hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমান-ইসলামের মূলভিত্তি ও ইসলামী আকীদা বিশ্বাস

লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনূ

৮৩
সর্বত্র প্রচারিত ক্ষতিকর চিন্তাসমূহ
প্রশ্নঃ জাতির ফয়সালা জাতীয় ভাবধারার মাধ্যমেই হবে আর দেশের সমস্ত সম্পদ দেশের মানুষেরই প্রাপ্য – এ ব্যাপারে মন্তব্য কি?

উত্তরঃ ইহা একটি তথাকথিত গোষ্ঠীর বানানো নীতিকথা। এই জাতীয় কথা ঐ সমস্ত মিথ্যাবাদীরা বানিয়ে থাকে যারা উহা নিজদের জীবনেই প্রতিফলন ঘটায় না। ফলে জাতিকে তারা অধঃপতনে ঠেলে দেয়। কিন্তু তারা তাদের নীতির কোনটাকেই পরিত্যাগ করে না। বরং রাষ্ট্রই সম্পদের মালিক, ব্যক্তি মালিকানা বলে কিছু নেই, ইত্যদি মিথ্যা বুলি দ্বারা জনগণকে ধোকা দিয়ে থাকে। ওটাতো পথহারা হতভাগ্যদের কথা। ন্যায় ও সত্য কথা এই যে, মানুষ তার জ্ঞান ও সার্মথ্য অনুযায়ী তার মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে।

সত্যিকার অর্থে মানব জাতি নিশ্চয় তখন সম্মান ও গৌরবজনক অবস্থা লাভ করবে, যখন তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও স্বাধীনতা বিরাজ করবে। তখন আর তাদেরকে পশুর ন্যায় হাকিয়ে বেড়াতে হবে না। মানুষের পূর্ণ মর্যদা, ন্যায়, সদাচার নীতি সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ঐ ধরনের বুলি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষমতা ও সম্পদের মূল মালিক মহান রাব্বুল আলামীন। হুকুম দেয়ার মালিকও একমাত্র আল্লাহ। আর জাতির পথ প্রদর্শন করতে হবে অহির নূর দ্বারা। আর হুকুম হবে আল্লহ প্রদত্ত শরীয়ত অনুযায়ী। তাই একথা বলা ঠিক নয় যে, হুকুম দেয়ার মালিক জাতিই। যারা জাতিকে নিজেদের খেয়াল খুশী মত চালাবে তারা হচ্ছে জড়বাদী এবং মূর্তি পূজকদের নীতিসমূহ বাস্তবায়নকারী। তারা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মাবলীর বিরুদ্ধাচারণকারী। তারাই সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে ধোকাবাজি কথা বলে জোর জবরদস্তি করে জাতির উপর নানা ধরণের শোষণ চালিয়ে থাকে। আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তাঁর বান্দগণের উপকারার্থে ব্যয় হবে। তাঁর আনুগত্যকারীদের নিরাপত্তার জন্যে, সীমান্ত রক্ষার কাজে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে যেখানে যত মুসলিম রয়েছে তাদের সব ধরণের অসুবিধা দূর করার জন্য এই সম্পদ ব্যয় করতে হবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পথে আহবান করার কাজে, স্রষ্টার সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা আরোপকারীর অপবাদ খন্ডনের জন্য সব ধরণের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেসব মুসলিম অন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে অথবা অভাবী মুসলিমদের অভাবসমূহ পূরণের জন্য ঐ সম্পদ ব্যয় করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় কাজের মধ্য থেকে অধিক জরুরী ব্যাপারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এভাবেই আল্লাহর দেয়া সম্পদ ব্যবহার করতে হবে।

তা কারও ব্যক্তি স্বার্থে অথবা বিলাসিতার কাজে ব্যয় করা চলবে না। আর সাজ-সজ্জা, ফাসেকী পাপ কার্য যথাঃ সিনেমা, ক্লাব, মেলা ইত্যাদি জাতীয় যাবতীয় কাজে ব্যয় করার প্রশ্নই ওঠে না। কোন কোন রাজনৈতিক দলের ভাষায় দেশের সম্পদকে অমুক পার্টির সম্পদ বলা চলবে না। যদি এই কথা মেনে নেয়া হয়, তবে তা তারা যেভাবে খুশি সেভাবেই ব্যয় করতে পারে। উহা সকল স্তরের অভাবী মানুষের অভাব পূরণের জন্য ব্যয় করা উচিত। যখন পার্টি বিশেষের সম্পদ বলে মেনে নেয়া হয় তখন ঐ পার্টির লোকেরা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, গুপ্তচর বৃত্তি, অন্য আদর্শের লোকদের নিজের দলে ভিড়ানোর জন্য অথবা এই জাতীয় ক্ষতিকর কাজে ঐ সম্পদ নিঃশেষ করার একচেটিয়া অধিকার প্রাপ্ত হয়। (এই অংশটুকু ইমাম জুহুরী লিখিত “আল ওযুবা আল মুফিদাহ” গ্রন্থ হতে নেয়া হয়েছে)।

প্রশ্নঃ সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজন যে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, উহা কি?

উত্তরঃ এ জাতীয় মতবাদের ভিত্তি নানাবিধ। তার মধ্যে আছে-

১। আল্লাহকে অস্বীকার করা। সমস্ত দ্বীন, রাসূল এবং রিসালাতকে অস্বীকার করা। তাদের মূল কথা হল, স্রষ্টা বা মা’বুদ বলে কিছু নেই। আর জীবন হচ্ছে পদার্থ হতে। ইহজগতেই ইহা সীমাবদ্ধ।

২। মানুষের সত্তা, মূল্যবোধ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগত মর্যদা ধ্বংস করা।

৩। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ সৃষ্টি করা।

৪। ব্যক্তি মালিকানা বাতিল করে তা শাসকদের দখলে আনা। যা মানুষের অন্তরের একান্ত অভিলাষ।

প্রশ্নঃ কমিউনিষ্টদের ইসলাম ধ্বংস করার কলাকৌশল কি?

উত্তরঃ তাদের ইসলাম ধ্বংস করার কলাকৌশলের রাস্তা অনেক, যেমনঃ

১। যারা সমাজতন্ত্রের প্রবর্তক, তারা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান-লাভ করে না এবং দ্বীনের ব্যাপারে মানুষের মনে হিংসা সৃষ্টি করে এবং সামাজিক রীতি ও সমাজবদ্ধ জীবন সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে। আর এর বিপরীতে তারা যে সমাজ গড়তে চায় সেদিকে আহবান করে ও অন্ধ অনুসারী তৈরী করে।

২। ইসলাম ধ্বংসের জন্য তারা মেয়েদের ব্যবাহার করে, যাতে করে মুসলিম পরিবারের পর্দা প্রথা উচ্ছেদ হয়। কেননা, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে অবাধে মেলামেশা করা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষেধ করে।

৩। তারা সমাজের শীর্ষ স্থানীয় (তথাকথিত বুদ্ধিজীবি) লোকদের এই কাজে ব্যবহার করে থাকে। কারণ ঐ সমস্ত ব্যক্তিরা ঐ সমাজে সম্মান ও উঁচু পদ লাভ করার ফলে সাধারণ মানুষের মনে অতি সহজেই তাদের কথা রেখাপাত করে।

৪। তাদের কু-মতলব সিদ্ধির জন্য চিকিৎসক শ্রেণীকেও কাজে লাগায়। রোগীরা নিজেদের রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে অপারগ, তদুপরি তাদের কাছ থেকে দু’একটি বিনামূল্যের ঔষুধ পেয়ে আরও দুর্বল হয়ে তাদের দিকে ঝুকেঁ পড়ে।

৫। এমনিভাবে শ্রেণী সংগ্রাম তথা বিপ্লবের সস্তা বুলি উপর মহল হতে প্রচারিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। তারপর সাধারণ মানুষের মধ্যে কমিউনিজম প্রচার করে ও ইসলামের ক্ষতি সাধন করে।

প্রশ্নঃ কাফিরদের রাষ্ট্রসমূহ কি ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতায় ঐক্যবদ্ধ?

উত্তরঃ এ কথা সবার জানা যে, কাফিরদের দেশসমূহ, যদিও বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিকোণ ও চিন্তাধারা ভিন্নতর, তথাপি তারা মুসলিমদের ব্যাপারে শত্রুতা করতে একতাবদ্ধ। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা করে, মুসলিমদের কষ্ট দেয়া এবং ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য। ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য গোপনে কাজ করে এবং মুসলিমদের মধ্যে তাদের মতামত ছড়ায় যাতে তারা তাদের দ্বীনকে পরিত্যাগ করে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এদের পশ্চাদে আছে ইহুদী চক্র। তাদের উদ্দেশ্য হল, সমস্ত ধর্মীয় আদর্শ, চরিত্র ও ভিত্তিসমূহ ধ্বংস করা। এরা এ সমস্ত কাজ করে থাকে মাসুনিয়া, সুহুনিয়া, বাবিয়া ইত্যাদি দলের মাধ্যমে।

প্রশ্নঃ খৃষ্টবাদ কি? তার ক্ষতিকর দিক কি কি? আমরা কি ভাবে এর মুকাবিলা করব।

উত্তরঃ খৃষ্টবাদ হচ্ছে ধ্বংসকারী দল সমূহের নির্দিষ্ট একটি দল। যারা সর্বদা ইসলামকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট। তাদের মূলনীতি হল ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার জন্য মুসলিমদের উৎসাহিত করা। তাদের নিকৃষ্ট মতবাদের মধ্যে একটি দাবী হল এই যে, ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এই বিভ্রান্ত মতবাদ নানা ধরণের পত্রিকাসমূহে প্রচার করে এবং বিশেষ করে দুঃস্থ ও গরীব জাতিসমূহের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানুষের মাঝে প্রচার চালায়। এদের ঘৃণ্য তৎপরতার মুকাবিলার রাস্তা হলো-আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে শক্ত ভাবে আকড়ে ধরা, সাহাবাগণের (রাঃ) আর্দশকে জরুরীভাবে বাস্তবায়ন করা এবং ইসলামী বই-পত্র অধ্যায়ন করা। আর এটাও জেনে নেয়া যে, খৃষ্টাবাদ হচ্ছে বিকৃত ধর্ম। সাথে সাথে ধনী মুসলিমগণের কর্তব্য হলো, তাদের ধন-দৌলত দ্বারা গরীব ফকিরদের সাহায্য করা।

খৃষ্টানদের ত্রিত্ববাদীতার জঘন্য কথার প্রতিবাদ করা এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ ও সৌন্দর্য বর্ণনা পদ্ধতি অগবতির জন্য শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাঃ) এর লিখিত “আল জওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দীনাল মসিহ” এবং তার সাগরিদ হাফিজ ইবনে কাইয়ূম (রঃ) এর “হাদি ইয়াজুল হায়ারা ফি-রাদ্দে আলাল ইয়াহুদ ওয়ান নাসারা ও এগাসাতুল লাহফান” কিতাবগুলো অধ্যায়ন করুন।

প্রশ্নঃ ইসলামে কি সুফীবাদ অথবা অন্যান্য মতালম্বীদের (ফিরকা বন্দী) কোন স্থান আছে?

উত্তরঃ না, ইসলামে ঐ জাতীয় কোন মতবাদের স্থান ও মূল্য নেই।

১। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

নিশ্চয় সমস্ত উম্মতই একই উম্মত। আর আমি তোমাদের প্রতিপালক। তাই একমাত্র আমারাই ইবাদত করতে থাক। (সূরা আম্বিয়া , ৯২)

২। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

তোমরা সমবেত ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে (বিভিন্ন মাহাবে) বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আম্বিয়া ১০৩)

৩। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

(আরবি)

আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়োনা। যারা দ্বীনকে টুকরো টুকরো করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। তাদের প্রত্যেকটি দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে খুশী। (সূরা রুম, ৩১-৩২)

৪। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোজা রেখা টানেন। তারপর বললেনঃ ইহা আল্লাহর সরল সঠিক রাস্তা। তারপর তার ডান ও বামে আরও কয়েকটি দাগ টানলেন। তারপর বললেনঃ এগুলো হচ্ছে অন্যান্য রাস্তা। এই রাস্তাসমূহের মধ্যে এমন কোন রাস্তা নেই যে দিকে শয়তান ডাকছে না। তারপর কোরআনের ঐ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ

(আরবি)

আর অবশ্যই এটা আমার সরল সঠিক পথ। একে অনুসরণ কর এবং অন্য পথগুলো অনুসরণ কর না। তাহলে তারা তোমাদের আল্লাহর পথ হতে আলাদা করে ফেলবে। (সূরা আন’আম, ১৫৩)

এটা আহম্মদ, নাসাঈর, সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসের স্বীকৃতি স্বরূপ।

৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সরল সোজা রাস্তার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। ঐ রাস্তার দু’পার্শ্বে দু’টি প্রাচীর বা দেয়াল রয়েছে এবং এতে রয়েছে খোলা দরজাসমূহ। প্রত্যেক দরজায় পর্দা ঝুলানো রয়েছে। ঐ সরল সঠিক রাস্তার সামনে দাড়িয়ে এক আহবায়ক এই বলে ডাকতে থাকেঃ হে মানব মন্ডলী! তোমরা সকলে সরল সঠিক রাস্তায় প্রবেশ কর এবং দলে দলে ভাগ হয়ে যেওনা। আর একজন ডাকতে থাকে রাস্তার উপর হতে। এরপরও যখন কেউ ঐ দরজা সমূহের পর্দা খুলতে চেষ্টা করে তখন ঐ আহবায়ক ধিক্কার দিয়ে বলেঃ আফসোস! তোমার কি হয়েছে, তুমি ঐ পর্দা খুলে ফেল না। কেননা, ঐ পর্দা খুললে তুমি ওতে ঢুকে যাবে, অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তা হতে আলাদা হয়ে যাবে। সরল সোজা রাস্তা হল ইসলাম, আর ঐ প্রাচীরদ্বয় হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনের সীমারেখা। খোলা দরজা সমুহ হচ্ছে আল্লাহ্ কর্তৃক হারামকৃত রাস্তা। সোজা রাস্তার প্রবেশ মুখের ঘোষক হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, আর রাস্তার উপরের ঘোষক হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রত্যেক মু’মিনের দিলে তার নসিহতকারী। বা তার বিবেক। (বর্ণনায়, হাকেম, সহীহ সনদ)

প্রশ্নঃ দ্বীন কি শুধুমাত্র আল্লাহর, আর দেশ হচ্ছে জনগণের?

উত্তরঃ ইহা হচ্ছে শিরকের একটি বহিঃপ্রকাশ, যা ইউরোপবাসীরা প্রচলন করেছে। তদানীন্তন গীর্জার যালিম পাদ্রীদের অত্যাচার হতে দূরে থাকার জন্য, যাদের ইলমকে তারা জ্ঞান বিজ্ঞানের পথে বাধা বলে মনে করত। এ ধরণের মতবাদ প্রচার করার উদ্দেশ্য যাতে তারা ধর্ম থেকে দূরে থাকতে পারে। তার পরবর্তী সময়ে তারা চেষ্টা করতে থাকল মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন হতে দূরে রেখে অন্ধকার ও ভ্রান্ত নীতিতে নিক্ষেপ করতে। তাদের বাচন ভঙ্গিতে এটাই পরিস্ফুট যে, দ্বীন হচ্ছে আল্লাহর তাকে যেখানে খুশি নিক্ষেপ কর। জাতীয় কর্মকান্ডঃ যেমন দেশ পরিচালনা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদির ব্যাপারে ধর্মের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই। উপনিবেশবাদীদের এ ধরণের ধোকাবাজি কথা দ্বারা এ দেশের মানুষের মধ্যে সন্দেহ, গোমরাহি ছড়াতে চেয়েছিল যাতে লোকেরা আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন না করে এবং দ্বীনকে সমস্ত ধরণের কাজ ও বিধি ব্যবস্থা হতে আলাদা করা যায়। আর এ ভাবেই তারা দেশকে আল্লাহর অংশীদার স্বরূপ বানিয়ে নেয় এবং দ্বীন হতে রাষ্ট্রকে পৃথক করতে চেষ্টা করে। কোরআনে আমাদের নির্দেশ দিচ্ছে, ঐ জাতীয় কথার আনুগত্য কিংবা সহযোগিতা না করতে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফিরদের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাদের পিছনে ফিরিয়ে নেবে ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। (সূরা আল ইমরান, ১৪৯)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি ঐ লোকদের অনুসরণ কর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল (অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খৃষ্টান) তবে তারা তোমাদের ঈমান হতে বের করে কুফরীতে নিয়ে যাবে। (সূরা আল ইমরান, ১০০)

ইউরোপবাসীর প্রচারের কারণে খৃষ্টান মতবাদ প্রচারকারীদের আহবানের রাস্তা খুলে গেছে। ফলে, আজ মুসলিমদের ঘরে ঘরে নাস্তিকতার দাওয়াত পৌঁছে যাচ্ছে। আর ইসলামের দিকে ডাকা হতে মুসলিমগণ দূরে সরে যাচ্ছে এবং খৃষ্টবাদ প্রচারের সম্মুখে ইসলাম প্রচারের গতি স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে মুসলিমগণ তাদের কোন ভ্রান্ত মতবাদ অস্বীকার করলে তারা বলে উঠে এটা মৌলবাদ। এটা চরমপন্থা। এট সাম্প্রদায়িকতা। এটা জঙ্গীবাদ ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ ধর্ম কি মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে?

উত্তরঃ সত্যিকারের ইসলামী দ্বীন হচ্ছে প্র্রকৃত ঐক্যের মূল উৎস। এর উপর ‘আমল করলে ইজ্জত, দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা, একতা, হিফাজত, ভালবাসা, স্বার্থ ত্যাগ, অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার, অমুসলিমদের হিফাজত প্রভৃতি ‘আমল এসে যায়। এমন অন্য কোন দ্বীন আছে কি যারা তাদের অনুসারীদের ডেকে বলেঃ

(আরবি)

হে নবী বলুন! আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছি। এবং ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের সন্তানদের উপর যা নাযিল হয়েছে এবং যা মুসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীগণ আল্লাহ হতে প্রাপ্ত হয়েছেন তার উপর ঈমান এনেছি। আমারা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আর আমরা আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পণ করেছি। (সূরা আল ইমরান, ৮৪)

প্রশ্নঃ এটা কি বলা ঠিক যে, জাতির যা ইচ্ছা আল্লাহরও ইচ্ছা তাই ?

উত্তরঃ এই ধরণের মনগড়া বানানো মিথ্যা অপবাদ কিছু সংখ্যক বুজুর্গি ওয়ালারা (দার্শনিক) আল্লাহর উপর আরোপ করছে। এরূপ কথা আবু জাহেলের মত লোকও বলতে সাহস করেনি। যদিও তারা অত্যন্ত পাপাচারী ও আল্লাহদ্রোহী ছিল। সবচেয়ে বড় যে কথা তারা বলত তা হল আল্লাহর “ইচ্ছার” কথা।

এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

মুশরিকরা বলত, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে আমরা তাঁকে ছেড়ে অন্য কারো ইবাদত করতাম না। না আমরা, আর না আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন কিছুকে হারাম বানাতাম। (সূরা নাহল, ৩৫)

আল্লাহ তাআলা তাদের চরম মিথ্যাবাদী বলেছেন। অন্যদিকে বর্তমান যামানার কিছুলোক জাতির ইচ্ছার নামে তাদের অপকর্ম চালাতে চাচ্ছে। তারা জাতির নামে যা খুশি করতে চাচ্ছে। তারা তাদের জীবন এমন ভাবে চালাচ্ছে যাতে আল্লাহর কিতাব ও শরিয়তের কোন বন্ধন নেই, বরং তাদের খায়েশ মাফিক বস্তুগত কর্মকান্ড, সেচ্ছাচারিতা ও শক্তিগত দিককেই প্রাধান্য দেয়। এই জাতীয় কথা ও মন্তব্য তাদেরকে মা’বুদের আসনে বসানো হয়। ফলে জাতি আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে পড়ে। আর তাদের মনের ইচ্ছাই শরীয়তের সমতুল্য হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত বিচার করে আল্লাহর আইনকে ছেড়ে দিয়ে, যেন তারাই শরিয়ত ও আইন নির্ধারক বনে গেছে। ফলে তারা আল্লাহর সীমারেখাকে অতিক্রম করছে তাকে স্বীকার না করে এবং তার উপর আমল না করার কারণে।

প্রশ্নঃ কেউ কেউ বলে দ্বীন হচ্ছে জাতির জন্য আফিম স্বরূপ- এ কথা কি সত্য?

উত্তরঃ একথা কার্লমার্কস নামক এক ইয়াহুদীর মতবাদ। সে কমিউনিজমের পত্তন করে ইসলামকে কবর দিতে চেয়েছিল। সে এ ধরণের কথা সাজিয়ে বলেছিল, যাতে মানুষ ধারণা করে যে, দ্বীন-ধর্ম মাদক দ্রব্যের মত ক্ষতিকর জিনিস। একথা সত্যি হতে পারে অন্যান্য ভ্রান্ত ধর্মের ব্যাপারে। যাতে রয়েছে নানা ধরণের অপ্রচলিত নিয়মকানুন, মূর্তি পূজা ইত্যাদি। কিন্তু সত্যিকারের দ্বীনে হানিফ, যা সকল ভ্রান্তি থেকে মুক্ত, যা ইব্রাহীম(আঃ) এর মাধ্যমে এসেছে এবং যাকে কায়েম করতে আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছেন, তাদের তা মানুষের অন্তর ও অনুভূতিকে আকৃষ্ট করে। এ ধর্ম সমস্ত ধরণের অনুভূতি ও শক্তিকে নাড়া দেয় এবং এই ধর্মালম্বীদের সম্মুখপানে এগিয়ে দেয়। সে তার অনুসারীদের কোন রকম অন্যায়, অত্যাচার ইত্যাদি বরদাশত করে না। বরং তাদের উপর সব ধরনের জিহাদকে ওয়াজিব করেছে যাতে করে আল্লহর বাণীকে সমুন্নত করা যায়। আর নানা ধরণের অপবাদকে ঘুচানো যায়। আর যারা দ্বীন-ধর্ম ও ন্যায়-নীতি হতে দূরে থেকে শরিয়তের বিধি বিধানকে অস্বীকার করে কিংবা রদবদল করে তাদের হতে পৃথক থাকতে উপদেশ দেয়।

প্রশ্নঃ সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভংগি কি?

উত্তরঃ এ ব্যাপারে ইসলামী হুকুম প্রকাশ করার পূর্বে মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব হল এই যে, তাদের খোঁজ নেওয়া দরকার-ঐ বাণী প্রচারকদের আদর্শ ও নীতি তাদের নিজেদের কর্মজীবনে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা। এটা সত্যিই বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব কিনা। এই নীতির প্রচারকারী দুই ইয়াহুদী কালমার্কস ও লেনিন কিংবা তাদের অনুসারীরা কি বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে অথবা তারা কি কোরআন বা হাদীস হতে উহা গ্রহণ করেছে। যার ফলে মুসলিমরা উহা গ্রহণ করবে?

কিন্তু যেহেতু ঐ নীতি কোরআন হাদীস হতে তারা নেয়নি, তাই তাদের কথা প্রকৃত মুসলিমগণ কখনো গ্রহণ করতে পারে না। বরং প্রথম থেকেই উহা ত্যাগ করা তাদের জন্য অপরিহার্য। যখন কোন বুদ্ধিমান তাদের নীতি কথাগুলো পড়বে তখন সে দেখতে পাবে যে, উহা তাগুতদের কথায় পরিপূর্ণ। কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ আমাদের নিকট যা চায় তা হলো ঐ সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদকে পরিত্যাগ করা। কারণ, এই কালেমা হল মুসলিমগণের জীবন ও আমলের মূল মন্ত্র।

লেখক বলেনঃ নিশ্চয় ইসলাম সত্যিকার ভাবে ন্যায়পরায়ণ আল্লাহ তাআলার তরফ হতে নাযিল হয়েছে। তাই আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ছাড়া আমাদের সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র কিংবা এ জাতীয় কোনটিরই প্রয়োজন নেই। আর যারা ইসলামের অনুসারী এবং কায়েম করে ন্যায়পরায়ণতা, সাম্য ও স্বাধীনতা তারাই হল সৌভাগ্যবান, দুনিয়া ও আখিরাতে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

আল্লাহর রং, আর কে আছে রংয়ের দিক দিয়ে আল্লাহ থেকে উত্তম? আমরা সকলেই তার দাস। (সূরা বাক্বারাহ, ১৩৮)

প্রশ্নঃ মাসুনিয়া কি?

উত্তরঃ মাসুনিয়া হচ্ছে ইয়াহুদীদের একটি গোপন সংগঠনের নাম। যার অর্থ হচ্ছে “গোপণ শক্তি। প্রাথমিক অবস্থায় এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে, তাদের বাইবেলকে পরিবর্তন করে তাদের ‘আক্বীদাহ্ ও চিন্তা ভাবনাকে যাতে পরিবর্তন করা যায় সে উদ্দেশ্যে। সাথে সাথে তাদের মধ্যে নানা ধরণের বিভেদ ও দলাদলি সৃষ্টি করে তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। অতঃপর যখন ইসলামের আলো মানুষের মাঝে ছড়াতে শুরু করে তখন তাদের ঘৃণ্য তৎপরতার সীমা উহার দিকে প্রসারিত করে। বিশ্বের ইয়াহুদী সম্পদ্রায় এই মাসুনিয়াদের সাহায্য করে থাকে বুদ্ধিজীবি ও কথিত সুশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে ও তাদের ষড়যন্ত্রমূলক ধোকাবাজি ও ছল-চাতুরী দ্বারা। এরা প্রত্যেক যুগে ঐ যুগের রংয়ে রঞ্জিত হয়। প্রতিটি জাতি, গোত্র ও দেশের লোকদের সাথে তারা তাল মিলিয়ে চলে। এমন কি ব্যক্তিগত ভাবেও তারা মানুষের সাথে মিশে যায়। ফলে সহজেই তারা লোকদেরকে তাদের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনায় ফেলতে পারে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন দেশে তাদের নানা ধরণের যে স্বীকৃতি মিলে তাতে দেখা যায় যে, মাসুনিয়ার মূল উদ্দেশ্য হল ইয়াহুদীদের ঘৃণিত চিন্তাধারাগুলোকে বাস্তবায়ন করা। সাথে সাথে এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের শাসকদের বুদ্ধি বিবেককে পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তারা তাদের আত্মা, বুদ্ধিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাতে মাসুনিয়াদের কথাকে মান্য করতে বাধ্য হয়। এভাবেই মাসুনিয়ারা লোকদেরকে ধোকা দেয় তাদের অন্তরে প্রচন্ড রকমে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে। এই দলের সাফল্য স্বরূপ পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকাংশ নেতা ও শাসকদের নিজ দলে আনতে সক্ষম হয়েছে। তারা ইউরোপের বড় বড় শাসক ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের তাদের দলে নিয়ে নিয়েছে এবং আরব জগতের তথাকথিত অনেক চিন্তাবিদকে তাদের সংগঠনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। যখনই কোন এলাকায় তাদের ঘৃণ্য কর্ম তৎপরতার গোমর ফাঁস হয়ে যায় তখনই সেখানে তারা নানা ধরণের ধোকার রাস্তা গ্রহণ করে অথবা শাসকদের পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তারা আবার নতুন কোন সংস্থার নামে তাদের কাজ শুরু করে যা মূলতঃ ঐ মাসুনিয়াদেরই অন্য নাম। এভাবেই তারা নতুন নামে ইয়াহুদীদের খিদমত করতে শুরু করে। ১৯০০ খৃষ্টাব্দে প্যারিসে তাদের যে সম্মেলন হয় তাতে তারা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বিশ্বজুড়ে তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট গঠন করবে। যার ফলে এই রাষ্ট্রগুলি দ্বারা মাসুনিয়ারা উপকার লাভ করবে। তাদের দ্বারা যে সমস্ত ঘৃণ্য কাজ অতীতে সংঘটিত হয়েছে তা হল ইঞ্জিলের (বাইবেল) পরিবর্তন ও নানা ধরণের অপচেষ্টার মাধ্যমে লোকদের বিভিন্ন দলে ও ধর্মে বিভক্ত করা। সাথে সাথে জাতিতে জাতিতে শত্রুতা ও যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

ইসলামের শুরুতে তারা যা করতে পেরেছিল:

ক. দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করা।

খ. তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ) এবং তার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা অপবাদ দেয়া।

গ. নানা ধরণের মিথ্যা কথা প্রচার করা এবং সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা প্রচারণার ফলে উসমান (রাঃ) কে শহীদ করা হয়।

ঘ. নানা ধরণের দলে বিভক্ত করার চেষ্টার ফল হল খারেজী ও নাসেবীদের উত্থান।

ঙ. জাহম ইবনে সফওয়ান এর মাধ্যমে জাহমিয়াদের নানা দলের মতবাদ প্রচার।

এর মধ্যে আছে মুতাজিলা, কদরিয়া এবং অন্যান্যরা। এ ছাড়াও আছে কারামিতা, ও অন্যান্য বাতেনিয়া সম্প্রদায়।

চ. উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা রটনা প্রচার । অন্যান্য অনারবদের সাথে মিলে মিশে নানা ধরণের মতবাদ প্রতিষ্ঠা। তারা ঐ যুগে এই সমস্ত কর্মের সাথে সাথে বিভিন্ন মিথ্যাবাদীদের তৈরী করেছিল তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য। এই সম্বন্ধে বিশেষ করে জানতে হলে ‘তারিখ উল জামি’য়িয়াতিস সিররিয়া ওয়াল হারাকাতিলহাদ্দামা ফিল ইসলাম’ গ্রন্থটি পড়তে হবে।

ছ. নানা ধরণের মিথ্যা প্রচারণার দ্বারা যখন তখন যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বিশেষ করে ক্রুসেডের যুদ্ধ। সাথে সাথে যারা তাদের অনুগত, তাদের নাম ঘটা করে প্রচার করা এবং তাদের মাধ্যমে যুদ্ধের দ্বারা নানা ধরণের বিভেদ সৃষ্টি করা। যেমন নাসির আততুসী, ইবনুলআলকামাহ, এবং অন্যান্যরা, যারা ছিল পূর্বের খৃষ্টানদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের মাধ্যমে খৃষ্টানদের এমন ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয় যে, তারা মুসলিম যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সমস্ত খৃষ্টানদের সাহায্য করতে যত ধরণের গুপ্তচর বৃত্তি করা এবং দেখানো দরকার সবই তারা করত। যুদ্ধের পর ঐ সব ষড়যন্ত্রের কথা তাদের খৃষ্টান আরবদের স্বীকৃতিতে প্রকাশ পায়। এটা প্রকাশ পায় জর্জ হাবাসের বক্তব্যেও। এই জাতীয় জাতীয়তাবাদীরা অজ্ঞতাও গোমরাহির কারণে এই সম্পর্কে কিছুই অবগত ছিল না।

প্রশ্নঃ সুফীদের (পীরদের) ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি?

উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীদের যামানায় পীর নামক ব্যক্তিদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু তার পরপরই যখন গ্রীকদের বই-পত্রগুলো আরবীতে অনূদিত হয়, তখন হতেই তার প্রভাব মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। সূফীবাদ “সুফিয়া” শব্দ হতে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ (গ্রীক ভাষায়) হল “হিকমত”। অনেকে বলেনঃ সুফ বা পশম শব্দ হতে উহা গৃহীত হয়েছে। যে পোশাক তারা পরিধান করত তাকে সুফ বলা হত। অনেকে বলেনঃ “সাফা” হতে। কিন্তু উহা সঠিক নয়। সুফী বা পীরেরা ইসলামের অনেক হুকুম আহকামেরই বিরোধিতা করে থাকে, যেমনঃ

১। গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করাঃ বেশীর ভাগ সুফীরাই মৃত গাইরুল্লাহদের নিকট দু’আ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “দু’আ হচ্ছে ইবাদত”। (বর্ণনায় তিরমিযি, হাসান সহীহ)

ইবাদতকে অন্য কারো জন্য নিবেদন করা, বিশেষ করে গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করা বড় শিরকের অন্তর্ভূক্ত। এতে সমস্ত ‘আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

আর আল্লাহ ছাড়া অন্য এমন কাউকে ডেক না, যে না তোমার কোন উপকার করতে পারে বা ক্ষতি করতে পারে। যদি তুমি ইহা কর, তবে অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউনাস, ১০৬)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

যদি তুমি কোন শিরক কর তবে অবশ্যই তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। (সূরা যুমার ৬৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লহর সাথে অন্যকে শরিক করত তবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (বর্ণনায় বুখারী)

২। বেশীর ভাগ সুফীরা এই ধারনা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাআলার সত্ত্বা সর্ব স্থানেই বিরাজমান। এই কথা কোরআনের বিরোধী, যাতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

আল্লাহ- রহমান আরশের উপর আছেন। (সূরা ত্বাহা, ৫)

অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

إن الله كتب كتابا فهو عنده فوق العرش ( متفق عليه )

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এক কিতাব লিখেছেন, যা তাঁর নিকট আরশের উপর আছে।

(বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

আর আল্লাহ যে বলেছেনঃ

(আরবি)

আর তিনি তোমাদের সাথে আছেন, যেখানেই তোমরা থাকনা কেন । (সূরা হাদীদ, আয়াত ৪)

এ কথার অর্থ হল, তাঁর ইলমের দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা. দেখার দ্বারা তিনি সকলের সাথে আছেন। এগুলো তফসীর-কারকগন আয়াতের বিশ্লেষণে বলেছেন।

৩। কোন কোন সুফী এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহ তার কোন কোন সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান। এমন এক তথাকথিত বিখ্যাত সুফী ইবনে আরাবী, যার কবর দামেশকে আছে। সে বলেছেঃ আল্লাহ্ হকই বান্দা, আর বান্দাই হক তা আলা। হায়! তাহলে কে কার ইবাদত করবে!

সে আরও বলেঃ কুকুর আর শূকর সবার মোদের মাবূদ, আল্লাহতো গির্জার পাদ্রী ছাড়া কেউ নয়। ( নাউযুবিল্লাহ)!

৪।বেশীর ভাগ সুফীই এই ধারণা পোষণ করে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কারণে। তাদের এই বক্তব্য কুরআনের ঐ কথার বিপরীত যাতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

নিশ্চয় আমি জ্বীন ও মানুষদের সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য।

(সূরা যারিয়াত, ৫৬)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

আর নিশ্চয় আখিরাত ও দুনিয়া আমারই জন্য। (সূরা লাইল, ১৩)

৫। বেশীর ভাগ সুফীই এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাআলা তার নূর হতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সৃষ্টি করেছেন। আর অন্যান্য জিনিস মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর হতে সৃষ্টি হয়েছে। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন প্রথম সৃষ্টি। এই সমস্ত কথাই কোরআনের বিপরীত, যাতে বলা হয়েছেঃ

(আরবি)

যখন তোমার রব মালাইকাদের (ফিরেশতাদের) বললেনঃ আমি মানুষ সৃষ্টি করছি মাটি হতে। (সূরা সোয়াদ, ৭১)

তাই আদম (আঃ) মানুষদের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি, যাকে তিনি মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে আরশ ও পানির পর কলমকে সৃষ্টি করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহপাক সর্ব প্রথম সৃষ্টি করেন কলম। (বর্ণনায় আহমদ, তিরমিযি, হাসান সহীহ)

যে হাদীসে বলা হয়েছেঃ “হে জাবের, সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন” –সে সম্বন্ধে বেশীর ভাগ হাদীস বিশারদগণ বলেন যে, এর কোন সহীহ সনদ নেই। উহা বানোয়াট ও বাতিল।

৬। সুফীদের শরীয়তের মুখালেফ (পরিপন্থী) অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে, আউলিয়াদের নিকট নযর বা মানত দেয়া। তাদের কবরের চতুর্দিকে তাওয়াফ বা ঘুরা, কবর পাকা করা, এমনভাবে জিকির করা যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত নয়। জিকির করার সময় নৃত্য করা, শরীরের মধ্যে লোহা প্রবেশ করানো, আগুন গিলে খাওয়া, তাবিজ কবজ, যাদু, নানা ধরণের ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করা, অন্যায় ভাবে মানুষদের বুঝ দিয়ে তাদের টাকা পয়সা ভক্ষণ করা, তাদের নানাভাবে ধোকা দেয়া ও এই জাতীয় অন্যান্য কাজ।

প্রশ্নঃ কেউ কেউ বলে থাকেঃ ইসলাম মানুষকে পশ্চাদপদ করে তোলে- এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?

উত্তরঃ এই ধরণের ঘৃণ্য অপবাদ ইসলামের শত্রুরাই করে থাকে। যাতে করে ইসলামের অনুসারীরা ইসলাম হতে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের কথায় এটাই তারা বুঝাতে চায় যে, দ্বীন প্রচীন পন্থা। বর্তমান যুগের সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে তা চলতে পারে না।

এগুলি মিথ্যা ও ধোকাবাজীর কথা। কারণ, ইসলাম সর্বদাই ও সমৃদ্ধির ব্যাপারে হুকুম করে। মানুষদের প্রেরণা দেয় এবং উদ্বুদ্ধ করে নতুন নতুন আবিষ্কার এবং ভাল কাজের জন্য।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

(আরবি)

আর তাদের জন্য তৈরী হও, তোমাদের সাধ্যমত সমস্ত ধরণের শক্তি নিয়ে।

(সূরা আনফাল, ৬০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা দুনিয়ার কার্যের ব্যাপারে বেশী অবগত আছ। (মুসলিম)

ইসলাম সর্বদা হুকুম করে, যে কোন কাজে কোরআন, হাদীস ও সাহাবীদের আমলের প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে। কারণ, সাহাবীগণ দেশের পর দেশ জয় করেছিলেন তাদের ঈমান, আক্বীদাহ, উত্তম চরিত্র ও জিহাদের মাধ্যমে। ফলে তাঁরা আল্লাহর বান্দাদের মানুষের গোলামী হতে বের করে আল্লাহর গোলামীতে লিপ্ত করেছিলেন। মানুষ নানা ধরনের বিকৃত ধর্ম হতে বের হয়ে ইসলামের ন্যায় বিচারের ছায়াতলে আশ্রয় পেয়েছিল। মুসলিমদের কোন ইজ্জত হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের ধর্মের দিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তন করে।

প্রশ্নঃ আমাদের কি বর্তমান যুগের মূল চ্যালেঞ্জগুলো ও সূফীদের সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা দরকার?

উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের তাদের সম্বন্ধে জানা দরকার, যাতে করে আমরা তাদের ভ্রান্ত মতবাদ জেনে নিয়ে তাদের থেকে সাবধান হতে পারি।

দলিলঃ হুযাইফা (রাঃ) বলতেনঃ লোকেরা সর্বদা রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাল জিনিস সম্পর্কে প্রশ্ন করত, আর আমি সর্বদা তাকে খারাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করতাম এই ভয়ে যে, হয়ত উহা আমাকে পাকড়াও করবে। একদা আমি প্রশ্ন করলামঃ হে আল্লহর রাসূল! এক সময় আমরা জাহেলিয়াত ও পাপাচারের মধ্যে ছিলাম। তারপর আল্লাহ তাআলা আমাদের এই কল্যাণ দান করেছেন। এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণ আছে? বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ ঐ অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে ঐ কল্যাণের মধ্যে ফাসাদ ও মতবিরোধ আছে। তখন বললামঃ ঐ অকল্যাণ কি কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ একটি দল আমার সুন্নতকে ছেড়ে অন্য সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে। আর আমার হিদায়েতর রাস্তা ছেড়ে অন্য পথ ধরবে। তাদের তোমরা জানবে এবং অস্বীকারও করবে। বললামঃ ঐ কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আছে? এবারে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, জাহান্নামে দরজার নিকট হতে ঘোষক ডাকবে। যারা তাদের কথা শুনবে, তাদেরকে তারা উহাতে নিক্ষেপ করবে। বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে তাদের বর্ণনা দিন। তিনি বললেনঃ ঐ লোকেরা আমাদের মতই রক্ত মাংসের হবে এবং আমাদের মতই কথা বলবে। আমি তখন বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি ঐ সময় বেচেঁ থাকি তবে আমাকে উপদেশ দিন তখন আমি কি করব? বললেনঃ তখন মুসলিমদের জামাত (দল) ও তাদের ইমামের সাথে থাকবে। আমি বললামঃ যদি তখন মুসলিমদের জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তখন ঐ সমস্ত দলের সকলকে পরিত্যাগ কর। যদি দরকার হয়, তবে,গাছের কান্ডকে দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে থেক যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মৃত্যু এসে উপস্থিত না হয়। (বর্ণনায় মুলিম)

এই হাদীস হতে এই শিক্ষা পাওয়া গেল যে, যারা অকল্যাণের দিকে ডাকে, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে চলে না। না তাদের জীবনের চলার পথে, না আদর্শে, না বিচারের মধ্যে, না তাঁর জীবনের আদব, নিয়মকানুন, তাদের পোশাক, অভ্যাস ও চালচলনে। তাই মুসলিমদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন