hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

শিক্ষার দর্শন ও লক্ষ্য
এ দুনিয়ায় সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্যে মানুষকে নানবিধ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। সে কাজগুলোকে যথাযথরূপে আঞ্জাম দেয়ার জন্যে সঠিক কর্মনীতি, নির্ভুল কর্মপন্থা, প্রক্রিয়া-প্রণালী ও ধরণ-ধারণ সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগতি লাভ করা মানুষের জন্যে একান্তই অপরিহার্য। এ সব বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিফহাল না হয়ে কোন কাজ হাতে নেয়ার পরিণাম যেমন সময় ও সামর্থের অপচয়, তেমনি কাজেরও ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা। মূলত জ্ঞানই মানুষকে এ পর্যায়ে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে সক্ষম। জ্ঞানের আলোকেই মানুষ সমর্থ হতে পারে জীবন সাধনার সব ক’টি স্তর পূর্ণ সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে। পক্ষান্তরে জ্ঞান অনায়ত্ত থাকলে মানুষ নিঃসীম অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে এবং নিরুদ্দেশের সন্ধানে হাতড়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। তাই জ্ঞানই মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে মানুষের জীবন-পথকে আলোকিত করে তোলে। তখন সেই আলোকোজ্জ্বল পথে মনযিলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তি ও জাতির পক্ষেই সহজ হয়ে থাকে। বস্তুত এ জ্ঞানের অবর্তমানতাই মানবতার ললাটে লাঞ্ছনার কলঙ্ক টিকা এঁকে দেয় তার কাঁধে, স্থবিরতা, অকর্মন্যতা, অমানবিকতা ও পাশবিকতার লজ্জাকর অপবাদ চেপে বসে এবং তার উন্নতি ও অগ্রগতির পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতার অনিবার্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বস্তুত দুনিয়ায় সুন্দর ও সার্থক জীবন যাপনের জন্যে অন্তত দুটি বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন একান্তই অপরিহার্য। একটি হলঃ মানুষকে জানতে হবে তার জীবনের লক্ষ্য কি- কর্তব্য ও দায়িত্ব কি? ….. কোথায় তাকে যেতে হবে এবং সেজন্যে কি কি কাজ কিভাবে ও কি পন্থায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় হলঃ মানুষকে তার অবস্থান ও মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব এবং আত্মিক বৈষয়িক প্রয়োজন সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও নিঃসন্দেহ অবগতি অর্জন করতে হবে। মানুষকে তার যাবতীয় উপায়-উপকরণ যাচাই করে মনযিলের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। দুর্গম ও বন্ধুর জীবন-পথে পূর্ণ সাহসিকতার সাথে দ্রুত বেগে অগ্রসর হতে হবে। নিজের যাবতীয় দুর্বলতা ও অক্ষমতা এবং দোষ-ত্রুটি ও বিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতনতা লাভ করে ক্রমশ তা দূর করার জন্যে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আর এসব দিক দিয়ে সঠিক ফল লাভের জন্যে নির্ভুল জ্ঞান লাভ একান্তই অপরিহার্য। বস্তুত মানুষের চিত্তবৃত্তি ও মনোভাব যতই নির্দোষ ও নির্মল হোক না কেন- কর্মের প্রেরণা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা যতই প্রবল হোকনা কেন, নির্ভুল জ্ঞানের পথ-নির্দেশ না পেলে তার সব কিছুরই ব্যর্থতা অবধারিত।

শিক্ষা সম্পর্কে নানারূপ চিন্তা-দর্শন তথা মতাদর্শ উপস্থাপিত হয়েছে শিক্ষার অঙ্গনে। এ পর্যায়ে মৌলিক প্রশ্ন হলঃ শিক্ষা হবে কোন্ মতাদর্শ-ভিত্তিক? শিক্ষার দর্শন কি হবে?

শিক্ষা বিজ্ঞানী Sir Percy Nun তাঁর Education, its data and first principles নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ ‘‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হলঃ মানুষের স্ব-ব্যক্তিত্বের স্বাধীন লালন ও বিকাশসাধন। শিক্ষা কোন লক্ষ্যের জন্যে হওয়া উচিত নয়। কেননা যত ব্যক্তি, তত লক্ষ্য।’’

অপর একশ্রেণীর চিন্তাবিদের মত হল, শিক্ষা বিশেষ লক্ষ্যকে সামনে রেখে হতে হবে। কেননা প্রতিটি সমাজেই তার জাতীয় ও সামগ্রিক উদ্দেশ্যের উৎকর্ষ সাধনের উপযোগী ব্যক্তি গঠনের জন্যে সচেষ্ট হয়ে থাকে খুব স্বাভাবিকভাবে। সেজন্যে জাতির সামনে একটা সুস্পষ্ট জাতীয় ও সামগ্রিক লক্ষ্য উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত থাকা আবশ্যক। আধুনিক কালের গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক জাতিগুলোর সামনেও সুনির্দিষ্ট জাতীয় লক্ষ্য রয়েছে। এজন্যে সেসব সমাজ নিজ নিজ লক্ষ্যকে সার্থক করে তোলার উপযোগী ব্যক্তি গঠনের জন্যে সমগ্র শক্তি নিয়োজিত করেছে। এসব সমাজের যুবকদেরকে কোন্ বিশেষ ভঙ্গিতে ও পদ্ধতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে, তা তাদের পাঠ্যতালিকা দেখলেই বুঝতে পারা যায়। এই সব ক্ষেত্রেই শিক্ষাকে জাতির রাজনৈতিক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে তোলা হয়েছে। বার্টাণ্ড রাসেল তাঁর ‘সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষা’ গ্রন্থে ‘শিক্ষার নেতিবাচক দর্শন’ পর্যায়ে লিখেছেনঃ

বর্তমান যুগে শিক্ষার তিনটি পৃথক দর্শন বা মতবাদ রয়েছে। এ তিনটি মতাদর্শের সমর্থকও রয়েছে সমাজে। এদের প্রথম মতাদর্শীদের ধারণা হল, উন্নতির সুযোগ-সুবিধা লাভ ও সে পথের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করাই শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। দ্বিতীয় মতাদর্শীরা বলেন, সমাজের ব্যক্তিদেরকে সংস্কৃতিবান করে তাদের সমগ্র যোগ্যতা-প্রতিভাকে চূড়ান্ত মানে উন্নীত করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর তৃতীয় মতাদর্শীদের বক্তব্য হল, শিক্ষা পর্যায়ে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক চিন্তাকোণ পরিহার করে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিন্তা-বিবেচনা করা কর্তব্য এবং সমাজের লোকদেরকে কল্যাণকর প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করা আবশ্যক।

পরে গ্রন্থকার লিখেছেন যে, এ তিনও প্রকারের দর্শন-অনুরূপ শিক্ষা এখন কোথাও দেয়া হচ্ছে না, বরং যে শিক্ষা বর্তমান দুনিয়ায় প্রচলিত, তাতে কম-বশী এ তিন প্রকারের দৃষ্টিকোণই প্রভাবশালী হয়ে রয়েছে।

অন্যদিকে যেসব লোক শিক্ষাকে সামাজিক সংগঠন ও ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করেছে, তারা ধর্মকে ‘রাজনৈতিক’ ও ‘অরাজনৈতিক’ এই দুভাগে ভাগ করে নিয়েছে- যেমন খৃস্টধর্মকে ‘অরাজনৈতিক ধর্ম’ বলে মনে করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কন্‌ফুসীয়ন্‌বাদ, ইসলাম ও সমাজতন্ত্রকে তারা মনে করেছে ‘রাজনৈতিক ধর্ম’। অনুরূপভাবে ব্যক্তি ও নাগরিকের মাঝেও পার্থক্য করা হয়েছে। কেননা ‘নাগরিক’ বললে রাজনৈতিক ব্যক্তি বুঝায় আর ‘ব্যক্তি’ বললে একান্তই ব্যক্তি চরিত্র, কার্যকলাপ ও ব্যক্তিত্বের গঠন বুঝায়। অতএব শিক্ষার লক্ষ্য যদি হয় ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, তাহলে তাকে ‘ভালো মানুষ’ রূপে গড়ে তোলা কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আর তাকে যদি ‘রাষ্ট্রের একজন ‘উত্তম নাগরিক’ রূপে তৈরী হতে হয়, তাহলে তাকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে করে সে নাগরিকত্বের অপরিহার্য গুণাবলীতে ভূষিত হতে পারবে। দার্শনিক রাসেল ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে ‘ভালো নাগরিক’ হিসেবে গড়ে তোলা পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, সমস্ত পশ্চিমা জাতি যীশুর ভক্ত; কাজেই সমাজের লোকদেরকে তেমন ভাবধারায়ই গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এ যুগ অতীত। এখন এ ধরণের মনোভাবে লোক পাওয়া গেলে বৃটেনের পুলিশ তাকে সন্দেহ করবে এবং সৈনিক হয়ে যুদ্ধে যেতে নারাজ হলে আমেরিকা তাকে নাগিরকত্ব দিতেই অস্বীকার করবে। বস্তুত উপযুক্ত নাগরিকত্ব লাভকে শিক্ষার লক্ষ্য রূপে গ্রহণ করা হলে অন্য দিক দিয়ে মানুষ তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে, কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হবে এবং মানুষের জন্যে যে সার্বিকতা ও পরিপূর্ণতা আবশ্যক, সেদিক দিয়ে সে ব্যর্থ হবে।

স্যার পার্সী নান বলেছেন, শিক্ষার তিনটি লক্ষ্য হতে পারে

১. ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন

২. পরিপূর্ণ জীবনের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ

৩. ভালো দেহে ভালো মন বিনির্মাণ

স্যার পার্সী এ তিনটি উত্তর পর্যালোচনা করে বলেছেন, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারেঃ

লোকেরা যে উদ্দেশে শিক্ষা লাভের জন্যে আসে, সেই উদ্দেশ্যের চূড়ান্ত কল্যাণকে উৎকর্ষ দান।

শিক্ষা একটি সামাজিক কর্মপদ্ধতি, যার সাহায্যে একটি সামাজিক ইউনিট স্বীয় অস্তিত্বের স্থায়িত্ব ও বিকাশমানতাকে স্থিতিশীল করতে পারে।

শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও কার্যকারণ হচ্ছে তা, যা জাতিত্ববাদ ও কর্মবাদের পরিবর্তে মূল্যমানের আদর্শিক দর্শন থেকে দানা বেঁধে ওঠে। সততা, সত্যবাদিতা, সৌন্দর্য ও সদাচারকে আধ্যাত্মিক জগতের শৃংখলা বিধানের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় শামিল করে দেয়া হয়েছে। মানুষ তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণমাত্রায় লাভ করতে পারে তখন, যদি সে এ নিরেট তত্ত্বসমূহের সন্ধান করে ও তা আয়ত্ব করে নেয়।

ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টত মনে হয়, সত্যিকারভাবে শিক্ষার কি উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, তা দুনিয়ার শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-বিশেষজ্ঞরা এখনো নির্ভুলভাবে স্থির করতে পারেন নি। উপরন্তু এ ব্যাপারে তাদের মাঝে প্রবল মতবিরোধও রয়েছে এবং এ কারণে মূল শিক্ষার ব্যাপারটিই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক যুগে শিক্ষাদর্শনের ক্ষেত্রে সাধারণত রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণই অধিক প্রভাবশালী। এ কারণে বর্তমান শিক্ষার নিজস্ব কোন তাৎপর্য নেই- নেই কোন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে শিক্ষা নিছক রাজনৈতিক মতাদর্শের বাহন মাত্র। কিন্তু ইসলামের শিক্ষাদর্শন এ থেকে ভিন্নতর এবং একেবারেই আলাদা।

ইসলামী শিক্ষাদর্শনের প্রধান বিষয় হল মানুষের ব্যক্তি-সত্তার উন্নয়ন। অতএব মানুষের মধ্যে ব্যক্তি-সচেতনতা, আত্মানুভূতি এবং দায়িত্ব ও মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলাই হবে তার জন্যে রচিত শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। ব্যক্তি তার স্ব-প্রতিভায় সমুজ্জ্বল হয়ে, স্বীয় বৈশিষ্ঠ্য ও গুণ-গরিমায় পূর্ণত্ব লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ও সমষ্টির জন্যেও এক অনন্য ‘শক্তি’ হয়ে দেখা দেবে, সামাজিক জীবনধারা ও জীবনমানকে উন্নত ও বিকশিত করে তুলবে- ব্যক্তির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মূলে এই লক্ষ্যই হবে প্রবল।

ইসলামী শিক্ষাদর্শনে শিক্ষার দুটি দিক অবিচ্ছিন্ন

১. একদিক দিয়ে তা শুধু ব্যক্তির সংশোধন ও সংগঠন।

২. কিন্তু অপর দিক দিয়ে তা-ই সামজিক সংশোধন, সামাজিক পুনর্গঠন ও সার্বিক কল্যান বিধান।

ইসলামী শিক্ষাদর্শন অনুসারে শিক্ষার চরম লক্ষ্য হল আল্লাহ প্রতি প্রেম ও ভালোবাসাকে জাগ্রত ও তেজস্বী করে তোলা। এ পর্যায়ে রাসেলের কথাটি যথার্থ। তিনি বলেছেনঃ ইসলাম শুরু থেকেই একটি ‘রাজনৈতিক ধর্মমত’। আমরা বলবোঃ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন- জীবন বিধান। জীবনের সমগ্র দিক ও বিভাগের ওপর তার প্রভাব অপরিহার্য। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন এবং তার সামাজিক ও সামগ্রিক জীবনক্ষেত্র- এ দু’য়েরই যুগপৎ সংশোধন ও পুনর্গঠনের দাবিদার হচ্ছে এই দ্বীন। এ দ্বীন মানুষের সামনে এক সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উপস্থাপন করে। উদ্দেশ্যহীন জীবন দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য-পশুতুল্য। এ কারণে জীবন-লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিপূরক নয় যে শিক্ষা, ইসলাম তার প্রবর্তনের বিরোধী শুধু নয়, তা বরদাশত করতেও প্রস্তুত নয়। কুরআন মজীদ মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের লক্ষ্য ঘোষণা করেছে এ ভাষায়ঃ

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘‘আল্লাহ জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন এ উদ্দেশ্যে যে, তারা কেবল আল্লাহরই দাসত্ব ও আনুগত্য করবে।’’ (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)

অন্য কথায়, আল্লাহর দাসত্ব করা-একান্তভাবে তাঁর দাস ও আদেশানুগামী হয়ে জীবন যাপন করাই হল ব্যক্তি-মানুষ ও সামাজিক মানুষের চরম লক্ষ্য।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে জনসমাজকে সম্বোধন করেঃ

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ

‘‘তোমরা অতি উত্তম লোকসমষ্টি। মানুষের কল্যাণের জন্যেই তোমাদের সৃষ্টি। তোমরা ন্যায়ের আদেশ দেবে ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে।’’ (সূরা আলে-ইমরানঃ ১১০)

অর্থাৎ মানবতার কল্যাণ সাধন এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধই হল ব্যক্তি-মানুষ ও সমষ্টিগত মানুষের জীবন-লক্ষ্য।

কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে ব্যক্তির রাজনৈতিক মর্যাদা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইরশাদ হয়েছেঃ

الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ

‘‘এই লোকেরা এমন যে, দুনিয়ায় তাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে আর ন্যায়ের আদেশ দেবে ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে।’’ (সূরা হ্জ্বঃ ৪১)

এ ক’টি আয়াত থেকে ইসলামী শিক্ষাদর্শনের এক উজ্জ্বল দিক আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। মানুষের ব্যক্তিগত কর্তব্য ও সামাজিক দায়িত্ব একই সাথে জানা যাচ্ছে এ আয়াত ক’টি থেকে। আর তা হল, মানুষ যেন ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উভয় দিক দিয়েই গোটা মানবতা ও বিশ্বলোকের পক্ষে কল্যাণের নিমিত্ত ও বাহন হয়ে গড়ে উঠতে পারে। আর এটাই হল ইসলামের শিক্ষাদর্শনের গোড়ার কথা। বস্তুত যে শিক্ষা বা যে বিদ্যার কোন প্রতিফলন হয় না ব্যক্তির চরিত্রে, কর্মে এবং যা মানবতার কল্যাণ সাধনের উদ্বোধক হয় না, তা ইসলামের দৃষ্টিতে ‘শিক্ষা’ নামেই অভিহিত হওয়ার যোগ্য নয়। নবী করীম (ﷺ) এ ধরণের শিক্ষা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চেয়েছেন। বলেছেনঃ ‘হে আল্লাহ! যে জ্ঞান ও বিদ্যা কোন কল্যাণ দেয় না, আমি তোমার নিকট তা থেকে পানাহ্ চাই।’’

ইসলামী শিক্ষাদর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, তা এক উন্নত জীবন-লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে শিক্ষার্থীর সামনে প্রতিভাত করে তোলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত শিক্ষার সর্ব পর্যায়ে ও সর্ব স্তরে সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে থাকে। ইসলাম এমন ব্যক্তিদের সন্ধান করে, যারা ব্যক্তিগতভাবে এ বিরাট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। ব্যক্তিগতভাবে তারা হবে উন্নত গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ, আদর্শবাদী মানুষ, জনদরদী ও সার্বিক কল্যাণকামী মানুষ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগিরক। কেননা যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জিত হয় না, তা ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়েরই জন্যে ক্ষতিকর এবং মারাত্মক। আল্লামা ইকবাল বর্তমান পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তঃসারশূণ্যতা ও অকল্যাণকারিতাকে সুস্পষ্ট করে তুলবার জন্যে বলেছেনঃ ‘‘গীর্জার কর্তাদের প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা-ব্যবস্থা দ্বীন ও মনুষত্বের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র বই আর কিছু নয়।’’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন