hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

১৬
মহামতির স্বধর্মে বিরোধিতা
বড় বড় আলেম, উলামা, মোল্লা, মুফতি বাদ দিয়ে মহামতি একজন কপট, বিভ্রান্ত মুসলমান মোবারক নাগুবীকে তার উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেছিলেন। আর তারই সন্তানদ্বয় আবুল ফজল ও ফৈজীকেও করেছিলেন উপদেষ্টা। আকবরের ভুলভ্রান্তি চারিত্রিক দুর্বলতা ছেলেদের কাছে ধরাপড়া যে সম্ভব নয় অথবা প্রকাশিত হওয়ার পথেও যে অনেক বাধা তা আকবরের জ্ঞাননুবিক্ষণে ধরা পড়েনি। তাই তিনি এক নতুন ধর্ম সৃষ্টি করলেন, যার নাম ‘দীন-ই-ইলাহী’। একপক্ষের কাছে দারুণভাবে প্রশংসিত আর অপর পক্ষের কাছে তা নিরেট ভণ্ডামি ও আবর্জনার ন্যায় পরিত্যাজ্য বস্তু। মোটকথা নিরপেক্ষ ভূমিকায় দীন-ই-ইলাহী ছিল মহামতি আকবরের স্বধর্মের নিপাত সাধনের এক সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।

ইসলাম ধর্মে আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টির উপাসনা করা শুধু নিষেধই নয় বরং সৃষ্টির কোন উপাসক মুসলমান নয়। তাই হযরত মুহাম্মদ (সা.) সারা জীবনব্যাপী পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন এবং বিশ্বকে জানিয়ে গেছেন উপাসনা একমাত্র স্রষ্টারই জন্য। কিন্তু

(ক) মহামতি তাঁর ‘দীন-ই-ইলাহী’ ধর্মে সূর্য উপাসনার উৎসাহ ও আদেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও সকাল, সন্ধ্যা, দুপুর ও মধ্য রাত্রিতে সূর্যের উপাসনা করতেন।

(খ) সারা বিশ্বের মুসলমানদের মূলমন্ত্র “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহরই প্রেরীত পয়গম্বর। কিন্তু আকবর তার নতুন কালেমাহ’ চালু করলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলীফাতুল্লাহ।” এত বড় আঘাত দান যা মুসলমানদের ওপর কোন বিরুদ্ধবাদী অন্য ধর্মাবলম্বীর পক্ষেও সম্ভব হয়নি তাই হয়েছিলো ‘মহামতির’ সময়ে।

(গ) কুরআন শরীফে মদ ও সুদকে অবৈধ বা হারাম বলা হয়েছে। কিন্তু মহামতির নতুন ধর্মে মদ ও সুদকে বৈধ বলে নির্দেশ এবং উৎসাহ দান করা হয়েছে।

(ঘ) কুরআন শরীফে জুয়া খেলাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু মহামতি তার ধর্মে জুয়া খেলা জায়েয বা বৈধ করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজ খরচে বিরাট একটা পৃথক অট্টালিকা তৈরি করে সেখানে জুয়া খেলার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও জুয়া খেলায় যাদের পুঁজি বা মূলধন থাকত না রাজকোষ হতে তাদের কর্জ বা দেনা দেয়ারও সুব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।

(ঙ) দাড়ি রাখা ইসলাম ধর্মে, ‘সুন্নাত' বা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ। না রাখলে পাপ হয়। কিন্তু দাড়ি রাখাকে বা বিশেষ কোন সুন্নাতকে উপেক্ষা কিংবা অস্বীকার করলে সে ইসলাম বিদ্রোহী বলে বিবেচিত। মহামতি দাড়ি মুণ্ডন বৈধ বলে আইন করলেন এবং তাঁর মাতার মৃত্যুর পরেই মাতার শোকে দাড়ি মুণ্ডন করে আদর্শ স্থাপন করলেন। তার পরদিন থেকে রাজদরবারে যত উচ্চশ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন তারা অনেকে নিজের নিজের দাড়ি মুণ্ডন করে বাদশাহের পদপ্রান্তে উৎসর্গ করলেন। ফলে মহামতি আকবর নিজের ধর্মের ও বুদ্ধির সাফল্যে বেশ আনন্দ উপভোগ করতে লাগলেন।

(চ) প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোরআন ও হাদীসের আইন অনুযায়ী স্ত্রী সংসর্গান্তে ‘ফরয গোসল’ (এক বিশেষ নিয়মে স্নান করা) অবশ্য প্রতিপাল্য। কিন্তু নতুন ধর্মে তা রহিত করা হয় এবং নতুন এক প্রথার প্রচলন করা হয়। গোসল করা ভাল কিন্তু পরে নয় পূর্বে।

(ছ) মহামতি দেশের কল্যাণের জন্য না হলেও নিজের বা রাজপুত্রগণের এবং সভাসদবর্গের সুবিধার্থে এক অভিনব বিবাহ প্রথার প্রচলন করলেন যার নাম ‘মুআ' বা অস্থায়ী বিবাহ। যেমন দুচার দিন বা দু-এক মাসের জন্য একটা বিয়ে করে আবার তাকে তালাক বা বর্জন করা যাবে। বিবাহের নাম দিয়ে এরূপ এক বীভৎস ব্যভিচার প্রথার প্রচলন করে নারীর নারীত্বকে কলঙ্কিত করতে মহামতির মতি কোন সময় কেঁপে উঠেনি।

(জ) ব্যভিচারের সুবিধার্থে, ইসলামের সুচিন্তিত ‘পর্দা প্রথাকে একেবারে রহিত করেন এবং সারা ভারতের মুসলমান হিন্দু ভদ্র রমণীগণের মধ্যে অবগুণ্ঠন যথা ঢিলে পোশাক পরা, মাথার কাপড় উড়না ব্যবহার করা ইত্যাদি যে সভ্য নীতিগুলোর প্রচলন ছিল, মহামতি কঠোর হস্তে নির্দেশ দিয়ে তা নিষিদ্ধ করলেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা লজ্জাশীলতা বা শালীনতা বোধ ছিল। কিন্তু মহামতি নির্দেশ দিলেন-বাজারে বা বাইরে চলাফেরার সময় মাথায় কাপড়, পর্দা অথবা অবগুণ্ঠিতা হওয়া চলবে না।

(ঝ) বার বছরের কম বয়স্ক বালকদের খতনা’ দেওয়া নিষিদ্ধ। সে বড় হয়ে নিজের ইচ্ছায় দিতেও পারে আবার না দিতেও পারে।

(ঞ) মৃত মুসলমানকে কবর দেওয়া সারা পৃথিবীর মুসলমানের একটা সার্বজনীন প্রথা ও ইসলাম ধর্মের নির্দেশ। আর কবর দেবার নিয়ম মৃত দেহটিকে কবরে এমনভাবে শায়িত করা (ভারতে উত্তর-দক্ষিণে) যেন মক্কার কাবা ঘরের দিকে পা-মাথা না থাকে। মহামতি নির্দেশ দিলেন মৃত ব্যক্তির দেহের স্কন্ধে একটা গমের প্যাকেট বা ইট বেঁধে পানিতে ফেলে দাও। আর যদি একান্তই কবর দিতেই হয় তাহলে ভারতের পশ্চিম দিকে কা'বা শরীফ, অতএব সেই পশ্চিম দিকে পা করে মৃত দেহটিকে শায়িত রাখতে হবে।

(ট) ইসলামের আইনে পুরুষদের জন্য প্রকৃত রেশম বা সিল্ক বস্ত্র ও সোনাপরা অবৈধ। নারীর জন্য অবশ্য বৈধ। মহামতি আইন করলেন-পুরুষের জন্য সোনা এবং সিল্ক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়।

(ঠ) মহামতির নতুন ধর্মে গরু, মহিষ, মেষ, উট খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বন্য জন্তু যথা বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ ইত্যাদি খাওয়া চলবে। গোমাংস খাওয়া শুধু নিষেধই ছিল না এমনকি বিশ্ব মুসলিমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘ঈদুল আযহা’তেও গরু ব্যবহার পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।

(ড) মসজিদে আজান ও এক সাথে (জামাতে) নামায পড়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছিল।

(ঢ) পবিত্র মক্কা শরীফে হজব্রত পালন যুগে যুগে সর্বদেশের সচ্ছল মুসলমানের জন্য একবার জরুরি, যাকে বলে ‘ফরয’। হঠাৎ আইন প্রণয়ন করে হজের রাস্তাও বন্ধ করা হল।

(ণ) কুকুর ও শূকর ইসলাম ধর্মে ঘৃণ্য পশু বলে চিহ্নিত। কিন্তু মহামতি তাঁর সময়ে কুকুর ও শূকরকে ‘আল্লাহর কুদরত’ (মহিমা) প্রকাশক পবিত্র বলে ঘোষণা করেন।

(ত) মহামতি আকবর কোরআন বিশ্বাস করতে নিষেধ করতেন। অর্থাৎ মহামতির দুর্গতিপূর্ণ দৃষ্টিতে সারা পৃথিবী নাস্তিকতার শিকার হয়ে ধ্বংসলীলার কারণ হোক।

(থ) প্রত্যেক মুসলমানকে তাঁর মুসলমানত্ব বজায় রাখার জন্য মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং বিচার দিবসের ওপর বিশ্বাস করা একান্ত জরুরি। কিন্তু মহামতি পুনরুত্থান ও বিচারের ব্যবস্থাকে অস্বীকার করতেন।

(দ) মুসলমান ধর্মে আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টির সম্মানের জন্য ‘সিজদা’ বা প্রণিপাত করা অবৈধ ও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু আকবর তাঁর দরবারে প্রজাদিগকে সিজদা করার জন্য আইন প্রণয়নও বলবৎ করেন।

(ধ) মুসলমানদের একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ (আল্লাহ আপনার ওপর শান্তি বর্ষণ করুন) বলার নিয়ম আছে। প্রত্যুত্তরে ‘ওয়া আলাই কুমুস সালাম’ (আপনারও ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলা হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বের মুসলমানদের এই একই পদ্ধতি ছাড়া; দ্বিতীয় কিছু নেই।

মহামতি সালাম দেয়ার প্রথার বিলোপ সাধন করে তার পরিবর্তে ‘আল্লাহু আকবর’ বলার নিয়ম চালু করেছিলেন। তার উত্তরে ‘জাল্লা জালালাহু’ বলা হতো। তখন হিন্দু প্রজাগণ তাঁর কাছে নিবেদন করলেন, সম্রাট! আপনার কাজকর্ম দেখে সমস্ত হিন্দুই আপনার ওপর সন্তুষ্ট। তাই হিন্দুরা আপনাকে দিল্লিশ্বর ও জগদীশ্বর বলে। কিন্তু আপনি সালাম তুলে দিয়ে আবার আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? অতএব ওটাও তুলে দিন। তখন আকবর হিন্দু প্রজাবর্গের নিশ্চিন্ত করতে বললেন- মুসলমানদের জন্য আমিই স্বয়ং আল্লাহ হয়ে প্রকাশিত হয়েছি। অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ মানে আকবরই আল্লাহ। অতঃপর তার অনুগত হিন্দু প্রজাগণ আবার অভিযোগ করলেন- আল্লাহ শব্দটা হিন্দুবিরোধী। অতএব ওটাকেও তুলে দিন। আকবর তাই করলেন। সারা দেশে ঘোষণা করে দিলেন আজ থেকে ‘সালাম’ বা ‘আল্লাহু’র পরিবর্তে 'আদাব' শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এটাই হল মহামতির মহাসিদ্ধান্ত।

(ন) যীশুখৃস্টের সঙ্গে যেমন ‘খৃস্টাব্দ’ বিজরিত তেমনি ‘হিজরি’ সাল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু প্রজাবৃন্দ ‘দিল্লিশ্বরের নিকট আবেদন করলেন- আমরা আপনার উদারতায় মুগ্ধ। আপনাকে হিন্দুর মত মনে করে আমরা আপনার সঙ্গে সর্ববিষয়ে মিল ও মিলনের পথে একমত। কিন্তু গণ্ডগোল ভারতের চিরদিনের প্রথা ঐ ‘হিজরি সন’। যতদিন ভারতে হিজরি সন থাকবে ততদিন মুহাম্মদেরই নাম হতে থাকবে অথচ আমরা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতএব আমাদের জন্য এক পৃথক সালের ব্যবস্থা করা হোক। তাই করা হল। পৃথক সালের নাম রাখা হল ‘ইলাহি’ বছর। আমাদের বাংলা সন অনেকের মতে আকবরেরই ঐ সন। হিজরি সনের সঙ্গে প্রায় এক যুগের পার্থক্য অর্থাৎ ১৪ বছর। তাতে অনেক হিন্দু প্রজাবৰ্গ তাদের কৃতকার্যতার দরুন মহামতির মহত্বের প্রতি খুবই আস্থাবান হলেন। যদি রাজপুত্র বা হিন্দুদেরই কেউ দিল্লির রাজা হয়ে ঐ রকম ইসলাম ধর্মের উৎপাটন করতে সাহসী হতেন তাহলেও এতটা মারাত্মক ফল দেখা দিত না। কারণ মুসলমান সম্প্রদায় তাতে বিদ্রোহী হয়ে উঠত। কিন্তু কোন মুসলমান অথবা মুসলমান নামধারী ব্যক্তির দ্বারা এ কীর্তি করাতে পারলে দোষ যা হবার মুসলমানেরই হবে।

এখানে বেশ প্রমাণ হচ্ছে আকবর আসলে ইসলাম ধর্ম বিধ্বংসী কতগুলো চরমপন্থী মানুষের হাতের পুতুল ছিলেন।

(প) মুসলমানদের মসজিদ উপাসনালয়গুলোকে অনেক গুদামঘর ও হিন্দু প্রজাদের ক্লাবঘরে রূপান্তরিত করেছিলেন।

(ফ) ইসলাম ধর্ম নিঃশেষিত হতে পারে কিনা তা পরীক্ষার জন্য কিছু মসজিদ হিন্দু প্রজারা ভেঙে ফেলে সেই স্থানে মন্দির নির্মাণ করেন। আকবরের নিকট প্রতিবাদ করলে তিনি যুক্তি দেখালেন, “মুসলমানদের এ মসজিদগুলো সত্যিকারের প্রয়োজন নিশ্চয়ই ছিল না। যদি থাকতো তাহলে ভাঙা সম্ভব হতো না। মন্দিরের প্রয়োজন ছিল তাই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদও ধর্মস্থান আর মন্দিরও ধর্মস্থান। একটি ধর্মস্থান ভেঙে অধর্মের কিছু গড়ে উঠলে প্রতিকার করা যায় কি না বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ধর্মস্থানের পরিবর্তে ধর্মস্থান গড়ে উঠেছে। তার পরেই মসজিদ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে নতুন মসজিদ নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

(ব) মুসলমান ধর্মের হৃৎপিণ্ডপ্রায় পবিত্র কুরআন ও হাদীস শিক্ষা, শিক্ষালয় বা শিক্ষাদাতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আকবর সবচেয়ে মারাত্মক ও কুৎসিত কর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অর্থাৎ ইসলাম সংক্রান্ত শিক্ষার চির অবসানই ছিল আকবরের উদ্দেশ্য। এক কথায় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যা নির্দেশ বা নিষেধ করেছেন, তিনি যেন তার সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেমেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন মুসলিম বিদ্বেষী অমুসলমান শাসকও যা কল্পনা করেননি, মহামতি তা বাস্তবে পরিণত করার কত পাকাপাকি ব্যবস্থা করেছেন এত আলোচনার পর সে কথা সহজেই অনুমেয়।

অতএব উপযুক্ত ২৩টি উদাহরণে বোঝার কোন অসুবিধা নেই যে, আকবর ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’ ছিলেন অথবা নামধারী ছদ্মবেশী মুসলমান ছিলেন। মনে করা যাক ‘ক’ একজন হিন্দু কিন্তু তিনি নিজ ধর্মে উদাসীন এবং পর ধর্মের শত্রুতা করেন না। অতএব তিনি একজন উৎকৃষ্ট হিন্দু নন। ‘খ’ একজন হিন্দু। তিনি নিজ ধর্মের ধার্মিক কিন্তু অপর ধর্মের শত্রু। অতএব তিনিও একজন নিকৃষ্ট। ‘গ’ একজন হিন্দু। তিনি নিজ ধর্মে আস্থাবান, কিন্তু অপর ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ধ্বংসকামী নন। অতএব তিনি একজন উক্তৃষ্ট হিন্দু ভদ্রলোক। 'ঘ' একজন হিন্দু। তিনি নিজ ধর্ম পালনকারী এবং অপর ধর্ম বা সম্প্রদায়েরও উন্নতি কামনা করেন। অতএব তিনি আরও উৎকৃষ্ট বা উচ্চতর। 'ঙ' একজন হিন্দু। তিনি নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান। অনিষ্ঠাবান হিন্দুদের তিনি ভাল করে গড়ে তুলতে চান এবং অপর ধর্ম বা সম্প্রদায়েরও উন্নতি কামনা করেন। তিনি নিঃসন্দেহে আরো উচ্চস্থানীয় অর্থাৎ সর্বোৎকৃষ্ট। ‘চ’ একজন হিন্দু। পরে তিনি অপর ধর্মে ধর্মানতরিত হন। তিনি হিন্দু জাতির শত্রু। অতএব তিনি নিকৃষ্ট। ‘ছ’ একজন হিন্দু। তিনি হিন্দু বলে পরিচয় দেন কিন্তু বেদ, পুরাণ বা গীতায় অবিশ্বাসী এবং পৃথিবী হতে ওগুলো মুছে ফেলার জন্য সমস্ত শক্তি অধীনস্থদের ওপর প্রয়োগ করেন। তিনিই হচ্ছেন নিকৃষ্টতম এবং বিশ্বাসঘাতকের দলে শীর্ষস্থানীয়। এক্ষণে আকবরের অবস্থাও ঠিক তাই কি না নিরপেক্ষ চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবীরা চিন্তা করবেন।

কিন্তু একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, উপযুক্ত তথ্যগুলো যদি সত্য হয় তবেই আকবর ঐ অভিযোগে অভিযুক্ত কিন্তু যদি কোন ইতিহাসে তার প্রমাণ না থাকে তাহলে অভিযোগের অধিকার আধুনিক ঐতিহাসিকদেরই বা থাকবে কী করে। কিন্তু উল্লেখ করা যেতে পারে ‘এছাবাতুন নবুয়ত’, ‘রিসালায়ে তাহলীলিয়া’, ‘মুনতাখাবুত্ত ওয়ারিখ’, 'Mujaddis conception of Towhid', 'Awn-ul-Mabud' এবং 'Kalematul Hoque', প্রভৃতি অসংখ্য গ্রন্থ আকবরের কীর্তিকলাপের সাক্ষী স্বরূপ আজও বেঁচে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। যেগুলো পড়ে অব্যর্থ সত্য ইতিহাসের উৎস সন্ধানে উৎসাহের খোরাক পাওয়া যায়। এছাড়া আরও বহু পত্র-পত্রিকা আমাদের দেশে ছোট-বড় লাইব্রেরিতেও মজুদ রয়েছে, যেগুলো হিন্দু, মুসলমান ও খৃস্টান প্রমুখ ঐতিহাসিকদের তথ্য, তিরস্কার ও অনেক তত্ত্বের মিশ্রণে মূল্যবান মূলধন।

এত কাণ্ড করেও আকবরের সমস্ত দোষ কাটাকাটি করে বিরাট ভগ্নাংশের শেষে উত্তর মাত্র '১' অর্থাৎ একটিই কথা মহামতি আকবর! মুসলমান বাদশাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আকবর! কিন্তু ঐ কণ্ঠস্বর কাদের? আধুনিক নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের মতে, যারা জ্ঞাতাবস্থায় সারা বিশ্বের তথা ভারতের মুসলমানদের চরিত্রহীন ধর্মহীন, ব্যভিচারী এবং ধর্মান্তরিত অবস্থায় দেখার প্রতীক্ষায় আছেন এ আওয়াজ তাদেরই।

আরও প্রমাণ হবে, সবচেয়ে অপরাধ, অপমান, বদনাম আর দুর্নামের এভারেস্ট যার মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই আহত ভাগ্য আওরঙ্গজেব ওরফে আলমগীরের ইতিহাস যদি আকবরের পাশাপাশি আলোচনা করা হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন