hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৩৫
ইসলামের দৃষ্টিতে আধুনিক শিক্ষা–দর্শন
বিদ্যার্জন ও শিক্ষা সংক্রান্ত এই নিরেট বস্তুবাদী ও পাশবিক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসূল তথা ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি, মুসলমান হিসেবে তা আমাদের সর্বপ্রথম জেনে নেয়া দরকার। এ পর্যায়ে কুরআন মজীদের ঘোষণাবলী লক্ষ্যণীয়। একটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ

فَأَعْرِضْ عَن مَّن تَوَلَّىٰ عَن ذِكْرِنَا وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَ ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰا

‘‘হে নবী! সেই লোকের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখ, যে আমাদের নাযিল করা জীবন বিধানের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করেছে এবং নিতান্তই বৈষয়িক জীবন ছাড়া যার লক্ষ্য আর কিছুর ওপর নিবদ্ধ নয়। এই শ্রেণীর লোকদের জ্ঞানের পরিধির চূড়ান্ত সীমা এ পর্যন্তই। আল্লাহর পথ থেকে কে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং কে তাঁর হেদায়েত গ্রহণ করেছে, এই উভয় ব্যক্তিকে তোমার খোদা-ই অধিক ভালো জানেন।’’ (সূরা নাজমঃ ২৯–৩০)

এরই পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছেঃ

إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ لَيُسَمُّونَ الْمَلَائِكَةَ تَسْمِيَةَ الْأُنثَى- وَمَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ ۖ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًاٰ

‘‘যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তারা ফেরেশতাদেরকে দেবীদের নামে অভিহিত করে। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কিছুই জানা নেই। তারা তো নিছক আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চল। কিন্তু নিছক আন্দাজ-অনুমান তো প্রকৃত সত্যের বিকল্প হতে পারে না।’’ (সূরা নাজমঃ ২৭–২৮)

প্রথমোদ্ধৃত আয়াতটির বক্তব্য হলঃ যারা আল্লাহর বিধান পরিহার করে চলে- জীবন-ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে তাকে গ্রহণ করে না, নিতান্ত বৈষয়িক ও বস্তুবাদী এই জগত ভিন্ন অন্য কিছুতে যাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ নয়, তারা শুধু এই জীবন ও এই জগত সম্পর্কেই হয়ত কিছুটা জানতে পারে। এর বাইরের জগত তাদের দৃষ্টিরও আড়ালে, তাদের জ্ঞান-সীমারও বহির্ভূত। এ ধরণের বস্তুবাদী ও আল্লাহবিমুখ লোকদের পক্ষে ইহকাল ও পরকালব্যাপী সম্যক ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর নয়। তাদের চিন্তা-বিবেচনা সর্বাত্মক ও ভারসাম্যপূর্ণ নয়- বরং একদেশদর্শী। প্রকৃত জ্ঞান তাদের আওতা বহির্ভূত। নিছক বাহ্যিক ও ভাসাভাসা জ্ঞানই তাদের একমাত্র সম্বল।

আর দ্বিতীয় আয়াতের প্রতিপাদ্য হলঃ পরকাল অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী- এ বিশ্বাস যাদের নেই, কেবলমাত্র এ জীবনটাকেই যারা চূড়ান্ত ও একমাত্র বলে মনে করে নিয়েছে, তারা প্রকৃত জ্ঞান থেকে বঞ্ছিত। প্রকৃত ব্যাপার জানবার কোন সাধ্য তাদের নেই বলে তারা ফেরেশতাদেরকে দেব-দেবী ইত্যাদি মনে করে চরম অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছে। মানুষ বস্তু ও আত্মার সমন্বয়ে গড়া একটি পরিপূর্ণ সত্তা আর এই সত্তা সম্পর্কিত জ্ঞানই সত্যিকার জ্ঞান- যথার্থ ও সম্যক জ্ঞান। একটি গোটা সত্তার শুধু এক দিক সম্পর্কে যার জ্ঞান তার সে জ্ঞান যথার্থ বা সত্যভিত্তিক নয়; তা নিতান্তই আন্দাজ-অনুমান ভিত্তিক। আর আন্দাজ-অনুমান দ্বারা কখনো প্রকৃত সত্য জানা যেতে পারে না। অথচ মানুষের জন্যে প্রকৃত সত্য জ্ঞানই অপরিহার্য প্রয়োজন। প্রকৃত সত্যকে জানবার জন্যে সর্বপ্রথম দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে দুনিয়ার এপার থেকে পরকালের ওপার পর্যন্ত এবং এই সত্য পরিপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখেই জ্ঞান আহরণ করতে হবে। এপার-ওপার দুপারেরই প্রেক্ষিতে যা কল্যাণকর তাকেই কল্যাণকর রূপে গ্রহণ এবং যা অকল্যাণকর তাকেই অকল্যাণকর মনে করে পরিহহার করে চলতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে বস্তুনিবর্ভর ও বস্তুসর্বস্ব জ্ঞান নিতান্তই বাহ্যিক জ্ঞান। বস্তুর গভীরে যে আত্মা নিহিত, তাকে না দেখে বা তাকে বাদ দিয়ে যে জ্ঞান তা নিতান্তই ভুল জ্ঞান। তাই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা বস্তু সম্পর্কিত জ্ঞান শিখালেও বস্তু ও আত্মার সমন্বিত সত্তা সম্পর্কিত কোন জ্ঞানই শেখায় না। এ জন্যে সে জ্ঞান চিরকালই ভুল থেকে যায়। কুরআনে এহেন জ্ঞানবানদের সম্পর্কেই বলা হয়েছেঃ

يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُونَ

‘‘ওরা কেবল বৈষয়িক জীবনের বাহ্যিক দিকটাই মাত্র জানে। আর পরকাল সংক্রান্ত ব্যাপার ও জ্ঞানের দিকে দিয়ে তারা একেবারেই অনবহিত-অসতর্ক।’’ (সূরা রূমঃ ৭)

এরূপ সংকীর্ণ দৃষ্টি ও বৈষয়িক জীবনকেন্দ্রিক জ্ঞানে পরিণাম কি? এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছেঃ

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ

‘‘খুব ভালভাবেই জেনে রাখ, এ দুনিয়ার জীবনটা একটা খেল-তামাসা, মন-ভুলানো উপায়, বাহ্যিক চাকচিক্য এবং তোমাদের পারস্পরিক গৌরব-অহংকার প্রকাশ আর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে পরস্পরের তুলনায় অধিক অগ্রসর হয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ (সূরা হাদীদঃ ২০)

إِنَّمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ

‘‘এই দুনিয়ার জীবনটা তো কয়েক দিনের ক্ষয়িষ্ণু সামগ্রী মাত্র। আর চিরকাল অবস্থানে জায়গা তো হল পরকাল।’’ (সূরা মুমিনঃ ৩৯)

وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

‘‘এ দুনিয়ার জীবনটা খেল-তামাসা ও অন্তঃসারশূণ্য আনন্দ-স্ফূর্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আসল ও প্রকৃত জীবন হল পরকাল। অবশ্য যদি তারা এ তত্ত্ব জানতে পারে।’’ (সূরা আনকাবুতঃ ৬৪)

প্রথম আয়াতটি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছে, এই বৈষয়িক জীবন নিতান্তই অস্থায়ী। এখানকার আনন্দ-স্ফূর্তি ও চাকচিক্য এ জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানেই তার সবটুকু নিঃশেষ হয়ে যাবে। এগুলো বাহ্যত ও উপস্থিত যতই আনন্দ এবং তৃপ্তিদায়ক হোক না কেন, এগুলোর কোন প্রকৃত ও স্থায়ী মূল্য নেই। এখানে এক-একটা জিনিসকে যত বড়ই মনে করা হোক না কেন, আসলে তা খুবই সামান্য ও নগণ্য। মানুষ নিজের দৃষ্টি সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা ও মনোবৃত্তির হীনতা-নীচতার দরুণই এখানকার এক-একটা জিনিসকে খুবই বিরাট, মূল্যবান ও আকর্ষণীয় মনে করে বসেছে। মানুষ নিতান্ত ধোঁকায় পড়েই এগুলোকে লাভ করার জন্যে পাগল হয়ে ছুটেছে এবং এগুলো পাওয়াকেই জীবনের চরম সাফল্য ও সার্থকতা মনে করছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে উদ্ধৃত আয়াতদ্বয়ের দ্যোতনা আরো সুস্পষ্ট- আরো মর্মস্পর্শী। তাতে চোখা চোখা কথায় বলে দেয়া হয়েছে, এ দুনিয়ার জীবনটা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী ও দ্রুত অবক্ষয়মান সম্পদ মাত্র। আসলে এটা কোন জীবনই নয়। এটা এখানেই ফেলে যেতে হবে ছেঁড়া জুতার মতো। আসল চিরস্থায়ী জীবন তো পরকালীন জীবন। কাজেই এ দুনিয়ার জীবনটাকে যদি কেউ চিরস্থায়ী মনে করে, তাহলে সে মৃত্তিকাকে স্বর্ণ মনে করার মতোই চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেবে। সে একজন অজ্ঞ-মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃত ও নির্ভুল জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়া তার পক্ষে আদৌ সম্ভবপর নয়।

এ দুনিয়াকে চরম ‘লক্ষ্য’ রূপে গ্রহণ করার এবং এ ক্ষণিক সুখ-শান্তি ও উন্নতি-স্থিতিকেই চরম সার্থকতা মনে করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। এটি বিশ্বলোকে মানুষের আসল অবস্থান ও মর্যাদাকে পর্বতের উচ্চ শিখর থেকে নিক্ষেপ করে পাশবতার নিম্নতম পংকে পৌঁছে দেয়ার শামিল। দৃষ্টি ও চিন্তার পরিধিকে সংকীর্ণতর করে ঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যা, সহীহ-গলদ ও ভাল-মন্দ হওয়ার সিদ্ধান্ত এই অস্থায়ী জীবনের লাভ-অলাভ, সুখ-দুঃখ ও স্বাদ-বিস্বাদের নিক্তিতে ওজন করে গ্রহণ করার পরিণতি মানবতার পক্ষে কতখানি মারাত্মক, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা করাও এ দুনিয়ায় সম্ভব নয়। অথচ আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা মানুষকে এই দৃষ্টিভঙ্গিই দিয়েছে- এই মানসিকতাকেই প্রবল করে তুলেছে। পরিণামে তা মানুষকে নিতান্ত ‘পশু’ বানিয়ে ছেড়েছে- মানুষ থাকতে দেয়নি। এটা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার এক বিরাট ‘অবদান’, তা কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন