hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

১০০
বিকাশমান দুনিয়ার সংস্কৃতি
এতক্ষণ যা কিছু বলা হল, তা দ্বারা সংস্কৃতি সম্পর্কিত ধারণাকে স্পষ্টতর করে তুলতেই চেষ্টা করা হয়েছে। সংস্কৃতি যে আমাদের জীবনের জন্যে অপরিহার্য, আমাদের জীবন গঠনে তার ভূমিকা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীরভাবে প্রভাবশালী এবং কাযর্কর তা এ আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আশা করি। বস্তুত সংস্কৃতি মৌলিক ভাবধারার দিক দিয়ে একটি প্রবহমান নদী। এ নদী যেখান থেকেই প্রবাহিত হয়, জীবনের অস্তিত্ব, অবয়ব ও চৈতন্যের ওপর তার গভীর স্বাক্ষর রেখে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ সংস্কৃতি-নদীর প্রবাহ সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। তারা হয় তা দেখেতেই পায় না কিংবা দেখেও ঠিক অনুভব করতে সক্ষম হয় না। তাকে দেখবার ও অনুভব করার জন্য চাই অনুভূতিশীল মন এবং সূক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন চোখ। কথাটি এভাবেও বলা যায় এবং তা বলা যুক্তিযুক্তই হবে যে, অনুভূতিশীল মন এবং দৃষ্টিসম্পন্ন চোখই সংস্কৃতির প্রয়োজন অনুভব করতে পারে- স্পষ্টত অবলোকন করতে পারে তার ভালো ও মন্দ রূপ। আর নদীর ঘোলা-পানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ পানি গ্রহণের ন্যায় পংকিল সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে পবিত্র ও নির্মল ভাবসম্পন্ন সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারে কেবলমাত্র সচেতন লোকেরাই। যাদের মন চেতনাহীন, মগজ বুদ্ধিহীন ও চোখ আলোশূণ্য, সংস্কৃতির প্রবহমান দরিয়া থেকে তারাও আকণ্ঠ পানি পান করে বটে; কিন্তু সে পানি হয় ঘোলাটে ময়লাযুক্ত, পুঁতিগন্ধময় ও অপরিচ্ছন্ন। এজন্য সংস্কৃতির শালীন, পরিচ্ছন্ন ও পরিত্র এবং অশালীন ও অপরিচ্ছন্ন তথা পংকিল ও কদর্য-এ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়া একান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার-ঠিক যেমন প্রবহমান নদী-নালায় এ দু ধরণেরই পানিস্রোত পাশাপাশি প্রবাহিত হতে থাকে চিরন্তনভাবে। যেসব লোক অন্ধ ও অচেতনভাবে স্বীয় সংস্কৃতির চতুঃসীমার মধ্যে থাকে অথচ তার প্রয়োজন ও দাবি-দাওয়ার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করেনা, সেজন্যে তারা কোন সচেতন ও সজাগ চেষ্টায় নিয়োজিত হয়না-সেজন্যে তাদের ভেতর জেগে ওঠেনা কোন আত্মানুভূতি, তারা এই শেষোক্ত পর্যায়ের সংস্কৃতিরই ধারক হয়ে থাকে। কেননা তাদের মতে সংস্কৃতি কখনো ভাল বা মন্দ কিংবা স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হতে পারে না- হতে পারেনা তা পবিত্র ও শালীনতাপূর্ণ।

আমাদের কর্মনীতি, কার্যপদ্ধতি ও মূল্যমান বরং আমাদের চিন্তা-ভাবনা সবকিছুই আমাদের সংস্কৃতির ফসল। সংস্কৃতিই এসব গড়ে তোলে পরিচ্ছন্ন ও শালীনতাপূর্ণ করে। মানবীয় চেতনায় ও বোধিতে যা কিছু বিশ্লিষ্টতা থাকে স্বাভাবিকভাবে, সাংস্কৃতিক অনুভূতি ও নিজস্ব মূল্যবোধই তাকে উৎকর্ষ দান করে, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রূপে গড়ে তোলে। এটাই মানুষকে অবচেতনার অন্ধকারাচ্ছন্ন গহ্বর থেকে চেতনার আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ তথা বাইরের দুনিয়ায় নিয়ে আসে এবং তাকে প্রস্ফুটিত করে তোলে। কিন্তু তাই বলে তার মৌলিক সাংস্কৃতিক চেতনায় কোন ব্যতিক্রম ঘটেনা-ঘটেনা কোনরূপ পরিবর্তন। অবশ্য একথা ঠিক যে, সংস্কৃতি মানুষের মানসিক যোগ্যতা-প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ মাধ্যম। অন্য কথায়, কোন জাতির সংস্কৃতি সে জাতির তাবৎ লোকদের মানসিক যোগ্যতা-প্রতিভারই প্রতিবিম্ব। এজন্যে একদিকে যেমন বলা যায় যে, অসভ্য জাতিগুলোর সংস্কৃতিবোধ ও সাংস্কৃতিক প্রকাশ নিম্নমানের হয় এবং সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারও বিকাশ ঘটে, তেমনি অপরদিকেও বলা যায় এক-এক ধরণের আকীদা-বিশ্বাস ও জীবন-দর্শন বিশিষ্ট জাতির সংস্কৃতি ও তার প্রকাশ হয় এক এক ধরণের। অর্থাৎ বিভিন্ন রূপ আকীদা-বিশ্বাস ও জীবন-দর্শন বিশিষ্ট জাতির সংস্কৃতি ও তার প্রকাশ বিভিন্ন রূপ হতে বাধ্য। কেননা সংস্কৃতির মৌলিক উৎস জীবনবোধ, চিন্তা-বিশ্বাস ও মানসিকতা। অতএব জীবন-দর্শনের পার্থক্যের কারণে সাংস্কৃতিক বোধ ও প্রকাশেও অনুরূপ পার্থক্য হওয়াই অনিবার্য ব্যাপার। সংস্কৃতির এ পার্থক্যের প্রতিফলন ঘটে লোকদের মননে ও জীবনে এবং মৌলিক অনুভূতিতে যেমন, তার প্রকাশ মাধ্যমেও তেমন। তাই ইতিহাসে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়, এক ব্যক্তির এক প্রকারের জীবন-দর্শন থাকাকালে তার মানসিক অবস্থা ও জীবন-চরিত্র ছিল এক ধরণের; কিন্তু পরবর্তীকালে তার সে জীবন-দর্শনে যখন মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হল, তখন তার মানসিকতা, জীবনবোধ ও চরিত্রেও আমূল পরিবর্তন সুস্পষ্ট হয়ে উঠল-তার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রকাশ-মাধ্যমও গেল সমূলে বদলে। এ পরিবর্তনের মূলে জীবন-দর্শনের পরিবর্তন ছাড়া আর কোন কারণই পরিদৃষ্ট হয়না। আরব জাতির ইতিহাসই এ পর্যায়ের দৃষ্টান্ত। যে আরব জনগণ ছিল সভ্যতা-ভব্যতা ও শালীনতা-শিষ্টাচার বিমুখ, অনুন্নত সামাজিক সংস্থা ও ব্যবস্থাসম্পন্ন, অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রতীক, লুঠতরাজ ও মারামারি-কাটাকাটিতে অভ্যস্ত-যাদের নিকট মানুষের জীবনের মূল্য ছিল অতি তুচ্ছ, মাত্র দশ বছরের মধ্যেই তারা এক নবতর জীবন-দর্শনের ধারক লোক-সমষ্টি হিসেবে সুসংবদ্ধ হয়ে উঠল এবং আঠারো বছরের মধ্যেই সেই আরব জাতির মন-মানস, জীবন-চরিত্র, মূল্যমান ও জীবনবোধ আমূল পাল্টে গেল এবং সম্পূর্ণ নতুন রূপ পরিগ্রহ করল। পূর্বের অন্ধকার জীবন নবীন আলোকচ্ছটায় ঝলমল করে উঠল, মনের সংকীর্ণতা ও নীচতা-হীনতা ঘুচে গিয়ে পারস্পরিক ঔদার্য, প্রেম-প্রীতি, সহনশীলতা ও মার্জিত রুচিশীলতার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটল মনন ও জীবনের সর্বত্র। পূর্বে যা ছিল অন্যায়, এক্ষণে তা-ই অপরিহার্য কর্তব্য বিবেচিত হতে লাগল। মানুষের মূল্য ও মর্যাদা হল প্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনস্বীকৃত। অশালীনতা ও অশ্লীলতা দূর হয়ে সেখানে স্থান নিল লজ্জাশীলতা ও সুরুচিশীলতা। যে সমাজে মানুষের মর্যাদা ছিল কুকুর-বিড়ালের চাইতেও নিকৃষ্ট, সেখানে তা এমন অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করল যে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার পর আসমান ও জমিনের সবকিছুর ঊর্ধ্বে নির্ধারিত হল তার স্থান। উদ্দেশ্যহীন ও লক্ষ্যহারা মানুষের সামনে এক মহত্তম জীবন-লক্ষ্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। অন্ধকার যবনিকার অবসানে ঘটল নতুন এক আলোকজ্জ্বল দিবসের সূর্যোদয়। একই ব্যক্তি ও একই জাতির জীবনে রাত্রির অবসানে দিনের সূর্যোদয়ের এ ঘটনা সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে আমাদের সামনে। জীবন-দর্শনের পরিবর্তনে সংস্কৃতির বাহ্যিক প্রকাশের পরিবর্তন হওয়ার এ ঘটনা এক শাশ্বত ও চিরন্তন ব্যাপার এবং একে অস্বীকার করার উপায় নেই।

পূর্বেই বলেছি,মানব সমাজে পরিবর্তন ঘটেছে অনেক। লক্ষ লক্ষ বছরের দীর্ঘ এক প্রস্তরযুগ অতীত হয়ে গেছে মানব সমাজের ওপর দিয়ে। তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখার সময়-কালও আমাদের সমগ্র ঐতিহাসিক যুগের তুলনায় অনেক দীর্ঘ। তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ বছরে বিস্তীর্ণ এ দীর্ঘ যুগে মানুষ পাথরের অসমান ও অমসৃণ হাতিয়ার ব্যবহার করেছে। প্রস্তর যুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজ ও পশু পালনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে। এতে করে মানুষের খাদ্য সংগ্রহের পন্থা ও অর্থনৈতিক মান বদলে যায়। অতঃপর তাম্র ও লৌহ যুগে এ পরিবর্তনের গতি অধিকতর তীব্র হয়ে ওঠে। আর বর্তমানের এ পারমাণবিক যুগে মানুষের সমাজ-জীবনে পরিবর্তনের ধারা আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এ পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষও বদলে গেছে অনেক। কিন্তু মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার মৌলিক চেতনায় যেমন কোন পরিবর্তন আসেনি- কোন পরিবর্তনই সূচিত হয়নি মানুষের মানসিকতায়, মূল্যমানে, চরিত্র-নীতিতে, তেমনি পরিবর্তন সূচিত হয়নি সংস্কৃতিতে, সাংস্কৃতিক ধারণায় ও জীবনবোধে। যদি বলা হয় যে, সমাজ বিবর্তনের এ অমোঘ ধারায় মানুষের সংস্কৃতিও বদলে গেছে, তাহলে বলতে হবে, সংস্কৃতি যতটা বদলেছে ততটাই তা রয়ে গেছে অপরিবর্তিত-যেমনটি ছিল মানবতার প্রথম সূচনাকালে। বস্তুত সমাজ-বিবর্তন এবং মানুষের বাহ্যিক পরিবর্তনে মৌলিক মানব-প্রকৃতি আদৌ বদলে যায়নি। স্বভাব-প্রকৃতির দিক দিয়ে মানুষ আজো তেমনি মানুষই রয়ে গেছে, যেমন ছিল সে পার্থিব জীবনের প্রথম সূচনায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন