hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৯৯
সংস্কৃতিক পরিবেশ
মানবতা-বিশেষজ্ঞরা সংস্কৃতির সাধারণ মূলনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। যে কর্মপদ্ধতি সব সংস্কৃতিতেই সমানভাবে বিরাজমান এবং সব সংস্কৃতির জন্যেই অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য, তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ সব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে ভাষা; এটি স্বতঃই সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ আর দ্বিতীয় হচ্ছে পারিবারিক সংগঠনের কোন না কোন রূপ। বস্তুত কোন সংস্কৃতিই তাকে জানবার ও তার আত্মপ্রকাশের উপায় ও মাধ্যম ছাড়া বাঁচতে পারে না। অনুরূপভাবে বংশ সংরক্ষণের কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে সংস্কৃতিই স্বীয় অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে পারেনা। এর চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ সত্য এই যে, সংস্কৃতি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সাধারণ মূলনীতির মর্যাদার অধিকারী হয়ে থকে। মানুষ কোথাও একত্রে বসবাস করবে অথচ তার কোন সংস্কৃতিই থাকবেনা, এটা অসম্ভব; অন্তত এরূপ এক মানব-সমষ্টির অস্তিত্ব ধারণাই করা যায় না। এমন কি দুনিয়ার ও লোক-সমাজের সাথে সর্বপ্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে যে ব্যক্তি নিবিড় অরণ্যের এক নিভৃত কোণে বসে আছে, যে মনে করে নিয়েছে যে, সে দুনিয়ার সব নিয়ম-নীতিকেই পরিহার করে চলেছে, মূলত সে-ও অবচেতনভাবে অন্য লোকদের কাছ থেকে নেয়া কিছু-না-কিছু নিয়ম-নীতি অবশ্যই পালন করে চলছে-সে তা স্বীকার করুক আর না-ই করুক। তার চিন্তা-বিশ্বাস, তার কাজ-কর্ম সারা জীবন ধরে তার সঙ্গে লেগেই থাকে; কিন্তু তা কোথায় যে রয়েছে এবং কবে থেকে, তা সে বুঝতে এবং জানতেই পারে না।

সংস্কৃতির এ সার্বিক বৈশিষ্ট্যকে মানবীয় বিকাশের ফসল বলা যেতে পারে অনায়াসেই। মানুষ সংস্কৃতির সৃষ্টি করতে পারছে শুধু এজন্যে যে, সে নিজের মধ্যে এমন কিছু যোগ্যতা ও প্রতিভার লালন ও বিকাশ সাধনের সাফল্য অর্জন করেছে, যার ফলে সংস্কৃতির সৃষ্টি তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সংস্কৃতির উদ্ভাবন করে মানুষ যেন নিজেরই পরিবেষ্টনীর এক নব-দিগন্তের সৃষ্টি করে নিয়েছে। এর ফলে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া খুবই সহজ হয়েছে তার পক্ষে। আর এ সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে সেদিন থেকেই, যেদিন এ দুনিয়ার বুকে মানব জীবনের প্রথম সূর্যোদয় ঘটেছিল সেই দূর অতীতকালে।

এ জমিনের বুকে সেই প্রথম যেদিন মানুষের আবির্ভাব হয়েছিলো, সেদিন থেকে মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধির যথেষ্ট বিবর্তন ঘটেছে এবং সেই সঙ্গে মানুষের এ সংস্কৃতির বাহ্য রূপও বিবর্তিত হয়েছে অনেক। মানব জীবনের সেই প্রথম পর্যায়টি ছিল সর্বতোভাবে স্বভাব-ভিত্তিক – স্বভাব-নিয়মে চলত সে জীবনের দিনগুলো। খাদ্য গ্রহণ এবং বসবাস করার ধরণ-ধারণ ও নিয়ম-পদ্ধতি ছিল অতীব স্বাভাবিক ও স্বভাব-নিয়মসম্মত। কোন কৃত্রিমতার অবকাশ ছিলনা সে জীবনে। সেকালে খাদ্য আহরণের ক্ষেত্র ছিল এই বিশাল বিশ্ব-প্রকৃতি, জীবনযাত্রা ছিল প্রকৃতি-কেন্দ্রিক, সহজ ও স্বচ্ছন্দ। মানুষ ক্রমশ এখানে তার অন্তর্নিহিত কর্মক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রকৃতিকে নিজের জীবন-যাত্রার অনুকূল করে তুলতে শুরু করে। প্রকৃতির বুকে মানুষের শক্তি-প্রয়োগের যে অভিযান সেদিন শুরু হয়েছিল, ক্রমবিকাশের নানা স্তর অতিক্রম করে, তা আজো সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতাকে চূর্ণ করে, দুমড়ে দিয়ে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের ব্যবহারে লাগাবার জন্যে মানুষ তৈরী করে নিয়েছিল নানা হাতিয়ার। দিন যতোই অগ্রসর হয়েছে মানুষ এ প্রকৃতির বুকে পেয়েছে নানা অপূর্ব সম্পদ ও মহামূল্য দ্রব্য-সম্ভারের সন্ধান এবং তাকে ব্যবহার করার জন্যে মানুষ তৈরী করেছে তার উপযোগী হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি। এতে করে মানুষের চিন্তা-শক্তি একদিকে যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি হয়েছে তাতে সূক্ষ্ণতা, গভীরতা ও বিশালতার উদ্ভব। তাই আজ একদিকে মানুষের বুদ্ধি-প্রতিভার অপূর্ব বিকাশ সাধিত হয়েছে, অপরদিকে মানুষ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে বহু বিচিত্র ধরণের জটিল ও জটিলতর যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র ও হাতিয়ার। আজ মানুষ সক্ষম হয়েছে জটিলতার ও সূক্ষ্ণতর কর্ম সম্পাদনে। মানবীয় সংস্কৃতির বর্তমান বিকশিত রূপ মানুষের বুদ্ধি এবং কর্মদক্ষতা উভয়েরই পরিণতি। কিন্তু এ বিকশিত রূপ যতোই বিভিন্ন ও বিচিত্র হোক না কেন, মানব প্রকৃতির আসল রূপ আজো ঠিক তা-ই রয়ে গেছে, যা ছিল তার বৈষয়িক জীবনের প্রথম সূচনাকালে। পরিবর্তন ও বিবর্তন হয়েছে অনেক; কিন্তু তা সবই বাহ্যিক-পোশাকী পর্যায়ের। বিবর্তন ও পরিবর্তনের এ আঘাত মানব-প্রকৃতির মূল ভাবধারায় পারেনি কোন পরিবর্তন সূচিত করতে। এ এমনই এক সত্য, যা মানব-প্রকৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তিই অস্বীকার করতে পারেনা।

মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক কি? মানুষ কি প্রকৃতির দাস, না মানুষের অধীন এই প্রকৃতি? প্রকৃতি কি মানুষকে নিজের মতো গড়ে তোলে, না মানুষ নিজের মতো গড়ে নেয় প্রকৃতিকে? এ এক জটিল এবং অত্যন্ত মৌলিক প্রশ্ন। প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে যত গভীর ও সূক্ষ্ণ চিন্তাই করা যাবে, ততোই এ সত্য প্রতিভাত হয়ে উঠবে যে, কথাটি কোন দিক দিয়েই পুরোমাত্রায় সত্য নয়; বরং সর্বদিক দিয়েই তা আধা-সত্য। মানুষ প্রকৃতির দাস নয়, একথা ঠিক; কিন্তু প্রকৃতি ছাড়া মানুষের জীবন ধারণাতীত। প্রকৃতি মানুষকে নিজের মত গড়ে; কিন্তু সে গড়ন বাহ্যিক-দৈহিক মাত্র। মানসিকতার কোন নব রূপায়ন বা তাকে নতুনভাবে ঢেলে তৈরী করা প্রকৃতির সাধ্যের বাইরে; বরং দেখা যায়, মানুষ প্রকৃতির ওপর নিজের সূক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তি, প্রতিভা ও অপ্রতিহত কর্মক্ষমতার সুস্পষ্ট ছাপ আঁকতে পারে। মানুষ প্রকৃতির ওপর নিজের প্রভুত্ব স্থাপন করতেই সতত সচেষ্ট। সে নিজের ইচ্ছা মতো তার পরিবেশকে গড়ে তুলতে চায়। সেজন্যে সে নিজের অভিপ্রায় অনুসারে প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ করে, প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে এবং প্রকৃতির কাঁচা মালকে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ নতুন এক জিনিস তৈরী করে নেয়; কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যায়, মানুষ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে কোনরূপ পরিবর্তন সূচিত করতে সক্ষম হয়নি; বরং মানুষের বুদ্ধি-প্রতিভা, চিন্তা-গবেষণা ও কর্মশক্তির যা কিছু প্রয়োগ, তা এই প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই কার্যকর হয়ে থাকে, তার বিপরীত কিছু করা সম্ভব হয়না মানুষের পক্ষে।

মানুষের সাংস্কৃতিক ভাবধারায় এরই সুস্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায়। মানুষ এখানে এক নির্জীব পদার্থের মত পড়ে থাকতে প্রস্তুত নয়। সে চায় নিজের ব্যক্তিত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখে যেতে স্বীয় পরিবেশ ও প্রকৃতির বুকে। এজন্যে সে গভীর চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও পরিকল্পনা শক্তি এবং কর্মের ক্ষমতা ও সামর্থ্য এ দুটিকেই পুরোমাত্রায় প্রয়োগ করে। আর মনের সুষমা মিশিয়ে সে এখানে যা কিছু করে, যা কিছু বলে, যেভাবে জীবন যাপন করে, যেভাবে লোকজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যেভাবে পরিবার, সমাজ, অর্থ-সংস্থা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তার সব কিছুতেই তার নিজস্ব চিন্তা-বিশ্বাস, ধারণা-অনুমান ও কর্মক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের সুস্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এভাবে মনের ও মানসিকতার যে প্রতিফলন ঘটে সমগ্র পরিবেশের ওপর আমাদের ভাষায় তাকেই আমরা বলি সংস্কৃতি। এ হচ্ছে মানসিক ভাবধারা ও মানসিকতারই বাহ্য প্রকাশ। তাই যা ব্যক্তির মানসিকতা, যা তার মানসিক ভাবধারা, তা-ই সংস্কৃতির মূল উৎস এবং একই মানসিকতাসম্পন্ন বহু মানুষের বাস্তব জীবনের এ মৌলিক উৎসের যে প্রতিফলন ঘটে, তা-ই সে সমাজের সংস্কৃতি।

ব্যক্তি জীবন সমাজ-নিরপেক্ষ নয়, হতে পারেনা। ব্যক্তি-মানসিকতা সংস্কৃতির যে মৌলিক উৎস, তারও সামাজিক ও সামষ্টিক প্রতিফল এবং প্রতিষ্ঠা একান্তই স্বাভাবিক। এর ব্যত্যয় হতে পারেনা কখনো। তাই ব্যক্তি-সংস্কৃতি শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত হয়ে ব্যক্তির সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে পারেনা। তার বিকাশ, প্রকাশ, সম্প্রসারণ ও পরিব্যপ্তি অবশ্যম্ভাবী। এটাই হচ্ছে সংস্কৃতির পরিবেশ।

সংস্কৃতির নিজস্ব ভাষা প্রয়োজন। এমন কোন সংস্কৃতির ধারণা করা যায়না, যার নিজস্ব কোন ভাষা নেই-নেই নিজস্ব কোন পরিভাষা। সংস্কৃতি যতই জটিল সূক্ষ্ণ হোক এবং তার প্রকাশ যতই কঠিন হোক না কেন, মানসিক ভাবধারা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তাও হয় ততই তীব্র। মানব মনের চিন্তা-ভাবনা-কল্পনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতঃই প্রকাশের মুখাপেক্ষী-প্রকাশপ্রবণ। এর প্রাব্যল্য যত তীব্র হবে, মানুষের মগজও হবে তত বেশী কর্মক্ষম ও সৃজনশীল। মন ও মগজের এ বিকাশশীলতার চাপে মানুষের সংস্কৃতিও হয়ে ওঠে ততই বিকাশমান ও গঠনোন্মুখ। এভাবে সংস্কৃতির যতই অগ্রগতি ঘটে, জন-মানস এবং মানসিকতাও ততই উৎকর্ষ লাভ করে আর মানুষও তার সাথে সামঞ্জস্য স্থাপনে ততই সক্ষম হয়ে ওঠে। এর ফলে মানব-বংশের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানব-সংস্কৃতিরও প্রকাশ ঘটে নানাভাবে, নানা রূপে এবং নানা উপায়ে। এজন্যে বলতে হবে, মানুষ ও সংস্কৃতি পরস্পর গভীরভাবে সম্পৃক্ত-অবিচ্ছিন্ন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন