hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

২৭
নবম অধ্যায় ভারতীয় রাষ্ট্র মঞ্চে গজনী ও ঘুর শাসকদের অভিযান
সবুক্তগীন-নবম শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রবল পরাক্রান্ত তুর্কীরা আলপ্তগীনের নেতৃত্বে স্বাধীন রাজত্ব স্থাপন করেন। সবুক্তগীন এই আলপ্তগীনেরই ক্রীতদাস। আলপ্তগীনের মৃত্যুর পর ৯৭৭ খৃঃ ২০ এপ্রিল সবুক্তগীন গজনীর সিংহাসনে বসেন। আফগানের পার্বত্য এলাকায় রাজশক্তি দৃঢ় করে তিনি শাহীরাজা জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। সবুক্তগীনের কয়েকজন কর্মীকে বন্দি করার অপরাধে জয়পালের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি যুদ্ধ যাত্রা করলে জয়পাল আজমীর, কলিঞ্জর, কনৌজ প্রভৃতির রাজাদের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জয়লাভ করতে পারলেন না। তিনি ৯৯৭ খৃঃ পরলোকগমন করেন।

সুলতান মামুদ-সুবক্তগীনের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র সুলতান মামুদ সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি ৯৯৭ খৃস্টাব্দ থেকে ১০৩০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনা করেন।

সুলতান মামুদ খুব উৎসাহী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ সৈন্যাধ্যক্ষের অন্যতম এবং একজন শ্রেষ্ঠ বিতেজা ছিলেন। তাঁর সতেরবার ভারত আক্রমণ করার পশ্চাতে ভারতীয় রাজাগণ বন্ধক সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ ও তাঁর আনুগত্য অস্বীকার এবং ভারতীয় মিত্রবর্গকে উৎপীড়ন প্রভৃতি অনিবার্য কারণ। ১০০০ খৃস্টাব্দে মামুদের প্রাথমিক অভিযানের ফলস্বরূপ সীমান্তস্থিত কয়েকটি দুর্গ অধিকৃত হয়। পরের বছর তিনি জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে জয়পাল তাঁর পুত্র পৌত্রসহ বন্দিত্ব বরণ করে অবশেষে পরাজয়ের গ্লানি হতে আত্মরক্ষার নামান্তরে আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন। ১০০৫ খৃস্টাব্দে মুলতান অধিকৃত হয়। অতঃপর মুলতানের শাসনকর্তা দাউদকে বিদ্রোহাত্মক কার্যে সহায়তার অভিযোগে মামুদ জয়পালের পুত্র আনন্দ পালের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ অভিযান প্রেরণ করেন। আনন্দপালের সন্ধিনীতির ফলে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েও পরিশেষে মামুদের জয় হয়। ১০০৯ খৃস্টাব্দে তিনি নারায়ণপুরের রাজাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১০১২ খৃস্টাব্দে থানেশ্বরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে তাহা অধিকার করেন। ১০১৮ খৃস্টাব্দে এক বৃহৎ সেনাবাহিনীর পুরো ভাগ থেকে তিনি গজনী রওনা হলেন। এই সময় বারনের রাজা ১০ হাজার সৈন্যসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাঁর অধীনতা স্বীকার করেন। এক কথায় তাঁর সুদীর্ঘ ৩৩ বছর কালব্যাপী ক্রমাগত যুদ্ধে তিনি একবারও পরাজয় বরণ করেননি। সুলতান মামুদের ইতিহাসে সোমনাথ মন্দির অভিযান এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১০২৫ খৃস্টাব্দের শেষাংশে গজনী ত্যাগ করে সুলতান মামুদ ১০২৬ খৃস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি সোমনাথের দ্বারে উপস্থিত হলে হিন্দুরা প্রবল বাধা দান করেও পরাজিত হয়। এই সোমনাথকে কেন্দ্র করেই আধুনিক চিরাচরিত ইতিহাসে সুলতান মামুদের ন্যায় স্বচ্ছ চরিত্র বীরের ওপর “ভারতীয় মন্দিরসমূহ ধ্বংস করে ইসলাম ধর্ম প্রচার”, মূর্তিভঙ্গ, অর্থ লোলুপ, হন্তা ও লুণ্ঠনকারী ইত্যাদি অসংখ্য অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। অথচ প্রকৃত ইতিহাসে এই সমস্ত ধারণার একটিও সত্য নয়। তার ভারত আক্রমণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার। তদানীন্তন সময়ে ভারতের ধন-সম্পদ এমনকি অনেকের মতে জলদস্যুরও তাদের লুণ্ঠিত অর্থ সোমনাথ মন্দিরে গচ্ছিত রাখত। এই সব নানা কারণে সোমনাথ যখন মন্দিররূপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তখন আর মামুদের আক্রমণে কোন বাধা ছিল না।

ডাঃ ঈশ্বরী প্রসাদও এ কথার সমর্থনে বলেন, “The temples of India which Mahmud raided were store houses of enormous and untold wealth and also some of these were political centres." অর্থাৎ-মাহমুদ ভারতের যে মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন তাতে বিপুল ও বর্ণনাতীত ধনরত্ন পূর্ণ ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়া কলাপের কেন্দ্রস্থল। প্রত্যক্ষদর্শী বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল-বিরুনী বলেন, “বিদেশী বণিকদের কাছে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত সামগ্রীর বিক্রয়লব্ধ অর্থে যে সমস্ত হিন্দু ধনী হয়েছিল, তাদের দানের প্রাচুর্য দিয়েই এই সমস্ত ধনরত্ন সঞ্চিত হয়েছিল।”

অতএব ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে তিনি মন্দির ধ্বংস করেছিলেন একথা আদৌ সত্য নয়। বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার ডব্লিউ হেইগ বলেন, “His religious policy was based on toleration and though zealous for islam, he maintained large body of Hindu troops and there was no reason to believe that conversion was a condition of their services." অর্থাৎ তার ধর্মীয় নীতি সহিষ্ণুতার ওপর গড়ে উঠেছিল এবং যদিও ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে তাঁর উৎসাহ যথেষ্ট ছিল তথাপি তিনি এক বিরাট হিন্দু সৈন্যদল পোষণ করতেন। একথা বিশ্বাস করার কোন হেতু নেই যে, ধর্মান্তরিতকরণই এই কাজের মূল উদ্দেশ্য। Prop. Habib বলেন, “The non religous character of his expedition will be abvious to the critic who has grasped the salient fetures of the age. It is impossible to read a religious motive in them" অর্থাৎ সমালোচকদের কাছে তাঁর অভিযানের ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতীয়মান হবে, যদি তারা যুগ ধর্মের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। এর মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনার বাস্তবিকই অভাব ছিল।

সুলতান মামুদের ধর্মনীতি সম্বন্ধে মিঃ এলফিনষ্টোন বলেন, “এরকম ঘটনা কোথাও দেখা যায়নি যে, যুদ্ধ ব্যতীত কোথাও কোন হিন্দুকে তিনি প্রাণদণ্ড দান করেছেন। তার সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে তিলক রায়, হাজারী রায় এবং সোনীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি গজনীতে হিন্দু সংস্কৃতি এবং সংস্কৃত সাহিত্যের উৎকর্ষ বিধানের জন্য একটি কলেজ ও একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্মান্ধ হলে এ সমস্ত কাজ কী করে তার দ্বারা সম্ভব হতো? উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতে হিন্দু রাজন্যবর্গ ও মধ্য এশিয়ার মুসলমান রাজাদের সাথে তার ব্যবহারের কোন তারতম্য ছিল না।

তদুপরি ভারত অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মন্দির ধ্বংস ও লুণ্ঠনের জন্য যে সমস্ত অভিযোগকারী তাকে লুণ্ঠন প্রিয় ও হিন্দু বিদ্বেষী বলে প্রচার করতেন বা আজও করেন তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এ সমস্তই যুদ্ধের ন্যায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়েছিল এবং তাঁর পূর্ববর্তী ও তদানীন্তন পৃথিবীতে ইহা আদৌ অসঙ্গত ছিল না। তদানীন্তন প্রচলিত নীতি অনুসারে বিজিত জাতির লুণ্ঠিত ধন সম্পত্তিতে বিজয়ী সৈন্যদলের ন্যায্য অধিকার স্বীকার করা হতো। মামুদ এই প্রচলিত নিয়ম পালন করেছেন মাত্র। এটা তাঁর নতুন কিছু আবিষ্কার নয়।

মামুদের চরিত্র-আধুনিক সহজলভ্য ইতিহাসে সুলতান মামুদের চরিত্রে যে সমস্ত কলঙ্ক আরোপ করা হয়েছে তা অনেকটাই অবিজ্ঞতাপ্রসূত ও স্বকপোলকল্পিত মন্তব্য ছাড়া কিছু নয়। সামগ্রীকভাবে তিনি ছিলেন দেহ-মনে নানাবিধ গুণের সমাবেশে অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যবহারিক চরিত্র ছিল অত্যন্ত মধুর ও উদার।

একবার এক দরিদ্র হিন্দু প্রজা সম্রাটের কাছে অভিযোগ নিয়ে এলেন, সম্রাটের ভাগ্নে নাকি তাঁর অসহায় স্ত্রীর ওপর প্রতি নিয়ত পৈশাচিক অত্যাচার চালায়। সম্রাট তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে নির্দেশ দিলেন এবার যখনই তাঁর ভাগ্নে তার বাড়িতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন সম্রাটকে তা অবগত করান। তার হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন, এটা দেখালেই যে কোন মুহূর্তেই রাজভৃত্যরা তাকে সরাসরি সম্রাটের কাছে পৌঁছে দেবে। তাই সেদিন রাতে সম্রাটের ভাগ্নে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হল। হিন্দু প্রজা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। সে এবার পরখ করবে মুসলমান বাদশাদের ইসলামিক বিচার পদ্ধতি। তৎক্ষণাৎ বাদশাহের নিকট খবর পৌঁছালো বাদশাহ তরবারি হাতে সেই দরিদ্র প্রজার বাড়িতে উপস্থিত হলেন। বাদশাহ এক টিমটিমে আলোয় দেখলেন এক উন্নতমস্তক যুবক ঘরের ভেতর হিংস্র মূর্তিতে দাড়িয়ে আছে। তিনি ইশারায় আলোটি নিভিয়ে দিতে বলে উলঙ্গ তরবারী দিয়ে পেছন দিক থেকে এক চোটে তাকে দ্বিখণ্ডিত করলেন, তারপর গৃহকর্তাকে আলো জ্বালাতে নির্দেশ দিয়ে এক গ্লাস জল চাইলেন। গ্লাসটি বসে তিন নিঃশ্বাসে শেষ করলেন। অতঃপর দুরাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন, “ওগো আল্লাহ, আমি যে তোমার পছন্দনীয় ইসলামের নিয়মানুযায়ী আমার এই হিন্দু প্রজার বিচারের ভার নিজ হস্তে সুসম্পন্ন করতে পারলাম তার জন্য তোমার অশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।" তার হিন্দু প্রজা তাঁকে আলো নেভানো ও জলপান করার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘আবল্য স্নেহ সিক্ত ভাগ্নের শিরোচ্ছেদের পথে মায়া মমতার কোন বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্যই আলো নেভানোর নির্দেশ! আর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যথক্ষণ পর্যন্ত না আপনার অভিযোগের সুবিচার করতে পারছি ততক্ষণ জল স্পর্শ করব না। তাই এর মাথা কেটেই জলপান করতে চেয়েছিলাম কারণ আমি তখন পিপাসায় কাতর ছিলাম। আরও অবাক হওয়ার কথা এই হতভাগ্য যুবক আমার কোন ভাগ্নে নয়, সামান্য একজন রাজকর্মচারী মাত্র।’ ইসলামের এহেন বিচার পদ্ধতি দেখে সম্রাটের হিন্দু প্রজা সেদিন আশ্চর্যান্বিত হয়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি নিয়মিত কোরআন পাঠ ও মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়তেন। শাহ নামা রচয়িতা কবি সম্রাট ফিরদৌসী মহাপণ্ডিত আলবিরুনী, ঐতিহাসিক উৎবী, দার্শনিক ফারাবী প্রমুখ মনীষীর দ্বারা তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত থাকত।

মুহাম্মদ ঘুরী-সুলতান মামুদের মৃত্যুর পর একাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে গজনী বংশের অভ্যন্তরীণ সুযোগ নিয়ে ১১৭৩ খৃস্টাব্দে গিয়াসুদ্দিন ঘুরী ও তার ভাই মৈজউদ্দিন ঘুরী ঘুর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মৈজউদ্দিন ইতিহাসে মুহাম্মদ ঘুরী নামে খ্যাত। দ্বাদশ শতাব্দীর চতুর্থ ভাগে মুহাম্মদ ঘুরী তাঁর ভারত অভিযান শুরু করে প্রথমে মুলতান, পেশোয়ার, লাহোর, পাঞ্জাব প্রভৃতি অধিকার করার পর তারাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বিরাজের কাছে পরাজিত হলেও দ্বিতীয় যুদ্ধে ১১৯২ খৃস্টাব্দে পৃথ্বিরাজকে পরাজিত ও নিহত করে উত্তর ভারতে মুসলমানদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন