মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
নামটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জন্মেছিলেন বাংলা সনের ১২১৮ সালের ২৫ ফাগুন খৃষ্টাব্দ হিসেবে উনিশ শতকেই তাঁর জন্ম। তার সবচেয় বড় পরিচয় তিনি বাংলার প্রাচীন কবি, বিশেষত দীনবন্ধু ও বঙ্কিমের গুরু পথপ্রদর্শক। বাড়ি কাচড়াপাড়া। কেউ কেউ বলেন প্রথমে লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিলেন এবং চরিত্র দোষেদুষ্ট ছিলেন তাই তার আত্মীয়গণ তাঁর মাত্র পনের বছর বয়সেই বিয়ে দেন কিন্তু স্ত্রীকে তিনি কোনদিন অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার সুযোগ দেননি। আশুতোষ দেব লিখেছেন, বাল্যকালে তিনি লেখাপড়ায় আদৌ মনোযোগী ছিলেন না.....১৫ বছর বয়সে তার বিবাহ হয়। পত্নী দুর্গামণি দেবীর সঙ্গে তিনি আজীবন সংসার করেননি.......১২৩৭ বঙ্গাব্দে সাপ্তাহিক ‘সংবাদ প্রভাকর’ বের করেন। ১২৪৬ হইতে দৈনিকরূপে বের হয়। সংবাদ প্রভাকর ছাড়াও ‘সংবাদ রত্নাবলী’ ‘পাষাণ্ড পীড়ন’ প্রভৃতি তাঁর পরিচালিত সাময়িক পত্রাদি ছিল। তিনি বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধুর গুরু।” (দ্রঃ নতুন বাংলা অভিধান, পৃঃ ১১১৫)। বঙ্কিম যে তার পদাঙ্ক অনুসরণকারী তার প্রমাণে বঙ্কিমের লেখাগুলোই দ্রষ্টব্য “মধুসূদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ শিক্ষিত বাঙালির কবি-ঈশ্বর গুপ্ত বাংলার কবি, এখন আর খাঁটি বাঙালির কবি জন্মে না জন্মিবার যো নাই-জন্মিয়া কাজ নেই।” (দ্রঃ বঙ্কিমচন্দ্রের ঈশ্বরচন্দ্রগুপ্তের জীবন চরিত ও কবিত্ব)। গুপ্তের আরও দুইজন বিশেষ শিষ্য ছিল যেমন রঙ্গলাল, দ্বারকানাথ অধিকারী। উপরোক্ত চারজন শিষ্যের মধ্যে বঙ্কিম ভারত সম্মানের উচ্চতম শৃঙ্গে উপবিষ্ট আর সাহিত্য সম্রাট উপাধিপ্রাপ্ত এবং তিনি নাকি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজরোপক। তাই তাঁর রচিত বন্দেমাতরম গীত যেন সারা ভারতের মূলমন্ত্র। তাই আমরা ভারতবাসী তাঁর লেখা ইউনিভারসিটির সর্বোচ্চ শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীদের কত কায়দায় কত ব্যাখ্যায় পড়ি পড়াই যা হয়ত বঙ্কিম নিজেও জানতেন না।
এখন গুরুদেব পথপ্রদর্শক ঈশ্বর গুপ্তের কিছু লেখার নমুনা দেওয়া দরকার অবশ্য এই গ্রন্থের ৮০ পৃষ্ঠায় দীনবন্ধু ও গুপ্তের লেখায় দুটি উদাহরণ দেওয়া আছে।
একেবারে মারা যায় যত চাপ দেড়ে।
হাঁস ফাঁস করে যত প্যাজ খোর নেড়ে।।
বিশেষতঃ পাকা দাড়ি পেট মোটা ভুড়ে।
রোদ্র গিয়া পেটে ঢোকে নেড়া মাথা ফুড়ে।।
হাদু বাড়ী খেনু ব্যাল, প্যাটেতে মাখিনু ত্যাল
নাতি তবু নিদ নাহি হয়।
এঁদে দেয় ফুফু নানী, কলুই ডেলের পানি,
কাঁচা ক্যালা কেচুর ছালন।।
আসমানে পানি নাই পেঁজিতে কি নোখে ভাই বরাম্মনে পুছকর গিয়া।........
মুসলমান বিদ্বেষের উদাহরণ মুসলমানদের জন্য আর প্রয়োজন নেই এইটুকুই যথেষ্ট। দেশপ্রেমিক অমুসলমান শিক্ষিত পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি মুসলমানরা যখন সারা ভারতে মরা ও মারার ভূমিকায় উন্মত্ত যখন সারা ভারতে সৈন্যদের মধ্যেও বিদ্রোহের দাবানল হুহু করে জ্বলছে তখন তিনি লিখলেন, “কয়েকদল অধার্মিক অবাধ্য অকৃতজ্ঞ হিতাহিত বিবেচনাবিহীন এতদ্দেশীয় সেনা অধার্মিকতা প্রকাশপূর্বক রাজবিদ্রোহী হওয়াতে রাজ্যবাসী শান্ত স্বভার অধন সধন প্রজা মাত্রই দুঃখিত” ইত্যাদি।
তিনি আরও লিখেছেন, “যবনাধিকারে আমরা সর্বদাই স্বাধীনতাপ্রাপ্ত হই নাই, সর্বদাই অত্যাচার ঘটানো হইত। ...এক্ষণে ইংরাজাধিকারে সেই মনস্তাপ একে কালেই নিবারিত হইয়াছে। আমরা অনায়াসেই ‘চার্চ’ নামক খৃষ্টীয় ভজনা মন্দিরের সম্মুখেই গভীর স্বরে ঢাক, ঢোল, কাড়া, তাসা, নহবৎ, সানাই, তুরী, ভেরী, বাদ্য করিতেছে, ছ্যাডাং শব্দে বলিদান করিতেছি, নৃত্য করিতেছি, গান করিতেছি, প্রজা পালক রাজা তাহাতে বিরক্ত মাত্র না হইয়া উৎসাহ প্রদান করিতেছেন। মুসলমান জাতি যখন যুদ্ধরত এবং হিন্দুদের দরজায় দরজায় যুদ্ধের করুণ আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তখন ঐ লেখক, কবি ও কয়েকটি পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক হিন্দু জাতির উদ্দেশে লিখলেন, “জগদীশ্বর আপন ইচ্ছায় বিদ্রোহী দিগে শাসন করুন। যাহারা বিদ্রোহী হন নাই তাহাদিগের মঙ্গল করুন, কোন কালে যেন তাহাদের রাজভক্তির ব্যক্তিক্রম না হয়। হে ভাই। আমাদের শরীরে বল নাই, মনে সাহস নাই, যুদ্ধ করিতে জানি না। অতএব প্রার্থনাই আমাদের দুর্গ, ভক্তি আমাদের অস্ত্র এবং নাম জপ আমাদিগের বল এত দ্বারাই আমরা রাজ সাহায্য করিয়া কৃতকার্য হইব।” ঐ সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮৫৭ সালে যখন হাজারে হাজারে মানুষ আর্যদের জন্য মরছেন ও মারছেন মে মাসের বিশ তারিখে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে লিখলেন একটি মনমাতানো কবিতা, “চিরকাল হয় যেন বৃটিশদের জয়, বৃটিশের রাজলক্ষ্মী, স্থির যেন রয়।” আরও লেখা হয়েছে “উত্তর পশ্চিম প্রদেশের যে সকল স্থানে বিদ্রোহানল প্রজ্বলিত হইয়াছে তাবত স্থানেই যবনেরা অস্ত্র ধারণ পূর্বক নিরাশ্রয় সাহেব বিবি, বালক বালিকা এবং প্রজাদিগের প্রতি হৃদয় বিদীর্ণকর নিষ্ঠুরাচরণ করিয়াছে.....যবনদিগের অন্তঃকরণে কী কারণে গভর্নমেন্টের প্রতি বিরূপ ভাবের আবির্ভাব হইয়াছে তাহা আমরা কিছুই নিরূপণ করিতে পারিলাম না।” (দ্রঃ সংবাদ প্রভাকর ২৯-৬-১৮৫৭)। মুসলমানদের ওপর যখন যথেষ্টভাবে ইংরেজ গুলি করে পাইকারিভাবে হত্যা করতে লাগল তখন সমবেদনা বা মৌনতার বদলে লেখা হয়েছিল “বন্য পশু শিকার নিমিত্ত শিকারিগণ পরমানন্দে দলবদ্ধ হইয়া গমন করে শেতাঙ্গ সৈন্যগণ সেই রূপ পুলকিতচিত্তে সিপাহি শিকারে গমন করিতেছে, নরাধম অকৃষ্ণদের আর রক্ষা নেই।” (দ্রঃ ২২-৬-১৮৫৭, সংবাদ প্রভাকর) তাতীয়াতোপী নানা সাহেব ও ঝাঁসীর রাণী তিনজনই অন্তত মুসলমান নন তবু সে যুগের ঐ রকম সম্পাদক আর অধীন কবি সাহিত্যকের দল তাদেরও বিরাট অপরাধ আবিষ্কার করেছিলেন তা হচ্ছে জগদ্বীশ্বর ইংরেজ সরকারের সঙ্গে লড়াই করা আর ইংরেজদের ছেলেমেয়েদের হত্যা করা। তাই লেখা হয়েছিল–
নানা পাপে পটু নানা নাহি শুনে না, না।
অধর্মের অহ্মারে হইয়াছে কানা।।
ভাল দোষে ভাল তুমি ঘটালে প্রমাদ।
আগেতে দেখেছ ঘুঘু শেষে দেখ ফাঁদ।।
এমনিভাবে ঝাঁসীর রাণীর রক্তাক্ত মৃত্যুর উপর যে কৌতুকময় কলঙ্ক সীমাহীনভাবে আরোপ করা হয়েছে তা কোন শিক্ষিত মানুষ ক্ষমা করতে পারে। যথা
“হ্যাদে কি শুনি বাণী, ঝাঁসীর রাণী
ঠোট কাটা কাকী।
মেয়ে হয়ে সেনা নিয়ে সাজিয়াছে নাকি।
নানা তার ঘরের ঢেকি।
হয়ে শেষে নানার নানী মরে রাণী
দেখে বুক ফাটে।
কোম্পানীর মূলকে কি বাবুগিরি খাটে!”
আগেই বলা হয়েছে মুসলমানদের সঙ্গে কতক হিন্দুও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তাই সেই সময় প্রচারিত হল “নানা পাপে নানা দণ্ডতার লবে। এ বলে কি হিন্দু মাত্র দোষী হয়ে রবে? বিশেষ বাঙ্গালী ভেতো আমরা সবাই কোন কালে কোনরূপ দোষমাত্র নাই। জয় হোক বৃটিশের, বৃটিশের জয়, রাজ অনুগত যারা তাদের কি ভয়!”
১৮৫৭ সালে ঐ ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে সংবাদ প্রভাকরে রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি জানানো হল “এই ভারত কিসে রক্ষা হবে ভেবনা মা সে ভাবনা। সেই “তাতীয়তোপীর” মাথা কেটে আমরা ধরে দেব “নানা”। এইবার শেষ করছি সাংঘাতিক সংবাদ দিয়ে— স্বাধীনতা বিপ্লবী বন্দিদের যখন ফাঁসি হতে লাগল তখন “সংবাদ প্রভাকর” ইংরেজ সরকারকে সন্তুষ্ট হয়ে সাবাস দান করতেও এতটুকু লজ্জাবোধ করেননি (দ্রঃ ২২-৬-১৮৫৭ ঘোষ, পৃঃ ২৪৩ সংবাদ প্রভাকর)।
উপরের এত কাণ্ড পড়ার পর ঈশ্বর চন্দ্র সম্বন্ধে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমের একটি বিশুদ্ধ মন্তব্য।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্বন্ধে বঙ্কিম বাবু যেসব কথা লিখেছেন তার তিন টুকরো কথা এখানে উদ্ধৃতি দেওয়া হচ্ছে। (১) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত খাঁটি জিনিস বড় ভাল বাসিতেন, মেকির বড় শত্রু; (২) অনেক সময়েই (কবির) ইয়ারকি বিশুদ্ধ........পরের প্রতি বিদ্বেষ শূন্য এবং..................। (৩) এতটা প্রতিভা ইয়ারকিতেই ফুরাইল।” (দ্রঃ আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, পৃঃ ২৩০)।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।