hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

১৪৩
বিমূর্ত শিল্প ও জাতীয় চরিত্র
বর্তমান দুনিয়ায় এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট (Abstract art) বা বিমূর্ত শিল্পের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রচলন লক্ষণীয়। বিশ্বের পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এই শিল্পের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দিক থেকে এ ব্যাপারে একটি প্রশ্ন প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হচ্ছে, এই এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট কি বাস্তবিকই আমাদের জনগণের রুচিসম্মত, আমাদের দ্বীনী আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? তা কি বাস্তবিকই এখানকার জনগণের শিল্প? অথবা তা মূলত বাইরের জিনিস, আমাদের জনগণের ওপর তা বিশেষ উদ্দেশ্যে ও পরিকল্পিতভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং একটি মারাত্মক ধরণের ষড়যন্ত্র হিসেবেই এটিকে আমাদের সমাজে প্রচলিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে?

পরন্তু, তা যদি বিদেশ ও ভিন্নতর সমাজ থেকে নিয়ে এসে আমাদের সমাজে চালু করার একটা অপচেষ্টা বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে কারা- কোন্ শ্রেণীর ও কোন্ মতাদর্শের লোকেরা তা করছে? এই বিষয়গুলো একটু খতিয়ে দেখা দরকার।

এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট অনুধাবনের জন্যে অবশ্য ওয়াসিলি কাণ্ডিনিস্কির সময়ে অধ্যয়ন আবশ্যক। কেননা এই কাণ্ডিনিস্কিই আমেরিকায় আর্টের এই নবতর আন্দোলনকে সুপরিচিতি ও সুসংগঠিত করেছেন। নিউিইয়র্কে তিনিই একটি আর্ট মিউজিয়াম স্থাপন করেছেন, যার নাম হচ্ছে ‘দি মিউজিয়াম অফ মডার্ণ আর্ট’। যারা মনস্তাত্ত্বিক রাজনীতি (Psycho-politics)-এর ইতিহাসে অভিজ্ঞ, তারা ভালো করেই জানেন যে, এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর এই আন্দোলন সর্বপ্রথম রাশিয়ায় ‘অক্টোবর বিপ্লবের’ পর শুরু হয়েছিল। যান্ত্রিক মানুষের স্রষ্টা এ, কে, গুস্তাফ এবং তার অনুসারীরা এক ধরণের এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট উদ্ভাবন করেছিলেন, যাকে বলা হয় ‘কন্স্ট্রাকটিভ সিমবলিক রিপ্রেজেন্টেশনাল আর্ট’ বা গঠনমূলক প্রতীকধর্মী প্রতিনিধিত্বশীল শিল্প। এ শিল্পকলা সম্পর্কে যাঁর স্পষ্ট ধারণা আছে, তিনি সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, আজকের এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট মূলত রাশিয়ার প্রাথমিক বিপ্লবকালীন সময়ের আর্টের ফসল হিসেবেই অস্তিত্বলাভ করেছে। এ আর্টের মূলে যে তত্ত্ব নিহিত তা হচ্ছে সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক সিস্টেমের অভিন্নতা ও সংহতি চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্যে তাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সংহতি বিরোধী ভাবধারা ও উপকরণাদি প্রবিষ্ট করিয়ে দিতে হবে। এই তথাকথিত গঠনমূলক নীতির অনুসারী আর্টের লক্ষ্যই হচ্ছে প্রাচীন ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মূল্যমান ও সাংস্কৃতিক জীবনে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করা।

রুশ বিপ্লবের প্রাথমিক কালে বলশেভিকবাদের দর্শন কয়েকটি দিক দিয়ে ব্যাপক হয়ে উঠেছিল- যেমন মেকানিক, কাব্য ও সঙ্গীত, যান্ত্রিক থিয়েটার, যান্ত্রিক প্রতিমূর্তি নির্মাণ এবং সবশেষে যান্ত্রিক মানুষ। আর্টের এই বিভিন্ন মাধ্যমের (Media) লক্ষ্য ছিল প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাসমূহে বিপর্যয় সৃষ্টি করা। কান্ডিনিস্কী ‘আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংস্থা’র সদস্য ছিলেন। এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টকে জনপ্রিয় করে তোলার দায়িত্ব দিয়ে তাকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল। কান্ডিনিস্কী নিউইয়র্ক শহরে আধুনিক শিল্পের যাদুঘর ‘মিউজিয়াম অফ মডার্ণ আর্ট’ স্থাপন করতে সাফল্য অর্জন করেন। এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর সৌভাগ্যই বলতে হবে, হিটলার এই শিল্পের শিল্পীদেরকে এই সময় জার্মানী থেকে বহিষ্কৃত করেছিলেন। এ বহিষ্কৃত শিল্পীরাই আমেরিকায় গিয়ে বসবাস গ্রহণ করলেন। ফলে আমেরিকা এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর লীলাভূমিতে পরিণত হয়ে গেল। এভাবে এ আর্টের সাহায্যে আমেরিকান জনগণের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিপর্যয় (Personality Fragmentation) সৃষ্টির বীজ বপনে সাফল্য লাভ করার পর স্বয়ং রাশিয়া এক্ষণে বাস্তববাদী শিল্পে (Realistic art) প্রত্যাবর্তন করেছে।

পূর্বেই বলেছি, এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তিত্বের ভাঙন ও বিপর্যস্তকরণ। যে সব উপায়ে এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট গড়ে ওঠে, তা হচ্ছে বিশ্লিষ্টতা ও আকৃতিসমূহের বিকৃতি (Distortion), চিন্তার বিশৃঙ্খলা, নির্বীর্যতা। আর মূলত পরাজিত আত্মা ও ব্যর্থকাম মন-মানসিকতার অনিবার্য পরিণতিই হচ্ছে এই চৈন্তিক অরাজকতা। এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর পক্ষে যেসব সাহিত্যিক লেখনী চালনা করেছেন, তারাও এই চৈন্তিক উচ্ছৃঙ্খলতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় চরমভাবে আক্রান্ত। তাঁরা তাদের রচনাবলীতে এই বিপর্যয় ও বিশ্লিষ্টতাময় শব্দাবলী বাছাই (Fragmental Fregiology) ও ব্যবহার করে পাঠকদের মনে-মগজেও অনুরূপ বিপর্যয় বিশ্লিষ্টতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।

এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর একজন পূজারী জনৈক এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টিস্ট সম্পর্কে লিখেছেনঃ যে জিনিসটির ঝুলন্ত বা সাঁতার কাটা অবস্থায় থাকা আবশ্যক, তাকে কাঁচা হাতে ও কঠোরতার সাথে অবিকল রূপ দান করা এই এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টিস্ট রীতিমত ঘৃণা করে। জিনিসগুলিকে তার আসল স্বাভাবিক রূপে উপস্থাপনকে সে অর্থহীনভাবে প্রত্যাখান করেছে। এই সত্য অনুধাবনে অক্ষম হওয়ার কারণে বেশ কিছু লোক পলায়নী আচরণ অবলম্বন করেছে। এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর তত্ত্ব সম্পর্কে অনবহিত ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় ঘৃণার। সে বড়জোর এই প্রতিক্রিয়াকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে; কিন্তু রুচিহীনতা যা বিকৃতরুচি লুকোতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থকাম হয়। নগরস্থ প্রখ্যাত ড্রয়িং-রুমসমূহের সাজ-সজ্জা-সামগ্রী পর্যায়ে এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর উল্লেখ হলেই কোন কোন লোক ঘৃণায় নাক সিঁটকাতে শুরু করে এবং তাদের বিশ্বাসঘাতক ওষ্ঠে একটি কৃত্রিম বক্র হাসি খেলে যায়। কেউ কেউ আবার প্রথম শ্রেণীর নির্বোধ লোকদের ন্যায় পূর্ণমাত্রার আস্থা সহকারে কথা বলে।

এটা এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট ভক্তদের চিন্তার বৈসাদৃশ্য ও বিশ্লিষ্টতার একটা ক্ষুদ্র নিদর্শন মাত্র।

একটা বিপর্যস্ত ব্যক্তিত্বের মধ্যে এমন সব জনসংস্থা গড়ে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক-অনেক সময় তা অপ্রাসঙ্গিকও হয়ে থাকে। কিছু লোক মানসিক পূর্ণতা ও সামাজিক পরিপক্কতা লাভ করতে পারে না, এমনটা হয়ে থাকে। তার প্রমাণ হচ্ছে, যেসব লোকের কারণে তারা ক্ষুদ্রত্বের অনুভূতি বা হীনমন্যতা রোগে (Inferiority Complex) ভোগে তাদের প্রতি বিদ্রুপবান নিক্ষেপ করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। লোকদের যখন দেখা যায়, বাইরের লোকদের সাফল্যের প্রশংসা করছে, কিন্তু নিজেদের সমাজের লোকদের স্মরণযোগ্য অবদানের মূল্যও স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত হচ্ছে, তখন মনে দুঃখানুভূতি জেগে ওঠে স্বাভাবিকভাবেই।

একটি জাতি বা জনসমষ্টিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার অনেকগুলো পন্থা থাকতে পারে। অনুরূপভাবে মানবীয় মান ও মগজকে দাসত্বের নিগঢ়ে বন্দী করার পন্থাও হতে পারে বহুবিধ। তবে মানব-মনকে পরাভূত করার আধুনিকতম পন্থা হচ্ছে, তাদের সম্মুখে এমন সব নিদর্শন পেশ করতে এবং তাদের চতুঃষ্পার্শ্বে এমন পরিবেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে, যার ফলে তারা বন্দী থেকেই নিয়ম-শৃঙ্খলা পালনের গৌরব বোধ করতে পারে। বিগত শতাব্দীতে দেশবিজয়ী জাতিগুলো তাদের বিজিত জনগোষ্ঠীর ওপর যে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও পাশবিকতা চালিয়েছে এ পন্থায় অবশ্য সে সবের আশ্রয় নেয়ার কোন প্রয়োজন দেখা দেয় না; বরং বর্তমান কালের বিজয়ীরা বিজিতদের সম্মুখে অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন ও দুর্বোধ্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ডের নিদর্শন পেশ করা ও তাতে তাদের মুগ্ধবিমোহিত করে তুলতে পারাকেই যথেষ্ট মনে করে। বস্তুত কোন একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে নৈরাশ্য ও হতাশাগ্রস্থ করে দেয়ার জন্যে অর্থহীন ও লক্ষ্যহীন ক্রিয়াকাণ্ডে মশগুল করে দেয়া একটা অত্যন্ত শানিত ও কার্যকর হাতিয়ার। অস্পষ্টতা ও লক্ষ্যহীনতাই এই কাজকে সার্থক ও সচল করে দিতে পারে। একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে মানসিক অধঃপতনের নিম্নতম স্তরে পৌঁছে দেয়ার জন্যে রাজনৈতিক মনস্তত্ব বিশারদরা যে ক’টি সাংস্কৃতিক উপায়-উপাদান প্রয়োগ করে থাকে ‘এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট’ তন্মধ্যে অন্যতম।

বঞ্চনার অনুভূতির তীব্রতা অনেক সময় ব্যক্তিত্বের বিশ্লিষ্টতায় প্রকট হয়ে ওঠে। অনুভূতির এ তীব্রতা অস্পষ্টতা, দুর্বোধ্যতা ও উদ্দেশ্যহীনতাকে খুঁজে নেয় আর এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর ভক্তদের সুস্পষ্ট বিশেষত্ব এটাই। এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট মানবীয় আচরণের এমন পন্থা ও বঞ্চনানুভূতি ও বিশ্লিষ্টতার এমন সব নিদর্শন উপস্থাপন করে, যার পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত হৃদয়াবেগ ও উচ্ছ্বাস সব সুস্থতা ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট-এর লক্ষ্য কি? শিল্পী তার মাধ্যমে কি পয়গাম তুলে ধরে দর্শকদের নিকট? প্রভাব বিস্তারকারী শিল্পী (Impressionist) নানা রঙের ওপর আলোর বিচ্ছুরণ দেখায়। প্রকাশপন্থী (Expressionist) চেষ্টা চালায় বস্তু নিচয়ে অন্তর্নিহিত সত্যকে যতটা সম্ভব ব্যক্ত করে দিতে। আর ইঙ্গিতধর্মী চিত্রাঙ্কন পদ্ধতির অনুসারী (কিউবিস্ট) বস্তুসমূহে জ্যামিতিক মৌলিক রূপরেখার সন্ধান করে-মহাজাগতিক (সিওরিলিস্ট) অবচেতনকে প্রকাশ করতে সচেষ্ট হয়। একজন সমালোচক তে বলেই ফেলেছেন যে, এ্যাবস্ট্রাক্ট রেখাসমূহ আসলে অত্যন্ত পবিত্র এবং খোদায়ী গুণাবলীকে অধিকতর পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশ করে। কেননা তা বস্তুগত খোলস, দেহের ভার ও মুখাবয়বের স্পষ্টতা ছাড়াই অস্তিত্ববান হয়েছে। আর বস্তুগুলোকে পূর্ণাঙ্গরূপে অভিব্যক্তি না করেই সে সবের অন্তর্নিহিত ও অর্ধোস্ফূট কলিসমূহের দ্বারা বিশ্বপ্রাণ পর্যন্ত পৌঁছাবার চেষ্টায় পরিণতি হচ্ছে সেই আর্ট, যাকে আমরা অদ্বৈতবাদী দৃষ্টিকোণে ধর্মীয় বলতে পারে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন