hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইতিহাসের ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

১৩
সত্যের অপ-প্রচার
আমরা শুধুমাত্র সমালোচক পুস্তক প্রণয়নেই এই গ্রন্থ সংকলনে অগ্রসর হয়নি, বরং চাপাপড়া সব ইতিহাসকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। তবুও সত্য রক্ষার খাতিরে কিছু কিছু সমালোচনা না করলে ছাত্রছাত্রীদের সমালোচনা যোগ্য শক্তি সৃষ্টিতে উৎসাহ আসবে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই প্রয়াস।

শ্রী বিনয় ঘোষ লিখেছেন, “খলীফাধীন পারস্য সাম্রাজ্যের শাসক হাজ্জাজ মনেপ্রাণে সাম্রাজ্যলোভী ছিলেন এবং কাশগড়ে চীনাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। অতঃপর কাবুল ও সিন্ধুদেশ অভিযান আরম্ভ হয়।

সিংহলের রাজা কিছু মূল্যবান উপঢৌকন নাকি খলীফা ও হাজ্জাজের সন্তুষ্টির জন্য পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তাহা পথে সিন্ধুর দেবল অঞ্চলের জলদস্যুরা লুট করেছিল, অতএব দেবলের দস্যুদের শায়েস্তা করা দরকার এই ছিল হাজ্জাজের সিন্ধু অভিযানের অযুহাত।” (দ্রষ্টব্য ভারত জনের ইতিহাস)

বলাবাহুল্য, শ্রী ঘোষের লেখায় আর শ্রী বজায় থাকছে না; বরং বিশ্রী বস্তুর দুর্গন্ধে নিরপেক্ষ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শনরূপে গণ্য হবে না, একথা শপথ করে সকলে বলবে বলে মনে হয় না। অবশ্য অনেকের মতে, শ্রী ঘোষকে আসলে দোষ দেয়া যায় না। কারণ স্বামী স্ত্রীর যুগ্ম প্রতিভাতে যে ইতিহাস তারা লিখেছেন তা ইংরেজি ইতিহাস আর আমাদের দেশের হাটে পাওয়া সহজ ইতিহাসকেই অবলম্বন করে। কিন্তু আগেই বলেছি প্রকৃত ঐতিহসিক হতে হলে আরবী, ফারসী প্রভৃতি বিদেশী ভাষা না জানলে মূল ইতিহাস বোঝা বা বুঝে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। হয়তো শ্রী এবং শ্রীমতী ঘোষের পক্ষে ওকালতি করে কেউ বলতে পারেন-তারা যে আরবী-ফারসি জানতেন না তারই যা প্রমাণ কী? প্রমাণ তাদের লেখা ঐ ইতিহাসের ২৭৯ পৃষ্ঠায় মওজুদ আছে। তারা ‘মুহাম্মদ বিন কাসেম’-এর নামের পরিবর্তে বারবার ব্যবহার করেছেন শুধু কাসিম। আমার সরল চিত্ত কোন পাঠক হয়তো বলবেন যে, এতবড় নামের পরিবর্তে শুধু মাত্র কাসিম ব্যবহার করে একটু সংক্ষেপ করা হয়েছে তাতে ক্ষতি কী? ক্ষতি হচ্ছে এই যে, অযোধ্যার ইতিহাস লিখতে গিয়ে রামচন্দ্রের স্থানে দশরথচ লিখলে যা হয় তাই। শ্ৰী ঘোষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেশের ছাত্র সমাজ যদি প্রশ্ন করেন-সিন্ধু বিজয়ে ভারতে প্রথমে কোন মুসলমান এসেছিলেন? উত্তরে প্রথম ভুল হয়তো হবে এই যে, যারা আগেই ইতিহাসের পাতায় সিন্ধু অভিযানের জন্য অমর হয়ে আছেন তাদের নামোল্লেখ না করেই বলবেন-‘কাসিম'। কিন্তু প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা নির্বিশেষে প্রত্যেক ইতিহাস অনুরাগীকেই জেনে রাখা ভালো যে, সিন্ধু বিজয়ী মুসলমান ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের প্রতিদ্বন্দ্বীর বাবার নাম কাসিম। তার নিজের নাম মুহাম্মদ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের অর্থ হল-মুহাম্মদ কাসিমের পুত্র। অর্থাৎ কাসিমের পুত্র মুহাম্মদ। এখন যদি নামের সংক্ষেপ করতে হয় তাহলে মুহাম্মদ লেখা উচিত ছিল। ‘বিন’ বা, ‘ইবন’ মানে ছেলে। আরবদের নিয়ম যোগ্য পিতার নামে নিজের নাম যুক্ত করা।

বিখ্যাত ইতিহাস ‘আববো কী জাহারাণী’, “ফাতহুল বুলদান” প্রভৃতি আরও বহু আরবী, ফারসি ও উর্দু এবং ইংরেজি ও বাংলা ইতিহাস সামনে রেখে আসল তথ্য আমরা তুলে ধরছি নিরপেক্ষ অনুসন্ধিৎসুদের জন্য। হাজ্জাজের সিন্ধু অভিযানের অনেক কারণ ছিল।

প্রথমত, হাজ্জাজ ইরান বা পারস্যের যুদ্ধে প্রাণপণে যখন সৈন্যদের নিয়ে লড়ছিলেন তখন ভারত হতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে সাহায্য করা হয়। ফলে মুসলমানদের মনে একটা গভীর চাপা দুঃখ বা জ্বালা এবং প্রতিশোধপ্রবণতা জাগ্রত ছিল। আজ বিংশ শতাব্দীতেও কোন যুদ্ধের সময় অপর রাষ্ট্র শত্রুকে সাহায্য করলে সেই রাষ্ট্রের সাথে সঙ্গে সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করা হয়।

দ্বিতীয়ত, হাজ্জাজের শাসনকালে পারস্য হতে একটি বিদ্রোহী দল ভারতে আসে এবং তদানীন্তন ব্রাক্ষণ রাজা দাহির তাঁদের সাহায্য ও আশ্রয় দিয়েছিলেন। অবশ্য পেছনে রাজনৈতিক কারণও ছিল।

তৃতীয়ত, আরবের কিছু সাধক পুরুষ ও মহিলা এবং অনেক সাধারণ নরনারী সমেত কয়েকটি আরবীয় জাহাজ সিন্ধু অঞ্চলে লুট হয়ে যায় এবং পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকলকে পাইকারিভাবে হত্যা করা হয়। তখন হাজ্জাজ সিন্ধুরাজ দাহিরের নিকট দস্যুদের শাস্তি দিতে এবং ক্ষতিপূরণ করার জন্য দাবি করলেন। দাহির জানিয়ে দিলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় আর দস্যুদের শায়েস্তা করার দায়িত্বও তিনি নিতে বাধ্য নন।

এইবার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হাজ্জাজ একদল সৈন্যসহ একজন বিচক্ষণ সেনাপতিকে পাঠালেন সিন্ধু অঞ্চলে। এ যুদ্ধ আরব সভ্যতা, শিক্ষা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী প্রচারের জন্য করা হয়েছিল বলা যাবে না, বরং ক্রোধের ওপর নির্ভর করেই ছিল এই অভিযান। যুদ্ধ হল সিন্ধুবাসীদের সাথে মুসলমানদের। প্রাথমিক অবস্থায় সিন্ধীরা পরাজয়ের দিকে যাচ্ছিল, হঠাৎ তাদের ধর্মের বিধানদাতাদের পরামর্শে দেবমূর্তি যুদ্ধ ক্ষেত্রে বহন করে নিয়ে যাওয়া হলে যুদ্ধে কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যে দারুণ পরাজয় নেমে এল। যুদ্ধ শেষে বিরাট সৈন্যবাহিনীর এমনকি সেনাপতিকে পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলমানকে ঠাকুরের সম্মুখে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল। জীবন্ত বন্দি জীবনযাপন করার সৌভাগ্য কোন মুসলমান সেনার হয়ে ওঠেনি।

শ্রী বিনয় ঘোষও তার ইতিহাসের ২৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “কিন্তু এই অভিযান ব্যর্থ হয়। দেশের তথাকথিত দস্যুদের শায়েস্তা করা সম্ভব হয় না। সিন্ধীদের প্রবল প্রতিরোধে আরব সেনাপতি পর্যন্ত নিহত হন।”

অতঃপর হাজ্জাজ তাঁর আর এক অল্প বয়স্ক সুদর্শন বীরকে সেনাপতি নির্বাচিত করে পুনরায় সিন্ধু অভিমুখে মুসলমান বাহিনী পাঠালেন। ইনিই ইতিহাসে মুহাম্মদ বিন কাসিম নামে পরিচিত। ঐ তরুণ সেনাপতি হাজ্জাজের আপনজন, পিতৃব্য পুত্র। শুধু তাই নয়, আরও গভীর সম্পর্কে ঐ যুবক তাঁরই জামাতা।

‘সালাতুল হাজাত’ (প্রয়োজনের নামায) নামক উপাসনা অন্তে উলামা ও আওলিয়াদের পরামর্শ ও শুভাশিস নিয়ে মুহাম্মদ বিন কাসিম এবার ধর্মনৈতিক কারণেই অভিযান চালালেন। মুহাম্মদ বিন কাসিম জলপথে এবং স্থলপথে উভয় দিক হতে সেই সময়ের বিখ্যাত কেন্দ্র দেবল মন্দির আক্রমণ করলেন। সিন্ধীরা ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের আদেশে প্রবল বাধা দেয়ার জন্য বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আবার পূর্ব সমরের ন্যায় জনসাধারণ ঠাকুরদের নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন। কিন্তু এবার নিমেষে দাহিরের সৈন্যরা মনোবল হারিয়ে ফেললেন। মুসলমান সৈন্যরা ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহই মহানতম) বলে চিৎকার করতে লাগলেন। যুদ্ধ পুরোদমে চলতে লাগল। রাজা দাহির হাতির উপর উপবিষ্ট হয়ে যুদ্ধ করছিলেন, এমন সময় বিপক্ষ বাহিনীর একটা তীর রাজার হাতির পিঠে হাওদায় পড়ে হু হু করে আগুন জ্বলে উঠে। হাতি প্রাণের ভয় ও আতঙ্কে জলাশয়ে নেমে পড়ে। দাহির মাটিতে দাঁড়িয়েই যুদ্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু তার সৈন্যদল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। একটা কথা রটে গেল, মুসলমানরা অগ্নিতীর ব্যবহার করে, যা লেলীহান শিখা নিয়ে জ্বলে উঠে। শ্রী বিনয় ঘোষও তাঁর ইতিহাসে এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, “দাহিরের হাতির হাওদায় আরবদের একটি অগ্নিতীর বিধিয়া আগুন জ্বালিয়া উঠে, হাতি দৌড়াইয়া জলের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়ে।” (ভাঃ জঃ ইঃ)

অনেকের মত, অলৌকিক ঘটনা বা দৈব ঘটনা ওটা যাই হোক দাহির যুদ্ধে বাধা দিতে গিয়ে নিহত হলেন। দাহিরের স্ত্রী সৈন্যদের সাহস যোগাতে এবং পুনঃ একতাবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু রানীর কথায় কোন কাজ হয়নি। অবশেষে রানী ও তার সঙ্গিনীগণ বিপদগ্রস্ত হওয়ার পূর্বেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন।

৭১২ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে ব্রাহ্মণ রাজা দাহির সাহসের সাথে যুদ্ধ করেও নিহত হলেন। তারপর এক বছরের মধ্যেই দাহিরের গোটা সাম্রাজ্য মুহাম্মদ বিন কাসিমের দ্বারা মুসলমানদের অধিকারে আসে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ সালে পরলোকগমন করেন আর কাসিমের পুত্র মুহাম্মদ ৭১২ খ্রিস্টাব্দে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে ইসলামের বিজয় কেতন ভারত ভূমিতে উড্ডীন করেন। তাঁরা ইচ্ছা করলে হয়তো ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল করতলগত করতে পারতেন। কিন্তু অনেকের কাছে এ যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও আরবদের কাছে সেটা সাধারণ একটা যুদ্ধ ছিল মাত্র। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেক দিকেই তাদের অভিযান আরও নাটকীয় ও আশ্চর্যজনক ঘটনা, যা মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থাতেও নিশ্চিত পরাজয় হতে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তা জয়ে পরিণত হয়েছিল।

এখানে উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই যে, ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় সংকীর্ণতা তথা পক্ষপাতিত্ব ও অবিচারের ফলে ভারতের ‘জাঠ’ সম্প্রদায় এবং ‘মেড’ সম্প্রদায় রাজার ওপর অসন্তুষ্টই ছিল; তদুপরি তথাকথিত নীচ জাতি বা শোষিত অবহেলিত, অনুন্নত সম্প্রদায় এমনকি হিন্দু ছাড়া ভারতীয় প্রায় প্রত্যেক সম্প্রদায় রাজাদের ওপর ভাল ধারণাপোষণ করত না। যুদ্ধের সময় তাদের সহযোগিতা স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে ‘জাঠ’ ও ‘মেড' সম্প্রদায় অত্যন্ত সাহসী ও বলিষ্ঠ জাতি। তারা মুসলমানদের পক্ষ প্রকাশ্যভাবে সমর্থন করে দাহিরের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে। দাহিরের শোচনীয় পরাজয়ের এটি একটি কারণ।

মুহাম্মদ বিন কাসিমের মন্দির আক্রমণের কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন যে, মুহাম্মাদ বিন কাসিম মন্দির আক্রমণ করতে গেলেন কেন? কারণ মুহাম্মদ বিন কাসিমের পূর্বে ভারত অভিযানকারী পরাজিত মুসলমানগণ নির্মূল হয়েছিলেন। তাতে জনসাধারণের তো ধারণা হয়েছিল যে, দেবল মন্দিরের ঠাকুরের দ্বারাই এই জয় সম্ভব হয়েছে। তার ওপর নতুন মুসলমান যারা হয়েছিলেন তাঁদেরও ধর্ম বিশ্বাস শিথিল হয়ে গিয়েছিল। তাই মানবজাতিকে সৃষ্টির কাছে মাথানত না করে বা ঠাকুর-দেবতার কাছে যথাসর্বস্ব বিলিয়ে না দিয়ে স্রষ্টার কাছে মাথানত হবার প্রেরণা যোগানোর জন্যই এ মন্দিরের সম্মুখে যুদ্ধ আয়োজনের প্রয়োজন হয়েছিল।

ব্রাহ্মণদের দেবতা ঠাকুরের ওপর আনুগত্য স্বাভাবিকভাবেই ছিল। তার ওপর গত যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের কারণে তারা স্বাভাবিকভাবেই ঐ মন্দিরের ঠাকুর দেবতার ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। তাই রাজার মূল্যবান ধনাগার স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ঐ মন্দিরে। ফলে যুদ্ধ শেষে বহু মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী মুসলমানদের হাতে অতি সহজেই এসে গিয়েছিল।

মুসলমান ধর্মে বহু হিন্দু আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন দেবতার পূজা নিল মনে করার কারণে। অতএব মুহাম্মদ বিন কাসিম যদি ঐ মন্দিরের প্রাঙ্গণে তথা পক্ষান্তরে দেব শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিজয়ী না হতেন তাহলে এইসব নব মুসলিমদের ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হতো।

আগেই বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ও অন্য মহিলারা মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনাও সত্য। তাই বলে বিকৃত ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণ বলে বর্ণনা করা নিঃসন্দেহে তা পক্ষাপাতিত্ব দোষে দুষ্টামি ও নষ্টামি। আসল কারণ হচ্ছে; হিন্দুধর্মের বিধান মতে, সম্ভ্রান্ত হিন্দু মহিলাদের আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করাটা খুবই মহৎ কাজ বলে বিবেচিত হতো। যেমন সতীদাহ প্রথার প্রাবল্যে স্বামীর মৃত্যুর পর জলন্ত চিতায় ঝাঁপ দেওয়া। এক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তান, শ্বশুর, দেবর ও ভাসুরদের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণে তাদের পুড়ে মরতে হতো না। আসলে দুর্বলা নারীদের চারিত্রিক দুর্বলতা ও দুশ্চিন্তার ওপর ধর্মীয় সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্গের কথা মনে করেই নিজেদের আত্মহত্যা করা ছিল বীরাঙ্গনার পরিচয়। আর তাই দেখে দুর্বল মুহূর্তে মৃত্যুবরণের হিড়িক পড়ে যেত। অবশ্য এ প্রথা যে একটা অসভ্যতা, বর্বরতা ও কাপুরুষতা ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

যাহোক, মুহাম্মদ বিন কাসিম যুদ্ধান্তে কিছুদিন নিজের মুখ্য পদগুলোতে নিজেদের নিয়োজিত লোককে বহাল করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর দাহিরের সময়ে যে হিন্দু কর্মচারী যে পদ নিয়ে থাকত তাকে সেই পদে পুনর্বহাল করে চরম উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই যে, “ব্রাহ্মণদের ওপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছিল।”

খুব মনে রাখার কথা হচ্ছে এই যে, ঐ সময় ভারতে কুরআন শরীফ ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী বা হাদীস হিন্দুদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত, পঠিত ও সমাদৃত হয়। সেই সময় মুসলমান রাজার প্রবল আগ্রহে ভারতের পুরাতন পুঁথিপত্র এবং ধর্ম গ্রন্থাদি অনুবাদের দ্বারোদঘাটনও সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, হিন্দুধর্মের পুস্তকপত্র আরবেও নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ধারণা ছিল, যে দেশে থাকতে হবে সেই দেশের পরিবেশ, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে না জানতে পারলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা। তাই অত্যন্ত অধ্যবসায়ী আরবরা ভারতীয় প্রাচীন ভাষা শিক্ষা লাভের জন্য বেনারসে এসেছিলেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আমীর খসরু লিখিত ইতিহাসে আছে- আবু মুসা দশ বছর ধরে হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পড়ার জন্য পরিশ্রম করেছিলেন।

আরও আসুন, শ্ৰী ঘোষ তার ইতিহাসের ২৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “দাহিরের দুই কন্যাকে বন্দি করিয়া কাসিম খলীফার হারেমের জন্য পাঠাইয়া ছিলেন। কিন্তু তাঁহারা খলীফার কাছে অভিযোগ করিলেন যে, কাসিম তাহাদের ইজ্জত নষ্ট করিয়া খলীফার কাছে পাঠাইয়াছেন। ইহাতে খলীফা ক্রদ্ধ হয়ে হুকুম দেন যেন কাঁচা গোচর্মে আপাদমস্তক মুড়িয়া সেলাই করিয়া কাসিমকে তাঁহার কাছে অবিলম্বে পাঠানো হয়। খলীফার আদেশ আল্লাহর আদেশের মতো, কাজেই কাসিম নিজেই ঐভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এই কাহিনীর সবটুকু হয়তো ঐতিহাসিক সত্য নয়। কিন্তু কাসিমের জীবনের করুণ পরিণতির কথা অনেকেই স্বীকার করেন।”

শ্রী ঘোষ ভারতের সুশীল ছাত্রছাত্রীদের মাথায় একটা কিংবদন্তীর ছাপ কেমনভাবে এঁকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন তা লক্ষ করার বিষয়। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, কাহিনীটির সবটুকু ঐতিহাসিক সত্য নয়, অথচ সন্দেহজনক ও সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধিকর এই মারাত্মক কথা ইতিহাস বলে চালিয়ে যাওয়ার পেছনে লাভ কতটুকু তা দেখা দরকার।

এর উত্তরে স্মরণ করা যেতে পারে যে, ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায়, অনেক জাতির মধ্যে রাজা-রানীদের বিপদের সময় আত্মহত্যা করার ঘটনা আছে। কিন্তু একমাত্র মুসলমান রাজত্বে আত্মহত্যার ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা তার পক্ষে পরকালে স্বর্গে যাওয়া সহজে সম্ভব নয়। তাই মুসলমান জাতি ঐ কাপুরুষতা হতে মুক্ত। অবশ্য ইদানীং ভারতে সাধারণ মুসলমান দু-একজন আত্মহত্যা করলেও প্রথমত, তারা ধর্মের তত ধার ধারে না। দ্বিতীয়ত, তারা প্রতিবেশীর প্রভাবেই প্রভাবিত। কিন্তু ঐ সময় মুহাম্মদ বিন কাসিমের পক্ষে আত্মহত্যা করা কোনমতেই সম্ভব ছিল না।

এ ছাড়া আরও এক কারণে এরূপ ঘটনা মিথ্যা বলে বিবেচিত হচ্ছে। সেটা হচ্ছে এই যে, ইসলাম ধর্মের সংবিধানে আসামি বাদী ও সাক্ষী ছাড়া অপর কারোর মুখ হতে কিছু শুনে (সত্য মিথ্যা যা হোক) আসামির বক্তব্যকে ব্যক্ত করতে না দিয়ে দূর হতে আদেশ বা নির্দেশ পাঠিয়ে কোন কিছু নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ নীতিবহির্ভূত। অতএব যদি ঐ ঘটনা সত্যই হতো তাহলে মুহাম্মদ বিন কাসিমকে জানানো হতো এবং তার কী অভিযোগ তা জানিয়ে সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য শোনার পর সুবিচার-অবিচার যাই হোক হতে পারত। কিন্তু তাঁকে জীবন্ত আসতেই দেওয়া হল না; বরং কাটা গোচর্মে মুড়িয়ে তাঁর মৃতদেহ আনানো হল-এটা সবই অবিশ্বাস্য ও ভ্রান্ত। আবার যদি শূকরের চামড়া মুড়িয়ে আনার নির্দেশ থাকত তবে খলীফার ক্রুদ্ধ হওয়ার প্রমাণ হতো। কিন্তু মিথ্যা ইতিহাসে অর্থাৎ ইংরেজ ও তাদের দালাল দ্বারা লিখিত ইতিহাসে গরুর চামড়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ গরুর চামড়া মুসলমানদের নিকট অপবিত্র নয়, যেমন অপবিত্র নয় খাসি বা হরিণের চামড়া ঠিক তেমনিই।

আসল কথা মুহাম্মদ বিন কাসিম স্বাভাবিকভাবে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর ন্যায় বিখ্যাত বীরের মৃতদেহ রাজকীয় মর্যাদার সাথে উপযুক্ত স্থানে কবর দেবার জন্যই মমি করার মত চামড়া সদৃশ মূল্যবান সাদা মখমল কাপড়ে মুড়া অবস্থায় কাঠের বাক্সে করে পৌঁছেছিল।

শ্ৰী ঘোষ আরও লিখেছেন, “নারীর মর্যাদা কলঙ্কিত হইতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি (রানী) এবং দুর্গের ভিতরে অন্য মহিলারা অগ্নিকুণ্ডে ঝাপাইয়া পড়িয়া জীবন বিসর্জন দেন।” এখন আলোচনায় আসা যাক। যদি এটা সত্য হয় তাহলে দাহিরের সুন্দরী কন্যাদ্বয় মৃত্যুর পরে কী আবার বেঁচে উঠেছিল? নতুবা তারা তো অগ্নিতে ঝাঁপ দেন নাই। তাহলে ইজ্জত নষ্ট হতে পারে, এই আশঙ্কাই যদি সত্য হয় তবে তাদের বোঝা উচিত ছিল আমাদের যেখানে পাঠানো হবে সেখানেও এই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। অতএব বিধবা মা অপেক্ষা কুমারী কন্যাদের আগেই মৃত্যুবরণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা যখন হয়নি তখন নিঃসন্দেহে এহেন এক ঘৃণ্য ধারণার অযৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়।

লেখক আরও লিখেছেন, “খলীফার আদেশ আল্লাহর আদেশের মতো”। এটি মুসলমানদের মনে গভীর দুঃখ দিতে বাধ্য। কারণ আল্লাহর মত কোন কাউকে মনে করা বা বিশ্বাস করাকেই ইসলাম শিরক’ অংশীদারত্ব বলে। আর এই “শিরক” সমস্ত অপরাধের চেয়ে মারাত্মক আর তা মার্জনার অযোগ্য প্রায়। অতএব “খলীফার আদেশ আল্লাহর আদেশের মতো এই উক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে অমুসলিম সাব্যস্ত করার পশ্চাতে কোন মনোভাবের পরিচয় নিহিত আছে পাঠকবর্গই তা চিন্তা করবেন।

(শ্ৰী ঘোষ আরও জানিয়েছেন, “হিন্দুদের নিকট হইতে তাঁহারা রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থা শিক্ষা করিলেন।”)

যদি উপযুক্ত মত সত্য হত তবে ভারতবাসী অর্থাৎ আমরাই আরব জয় করতাম, জয় করতাম আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা সম্ভব হয়নি, বরং আমাদরে ভারতের সাথে আরবের তুলনা করলে দেখা যাবে আরব সভ্যতাই সারা বিশ্বে প্রভাব সৃষ্টি করেছে ও ধর্মমত প্রচার করেছে। কী ইতিহাসে, কী বিজ্ঞানে, কী ভূগোলে, কী গণিতে, কী সংস্কৃতে, কী দর্শনে, কী চিকিৎসা বিজ্ঞানে, কী মানচিত্র অঙ্কনে, কী জ্যোতির্বিজ্ঞানে, কী রাষ্ট্র বিজ্ঞানে, কী সমাজ বিজ্ঞানে মুসলমানরাই ছিল সারা বিশ্বের গুরু। আরব ভূমিই ছিল বিশ্বের জ্ঞান সাগরের উত্সকেন্দ্র। অতএব মুসলমানরা হিন্দুদের কাছে জ্ঞান শিক্ষা করেছে এরূপ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। তাছাড়া নিজের ধর্ম ও সমাজ মানুষ তখনই ত্যাগ করে যখন সে বোঝে আমাকে আমার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যা পাওয়া দরকার তা এর দেবার ক্ষমতা নাই। আর নতুন ধর্ম যখন গ্রহণ করে তখন এই কথাই বোঝে, আমি যা পাই না তা পাব এই পন্থায়। কিন্তু হিন্দুধর্ম অপরকে নিজের মধ্যে টেনে নিতে পারেনি বরং অপর ধর্মকে ভারত হতে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন বৌদ্ধধর্ম অথবা নিজেরা মুসলমান ও খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্ম ও সমাজে প্রবেশ করে তাদের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছে। অতএব বলা যায়, “তাহারা রাষ্ট্রশাসন শিক্ষা করিলেন” কথাটি কল্পনাপ্রসূত।

ইংরেজি ইতিহাসের সবকিছু বর্জন করার বস্তু তাও যেমন আমাদের মত নয়, তেমনি এ কথাও বিশ্বাস্য যে সুযোগ বুঝে ইংরেজি ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের প্রচারের অপচেষ্টাও অনুচিত।

মুহাম্মাদ বিন কাসিমের বিজয় কীর্তি যখন পথিবীর বুকের ওপর সূর্যালোকের মত ছড়িয়ে গেল তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর। এতবড় বৃহৎ বৈশিষ্ট্যময় বীরের বীরত্বকে ম্লান আর মিথ্যায় পরিণত করতে তাঁর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা কল্পনাকের গল্প আর কিংবদন্তীকে ইতিহাস বলে খাপ খাইয়ে দেশের উন্নতি নয় বরং অবনতির ইন্ধনের যোগান দেবার উৎকট প্রচেষ্টাকে আজকাল সুধী সমাজ বরদাশত করতে পারেন না কোনক্রমেই। ইতিহাসকে যারা তাদের উপন্যাস আর ছায়াছবি, নাট্যমঞ্চের ভেতর দিয়ে পাল্টাতে চান তাঁদের মনে রাখা উচিত যে, ইতিহাস নিয়ে কলম ধরার অধিকার তাদের নেই। কারণ এই উল্টানো বা পরিবর্তন ইতিহাসের ক্ষেত্রে দুর্গন্ধময় গলিত কুষ্ঠ। দস্তুর মত ঐতিহাসিক দলিল নিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যু হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে নয় বরং আকস্মিকভাবে।

অবশ্য তাঁর যখন মৃত্যু সম্বন্ধে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ আজও এক মত নন। কেউ কেউ মনে করেন মুহাম্মদ বিন কাসিম আততায়ী কর্তৃক নিহত হয়েছেন আবার কেউ খলীফার চক্রান্ত হত্যা বলে মনে করেন। মোটকথা অল্প বয়সে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয় তাতে কারো সন্দেহ নেই। সন্দেহ শুধু ঐ পদ্মা দেবী আর সূর্য দেবীর কেচ্ছা-কাহিনীতে। ঐ মিথ্যা ঘটনায় এও উল্লেখ আছে, মুহাম্মাদ বিন কাসিমের প্রাণদণ্ডের পর সুন্দরীদ্বয় খলীফার কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, “মুহাম্মদ সাধু চরিত্রের লোক, আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর প্রতিশোধের জন্য আমরা তাঁর ওপর মিথ্যা অভিযোগ করেছি।” তখন খলীফা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে দুই বোনকেই হত্যার আদেশ দিলেন। ফলে তাদের উভয়কেই প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

শ্রী ঘোষ তার ইতিহাসে লিখেছেন, “দাহিরের দুই কন্যাকে বন্দি করিয়া কাসিম খলীফার হারেমের জন্য পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।” অর্থাৎ আপনা আপনিই অক্ষরে অক্ষরে ফুটে উঠছে, খলীফা ব্যভিচারী বা নারীভোগী ছিলেন, তাই কুমারী নারী পেলেই সেনাপতিরা খলীফার ভোগের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু শিক্ষিত সমাজ আজ চিন্তা করতে শিখেছে; তাই তারা বেশ বুঝতে পারছেন, নারীভোগী মুসলমান অবিবাহিতা রাজকুমারীর মত দুইজন সুন্দরী শিকার হাতে পেয়ে তাদের মায়াকান্না আর অভিমানের বায়না মিটাতে গিয়ে মুহাম্মদ বিন কাসিমকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন- এটা যদি সত্য হয় তাহলে মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পর যখনই ঐ সুন্দরীদ্বয়ের স্বীকারোক্তিতে বুঝতে পারলেন যে, তারা মুহাম্মদ বিন কাসিমের ওপর মিথ্যা অভিযোগ করেছিল সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলেন। লম্পট চরিত্রের স্বাভাবিক নিয়মে তা হয় না। লম্পট ব্যাভিচারীদের বিজাতি, কুমারী-অকুমারী ভেদাভেদ থাকে না। আর যেখানে ঐ রাজকন্যাদের রূপের মোহে পাগল হয়ে বাদীপক্ষের কোন মন্তব্য, কোন কৈফিয়ত না শুনেই খলীফা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে প্রাণদণ্ড দিতে পারলেন তখন ঐ রূপলাবণ্য, সৌন্দর্যে আভিজাত্যের অভিনব জীবন্ত প্রতীক সুন্দরীদের হত্যা করা লম্পট চরিত্রের পক্ষে অবশ্যই অস্বাভাবিক। সুতরাং খলীফার চরিত্রের ওপর অভিযোগ এবং মুহাম্মদ বিন কাসিমের প্রতি নারী সরবরাহের অভিযোগ কল্পনার ইতিহাস মাত্র।

অতএব এই প্রকার ঐতিহাসিকতা অনেকের মতে ভারতের উন্নতির পরিপন্থী এবং অবনতি আর অঘটনের কারণ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, ইংরেজ বা তাদের পোষা বান্ধব বা দালাল দ্বারা লিখিত ঐতিহাসিক তথ্য যেমন পরিহার যোগ্য তেমনি এও মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক জাতি বা গোত্রের প্রত্যেক ঐতিহাসিক একই ছাঁচে ঢালা নন। তাছাড়া একজন দুষ্ট ঐতিহাসিকের সমস্ত তথ্য বা বাক্যই পঙ্কিল পরিকল্পনাপ্রসূত নয়। তবে ঐতিহাসিকতা পরিবেশনের সময় অবশ্যই মনে রাখা দরকার আমি যা লিখছি তা পড়ে দেশ জাতি তথা সার ভারতের মানুষ উপকৃত হবে না অপকৃত হবে? যদি হিন্দু মুসলমান বা এক জাতি অপর জাতির মাঝখানে সাম্প্রদায়িকতার প্রাচীর খাড়া করা যায় তাহলে প্রাচীরের সংখ্যা যত বেশি হবে ভারত তত টুকরো টুকরো বা খণ্ডিত হবে। গতকালের বিরাট ভারত আজ ত্রিভাগে বিভক্ত। তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী সমাজের সেইসব লোক, যারা নেতা বলে পরিচিত হয়ে সরল, সবল, স্বচ্ছ ও সুন্দর নেতৃত্বের পরিবর্তে দেশকে দিয়েছেন নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা, ছুতমার্গ আর দালালীপূর্ণ নকল নেতৃত্ব। অনেকের মতে তাঁদের অপরাধ অমার্জনীয় আর অনেকের মতে, যা হবার হয়ে গেছে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে দিয়ে অশুদ্ধ ও বিষাক্ত ঐতিহাসকে বিশুদ্ধ ও উপযোগী করে সত্যের সঠিকতা বজায় রেখেই ভারতের উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে এমন তথ্য ছাত্রছাত্রী বা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা, যা এক জাতি অপর জাতিকে তথা এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়কে বন্ধু বলে মনে করতে পারে। যিনি বা যারা এই অসাধ্য সাধন করতে পারবেন তারাই হবে প্রকৃত ইতিহাস বিজ্ঞানী।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন