hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাকওয়া

লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান

৮৪
কঠিন সুন্নাহ
আমরা রসূল (ﷺ) -কে এতো ভালোবাসি যে, যে সুন্নাহগুলো কঠিন সেগুলোর থেকে দূরে থাকি। যেমন : রসূল (ﷺ) দীর্ঘ ২৩ বছর দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন, তায়েফের রাস্তায় কাফিরদের পাথরের আঘাতে রক্ত ঝরিয়েছেন, ওহুদের ময়দানে দাঁত হারিয়েছেন, খন্দকের যুদ্ধে এক নাগাড়ে না খেয়ে মদীনার তিন দিকে পরিখা খনন করেছেন। নবুয়াত প্রাপ্তির পর মক্কার প্রথম ১৩ বছর কাফিরদের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছেন, কাফিরদের বয়কট অবস্থায় পাহাড়ের ঢালে নতুন মুসলিমদের নিয়ে ৩ বছর কাটিয়েছেন। এবং জীবন বাঁচানোর জন্য গাছের পাতা এবং ছাল খেয়েছেন। একসময় কাফিররা রসূল (ﷺ)-কে হত্যার সিদ্ধান্ত নিলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি জন্মভুমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিযরত করেছেন। রসূল (ﷺ) সাহাবাসহ নবুয়তের ২৩ বছরে ৮৬টি যুদ্ধ করেছেন । ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমাজ থেকে যতো রকম অন্যায় কাজ যেমন : সুদ, ঘুষ, যিনা, মদ, জুয়া, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, জুলুম, মিথ্যাচার, অবিচার, রাহাজানী, হত্যা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি দূর করেছেন। রাষ্ট্রীয় সংসদ পরিচালনার জন্য constitution তৈরী করেছেন। ইসলামিক ইকোনমিক্স, ফাইন্যন্স ও ইসলামিক ’ল বাস্তবায়ন করেছেন। Human rights, women rights, religius rights, non-muslims rights ইত্যাদি আইন প্রণয়ন করে তা রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করেছেন। যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেখানেই বাধা দিয়েছেন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করেননি। এছাড়া সমাজে পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে সলাত, যাকাত, সিয়াম, মহিলাদের পর্দা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, গীবত, চোগলখুরী, রিয়া, লোভ-লালসা ইত্যাদি দূর করেছিলেন। বাবামার হক, সন্তানের হক, স্বামী-স্ত্রীর হক, আত্মীয়ের হক, প্রতিবেশীর হক, এতিমের হক, যুদ্ধ বন্দীদের হক, সরকারের হক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদি রসূল (ﷺ)-এর বিস্তারিত জীবনী পড়ি তাহলে দেখতে পাই যে সারাটা জীবন তিনি কত কষ্টে কাটিয়েছেন, কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এরকম অনেক কাজই তিনি করেছেন যার বর্ণনা কুরআন ও সহীহ হাদীস গ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায়। তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার সময় কোন ব্যক্তিগত সম্পদ রেখে যাননি। সারা জীবন সম্পদ অর্জনের জন্য ব্যাকুল হননি। রসূল (ﷺ) নবুয়ত জীবনে কোন দিন তিন বেলা পেট ভরে খাননি। এসকলই রসূল (ﷺ) - এর সুন্নাহ। তিনি দরিদ্র ছিলেন তাই দরিদ্র থাকাও সুন্নাহ আবার অনাহারে থাকাও সুন্নাহ। এগুলোকে অবশ্যই কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আল কুরআন হচ্ছে Complete code of life অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এই যে উপরের সুন্নাহগুলো রসূল (ﷺ)-এর জীবনে দেখা যায় আসলে এগুলো সবই কুরআনের কথা, কুরআনের নির্দেশগুলোই অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য। তিনি সারা জীবন এই কঠিন কাজগুলো করেছেন। আমরা যেন মনে না করি যে এগুলো শুধু রসূল (ﷺ) -এর কাজ বা রসূল (ﷺ) -এর মিশন । তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতির জন্য Role Model. তাঁর দেখিয়ে যাওয়া সমস্ত কাজগুলো প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব এবং সেটাই তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ। আসুন এবার নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি ‘আশেকে রসূল’ বা ‘সালাফী’ বলে নিজেকে নিজে যে দাবী। করছি তা কতটুকু যুক্তি সংগত? একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন, আমি একটা কোম্পানীতে চাকুরী নিয়েছি, আমার ম্যানেজার আমাকে আমার job descriptions বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবার আমি প্রতিদিন বেছে বেছে অতি সহজ কাজগুলো পালন করি আর কঠিন কাজগুলো না করে এড়িয়ে যাই। এবার বাস্ত বে আমার চাকুরী কতদিন টিকবে? যদিও চাকুরী টিকে থাকে তাহলে আমিই বলি আমার ম্যানেজার এবং কোম্পানীর মালিকের কাছে আমি কত দিন প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিগণিত হবো বা তারা আমাকে কী চোখে দেখবেন?

বিশেষ অনুরোধ :

উপরে সহজ এবং কঠিন সুন্নাহর যে উদাহরণগুলো দেয়া হয়েছে তা বুঝানোর সুবিধার্থে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। এখানে ভুল বুঝার কোন অবকাশ নেই। কোন অবস্থাতেই রসূল (ﷺ)-এর কোন সুন্নাহকে হেয় বা ছোট করা হয়নি এবং তা কখনো করাও যাবে না। আমরা যারা শুধ, সহজ সুন্নাহগুলো পালন করি তাদেরকেও কোনভাবেই ছোট করা হয়নি। কোন সুন্নাহকে ছোট করে দেখা তো দুরের কথা একজন মুমিন হিসেবে আমাদের সকলকে অবশ্যই রসূল (ﷺ) -এর সকল প্রকার সুন্নাহর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং তা মানতে হবে । কোন সুন্নাহকে ছোট করে দেখার কোন প্রশ্নই উঠে না।

তাহলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে রসূল (ﷺ) -এর সুন্নাহ অনুসরণের মধ্যে দিয়েও রয়েছে তাকওয়ার এক কঠিন পরীক্ষা। শুধু বেছে বেছে মুসলিমদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দেয়া নয় অমুসলিমদের নিকটও দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়াও সুন্নাহ। আমাদের দেশে একদল লোক শুধু মুসলিদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যান তারা কোন অমুসলিমের নিকট যাননা। রসূল (ﷺ) এবং তার সাহাবা (রা.)-গণ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ গোটা দেশের অমুসলিমদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি বিশ্বনবী (ﷺ) -এর আহবান

হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে মুসলিমদের জন্য শান্তি এবং স্বস্তির একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল । মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে মহান আল্লাহ শুধুমাত্র আরব ভূ-খন্ডের জন্য প্রেরণ করেননি। তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছিল সারা বিশ্বের জন্য। তাঁর দায়িত্ব ছিল সমস্ত মানুষের কাছে মহাসত্যের আহবান পৌছে দেয়া। সন্ধির বদলে যে। পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তা নবী কারীম (ﷺ) কাজে লাগালেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের একটি সমাবেশ আহবান করে বললেন, মহান আল্লাহ আমাকে সারা। জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তোমরা আমার পক্ষ থেকে মানুষের কাছে সত্যের আহবান পৌছে দাও। এরপর নবী কারীম (ﷺ) বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে ইসলাম গ্রহণের জন্য দূত মারফত বার্তা প্রেরণ করলেন।

আবিসিনিয়া (ইথোপিয়া)-র বাদশাহ নাজ্জাশীর নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ‘আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর প্রতি। সালাম সেই ব্যক্তির উপর যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেন। আমি আপনার কাছে মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। যিনি কুদুস, যিনি সালাম, যিনি নিরাপত্তা ও শান্তি দেন, যিনি হিফাযতকারী ও তত্ত্বাবধানকারী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ঈসা ইবনে মারইয়াম আল্লাহর রূহ এবং তাঁর কালিমা। আল্লাহ তাআলা তা পূত-পবিত্র সতী মারইয়ামের উপর স্থাপন করেছেন। আল্লাহর রূহ এবং ফু এর কারণে মারইয়াম (আ.) গর্ভবতী হয়েছেন, যেমন আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন। আমি এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ এবং তাঁর আনুগত্যের প্রতি। পরস্পরকে সাহায্যের দাওয়াত দিচ্ছি। এছাড়া একথার প্রতিও দাওয়াত দিচ্ছি, আপনি আমার আনুগত্য করুন এবং আমি যা কিছু নিয়ে এসেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করুন। কেননা আমি আল্লাহর রসূল, আমি আপনাকে এবং আপনার সেনাদলকে সর্বক্ষণ আল্লাহ রব্বল আলামীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি দাওয়াত ও নসীহত করছি। কাজেই আমার দাওয়াত ও নসীহত কবুল করুন। (পরিশেষে) সালাম সে ব্যক্তির উপর, যিনি হিদায়তের আনুগত্য করেন।

চিঠির উত্তর :

পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের নামে, নাজ্জাশী আসহামার পক্ষ থেকে। হে আল্লাহর নবী, আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম, তাঁর রহমত ও বরকত নাযিল হোক। সেই আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি ব্যতীত ইবাদাতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। অতঃপর, হে আল্লাহর রসূল, আপনার চিঠি আমার হাতে পৌঁছেছে। এ চিঠিতে আপনি ঈসা (আ.) সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, আসমান ও যমীনের মালিক আল্লাহর শপথ, আপনি যা কিছু উল্লেখ করেছেন। ঈসা (আ.)-এর চেয়ে বেশী কিছু ছিলেন না। তিনি সেরূপই ছিলেন আপনি যেরূপ উল্লেখ করেছেন। আপনি আমার কাছে যা কিছু লিখে পাঠিয়েছেন, আমি তা জেনেছি এবং আপনার চাচাতো ভাইয়ের হাতে বায়াত করেছি এবং তার হাতে আল্লাহ রব্বল আলামীনের জন্যে ইসলাম কবুল করেছি। রসূল নাজ্জাশীর কাছে একথা দাবী করেছেন, তিনি যেন জাফর এবং আবিসিনিয়ায় অবস্থানরত অন্যান্য মুহাজিরদের পাঠিয়ে দেন। সে অনুযায়ী নাজ্জাশী আমর ইবনে উমাইয়া যামরীর সাথে দুইটি দলে সাহাবীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এক দলে জাফর, আবু মূসা আশয়ারী এবং অন্য কয়েকজন সাহাবা ছিলেন। তাঁরা প্রথমে খায়বরে পৌছে সেখান থেকে মদীনায় হাযির হন। অন্য এক দলে অধিকাংশ ছিলো শিশু-কিশোর, তারা আবিসিনিয়া থেকে সরাসরি মদীনায় পৌছে। আলোচ্য নাজ্জাশী তাবুক যুদ্ধের পর নবম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর রসূল তার মৃত্যুর দিনেই এ সংবাদ সাহাবীদের জানান এবং গায়েবানা জানাযার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে নাজ্জাশীর স্থলাভিষিক্ত বাদশাহর কাছেও রসূল, একখানি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কিনা জানা যায়নি।

মিশরের বাদশাহ মোকাওকিসের নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে মোকাওকিস আযম। কিবতের নামে। তার প্রতি সালাম যিনি হিদায়াতের আনুগত্য করেন।

[নোট : কিবতিরা হলো খৃষ্টানদের একটা অংশ এবং ওরা আজো ইজিপ্টে বাস করে।] আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনাকে দুটি পুরস্কার দেবেন। আর যদি ইসলাম গ্রহণ না করেন, তবে কিবৃতের অধিবাসীদের পাপও আপনার উপর বর্তাবে । হে কিবতিরা, এমন একটি বিষয়ের প্রতি এসো যা আমাদের এবং তোমাদের জন্যে সমান। আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবো না এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না। আমাদের মধ্যে কেউ যেন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে না মানে। যদি কেউ এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম।

এ চিঠি পৌঁছানোর জন্যে হাতিব ইবনে আবী বালতায়া (রা.)-কে মনোনীত করা হয়। তিনি মোকাওকিসের দরবারে পৌছার পর বলেছিলেন, এ দেশে আপনার আগেও একজন শাসনকর্তা ছিলেন, যে নিজেকে রব্বে আলা (মহান রব] মনে করতো। আল্লাহ তা'আলা তাকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী লোকদের জন্যে দৃষ্টান্ত করেছেন। প্রথমে তার দ্বারা অন্য লোকদের উপর প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে, এরপর তাকে প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কাজেই অন্যের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এমন যেন না হয়, অন্যরা আপনার ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করবে । মোকাওকিস জবাবে বললেন, আমাদের একটা দ্বীন রয়েছে, যা আমরা পরিত্যাগ করতে পারি না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তার চেয়ে উত্তম কোনো দ্বীন পাওয়া না যায় ।

হাতিব (রা.) বললেন, আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। এ দ্বীনকে আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী সকল দ্বীনের পরিবর্তে যথেষ্ট মনে করেছেন। এ চিঠি প্রেরক নবী মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার পর কুরায়শরা তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর প্রমাণিত হয়। ইহুদীরা সবচেয়ে বেশী শত্রুতা করে। আর খৃষ্টানরা ছিলো অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহর শপথ, মূসা (আ.) যেমন ঈসা (আ.)। সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছিলেন, তেমনি ঈসা (আ.)ও মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন। আমরা আপনাকে কুরআনের দাওয়াত দিচ্ছি, যেমন আপনারা তাওরাতের অনুসারীদের ইঞ্জিলের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। যে নবী যে জাতিকে পেয়ে যান, সে জাতি সে নবীর উম্মত হয়ে যায়। এরপর সে নবীর আনুগত্য করা উক্ত জাতির জন্যে অত্যাবশ্যক। আপনারা নবাগত নবীর যমানা পেয়েছেন, কাজেই তাঁর আনুগত্য করুন। আপনাকে আমরা ঈসা মসীহের দ্বীন। থেকে ফিরে আসতে বলছি না; বরং আমরা মূলত সে দ্বীনের দাওয়াতই দিচ্ছি। মোকাওকিস বললেন, সে নবী সম্পর্কে আমি খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি কোনো অপছন্দীয় কাজের আদেশ দেন এবং পছন্দনীয় কোনো কাজ করতে নিষেধ করেন না। তিনি পথভ্রষ্ট যাদুকর নন, মিথ্যাবাদী জ্যোতিষীও নন; বরং আমি দেখেছি, তাঁর সাথে নবুয়তের এ নিশানা রয়েছে, তিনি গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করেন এবং অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে খবর দেন। আমি তাঁর দাওয়াত সম্পর্কে আরো চিন্তা-ভাবনা করবো। মোকাওকিস আল্লাহর রসূল (রা.)-এর চিঠি নিয়ে হাতীর দাঁতের একটি কৌটায় রাখেন, এরপর মুখ বন্ধ করে সীল লাগিয়ে তার এক দাসীর হাতে দেন। এরপর আরবী ভাষার এক লিপিকারকে ডেকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে নিম্নোক্ত চিঠি লেখান-

চিঠির উত্তর :

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহর নামে মোকাওকিস আযিম কিবত-এর পক্ষ থেকে। আপনার প্রতি সালাম। আমি আপনার চিঠি পাঠ করেছি এবং চিঠির বক্তব্য ও দাওয়াত আমি বুঝেছি। জানি, এখনো একজন নবী আসার বাকি রয়েছেন। আমি ধারণা করেছিলাম, তিনি সিরিয়া থেকে আবির্ভুত হবেন। আমি আপনার দূতের সম্মান করেছি। আপনার খিদমতে দুই জন দাসী পাঠাচ্ছি। কিবতীদের মধ্যে তাদের যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। আপনার জন্যে কিছু পোশাক এবং বাহন হিসাবে একটি খচ্চরও হাদিয়া (উপহার) পাঠাচ্ছি। আপনার প্রতি সালাম। মোকাওকিস আর কোন কথা লেখেননি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তার প্রেরিত দাসীদের নাম ছিলো মারিয়া কিবতিয়া এবং সিরীন। রসূল (ﷺ) মারিয়াকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। মারিয়ার গর্ভ থেকেই রসূল (ﷺ)-এর পুত্র ইবরাহীম জন্মগ্রহণ করেন [যিনি শিশু অবস্থাতেই মারা যান।]। সিরীনকে কবি হাসসান ইবনে সাবেত আনসারীর কাছে সমর্পণ করা হয়।

পারস্য (ইরানের) সম্রাট খসরু পারভেয়ের নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে পারস্য সম্রাট কিসরার নামে ।

সালাম সে ব্যক্তির প্রতি, যিনি হিদায়াতের আনুগত্য করেন এবং আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করেন এবং সাক্ষ্য দেন, আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কেউ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল। আমি আপনাকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ আমি সকল মানুষের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। যারা বেঁচে আছে তাদের পরিণাম সম্পর্কে ভয় দেখানো এবং কাফিরদের উপর সত্য কথা প্রমাণিত করাই আমার কাজ। কাজেই আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন; যদি এতে অস্বীকৃতি জানান, তবে সকল অগ্নি উপাসকের পাপও আপনার উপর বর্তাবে। এ চিঠি নিয়ে যাওয়ার জন্যে আবুদল্লাহ ইবনে হুফা সাহমী (রা.)-কে মনোনীত করা হয়। তিনি চিঠিখানি বাহরাইনের শাসনকর্তার হাতে দেন। বাহরাইনের শাসনকর্তা দূতের মাধ্যমে নাকি আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফার মাধ্যমেই এ চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। মোট কথা চিঠিখানি কিসরা পারভেযকে পড়ে শোনানোর পর সে তা ছিড়ে ফেলে অংহকারের সাথে বলে, আমার প্রজাদের মধ্যে একজন সাধারণ প্রজা নিজের নাম আমার নামের আগে লিখেছে! রসূলুল্লাহ (ﷺ) এ খবর পাওয়ার পর বলেছিলেন, আল্লাহ তা'আলা তার বাদশাহী ছিন্নভিন্ন করে দিন। এরপর তাই ঘটেছিলো, যা রসূল (ﷺ) বলেছিলেন। পারস্য সম্রাট ইয়ামিনের গভর্নর বাযানকে লিখে পাঠায়, তোমার ওখান থেকে তাগড়া দু’জন লোককে পাঠাও, তারা যেন হিজাযে গিয়ে সে লোককে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসে। বাযান সম্রাটের নির্দেশ পালনের জন্যে দু’জন লোককে তার চিঠিসহ আল্লাহর রসূলের কাছে পাঠায়। সে চিঠিতে প্রেরিত লোকদ্বয়ের সাথে কিসরার কাছে হাযির হওয়ার জন্যে রসূল (ﷺ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের একজন বললো, শাহানশাহ এক চিঠিতে বাযানকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনাকে তাঁর দরবারে হাযির করা হয়। বাযান আমাদের আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। কাজেই আপনি আমাদের সঙ্গে পারস্যে চলুন। সাথে সাথে উভয় আগন্তুক হুমকিপূর্ণ কিছু কথাও বলে। রসূল (ﷺ) শান্তভাবে তাদের বললেন, তোমরা আগামীকাল দেখা করো এদিকে মদীনায় যখন এক মনোজ্ঞ ঘটনা চলছে, ঠিক তখন পারস্যে খসরু পারভেযের পারিবারিক বিদ্রোহ কলহ তীব্র রূপ ধারণ করে। কায়সারের [Caesar] সৈন্যদের হাতে পারস্যের সৈন্যরা একের পর এক পরাজয় স্বীকার করে যাচ্ছিলো। এমতাবস্থায় পারস্য সম্রাট কিসরার পুত্র শেরওয়ায়হ পিতাকে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে । সময় ছিলো মঙ্গলবার রাত, সপ্তম হিজরীর ১০ই জমাদিউল আউয়াল। রসূলুল্লাহ (ﷺ) ওহীর মাধ্যমে এ খবর পেয়ে যান। পরদিন সকালে পারস্য সম্রাটের প্রতিনিধিদ্বয় আল্লাহর রসূলের দরবারে এলে তিনি তাদের এ খবর জানান। তারা বললো, আপনি এসব আবোলতাবোল কী বলছেন? এর চেয়ে মামুলী কথাও আমরা আপনার অপরাধ হিসেবে গণ্য করছি। আমরা কি আপনার এ কথা বাদশাহর কাছে লিখে পাঠাবো? রসূল (ﷺ) বললেন, হাঁ, লিখে দাও। সাথে সাথে একথাও লিখে দাও, আমার দ্বীন এবং আমার হুকুমত সেখানেও পেঁৗছবে, যেখানে তোমাদের বাদশাহ পৌছেছে। শুধু তাই নয়; বরং এমন জায়গায় গিয়ে থামবে, যার আগে উট বা ঘোড়া যেতে পারে না। তোমরা তাকে একথাও জানিয়ে দিয়ো, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে যাও, তবে যা কিছু তোমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেসব আমি তোমাদের দিয়ে দেবো এবং তোমাদেরই জাতির বাদশাহ করে দেবো।

উভয় দূত এরপর মদীনা থেকে ইয়ামিনের বাযানের কাছে গিয়ে তাকে সব কথা জানায়। কিছুক্ষণ পরই ইয়ামিনে এক চিঠি এসে পৌছায়, শেরওয়ায়হ তা পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহন করেছেন। নতুন সম্রাট তার চিঠিতে ইয়ামিনের গভর্নর বাযানকে এ নির্দেশও দিয়েছেন, আমার পিতা যার সম্পর্কে লিখেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিরক্ত করবে না। এ ঘটনায় বাযান এবং তার পারস্যের বন্ধু-বান্ধব, যারা সে সময় ইয়ামিনে উপস্থিত ছিলো, সকলেই মুসলিম হয়ে যান।

রোম সম্রাট কায়সার (হিরাক্লিয়াসের) নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। সালাম সে ব্যক্তির প্রতি, যিনি হিদায়াতের আনুগত্য করেন। আপনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে শান্তিতে থাকবেন এবং দ্বিগুণ পুরস্কার পাবেন। যদি অস্বীকৃতি জানান, তবে আপনার প্রজাদের পাপও আপনার উপর বর্তাবে । হে আহলে কিতাব, এমন একটি বিষয়ের প্রতি আসো, যা আমাদের ও তোমাদের জন্যে একই সমান। সেটি হচ্ছে, আমরা আল্লাহর ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করবো না, তার সাথে কাউকে শরীক করবো না। আল্লাহ ব্যতীত আমাদের কেউ পরস্পরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করবো না, যদি লোকেরা অমান্য করে তবে তাদের বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। সেই সময় মক্কার একটি বাণিজ্য কাফেলা দল সেখানে ছিল। সম্রাট হিরাক্লিয়াস মক্কার বাণিজ্য প্রতিনিধি দলকে সামনে রেখে তার দোভাষীকে তলব করেন। এরপর দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করেন, যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন। তার সাথে বংশগত সম্পর্কের দিক থেকে তোমাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী? আবু সুফিয়ান বলেন, আমি তখন বাদশাহকে জানালাম, আমিই বংশগত দিক থেকে তার অধিক নিকটবর্তী। এরপর হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেন, এ লোকটিকে আমি সে নবীর দাবীদার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো। যদি সে কোন কথার জবাবে মিথ্যা বলে, তবে তার সঙ্গীদের বলে। দাও, তারা যেন সাথে সাথে প্রতিবাদ করে । আবু সুফিয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ, যদি মিথ্যা বলার দুর্নাম হওয়ার ভয় না থাকতো, তবে আমি তাঁর সম্পর্কে অবশ্যই মিথ্যা বলতাম। আবু সুফিয়ানকে সামনে এনে বসানোর পর হিরাক্লিয়াস তাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করেন এবং তিনি তার ঠিক ঠিক উত্তর দেন। তাদের দুজনের মধ্যে সকল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর সম্রাট হিরাক্লিয়াস বলেন : তুমি যা কিছু বলেছো, যদি এসব সত্য হয়ে থাকে, তবে তিনি খুব শীঘ্রই আমার দুই পায়ের নীচের জায়গারও মালিক হয়ে যাবেন। আমি জানতাম, এ নবী আসবেন, কিন্তু আমার ধারণা ছিলো না, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই আসবেন। আমি যদি নিশ্চিত জানতাম তাঁর কাছে পৌঁছতে পারবো, তবে তাঁর সাথে সাক্ষাতে কষ্ট স্বীকার করতাম এবং কাছে থাকলে তাঁর দুই চরণ ধুয়ে দিতাম।

বাহরাইনের শাসনকর্তা মোনযের ইবনে সাওয়ার নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে মোনযের ইবনে সাওয়ার নামে । আপনার প্রতি সালাম। আমি আপনার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি ব্যতীত ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল । অতঃপর আমি আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে সে তা নিজের জন্যেই করবে । যে ব্যক্তি আমার দূতদের আনুগত্য করবে এবং তাদের আদেশ মান্য করবে, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করবে। যারা আমার দূতদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, তারা আমার সাথেই ভালো ব্যবহার করেছে বলে মনে করা হবে । আমার দূতরা। আপনার প্রশংসা করেছেন। আপনার জাতি সম্পর্কে আপনার সুপারিশ আমি গ্রহণ করেছি। কাজেই মুসলিমরা যে অবস্থায় ঈমান এনেছে তাদের সে অবস্থায় ছেড়ে দিন। আমি দোষীদের ক্ষমা করে দিয়েছি, আপনিও তাদের ক্ষমা করুন। আপনি যতোদিন সঠিক পথ অনুসরণ করবেন, ততোদিন আমি আপনাকে পদ থেকে বরখাস্ত করবো না। যারা ইহুদী দ্বীন অথবা অগ্নি উপাসনার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তাদের জিজিয়া (ট্যাক্স) দিতে হবে ।

ইয়ামামার শাসনকর্তা হাওয়া বিন আলীর নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হাওয়া ইবনে আলীর প্রতি । সে ব্যক্তির উপর সালাম, যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেন। আপনার জানা থাকা উচিত, আমার দ্বীন উট ও ঘোড়ার শেষ গন্তব্যস্থল পর্যন্ত প্রসার লাভ করবে। কাজেই ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন এবং আপনার অধীনে যা কিছু রয়েছে সে। সব আপনার জন্যে অক্ষুন্ন রাখা হবে । এ চিঠি পৌছানোর জন্যে সালীত ইবনে আমার আমেরীকে দূত মনোনীত করা হয়। সালীত সীলমোহর লাগানো এ চিঠি নিয়ে ইয়ামামার শাসনকর্তা হাওয়া বিন আলীর দরবারে পৌছেন। হাওয়া তাকে নিজের মেহমান হিসেবে গ্রহণ করে মুবারকবাদ জানান। সালীত চিঠিখানি শাসনকর্তাকে পড়ে শোনান। তিনি মাঝামাঝি ধরনের জবাব দেন। এরপর আল্লাহর রসূলের কাছে নিম্নরূপ লিখিত জবাব দেন।

চিঠির উত্তর :

‘আপনি যে বিষয়ের দাওয়াত দিচ্ছেন, তার কল্যাণ ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত। আরবদের উপর আমার প্রভাব রয়েছে। কাজেই আপনি আমাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিন, আমি আপনার আনুগত্য করবো। শাসনকর্তা হাওয়া আল্লাহর রসূলের দূতকে কিছু গিফট প্রদান করেন। সে গিফটের মাঝে মূল্যবান পোশাকও ছিলো। সালীত সেসব নিয়ে আল্লাহর রসূলের দরবারে আসেন এবং তাঁকে সব কিছু অবহিত করেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) এ চিঠি পাঠ শেষে মন্তব্য করেন, সে যদি এক টুকরো জমিও আমার কাছে চায়, তবু আমি তাকে দেবো না। সে নিজেও ধবংস হবে এবং যা কিছু তার হাতে রয়েছে, সেসবও ধবংস হবে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা বিজয় থেকে ফিরে আসার পর জিবরাঈল (আ.) তাঁকে খবর দেন, হাওয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। রসূল (ﷺ) অতঃপর সাহাবীদের বললেন, শোনো, ইয়ামামায় একজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং আমার পরে সে নিহত হবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল, তাকে কে হত্যা করবে? রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি এবং তোমার সাথীরা। পরবর্তীকালে আল্লাহর রসূলের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

দামেশকের শাসনকর্তার হারিসের নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হারিস ইবনে আবু শিমারের নামে। সে ব্যক্তির প্রতি সালাম যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেন, ঈমান আনেন এবং সত্যতা স্বীকার করেন। আপনাকে আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছি, যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং যাঁর কোনো শরীক নেই। আপনাদের জন্যে আপনাদের রাজত্ব স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এই চিঠি আসাদ ইবনে খোযায়মা গোত্রের সাথে সম্পর্কিত সাহাবী শুজা ইবনে ওয়াহাবের হাতে প্রেরণ করা হয়। হারিসের হাতে এ চিঠি দেয়ার পর তিনি বলেন, আমার বাদশাহী আমার কাছ থেকে কে ছিনিয়ে নিতে পারে? শীঘ্রই আমি তার বিরুদ্ধে হামলা করতে যাচ্ছি। এ হতভাগ্য ইসলাম গ্রহণ করেনি।

আম্মানের বাদশাহ জীফার নামে

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে জুলানদির দুই পুত্র জীফা ও আবদের নামে। সালাম সে ব্যক্তির উপর, যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেন। অতঃপর আমি আপনাদের উভয়কে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। কেননা আমি সকল মানুষের প্রতি আল্লাহর রসূল । যারা জীবিত আছে তাদের পরিণামের ভয় দেখানো এবং কাফিরদের জন্যে আল্লাহর কথার সত্যতা প্রমাণের জন্যেই আমি কাজ করছি। ইসলাম গ্রহণ করলে আপনাদেরকেই শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখা হবে । যদি অস্বীকৃতি জানান তবে আপনাদের বাদশাহী শেষ হয়ে যাবে । আপনাদের ভূখণ্ড ঘোড়ার হামলার শিকার হবে, আপনাদের বাদশাহীর উপর আমার নবুয়ত বিজয়ী হবে। এ চিঠি পৌছানোর জন্যে আমর ইবনুল আস (রা.)-কে মনোনীত করা হয় । তিনি বলেন, আমি রওয়ানা হয়ে আম্মানে পৌছে জীফা এবং আবদের সাথে সাক্ষাৎ করি । দুই ভাইয়ের মধ্যে আবদ ছিলেন নরম মেয়াজের । তাকে বললাম, আমি আপনার এবং আপনার ভাইয়ের কাছে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছ থেকে দূত হিসেবে এসেছি। তিনি বললেন, আমার ভাই বয়স এবং বাদশাহী উভয় দিক থেকেই আমার চেয়ে বড়ো এবং অগ্রগণ্য। কাজেই আমি আপনাকে তার কাছে পৌছে দিচ্ছি, তিনি নিজেই আপনার আনীত চিঠি পড়বেন। বাদশার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা-বার্তা হয় এবং অতপর বাদশাহ বললেন, আপনি, আগামীকাল আমার সাথে দেখা করুন। এরপর আমি বাদশাহর ভাইয়ের কাছে ফিরে এলাম। আবদ বললেন, আমর, আমার ধারণা, বাদশাহীর লোভ প্রবল না হলে আমার ভাই ইসলাম গ্রহণ করবেন। পরদিন পুনরায় বাদশাহর কাছে যেতে চাইলাম, কিন্তু তিনি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেননি। আমি ফিরে এসে তার ভাইকে বললাম, আমি বাদশার কাছ পর্যন্ত পৌছতে পারিনি। সে আমাকে বাদশার কাছে পৌছে দেয়। বাদশাহ বললেন, আপনার উপস্থাপিত দাওয়াত সম্পর্কে আমি ভেবে দেখেছি। আমি যদি বাদশাহী এমন একজনের কাছে ন্যস্ত করি, যার সেনাদল এখনো পৌছেইনি, তবে আমি আরবে সবচেয়ে দুর্বল এবং ভীরু বলে পরিচিত হবো। যদি তার সৈন্যরা এখানে এসেই পড়ে, তবে আমরা তাদের যুদ্ধের সাধ মিটিয়ে দেবো। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি আগামীকাল ফিরে যাচ্ছি। আমার যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়ার পর বাদশাহ তার ভাইয়ের সাথে নির্জনে মতবিনিময় করেন। বাদশাহ তার ভাইকে বললেন, এ রসূল যাদের উপর বিজয়ী হয়েছে, তাদের তুলনায় আমরা কিছুই না। তিনি যার কাছেই খবর পাঠিয়েছেন তিনিই দাওয়াত কবুল করেছেন। পরদিন সকালে পুনরায় আমাকে বাদশাহর দরবারে ডাকা হয়। বাদশাহ এবং তার ভাই উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ঈমান আনেন। সদাকা আদায় এবং বাদী ও বিবাদীর মধ্যে ফয়সালা (মীমাংসা) করতে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়।

কেউ আমার বিরোধিতা করলে তারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করেন। এ ঘটনার বিবরণ ও প্রকৃতি দেখে মনে হয়, অন্যান্য বাদশাহকে চিঠি লেখার পর আল্লাহর রসূল (ﷺ) এ চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। সম্ভবত মক্কা বিজয়ের পর এ চিঠি প্রেরণ করা হয়। এ সকল চিঠির মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় তাঁর দাওয়াত পৌছে দিয়েছিলেন। জবাবে কেউ ঈমান এনেছে, কেউ কুফরীর উপরই অটল থেকেছে। তবে এ সকল চিঠির প্রভাব এটুকু হয়েছে, যারা কুফরী করেছে তাদের মনোযোগও এদিকে আকৃষ্ট হয়েছে। এবং তাদের কাছে আল্লাহর রসূলের নাম এবং তার প্রচারিত দ্বীন একটি পরিচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

চীনে তাওহীদের ধ্বনি

আবিসিনিয়ার বাদশাহ নিজের উদ্যোগেই চীনে ইসলাম প্রচারক দল প্রেরণ করেছিলেন, এ কারণেই বোধহয় আল্লাহর নবী পৃথকভাবে চীনে কোন দল প্রেরণ করেননি। চীনে সাহাবায়ে কেরাম এসে ইসলামের আলো প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন, চীনের কোয়াটাং মসজিদ সেদিনের সাক্ষী হয়ে আজও নিজের গৌরব ঘোষণা করছে। সাহাবায়ে কেরামই সে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ইসলামের নাম শুনলে যারা সাম্প্রদায়িকতা আর সন্ত্রাসের গন্ধ পায়, তাদের জেনে রাখা উচিত- ইসলাম তরবারী বা শক্তি প্রয়োগ করে অথবা ষড়যন্ত্রের পথ ধরেও আসেনি। কোন জাতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইসলাম তাদের ঘাড়ের ওপরে পুঁজিবাদ আর সমাজবাদের মত চেপে বসেনি। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম আপন মহিমার গুণেই সর্বস্তরের মানুষের অন্তর জয় করেছিল ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন