মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বর্তমানে আমাদের দেশে ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে (যা দেশ বিভাগের পূর্বাহ্নে ছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষ) যেসব ইতিহাস পড়া বা পড়ানো হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ইংরেজি প্রভাবে প্রতিষ্ঠিত। সুচতুর ইংরেজরা ভারতবর্ষে যখন সুচ হয়ে ঢুকেছিল তখন ভারতবর্ষ ছিল মুসলমানদের শাসনাধীন এবং যখন ইংরেজরা ছলে বলে, কলে-কৌশলে মহা শক্তিধর হয়ে আত্মপ্রকাশ করে ভারতকে নিজেদের বুটের তলে চেপে ধরতে চেয়েছিল সেও মুসলমানদের শাসনকালে। কীভাবে ও কেমন করে তা সম্ভব হয়েছিল সে আলোচনা পরে আসছে। তবে ইংরেজরা বুঝেছিল মুসলিম জাতি মণিহারা ফণির মত দিশেহারা হয়েছে এবং যে মাটি, যে যশ, যে সুযোগ, যে কৃতিত্ব তাদের হাত ছাড়া হয়েছে তারা প্রতি মুহূর্তে তার প্রতিশোধের প্রতিক্ষায় থাকবেই।
ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমান মূল জাতি দুইটি ভারতের ইতিহাসে, ভারতের আকাশে-বাতাসে, অতীতে বর্তমানে ভবিষ্যতে প্রাণ আর দেহের মত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বা আছে। অন্যান্য জাতি বা উপজাতি ভারতে বহু আছে স্বীকার করলেও অনেকের মতে সেগুলো এই দুইটিরই শাখা-প্রশাখা মাত্র।
চতুর ইংরেজরা জানত, শরীরের সর্বত্রই রোগের প্রকাশ যত ব্যাপকই হোক কেন, সাধারণত হাতে ইনজেকশন দিলেই সব জায়গায় ঔষধ পৌঁছায়। তাই ভারতবর্ষকে পদানত রাখার জন্য আবিষ্কার করল এক মহৌষধ। সাম্প্রদায়িকতাবে ভেদবুদ্ধি। যদি দুইটি জাতিকে পরস্পরের শত্রুতে পরিণত করতে পারা যায় তাহলে মুসলমান জাতি মাথা তুলে স্বাধীনতার চেষ্টা করতে পারবে না। প্রথমত সব সময় নিজেদের মধ্যে বিবাদ, কলহ আর প্রতিশোধ প্রবণতায় সময় ও শক্তির ক্ষয় হবে। দ্বিতীয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জাতিকে ইংরেজরা মিত্র বা বন্ধুরূপে পেতে পারবে। ইংরেজরা এও বিশ্বাস করত যে, হিন্দু জাতি ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা লড়াই করতে যাবে না, কারণ মুসলমান শাসকদের অধীনে থাকা বা ইংরেজ শাসকদের অধীনে থাকা একই কথা। বরং অমুসলমান ভারতীয়দের মানস পটে এই ধারণাই বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছিল যে মুসলমান শাসনাধীন থাকার চেয়ে ইংরেজ শাসনাধীন থাকা অধিক সুখকর হবে। কিন্তু এ ধারণার অবসান হয়েছিল তখন, যখন ভারতের হিন্দু মুসলমান এক মন, এক পণ ও এক শপথ নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে গিয়ে শক্ত হাতে ধরেছিল স্বাধীনতার হাতিয়ার।
ইংরেজরা এটাও অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তেই জানতো যে সারা বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ছিলেন মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফ আর বিশ্ব ত্রাতা হযরত মুহাম্মদ (সা.) তথা তদানীন্তন আরব সভ্যতার উপর শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল। তাই ভারতে মুসলমান আমলে ভাষার ক্ষেত্রে আরবী, ফারসি ও উর্দু সভ্যতার সংমিশ্রণে নতুন এক সংস্কৃতি ও সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। কোর্ট-কাছারি আইন আদালতের ক্ষেত্রে দলিল দরখাস্ত প্রভৃতি ফারসি ভাষায় হত আর ব্যক্তিগত আদান প্রদানে হিন্দু মুসলমান প্রত্যেকেই রাজকীয় ভাষা আরবী ফারসি ও উর্দু মিশ্রিত সভ্যতা বহন করতেন। তাতে দুঃখ লজ্জা কিংবা ঘৃণা ও দ্বিধার দ্বন্দ্ব তো ছিলই না; বরং প্রকাশ পেত আভিজাত্য আর শিক্ষাসুলভ যোগ্যতা। ইংরেজরা এই ঐতিহ্যবাহক চলন্ত উজ্জ্বল ধারাটিকে চাইল ম্লান করতে, চাইল ধ্বংস ও চিররুদ্ধ করতে। আর সর্বাগ্রে তারই প্রথম প্রয়োগ বা প্রয়াস স্বরূপ সৃষ্টি হলো ইতিহাসে ভেজাল প্রদান; এমনভাবে ইতিহাস রচিত হলো, যা পড়লে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে উঠে যেন মুসলমান জাতি হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেছিল। নতুন ইতিহাসে যেন মুসলমানদের চিরশত্রু এবং হিন্দু বিদ্বেষীরূপে চিত্রিত করা হলো এবং এই ধারণার উৎপত্তি সাধন করা হলো যে, যে বাদশাহ বা শাসক যত বেশি ইসলাম ধর্মের ভক্ত তিনিই তত বেশি পরিমাণে হিন্দু বিদ্বেষী। এর কারণ ছিল মোটামুটি দুটি। প্রথমত এর ফলে সহজেই অমুসলমান পাঠকবর্গ মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধ প্রবণ ও শত্রু হয়ে উঠবে। আর দ্বিতীয়ত, আধুনিক শিক্ষিত মুসলিম সমাজ ধর্মের ওপর ঘৃণা ভাব পোষণ করবে এবং অনাস্থা আসবে তাদের ধর্মভীরুতার ওপর যার ফলে তারা সোনার পাথরবাটির মত মুসলমান নামধারী খৃষ্টান অথবা অন্য কিছু অদ্ভুত নতুন খৃস্টান দল হবে, যা ইংরেজ শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে দিনের পর দিন।
মুসলমান রাজা বাদশাদের মধ্যে অনেকেরই স্বধর্মের বিরুদ্ধাচরণ এবং চরিত্রহীনতার চরম পরিচয় প্রদান সত্ত্বেও ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ ও তাঁদের পোষ্যপুত্রগণ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রঙ বেরঙের উপাধির মালা পরিয়ে তাদেরই ইতিহাসে হিরো (Hero), মহামতি (The great) ইত্যাদি ভূষণে ভূষিত করার চেষ্টা করেছেন। তার ফলে মুসলিম শিক্ষিত সমাজধর্মে এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লাথি মেরে অথবা উপেক্ষার বাণ হেনে উদার চেতার উৎকট উপাধি পাওয়ার অভিযানে যেন উঠেপড়ে লাগতে চায়।
সারা বিশ্বে মুসলমান জাতি কম বা বেশি তাদের মূলগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ আর বাণীকেই পুঁজি করে শিক্ষার ক্ষেত্রে, রাজনীতির ক্ষেত্রে, ধর্মের ক্ষেত্রে, কর্মের ক্ষেত্রে এবং চিন্তা ধারণা ও জীবনের যেকোন সাধনার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বকে চমক লাগিয়ে দিয়েছে। শুধুমাত্র নিজেরাই উন্নত হয়ে ধন্য হয়নি বরং সে যার ওপর কোমল কঠিন আঘাত করেছে সেও উপকৃত, সভ্য ও সুন্দর হয়েছে। আবার মুসলমানদের যারা ধ্বংস করার জন্য অথবা অন্য কোন কারণে আঘাত করতে গেছে, ইতিহাস প্রমাণ করে শুধু প্রতিঘাত ছাড়াও তাঁরা বহু দিকে লাভবান হয়েছেন। আঘাতকারী দল কলা-কৌশল, আক্রমণ, প্রতিরোধ গেরিলা পদ্ধতি ইত্যাদি শিখে অবশ্যই লাভবান হয়েছেন।
পূর্বোক্ত বক্তব্য প্রমাণেদ্দেশ্যে শ্রী অবিনাস ভট্টাচার্য, এম এ, পি এইচ ডি এবং অনিল কুমার দাস, এমএ বি-টি মহোদ্বয়ের লেখা থেকে কিছু অংশ গভীর শ্রদ্ধার সহিত তুলে ধরছি। “.... ভারতীয় সমাজ, ধর্ম, শিল্প প্রভৃতির ওপর ইসলামের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, কালক্রমে বহু হিন্দু ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। ইহাদের মারফত হিন্দু আচার রীতিনীতি মুসলিম সমাজে প্রবেশ করিয়া তাহাদিগকে যেমন প্রভাবিত করিল তেমনি ইসলামের সংস্পর্শে আসিয়া হিন্দু সমাজ অধিকতর হিন্দু ধর্ম ও সমাজ অধিকতর উদার ও সাম্যভাবাপন্ন হইয়া উঠিতে থাকে।”
অবশ্য এ কথাও মনে রাখতে হবে, মুসলমান বাদশাগণ ভাল-মন্দ যা কিছু করেছেন তা-ই কোরআন-হাদীসের নির্দেশ নয়। যেখানে অত্যাচার, অনাচার, অবিচার সেখানে আইনের দোষ নয়; বরং সেখানে তাঁদের ব্যক্তিগত অপরাধ, ত্রুটি ও চারিত্রিক কলঙ্ক ছাড়া অন্য কিছু মনে করা চলে না।
পূর্বেই বলা হয়েছে, ইংরেজদের প্রয়োজন ছিল হিন্দু ও মুসলিম জাতির মধ্যে বৈরিতা বা শত্রুতা সৃষ্টি করা। তাই মুসলমান মাওলানা, মৌলভী, মোল্লা, মুফতি কাজী প্রমুখ পণ্ডিতদের সম্মানীয় উপাধিকে ছোট করে দেখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। অবশ্য তাঁরা জয়ীও হয়েছিলেন অনেকাংশে। আজও আমাদের দেশে ‘মোল্লা’ যেন একটা ঘৃণ্য শব্দ, ‘কাজী’ উপাধিও মনে করিয়ে দেয় খামখেয়ালি অন্যায় বিচারের কথা, সাধারণ সমাজের অনুমান কাজীর বিচার মানেই অবিচার; অথচ কাজী, মৌলভী, মাওলানা, মোল্লা উপাধিধারী মনীষীগণ ছিলেন নানা ভাষা ও অভিজ্ঞতায় পণ্ডিত। আবার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইংরেজরা মুসলমান রাজা-বাদশাহদের প্রংশসা করতেও ভোলেনি, কারণ শুধু যদি দুর্নাম আর দোষ বর্ণনা করা হয় তাহলে বর্ণনাকারীকে নিরপেক্ষ মনে নাও হতে পারে। তাই বোধহয় আজ বর্তমান ইতিহাস মণ্ডপে প্রশংসার দুগ্ধ বর্ষণ শেষে সামান্য গোমূত্র প্রয়োগ। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, ভারতের দুটি বিশিষ্ট জাতি হিন্দু ও মুসলমান যদি ইংরেজদের ঐ ঔষধ সেবন না করত তাহলে অনেকের মতে আমাদের সাধের ভারতবর্ষ আজ তিন খণ্ডে খণ্ডিত হত না এবং শত সহস্র নয় বরং লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমান প্রমুখ ভারতবাসী টুকরো টুকরো হয়ে রক্তাক্ত মৃত্যুর কোলে ছিটকে পড়ত না।
এখন এদেশ থেকে ইংরেজ বিতাড়িত। কিন্তু তাদের খাওয়ানো ঔষধ আমাদের পেটে আছে তাই সাম্প্রদায়িকতা এবং ইতিহাসে ভেজাল দেওয়ার ভয়াবহ ব্যাধি হতে আজও ভারতবাসী মুক্ত বলে মনে হয়নি?
আজও মুসলমান জাতিকে যদি বিদেশী মনে করা হয় তবে নিঃসন্দেহে তা ত্রুটিপূর্ণ ধারণা। কেননা যারা বাইরে থেকে আক্রমণ করে লুটপাট করে ক্ষণিক পরেই করেছে পলায়ন, তাদের বিদেশী নামে অভিহিত করা যায়। কিন্তু এদেশের আর্য সভ্যতা এবং মুসলমান সভ্যতা ভারতের বাইরে হতে এলেও এই উভয় জাতি ভারতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন; এ দেশকে নিজের দেশ বলে স্বীকৃতি দিয়ে ও নিয়ে এই দেশেরই সার্বিক উন্নতির জন্য শক্তি ও শ্রম, সময় ও অর্থ সবই ব্যয় করেছেন। বংশপরম্পরায় এখানে জন্মে এই ভারতেরই মাটিতে যারা নিজের দেহকে দিলেন মিশিয়ে তাঁদের বিদেশী বলে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা হবে চরম সংকীর্ণতার পরিচয়। আর যদি একান্তই কালের চক্রান্তে এটাই হয় চূড়ান্ত, তা হলে মুসলিম সভ্যতা ও আর্য সভ্যতা দুটিকেই একই কষ্টি পাথরে বিচার করা দরকার। তাতে প্রমাণিত হবে এ দুটি সভ্যতা হয় স্বদেশী নতুবা বিদেশী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/490/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।