hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাকওয়া

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

২২
৪র্থ অধ্যায় : সাহাবা (রা:) এবং ইসলামিক স্কলারদের দৃষ্টিতে তাকওয়া তাকওয়া হলো পথের দিশারী আলো
তাকওয়া সম্পর্কে বিশিষ্ট কয়েকজন সাহাবীর অভিমত/মন্তব্য

১) আবু হুরায়রা (রা.) যে কাঁটা বিছানো রাস্তায় চলতে গেলে যেমন কাঁটাদেখলেই সেটাকে পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে চলতে হয় যাতে সেটা পায়ে বিধে কষ্ট না দেয়, তাকওয়াও ঠিক তেমনি। পাপের কাজ দেখলেই তাকে এড়িয়ে চলতে হবে যাতে তাকওয়া পাপ দ্বারা বিদ্ধ না হয়, নিষ্পাপ থাকে, নিষ্কলংক থাকে ।

২) আলী (রা.) বলেছেন যে –

ক) তোমাদের [উত্তম] আমল দ্বারা তোমাদেরনিজেদেরকে বাঁচাও এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকেও তেমনি উপদেশ দাও যাতে ওরাও বেঁচে থাকতে পারে ।

খ) তাকওয়া হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয়; তাঁর কুরআনের নির্দেশ মেনে চলা; অল্পে তুষ্ট থাকা, এবং আখিরাতের পথে চলার প্রস্তুতি নেয়া।

৩) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন যে –

ক) সূরা আলে ইমরান (৩) এর ১০২ নম্বর আয়াতের যথাযথ অনুসরণ করা। কোন কিছুকে ভয় না করে, অথবা কারো বিরূপ সমালোচনাকে গ্রাহ্য না করে আল্লাহর পথে চলা; এবং সুস্থ ও অসুস্থ উভয় অবস্থায় তাকওয়াকে আঁকড়ে ধরে থাকা যাতে মুসলিম (আল্লাহ কাছে আত্মসমর্পণকারী) হিসেবে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব হয়।

খ) তারাই মুত্তাকী যারা শিরক থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলে, এবং আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে এই দৃঢ় বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করে যে কুরআনের নির্দেশ আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে।

৪) আবু দারদা (রা.) বলেছেন - তাকওয়া হচ্ছে মনে আল্লাহর ভয় এতটা প্রকট যে সরিষার দানা পরিমাণ পাপও সেই ব্যক্তিকে আতংকিত করে তোলে। তারা পাপ হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু হালাল কাজ থেকেও সদাসন্ত্রস্ত থাকে এবং সেসবকে এড়িয়ে চলে।

৫) মু'আয ইবনে জাবাল (রা.) বলেছেন যে - শেষ বিচারের দিন একটা ঘোষণা শোনা যাবে, “মুত্তাকীগণ কোথায়?” তখন মুত্তাকীগণ আল্লাহর আরশের ছায়ার তলায় উঠে দাঁড়াবে। তবে আল্লাহকে তারা দেখতে পাবে। উপস্থিত লোকজনেরা তখন মু'আযকে জিজ্ঞাসা করলো, “মুত্তাকী কারা?” তিনি বললেন, “যারা শিরক থেকে আত্মরক্ষা করে, মূর্তিপূজা থেকে দূরে থাকে, এই আল্লাহর দ্বীনকে অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখে।”

৬) ইবনে মাসউদ (রা.) – “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়” প্রসঙ্গে বলেন : তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা তার নাফরমানী না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা তাকে না ভুলা, তার শোকর আদায় করা তার কুফরী না করা।

তাকওয়া সম্পর্কে অতীত এবং বর্তমানের কয়েকজন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদদের অভিমত

১) ইবনে কাইয়্যিম (রা.) বলেছেন যে –

ক) কুরআনের এই আয়াত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে - “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (৩: ১০২) [ইগাসাতুল লাহফান ১/১০১]

খ) কোন কিছু থেকে পালিয়ে যাওয়া। পালিয়ে যাওয়া দুই ধরনের হতে পারে : সৌভাগ্যজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। দুর্ভাগ্যজনক হলো আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া, আর সৌভাগ্যজনক হলো অন্য সব ছেডে] আল্লাহর কাছে পালিয়ে যাওয়া। (মাদিহিজ সালিকিন -১/৫০৪)

গ) আল্লাহর ভয় হচ্ছে অতি া যা মানুষের অন্তরে সতত জাগরুক থাকে। আল্লাহকে ভয় করা মানুষের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ বলেন : ওদের [কাফিরদের ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর যদি তোমরা প্রকৃতই ঈমানদার হয়ে থাক (৩: ১৭৫); শুধুই আমাকে ভয় করবে (২ ও ৪০)। যারা আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন কারণ। তারা ............ সৎকাজে অগ্রগামী (২৩ : ৫৭-৬১) সুতরাং সেই ভয়ই উত্তম যা মানুষকে হারাম কাজ করা থেকে নিবৃত্ত করে। (মাদিহিজ সালিকিন ১/৫৪৮)।

২) ইবনে মানযুর (রা.) বলেছেন যে - আরবী ‘খাউফ' কথাটার অর্থ ভয় এবং ভয় করা এই দুই-ই (লিসানুল আরাব ২/১২৯২)

৩) ইমাম কুরতুবী (রা.) বলেছেন যে - ‘খাউফ অর্থ ভয়/ভীতি এবং সতর্কবাণী; অন্যদিকে ভয় করা এবং সতর্ক করাও বটে (তাফসীর আল কুরতুবী)

৪) আবু কাসিম (রা.) বলেছেন যে - যে বস্তুকে মানুষ ভয় করে সে সেটা থেকে দূরে সরে যায়, কিন্তু যে আল্লাহকে ভয় করে সে আল্লাহরই নিকট দৌড়ে যায় (ইহিয়া উলুম ৪/১৫৩)

৫) আবু হাফস (রা.) বলেছেন যে - খাউফ (ভয়) হচ্ছে আল্লাহর চাবুক তাদের জন্যে যারা তাকে ত্যাগ করে। অন্যদিকে ভয় হচ্ছে অন্ধকারে আলোর ন্যায় যা দ্বারা মানুষ ভাল এবং মন্দের পার্থক্যটা বুঝতে পারে । যারা সষ্ট বস্তুকে ভয় পায় তারা সেটা থেকে দরে পালিয়ে যায়। আর যারা আল্লাহকে ভয় পায়, তারা আল্লাহর দিকেই দৌড়ে যায় (মাদিহিজ সালিকিন ১/৫৫০ এবং কুশারিয়াহ্ চিঠিপত্র)।

৬) হাসান বসরী (রা.) বলেছেন যে - যাদের অন্তরে] তাকওয়া আছে তারা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে, এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলে (আমল করে)।

৭) সুফিয়ান আস-সাউরি (রা.) বলেছেন যে - তাদের (মুত্তাকীদের পরিচয় হচ্ছে তারা ভীতসন্ত্রস্ত, কারণ সচরাচর যেসব বস্তুকে ভয় করা হয় না, সেই সব লোকেরা সেসব বস্তুকেও ভয় করে।

৮) উমর বিন আবদুল আযীয (রা.) বলেছেন যে - দিনে সিয়াম পালন করা এবং রাতে নামাযে দাঁড়িয়ে থাকা তাকওয়া নয়। বরং আল্লাহর নিষেধ মেনে চলা এবং আদেশ পালন করাই হচ্ছে তাকওয়া। এর চেয়েও অধিক তাকওয়া যার আছে আল্লাহ তাকে অগণিত, অশেষ রহমত দান করেছেন ।

৯) ইবনে রজব (রা.) বলেছেন যে - তাকওয়ার মূল কথা হচ্ছে আল্লাহর ক্রোধ এবং শাস্তির বিরুদ্ধে ঢাল তৈরী করা। সেই ঢালের কাজ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং নিষিদ্ধ বস্তু ও কাজ থেকে দূরে সরে থাকা। প্রকৃত তাকওয়া হলো নির্দেশিত সব কাজ করা, এবং নিষিদ্ধ, ঘৃণ্য ও সন্দেহজনক সব কাজ বর্জন করা। এই হচ্ছে প্রকৃত তাকওয়া (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম ১৯০/১৯১)।

১০) ইবনে মুআতায় বলেছেন যে – ছোটবড় সব পাপ কাজ পরিত্যাগ করাই তাকওয়া। সেই ব্যক্তির মত হও যে কাঁটা বিছানো পথে অতি ভয়ে ও সাবধানতা সহকারে চলে। অতি ক্ষুদ্র বস্তুকেও অবহেলা করবে না, কারণ ছোটছোট পাথরের সমষ্টিই হলো পাহাড়-পর্বত। (কুরতুবী এবং ইবনে কাসীর বলেছেন যে এই কবিতাটা ইবনে মুআতাযেরই রচনা)

১১) ওমর ইবনে আব্দুল আযীয তার ছেলে আব্দুল্লাহকে লেখেন : অতঃপর... আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অসিয়ত করছি, যার সাথে তোমাকে অবশ্যই সাক্ষাত করতে হবে, তিনি ব্যতীত তোমার কোন আশ্রয়নেই, তিনিই দুনিয়া-আখিরাতের মালিক ।

১২) তালক ইবনে হাবীব বলেছেন : তাকওয়ার অর্থ: আল্লাহর নির্দেশমতো তুমি তার আনুগত্য কর ও তার সাওয়াবের আশা রাখ এবং তার নির্দেশমতো তার নাফরমানী ত্যাগ কর ও তার শাস্তিকে ভয় কর।

একটি উদাহরণ

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা + আল্লাহর প্রতি ভয় = তাকওয়া

২০০৯ সালে ক্যানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত “Journey of Faith International Islamic Conference- এ অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ডক্টর তৌফিক চৌধুরী (Usul Al Fiqh Specialist) তাকওয়ার উপর ইমাম ইবনে তাঈমিয়ার রেফারেন্সে একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়েছিলেন :

এখানে তাকওয়াকে একটি উড়ন্ত পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। একটি পাখি তার দুটো ডানার উপর ভর করে উড়ে যাচ্ছে, পাখিটির একটি ডানা হচ্ছে। “আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং অপর ডানাটি হচ্ছে “আল্লাহর প্রতি ভয়”, আর পাখিটি হচ্ছে তাকওয়া। এই দুটো ডানার উপর ভর করেই পাখিটি তার গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর এই দুটোর একটি যদি দুর্বল বা অচল হয়ে পড়ে তাহলেই পাখিটি তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না ।

একজন মু'মিনের চুড়ান্ত গন্তব্য হচ্ছে জান্নাত । একজন প্রকৃত মুমিন আর আটদশজনের মতো তার জীবনকে হেলাফেলা করে পরিচালনা করে না। সে তাকওয়া অবলম্বন করে নানা রকম বাধা-বিপত্তি পার হয়ে তার লক্ষ্যে পৌছার চেষ্টা করে এবং মহান আল্লাহর সাহায্যও সবসময় তার সাথে থাকে এবং তিনি সাহায্য করেই যান। তাই আমাদের চুড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে হলে অবশ্যই “আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং ভয়” এই দুটো নিয়েই এগুতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন