রবাট আওয়েন তাঁকে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা দিতে গিয়ে ধর্ম নিয়ে একমত হতে পারেন নাই। আওয়েনের মতে, রাজনীতিতে মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টি প্রসূত। এমনকি পারিবারিক ক্ষেত্রেও ধর্মের এক বিরাট অবদান এটা তিনি স্বীকার করতেন। তাই শুধুমাত্র সমাজতন্ত্রের নিজেকে মিশিয়ে দিতে পারেননি।
ইংরেজ শাসনের সময় তদানীন্তন জমিদাররাই শাসকের সহায়, পৃষ্ঠপোষক, প্রচারক ও প্রশংসাকারী ছিলেন। রামমোহন নিজেও একজন জমিদার সন্তান। তাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার বিপক্ষে তিনি প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা তৎপরিবর্তে প্রশংসা ও সমর্থনই করে গেছেন। তাই জনৈক প্রভাবশালী লেখক লিখেছেন, “তথাকথিত স্বাধীনতার পূজারী রামমোহন। যখন গ্রামাঞ্চলে স্বাধীনতার জন্য, ইংরেজ বিতাড়নের জন্য, এর দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়ানোর জন্য কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় তখন রামমোহন ইংরেজ শাসন শুরু করতেই ব্যস্ত ছিলেন। রামমোহন জমিদারি প্রথাকেই আদর্শ ভূমি ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেন। এই সব উক্তি গভীর তাৎপর্য বহন করে।”
অবশ্য রামমোহন সারা জীবনে যত কিছু লিখেছেন ও বলেছেন তাতে খুঁজলে হয়ত দেখা যাবে তার মতের প্রতিকূল কথাও আছে কোথাও কোথাও। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বলা যায়, তাঁর লেখা ও বলাই সব সময় মাপকাঠি না হয়ে যদি বলা, লেখা এবং তার কাজের দিকে লক্ষ্য করা যায় তবে তার সম্বন্ধে আমাদের উপরোক্ত ধারণা পোষণ করতে কোন বাধা থাকে না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে রামমোহন রায়কে একজন যথার্থ আস্তিক বলা যেতে পারে কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক বলা কঠিন এবং অনেকের দৃষ্টিতে অসম্ভব। একজন ব্যাদের নিষ্ঠুরভাবে পাখি মারাই ঐতিহাসিক কর্ম, যদিও সে কোন দিন আহত পাখির জন্য সমবেদনা জানায়নি। দুঃখের বিষয়, শুধু রাজা রামমোহন রায় নয়, আরো অনেক তদানীন্তন নেতার লেখনীর মধ্যেও ঐ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে সুনাম ঘোষিত হয়েছে। মাননীয় রমেশ দত্ত তাঁর 'Famines in India' এ ঐ কুপ্রথার সপক্ষে ওকালতি করেছেন। দত্ত মহাশয়ের ‘Economic History of India Under Early British Rule' গ্রন্থেও পাওয়া যায় “চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশে এমন কোন দুর্ভিক্ষ হয়নি, যার ফলে বহু লোক মারা গেছে, বরং এই ব্যবস্থায় সমগ্র কৃষক সমাজ উপকৃত হয়েছে।”
অনেকের মতে, ইরেজ সৃষ্ট বিরাট একটি শিক্ষিত শ্রেণী ছিলেন যারা ইংরেজের ভারত শোষণের মাধ্যম ছিলেন। তাদেরও উভম্বত্বভোগী নাম দেওয়া চলে। অনুন্নত জনসাধারণের কাছেও তারা ছিলেন শুরু দেব। অজ্ঞ মানুষেরা তাঁদের পালকি, ঘোড়া ও ঠাটবাট দেখেই শ্রদ্ধায় সম্মানে মাথানত করত আর দু-একটি ইংরেজি দরখাস্ত প্রভুর দরবারে লিখে সঙ্গে সঙ্গে সুফল দেখিয়ে সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞতা নিবেদনে গদ গদ হয়ে পড়তো। অন্য দিকে ইংরেজ দরবারেও তাঁদের সম্মান ছিল। মধ্যে মধ্যে উভস্বত্বভোগীর দল ইংরেজের বিরুদ্ধেও বলতেন ও লিখতেন যা নিছক অভিনয়ের নামান্তর ছিল।
ইংরেজ জাতি সিরাজউদ্দৌল্লার পতনের পর হতেই ভারত শোষণের মাত্রা পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে। কোন এক সাহেবের মতে, প্রতি বছরে দু মিলিয়ন পাউন্ড ধন সম্পদ ভারত হতে পাচার হতে থাকে। ঐ বহননীতির ওপর দৃষ্টিপাত করেন বিখ্যাত রাজনীতিজ্ঞ মি বার্ক তাঁর রচিত Ninth Report গ্রহের মাধ্যমে। রামমোহনের পক্ষে বলা যায় যে, তিনি ভারতে ইংরেজদের স্থায়ী বসবাসের পক্ষপাতী। তার কারণও তিনি একটা মনে করতেন যে ইংরেজ এখানে স্থায়ীভাবে বাস করলে দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতাকামী নেতা পক্ষে এটাই স্বাভাবিক ছিল যে, ইংরেজকে ভারত হতে বিতাড়নের ব্যবস্থা করা। ফলে চারদিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ছোট বড় অনেক বিদ্রোহই যখন ঘটে চলেছিল তখনো বাবু রামমোহনের ইংরেজ মুক্ত ভারত বর্ষ, শোষণমুক্ত ভারতের জন্য স্বাধীনতার পরিবর্তে অধীনতার যুক্তি প্রদান সঠিক হয়েছে বলে বুদ্ধিজীবীরা এক বাক্যে স্বীকার করে নেবেন এ রকম ভাবার কোনও কি আছে বলে মনে হয় না।
শোষণের ফলে দেশের অর্থনৈতিক মান এত নিচে নেমে গিয়েছিল যার প্রমাণ রামমোহনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ রচনা হতে পাওয়া যায় “গ্রামের গরিবদের তরকারি খাবার সাধ্য ছিল না; শুধু লবণ ভাত খেত। বলাবাহুল্য, ইংরেজদের দোষ দেওয়ার পরিবর্তে তিনি দেশের ও দলের দোষ ধরে সমাজের কল্যাণ করতে চেষ্টা করেছেন। তিনি মাংস খাওয়ার উপর খুব জোর দিয়েছিলেন। নানা দেশের জনসাধারণের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আহার্যে সমালোচনা করে তিনি জাত হিন্দুদের খুব জোর দিয়ে বলতেন মাংস খেতে। বহুদিন পর বিবেকানন্দের কণ্ঠে যেন এই সব কথাই অনেক বলিষ্ঠতার সঙ্গে উচ্চারিত হয়।
রামমোহন শুধু ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজকে থাকতে আবেদন করেছিলেন তাই নয় বরং তার অনুগত বান্ধবদের সঙ্গে নিয়েই তার এই আবেদন। ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে রামমোহন, দ্বারকানাথ, প্রসন্ন ঠাকুর প্রমুখ বিখ্যাত নেতাগণ ইংরেজদের এখানে বাস করার আইনগত অনুমতি প্রার্থনা করেন। আর ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে হাউস অব কমনসের কাছে তিনি নিজেও বিশেষভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। ( (ক) রামমোহন রচনাবলী, ৫২৯ (খ) সমাচার দর্পণ ২৬-১২-১৮২৯, উদ্ধৃত অসিত কুমার ভট্টাচার্য রচিত বাংলার নব যুগ ও বঙ্কিমচন্দ্রের চিন্তাধারা, পৃঃ ২৯)
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো এই যে, যখন স্বদেশে নীলকর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চলছিল প্রকাশ্য চাবুক মারা আর আঙুল কেটে দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে, ঠিক সেই সময়েই উক্ত আবেদন। তাই আবেদনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও গবেষণার বস্তু।
রামমোহনের একটা সুনাম আছে যে, ইংরেজ যখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আঘাত হেনেছিল তখন তিনি খুব জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু আজকের সমীক্ষায় আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি যে, তিনি দেশের স্বার্থে প্রতিবাদ করেননি বরং সরকারের পক্ষেই ওকালতি করেছিলেন। তিনি কীভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন তার অন্তর্নিহিত স্বরূপ তুলে ধরলেই এ সত্য সহজে প্রমাণিত হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রয়োজনে রামমোহন বলেছিলেন, .....এই স্বাধীনতা দরকার কারণ তা না হলে জনসাধারণ অভাব অভিযোগ স্বাধীনভাবে সরকারকে জানাতে পারবে না এবং তার ফলে সরকারের পক্ষে দেশের প্রকৃত অবস্থা অবগত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়তঃ সংবাদপত্রের মাধ্যমে যদি স্বাধীনভাবে অধিকার ব্যক্ত করার অধিকার জনগণের না থাকে তাহলে এদেশে ইংরেজ শাসনবিরোধী বিপ্লবী শক্তি জোরদার হবে এবং পরিণতিতে তা হয়ে দাঁড়াবে বৃটিশ শাসনের পক্ষে-বিপজ্জনক।” (দ্রঃ অধ্যাপক বদরুদ্দিন উমর সাহেবের লেখা ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ পৃষ্ঠা, ১৪)।
উল্লেখ করার যেতে পারে, এই দুই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য এদেশে সংবাদপত্র ও মুদ্রান্ত্রের স্বাধীনতা প্রয়োজন এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য রামমোহনের জোরালো আবেদন। এর মধ্যে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য আর দেশপ্রেম কোথায় আছে তা সুবিবেচক পাঠক-পাঠিকারাই বিবেচনা করবেন। দেশের দরিদ্র কৃষক আর ইংরেজ সরকারের সঙ্গে যখন সংগ্রামের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠেছে ঠিক সেই সময় সংবাদ ‘প্রভাকর’ পত্রিকা যে ভূমিকা নিয়েছিল তা থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হবে রামমোহন পুরোপুরি ইংরেজের সাহায্যকারী ও পরম আত্মীয়ের ন্যায়। (দ্রষ্টব্য সাময়িক পত্রে বাংলার সমাজ চিত্র'। প্রথম খণ্ড সংবাদ প্রভাকর। বিনয় ঘোষ।)।
রামমোহন হিন্দু ধর্মের কঠিন পুরোহিতবাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস করেননি। অবশ্য তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এ অসম্ভব তাই নূতন ধর্ম স্রষ্টার ভূমিকায় ব্রাহ্ম ধর্মের জন্ম দিলেন। কিন্তু তাতেও তিনি অনেক শ্রম, অর্থ আর সময় কাটিয়ে নাস্তিক, মুসলমান, মৌলবী, (রামমোহনকে জবরদস্ত 'মৌলবী' বলা হতো। কারণ সে যুগে পাটনার বড় মাদ্রাসা হতে তিনি আরবী, ফারসী ও উর্দুতে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি ঐ সমস্ত ভাষায় কিছু বই পুস্তকও লিখেছেন।) প্রভৃতি উদ্ভট উপাধি লাভ করেও সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হন। কারণ তিনি অনেক সংগ্রামী সমাজ সংস্কারক নেতা তৈরি করে তাদের পুরনো মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে অনেক কিছু করলেন কিন্তু নিজে ব্রাহ্মণের পৈতা পরিত্যাগ করতে পারেননি। (দ্রঃ রামমোহন রচনাবলী ভূমিকাঃ ডক্টর অজিত কুমার ঘোষ। পৃষ্ঠা ২১)
রামমোহন জাতিভেদ প্রথার বিরোধী ছিলেন এবং খাদ্যাদির ব্যাপারে যা পুষ্টিকর তাই খেতে বলতেন। তিনি মূর্তি পূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং এক স্রষ্টাতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর লেখায় ও কথায় যা পাওয়া যায় তার সাথে তাঁর কাজের অনেক গরমিল দেখা যায়। যেমন তিনি যে মতবাদই প্রচার করুন না কেন অব্রাহ্মণদের খাদ্য তিনি কোন দিনও গ্রহণ করেননি এবং অন্য জাতিভুক্ত লোকদের সাথে একত্রে আহার পর্যন্ত করতেন না। ব্রাহ্মণের পবিত্র সূত্র উপবীতও তিনি নিজদেহে ধারণ করতেন। (দ্রঃ রামমোহন রচনাবলী পৃঃ ২১)
১৮৪৭ সালেই তাঁর মতবাদের ওপর ধর্মের নাম ‘ব্রাহ্ম ধর্ম’ বলে প্রথম ঘোষণা করা হয়। তিনি হিন্দু ধর্মের নাম ‘সনাতন ধর্ম’ বলতে যা বোঝা যায় তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে লড়াই করে তৃপ্তি পেতেন। যেমন তিনি নিজের এক পুত্রের বিবাহ দিয়েছিলেন একজন বিধবার সঙ্গে।
রামমোহনকে শিক্ষিত মুসলমান সমাজের জন্য ইংরেজের আনুকূল্যে অনেক কিছু লিখতে ও বলতে হয়েছে। কারণ সারা ভারতে মুসলমান শিক্ষিত সমাজ মানেই ফারসী ও আরবী জানা লোক। এদিকে রামমোহনও আরবী ফারসী আগে হতেই জানতেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি বাদ দিয়ে তথাকথিত মুসলমানী ভাষায় কয়েকটি বই লিখেছিলেন। যথা-‘তহফাৎ-উল-মুয়াহ হিদিন’ ও ‘মোনাজারাৎ-উল-আদিয়াম’ প্রভৃতি। শুধু তাই নয়, শিক্ষিত মুসলমান সমাজের দেশে একটি ফারসী পত্রিকারও তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পত্রিকাটির নাম ছিল মীরাও-উল-আখ্যার। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে যে বইগুলো লিখেছিলেন তা বেশির ভাগ মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে বাংলা ও ইংরেজিতে। তার মধ্যে ‘হিন্দুদিগের পৌঁত্তলিক ধর্ম প্রণালী’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
রামমোহন বিলেতে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন একবার নয় একাধিকবার। তাই তিনি স্বদেশী ও বিদেশীদের চোখের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অনেকখানি বিলেতি প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন। অবশেষে বিলেতেই তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়। তাঁর প্রথম বিলেতে পদার্পণের জন্য প্রচুর অর্থ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যিনি করেছিয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন দিল্লীর মুঘল সম্রাটের বংশধর শাহ আলম। যদি শাহ আলম অর্থের ব্যবস্থা না করে দিতেন তাহলে জীবনেও হয়তো রামমোহনের ইউরোপ যাওয়া হয়ে উঠত না। তিনি নামে মাত্র রাজপুত্র হয়েও খুব অর্থাভাবে দিনাতিপাত করতেন। যেহেতু পিতার ত্যাজ্যপুত্র ছিলেন। (দ্রঃ বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা, সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, পৃঃ-৩০)।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ‘হঠাৎ নেতা’ স্বাধীনতা কল্পনাই করতে পারেননি। অনেকে এইমত পোষণ করতেন যে, “ভারতের প্রশাসন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধীনেই অধিক কল্যাণকর হবে।” আমাদের আলোচ্য রামমোহনও ছিলেন এই মত বা দলেয় সমর্থক। (দ্রঃ বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা)। ভারতের জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে রামমোহনের আমলে অচিন্তনীয় ছিল........। তিনি মনে করতেন, ইংরেজদের সংস্পর্শে এসে ভারত কিছু লাভ করেছে.......। শিবপ্রসাদ শর্মার নামে লিখিত প্রবন্ধেও তিনি ঐ মত প্রকাশ করেন। তিনি পরমেশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, for having unexpectedly dilivered this country, from the long continued tyranny of its former rulers and placed it under the Government of the English, .....as well as free enqury into liberty and religious subjects, among those nations to which that in fluence extends........" (দ্রঃ The English works of Raja Rammohun Roy. Part Ill, P-105)
সারা বিশ্বে যেখানে স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে সেখানেই রামমোহনের সমর্থন ও উৎসাহ প্রদানের প্রচুর প্রমাণ আছে, কিন্তু নিজের দেশের ক্ষেত্রে তার ইংরেজ শাসনের যৌক্তিকতা প্রদর্শন তথা তার বিপরীত মনোভাব ও বিরুদ্ধে ভূমিকা দেখে যাঁরা তাঁকে ইংরেজদের গোপন কর্মচারী বা চর মনে করেন তারা যে তাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বলতে অস্বীকৃত হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের মতে মুসলমান, শিখ, মারাঠা প্রভৃতি জাতি যখন ইংরেজদের বিতাড়নে কৃত সংকল্প সে সময় তিনি ইংরেজদের আহবান জানিয়েছিলেন। (দ্রঃ Modern India political Thought, by V.P Varma, P-26)
সারা ভারতে জমিদারগণ রাজা সেজে ইংরেজের দালালের ভূমিকায় দরিদ্র জনসাধারণকে শোষণ করতো। রামমোহন এহেন জঘন্যতম শোষণ প্রক্রিয়াকে সুপ্রথা বলে মনে করতেন। জমিদারি প্রথা বা মধ্যস্বত্বভোগ করা তাঁর দৃষ্টিতে নিন্দনীয় ছিল না। শুধু জমিদারদের মাত্রাধিক অত্যাচার পছন্দ করতেন না মাত্র।
শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন রামমোহন। হুগলী হতে ১৮১৫ সালের পরেই তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় বাস করতে থাকেন। তারপর থেকে তিনি হিন্দু ধর্মের প্রাচীন প্রথা, যেমন বহু দেবদেবীর পূজা, মুর্তিপূজা, সতীদাহ বা সহমরণ ইত্যাদি দূর করার জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস ও সামাজিক আচারের বিরুদ্ধে এই অভিযানে গোঁড়া হিন্দুরা ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং সম্ভবত সেই কারণে একমাত্র হিন্দু ছাত্রদের জন্য স্থাপিত এই নূতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে (বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী ঘড়ি ডেভিড হেয়ার এবং বিচারপতি এডওয়ার্ড ইষ্টের সহায়তায় কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালি ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের জন্য ১৮১৭ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার নাম ছিল হিন্দু কলেজ, মহাবিদ্যালয় ও এংলো ইণ্ডিয়ান কলেজ। বর্তমানে সেই শিক্ষা নিকেতনটিই কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে।) রামমোহনের কোনও সাহায্য তাঁরা নিতে চাননি। ......রামমোহন তাঁর নীতিতে অটল থেকে আর্মহাক্টকে লিখিত এক পত্রে তিনি ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারে গভর্ণমেন্টের প্রাচ্য বিদ্যামুখী নীতির বিরোধিতা করেন এবং কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে তীব্র সমালোচনা করেন। তার অনুরোধ প্রগতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের যার মধ্যে থাকবে “গণিত শাস্ত্র, প্রকৃত বিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, শরীরবিদ্যা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান শাস্ত্র-যেগুলো যথাযথ অনুশীলনের ফলে ইউরোপীয় জাতিরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের চেয়ে অনেক উন্নতি করতে পেরেছে।” (দ্রঃ ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’, বিনয় ঘোষ, পৃঃ-১৬)
ইংরেজি ১৮১৬ সাল হতে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত রামমোহন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে সর্ব ভারতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি ভাষাটাকে চালু করা হয়। এদিকে এই কয়েক বছরের মধ্যে ঐ হিন্দু কলেজে পাস করা এক তরুণ গোষ্ঠী ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করতে তাঁরাও আন্দোলন আরম্ভ করলেন। এটি ঘটেছিল ১৮৩০ সালে। সুচতুর ইংরেজ সরকার তবুও অপেক্ষা করতে লাগলো।
সংস্কৃত কলেজ নামে হিন্দু হলেও ব্রাক্ষণ আর বৈদ্য ছাড়া আর কোন গোত্র বা বংশের ছাত্রের সেখানে প্রবেশাধিকার বা পাঠ্যাধিকার ছিল না। আর মুসলমান ছাত্রের কথা তো উল্লেখ না করাই শ্রেয়। কিন্তু যদিও হিন্দু কলেজে ব্রাহ্মণ বৈদ্য ছাড়া সকল বংশের ছাত্র পড়তে পেত কিন্তু মুসলমানদের সেখানে ঢোকার উপায় পর্যন্ত ছিল না। হিন্দু কলেজে বিখ্যাত একজন বিলেতি সাহেব কলেজের মুখ্য দায়িত্ব নিয়ে থাকতেন। তার নাম ছিল ‘ডিরোজিও'। তাঁর প্রযত্নে বড় একটি ছাত্র দল তার গোঁড়া ও পূর্ণ ভক্ত সৈনিকে পরিণত হয়। তাঁরাই হিন্দু ধর্মের পুরান আইন কানুনগুলোকে বিলেতি কায়দায় চেলে ভারতকে নূতন বিলেত বানাতে আত্মপ্রকাশ করেন। ঐ দলটিকে বলা হয় ইয়ং বেঙ্গল বা ইয়ং ক্যালকাটা। তাঁরা হিন্দু ধর্ম বা জাতিকে ধ্বংস করতে চাননি, চেয়েছিলেন নূতন করে ঢেলে সাজাতে -তাই তারা ধর্মের প্রত্যেক জিনিসকে যুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান দিয়ে যাচাই করতেন। তাঁরা শিখেছিলেন “প্রশ্ন করতে, সন্দেহ করতে, কোন বিধান বা নির্দেশকে নির্বিচারে মেনে না নিতে”।
ইংরেজ সাহেবদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঐ ‘ইয়ং বেঙ্গল’ দল একটি সংগঠন করেছিলেন, যার নাম ছিল “দি এ্যাকাডেমিক এ্যাসোসিয়েশন”। রেভারেন্ট লালবিহারী দে তাঁর ‘রিকালেকশন’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে উপরোক্ত এ্যাসোসিয়েশনের সাপ্তাহিক সভায় “ইয়ং ক্যালকাটা” দলের শ্রেষ্ঠ সভ্যরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ সামাজিক, নৈতিক ও ধর্ম বিষয়ক সমস্যা সম্বন্ধে ভাষণ দিতেন। এই সব আলোচনার মূল সুর ছিল প্রচলিত ধর্ম সম্বন্ধীয় বিধি বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ...........সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে একাডেমীর সিংহ শিশুদের গর্জন শোনা যেত, ‘হিন্দু ধর্ম ধ্বংস হোক’, ‘গোঁড়ামি ধ্বংস হোক'।” (দ্রঃ ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্রাসাগর’, পৃঃ ২১)
রামমোহন এমনই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যে, ১৮২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর টাউন হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইংরেজদের ভারতে বসবাস করার যে নিবেদন তিনি করেছিলেন তার উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাজনৈতিক উন্নতির কথাও তিনি উল্লেখ করেছিলেন, যা অনেকের মতে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তিনি বলেছিলেন, “I am impressed with the conviction that the greater our intercourse with European gentlemen, the greater Will be our improvement in literary, Social and political affairs." (Raja Rammohun Roy and progressive Movements in India, by Jatindra Kumar Majumdar, PP:439-49)
ইংরেজি ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা রহিত হওয়ার ওপর আইন প্রণয়ন করা হয়। কারণ রাজা রামমোহন রায় আর ইয়ং বেঙ্গল ছিল সরকারের আইনের পক্ষে আর বাকি প্রাচীনপন্থিরা প্রায় বিরুদ্ধবাদী হয়ে ‘ধর্মসভা’ গঠন করেন বিরোধিতা করার জন্য। ঠিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বুঝতে পেরেই ১৮৩০ সালে ২৭ মে বিখ্যাত খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারক মিঃ আলেকজাণ্ডার ডাফ কলকাতায় এসে পৌঁছালেন। এবং দেখতে পেলেন বাংলা দেশের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটা বিপ্লব চলছে। মিঃ ডাফ তাঁর ‘ইণ্ডিয়া এ্যাণ্ড ইণ্ডিয়া মিশন’ গ্রন্থে লিখেছেন, “তখনকার অবস্থা খুব অনুকূল ছিল। এই অবস্থার জন্যই আমরা এতদিন প্রতীক্ষা করেছি, এই অবস্থার জন্যেই গভীরভাবে কামনা করেছি।”
মিশনের পাদ্রীরা প্রবল স্রোতে বক্তৃতা করতে শুরু করলেন ঐ হিন্দু কলেজে। এখন ছাত্রগণ প্রায় খ্রীষ্টান হওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই প্রস্তুত। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বক্তৃতা শোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। ছাত্ররা খেপে উঠল। স্বেচ্ছাচারী আইনের ভিত্তিতে অনেক ছাত্রকে বের করা তো দূরের কথা একেবারে প্রগতিবাদীতার উৎস স্বয়ং ডিরোজিওকেও সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হলো। তার পরের বছরেই তিনি অল্প বয়সে আকস্মাৎ মারা যান। তখন সারা ভারতের মূল কেন্দ্র কলকাতায় তিনটি দল। একটি প্রাচীনপন্থী, একটি ইয়ং বেঙ্গল শোষণ পন্থি আর একটি মধ্যম পন্থী অর্থাৎ রাজা রামমোহনের দল। প্রাচীনদের পত্রিকা ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ ইয়ং বেঙ্গলীদের ইংরেজি পত্রিকা ‘এনকোয়ারার’ আর বাংলা পত্রিকা ‘জ্ঞানান্বেষণ’ এবং রামমোহন দলের রবীন্দ্রনাথের পিতৃব্য শ্রী প্রসন্নকুমার ঠাকুর সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘রিফর্মার'-এর মধ্যে যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুন জ্বলতে থাকে।
খ্রীষ্টান মিশন প্ৰবলগতিতে ভারতে খ্রীষ্টান করার চাষ শুরু করে দিল। ঠিক এই সময়েই ১৮৩০ সালে রামমোহনের বিলেতে ডাক পড়ে। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে সেখানেই পরলোকগমন করেন। রামমোহনের মৃত্যুর পর ব্রাহ্ম ধর্ম হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু তাঁর উপযুক্ত শিষ্য শ্ৰী অবীনাথের পিতা শ্রী দেবেন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায় আবার তা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
মোট কথা রামমোহন ইংরেজি প্রভাবে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিলেন দেশের শিক্ষিত জনসাধারণকে ব্রহ্ম ধর্মের আড়াল হতে। তিনি মদ্যপানের পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ ইংরেজরা চিরদিনই মদ্যপানে রুচিশীল ছিল। আর তিনি ছিলেন তাদের পরম বন্ধু।
সংক্ষেপে একথাই বলা যেতে পারে, রামমোহন যদি ইংরেজদের সব কিছুই উন্নত আদর্শ মনে করে থাকেন তবে তা নিঃসন্দেহে মস্তবড় অদূরদর্শিতার পরিচায়ক। তাই বক্তব্য, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, মুখ্য নায়ক, অথবা অন্যতম ভারত বন্ধু কিম্বা ইংরেজ সরকারের বিশ্বাস ভাজন গুপ্ত দালাল প্রভৃতি উপাধির মধ্যে কোনটি রামমোহনের জন্য প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করবেন বর্তমান যুগের নিরপেক্ষ ছাত্রছাত্রী বা পাঠক-পাঠিকার দল। রামমোহন কোনদিন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেননি বরং তিনি চেয়েছিলেন ইংরেজ সাম্রাজ্যাধীনে সমমর্যাদাসম্পন্ন অধিকার মাত্র। এই যদি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্মদাতা পিতৃদেবদের অবস্থা হয় তাহলে সন্তানদের অবস্থা আরও মারাত্মক হওয়া অনুচিত হবে কী করে বলা যায়? রামমোহনের প্রত্যেক শিষ্য, ছাত্র ও অনুগতের আলেখ্যই অদ্ভুত। যেমন অক্ষয় কুমারের ইতিহাস।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/490/57
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।