মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মানুষের জীবন একটি সামগ্রিক ও বহুমাত্রিক সত্তা। তার অসংখ্য দিক ও বিভাগ এবং অগণিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। অপরিমেয় কার্যকারণ মানব জীবনে প্রতিনিয়ত কর্মরত। সাহিত্য এই পর্যায়েরই একটি বিষয় মাত্র। কিন্তু মানব জীবনে সাহিত্যের প্রকৃত অবস্থান কোথায়, তা সন্ধান করে দেখা আবশ্যক। খুঁজে দেখা দরকার যে, জীবনের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক কতটা ওতপ্রোত, সাহিত্য কিভাবে লালিত-পালিত হয়, উন্নতি ও উৎকর্ষ লাভ করে এবং তখন তা কিরূপ পরিগ্রহ করে। সাহিত্যের সঙ্গে কোন্ কোন্ দিক সম্পর্কিত, তার কল্যাণের দিকগুলো থেকে বেশী বেশী ফায়দা লাভ কিভাবে সম্ভব হতে পারে-সম্ভব হতে পারেনা তার ক্ষতির দিকসমূহ থেকে আত্মরক্ষা করা ইত্যাদি বিষয়ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
হৃদয়-মনের অনুভূতির ভাষাগত রূপায়ণকেই বলা হয় সাহিত্য। আবেগ ও চেতনাকে সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক শব্দের বিন্যাসের মাধ্যমে ব্যক্ত করাই সাহিত্য। তা যেমন বক্তৃতা ও ভাষণরূপে প্রকাশিত হতে পারে, তেমনি কাব্য ও কবিতার ছন্দময় পরিচ্ছদেও সজ্জিত হতে পারে। গদ্য রচনার সম্ভারে বিভিন্ন রূপ নিয়েও আসতে পারে তা জনগণের সম্মুখে।
মানব সমাজের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। জীবনের মূল্যমান নির্ধারণ ও বিনির্মাণে তার ভূমিকা অত্যন্ত প্রবল। মানুষের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যবোধ ও সৌন্দর্য চেতনাকে তা উজ্জীবিত, উচ্ছ্বসিত ও উদ্ভাসিত করে তুলতে সক্ষম। সৌন্দর্য চেতনাকে ভারসাম্যময় এবং জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বানাতে এবং উচ্চ মানসম্মত লালিত্য ও সুধাময় করে তোলাও সাহিত্যেরই অবদান। মানুষের মধ্যে নৈতিক চেতনা জাগ্রতকরণ এবং তার লালন ও উৎকর্ষ সাধন সাহিত্যেরই কীর্তি। কুপ্রবৃত্তির ওপর সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির বিজয় অর্জন এবং পরিশীলিত রুচিবোধ সৃষ্টি ও তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার ক্ষেত্রে সাহিত্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য অসামান্য। সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানকে উন্নত করার দায়িত্বও তারই ওপর অর্পিত। মানব চিত্তের চেতন, অবচেতন ও অচেতন অবস্থার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে দুর্বলতাসমূহকে সুস্পষ্টরূপে দেখিয়ে দেয়াও সাহিত্যেরই কাজ।
সাহিত্য আমাদের জীবনের প্রতিটি কোন ও প্রতিটি দিকের ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তা আমাদেরকে আনন্দের সামগ্রী পরিবেশন করে এবং দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়া মনকে হাত ধরে ঊর্ধ্বে তুলে দেয়। দরিদ্র ও সর্বহারার পর্ণকুটিরে যেমন তার স্থান, তেমনি ধনবান ও ক্ষমতাসীনদের বিলাস-বহুল প্রাসাদেও তার অবাধ গতি। সাহিত্য মূলত আমাদের হৃদয় স্পন্দনের ক্ষণতম প্রতিধ্বনি; শব্দের চাকচিক্যময় পোশাক পরে তা আমাদের সামনে শরীরী হয়ে দেখা দেয়। সামগ্রিক দৃষ্টিতে সাহিত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির এমন একটা অংশ, যাকে উপেক্ষা করা যায় না- বিচ্ছিন্ন ও অপ্রয়োজনীয় মনে করাও সম্ভব নয়।
সাহিত্য জীবন ও জীবন-প্রেক্ষিতের প্রতিবিম্ব। একারণেই প্রতি স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী ও সমাজের সৃষ্ট সাহিত্য কিছু-না-কিছু ভিন্নধর্মী বিশেষত্বের ধারক হয়ে থাকে, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সমাজের এমন কিছু ঐতিহ্য গড়ে ওঠে যা তার সাহিত্যের জীবনদায়িনী রস হয়ে থাকে। পরিবেশগত স্বাতন্ত্র্য, ঐতিহ্যের বিশেষত্ব এবং চিন্তা ও বিশ্বাসগত সাযুজ্য ও অভিন্নতা সম্মিলিত হয়ে এক-একটি বিশেষ ধরণের চিন্তা-পদ্ধতি দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, যা ভিন্নতর সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে কখনই সাদৃশ্যপূর্ণ হয় না। দৃষ্টিকোণ ও চিন্তা-পদ্ধতির স্বতন্ত্র্য প্রকাশভঙ্গিতে স্বতঃই একটা বিশেষত্ব এনে দেয়। তাই ‘বিশ্বের সব সাহিত্য এক ও অভিন্ন’- কিছু সংখ্যক চিন্তাবিদ ও সাহিত্য দার্শনিকের এই কথা আদৌ সত্য নয়। বৈষয়িক জীবনের মৌলিক সমস্যা অভিন্ন হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু সে সমস্যা বিশ্লেষণ-মূল্যায়ন ও নীতিগতভাবে তার সমাধান বের করা এবং বাস্তবে সে সমস্যার সমাধান করা, সর্বোপরি তার ফলাফল দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পন্থা-পদ্ধতি ও ধরণ কখনই অভিন্ন হতে পারে না। এ কারণে তওহীদ-বিশ্বাসী সমাজের সাহিত্য বহুত্ববাদে বিশ্বাসী সমাজের সাহিত্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর হওয়া অবধারিত।
তওহীদ-বিশ্বাসী সমাজের জীবনাদর্শ ইসলাম। তা যেমন ব্যাপক, তেমনি পূর্ণাঙ্গ। তা জীবন যাপনের একটি বিশেষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ও ধারাক্রমে জীবন একটি অবিভাজ্য সমগ্র হিসেবেই আচরিত ও প্রবাহিত। দ্বীন ও দুনিয়া কিংবা ইহকাল ও পরকালের কোন বিভক্তি এ পদ্ধতিতে অগ্রহণযোগ্য। বাউল-সন্ন্যাসী ও পাদ্রী-পুরোহিতের জীবনধারা এখানে সম্পূর্ণরূপে অকল্পনীয়। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক জীবন পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও খণ্ডাকারে যাপিত হওয়ার কোন অবকাশই ইসলামী পদ্ধতিতে স্বীকৃত নয়। আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগীতে ইসলামী রীতি পালন, কিন্তু সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র-পরিচালনায় তাকে অস্বীকার করার একবিন্দু অনুমতি নেই এ জীবন পদ্ধতিতে। যে সাহিত্য মানুষকে আদর্শহীন চরিত্রহীন ও নির্লজ্জ বানায়, তার ফসল ফলানো দূরের কথা, তার চাষ করাও এখানে সম্ভব নয়- তার প্রকাশ ও প্রচলনের তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। [এক শ্রেণীর সাহিত্যসেবী মনে করে যে, শিল্প–সাহিত্য হচ্ছে নেহাত আনন্দের সামগ্রী; তার কোন সামাজিক ও মানবিক ভূমিকা নেই। তাই শিল্প–সাহিত্যকে তাঁরা শুধু চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম রূপে ব্যবহারের পক্ষপাতী। কিন্তু ইসলাম এইরূপ দায়িত্বহীন মনোভাবকে কিছুমাত্র সমর্থন করে না।– সম্পাদক] শুধু তওহীদী জীবন-পদ্ধতির কথা নয়, যে বিধি-বিধানই জীবন ও সমাজের জন্য গৃহীত, তারই অনিবার্য দাবি হচ্ছে তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা- জীবনের সমগ্র ক্ষেত্রে পূর্ণ মাত্রার অনুসরণ। এ যেমন সত্য, তেমনি এও অনস্বীকার্য যে, জীবনের এক-একটি ক্ষেত্রে এক এক ধরণের আদর্শ মূল্যমানের অনুসরণ অবাঞ্ছনীয়, যা পরস্পর-বিরোধী ও সাংঘর্ষিক। কোন সুস্থ মানুষ জীবনকে নৈরাজ্যের মধ্যে তো ঠেলে দিতে পারে না। নৈরাজ্যের মধ্যে জীবন-বিকাশ সম্ভব মনে করার বুদ্ধি বিকৃতিরই পরিচায়ক। সেটা যদি সম্ভব হয়ও তাহলে তা নিশ্চয়ই মানুষের জীবন নয়-সেরা সৃষ্টির জীবন নয়, নিতান্তই বন্য ও পাশবিক জীবন। কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষই তার কামনা করতে পারেনা, সে রূপ জীবনের কারণ হতেও প্রস্তুত হতে পারে না- তার আহ্বায়ক বা উদ্ভাবক হওয়া তো দূরের কথা।
জীবনের জন্যে কোন আদর্শ ও নীতির প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। এমন একটা আদর্শ জীবনের জন্যে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, যা বিশ্বলোকে-এই অগণিত সৃষ্টির মধ্যে মানুষের প্রকৃত অবস্থানকে সুনির্ধারিত করবে। মানুষ তো বৃক্ষ-গুল্ম-লতা বা ঝর্ণা-নদী-সমুদ্র নয় যে, তা স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। মানুষ পশু নয়; তাই পাশব-বৃত্তিই তার চালিকা শক্তি হতে পারে না। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যবোধসম্পন্ন সত্তা। তাই তার জীবন এসবের সুস্পষ্ট নির্ধারণকারী এক পূর্ণাঙ্গ ও সর্বজনগ্রাহ্য আদর্শ ছাড়া চলতেই পারে না। সে আদর্শই বলে দেবে, এই জীবনে মানুষের দায়িত্বের পরিসীমা কতদূর। তা-ই নির্ধারণ করবে প্রত্যেকের অধিকার ও কর্তব্য। পারস্পরিক বিরোধ-বিসম্বাদ ও মত-বৈষম্যের মীমাংসা করা সেই সর্বজনীন আদর্শের ভিত্তিতেই সম্ভব। আমাদের আলোচ্য সাহিত্যের দর্শন ও রূপরেখাও তারই আলোকে নির্ধারণ করতে হবে অবশ্যম্ভাবীরূপে।
তওহীদী ধর্ম (দ্বীন) ইসলামকে সম্মিলিত জীবনের একক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হলে সমগ্র জীবন তথা ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক জীবন দিয়ে তার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে হবে- তার ব্যাপকতা ও পূর্ণাঙ্গতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। তাই জীবনের কোথাও-সাহিত্য চর্চায়ও-বহুত্বের প্রতি একবিন্দু সমর্থন থাকতে পারবে না। তওহীদ-বিশ্বাসের ঐকান্তিক দাবি হচ্ছে নিজের সমগ্র জীবন দিয়ে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধান। তার সেই সন্তুষ্টি বিধানে যেমন নিয়োজিত করতে হবে ব্যক্তি-সত্তার অন্তর্নিহিত তাবৎ শক্তি ও প্রতিভাকে, তেমনি এই বিশ্বলোকের সমস্ত দ্রব্য ও সামগ্রীকে। এর কোন একটিকেও তার অসন্তোষ ও ক্রোধ উদ্রেককারী কাজে ও নিয়মে ব্যবহার করা যেতে পারে না- তার অধিকারও কারোর নেই।
ক্রোধ, লোভ ইত্যাকার প্রবৃত্তি মানব সত্তায় নিহিত বিভিন্ন গুণ। এই গুণসমূহের শক্তি অদম্য। তাই ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে এই গুণ ও তার শক্তিকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সংযত রাখা, তাকে কোনক্রমেই বল্গাহীন না করা- বল্গাহীন হতে না দেয়া বরং নির্দেশিত পথে ও নিয়মে তাকে চরিতার্থ করা। এগুলোর উৎপাদন ও নির্মূল সাধন বৈষ্ণব বা বৈরাগ্যবাদের শিক্ষা। ইসলামে তা সম্পূর্ণরূপে অসমর্থিত।
ক্রোধকে সংযত করা এবং অপরাধীকে ক্ষমা করা কুরআনের শিক্ষা। মানুষের জন্যে তা এক অতীব উচ্চ মানের নৈতিকতা। যারা ক্রোধকে সংযত রাখে এবং অপরাধীকে ক্ষমা করে, তারা মহান স্রষ্টার প্রিয়জন। সাহিত্যের (গদ্য বা কবিতার) সাহায্যে মানুষে মানুষে, শ্রেণীতে শ্রেণীতে হিংসার আগুন জ্বালানো মানব সমাজের জন্যে ক্ষতিকর এবং এই গুণটিরও চরম অপব্যবহার। জাহিলী যুগে কবি-সাহিত্যিকরা তাদের কাব্য ও সাহিত্য দ্বারা গোত্রসমূহের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতার আগুণ উৎক্ষিপ্ত করে তুলতো; প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করতো। অপরাধকে যে ক্ষমা করা যায়, তা ছিল তখনকার মানুষের কল্পনারও অতীত। ইসলাম কাব্য ও সাহিত্যের এই অপব্যবহার বন্ধ করে দেয় এবং মানুষে মানুষে বন্ধুতা-ভালোবাসা ও সদ্ভাব-সম্প্রীতি সৃষ্টির কাজে তার ব্যাপক ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। মানুষের জীবনকে তা সম্মানিত ও সম্মানার্হ করে তোলে। এহেন মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা, অপমান এবং তার ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর প্রতি সমর্থন জানানো হয় যে সাহিত্যে কিংবা যে সাহিত্যে মানুষকে এই কাজে প্রলুব্ধ করে, সে সাহিত্য মানুষের জন্যে কিছুমাত্র কল্যাণকর নয়। ইসলামে এরূপ সাহিত্যের কোন স্থান নেই।
লোভ মানুষকে অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণে প্রবৃত্ত করে। পরাস্বাপহরণ, শোষণ ও বঞ্চনার মূলে সর্বাধিক কাজ করে এই লোভ। তাই মানুষকে লোভাতুর, শোষক ও বঞ্চনাকারী বানানো সাহিত্যের কাজ হতে পারে না। সাহিত্যকে এ কাজে ব্যবহার করা হলে তা যে মানবতার জন্যে চরম দুঃখের কারণ হবে তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। ইসলামে লোভকে সংযম ও বৈধতার বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ রাখার শিক্ষা অবিস্মরণীয়।
প্রবৃত্তি মানুষের প্রধান চালিকা শক্তি। তাকে অবশ্যই আদর্শের নিগড়ে বন্দী করতে হবে। অন্যথায় তা মানব সমাজে সেই কঠিন বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে, যা একটি ক্ষুধার্ত ও ক্রুদ্ধ শার্দুলকে পিঞ্জরমুক্ত করে দেয়া হলে অনিবার্যরূপে সংঘটিত হতে পারে। এই কারণে ইসলামে শুধু ব্যভিচারই নিষিদ্ধ নয়, ব্যভিচার ঘটাতে পারে এমন পরিবেশ সৃষ্টির আয়োজনও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার সহায়ক বা সমর্থক কোন পথই উন্মুক্ত থাকতে পারে না ইসলামের দৃষ্টিতে। তাই যৌন-উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সাহিত্যও ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীল এবং সর্বপ্রযত্নে পরিত্যাজ্য। জাহিলী যুগের আরবী কাব্য ইসলামে কোন স্থান পায়নি। তার পরিবর্তে এমন উন্নতমানের কাব্য রচিত হয়েছে যা মানুষকে উচ্ছৃঙ্খল ও চরিত্রহীন হতে দেয় না; বরং মানুষকে বানায় উন্নত ও পবিত্র চরিত্রে ভূষিত। তখনকার সাহিত্য-কাব্য ও গদ্য রচনা উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে এই লক্ষ্যে। প্রধানত গদ্য সাহিত্যের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষকে ইসলামী আদর্শের আহ্বানের সঙ্গে সুপরিচিত ও একাত্ম করার কাজে। অনেক বড় মাপের কবিও তাঁদের কাব্য প্রতিভাকে এই কাজে ব্যবহার করেছেন। [এই প্রসঙ্গে মহাকবি রুমী, জামী, সা’দী ও ইকবালের অসামান্য খেদমতে কথা স্মরণ করা যেতে পারে।– সম্পাদক] কেননা ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনই একজন তওহীদ-বিশ্বাসীর কাজ নয়, দুনিয়ার অন্যান্য মানুষের নিকট তার দাওয়াত পৌঁছানোও তার অন্যতম প্রধান কর্তব্য। ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ’ এ সাহিত্যের অন্তর্নিহিত ভাবধারা। তাই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং শ্লীল-অশ্লীলের মানদণ্ড কুরআন কর্তৃক চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত।
মানুষ ও মানুষের মধ্যে বংশ-ধারা, গাত্র-বর্ণ, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদির ভিত্তিতে পার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টি মানবতার চরমতম অপমান। ইসলাম তা বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, দুনিয়ার সব মানুষ একই পিতা ও মাতার সন্তান। সকল মানুষের দেহে এক ও অভিন্ন শোণিতধারা প্রবাহমান। সুতরাং মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে যদি কোথাও কোনরূপ পার্থক্য করা হয় তবে তা নিঃসন্দেহে মানবতার শত্রুদের সৃষ্টি-মহান স্রষ্টার নয়। কেউই অন্য কারোর তুলনায় অভিজাত, শ্রেষ্ঠ বা উচ্চ মর্যাদা লাভের কিম্বা অন্যদের থেকে ভিন্নতর হওয়ার অধিকারী নয়। এ ধরণের চিন্তা, বিশ্বাস বা মতাদর্শ মৌলিকভাবেই মানবতা-বিরোধী। তাই যে সাহিত্য মানুষের মধ্যে বিভেদ ও বিভক্তির প্রেরণা যোগায়, সে সাহিত্য মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রশ্ন ওঠতে পারে, তবে কি কোনরূপ পার্থক্যই করা যাবে না মানুষে মানুষে? করা যাবে, তবে কুরআনের দৃষ্টিতে সে পার্থক্য হবে শুধু নৈতিকতার। আল্লাহ্মুখিতার মাত্রা ও মানগত অবস্থার ভিত্তিতে পার্থক্য করা যেতে পারে, করা হবেও। এ পার্থক্য কোন মানুষের নিকটই চিরস্থায়ী বা অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর নয়। আজ যে মন্দ, কাল সে সবার তুলনায় ভালো হতে পারে। আজ যে অসৎ, কাল সে হতে পারে সততায় শীর্ষস্থানীয়। আবার এর বিপরীতটাও সম্ভবপর। এসবই মানুষের আয়ত্তাধীন-ইচ্ছাধীন। এ পার্থক্যকরণ ব্যক্তির উন্নতি বিধানের সহায়ক; উন্নত মানের সমাজ গঠনের জন্য এটি অপরিহার্যও বটে।
যে সমাজ-সমষ্টি ও তার ব্যক্তিগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবে, সে সমাজ সার্বিক কল্যাণে ধন্য হবে-ইহকালেও, পরকালেও। কিন্তু কোন জাতি যদি দুষ্কৃতি, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতায় নিমগ্ন হয়, বিশ্বস্রষ্টার আদেশ লংঘনে মেতে উঠে, তবে বৈধ-অবৈধ বা ন্যায়-অন্যায়ের সব বন্ধন ছিন্ন করে-অতিক্রম করে যায় নীতি-নৈতিকতার সব সীমা, তখন সে জাতি দুনিয়ার বুকে টিকতে পারে না, তার পতন ও ধ্বংস অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে। কেননা এই বিশ্বলোকে একটি নিরেট ভারসাম্যের ওপর স্থিত। সে ভারসাম্য বিনষ্ট হলে বিপর্যয় অত্যন্ত স্বাভাবিক। একটি জাতি যতই উন্নতির উচ্চাসনে, ক্ষমতার শীর্ষে বা নেতৃত্বের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হোক না কেন, তার ক্ষেত্রেও এ শাশ্বত নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে না। তাই ইসলামের আদর্শ ব্যক্তি গঠনের সাথে সাথে উন্নত মানের চরিত্র ও ন্যায়-নীতির ধারক সমাজ গঠনের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। কুরআন মজীদের এই পর্যায়ের কোন কথাই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলা হয়নি, বলা হয়েছে সমাজ-সমষ্টিকে সম্বোধন করে-বহু বচনে। তাই সাহিত্যকে অবশ্যই এই কাজে পুরোপুরি নিয়োজিত করতে এবং রাখতে হবে।
আদর্শহীন জনগণকে আদর্শবাদী বানানো, অজ্ঞ-মূর্খ লোকদেরকে প্রয়োজনীয় নির্ভুল জ্ঞান পরিবেশন এবং সাহস ও হিম্মতহীন মানুষকে সাহসী ও নির্ভীক করে গড়ে তোলা সাহিত্যেরই কাজ। সাহিত্যকে এই কাজে ব্যবহার করা কবি-সাহিত্যিকদের মানবিক দায়িত্ব। আদর্শহীন ও বিশৃংখল চিন্তার কুহেলিকা সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও তাদেরকে নিরুদ্দেশের যাত্রী বানানোর কোন অধিকার কবি বা সাহিত্যিকদের থাকতে পারে না। কবি-সাহিত্যিকরা জাতির মেধা ও মননের প্রতিনিধি। জাতির সামগ্রিক কল্যাণের প্রতি তাঁরা অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে, এটাই একান্তভাবে কাম্য। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে এই ভূখণ্ডের মুসলিমগণ ছিল প্রায় সর্বদিক দিয়েই পশ্চাদপদ এবং জাতিত্ববোধ ও আত্মচেতনাহীন। এই সময়ের কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম কবি ও সাহিত্যিকের সৃষ্ট কাব্য, গান ও সাহিত্যই যে মুসলিম জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং তার ফলে উত্তরকালে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হযেছে, তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? বর্তমানে যখন বিদেশী ও বিজাতীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী নানা ভ্রান্ত মতবাদ, জীবন-দর্শন বা জীবনাচরণ আমাদের বংশধরদেরকে ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত ও কলুষিত করে চলছে, তখন এখনকার কবি-সাহিত্যিকদের কর্তব্য যে তাদেরকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করা এবং নিভুল চিন্তা-দর্শন, মতবাদ ও আচার-আচরণে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সাহিত্য সৃষ্টি করা, তা নির্দ্বিধায় বলতে চাই। সর্বপ্রকার নীচতা-হীনতা, ক্ষুদ্রতা, কাপুরুষতা ও সাহসহীনতা থেকে এ জাতিকে রক্ষা করতে পারে আদর্শবাদী কাব্য ও সাহিত্য, এতে কোন সন্দেহ নেই। জীবনীশক্তি রহিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত এ জনতার দেহে জীবনবাদের বলিষ্ঠ ভাবধারা সৃষ্টি করা হলেই এর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব। অন্যথায় ইতিহাসের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া জাতিসমূহের পরিণতি আমাদেরও নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে, তা রোধ করার শক্তি কারোরই নেই। প্রবল শক্তি-সামর্থ্য ও বলিষ্ঠ মন-মানসিকতা এক-একটি জাতির প্রাণশক্তি বা আত্মা স্বরূপ এবং তা মৃতপ্রায় এ জাতির দেহে নতুন করে ফুঁকতে হবে আমাদের লেখক, কবি, সাহিত্যিকদেরই। আজ যে জুলুম, পীড়ন, শোষণ, অপচয়, দুর্নীতি, লুটপাট, অশ্লীলতা ও ব্যাভিচারের সয়লাবে গোটা জাতি ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, কবি-সাহিত্যিকদেরই কতব্য হচ্ছে তার মুখে বাঁধ নির্মাণ, পানি সেঁচা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কুরআন তারই নির্দেশ দিয়েছে এ ভাষায়ঃ ‘তোমরা শক্তি-সামর্থ্য সংগ্রহ করো, যুদ্ধযান প্রস্তুত করে রাখো, যেন তোমরা আল্লাহর ও তোমাদের এবং অন্যান্য অজানা বহু শত্রুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পার।’
বর্তমান যুগ চিন্তা, দর্শন ও মতবাদের যুগ। তওহীদ-বিশ্বাসী কবি-সাহিত্যিকদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে এবং এ যুগের চলমান সংগ্রামে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করার জন্যে তাদেরকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। ভুল চিন্তা ও দর্শনকে খণ্ডন করতে হবে, ভ্রান্ত মতাদর্শের সৃষ্ট বিভ্রান্তির মুকাবিলা করতে হবে নির্ভুল চিন্তা-বিশ্বাস ও সত্য-ভিত্তিক মতাদর্শ দ্বারা। এই কাজ মূলত ও প্রধানত সাহিত্যের । এর বিপরীত কাজে সাহিত্যকে ব্যবহার করা হলে তা হবে আত্ম-বিধ্বংসী ব্যাপার। বিশেষ করে তওহীদ-বিশ্বাসী সাহিত্যিকদের আজ সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব পালনের জন্যেই এগিয়ে আসতে হবে। একমাত্র নিরেট ইসলামী আদর্শবাদী ও ইসলামী বিপ্লবী ভাবধারা সস্পন্ন সাহিত্যের পক্ষেই আজকে এই কঠিন দায়িত্ব পালন করা সম্ভব। কেননা, ইসলাম সম্পর্কে একথা চূড়ান্ত যে, তা সমাগ্রিক জীবনের জন্যে এক পূর্ণাঙ্গ বিপ্লবী আদর্শ, এক বিশ্বজনীন পুনর্গঠন প্রচেষ্টা, এক সর্বাত্মক সংগ্রামের নাম। তা একটি চিরন্তন ও শাশ্বত জীবন বিধান-একটি আপোষহীন সংগ্রাম। আর প্রতিটি বিপ্লবী আদর্শ সর্বাত্মক সংগ্রাম ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানই তার পয়গাম সর্বস্তরের মানুষের নিকট পৌঁছাবার জন্যে কাব্য ও সাহিত্যকে ব্যবহার করে, কাব্য ও সাহিত্যকে স্বীয় ভাবধারায় সঞ্জীবিত ও পুনর্গঠিত করে-দেয় তাকে নতুনতর ভাষা ও পরিভাষা। তাই একজন সচেতন তওহীদবাদী লেখকের পক্ষে আকীদা ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার পর কাব্য ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী চিন্তা-বিশ্বাস, মতবাদ ও ভাবধারা গ্রহণ ও অবলম্বন কোনক্রমেই চিন্তাযোগ্য হতে পারে না। ইসলামী কাব্য ও সাহিত্য তো তা-ই, যাতে মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্যে ইসলাম-নির্ধারিত মূলনীতিসমূহের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে উন্নতমানের ভঙ্গিতে ও ভাষায়, যার মাধ্যমে কুরআন-কাংক্ষিত মানুষের চরিত্র ও বিশেষত্বের নিদর্শনাদিকে উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত করে তোলা হয়েছে, ইসলামের জীবনবাদী মূল্যমানসমূহ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং নৈতিকতার অনৈসলামী মূল্যমানসমূহ পরিত্যাগ করার জন্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বস্তুত ‘শিল্প শিল্পের জন্যে’ এ ধরণার পরিবর্তে ‘শিল্প জীবনের জন্যে’ এ তত্ত্ব এখন সাধারণভাবে গৃহীত হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে ‘শিল্পসহ জীবনের সবকিছুই চূড়ান্তভাবে আল্লাহর জন্যে’ এই তত্ত্বই গ্রহণযোগ্য হতে পারে বিশ্ব-মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্যে এবং তারই আহ্বান জানাতে চেষ্টা করা হয়েছৈ এই স্বল্পপরিসর আলোচনায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/593/83
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।