hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

১৫
মুঘল সম্রাট আকবর
পিতার মৃত্যুর সময় আকবরের বয়স ছিল মাত্র তের বছর। ঐ বয়সেই ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ জানুয়ারি তাঁর প্রধান সহায়ক বৈরাম খাঁ তাঁকে সিংহাসনে বসালেন। আসলে আকবরের নামে শাসনকার্য পরিচালিত হলেও সমস্ত কাজকর্ম ও দায় দায়িত্ব বৈরাম খাকেই পালন করতে হত। পাঁচ বছর পরে আকবর বৈরামের একাধিপত্য অসহ্যবোধ করলেন এবং তাঁর হাত হতে সমস্ত দায়িত্ব নিজেই ছিনিয়ে নিলেন এবং জানিয়ে দিলেন, আমি এখন উপযুক্ত, আপনি বরং হজ করতে যান। এই আদেশ জারি হওয়াতে বৈরাম খাঁ নিজেকে অপমানিতবোধ করলেন এবং শেষে বিদ্রোহীরূপে আত্মপ্রকাশ করলেন। আকবর তাকে পরাজিত করলেন কিন্তু কারারুদ্ধ বা প্রাণদণ্ড না দিয়ে তার হজ্জে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন যেহেতু বহু দিক দিয়ে তাঁর থেকে তিনি উপকৃত ছিলেন। কিন্তু হজ্জ থেকে ফিরে এসে বৈরাম খাঁর ভূমিকা কী হত বলা যায় না। হজ্জে যাওয়ার পথে গুজরাটে তিনি আততায়ী কর্তৃক নিহত হন। কারো ধারণা এটা গুণ্ডা কর্তৃক, আবার কারো ধারণা আকবরের অঙ্গুলী হেলনের নিষ্ঠুর পরিণাম।

আকবর বুঝে দেখলেন, এতবড় ভারতবর্ষে প্রভাব বিস্তার করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জাতিকে হাতে রাখলেই কাজের সুবিধা হবে। তাই রাজপুত ও হিন্দু জাতিকে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে বদ্ধপরিকর হলেন। অবশ্য তা আন্তরিকতার আলোকে না রাজ্য বিস্তারের আশায় সুমিষ্ট টোপ নিক্ষেপ, তা বিচার করবেন সুধী সমাজ।

তিনি হিন্দুদের ওপর হতে জিজিয়া কর তুলে দিলেন এবং হিন্দুদের বড় বড় পদে ভূষিত করলেন। রাজপুত বীর মানসিংহকে অন্যতম সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। রাজস্ব বিভাগ ছেড়ে দিলেন। বহুদিনের যবন অস্পৃশ্য মুসলমান আকবর এত সহজে হিন্দুদের প্রিয়পাত্র হলেন যে, কেউ আপন বোন কেউ ভগ্নি, কেউ বা নিজের কন্যাকে রাজার হেরেমে প্রবেশ করতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। অম্বর এবং জয়সালমীরের হিন্দু রাজকুমারীদ্বয়কে আকবর বিয়ে করলেন এবং অম্বরের পরবর্তী রাজা ভগবান দাসের কন্যা এবং মাড়োয়ার রাজা উদয় সিংহের কন্যার সঙ্গে পুত্র সেলিমের বিবাহ দিলেন। প্রায় সকলেই আসল শুধু ব্যতিক্রম মেবারের রানী। বাধ্য হয়ে আকবর মেবার আক্রমণ করলেন। তখন মেবারের রাজা ছিলেন সংগ্রাম সিংহের পুত্র উদয় সিংহ। তিনি সেনাপতি জয়মলের হাতে রাজ্য রক্ষার ভার দিয়ে আরাবল্লী পর্বতে আশ্রয় নিলেন। জয়মল্ল নিষ্ঠুর অকারণ আক্রমণের শিকার হয়ে আট হাজার সৈন্য নিয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেও পরাজয়বরণ করলেন। অধঃপতিত চিতোর দখলে এল বটে, কিন্তু সমগ্ৰ মেবার হাতে এল না। উদয় সিংহ উদয়পুরে রাজধানী স্থাপন করে রাজত্ব করতে লাগলেন। উদয় সিংহের মৃত্যুর পর প্রতাপ সিংহ আকবরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যতদিন না চিতোর পুনরুদ্ধার হয় ততদিন তিনি রণক্ষেত্র ছাড়া আহার করবেন না এবং শয়ন করবেন শুধু তৃণ শয্যায়। হলদিঘাট নামক গিরি সঙ্কটে তুমুল যুদ্ধ হয় ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে। প্রতাপ পরাজিত হলেন আর মেবারের হল অনিবার্য পতন। প্রতিজ্ঞা পালনের পরিপেক্ষিতে প্রতাপ বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন কিন্তু প্রিয় রাজধানী চিতোরকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি তার জীবদ্দশায়।

পূর্বে যে সমস্ত দেশ স্বাধীন হয়েছিল আকরব সেই সকল রাজ্য একে একে জয় করে চললেন। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট দখল করলেন তখন সুলাইমান কাররানী ছিলেন বাংলার সুলতান। তিনি যুদ্ধের পথে পা না বাড়িয়ে সন্ধি করতে আগ্রহী হলেন কিন্তু তার স্বাধীনচেতা সন্তান দাউদ বিদ্রোহী হয়ে বিহার আক্রমণ করলেন। আকবর অনেক সৈন্যসামন্ত পাঠিয়ে দাউদের স্বাধীনতার সাধ মিটিয়ে তাঁকে হত্যা করে নিশ্চিন্ত হলেন। আর বাংলা ও উড়িষ্যা নিজের দখলে আনলেন। তারপর ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর ও ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ জয় করে সমগ্র আর্যাবর্তের দণ্ডমুণ্ড কর্তা হয়ে দাঁড়ালেন।

উত্তর ভারতের সাথে সাথে দক্ষিণ ভারতের দিকেও দৃষ্টি দিলেন। ঐ সময় বাহমনী রাজ্য ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আহমাদনগরের রাজার মৃত্যুর পর রাজ্যে অশান্তি ও বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। বিদ্রোহীরা আকবরের সাহায্য প্রার্থনা করলে ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে আকবর তাঁর পুত্র মুরাদকে এক দল সৈন্য দিয়ে আহমদনগরে পাঠালেন। আহমদনগরের নাবালক বাচ্চা রাজার অভিভাবিকা বিদূষী নারী বীরাঙ্গনা চাঁদ সুলতানা বিপুল বিক্রমে বাধা দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করলেন। মুঘল সৈন্যরা আহমাদনগর করায়ত্ত করতে পারলেন না। পরের বছর আকবর স্বয়ং নারী এবং শিশুর বিরুদ্ধে বিপুল সৈন্য ও শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। চাঁদ বিবি এবারেও প্রাণপণে যুদ্ধ চালনা করলেন। রসদ ও গুলি বারুদের স্বল্পতা হেতু শুধু বন্দুক এবং মল্লযোদ্ধাদের মামুলী অস্ত্র নিয়েই রুখে দাঁড়ালেন, কিন্তু আকবরের বীর গুপ্তচর পেছন হতে সুলতানাকে হত্যা করার ফলে, আহমদনগরে পরাজয়ের অন্ধকার নেমে এল। আহমদনগরের একাংশ বাদশার হাতে এল। তারপর বাদশাহ খন্দেশত আসিরগড় দুর্গে আক্রমণ চালিয়ে বাকি অংশগুলোকে দখল করলেন। এমনিভাবে আকবর এক বিশাল সাম্রাজ্যের সর্বেসর্বা রাজাধিরাজ বাদশাহ বলে বিবেচিত হলেন।

আকবর সম্বন্ধে প্রশংসা ও উদারতার উদাহরণ ইতিহাসে এত বেশি স্থান পেয়েছে যা মুসলমান বাদশাহ কারো ভাগ্যে সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের শুষ্ক পাতা সরল ও জীবন্ত হয়ে যেন চিৎকার করে বলে ওঠে- “মহামতি আকবর! মহামতি আকবর’!! পাঠশালা হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ঐ একই শব্দ ‘ধন্য আকবর! ধন্য আকবর’!!

আকবরের জন্মদাতা পিতা হুমায়ুনের ওপর যখন বিপদের বিরাট বন্যা এসে পড়েছিল, সেই সময় হুমায়ুনের এতবড় বন্ধু আর সুহৃদ কেউ ছিলেন না যিনি নিজের প্রাণ, সম্পদ-সম্পত্তি ও সম্মান সবই দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি হুমায়ুনের জন্য- তিনিই হচ্ছেন বৈরাম খাঁ। হুমায়ুন তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। সামান্য কিছু ভূখণ্ড ছাড়া ঐ সময় সিকিন্দারশূর এবং এব্রাহিমশূরের মধ্যে খুব শক্তির প্রতিযোগিতা চলছিল। কিন্তু আদিলশাহের এক হিন্দু মন্ত্রী হিমু তদানীন্তন সময়ে শক্তি সামর্থ্য ও জ্ঞান বুদ্ধিতে প্রধান ছিলেন। তিনি এত শক্তিশালী হয়ে পড়লেন যে, দিল্লি ও আগ্রা অধিকার করে বিক্রমাদিত্য নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করলেন। আবার আকবরের ভাই আবদুল হাকিমের অধীনে কাবুল, বাংলাদেশ, মালব, গুজরাট, গণ্ডোয়ানা, উড়িষ্যা, কাশ্মীর, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও দাক্ষিণাত্য তখন স্বাধীন হয়ে পড়েছিল। রাজপুত্রগণও প্রথম মুঘল আক্রমণের আঘাতে সামলে নিয়ে শক্তিশালী হয়ে পশ্চিম উপকূলে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারে মেতে উঠল। এমনকি পারস্য সাগরে ও আরব সাগরে তাদের প্রভুত্বের মক্কা শরীফে হজ্জ যাত্রীদের ভীষণ বিপদ ও বাধার সম্মুখীন হতে হত।

একে তো এতগুলো বিপদ তার ওপর আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেছেন বালক বয়সে। অতএব বৈরাম খাই এরূপ বিপদে আকবর নওজোয়ান বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত আকবরকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছিলেন। আকবরের পিতা হুমায়ুন তাই অকৃত্রিম বন্ধু বৈরাম খার দুটি হাত ধরে অশ্রু সজল নয়নে বলেছিলেন- “আমাদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আপনার ন্যায় সাহায্যকারী আর কেউ নেই।” তাই হুমায়ুন যখন কান্দাহার দখল করলেন তখন কৃতজ্ঞতার সাক্ষীস্বরূপ বৈরাম খাঁকে সেখানকার শাসনকর্তা করে দিয়েছিলেন। তাছাড়া তাঁকে সিংহিন্দের জাইগীর প্রদান করেছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তিনি আকবরের অভিভাবক নির্ধারিত করেন ঐ বৈরাম খাঁকেই (খান-ই-খানান)। আকবর পিতার কাছে শিখেছিলেন তিনি বাবার মত। তাই তাঁকে ডাকতেন খান-ই বাবা সম্বোধন করে।

ঐ বৈরাম খাঁকে অসম্মানিত আর পরাজিত হয়ে যে বহিষ্কৃত হতে হবে গুণমুগ্ধ বন্ধুবান্ধবদের সভা হতে, রাজ্য হতে এবং পৃথিবী হতে এ কথা ভাগ্যহারা বৈরাম খাঁ কোন দিন কল্পনাও করেননি, কল্পনা করেনি অতীত ইতিহাসের পাঠক। আকবরের জীবনের শুরুই কী তবে চক্রান্তের বেড়াজাল গোলকধাঁধার চোখ ধাঁধানো পথে?

সহজলভ্য ইতিহাসে পাওয়া যায়, আকবর হিন্দু বা রাজপুতদের বিশেষত বৈবাহিক সম্বন্ধ পাতিয়ে নিয়েছিলেন বা আয়ত্তে এনে বন্ধু জাতি ও বন্ধু জাতিতে পরিণত করেছিলেন। অপরদিকে হিন্দু প্রজাবৰ্গও তাঁকে খুব আপনজন বলে মনে করতেন। ইতিহাসে হিন্দু প্রজাবৃন্দ তাঁকে ‘দিল্লীশ্বর’ উপাধিতে ভূষিত করেই ক্ষান্ত হননি অনেকে আবার তাকে ‘জগদ্বীশ্বর’ উপাধি দিতেও বিচলিত হননি। দালাল মার্কা ইংরেজ ঐতিহাসিকরা প্রশংসা করতে গিয়ে অনেকে চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছেন। যথা ইংরেজ ঐতিহাসিকরা আকবরের জন্য লিখেছেন, “বৃটিশ যুগের ডালহৌসির সাম্রাজ্য প্রসারনীতির সাথে আকবরের তুলনা করলে মনে হয় যেন মোগল বাদশাহ ভারতের আকাশে প্রখর সূর্যের মত দিপ্তমান আর ডালহৌসির ক্ষুদ্র তারকাটি তার পাশে মিটিমিট করে জ্বলছে। "Astrong and stout annexasionist before whose sun the modest star of Lord Dalhousie place." আকবর আসলে দেখতে সুন্দর ছিলেন না, তাঁর রঙ ছিল কালো তদুপরি আকবর ছিলেন খর্বাকৃতি। কিন্তু ইংরেজ প্রভুর(?) দেওয়া সনদ হচ্ছে- "He looked every inch a king." অর্থাৎ- পা হতে মাথা পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চিই আকবরের রাজার মত। আবার কোন কোন প্রভু(?) বলেছেন- "He was great with the great lowly with the lowly." শক্তের সাথে শক্তি প্রয়োগ আর নরমের সাথে নম্রতা ব্যবহার ছিল তার বৈশিষ্ট্য। আবার কোন ঐতিহাসিক বলেছেন- তার চক্ষুর চাহনী রোজ্জ্বল সমুদ্রের মত। Vibrant like the sea in sun shine." ইত্যাদি।

তিনি হিন্দু নারীদের বিয়ে করেছিলেন। শুধু তিনি কেন, পৃথিবীর বহু মুসলমান-অমুসলমানদের মেয়ে বিয়ে করেছেন বা করলেও সেখানে নিশ্চয়ই ইসলাম ধর্মে কোন বাধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে, সেই নারীকে প্রথমে মুসলমান হতে হবে, তারপর ইসলাম অনুযায়ী বিয়ে হতে পারে। বিয়ে আর ব্যভিচারের পার্থক্য এই টুকুই। কিন্তু আকবর তার হিন্দু পত্নীদের রাজ অন্তঃপুরে হেমাগ্রি জ্বালিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং যিনি যে ঠাকুরের পূজারিণী ছিলেন তাঁর তেমনি ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাজ অন্তঃপুরের অন্তঃস্থলে। তার ফলে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রদের তথা রাজবাড়িতে অনৈসলামিক কুপ্রথার প্রচলন হয়। যথা- মদ্যমান, ব্যভিচার, গীতবাদ্য প্রভৃতি এবং তার সন্তানগণ এত বেশি ব্যভিচারপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে, আকবরের জীবদ্দশাতেই তাঁর পুত্র মুরাদ ও দানিয়াল অত্যন্ত মদ্যপানে মৃত্যুমুখে পতিত হন। জ্যেষ্ঠ পুত্র সেলিম বা জাহাঙ্গীরও চরম মাতাল ছিলেন বলা যেতে পারে। মহামতি আকবরের পুত্রদের মধ্যে মদ্যপান এত চরমে উঠে যে, মদে আর নেশা হত না তখন মদের সঙ্গে ভাং নামক মাদক দ্রব্য মিশ্রিত করে পান করতেন।

যাইহোক, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের হিন্দু রাজা হিমুকে বৈরাম খাঁর কৌশল কীর্তির কারণে পরাজিত করা সম্ভব হয়। হিমু বন্দি হন কিন্তু আকবরের শাসনের প্রারম্ভে আকবরের সামনেই তার মুণ্ডটি দেহচ্যুত করা হয়। আকবরকে মহামতি অভিনয় করতে হলে এই অশোভনীয় কাজটুকু ধামাচাপা দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আবার অন্য দিকে এত বড় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাদ দেওয়া যায় না, তাই ঐ ভারতজনের ইতিহাসে লেখা হয়েছে- “বন্দি হিমুকে আকবরের কাছে ধরিয়া আনিয়া বৈরাম হত্যা করিতে বলিলে তিনি তাহা করেন নাই। শেষে বৈরাম নিজেই তরবারী দিয়া হিমুর মুণ্ডটি কাটিয়া ফেলেন।” লেখক এই ঘটনাটি প্রমাণ দেবার জন্যে কিছু ইতিহাস ও ঐতিহাসিকের নাম দিয়েছেন যারা এই ঘটনা সত্য বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন আবুল ফজল, জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী ইত্যাদি। তবুও বাজারের ঐতিহাসিকদের প্রমাণ প্রয়োগে শান্তি না পেয়ে পরক্ষণেই লিখেছেন, “ভিসেন্ট স্মিথ কেন যে আকবরকে কিশোর বয়সেই এই নিষ্ঠুর হত্যার দায়ে দোষী করিয়াছিলেন তাহা রহস্যজনক মনে হয়। হিমুর পরাজয়ে মোঘল রাজ শক্তির প্রতিষ্ঠা এবং আফগান শক্তির অবসান হয়।”

এক্ষেত্রে প্রথম পক্ষের উপযুক্ত প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয় দোষ যেন আকবরের নয়- বৈরাম খাঁর। দ্বিতীয় পক্ষের বক্তব্য হচ্ছে- আকবরই হত্যাকারী, কারণ কাউকে হত্যা করতে হলে সিংহাসন বা শয়ন পালঙ্কে সম্ভব নয়। হত্যা করার নির্দিষ্ট স্থান প্রত্যেক রাজার থাকে এখানেও তাই ছিল। আকবর তাঁকে (হিমু) হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং হত্যাকাণ্ড চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছুক ছিলেন। শুধু হত্যা করার উদ্দেশ্য থাকলে বৈরাম খাঁ তার আগেই কাজ সমাধা করতে পারতেন। হিমুকে বদ্ধভূমিতে আনার পর আকবরকে মনে করিয়ে দিলেন তার বাচ্চা মনের আচ্ছা খেয়ালের কথা। তারপর আকবরের অনুমতি ও আদেশেই তাঁকে হত্যা করা হয়। রাজ সিংহাসনে আরোহিত আকবর, তাঁকে আদেশ করার অধিকার বৈরাম খাঁর থাকতে পারে না। যিনি যখন নেতৃত্ব দেন সাধারণ নিয়ম হত্যাকাণ্ড তাঁর দ্বারা, তাঁর সঙ্গী বা কর্মী দ্বারা, তাঁর আদেশ, সমর্থন বা মৌনতা প্রভৃতি নেতারই ইঙ্গিত বলে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এবার যারা আকবরের দোষ গৌণ এবং বৈরাম খাঁর দোষ মুখ্য বলেছেন তাঁরা হলেন আবুল ফজল, জাহাঙ্গীর আর আবদুর রহিম প্রভৃতি। কিন্তু মনে রাখতে হবে যারা ঐতিহাসিক তারা নবী ও অবতার নন যে, তাদের সাধারণ মানবিকতা প্রত্যেক মুহূর্তে সতেজ থাকবে। কোন কোন ক্ষেত্রে লোভ লালসা, ক্রোধ, অভিমানের কবলে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে এটাই কারণ। যেহেতু আবদুর রহিম হচ্ছেন পিতার অবাধ্য সন্তান, পিতা-পুত্রের কলহের প্রমাণ আছে। আর জাহাঙ্গীর হচ্ছেন আকবরের ঔরসজাত সন্তান, সেখানে যা স্বাভাবিক তাই হয়েছে। এমনিভাবে আবুল ফজল ও আকবরের মধ্যেও এক গুরুত্বপূর্ণ সম্বন্ধ ছিল- গুরুর পুত্র। অতএব এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু দুর্বলতা বোধহয় আশ্চর্যের নয়।

শেষের কথা আকবরের মা ও বাবার স্বপ্ন আমার ছেলের নাম ও রাজ্য বিস্তার যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন মৃগনাভীর গন্ধ ছড়িয়ে যায় অনুরূপ। আকবর তাই বলেছিলেন, ছলে-বলে, কলে-কৌশলে, হত্যা, মিথ্যা, শঠত যেমন করেই হোক তাঁকে রাজ্য বিস্তার করতেই হবে। অতএব আপনি আমার ধর্ম বাবা, খান-ই-বাবা, সুতরাং যতক্ষণ না আমি মজবুত হই আপনি যা ভাল হয় করুন। হত্যার জন্য দায়ী বন্দুক না বন্দুকধারী সেটাই আজ সিদ্ধান্তের বস্তু। অতএব আফগান শক্তি নির্মূল করতে হলে হিমুর ধ্বংসের প্রয়োজন ছিল। তাই হিমুর মৃত্যুর সঙ্গেই দিল্লি ও আগ্রা আকবরের হাতে এসে গেল।

অপরদিকে আদিল শাহও অন্যত্র নিহত হন। সেকেন্দার শূর আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেন। এব্রাহিম শূরও বহু দিন যাবৎ ঘুরে ঘুরে শেষে উড়িষ্যায় হলেন নিহত। ১৫৫৮ হতে ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গোয়ালিয়র, আজমীর ও জৈনপুর আকবরের অধীনে এসে যায়। এসবই বৈরামর বীরত্বের ফল আর আকবরের ভাগ্যের জোর বলতে হবে। অবশেষে ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে বৈরাম খাঁকে পদচ্যুত করে তার অপেক্ষা বহু গুণে সর্ববিষয়ে অনভিজ্ঞ পীর মুহম্মদ এবং আদম খাকে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এটা বৈরাম খাঁর ব্যক্তিত্বে যে কত চরম আঘাত ও পরম বেইজ্জতিতা তা আজ চিন্তার বিষয়। তবুও তো এক পক্ষের কাছে আকবর মহামতি।

বৈরাম খার মৃত্যুর পর এক সময় আকবরের মা হামিদা ও ধাত্রী মাতা মহিমঅনাগা আকবরকে অশ্ৰুপুত নয়নে বলেছিলেন, “আকবর, বৈরাম খাঁ আর নেই। তোমাকে সৎ পরামর্শ দিয়ে সঠিক পথ দেখাবে তেমন কেউ নেই। তাছাড়া তুমি নিজেও লেখাপড়া জান না। সুতরাং যখন ভালমন্দ বুঝতে পারবে না আমাদের মতামত নেবার চেষ্টা করবে।” কিন্তু আকবর নিজেকে খুব বেশি পণ্ডিত বলে মনে করতেন। পরে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। তবে ছোট ছোট ব্যাপারে মাকে খুশি করার জন্য মহামতি মাতার মতামত নিতেন। তাও আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল তা অরাজকীয় বিষয়।

১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে নতুন সেনাপতি আদম খাঁ ও পীর মহম্মদ মালব জয় করেন। পরের বছর ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে আকবর সেনাপতি আদম খাঁকে হত্যা করেন। অপরাধ ছিল মন্ত্রী শামসুদ্দিনকে তিনি হত্যা করেছিলেন। মহামতি যে আদম খাঁকে হত্যা করেছিলেন সেই আদম খাঁ ছিলেন ধাত্রী মাতা মহিমঅনাগার পুত্র। তাই পুত্রের শোকে বৃদ্ধা মাতা বাঁচতে পারলেন না, বুক ফাটা শোকে দেহ ত্যাগ করলেন। এ যেন এক নিষ্ঠুর তথা পৈশাচিক ইতিহাস।

তারপর পীর মহম্মদকেও পুরস্কার দিলেন মৃত্যুদণ্ড। এরপর আকবর তার একজন অন্যতম রাজা মোয়াজ্জমকে মিথ্যা হত্যার অভিযোগে প্রাণদণ্ড দিলেন। নানা কারণে সারা মুসলমান সমাজ আত্মীয়-অনাত্মীয় প্রত্যেকেই অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলেন। আকবর বুঝতে পারলেন এক দল ভেঙে গেছে। অতএব অন্য কূল আর ভাঙতে দেয়া হবে না। যেমন করেই হোক হিন্দু রাজপুত্রদের হাতে রাখতেই হবে। তার এই প্রস্তাবে রাজপুত্ররা সাড়া দিলেন। সাড়া দেবার কারণ ঐতিহাসিকদের মতে প্রধাণত দুটি। প্রথমত পূর্ব হতেই রাজপুত্ররা মুসলমানদের শক্তি ও প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন। দ্বিতীয়ত, তাঁরা এর মাধ্যমে নিজেদের শক্তি সঞ্চয়, আধিপত্য লাভ ও ভবিষ্যতে হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপনের আশার আলোক প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলেন। যাইহোক, ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে অম্বর (জয়পুর) রাজ্যের রাজা বিহারী মল্ল আকবরের আনুগত্য স্বীকার করেন এবং তাঁর সুন্দরী কুমারী এক কন্যা আকবরকে দান করেন। সেলিম বা জাহাঙ্গীরের জন্ম ঐ কন্যার গর্ভেই হয়েছিল। সেলিম "চিস্তি" নামে এক মুসলমান সাধক দোয়া করেছিলেন তাই তারই নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছিল সেলিম।

তারপর মানসিংহ আকবরকে তার আপন সহোদরা বোনকে দান করেন। আকবর নিজে বিয়ে না করে সেলিমের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। মানসিংহের বোন ছিলেন বিহারী ভগবান দাসের কন্যা। এই কন্যারই গর্ভজাত সন্তান জনাব খসরু। যোধপুরের রাজা উদয়ের কন্যাকেও বিয়ে করেন আকবর পুত্র জাহাঙ্গীর। রানী যোধভাইয়ের গর্ভেই জন্ম নিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। বিকামীরের রাজা রায় সিংহও তাঁর সুন্দরী কন্যা দান করেন মহামতির হেরেমে। তাঁকেও বিয়ে করলেন জাহাঙ্গীর। যশলমীরের রাজা আকবরের বশ্যতাস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু শুধু বশ্যতাই নয় সেই সঙ্গে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তমা কন্যাকেও।

মোটকথা মহামতির আসল ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় তাঁর অসংখ্য স্ত্রী-অস্ত্রী আর পত্নী-উপপত্নীর কথা। যাদের দ্বারা মহামতির মহল সব সময়ই জমজমাট থাকত। কিন্তু এসব কীর্তি ইতিহাসে প্রকাশ করলে মহামতি নামের সার্থকতা থাকে না। তাই অপ্রকাশ্য ছিল এতদিন।

আকবরের বহুসংখ্যক উপপত্নী ছিল... ইত্যাদি এইসব নতুন তথ্যের সন্ধান মুসলমান লিখিত ইতিহাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিখ্যাত হিন্দু ঐতিহাসিক শ্রী রামপ্রসাদ গুপ্তের লেখা ‘মোগল বংশ’ পুস্তকের ১৭৮ পাতার মন্তব্য বিশেস স্মরণযোগ্য। উপপতির সংখ্যা ছিল পাঁচ শতের বেশি। যিনি পাঁচশ নারীর ধর্ষক রাজা বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। যদি এটা সত্য হয় তাহলে তাকে মহামতি আমরা বললেও আগামীকালের ইতিহাস বলবে কী করে সেটাই চিন্তার কথা। আমাদের ভারতের বিখ্যাত Vindication of Aurangz গ্রন্থের ১৪৩ পাতায়-এর পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যাবে, যথা Akber had over five thousand wives আকবরের পাঁচ শতেরও বেশি স্ত্রী ছিল ..... ইত্যাদি। আর যারা কন্যা দিয়েছিলেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েই দিয়েছিলেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ফলে তারা বাদশার অনুগ্রহে ধন্য হয়েই অর্থ, সম্পদ, সম্পত্তি ও সম্মান পেয়েছেন এবং সার্বিক উপকারের মধ্যে রাজপুতদের হাতে রাজকীয় শক্তির মোটামুটি একটি অংশ এসে পড়েছিল। আর স্বাভাবিকও তাই।

এক পক্ষ বলেন, আকবর ও রাজপুত্রদের উদারতা সাক্ষ্য বহন করেছে কন্যা প্রদানের ক্ষেত্রে। অপর পক্ষ বলেন, নারী লোলুপতা আর চরিত্রহীনতার প্রকাশ পেয়েছে মহামতির দিক থেকে আর পার্থিব উন্নতির জন্য যারা নিজেদের কন্যা ও বোনকে চরিত্রহীনের হাতে স্বেচ্ছায় অর্পণ করতে পারেন তারা নিঃসন্দেহে জঘন্য, ঘৃণ্য ও নগণ্য।

তবে একথা সত্যিই যে, প্রত্যেক রাজপুত্ৰই পাইকারিহারে ঐ পাপ পঙ্কিলে নিমজ্জিত হয়েছিলেন তা নয়। বরং বহু রাজপুত্র বীর তাঁদের বীরত্বের মহিমাকে অক্ষুন্ন রাখতে উল্টো নজির সৃষ্টি করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর যখন মধ্য প্রদেশের গণ্ডোয়ানা দখল করেন এবং সেখানকার বিধবা রাণী দুর্গাবতী যুদ্ধে পরাস্ত হন, কিন্তু তিনি আত্মহত্যা করেন তবুও আকবরের হাতে পড়েননি। মেবারের রানী সংগ্রাম সিংহের পুত্র উদয় সিংহ আকবরের প্রস্তাব সত্ত্বেও তার কন্যাকে সমর্পণ করেননি। যার ফলে আকবর কর্তৃক চিতোর আক্রান্ত হয় ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে। উদয় পলায়ন করেন কিন্তু রাজপুত্র সৈন্যগণ জয়মল্ল ও পুত্রের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। অবশেষে পুত্র ও জয়মল্লকে আকবরের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হতে হয়। ফলে চিতোর আকবরের হাতে এসে যায়। যুদ্ধে পরাজিত রাজপুত্রদের প্রাণ দিতে হল মহামতি আকবরের হাতের ঈশারায়। আর নারীরা হাল চাল বুঝতে পেরে ‘জহর ব্রত’ অর্থাৎ আগুনের চিতার মত করে তৈরি করে তাতেই ঝাপ দিয়ে প্রাণবিসর্জন করলেন। তার প্রমাণ আজ ভূরি ভূরি বিদ্যমান। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে উদয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র প্রতাপ সিংহ পিতার স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি পিতার চেয়েও সাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদীঘাটের যুদ্ধে আকবরের হাতে তিনি পরাজিত হলেন। তারপর বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কাটিয়ে বহু যুদ্ধ করে অনেক কিছু পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন কিন্তু তাঁর সাধের চিতোর অধিকার করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রতাপের এই পরাজয় বিজয়েরই নামান্তর। তিনি বশ্যতা স্বীকার ও কন্যাদানের চিন্তা মুহূর্তের মধ্যেও তার মস্তিষ্কে আসতে দেননি।

প্রতাপের জন্য অনেকে গোঁড়া সংকীর্ণমনা হিন্দু বলে অভিযোগ করেন। কারণ, একবার আকবরের শ্যালক, আকবরের আত্মীয় আবার সেনাপতি মানসিংহ প্রতাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। প্রতাপ মোটেই অতিথির আপ্যায়ন বা সম্মানপ্রদর্শন কিছুই করেননি বরং অপমানের সুরে বলেছিলেন, “যারা মুসলমানকে পিসি, বোন বা কন্যা দিয়েছে তাদের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” মান সিংহের নাম নষ্ট হওয়ায় তিনি বলেছিলেন, “এর কেমন করে প্রতিশোধ নিতে হয় আপনাকে দেখাতে পারি জানেন?” তদুত্তরে প্রতাপ বলেছিলেন, “যাও যাও, তোমাদের পিসে মশাই, ভগ্নিপতি, জামাইদা আকবরকে গিয়ে বলো এবং তাকেও সঙ্গে করে এন।”

প্রতাপের এহেন বীরত্ব আমাদের মতে নিরেট গোঁড়ামি নয় বরং একনিষ্ঠ বীরের বীরত্ব। ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁকে গোঁড়া হিন্দু না বলে ‘নিষ্ঠাবান বীর প্রতাপ সিংহ” বলা উচিত।

তারপর বনে-জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে প্রতাপ সিংহকে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সম্মুখীন হতে হল। তিনি দেখলেন তাঁর আদরের কন্যা ক্ষুধায় কাঁদতে কাদতে ছটফট করতে লাগল। তখন আর ধৈর্যধারণ করতে না পেরে আকবরকে এক লিখিতপত্রে জানালেন আপনার কাছে আমি আত্মসমর্পণ করতে সম্মত। পত্র পেয়ে খুশি হয়ে আকবর সভাসদকে ডেকে বললেন, প্রতাপের ওপর অত্যাচার করতে নিষেধ করে দিন। ঠিক ঐ সময় সভাসদগণের মধ্য হতে জাহাঙ্গীরের শ্বশুর বিকানিরের রাজা রায় সিংহের কনিষ্ঠ সহোদর পৃথ্বীরাজ মর্মাহত হয়ে প্রতাপকে এক পত্রে বললেন-“আমরা রাজপুত্ররা আকবরের অধীনতা স্বীকার করেও এবং তাঁকে কন্যা দিয়ে অধঃপতিত হলেও আপনার জন্য আমরা গর্ব করি। সম্রাট আকবরকে একদিন মারতেই হবে তখন আমাদের দেশে খাঁটি রাজপুত্র বীজ বপনের জন্য আমরা আপনার নিকটেই উপস্থিত হব। রাজপুত জাত আপনার মুখের দিকে চেয়ে আছে।” পত্রটি যে একটি ঐতিহাসিক গবেষণামূলক চিন্তাভিত্তিক দ্বিধাবিদূরক দলিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। তাছাড়া পত্রটির দ্বারা তদানীন্তন রাজপুত্র জাতির বিশ্বাসঘাতকতার এক জঘন্য চরিত্রের পরিচয় প্রতিপন্ন হয়। কিন্তু মহামতি ছিলেন তখন গভীর মোহ নিদ্রায় অচেতন। পিতা-মাতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য তাতে দেশ রসাতলে যাক আর থাক তাতে কিছু এসে যায় না।

যাহোক, এই পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতাপ নতুন করে কর ধারণ করলেন। রাজপুত্রগণ আকবর দ্বারা ভারত ভূমি কর্ষিত করে রাজপুত্র জাতির প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষা করছিলেন বীজ বপনের। কিন্তু কালের চক্র পরিচালিত হয় বিশ্বনিয়ন্তার ইঙ্গিতেই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন