hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

২০
মহীয়সী জেবন্নেসার বিকৃত চরিত্রের আসল তথ্য
পূর্বেই বলেছি হিংসা স্বর্থের নেশায় মাতাল হয়ে সম্রাট আলমগীরকে ছোট করে প্রতিপন্ন করতে গিয়ে তাঁর কন্যা, বোন, প্রমুখকে এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছে যে, একজন বেশ্যার বিরুদ্ধেও ঐ রকম উলঙ্গ সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয় কোন ভদ্ৰ কলমনবীশের পক্ষে।

বর্তমানে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাজসিংহ’ বই পাঠ্যপুস্তকরূপে গৃহীত হয়েছে। তাতে আওরঙ্গজেবের অতি আদরের কন্যা গুণবতী, চরিত্রবতী ও প্রতিভাবতী জেবন্নেসাকে ভ্রষ্টা ও পতিতা অপেক্ষাও চরিত্রহীনা করে প্রমাণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় নেই। সেটি নাকি ইতিহাস নয়, ঐতিহাসিক উপন্যাস। তাই তাতে কিছু কাল্পনিক রঙ চড়িয়ে পৃথিবী বিখ্যাত বিদূষী ও সতীদের ওপর দোষারোপ করলেও দোষ নেই। অথচ আর একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, এর চেয়ে বড় পাপ, বড় অন্যায় এবং কালি-কলম সমাজের মস্তিষ্কে পোকা ধরিয়ে দেওয়ার মত ব্যভিচার আর নেই। পৃথিবীর বুকে বহু নরনারী এমন মেলে, যারা জীবনে বিয়ে করেননি। অতএব কষ্ট করে উপন্যাস লিখতে গেলে চিরকুমার আর চিরকুমারীদের চরিত্রহীন আর চরিত্রহীনা করে না লিখলে উপন্যাস সরস আর উলঙ্গ হবে কী করে? তাই সমস্ত কুরআন শরীফ কষ্ঠস্থকারিণী হাফেজা ও অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারিণী জেবন্নেসাকেও উপন্যাস মার্কা ঐতিহাসিক বুলেটের আঘাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি।

হাফেজ মাওলানা হযরত আলমগীরের (র.) চরিত্র বিকৃত করলে যেমন পরোক্ষভাবে কুরআন ও হাদীসকে অকেজো এবং নেশার সামগ্রী প্রতিপন্ন করে মুসলমান সমাজকে ধর্মবিমুখ করা যায় ঠিক অনুরূপ এই মহীয়সী মহিলা হাফেজা জেবন্নাসাকেও যদি ভ্ৰষ্টা চরিত্রহীনা প্রমাণ করা যায় তাহলে মুসলিম নারী জাতিকেও কুরআন ও হাদীসের বিপরীত দিকে চালানো সম্ভব হবে-এই চাতুর্যপূর্ণ মতলব নিয়েই ইতিহাসে বিষ প্রয়োগ করার পাকাপাকি ব্যবস্থা।

তাই আকীল খাঁকে তাঁর প্রণয়ী বলে লিখেছেন কিছু অমুসলমান লেখক। আর ঋষী বঙ্কিম মহাশয়ের মতে, জেবন্নেসা মোবারক খাঁর অবৈধ প্রেমিকা। (‘রাজ সিংহ’ দ্রষ্টব্য) আবার সম্রাট আওরঙ্গজেবের বোন জাহানারাকেও ঐ সামান্য সৈনিক ব্যভিচারের নেশার উৎভট সাধনার কথা বর্ণনা করে নতুন ইনভেনটারের খ্যাতি লাভ করেছেন অনেকে সস্তা কাগজের পাতায়। কিন্তু নিরপেক্ষ মানুষের মাথার মগজের সংবাদ তার বিপরীত।

কুমারী জেবন্নেসার চিরকুমারীত্বের বিশুদ্ধতায় বিখ্যাত এক ঐতিহাসিকের উদ্ধৃতির অনুবাদ এখানে তুলে দিচ্ছি-“যেহেতু জেবন্নেসা দিবানিশি কাব্যানুশীলন ও পুস্তক অধ্যয়নের গবেষণায় রত থাকতেন এবং বিবাহ হলে যেহেতু স্বামীসেবা অবশ্য কর্তব্য হয়ে যাবে ফলে অধ্যয়ন, গবেষণা ও কাব্য রচনার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে বলে চিরজীবন চিরকুমারী থেকে বিবাহে বর্ধমান ঝঞ্ঝাটের মধ্যে নিজের স্বাধীন সত্তাকে সায় দেওয়াতে পারেননি।” (উর্দু গ্রন্থ ‘জেওয়েরে জেবন্নেসা’ দ্রষ্টব্য)

কোন কোন কুৎসিত প্রতিভাধারী লেখক জেবন্নেসাকে ছত্রপতি শিবাজীর প্রণয় ভিখারিণী বলতে বা বইয়ে লিখে নাটক ও যাত্রারূপে তা সমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দিতেও লজ্জানুভব করেননি। ফলে সমাজে সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

আবার কোন কোন লেখক নাসীর খাঁর সঙ্গেও জেবন্নেসার অবৈধ প্রেম ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই সব কুপন্থী জঘন্য রুচী কলমনবীশদের লেখার সময় মনে রাখা উচিত ছিল যে, তাদেরই মতে সম্রাট আওরঙ্গজেব খুবই নাকি গোঁড়া মুসলমান ছিলেন। অতএব গোঁড়া মুসলমানের মেয়েরা কোন পরপুরুষ দেখতে পায় না এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সুতরাং গোঁড়া আওরঙ্গজেবের হেরেমে সংরক্ষিতা রাজকন্যাদের অপর পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকতে পারে কীভাবে? তাই মনে হয় ভেজাল দেওয়ার উন্মাদনায় সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেছে।

হাফেজা জেবন্নেসা সম্বন্ধে যে যুগের বড় বড় জ্ঞানী, গুণী, লেখক ও কবিগণ তাঁদের কাব্য কবিতায় যা লিখে গেছেন তাদের জানা আছে তারা অবশ্যই জেবন্নেসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন চিরকাল। মির্জা সাঈদ আশরফ বলেন, “তাঁর (জেবন্নেসার) ভৃত্যগণ তাঁর কাজ করত অথচ তাঁকে দেখতে পেত না।” (মূল উদ্ধৃতির বঙ্গানুবাদ)

এগুলো সবই মুসলমানদের উদ্ধৃতি তাই অনেকের কাজে গ্রহণীয় নাও হতে পারে। তাই বিখ্যাত হিন্দু লেখক লছমী নারায়ণের লেখা উদ্ধৃতি দিচ্ছি(বঙ্গানুবাদ)— “জেবন্নেসা তৈমুর বংশীয়া উজ্জ্বলতার আলোকবর্তিকা, এ যুগের নারীকুল মুকুটমণি। তার অধ্যবসায়, আরাধনা, কাব্য সাধনা ও ধর্মপ্রবণতা তাকে সুনামের অধিকারিণী করেছে। তাঁর সুখ্যাতি অনেকের কাছে পবিত্র কাবা ঘরের মত। হযরত মুহাম্মদের (সা.) পত্নী খাদিজার (রা.) মত তিনি ছিলেন পাপ ও কলঙ্কশূন্য কুমারী।”

আরও অমুসলমান লিখিত বিশেষ করে হিন্দু লেখক লিখিত জেবন্নেসা সম্পর্কে জানতে হলে বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত লছমী নারায়ণ সংকলিত ‘গুলেরানা হস্তলিপি’ দ্রষ্টব্য।

আজ ভারতে সাম্য, শান্তি, মৈত্রী-মিলন স্থায়ী করতে হলে প্রত্যেক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা আবশ্যক। গোড়ায় গলদ রেখে বাহ্যিক সমাধান করলে তা সোনার মত যত চকচকই করুক আসলে মূল্যহীন। এই সমস্ত অপকীর্তি বন্ধ করতে হলে প্রথমেই “ঐতিহাসিক উপন্যাস” লেখার পথ বন্ধ করতে হবে।

আমাদের দেশে ঐতিহাসিক উপন্যাসের যিনি আবিষ্কারক অথবা প্রবর্তক তিনিই হচ্ছেন আমাদের সর্ববরেণ্য ঋষী আর সাহিত্য সম্রাট উপাধিপ্রাপ্ত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ইনিই-১৮৮২ খৃস্টাব্দে ‘রাজসিংহ’ লিখে উপন্যাস মার্কা ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। আর এরই প্রদর্শিত পথে চললেন শ্রী ভুদেব মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘অঙ্গুরী বিনিময়’ বইয়ে শিবাজীকে নায়ক আর রোসিনারাকে নায়িকা করে। ভুদেব বাবুর লেখার স্রোতে আওরঙ্গজেবের কন্যা রোসিনারাকে একেবারে পশু চরিত্রে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আওরঙ্গজেবের রোসিনারা নামে কোন কন্যাই ছিল না। অনেকের ধারণা, ভুদেব বাবুর ইতিহাসে প্রকৃত জ্ঞানের অভাবেই এত বড় ভুল হয়েছে। অবশ্য ভুদেব বাবুর রচনায় বাঁচার একটা রাস্তা অবলম্বন করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে এই যে, যদিও রোসিনারা নামে আওরঙ্গজেবের কোন কন্যা নেই তথাপিও এটা যে উপন্যাস। আর আগেই বলেছি উপন্যাস কল্পনার মিথ্যার পালিশ চড়ালে যেন অপরাধের কিছু নয়। অতএব ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকদের মতে, প্রখ্যাত চরিত্রবতী জেবন্নেসাকেও চরিত্রহীন বললেই বা দোষ হবে কেন?

এমনিভাবে ১৯০৯ খৃস্টাব্দে মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় একটি বই লিখেছেন তার নাম “ভারতের বিদূষী’। ‘বিদূষী’ ‘বিদ্যান’-এর স্ত্রী লিঙ্গ। কিন্তু গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের গ্রন্থখানায় জেবন্নেসা যে স্থান পেয়েছেন এটাই মুসলমানদের সৌভাগ্য বলতে হবে। তবে তিনিও শিবাজীর প্রেম প্রণয়ী বলে জেবুন্নেসাকে চিত্রিত করেছেন। তেমনিই ১৯১৮ খৃস্টাব্দে সুনীতি দেবীর “The Beautifull princess" নামে একটি পুস্তকে শিবাজীর প্রণয়িনী বলে জেবন্নেসার সুউচ্চ চরিত্র গাত্রে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করেছেন।

তাছাড়া আজকাল প্রায় নানা পত্রপত্রিকায় এত বেশি উৎকট ঐতিহাসিক উপন্যাস সৃষ্টি হচ্ছে যে নিরপেক্ষ পাঠকের সামনে যখন ওগুলো বারবার ফুটে ওঠে তখন আমার মত অনেকেরই মনে পড়ে একটা মিথ্যাকে বারবার প্রচার করতে করতে তা সত্যে পরিণত হয়। এছাড়া আমাদের বাংলা ভাষাতেও একটা প্রবাদ বাক্য আছে যা রটে কিছুও ঘটে। কিন্তু আজ বোধহয় নতুন প্রবাদ বাক্য তৈরি করতে হবে “যা না ঘটে তাও রটে।”

অথচ প্রকৃতপক্ষে যাঁরা ঐতিহাসিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন, যেমন কাফি খাঁ, মনুচি, ওট্যাভর্নার, স্যার যদুনাথ সরকার প্রমুখ পণ্ডিতদের লিখিত ইতিহাসে এসব অভিযোগ বা অপরাধের ‘অ’ও লেখা নেই বরং প্রশংসার প্রাচুর্য আছে। স্যার যদুনাথ সরকারের একটি পুস্তকের নাম ‘শিবাজী’ আর একটির নাম ‘ঔরঙ্গজেব’। কিন্তু এগুলোর মধ্যে ঐসব গাঁজারে গল্পের কোন স্থান নেই। তবে আগামীকাল নতুন সংস্করণে বা নতুন নতুন মুদ্রণে কী হবে তা বলার স্পর্ধা আজ অনেকেরই নেই।

বঙ্গের বিখ্যাত ঐতিহাসিকদের মধ্যে যদুনাথ সরকার প্রথম শ্রেণীর সন্দেহ নেই। তিনি ১৯১৭ খৃস্টাব্দে জানুয়ারী মাসে “Modern Review" পত্রিকায় যে প্রবন্ধটি লিখেছেন তার নাম “Love affairs of jeban nessa"। তাতে তিনি জোরালো ভাষায় গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমাতে প্রকাশ করেছেন-“ঐ সমস্ত কাহিনী একেবারে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।”

আর একজন খ্যাতনামা চরিতকার শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর “মোগল বিদূষী” পুস্তকে ঐ সমস্ত প্রেম কাহিনীকে মিথ্যা এবং কাল্পনিক বলে শুধু লেখা নয় বরং প্রমাণ করতেও সক্ষম হয়েছেন।

একদিন সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁর ঐ কন্যা জেবন্নেসার জন্মের পূর্বে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার যথার্থ বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। তিনি স্বপ্নে দেখছেন তার এক কন্যা তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিচ্ছে এবং নানা ধর্মীয় উন্নতির জন্য নতুন অনেক তথ্যাদি সংগ্রহ করে পিতার করকমলে পেশ করছে। স্বপ্ন সব সময় সত্য হয় না, কিন্তু বড় বড় বুজুর্গ বা আল্লাহর আদর্শ ওলীদের স্বপ্ন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক ও সার্থক হয়। আলমগীরের স্বপ্ন কতটা সফল হয়েছিল তা আজ বিচারের দিন।

আওরঙ্গজেব নিজেই পছন্দ করে নাম রেখেছিলেন জেবন্নেসা-অর্থাৎ ললনাশ্রী। তিনি যখন কুরআন মুখস্থ করতেন তখন পুরনো পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না কারণ তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। হাফেজা হওয়ার পর আরবী, ফারসী ও উর্দুতে পূর্ণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এছাড়া আরও অন্যান্য ভাষায় জেবন্নেসার দখল ছিল যথেষ্ট।

জেবন্নেসার প্রতিভার অনেক পরিচয় পাওয়া যায়। একবার পারস্যের বাদশাহ স্বপ্নের মধ্যে একটি কবিতা মুখস্থ করেন-“দুররে আবলাক ক্যাসে কমদিদা মওজুদ”। বাদশাহ সমস্ত কাব্যবিদ ও কবিদের ঐ বাক্যের সাথে মিলিয়ে অর্থ, ছন্দ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঐ রকম আর একটি বাক্য তৈরি করে দিতে আহ্বান করেন। অনেকেই করলেন বটে কিন্তু তা বাদশাহের পছন্দসই হয়নি। সেইজন্য সকলের পরামর্শে ঐ বাক্যটি হিন্দুস্থানের কবি কাব্যকারদের জন্য দিল্লির রাজদরবারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সকলেই ইতস্তত করতে লাগলেন, কারণ পারস্যের মাতৃভাষা পারসী। অতএব সেখানকার লোকেরা যখন পারেননি তখন না জানি কত কঠিনই হবে। বাক্যটির অর্থ ছিল “বাগাফটকা মতির প্রত্যক্ষদর্শী বিরল।”

অবশেষে ভারত বিখ্যাত বিদূষী জেবন্নেসার নিকট অন্তঃপুরে তা পাঠানো হল। তিনি একটু চোখ বুলিয়ে ঐ বাক্যের নিচে একটি বাক্য লিখে দিলেন–

“মাগার আশকে বুতানে সুরমা আলুদ”। অর্থাৎ-সুরমা পরা চোখের অশ্রু বিন্দু ঐ মতির প্রাচুর্য।

সাধারণ একটা বাক্যের সঙ্গে জেবন্নেসার রচিত এই অসাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি বিজড়িত উচ্চ শ্রেণীর ছন্দ সৃষ্টিতে ভারতের জ্ঞানী গুণীরা তো মুগ্ধ হয়ে ছিলেনই, সেই সঙ্গে ঐ কবিতাটি যখন পারস্যে পৌঁছেছিল তখন তাকে পারস্যবাদী এত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, তাঁর জ্ঞানমুগ্ধ ও গুণমুগ্ধের দল অনেক পুস্তক পুস্তিকায় লিখে ফেলেও ছিলেন।

পারস্যের পণ্ডিতবৃন্দ সেখানের সুলতানকে অনুরোধ করেন একবার ঐ বিখ্যাত নারীকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর। কিন্তু সুলতান জানতেন বাদশার নারী মহলে এত পর্দা প্রথার প্রচলন যে, তার ঐ আমন্ত্রণ হয়তো উপেক্ষিত হবে ফলে তিনি অপমানিত হতে পারেন। তাই শেষে জেবন্নেসাকে বিখ্যাত কবিকে দিয়ে কবিতার ভেতর দিয়ে মনের কথা জানালেন-তুবা এ্যায় মহজেরী বে পরদা দিদান আরজু দারাম...” অর্থাৎ “হে চন্দ্রাপেক্ষা সুন্দরী, আমাদের ব্যবধান দূরীভূত হোক আর পর্দার বাইরে আপনার দর্শনের আশা নিয়ে যেতে চাই।

উত্তরে কথিত গোঁড়া সম্রাটের গোড়া কন্যা লিখে পাঠালেন-“বুয়ে গুল দার বারগে গুল পুশিদাহ আম দর সোখন বিনাদ মোরা”-অর্থাৎ পুষ্পের সুঘ্রাণের মত পুষ্পেই আমি লুকিয়ে আছি। আমায় যে কেউ দেখতে চায়, সে আমায় দেখুন আমারই লেখায়”। এই রকম পর্দার পক্ষপাতিনী নারী হয়েও জেবন্নেসাকে আজ মর্মান্তিক ও ঘৃণ্য অভিযোগের শিকার হতে হয়েছে। বলাবাহুল্য ঐ নিষ্ঠুর ভূমিকার নেপথ্যে জেবন্নেসা, রশিনারা আর জাহানারা প্রমুখ রমণী পর্দা বজায় রেখে, পাণ্ডিত্য অর্জনের যে ইতিহাস রেখে গেছেন তা চাপা দেওয়া এবং তাদের পবিত্র চরিত্রে কলঙ্ক নিক্ষেপ করার প্রয়োজন এই জন্যই যে, যদি শিক্ষিত নারী সমাজ পর্দার পক্ষাবলম্বন করেন তাহলে উদ্দেশ্য যাঁদের সফল হয় না তাঁরাই প্রমাণ করতে চান কুরআন আর হাদীসের শিক্ষাপ্রাপ্ত পর্দায় থাকা রাজকুমারীরা পর্দায় থাকলেও অন্তরে তাঁদের পর্দা ছিল না। তাই যাকে তাকে প্রেম বিতরণ করেছেন। সুতরাং যত দোষ যেন তাঁদের মতে কুরআন-হাদীসের শিক্ষা। অতএব মুসলিম নারীকে এমন পর্যায়ে আনতে হবে, যাতে তারা কুরআন-হাদীসের শিক্ষা হতে দূরে সরে থাকেন এবং প্রথা হতে মুক্তি নিয়ে অপর অসভ্য স্রোতের টানে উলঙ্গ অথবা অধোলঙ্গ স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিণী এবং নকল উন্নতির শেষ সীমার ব্যভিচারিণী হয়ে উঠেন। অবশ্য তাঁদের শ্রমের সার্থকতা আজ প্রমাণিত। সুফিয়া খাতুন আজ মিস্ সুপ্রিয়ায় পরিণত হয়ে পোশাক পরিচ্ছদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক এগিয়ে পড়েছেন। এমনকি বিচারকের সামনে প্রায় উলঙ্গ হয়ে দেশ সুন্দরী বিশ্ব সুন্দরী পুরস্কার নিতেও পিছিয়ে নেই। প্রকৃতপক্ষে এগুলো উন্নতি না অবনতি তা আজ গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন