মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
হিযরতের আগে যেসব সূরা নাযিল হয়েছে তাদেরকে মক্কী সূরা বলে। যেমন : সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস ।
২. মাদানী সুরা
হিযরতের পরে যেসব সূরা নাযিল হয়েছে তাদেরকে মাদানী সূরা বলে । হিযরতের পরে যদি কোন সূরা মক্কায়ও নাযিল হয়ে থাকে তাকেও মাদানী সূরা বলা হয় । যেমন : সূরা নসর।
৩. হিজরত (Hijrat)
অর্থ - দেশত্যাগ, স্থানান্তর গমন। সাধারণ অর্থ হলো দেশত্যাগ বা স্থানান্তর গমন। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় ইসলাম ধর্ম পালনের সুবিধার্থে স্বদেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে গমন যা নবী কারীম (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদীনায় গিয়ে করেছিলেন (৬২২ খৃষ্টাব্দে)। এই হিজরতের তারিখ থেকে। ইসলামের হিজরী সনের সূচনা।
৪. আনসার
আনসার অর্থ সাহায্যকারী। দ্বীনের পথে মুহাযীরদের যারা আশ্রয় দেন, সাহায্য সহযোগিতা করেন তারাই আনসার । মদীনার স্থায়ী বাসিন্দা যারা মুহাযীরদের সাহায্য ও আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদেরকে আনসার বলা হয়। আনসারগণ রাদিআল্লাহু আনহুম মক্কার সাধারণ লোকদের তুলনায় দ্বীনের প্রতি অধিক সংবেদনশীল ছিলেন।
৫. মুহাযীর
দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে যারাই নিজ জন্মভূমিতে নিগৃহীত হয়েছিলেন, নির্যাতিত হয়ে বহিষ্কারের সম্মুখীন হয়েছিলেন তারাই মুহাযীর। যেমন - যে সকল সাহাবা হিযরত করে মক্কা থেকে মদীনায় এসেছিলেন তাদেরকে মুহাযীর বলা হয়।
৬. ওহী
যা সরাসরি আল্লাহর কথা এবং জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সরাসরি রসূল (ﷺ) -এর কাছে এসেছে অর্থাৎ কুরআনের আয়াতগুলোকেই ওহী বলে।
অর্থ হচ্ছে ইশারা করা, মনের মধ্যে কোন কথা প্রক্ষিপ্ত করা, গোপনভাবে কোন কথা বলা এবং ম্যাসেজ পাঠানো । ওহী অর্থ ‘ইলকা’, ইলহাম, মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া। ওহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে গোপন এবং ত্বরিত ইংগিত।
৭. গায়েব
অর্থ - অদৃশ্য বা গোপন। গায়েব শুধুমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। এই পৃথিবীর অনেকে আছেন যারা গায়েব বা অদৃশ্য বা ভবিষ্যৎ জানেন বলে দাবি করেন। কিন্তু এই ধরনের দাবী করা শিরক। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়েবের খবর জানেন না সে যতো বড় বুজুর্গই হোক না কেন এটা স্পষ্ট কুরআনের কথা। তবে নবী রসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
“ (হে রসূল) বল : আল্লাহ ব্যতীত কেউই আকাশ ও পৃথিবীতে গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (সূরা নামল : ৬৫)
“গায়েবের সবকিছু একমাত্র তিনিই জানেন। আর কারও কাছেই তিনি গায়েবের কোন বিষয় প্রকাশ করেন না। তবে রসূলগণের মধ্যে যাকে পছন্দ করেন তাকেই তিনি কিছু বাতলে দেন।” (সূরা জ্বীন : ২৬-২৭)
৮. আলেম
ইলম (knowledge) থেকে আলেম শব্দের উৎপত্তি। যার দ্বীন ইসলামের উপর সহীহ (authentic) জ্ঞান আছে তাকে আলিম বলে । ওলামা হচ্ছে আলিমের বহুবচন।
৯. ইহুদী ও নাসারা
ইহুদী হচ্ছে যারা তাওরাতের অনুসারী এবং মুসা (আ.) এর অনুসারী। আর খ্রীষ্টানদেরকে নাসারা বলে ।
১০. আহলি কিতাব
কিতাবপ্রাপ্তগণ (ইহুদি ও খৃষ্টানগণ) যারা তাদের নারীদের মাধ্যমে আসমানী কিতাব লাভ করেছেন।
১১. আহলি বাইত
নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পরিবারকে আহলি বাইত বলা হয় । মূল অর্থ “ঘরের লোকজন/ঘরের বাসিন্দারা”। ব্যবহারিক অর্থ রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর পরিবার এবং তাঁর বংশধরগণ (কন্যা ফাতিমা ও আলীর সন্তানদের মাধ্যমে)।
১২. সলাত (নামায)
সলাত আরবী শব্দ এর ফার্সি শব্দ হচ্ছে নামায । আল্লাহ সলাত বলতে আসলে যা বুঝিয়েছেন সেটাকে নামায বললে পরিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না, অর্থাৎ অসমাপ্ত থেকে যায় । তাই আমাদের উচিত সলাতকে নামায না বলে সলাতই বলা।
সলাতের সংজ্ঞা :
‘সলাত’-এর আভিধানিক অর্থ দু'আ, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে ‘শরী’আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত অনুষ্ঠানকে ‘সলাত' বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালামের। দ্বারা শেষ হয়।
১৩. সলাত কায়েম (আকিমুসসলাহ)
কুরআনে সলাত আদায়ের চাইতে কায়েমের কথাই বেশী এসেছে। সলাত। কায়েম অর্থ সলাতকে প্রতিষ্ঠা করা (শুধু সলাত পড়া বা আদায় করা নয়)। অর্থাৎ পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, কর্মক্ষেত্রে সলাত চালু করা । সলাত কায়েম করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে লোকদেরকে বুঝানো এসবই সলাত কায়েমের অংশ। সলাতের শিক্ষা ও এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্রাতৃিত্ব, আনুগত্য, সাম্য, ঐক্য, শান্তি ইত্যাদির ব্যাপারে মানুষকে পরিচিত করানো ও শিক্ষা দেয়া। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা হচ্ছে সলাত কায়েম করার সবচাইতে কার্যকরী মাধ্যম।
১৪. রমাদান/সাওম/সিয়াম/রোযা
আরবী যে বারটি মাস রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে রমাদান মাস। রমাদান এর ফার্সি শব্দ হচ্ছে রমযান । সিয়াম আরবী শব্দ এর ফার্সি শব্দ হচ্ছে রোযা। আরবী বছরের ২য় হিজরীতে রমাদান মাসে সিয়াম ফরয করা হয়েছে। মাহে ফার্সি শব্দ যার অর্থ মাস আর মাহে রমাদান অর্থ - রমাদান মাস। আমরা বলি রমাদান কারিম বা রমাদান মুবারক, এ দুটিই আরবী শব্দ। কারিম অর্থ - ‘মহান’ আর মুবারক অর্থ - ‘কল্যাণময় হোক’ । আবার আমরা বলি খোশ আমদেদ মাহে রমাদান, খোশ আমদেদ-ও ফার্সি শব্দ যার অর্থ - ‘স্বাগতম।
১৫. জিহাদ
‘জিহাদ’ শব্দের অর্থ প্রচেষ্টা বা Struggle. কোন কিছু লাভ করার জন্য শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সকল প্রকার প্রচেষ্টা এবং তার জন্যে। সকল উপায়-উপাদান কাজে লাগানোকে জিহাদ বলে । ফী সাবীলিল্লাহ অর্থ আল্লাহর রাস্তায়। আল্লাহর রাস্তায় সর্বদিক থেকে এবং সব উপায় অবলম্বন করে প্রচেষ্টা চালানোকে জিহাদ বলে । দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য জবান, লেখনী, প্রচার মাধ্যম, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক তৎপরতা, সম্পদ ব্যয়, সর্বোপরি নিজের জীবন বিলিয়ে দেবার নাম জিহাদ। দ্বীনের জন্য একটি বাক্য ব্যয় করা, এক কদম হেঁটে যাওয়া, একটি লেখনী, সুন্দর ব্যবহার সবই জিহাদের অংশ। দ্বীনকে সমুজ্জল করার জন্য যে কোন প্রচেষ্টাও জিহাদের অংশ। দ্বীনের কাজে লাগবে, মুসলিম জনতার উপকারে আসবে এমন সকল প্রচেষ্টায় রত কাজই জিহাদের সমতুল্য। জিহাদের অর্থ যুদ্ধ, ধবংস বা রক্তপাত নয় । যুদ্ধ হচ্ছে “হারূব” এবং “কতল” হচ্ছে লোক হত্যা । জিহাদ দুই ধরণের হতে পারে :
১. আল্লাহর পথে জিহাদ
২. শয়তানের পথে জিহাদ
আমার যে প্রচেষ্টা দ্বীনের উপকারে আসবে তাই আল্লাহর পথে জিহাদ। আর আমার যে প্রচেষ্টা দ্বীনের কোন উপকারে আসবে না রবং দ্বীনের ক্ষতি করবে তা হচ্ছে শয়তানের পথে জিহাদ।
১৬. মুজাহিদ (Mujahid)
অর্থ - জিহাদকারী (a fighter)। জিহাদ শুধু অস্ত্রশস্ত্র হাতে হিংস্রতা নয়, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবেও করা যায়। আক্রান্ত না হলে কারো বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা বা আক্রমণ করা ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না। অস্ত্রের সাহায্যে জিহাদ করে ইসলাম ধর্ম জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ধারণা ভুল।
১৭. এস্তেখাৱা
এস্তেখারা অর্থ হলো মঙ্গল কামনা করা। পরিভাষা হিসেবে এস্তেখারা অথবা ইস্তেখারার সলাত বলতে ঐ নফল সলাত বুঝায় যা নবী (ﷺ) মুসলিমদেরকে এ উদ্দেশ্যে শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি কখনো কোন জায়েয কাজ করতে গিয়ে তার ভালো দিকটা কি তা সুস্পষ্ট হয় না এবং ভালো মন্দ কোন দিক সম্পর্কেই নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না, তখন দু'রাকায়াত নফল সলাত আদায় করে এস্তেখারার মসনূন দু'আ পড়বে আশা করা যায় যে, আল্লাহ এস্তেখারা সলাতের বরকতে কোন একটি দিক সম্পর্কে নিশ্চিন্ত অথবা মনের প্রবণতা সৃষ্টি করে দেবেন।
১৮. কুনুতে নাযেলা
কুনুতে নাযেলা বলতে ঐ দু’আ বুঝায় যা দুশমনের ধবংসকারিতা থেকে বাঁচতে, তার শক্তি চূর্ণ করতে এবং তার ধবংসের জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়েছেন। নবীর পর সাহাবীগণও তা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন।
১৯. ফরয
এমন কাজ যা করা প্রত্যেক মুসলিমের অপরিহার্য এবং তা অস্বীকারকারী কাফের। যে ব্যক্তি বিনা ওযরে ফরয ত্যাগ করবে সে ফাসিক ও শাস্তিরযোগ্য। ফরয দু'প্রকার। ফরযে আইন, ফরযে কিফায়া।
২০. ফরযি আইন
যা করা প্রত্যেক মুসলিমের একেবারে অপরিহার্য, না করলে কঠিন গুনাহগার এবং শাস্তির যোগ্য। যেমন সলাত, সিয়াম প্রভৃতি।
২১. ফরযি কিফায়া
যা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের জন্যে অপরিহার্য নয়, সামগ্রিকভাবে সকল মুসলিমের ফরয, যাতে করে কিছু লোক আদায় করলে সকলের জন্যে হয়ে যায়, আর কেউই আদায় না করলে সকলে গুনাহগার হবে। যেমন জানাযার সলাত, মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন করা ইত্যাদি।
২২. ওয়াজিব
ওয়াজিব আদায় করা ফরযের মতোই অনিবার্য। যে ব্যক্তি একে তুচ্ছ ও গুরুত্বহীন মনে করে এবং বিনা কারণে ত্যাগ করে সে ফাসিক এবং শাস্তির যোগ্য হবে। এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী। অবশ্যি ওয়াজিব অস্বীকারকারীকে কাফির বলা যাবে না।
২৩. মুস্তাহাব
অর্থ - উত্তম, মুস্তাহাব এমন আমলকে বলা হয় যা নবী (ﷺ) মাঝে মাঝে করেছেন এবং অধিকাংশ সময়ে করেননি। এ আমলে অনেক সওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই।
২৪. সুন্নাহ : (Sunnah)
অর্থ - চলার পথ । সুন্নাহ কথাটার সাধারণ অর্থ হচ্ছে চলার রাস্তা, a path of going. কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় সুন্নাহ কথাটার অর্থ হচ্ছে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রদর্শিত আল্লাহর ইবাদত এবং দুনিয়ার (জাগতিক) কর্মকান্ডে (দীন এবং দুনিয়ার বিষয়ে) আল্লাহর কুরআন ও তাঁর অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর জীবনের কর্মপদ্ধতির সঠিক অনুসরণ মুসলিমদের পালনীয় ও করণীয় । রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সুন্নাহ, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রদর্শিত পথ যার সঠিক অনুসরণ আখিরাতে জান্নাত লাভের সহায়ক হবে। সঠিক সুন্নাহের দেখা পাওয়া যাবে একমাত্র তাঁর সহীহ হাদীসগুলোতে।
২৫. সুন্নাতে মুয়াকাদাহ
ঐসব কাজ যা নবী (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কিরাম রাদিআল্লাহু আনহুম সবসময় করেছেন এবং কারণ ব্যতীত কখনো ত্যাগ করেননি। অবশ্যি যারা করেনি। তাদেরকে সতর্ক করে দেননি। তবে যে ব্যক্তি বিনা কারণে তা পরিত্যাগ করে। এবং ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস করে সে ফাসিক এবং গুনাহগার। নবী (ﷺ) -এর শাফায়াত থেকে সে বঞ্চিত হবে। অবশ্যি ঘটনাক্রমে কোনটা বাদ গেলে সে অন্য কথা।
২৬. সুন্নাতে গায়ের মুয়াকাদাহ
যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা সাহাবীগণ করেছেন এবং বিনা কারণে কখনো আবার ছেড়েও দিয়েছেন। এ কাজ করলে খুব সওয়াব না করলে গুনাহ নেই।
২৭. নফল ইবাদত
নফল মানে ফরযের অতিরিক্ত ইবাদত। আল্লাহর দেয়া সকল ইবাদতই দুই ভাগে বিভক্ত, হয় ফরয অথবা নফল। তাই ফরয ইবাদত ব্যতীত সকল ইবাদতই নফল । ফরয ব্যতীত আল্লাহর রসূল যত ইবাদত করেছেন সবই নফল অর্থাৎ অতিরিক্ত । এই নফল ইবাদতগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে ফিকাহবিদগণ সেগুলোকে সুন্নাহ ও নফলে ভাগ করেছেন। যেসব নফল রসূলুল্লাহ (ﷺ) নিয়মিত পড়তেন বা পড়তে তাকীদ করতেন, সেগুলিকে ফিক্বহী পরিভাষায় ‘সুন্নাতে রাতেবাহ’ অথবা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলা হয়। যেমন ফরয সলাত সমূহের আগে-পিছনের সুন্নাতসমূহ। দ্বিতীয় প্রকার সুন্নাত হলো ‘গায়ের মুওয়াক্কাদাহ', যা আদায় করা সুন্নাত এবং যা করলে সওয়াব আছে, কিন্তু তাকীদ নেই অর্থাৎ না করলে কোন গুনাহ নেই। নফল ইবাদত পালন করলে সওয়াব আছে কিন্তু না করলে গুনাহ নেই এবং এর জন্য আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে না। তবে ফরয ইবাদাতে যদি কোথাও ঘাটতি পড়ে তাহলে কোন কোন ক্ষেত্রে নফল দিয়ে তা পূরণ করা হবে। তাই নফল ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২৮. মাকরূহ ও মুবাহ
মাকরূহ অর্থ ও ঘৃণ্য, পরিত্যাজ্য তবে হারাম নয়। এবং মুবাহ অর্থ : ইবাদত অথবা হারাম-হালাল সংশ্লিষ্ট নয় তেমন সব বিষয়ে ব্যক্তিগত রুচি-পছন্দের চর্চা যা করলে সওয়াবও নেই অথবা না করলে গুনাহও নেই।
২৯. বিদ’আত
ইসলামে ইবাদতের ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহতে (রসূলুল্লাহের সহীহ হাদীসে) উল্লিখিত বা বর্ণিত হয়নি এমন সব ইবাদত বা ইবাদতের পদ্ধতি, এদের সবই বিদ’আত (দীনে ইসলামে নূতন সংযোজন)। বিদ’আত সর্বদাই পরিত্যাজ্য। কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সহীহ হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলে গেছেন যে বিদ'আত হচ্ছে পথভ্রষ্টতা (দালালাহ/গুমরাহী) এবং সেই পথভ্রষ্টতা তার আমলকারীকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে ।
৩০. হাদীস (বহুবচন আহাদীস) (Hadith/ Ahadith)
রসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর কথা, কাজ ও সমর্থন যা সহীহ সূত্রে বিভিন্ন হাদীস সংগ্রহ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। হাদীস বলতে বুঝায় রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কথা, কাজ ও অনুমোদন - ইবাদতের ক্ষেত্রে এবং মু’আমেলাত বা সাংসারিক/সামাজিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রে । গ্রহণযোগ্যতার বিচারে হাদীস সাধারণভাবে চার ভাগে বিভক্ত –
১) সহীহ,
২) হাসান সহীহ (সন্দেহাতীতভাবে সঠিক ও গ্রহণযোগ্য, আমলযোগ্য),
৩) যঈফ (দুর্বল, আমলযোগ্য নয়) এবং
৪) মওজু (জাল, বানোয়াট, false/fabricated হাদীস, সর্বদা বর্জনীয়/পরিত্যাজ্য) হাদীসের অন্য একটি শ্রেণীবিভাগও রয়েছে। সেগুলো হলো –
১) কাউলী হাদীস : যে সকল হাদীস রসূলুল্লাহের ss নিজের মুখের কথা, সেগুলি কাউলী হাদীস । (কাউল অর্থ হলো মুখের কথা)
২) ফে’লী হাদীস : যে সকল হাদীসে রসূলুল্লাহের ১৮ কোন কাজের বর্ণনা রয়েছে – তাঁর মুখের কথা নয় - সেগুলি ফে’লী হাদীস। ফা’আলা অর্থ কাজ করা, সেখান থেকে ফে’লী।
৩) তাকরিরী হাদীস : যে সকল হাদীসে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কোন মুখের কথা বা কোন কাজ বর্ণিত হয়নি বরং অন্যের করা কোন কাজকে অনুমোদন ও সমর্থন দিয়েছেন সেগুলি হচ্ছে তাকরিরী হাদীস। (তাকরিরী অর্থ সমর্থিত। মূল শব্দ হলো ইকরার যার অর্থ হচ্ছে স্বীকৃতি বা সমর্থন) হাদীসের চারটি নাম রয়েছে – হাদীস, সুন্নাহ, আসার ও খাবার। “আসার” কথাটা থেকেই মাসুরা শব্দের উৎপত্তি, যেমন দু’আয়ে মাসুরা, অর্থাৎ যেসব দু'আ রসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে।
৩১. পীর
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় পীর বলতে কোন শব্দ নেই। পীর ফারসী শব্দ। মানুষের বয়স বেশী হয়ে গেলে সেই বুড়োবুড়ি মানুষকে বলা হয় পীর। পারস্যের অগ্নি পূজারীদের পুরোহিতকে বলা হয ‘পীরে মুগা। ফারসী অভিধানে ‘পীরে মুগার’ অর্থ করা হয়েছে- ‘আতাশ পোরকা মুরশেদ’ (অগ্নিপূজারীদের পুরোহিত)। খ্রীষ্টানদের Priest আর হিন্দুদের পুরোহিত বলতে যা বুঝায়, পীর বলতে ঠিক তাই বুঝায় ।
৩৪) সিহা সিন্তা
৬টি হাদীসগ্রন্থকে বলে সিহা সিত্তা । যথা :
১) সহীহ বুখারী;
২) সহীহ মুসলিম;
৩) তিরমিযি;
৪) আবু দাউদ
৫) ইবনে মাজাহ;
৬) নাসাঈ
৩৫. হাদীসে কুদী (Hadith-e-Qudsi)
আল্লাহর বাচনিক হাদীস, তবে বর্ণনার ভাষা রসূলুল্লাহের এক নিজস্ব। আল্লাহ পবিত্র (কুদ্স), সেই থেকে কুদসী। এ ধরণের হাদীসগুলো রসূলুল্লাহের (ﷺ) নিজস্ব বক্তব্য নয়, স্বয়ং আল্লাহর বক্তব্য যা বলার আগে ভূমিকা স্বরূপ রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন যে, “আল্লাহ আমাকে একথা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন যে বলঃ
জেনে রাখা ভালো যে হাদীসে কুক্সী কুরআনের কোন অংশ নয়। হাদীসে কুদ্সী জিবরাঈল ফিরিশতার মাধ্যমেই communicated হয়েছিল বলে এর অপর নাম হাদীসে জিবরাঈল ।
৩৬. কিয়াস ও ইজমা (Deduction & Concensus)
কুরআন ও সুন্নাহের পরোক্ষ (প্রত্যক্ষ নয়), একাধিক অর্থবোধক বা কুরআন ও সুন্নাহে উল্লেখ নেই এমন বিষয়ে, কুরআন ও সুন্নাহর অন্য তথ্যের আলোকে, বিচক্ষন (ফকিহ) ব্যক্তিদের উন্নত বিবেক-বুদ্ধি (Common sense) খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে উদঘাটন করা সিদ্ধান্তকে কিয়াস (Deduction) বলে । আর কোন বিষয়ে সকলের কিয়াসের ফলাফল এক হওয়া বা কারো কিয়াসের ব্যাপারে সকলের একমত হওয়াকে ইজমা (Concensus) বলে । তাই সহজে বুঝা যায় কিয়াস বা ইজমা ইসলামের আল্লাহ প্রদত্ত উৎস নয় । কিয়াস ও ইজমা হলো আল্লাহ প্রদত্ত উৎস তিনটি তথা কুরআন, সুন্নাহ ও বিবেক-বুদ্ধি (Common sense) ব্যবহার করে কোন বিষয়ে, বিচক্ষন (ফকিহ) ব্যক্তিদের নেয়া একক বা সামষ্টিক সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ কিয়াস ও ইজমার মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহের সাথে আল্লাহ প্রদত্ত তৃতীয় উৎস Common sense উপস্থিত আছে। ইজমাকে ইসলামী জীবন বিধানের একটি দলিল হিসেবে ধরা হলেও মনে রাখতে হবে, ইজমার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয় নয়। কারণ, মানব সভ্যতার জ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কুরআন ও সুন্নাহর ঐ সকল অস্পষ্ট বক্তব্য আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ফলে ঐ সব বিষয়ে কিয়াস ও ইজমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানের বিষয়ের মত অন্য যে কোন বিষয়েই তা হতে পারে।
৩৭. ইস্তিগফার (Istighfar)
অর্থ - ক্ষমা প্রার্থনা, দয়া ভিক্ষা ।
ক) কোন গুনাহের কাজ করে ফেললে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা- আস্তাগফিরুল্লাহ – আল্লাহ, তোমার কাছে ক্ষমা চাই।
খ) অশালীন কোন কথা শুনলে অথবা কিছু দেখলেও আস্তাগফিরুল্লাহ বলে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। যার অর্থ এই যে ঐসব আপত্তিকর কাজ আমি ঘৃণা করি, দূরে থাকতে চাই।
৩৮. ইয়াউমুল কিয়ামাহ (Yawmul Qiyamah)
কিয়ামতের দিন (The Day of Resurrection/ The Day of Judgment)। আরবী কিয়াম অর্থ উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানোও বটে। সেই মহাদুর্যোগপূর্ণ দিনে সকল পুনর্জীবিত মানুষ হাশরের ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকবে (কিয়াম করবে) আল্লাহর বিচারের রায় শোনার জন্যে।
৩৯. জাযাকাল্লাহ (Jazakallah)
জাযা অর্থ ও প্রতিফল, প্রতিদান, বিনিময় । জাযাকাল্লাহ অর্থ : আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান/পুরষ্কার দিন। কেউ কোন সাহায্য-সহায়তা করলে সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা হচ্ছে জাযাকাল্লাহ। কখনো কখনো জাযাকাল্লাহু খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম পুরষ্কার দিন)ও বলা হয় ।
৪০. তাওবা (Tawba)
অর্থ - অনুতাপ, পাপ থেকে প্রত্যাবর্তন, অনুশোচনা। গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে কাতরতার সংগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। তওবার শর্তগুলো হচ্ছে -
ক) অবিলম্বে তওবা করা (কুরআন ৪:১৭)।
খ) খালিস দিলে তওবা করা (কুরআন ৬৬:৮)
গ) সেই ধরনের গুনাহ ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা ।
ঘ) সেই প্রতিজ্ঞায় অটল থাকা।
ঙ) অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া । (কুরআন ৩৯: ৫৩, ৫৪)
৪১. তাকবীরে তাহরীমা (Takbeer-e-Tahreema)
অর্থ - দুনিয়ার চিন্তা ও কাজ হারামকারী তাকবীর। সলাতের (নামাযের) শুরুতে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিয়ত করে দু’হাত দু’কাঁধ অথবা দু’কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে আবার বুকের উপর দু’হাত বাঁধার সময় যে ‘আল্লাহু আকবার বলতে হয়। তাকে বলা হয় তাকবীরে তাহরীমা’ । “আল্লাহু আকবার' কথাটার নাম তাকবীর, আর তাহরীমা অর্থ হচ্ছে দুনিয়ার কাজ ও চিন্তা হারামকারী। অর্থাৎ এই আল্লাহু আকবার বলা মাত্র সেই মুসল্লীর জন্যে দুনিয়ার সমস্ত কাজ ও চিন্তা হারাম হয়ে গেল যতক্ষণ পর্যন্ত সে সলাত শেষ করে তার ডানে-বামে সালাম না ফিরাচ্ছেন।
৪২. তাকবীর (Takbeer)
আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা ।
৪৩. তাসবীহ (Tasbeeh)
সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ মহান ও পবিত্র) বলে আল্লাহর প্রশংসা করা।
৪৪. তাহলীল (Tahleel)
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য অন্য কোন সত্তা নেই) বলে আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ) ঘোষণা করা ।
৪৫. তাসমিয়াহ (Tasmiah)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। প্রারম্ভ বাক্য। কোন শুভ কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা।
৪৬. তায়াম্মুম (Tayammum-Dry Ablution)
অর্থাৎ পানির অভাবে পাকসাফ শুকনা মাটি বালু দিয়ে বিকল্প ও। পানির অভাবে অথবা কোন কারণে পানি ব্যবহারে বাধা থাকলে পাকসাফ শুকনা মাটি/বালু দিয়ে শরীয়তি পদ্ধতিতে হাত ও মুখ মুছে বিকল্প ওযূ করা জাইয, যার নাম তায়াম্মুম । এটা আল্লাহের আদেশ (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৬ এবং সূরা নিসা (৪), আয়াত ৪৩)। সলাতের আগে ওযূর মত তায়াম্মুমও ফরয, না করলে সলাত হবে না।
৪৭. তাহাৱাত (Taharat)
অর্থ - পবিত্রতা। আল্লাহর কাছে বান্দার ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম শর্ত হলো শরীয়তি পদ্ধতি অনুসারে তার দেহ, পোশাক ও ইবাদতের স্থানের পবিত্রতা (তাহারত) অর্জন গোসল, ওযূ অথবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে (কুরআন ৫ : ৬; ৪ : ৪৩)
যারা পবিত্রতা অবলম্বন করে, পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন (৯: ১০৮; ২ : ২২২; ৭৪ : ৪)
হাদীসে আছে, তাহারাত হচ্ছে ঈমানের অংগ ।
৪৮. তাওয়াক্কুল (Tawakkul)
অর্থ - আল্লাহর উপর ভরসা, নির্ভরতা। আল্লাহ তাঁর কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন যে মু'মিনগণ যেন সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে সর্বাবস্থায় তার উপর তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করে কারণ তিনিই সবকিছুর নিয়ন্তা ও দাতা, অন্য কেহ নহে। সুখের দিনে আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই) বলা এবং দুঃখের দিনে আলহামদুলিল্লাহে 'আলা কুল্লি হাল (সর্বাবস্থাতেই প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর) বলা। আল্লাহর উপর ভরসা, নির্ভর করলে আল্লাহ-ই যথেষ্ট। তিনি গুনাহ মাফ করবেন, পুরষ্কার দেবেন। (কুরআন ৮: ৬১ এবং ৬৫: ৩, ৫)
৪৯. দুআ/দোয়া (Du'a Supplication)
আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার জন্যে প্রার্থনা। দু’আ অর্থ প্রার্থনা। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : “দু’আই ইবাদত।” (আদ দু’আউ হুয়াল ইবাদত) - আহমাদ, আবু দাউদ প্রভৃতি)
সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দু’আ করা অর্থ হলো সেই ব্যক্তির ইবাদত করা যা শিরক ও হারাম ।
৫০. দরূদ/দুরূদ (Durud)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর জন্যে আল্লাহর কাছে আশীর্বাদ ও শান্তির প্রার্থনা (কুরআন ৩৩ : ৫৬)। এটি ফার্সি শব্দ। ইসলাম ধর্ম নিয়ে আলোচনার একটা বইতে দেখলাম যে ফাসি শব্দ দুরাদের মূল অর্থ কোন জিনিস কেটে টুকরা টুকরা করা। এর সংগে রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্যে আশীর্বাদ ও শান্তি প্রার্থনার কি সম্পর্ক সেটা বোঝা যায় না। মূলতঃ কুরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত আরবী “সলাত” ও “সালাম” কথা দু'টির প্রতিশব্দ হিসাবে বাংলা ও উর্দু ভাষায় এই দরূদ দুরূদ কথাটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের উচিৎ সলাত ও সালাম বলা, দরূদ নয়, কারণ এটা কুরআন-হাদীসের ভাষা নয়। হাদীসের কোন ইংরেজী অনুবাদেই দুরূদ কথাটার দেখা পাওয়া যায় না, আছে সলাত ও সালাম। এখানে। সালাত অর্থ আর্শীবাদ (blessings) এবং সালাম অর্থ শান্তি (peace). সহীহ হাদীসে প্রচুর সলাত ও সালামের (প্রচলিত ভাষায় দুরূদের) উল্লেখ রয়েছে যা আমরা বরাবরই পড়ে থাকি ।
৫১. নিকাহ (Nikah)
অর্থ - বিবাহ, বিয়ে । মুসলিম নারী ও পুরুষের মাঝে ইসলামী শরীয়ত অনুসারে লিখিত কাবিন সাপেক্ষে সাক্ষী রেখে বহু লোক সমক্ষে বিবাহবন্ধন অনুষ্ঠান।
৫২. পুলসিরাত (Pulsirat)
ইসলামী আকীদা অনুসারে হাশরের মাঠে শেষ বিচারের দিনে জাহান্নামের উপরে যে পুলটা আল্লাহ স্থাপন করবেন সেটা। ফার্সি পুল (bridge) এবং আরবী সিরাত (রাস্তা /path/road)। জান্নাতে যেতে হলে সকল মানুষকে হেঁটে সেই পুলসিরাত পার হতে হবে (কুরআন ১৯ : ৭১)।
যে পারবে না, সে নীচে জাহান্নামে পড়ে যাবে । উল্লেখ করা দরকার যে কুরআনে এই পুলসিরাতের স্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই, এর আলোচনা শুধু হাদীসে পাওয়া যাবে। সূরা মারিয়াম (১৯), আয়াত ৭১ এবং সূরা কালাম (৬৯), আয়াত ৪২ এর আলোচনায় মুহাম্মদ মুহসিন খান ও তাকিউদ্দীন আল-হিলালীর কুরআনের English translation- (Pages 455, 848, 849)এ পুলসিরাতের আলোচনা আছে।
৫৩. ফিকহ (Fiqh)
ইসলামী জ্ঞানের নানা শাখার একটি। ইবাদতের নানা নিয়ম-পদ্ধতি-মাসালা ইত্যাদি যে শাস্ত্রে আলোচিত হয়েছে সেটা। ফিকহ্ শব্দের অর্থ বুদ্ধি বিবেচনা, ধীশক্তি, উপলব্ধি, পরিভাষায় ফিকহ্ অর্থ শরয়ী আহকাম। যা কুরআন ও সুন্নায় গভীর জ্ঞান ও পারদর্শিতা সম্পন্ন আলেমগণ কুরআন সুন্নাহ থেকে যুক্তি প্রমাণসহ বের করেছেন।
১) ইসলামের শরীয়তি বিধি-বিধান । Islamic jurisprudence.
২) যে আলেম ফিকহ শাস্ত্রে পারদর্শী তিনি ফকীহ, বহুবচন ফুকাহা ।
৩) বুদ্ধিমান অর্থেও ফকীহ কথাটা ব্যবহৃত হয় ।
৪) বাংলা ভাষায় ফিকহ কথাটাকে ফিকাহ্ বলা হয় ।
৫৪. ফিদইয়া (Fidya)
অর্থ - আর্থিক ক্ষতিপূরণ (Redemption)। ইবাদতের ক্ষেত্রে (রোযা বা হাজ্জে) কোন ত্রুটি ঘটে গেলে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ শরীয়তি বিধান অনুসারে অর্থ ব্যয় । যথা অনুমোদিত কারণে রোযা রাখতে না পারলে তার পরিবর্তে একজন গরীব লোককে প্রতিদিন দুইবেলা পেট ভরে খেতে দেয়া।
৫৫. ফিতনা (Fitnah) – ফাসাদ (Fasad)
আযমাইশ (ফার্সি) (Azmaish- পরীক্ষা)। অরাজকতা, বিশৃংখলা, বিদ্রোহ, ধর্মীয় নির্যাতন। হাংগামা, গোলযোগ, হত্যা, রক্তপাত, বিদ্রোহ, বিভেদ, পরীক্ষা ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ফিতনা আল্লাহর খুব অপছন্দ, তাই তিনি মুসলিমদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন : ফিতনা হত্যা অপেক্ষাও গুরুতর অন্যায় (সূরা বাকারা : ১৯১, ২১৭)।
ঈমানদার মানুষ যখন বিপদগ্রস্ত হয়, কোন সমস্যায় পড়ে তখন সে ভাবে, আল্লাহ আমাকে ফিনায় ফেলে পরীক্ষা করছেন।
অন্যদিকে সন্তান ও সম্পদকেও কুরআনে ফিতনা (পরীক্ষা/test) বলা হয়েছে (৮ : ২৮)।
ফিতনা ও ফাসাদের উপর নিষেধাজ্ঞার জন্যে কুরআনের এই আয়াতগুলো দেখা যেতে পারে - (২ : ১১, ৬০, ৮৪, ১৯১, ২০৫, ২১৭; ৫: ৬৪; ৭ : ৫৬, ৭৪, ৮৫)।
৫৬. ফকির/দরবেশ (Fakir/Darvish)
অর্থ - ধর্মীয় আবরণে ভিক্ষুক । “ফকির” একটা আরবী শব্দ যার অর্থ দরিদ্র। “দরবেশ” হচ্ছে একটা ফার্সি শব্দ যার অর্থ তথাকথিত ইসলামী পোশাক। পরিহিত এক ধরনের ভিক্ষুক । এরা সলাত-সিয়ামের ধার ধারে না, এরা সুফী মতবাদের অনুসারী। ওদের পোশাক ও কিছু ইসলামী বোলচালে মুগ্ধ হয়ে সাধারণ মুসলিমগণ এদের একধরণের শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং হাত পাতলে, চাইলে ভিক্ষা দেয়। এদের থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত ।
৫৭. বাইতুল্লাহ
ক) বাইতুল মুকাদ্দাস = পবিত্র গৃহ। প্যালেস্টাইনের জেরুজালেম শহরে বর্তমান ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল] অবস্থিত এই মসজিদ ইসলামের পবিত্রতম মসজিদগুলোর মাঝে তৃতীয় স্থানের অধিকারী। প্রথম স্থানে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং দ্বিতীয় স্থানে মদীনায় মসজিদে নববী।
খ) বাইতুল মাকদিস = পবিত্র গৃহ।
গ) মাসজিদুল আকসা = দূরবর্তী মাসজিদ।
ঘ) আল কুদস = মহাপবিত্র ।
৫৮. বারযাখ (Barzakh)
অর্থ - পর্দা, অন্তরাল। আলমে বারযাখ (Alam-e-Barzakh) পর্দার অন্তরালের জগৎ অর্থাৎ কবরবাসীদের জীবন। ইসলামী আকীদা (বিশ্বাস) অনুসারে মানুষের মৃত্যুর পর কবরের জীবন কিয়ামতের দিনে পুনর্জীবন লাভ করা পর্যন্ত। কবরের শাস্তি অথবা শান্তি (দুনিয়াতে আমলের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে) এই জীবনে ভোগ করতে হবে। মানুষের দৃষ্টির আড়ালের এই জীবন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন একমাত্র আল্লাহ যিনি এই আলমে বারযাখের সৃষ্টিকর্তা। বারযাখের অন্যান্য অর্থও রয়েছে। যথা : মধ্যবর্তী স্থান, অবকাশ, এলোমেলো চিন্তা।
৫৯. মাখলুক (Makhluq)
মাখলুকাত (Makhluqat) কায়েনাত (Kayenat)। সৃষ্টি, সৃষ্ট জীব এবং বস্তু। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহর সকল সৃষ্টি - প্রাণবান ও প্রাণহীন, দৃশ্য ও অদৃশ্য - সবই। বহুবচনে মাখলুকাত (সৃষ্টিকুল মাখলুকাত)। জগৎ বা বিশ্বকে কায়েনাত (Kayenat)ও বলা হয়ে থাকে।
৬০. মুশরিক (Mushrik)
আল্লাহর একত্বে অংশীদার সাব্যস্থকারী; যে বা যারা আল্লাহর সংগে “শিরক” করে । আরবী “শারিক” কথাটার অর্থ অংশীদার/সমকক্ষ । আল্লাহ এক, একক, অংশীদারবিহীন। তিনি আহাদ, তিনি ওয়াহিদ, তিনি একমাত্র প্রভু ও উপাস্য - এই হচ্ছে তাওহীদ। এই তাওহীদে অংশীদার আরোপকারীদের বলা হয় মুশরিক, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধী, কঠোর শাস্তি পাবে তারা। জাহান্নামে। তাদের অপরাধ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না (সূরা নিসা (৪), আয়াত ৪৮, ১১৬; সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৭২; সূরা বাইয়্যিনা (৯৮), আয়াত ৬) বহুবচনে মুশরিকুন, মুশরিকীন।
৬১. মুত্তাকী (Muttaqi)
পূর্ণরূপে আল্লাহ ভক্ত মু'মিন, পূণ্যবান। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেছেন। যিনি কুরআন-হাদীসের সব বিধি-নিষেধ মেনে পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করে ইবাদতবন্দেগী করেন এবং দৈনন্দিন জীবন-যাপন করেন। এমন সব মুমিনদের ফার্সিতে পরহেযগার বলা হয়। পরহেয অর্থ হলো সংযম; ভালো-মন্দ, ন্যায়অন্যায় বিচার করে চলা, হারামকে পরিত্যাগ করা।
৬২. মাযহাব (Madhab)
মাযহাব অর্থ মত ও পথ। সারা পৃথিবীতে ছড়ানো সুন্নী মুসলিমদের চারটি মত। ও পথ। সুন্নীদের ফিকহ (Fiqh or Jurisprudence) এর বিখ্যাত চার ইমামের নামানুসারে আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে বিভক্ত চারটি মত ও পথের অনুসারীগণ - হানাফী, মালিকি, শাফেঈ এবং হাল্কালী মাযহাব । মাযহাবের অস্তিত্ব রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যমানায় ছিল না, এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে তাঁর মৃত্যুর চারশত বছর পর । মাযহাব হচ্ছে কতিপয় মাসয়ালা-মাসায়েলের ব্যাপারে ওলামাদের মতামত, অনুধাবন ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান। আল্লাহ ও তাঁর রসূল এই জ্ঞান, গবেষণা এবং মতামতের অনুসরণ করা কারো উপর অপরিহার্য করেননি। কেননা মতামতের মধ্যে শুদ্ধ-অশুদ্ধ উভয় সম্ভাবনা বিদ্যমান। তবে মাযহাবসমূহের যে সব বিষয় কুরআন-সহীহ হাদীস এর ওপর নির্ভরশীল শুধু সেগুলোই অনুসরণ করা ওয়াজিব। আর যেগুলো কুরআন-হাদীসের বাণী দ্বারা সমৃদ্ধ নয়, সেগুলো মতামত ও ইজতিহাদের বিষয়; এতে শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ উভয় সম্ভাবনা রয়েছে। যে সকল মত ও পথ কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা মোটেও সমর্থিত নয়, এগুলো ইসলাম ধর্মে নূতন সৃষ্টি। মাযহাব মেনে চলা ফরয, ওয়াজীব, সুন্নত, নফল বা মুবাহ কোনটাই নয় । মুসলিমদের জন্যে একটি মাত্র মাযহাব আল্লাহ অনুমোদন করেছেন তাদেরকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর জন্যে, এবং সেই মাযহাব হচ্ছে কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত রসূল (ﷺ) -এর মাযহাব যা তিনি তাঁর জীবিতকালে তাঁর সাহাবীগণ, তৎপর তাঁর চার খলিফা, তাবেঈন, তাবেতাবেঈনগণ অনুসরণ করে গেছেন। মুসলিমদের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন দল ও মত সৃষ্টি করা আল্লাহ নিষেধ করেছেন (কুরআন ৭: ১৫৩; ৩: ১০৩)
৬৩. মুকতাদি (মুক্তাদী) (Muqtadi)
অর্থ - অনুগামী, শিষ্য । শরীয়তের সংজ্ঞা অনুসারে মুকতাদি অর্থ হলো সলাতের শুরু থেকে ইমামের পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তি। যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে সলাতের জন্য ইকতেদা (অনুসরণ/অনুকরণ) করে সে একজন মুক্তাদী। যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সলাতের কিছু অংশ পেলো, তাকে বলে মাসবুক।
৬৪. মাগফিরাত (Maghfirat)
অর্থ - ক্ষমা, মার্জনা, রেহাই । প্রচলিত সবগুলো অর্থই স্থান বিশেষে প্রযোজ্য। তবে মুসলিম সমাজে আল্লাহর কাছে পাপ (গুনাহ) থেকে রেহাই পাওয়া অর্থেই সচরাচর মাগফিরাত কথাটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাগফিরাত বা ক্ষমা দানের অধিকার একমাত্র আল্লাহরই ক্ষমতাভুক্ত, তাই আল্লাহর নাম গাফুর, গাফফার ।
৬৫. লাওহে মাহফুয (Lawhim Mahfuz)
অর্থ - সংরক্ষিত ফলক (Preserved/ Guarded Tablet)। কথাটা কুরআনের সূরা বুরূজ (৮৫)-এর ২১-২২ নম্বর আয়াতে আছে যেখানে বলা হয়েছে। ‘বালহুয়া কুরআনুম্ মাজীদ, ফী লাওহিম মাহফুয যার বাংলা অনুবাদ ও বস্তুতঃ ইহা সম্মানিত কুরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ । এটাকে উম্মুল কিতাব-ও বলা হয়েছে (কুরআন ১৩ : ৩৯)। আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর ব্যাখ্যাটা এরকম : “Inscribed in a Tablet Preserved”, i.e., Allah's message is not ephemeral (short-lived] It is eternal (existing always] The "Tablet" is "Preserved" or guarded from corruption for Allah's Message must endure for ever."
৬৬. শরীয়ত/শারী'আ (Shariat)
অর্থ - ইসলাম ধর্মীয় বিধি-বিধান, আইন-কানুন। ধর্মীয় বিধি-বিধান বা আইনকানুন যা আল্লাহ নবীদের ও আসমানী কিতাবের মাধ্যমে মানবজাতির আচরণপালনের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ইসলামী শরীয়ত। (Shariah) মূল শব্দ হলো “শারী” যার অর্থ হলো “পথ”, এবং দ্বিতীয়টি হলো “শারা’আ” যার অর্থ শুরু করা, প্রবেশ করা, প্রয়োগ করা, বিধান দেয়া - to begin, enter, introduce, prescribe. শরীয়ত হচ্ছে মুসলিমদের জন্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আচরণ বিধি - Code of Conduct. শরীয়ত মেনে চলার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
৬৭. সদাকাহ (Sadaqah)
দান-খয়রাত যা ফরয দেয় যাকাতের অর্থের অতিরিক্ত। অতীব পূণ্যময় কাজ, আল্লাহ ও রসূলের পছন্দ ও নির্দেশ মুসলিমদের প্রতি। সহীহ হাদীস অনুসারে শুধুমাত্র অর্থদানই নয়, এমন কি পথ থেকে কাঁটা সরিয়ে দেয়া বা একজনের সংগে হাসিমুখে কথা বলাও সদাকাহ। সূরা তাওবা (৯)-এর ৬০ নম্বর আয়াতে “সদাকা” কথাটার উল্লেখ আছে তবে সেখানে সদাকা বলতে “যাকাত”-কে বোঝানো হয়েছে।
৬৮. সিজদা/সাজদা (Sijdah)
মাটিতে কপাল ও নাক লাগিয়ে আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে আত্মনিবেদন। ‘সিজদা অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা। পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা যা সলাতের সময় করতে হয়। সিজদা হলো দু’আ কবুলের সর্বোত্তম সময়।
৬৯. সিজদায়ে সহু (Sijda-e-Sahu)
সলাতে কোন ভুলের জন্যে সিজদা। সহু অর্থ ভুলে যাওয়া। সলাতের মধ্যে ভুলবশতঃ যে কম বেশী হয় তাতে যে সলাতের অনিষ্ট হয় তা পূরণের জন্যে সলাতের শেষে দুটি সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাকে সহু সিজদা বলে। অর্থাৎ সলাতে ভুলক্রমে কোন ওয়াজিব তরক হয়ে গেলে শেষ বৈঠকের তাশাহহুদ শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে ‘সিজদায়ে সহু’ দিতে হয় ।
৭০. সিজদা-এ-তিলাওয়াত (Sijdah-e-Tilawat)
কুরআন তিলাওয়াত-কালীন সিজদা। সমগ্র কুরআনে ১৫টি স্থানে (সূরা হাজ্জ-এ দু’বার) সংশ্লিষ্ট আয়াতটির তিলাওয়াত শেষ হওয়া মাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি করে সিজদা করতে হয় । It is recommended to make the Sijdah. এতে তাশাহহুদ নেই, সালামও নেই। সিজদার আয়াত পাঠ করা হলে পাঠক ও শ্রোতা দু’জনকেই সিজদা করতে হবে ।
৭১. সিজ্জীন (Sijin)
সূরা মুতাফফিফীন (৮৩), আয়াত ৮-এ এই “সিজ্জীন” কথাটার উল্লেখ আছে। হাদীসের বর্ণনা অনুসারে সিজ্জীন একটা বিশেষ স্থানের নাম যেখানে কাফিরদের রূহ ও আমলনামা রাখা হয় ।
৭২. ইল্লি-ইন (lliyin)
সূরা মুতাফফিফীন (৮৩), আয়াত ১৮তে এই “ইলুিই-ইন” কথাটার উল্লেখ আছে। হাদীসের বর্ণনা অনুসারে ইল্লিই-ইন একটা বিশেষ স্থানের নাম যেখানে মুমিনদের রূহ ও আমলনামা রাখা হয়।
৭৩. সাহাবী (Sahabi)
(A Companion of Prophet Muhammed, pbuh) মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর একজন সংগী, সাথী, সহচর, অনুগামী ও ভক্ত। সাহাবী। মূল শব্দটা হলো সাহিব (sahib) যার অর্থ সংগী, সাথী, অনুচর, ভক্ত, অনুসারী, বন্ধু ইত্যাদি। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় এই সাহিব কথা ‘সাহাবী’তে রূপান্তরিত হয়ে একটা বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করেছে। তার ফলে একজন সাহাবী হলেন সেই ব্যক্তি (পুরুষ অথবা নারী) যিনি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর জীবিতকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে তাঁর নিত্য সহচর/সাথী/অনুগামী ছিলেন; যিনি নবীজীর সংগে কথা বলেছেন, যুদ্ধ করেছেন, শান্তির বাণী প্রচার করেছেন, তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছেন, তার পেছনে সলাত আদায় করেছেন ও অন্যান্য ইবাদত করেছেন, তাঁর আদেশ পালন করেছেন, তাঁর সেবা করেছেন, তাঁর সংগে সফর করেছেন, হিজরত করেছেন ইত্যাদি। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে যে নবী ঈসা (আ.) এর অনুগত অনুসারীদের বলা হতো হাওয়ারিইউন (হাওয়ারিগণ), এক। বচনে হাওয়ারী। তাঁদের সংখ্যা ছিল ৯২ জন। সূরা সাফ (৬১), আয়াত ১৪।
ক) সাহাবা (Sahaba) বহুবচন - সাহাবীগণ । (The Companions of Prophet Muhammed, pbuh)
খ) আসহাব (As-hab) । অন্য একটি বহুবচন - সাহাবীগণ।
গ) নারী সাহাবীকে বলা হয় সাহাবিইয়াহ।বহুবচনে সাহাবিইয়া-ত।
৭৪. তাবিঈ (Tabei)
তাবিঈ = একবচন এবং বহুবচনে = তাবিঈন। যারা সাহাবীগণের অনুসরণকারী। রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর জীবিতকালে তাঁর ভক্ত ও নিত্যসহচরগণকে বলা হয় সাহাবী (একবচন) সাহাবা (সাহাবীগণ-বহুবচন) নবীজীর মৃত্যুর পর ইসলাম ধর্ম প্রচারে ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন সেই সাহাবীগণ । সেই যুগে যেসব মুসলিম সাহাবীগণের সাহচর্য পেয়েছিলেন, ইসলাম শিক্ষা করেছিলেন, ইসলামের চর্চা করেছিলেন তাঁরা হলেন তাবিঈ’, অর্থাৎ সাহাবীগণের অনুসারী (তাবেদার)। অর্থাৎ সাহাবাদের পরের জেনারেশনকে তাবীঈ বলে অর্থাৎ যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেননি কিন্তু সাহাবাদেরকে দেখেছেন। যেমন : ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুর ছেলে জয়নুল আবেদীন।
৭৫. তাবিতাবিঈ (TabeTabei)
তাবিতাবিঈ = একবচন এবং বহুবচনে = তাবিতাবিইন। যারা তাবিঈগণের অনুসরণকারী। তাবিঈগণের যুগের পর তাঁদের হাতে শিক্ষাপ্রাপ্ত যে মুসলিমগণ। ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ও প্রচার করে গেছেন তাঁদের পরিচয় হলো তাবিতাবিঈন (তাবিঈদের অনুসারীগণ)। অর্থাৎ তাবিঈদের পরের জেনারেশনকে তাবি-তাবিঈ বলে অর্থাৎ যারা সাহাবাদেরকে রাদিআল্লাহু আনহুম দেখেননি কিন্তু তাবিঈদেরকে দেখেছেন। যেমন : ওমর ইবন আব্দুল আজীজ (রা.)।
৭৬. ইসলামের দৃষ্টিতে “শহীদ”
ইসলামের দৃষ্টিতে আসলে শহীদ কে? সহীহ বুখারীর হাদীস অনুযায়ী ৫ প্রকার ‘প্রকৃত মুসলিম মারা গেলে শহীদ হয়। যেমন:
১) মহামারীতে
২) পেটের পীড়ায়
৩) পানিতে ডুবে
৪) ধ্বংসস্তুপে চাপা পরে এবং
৫) আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে।
অন্যান্য বিষয়ে কোন মতভেদ নেই। শুধু শেষের বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর পথে কাজ করতে গিয়ে, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, দ্বীনের কথা বলতে গিয়ে, দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে মারা যান শুধু মাত্র তাকেই শহীদ বলা হয় । তবে কে শহীদ, কে জান্নাতী, কে জাহান্নামী এই ডিকলারেশনের অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। এই অধিকার শুধু মহান আল্লাহ তাআলার । কেউ আল্লাহর এই অধিকার নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। কে সত্যিকারভাবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে সেটাও তো সিদ্ধান্ত হবে আখিরাতে বিচারের পরে । ইসলামের দৃষ্টিতে পরিস্কারভাবে আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন যে কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদী, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বেনামাযী কখনো শহীদ হতে পারে। কারণ বিষয়টা তাদের জন্য না । শহীদ হতে হলে প্রকৃত ঈমানদার, মুমিন, মুসলিম হতে হবে, আংশিক ঈমানের অধিকারী হলেও হবে না। অর্থাৎ যদি আমি ইসলামের কিছু অংশ মানবো আর কিছু অংশ মানবো না বলে মত পোষণ করি তাহলেও আমি প্রকৃত মুসলিম হতে পারবো না।
৭৭. সীরাত (Seerat)
অর্থ - জীবনী, (biography), গুন, প্রকৃতি, স্বভাব । আরবী অক্ষর সী-ন, ইয়া, র, তা = সীরাত (জীবন কাহিনী, জীবনী)। সীরাতুন নবী অর্থ নবীর জীবনী । শব্দটার প্রয়োগের ক্ষেত্রটা ভিন্ন হলে অন্যান্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
কুরআন ও সুন্নাহ প্রদর্শিত সরল পথ যা বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছাবে। কুরআন ও সুন্নাহে প্রদর্শিত সৎপথ যা অনুসরণ করলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য ও শান্তি এবং আখিরাতে জান্নাতে স্থান পাওয়ার প্রত্যাশা করা যাবে, আল্লাহর রহমত ও রসূলুল্লাহের শাফা'আত পাওয়া যাবে । (কুরআন ১:৫; ১৯:৭৬; ২২:৫৪)।
৮০. হালাল (Halal)
ইসলাম ধর্ম দ্বারা অনুমোদিত, শরীয়তসম্মত, গ্রহণযোগ্য, সমর্থনযোগ্য। হালাল কথাটা ইসলাম ধর্মে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অধীনে আয় রোজগার, খাদ্য, পানীয়, পোশাক, অলংকার, কাজ, ব্যবহার, অর্থনীতি, রাজনীতি এর সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়।
৮১. হারাম (Haram)
ক) ইসলাম ধর্ম দ্বারা অর্থাৎ শরীয়ত দ্বারা অনুমোদিত নয়, গ্রহণযোগ্য বা সমর্থনযোগ্য নয় । কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হালাল এর মত হারাম কথাটাও ইসলাম ব্যাপকার্থে ব্যবহার/প্রয়োগ করে যার অধীনে পূর্বোক্ত সব কাজ এবং বিষয়গুলোও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং নিষেধাজ্ঞার অধীনে বিবেচিত হয়।
খ) হারাম কথাটা একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে যখন এর অর্থ দাঁড়ায় পবিত্র, অতিপবিত্র । মক্কায় কাবা গৃহকে অতিপবিত্র স্থান। (হারাম) বলে গণ্য করা হয়, এবং কাবা গৃহকে ঘিরে যে বিশাল। আকারের মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে তার সমস্ত এলাকাটাকেও হারাম (মহাপবিত্র) শ্রদ্ধার স্থান বলে গণ্য করা হয় । অতি পবিত্র এবং শ্রদ্ধার স্থান বোঝাতেও হারাম কথাটা ব্যবহৃত হয় ।
গ) মদীনাতে অবস্থিত রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কবরকে ঘিরে যে বিরাটাকারের মসজিদ তৈরী করা হয়েছে সেটাকেও “হারাম” (অতিপবিত্র) বলে বিবেচনা করা হয় ।
ঘ) এই দুটি স্থানের পবিত্রতার স্বীকৃতি দিয়ে এদের পরিচয় এখন হারামাইন বা হারামাইন শরীফ (অর্থাৎ দুটি অতিপবিত্র ও শ্রদ্ধার স্থান) বলে । কোন কোন বইপত্রে দেখা যায় এবং মুসলিমদের মুখেও শোনা যায় “হরম শরীফ” অথবা “হেরেম শরীফ” যা হারাম শরীফ কথাটার বিকৃত রূপ, গ্রহণযোগ্য নয়।
৮২. যিকর
যিকরের শাব্দিক অর্থ হলো কোন কিছু স্মরণ করা, আবার বর্ণনা করাও হয়। কোন কিছু মনে রাখা বা মনে করাকে আমরা মনের যিকর বলতে পারি । এমনিভাবে কোথায় আল্লাহর কোন হুকুম কিভাবে মানতে হবে, কী কী কাজ আল্লাহ করতে বলেছেন আর কী কী করতে বারণ করেছেন, সেটা মনে গেথে নেবার নাম কলবের যিকর। আর কোন কিছু মুখে আলোচনা করাকে আমরা মুখের যিকর বলতে পারি । জুমু'আর সলাতের নির্দেশ দিতে গিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন : “জুমু'আর দিনে যখন সলাতের জন্য ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের জন্য দ্রুত হাযির হও।” (সূরা জুমু’আ : ৯)
এখানে যিকর বলতে জুমু'আর সলাত ও খুৎবাকে বুঝানো হয়েছে। খুৎবার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আল্লাহর কথা, আল্লাহর হুকুম আহকামের কথা শোনানো হয়ে থাকে। খুৎবা আসলে একটা বক্তৃতা, আল্লাহ তা'আলা তাকেও যিকরের নামে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এই যিকর শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তিনি যিকর অর্থে কয়েকটা শব্দ মাথা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ‘হু-হা-হু-হা’ করতে বলেন নাই ।
৮৩. দ্বীন
শব্দটির প্রচলিত কিন্তু অপূর্ণাঙ্গ অর্থ হচ্ছে ধর্ম । এতে দ্বীনের পুরাপুরি অর্থ হয়। না। এর প্রকৃত অর্থ ব্যাপক। তবে সংক্ষেপে ও এক কথায় দ্বীন শব্দের অর্থ ও জীবন-বিধান। আল কুরআনে দ্বীন শব্দটি কয়েক ধরণের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এর মধ্যে জীবনের সকল মৌলিক বিষয়ের নির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন :
ক) সূরা আল ফাতিহার ৩ ও সূরা আল ইনফিতর ৯ আয়াতে এর অর্থ প্রতিদান বা বদলা বা বিনিময়।
খ) সূরা আলে ইমরান ৮৩. সূরা আয যুমার ২, সূরা আল বাকারা ১৯৩ আয়াতগুলিতে দ্বীন শব্দের অর্থ বুঝানো হয়েছে আনুগত্য বা আত্মসমর্পন।
ঘ) সূরা আল মু'মিনুন ২৬, সূরা ইউসুফ ৭৬, সূরা আন নূর ২, সূরা তওবা ২৯ আয়াতগুলিতে বুঝানো হয়েছে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও আইন বিধান ইত্যাদি।
আল্লাহর দ্বীন মানব জীবনের সকল মৌলিক দিকের পথনির্দেশনা দান করে। ইসলামই একমাত্র দ্বীন বা আদম (আ.) হতে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে মানুষের জন্য গাইডলাইন হিসেবে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে। শরীয়াহ হলো দ্বীন অনুসরণ ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত পন্থা। মানুষের স্বভাব, প্রয়োজন, স্থান, কাল ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে শরীয়ার পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন নবীর শরীয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহ এর পরিপূর্ণতা বিধান করেছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর মাধ্যমে। মানুষের কল্যাণের জন্যই মহান আল্লাহ এ সুন্দর, সহজ ও গতিশীল বিধানের ব্যবস্থা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
৮৪. ইকামতে দ্বীন/আকিমুদ্দিন
ইকামতে দ্বীন অর্থ দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা। আর দ্বীন কায়েম বলতে বুঝায় কোন একটা জনপদে দ্বীন ইসলাম বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণ বিধি-বিধান অনুসরণ ও বাস্তবায়নের পথে কোন প্রকারের বাধা ও অন্তরায় না থাকা। আল্লাহ তাআলা সূরায়ে শূরায় ঘোষণা করেছেন : “তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের সেই নিয়ম কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যার নির্দেশ তিনি নূহ (আ.)-কে দিয়েছিলেন। আর যা এখন তোমার প্রতি যে হিদায়াত ওহীর মাধ্যমে প্রদান করছি, আর সেই হিদায়াত যা আমি ইবরাহীম (আ.), মূসা (আ.)-এর প্রতি প্রদান করেছিলাম। (সব নির্দেশের সার কথা ছিল)
তোমরা দ্বীন কায়েম কর এই ব্যাপারে পরস্পর দলাদলিতে লিপ্ত হবে না।” (সূরা আশ শূরা : ১৩)
এভাবে দ্বীন কায়েমের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালানোটাই ইসলামী আন্দোলনের জাগতিক লক্ষ্য। আর এরই মাধ্যমে অর্জিত হয় পারলৌকিক লক্ষ্য অর্থাৎ নাজাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল কুরআনে যা বলা হয়েছে তারও সার কথা এটাই।
৮৫. ইসলামিক মুভমেন্ট
আন্দোলন বা Movement যার সাধারণ অর্থ কোন দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্যে এবং কোন কিছু পরিবর্তন বা বাতিল করার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা। এর ব্যাপক ও সামগ্রিক রূপ হলো প্রতিষ্ঠিত কোন কিছুকে অপসারণ করে সেখানে নতুন কিছু প্রতিষ্ঠা বা চালু করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা, প্রাণান্তকর চেষ্টা। ইসলামের সঠিক আকিদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির উদ্দেশ্যে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত কিছু সংখ্যক লোকের সম্মিলিত ও সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার নাম ইসলামী আন্দোলন, আর এর সামষ্টিক রূপ ও কাঠামোর প্রক্রিয়ার নাম ইসলামী সংগঠন। এক কথায় বলতে পারি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে। পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম সাধনার নামই আন্দোলন বা মুভমেন্ট ।
৮৬. দাওয়াত
একজন মুমিন হিসেবে এবং রসূল (ﷺ)-এর উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অনেক, তার মধ্যে সর্ব প্রধান কাজ হলো দাওয়াত (দ্বীন ইসলামের দাওয়াতী কাজ)। রসূল (ﷺ) তার জীবদ্দশায় যে কাজগুলো করে গেছেন বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি আমাদেরকে সেই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তাই সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আমরা খুবই ভাগ্যবান যে নবী-রসূলদের (আ.) দায়িত্ব আমাদেরকে। দেয়া হয়েছে, আর এর কারণ হচ্ছে আর কোন নবী-রসূল (আ.) আসবেন না, সেই কাজ আমাদেরকেই করতে হবে। গোটা কুরআন পড়লে আমরা দেখতে পাই যে এই দায়িত্ব এসেছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এবং এই দায়িত্ব পালন করা অবশ্যই প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য ফরয। আল্লাহ বলেছেন :
“এখন তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য, তোমরা ভাল কাজের আদেশ দিয়ে থাক, দুস্কৃতি থেকে বিরত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আন।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০) ।
“তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা মানবজাতিকে কল্যাণের পথে আহ্বান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে আর অসৎ কাজে বাধা দেবে, তারাই হ’ল সফলকাম।” (সূরা আলে-ইমরান : ১০৪)
“তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া সত্যকে গোপন রাখে?” (সূরা বাকারা : ১৪০)
“তুমি এদের বলে দাও : আমার পথ তো এই, আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই।” (সূরা ইউসুফ : ১০৮)
“দ্বীন কায়েম কর এবং এ ব্যাপারে মতভেদে লিপ্ত হয়ো না।” (সুরা আশশুা : ১৩)।
৮৭. দা-ই দ্বীন
ইসলামের দাওয়াতী কাজ যিনি করেন অর্থাৎ ইসলাম প্রচারের কাজ যিনি করেন ইসলামের পরিভাষায় তাকে দা-ঈ বলে ।
একজন দা'ঈর ভিশন :
“To seek the pleasure of Allah Subhanahu wata'ala by serving humanity” (মানুষের সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।)
“সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করে। অবশ্যই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরা লাইল ও ২০-২১)
“অপরদিকে মানুষের মধ্যেই এমন লোক রয়েছে যে কেবল আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যেই নিজের জীবন-প্রাণ উৎসর্গ করে, বস্তুতঃ আল্লাহ এসব বান্দার প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল।” (সূরা বাকারা, ২: ২০৭)
একজন দাঈর মিশন :
একজন দা'ঈ হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে আমাদের মূল ভিশন কী আর ঐ ভিশনে পৌছতে হলে তার মিশনগুলো কী কী। একজন দা'ঈর ভিশন নিয়ে agreement হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে । আমাদের উচিত মিশনগুলো মুখস্ত করে নেয়া।
a. Invite: To invite mankind to submit to the Creator by using all means of communication.
b. Motivate: To motivate Muslims to perform their duty of being witness unto mankind by their words and deeds.
C. Organize: To organize those who agree to work for this cause under the discipline of Islam.
d. Educate: To offer educational and training opportunities to increase Islamic knowledge, to enhance Muslim character.
e. Support: To promote morality and join forces against all levels of oppression to achieve the goal of socio-economic justice in the society.
f. Strengthen: To strengthen the bond of humanity by serving all those in need anywhere in the world with special focus on our neighborhoods across the country.
g. Cooperate: To cooperate with other organizations for the implementation of this program and unity in the Muslim community as well as in all other faith groups.
৮৮. ইসলামিক অর্গানাইজেশন (সংগঠন)
আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সাহায্য করে যে অর্গানাইজেশন বা সংগঠন, তাই ইসলামী সংগঠন। ইসলামী সংগঠন একটি ইনষ্টিটিউশন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বটে যা আদর্শ লোক তৈরীতে সাহায্য করে। এছাড়া ইসলামী সংগঠন কাজের একটি প্লাটফর্ম। কারণ কোন প্লাটফর্ম ছাড়া দাওয়াতী কাজে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয় । সঠিক ইসলামী বিশ্বাসের ভিত্তিতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আল্লাহর এই পৃথিবীতে বাতিল ও আল্লাহদ্রোহী মতাদর্শ পবির্তন করে আল্লাহর দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কতগুলো লোকের সংঘবদ্ধ রূপ কাঠামোকে ইসলামী সংগঠন বলে । আর সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাকে ইসলামিক মুভমেন্ট বলে ।
৮৯. ফি সাবিলিল্লাহ
ফি সাবিলিল্লাহ অর্থ আল্লাহর পথে। এ কথাটির অর্থ ব্যাপক। সাধারণতভাবে গরীব-দুঃখীকে সাহায্য বা সেবামূলক কাজও ফি সাবিলিল্লাহর কাজ হিসেবে পরিগণিত, তবে এগুলো ফি সাবিলিল্লাহর মৌলিক কাজ নয়। আল কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৌলিকভাবে ফি সাবিলিল্লাহ বলতে আল্লাহর দ্বীন ইসলাম। প্রতিষ্ঠাকে বুঝায় ।
৯০. ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
শাব্দিক অর্থে ইনফাকের অর্থ “অর্থ” খরচ করা। কিন্তু যেমন তেমন খরচকে ইনফাকের পর্যায়ে ফেলা যায় না। আল কুরআনে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর আহবান মূলতঃ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে অর্থ ব্যয়কেই বুঝানো হয়েছে। ইনফাকের অর্থ এবং ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ একত্রে মিলালে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ দাঁড়ায় ও আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য এর উপায়-উপকরণ যোগাড় ও এই মহান কাজটি পরিচালনার জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যে অর্থসম্পদ খরচ করা ।
৯১. কুফর (Kufr)
অর্থ - আল্লাহর উপর অবিশ্বাস, ইসলামে অবিশ্বাস, সত্য গোপন করা বা ঢেকে রাখা। আল্লাহর প্রতি অশ্রদ্ধা বা বিরূপ মন্তব্য। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা। ইসলাম ধর্মে অবিশ্বাস। “কাফারা” root থেকে উদ্ভূত যার অর্থ সত্যকে ঢেকে রাখা বা গোপন করা বা অস্বীকার করা।
৯২. কাফির (Kafir)
অর্থ - আল্লাহ অথবা ইসলাম ধর্মে অবিশ্বাসী। সত্য গোপনকারী। একবচন কাফির অথবা কাফফার । বহুবচনে কাফিরুন অথবা কুফফার। কাফিরদের স্থান জাহান্নাম (কুরআন ৮ : ৩৬)।
৯৩. মুনাফিক (Munafiq)
অর্থ - কপটাচারী, ভন্ড, প্রতারক। যে ব্যক্তি বাহ্যিক/মৌখিকভাবে মুসলিম কিন্তু অন্তরে ইসলামে ঈমান নেই, সেই ব্যক্তি একজন মুনাফিক। আল্লাহ মুনাফিকদের অত্যন্ত অপছন্দ করেন। ওদের জন্যে জাহান্নামের নিম্নতম স্তর (কুরআন ৪ : ১৪০, ১৪৫)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে মুনাফিকদের চারটি লক্ষণ :
(ক) সে বিশ্বাসঘাতকতা করে,
(খ) মিথ্যা বলে,
(গ) চুক্তি ভংগ করে, এবং
(ঘ) তার মুখ থেকে কুৎসিৎ গালি বের হয় ।
৯৪. ফাসিক (Faasiq)
বহুবচনে ফা-সিকীন অথবা ফাসা-ক। পাপী (গুনাহগার), সৎপথত্যাগী, চরিত্রহীন (immoral), আল্লাহতে অবিশ্বাসী, অসৎকর্মকারী ইত্যাদি। মূল ধাতু। ফাসাকা, সেটা থেকে ফিস্ক (Fisq), ফুসুক (Fusuq) আরো অনেক অর্থেই ফাসিক কথাটা ব্যবহৃত হয় যথা : a person not meeting the legal requirements of righteousness (Islamic Law); fornicator, adulterer, sinner, godless, licentious, etc. ফিক কথাটার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা, আইনভংগ করা, পাপপংকিল ও চরিত্রহীনতার জীবন ইত্যাদি। সূরা বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ফুসুক (ফিক কথাটার বহুবচন – অন্যায়/অশ্লীল কাজকর্ম থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। ফাসিকদের তিনি শাস্তি দেবেন একথা তাঁর কুরআনে। আল্লাহ বহু আয়াতেই উল্লেখ করেছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর সেই ধর্মের নির্দেশ অস্বীকার করা বা অমান্য করাও ফিকের অপরাধের অন্তর্ভূক্ত।
৯৫. মুরতাদ
মুরতাদ তারাই যারা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও মুসলিম সমাজের মাঝে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরুদ্ধে কাজ করে, ইসলামের বিরুদ্ধে কলম ধরে এবং শত্রুদের দলে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে হাত মিলায় । ইসলাম কাউকে মুসলিম হতে বাধ্য করে না। ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই। মুরতাদ হলো তারাই যারা আল্লাহর ও মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে । ইসলামী শরিয়া মতে সেই বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড । নানা ফেরকা ও নানা মাযহাবের উলামাদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ইসলামের মৌল বিষয়ের ন্যায় মুরতাদের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে কোন মতভেদ নেই। আর এই শাস্তি কার্যকরী করার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের (Islamic State)। ব্যক্তিগতভাবে কেউ এই শাস্তির দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে পারবে না ।
৯৬. তাগুত
হে নবী! তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা এই মর্মে দাবী করে চলছে যে, তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি যা তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং সেই সব কিতাবের প্রতি যেগুলো তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল; কিন্তু তারা নিজেদের বিষয়গুলোর ফায়সালা করার জন্য তাগুতের দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদেরকে তাগুতকে অস্বীকার করার হুকুম দেয়া হয়েছিল? শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। (সূরা আন নিসা ৪ : ৬০)
তাগুত বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে এবং এমন বিচার ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ হিসেবে স্বীকৃতিও দেয় না। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভূমিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া যে একটি ঈমান বিরোধী কাজ, এ ব্যাপারে এ আয়াতটির বক্তব্য একেবারে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানোই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দুটি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফিকী। দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন । (সূরা আল বাকারা, ২: ২৫৬)
আভিধানিক অর্থে
এমন প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে ‘তাগুত’ বলা হবে, যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমানা লংঘন করেছে। কুরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও খোদা হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল্লাহর মোকাবিলায় বান্দার প্রভুত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে। ১ম পর্যায় বান্দা নীতিগতভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয় কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ফাসিকী। ২য় পর্যায়ে সে আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বকে। নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে। বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে । একে বলা হয় কুফরী ।
৩য় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে বান্দা। পোঁছে যায় তাকেই বলা হয় “তাগুত” । কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিন সঠিক অর্থে আল্লাহর মু'মিন বান্দা হতে পারে না। যে তাগুতকে অস্বীকার করলো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল সেই মযবুত রঞ্জু ধারণ করেছে। (সূরা বাকারা, ২ : ২৫৬)
তাগুত অর্থ হলো আল্লাহর বিদ্রোহী শক্তি। কাফির আল্লাহকে অস্বীকার করে মাত্র । কিন্তু তাগুত মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব করতে বাধা দেয় এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার আনুগত্য করতে বাধ্য করে। ফিরাউন এমনি ধরনের তাগুত ছিল বলেই মূসা (আ.)- কে ফিরাউনের নিকট পাঠাবার সময় আল্লাহ বললেন - ফিরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয়ই সে বিদ্রোহ করেছে। (সূরা আন নাযিয়াত : ১৭)
ইসলাম বিরোধী শক্তি এক কথায় তাগুত। দ্বীনে বাতিল তাগুতী শক্তিরই নাম । কালিমায়ে তাইয়িবায় প্রথমেই তাগুত বা বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বলা হয় যে, লা-ইলাহা বা কোন হুকুমকর্তাকে মানি না। অন্য সব কর্তাকে অস্বীকার করার পরই ইল্লাল্লাহ বলে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে স্বীকার করা হয়। সুতরাং ইসলামের প্রথম কথাই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ কারণেই কালেমার দাওয়াত নিয়ে যে নবীই এসেছেন তাগুত বা বাতিল তাকে। স্বাভাবিকভাবেই দুশমন মনে করে নিয়েছে। দ্বীনে হকের দাওয়াত দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত শেষ নবীও আল আমীন ও আস সাদিক বলে প্রশংসিত ছিলেন। কিন্তু “আল্লাহর দাসত্ব কর ও তাগুতকে ত্যাগ কর।” (সূরা আন নাহল : ৩৬) বলে। দাওয়াত দেয়ার পর নবীর সাথে তাগুতের সংঘর্ষ না হয়েই পারে না।
৯৭. ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ইংরেজী Secularism শব্দেরই বাংলা অনুবাদ। ধর্মীয় প্রবণতাকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে সমাজ জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ ও রসূলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই এর লক্ষ্য। সে হিসেবে এ মতবাদকে ধর্মহীনতা বলাই সমীচীন। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন :
“তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে। তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তার সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না। জাহান্নাম এটাই তাদের প্রতিফল; কারণ তারা কাফির হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলগণকে বিদ্রুপের বিষয়রূপে গ্রহণ করেছে। (সূরা কাহাফ : ১০৪-১০৬)।
৯৮. মুসলিম সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য
ইসলামী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দ্বীন ইসলামকে বাস্তবায়ন করাই রাষ্ট্র প্রধানের কর্তব্য। তার মধ্যে প্রধান দায়িত্ব হল চারটি। যা আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেন : তারা এমন লোক যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে সলাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। আর সব বিষয়ের চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে। (সূরা হাজ্জ : ৪১)
মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন বিষয়ের দায়িত্বশীল হল কিন্তু পরে সে তাদের কল্যাণ কামনা ও সেবা দেয়ার জন্য এতটুকু চেষ্টাও করল না যা সে নিজের জন্য করে থাকে, আল্লাহ তাকে উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (তাবারানী আল-মুজামুস সগীর)
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন বিষয়ের দায়িত্বশীল হল, অতঃপর তাতে বিশ্বাসঘাতকতা করল, সে জাহান্নামে যাবে । (তাবারানী আল-মুজামুস সগীর)
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) এই দুআ করলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের লোকদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজের দায়িত্বশীল হবে সে যদি লোকদেরকে ভয়ানক অশান্তি ও দুঃখ-কষ্টে নিক্ষেপ করে, তবে তুমিও তার জীবনকে সংকীর্ণ ও কষ্টপূর্ণ করে দাও। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের সামগ্রিক কাজকর্মের দায়িত্বশীল হবে এবং সে যদি লোকদের প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করে তবে তুমিও তার প্রতি অনুগ্রহ কর । (সহীহ মুসলিম)
৯৯. কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য
কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে এ কথাটি জানতে হবে যে, আল্লাহ কী উদ্দেশ্যে এ কিতাব নাযিল করেছেন। আদম ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় তারা শয়তানের ভয়ে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। যে। শয়তান এত কৌশল ও যোগ্যতার সাথে তাঁদেরকে জান্নাতে পর্যন্ত ধোঁকা দিতে পেরেছে, দুনিয়ায় না জানি ঐ শত্রুর হাতে কী দুর্গতি হয় এ আশঙ্কায়ই তাঁরা চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হিদায়াত আসবে। যারা ঐ হিদায়াত মেনে চলবে তাদের কোনো ভয় নেই। আর তাদের ভাবনার কোনো কারণও নেই।” (সূরা বাকারা : ৩৮)
আল্লাহর ঐ ঘোষণা অনুযায়ী মানবজাতিকে সঠিক পথে চলার সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যেই নবী ও রসূলগণের নিকট যুগে যুগে কিতাব পাঠানো হয়েছে। শয়তানের ধোঁকা, নাফসের তাড়না ও দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থেকে আল্লাহর হুকুম ও রসূল (ﷺ) -এর তরীকা অনুযায়ী যারা চলতে চায়, তাদেরকে সব যুগেই আল্লাহর কিতাব সরল ও সঠিক পথ দেখিয়েছে। আল কুরআন আল্লাহর ঐ মহান কিতাবেরই সর্বশেষ সংস্করণ। তাহলে বোঝা গেল, দুনিয়ার জীবনটা কীভাবে কাটালে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যাবে- সে কথা শিক্ষা দেয়ার জন্যই কুরআন এসেছে। দুনিয়াদারি বাদ দিয়ে বৈরাগী, সন্ন্যাসী ও দরবেশ হওয়ার শিক্ষা দিতে কুরআন আসেনি। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে ঘর-সংসার, রুজি-রোজগার, বিয়ে-শাদি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শাসন-বিচার, যুদ্ধ-সন্ধি ইত্যাদি যত কিছু মানুষকে করতে হয় সবই যাতে আল্লাহর হুকুম ও রসূল (ﷺ) -এর তরীকা অনুযায়ী এসব করা হলে দুনিয়াদারিও দ্বীনদারিতে পরিণত হয়। আর ঐসব কাজ যদি মনগড়া নিয়মে করা হয়, তাহলে সবই শয়তানের কাজ বলে গণ্য। মুমিনের জীবনে দ্বীনদারি ও দুনিয়াদারি আলাদা নয়। আল্লাহর হুকুম ও রসূল (ﷺ) -এর তরীকা অনুযায়ী চললে গোটা জীবনের সব কাজই দ্বীনদারি বলে গণ্য।
১০০. রসুল (ﷺ) -কে এই পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য
আল্লাহ যে রসূলের উপর কুরআন নাযিল করেছেন তাঁকে দুনিয়ার কোন দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন তা কুরআনেরই তিনটি সূরায় স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন ।
“তিনিই ঐ সত্তা, যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যাতে (রসূল) ঐ দ্বীনকে অন্য সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন।” (সূরা তাওবা : ৩৩, সূরা ফাত্হ : ২৯ ও সূরা সফ : ৯)
এ আয়াত থেকে জানা গেল, কুরআনই ঐ হিদায়াত ও সত্য দ্বীন (দ্বীনে হক), যাকে মানুষের মনগড়ার মত, পথ ও বিধানের উপর বিজয়ী করার কঠিন ও মহান দায়িত্ব দিয়ে শেষ নবীকে পাঠানো হয়েছে। এ দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে হলে ‘দ্বীন’ শব্দের আসল অর্থ জানতে হবে । দ্বীন’ শব্দের মূল অর্থ আনুগত্য বা মেনে চলা ছাড়া মানুষের উপায় নেই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রিয় জীবনসহ ছোট-বড় সব ব্যাপারেই কতক নিয়ম, আইন ও বিধান মেনে চলতে হয়। এসব আইন বানানোর সুযোগ যারা পায়, তারা সবার প্রতি ইনসাফপূর্ণ বিধান তৈরি করতে পারে না। সঠিক জ্ঞানের অভাবে বা দলগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের কারণে এসব বিধানের দ্বারা মানুষ শোষণ, যুলুম ও অশান্তি ভোগ করে। মানবরচিত এসব বিধানেও ঐ আয়াতে দ্বীন বলা হয়েছে। কেননা, সব বিধানই মানুষের নিকট আনুগত্য দাবি করে এবং মানুষ তা মেনে চলতে বাধ্য হয়। আল্লাহ মানবজাতিকে মানুষের দ্বীনের শোষণ, অত্যাচার ও অশান্তি থেকে মুক্তি দেয়ার দায়িত্ব দিয়েই রসূল (ﷺ) -কে ‘দ্বীনে হক’সহ পাঠিয়েছেন। মানুষ যেন আল্লাহর দ্বীনকে মেনে চলার সুযোগ পায় এবং অন্য কোনো দ্বীনের আনুগত্য করতে যেন বাধ্য না হয়, সে মহান উদ্দেশ্যেই রসূল (ﷺ)-কে পাঠানো হয়েছে। রসূল (ﷺ) দীর্ঘ ২৩ বছরের কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও কুরবানীর মাধ্যমে অত্যন্ত সফলতার সাথে এ কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিহাসই এর উজ্জ্বল সাক্ষী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/573/88
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।