hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

প্রচলিত শিক্ষা–পদ্ধতির সাধারণ ত্রুটি
শিক্ষা অর্থ জানা, বুঝা বা হৃদয়ঙ্গম করা। অজানাকে জানা, অবোধ্যকে বুঝা আর অশেখাকে শেখা। বস্তুত শিক্ষাই মানুষকে মানুষ করে। শিক্ষা ব্যতিরেকে মানুষ মানুষ নামের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই শিক্ষা মানুষের জন্যে অপরিহার্য মৌলিক প্রয়োজন।

এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম কথা হলঃ আমাদের জানতে হবে নিজেকে, জানতে হবে গোটা ভূমন্ডলকে এবং জানতে হবে মহাকাশকে। বুঝতে হবে বহির্বিশ্বকে, জানতে হবে সৃষ্টির রহস্যকে। সৃষ্টির অন্তরালে যদি কোন মহাসত্য লুকিয়ে থেকে থাকে, তবে তাকেও বুঝতে হবে। এভাবেই শিক্ষার পরিধি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে।

সব মানুষেরই মনের কোণে কতকগুলো মৌলিক প্রশ্ন এসে উঁকি মারে- সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনভাবে। এ সব প্রশ্নকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে। মানুষ স্বভাবতই ভাবে-আমি কে? আমার পরিচয় কি? আমি এখানে কেমন করে এলাম? মানুষ আরো চিন্তা করে- আমার কি কর্তব্য? কি-ইবা করণীয় আছে? আর এখানে থাকব কদ্দিন? চিরকালের জন্যে, না ক্ষণিকের জন্যে? তারপর এখান থেকে কোথায় যাব? সে যাওয়া কি শেষ যাওয়া-চূড়ান্তভাবে বিলীন হওয়া, না তারপরও কোন জীবন আছে- আছে সুখ বা দুঃখের প্রশ্ন?

এসব মৌলিক প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব আমাকে জানতে হবে। এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাকে বের করতে হবেই। তবেই হবে প্রকৃত ও পরিপূর্ণ শিক্ষা। এ প্রশ্নগুলোকে বাদ দিয়ে কোন শিক্ষাই আমাদের হতে পারে না সঠিক শিক্ষা- পূর্ণ শিক্ষা। এসব প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়া হয় যে শিক্ষায়, তাকে আর যা-ই হোক শিক্ষা বলা যায় না। তাকে বড় জোর কারিগরি প্রশিক্ষণ বলা যেতে পারে। তাই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা বিরাট শূণ্যতা দৃষ্ট হচ্ছে। একটা বিরাট ফাঁক দেখা যাচ্ছে শিক্ষার সর্বস্তরে, এ জন্যেই শিক্ষার নামে অশিক্ষা বা কুশিক্ষাই প্রবল হয়ে উঠছে আমাদের জীবনে।

একটা নিরুদ্দেশের পানে ছুটে চলছি আমরা। আমাদের কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। জন্ম, বৃদ্ধি, মৃত্যু এ-ই যেন শেষ। সমস্ত জীবের- বরং সমস্ত বস্তুরই জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। কিন্তু মানুষের জীবন-চক্রের কি শুধু এই পরিণতি? তবে মানুষ ও অন্য জীবে পার্থক্য কোথায়? মানুষ ও ইতর জীবের পরিণতি যদি একই হয়ে থকে, তবে এ দুয়ের এ সুস্পষ্ট পার্থক্যের ফল দাঁড়াবে কোথায়?

মানুষের বস্তুগত দিকটাকে বড় করে দেখে পাশ্চাত্যদর্শন আমাদেরকে শিক্ষা দিল- মানুষ জন্তু-জানোয়ারের একটি পরিবর্তিত স্তর বৈ আর কিছু নয়। সমগ্র জীব-জগতে বেঁচে থাকার একটা প্রতিযোগিতা চলছে। যার শক্তি আছে সে-ই টিকে থাকবে, অর্থাৎ যোগ্যতমেরই উর্দ্ধতন! সবল দুর্বলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, এটাই নাকি নিয়তি। তাই ভোগের সংসারে বেঁচে থাকা বা টিকে থাকার জন্য যত ইচ্ছা ভোগবিলাস করে যাও।

পক্ষান্তরে আরেকটি দল মানুষের বস্তুগত দিকটাকে বাদ দিয়ে আধ্যাত্মবাদের দিকে চরমভাবে ঝুঁকে পড়েছে। তারা মানুষের দেহের দাবির প্রতি চরম উপেক্ষা প্রদর্শন করছে। তারা বলে, সংসার ঝামেলার স্থান; কাজেই এখানে থেকে পালাও।

এ দুটি প্রান্তিক দলের কেউই আসল মানুষের সন্ধান পায়নি। মানুষ তো শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমষ্টির নাম নয়। আবার আত্মাই মানুষের একমাত্র পরিচয় নয়। দেহ হচ্ছে আত্মার বাহন আর আত্মা দেহের সহিস। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে দেহটি দান করেছেন এ সৃষ্টিকে উপভোগ করার জন্যে। দেহের তাগিদেই সৃষ্টিকে তন্নতন্ন করে নানা রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে মানুষ। আবার দেহের পবিত্রতার জন্য আত্মাকেও সে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখবে।

ইসলামী শিক্ষাদর্শন মানব মনের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। শুধু উত্তরের জন্যেই উত্তর দেয়া হয়নি’ সত্যকে সত্য বলে ঘোষণা করেছে আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করেছে। মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনকে অতি সতর্কতা সহকারে বিবেচনা করে সামঞ্জস্য বিধানের একটা সুষ্ঠূ সঠিক চেষ্টা করা হয়েছে।

ইসলাম বলে, এ সৃষ্টিলোক কোন আকস্মিক বস্তু নয়, বরং সুপরিকল্পিত। এর পেছনে একজন শক্তিশালী সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এটির অস্তিত্ব দান করেছেন। সৃষ্টির সেরা মানবগোষ্ঠী। মানুষের উপকারের জন্যে এ সারা বিশ্ব। সৃষ্টিরাজিকে ব্যবহার করতে হবে- কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ সৃষ্টিকে বিভিন্ন আকারে ও প্রকারে ব্যবহার করতে পারে।

মানুষ তার বস্তুগত প্রয়োজন মেটাতে কিংবা মানসিক উৎকর্ষ সাধনের নিমিত্ত এ সৃষ্টিলোক নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কিংবা কারিগরি শিল্পের উন্নতি বিধান করতে পারে।

ইসলাম বলছেঃ ইহকালই শেষ নয়, বরং অনন্ত জীবনের সূচনা মাত্র। পরকাল সত্য ও অনিবার্য। পরকালের পাথেয় ও সম্বল এ জগত থেকেই আহরণ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করে এখানে যে যত কাজ করবে সে তত বেশী লাভবান হবে পরকালে।

জীবন-দর্শন ও জীবন-লক্ষ্যকে নানাভাগে বিভক্ত করা চলবে না। একই জীবন-দর্শনের ভিত্তিতে একই জীবন-লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহকে রাজী করার জন্যে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-বিধানকে ব্যক্তি-জীবনে, সমাজ-জীবনে ও আন্তর্জাতিক জীবনে বাস্তবায়িত করে যেতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ একটি নৈতিক জীব। নৈতিকতাই তার বৈশিষ্ট্য। তাই তার জ্ঞানের বিকাশের সাথে থাকবে নীতিবন্ধন। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে তাকে অনেক বিষয়েই জ্ঞান আহরণ করতে হবে- জানতে হবে অনেক কিছু। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে কোথাও নৈতিকতাকে হারালে বা ভুলে গেলে চলবেনা।

সমাজে শৃংখলা বজায় রাখার জন্যে তাকে রাজনীতি চর্চা করতে হবে। তার বস্তুগত প্রয়োজন মেটাতে তাকে অর্থনীতির চর্চা করতে হবে। স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা করতে হবে। এ ধরণের অসংখ্য প্রয়োজনে অসংখ্য শাস্ত্র তার অধ্যয়ন ও অনুশীলন করতে হবে। কিন্তু সব কিছু আলোচনা ও চর্চা হতে হবে ঐ একই জীবন-দর্শনের ভিত্তিতে।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার প্রথম শ্রেণী হতে শেষ পর্যন্ত যা কিছু পড়ানো এবং শেখানো হয়, তার প্রায় সবটুকুই ইসলাম-বিমুখ অনুর্বর মস্তিষ্কের ফসল। তাতে ইসলামের জীবন দর্শন আদৌ প্রতিফলিত হয় না। সত্য বলতে কি, তাতে প্রতিটি ছাত্রের মন-মগজ অনৈসলামী ভাবধারায় পরিপুষ্ট হতে থাকে।

বর্ণ পরিচয় থেকে শুরু করা যাক। অ-তে অজগর, আ-তে আনারস ইত্যাদি। অজগর একটি হিংস্র বিষধর জন্তু। এতে করে সরলমতি কচি শিশুর মনে নিশ্চয়ই কোন মহৎ ভাবের উন্মেষ ঘটবেনা; বরং তার মনে হিংস্র মনোভাবের উন্মেষ ঘটবে। আনারস লোভনীয় খাদ্য-বস্তু। লোভ-লালসার পাশব বৃত্তি জাগিয়ে তোলাই হবে শিশু শিক্ষার উদ্দেশ্য। কিন্তু এখানে যদি অ-তে অযু এবং আ-তে আল্লাহ পড়ানো হত, তাহলে শিশুর মনে এক পরিবত্রতার ছাপ দেয়া সম্ভব হত। আর ইসলাম এ ধরণের পুত-পবিত্র মনোবৃত্তি সৃষ্টিরই প্রয়াস পায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে।

‘‘লেখা পড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই’’- এ শিক্ষা মানুষকে বিলাস-ব্যসনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দুধে পানি মেশানো অংকের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে ভেজাল ও ধোঁকা দেয়ার প্রবণতা শিক্ষা দেয়া হয়না নাকি! [সাধারণত ক্লাসে অংক দেয়া হয়ঃ এক গোয়ালা ১ সের দুধে আধা সের পানি মিশিয়ে বিক্রি করলে সে অতিরিক্ত কত লাভ করল? এর প্রতিই ইশারা করা হয়েছে।] সুদকষা অংকের মাধ্যমে সুদকে একটি লাভজনক হালাল বস্তু হিসেবে পেশ করা হয়না নাকি? [অংক করানো হয়ঃ শতকরা ৬ টাকা সুদ হারে লগ্নি করা হলে হাজার টাকায় কত সুদ হবে? এখানে সে দিকেরই ইংগিত] দুধে পানি মেশানো ঐ অংক এবং সুদকষা অংককে ইসলামী ছাঁচে ঢালাই করলে ঐ দুটি অংকের ভাষা ও ভাবকে এমনিভাবে প্রকাশ করা যায়, যাতে করে ঐ দুটি কাজকে দুর্নীতি হিসেবে ছেলেদের মনে জাগিয়ে দেয়া সম্ভব। যেমন ধরুন, গোয়ালা দুধের সাথে পানি মিশিয়ে যে অন্যায় করল তাতে সে ক্রেতাকে কতখানি ঠকালো? মহাজন সুদী কারবারে যে লাভবান হয় তাতে সে কিভাবে অন্যায় শোষণ করে- এমনি ধরণের ভাষা প্রয়োগ করে অংকগুলো সাজানো যেতে পারে। আর একেই বলে সাধারণ শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়।

প্রতিটি বিষয় আলোচনাকালে যদি নৈতিক দৃষ্টিকোণ না থাকে, যদি সেগুলো নৈতিকতার রসে সিঞ্চিত না হয়, তবে শুধু আলাদাভাবে দ্বীনিয়াত বা ইসলামিয়াতের লেজুড় জুড়ে দিলেই সাধারণ শিক্ষা ইসলামী শিক্ষা হয়ে যায় না; তা বরং কাকের পুচ্ছে ময়ূরের পালক জুড়ে দেয়ার মতোই হাস্যকর হয়ে দাঁড়াবে। এ ধরণের সংমিশ্রণে হিতে বিপরীত ফলই হয়ে থাকে। এর ফলে ধর্ম ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার্থী আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তার সন্ধান পায়না; বরং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাকে দেখানো হয় এ বিশ্ব-চরাচরে আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতের কোন প্রয়োজন নেই। এগুলোকে বাদ দিয়েও আমরা সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীকে এ কথাই শিখিয়ে দেয়া হয়ঃ আল্লাহ, রসূল ও আখিরাতের কোন অস্তিত্ব নেই আর থাকলেও তাদের কোন প্রভাব মানব জীবনে নেই। মানুষ স্বাধীন সত্তা নিয়ে স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের অধিকারী। আল্লাহকে যদি একান্তই মানতে হয়, তবে তাকে আকাশ-রাজ্যেই স্থান দাও, জমিনে তাঁর কোন প্রভুত্ব নেই।

ঐ একই শিক্ষার্থী যখন ইসলামের সবক নেয় তখন সে জানতে পায়, এ আকাশ-পৃথিবী ও এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর আইনে চলছে আর মানুষকেও তাই সেই আল্লাহর কানুনেই চলতে হবে।

সাতটি পিরিয়ডের ছয়টি পিরিয়ডেই সে যে বাস্তব শিক্ষা পেল তা আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতের প্রভাবমুক্ত। আর মাত্র একটি পিরিয়ডে সে শিখল খোদাকে উপাস্য ও প্রভূ হিসেবে জীবন মেনে চলতে হবে। তাই পরস্পর-বিরোধী এ দুটি দর্শনের সংঘর্ষে থিওরী পর্যায়ের নামমাত্র ইসলামী শিক্ষারই হার মানতে হয়। বর্তমানে ধর্ম শিক্ষাকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার যে গালভরা বুলি শুনতে পাওয়া যায় তা এমনিভাবেই অর্থহীন- শুধু অর্থহীনই নয়, মারাত্মক হয়ে দেখা দেয় শিক্ষার্থীর জীবনে।

দীর্ঘ ষোলটি বছর ধরে একজন শিক্ষার্থী দেখা ও শেখার মাধ্যমে বুঝে নিল যে, ব্যাংক ব্যতীত দুনিয়া চলেনা আর সুদ ব্যতীত ব্যাংকও চলে না। অতএব সুদ ব্যতীত দুনিয়া অচল। প্রচলিত অর্থনীতি এ ধরণের চিন্তারই সৃষ্টি করে। এই শিক্ষার্থীকে যখন ইসলামিয়াতে শিখান হয় যে, আল্লাহ তাআলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন, তখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। সে ভাবে, আল্লাহ এ নির্দেশ ঠিক হয়নি (নাউযুবিল্লাহ)। আর যদি ঠিকও হয়ে থাকে তবে এ যুগের জন্যে নয়। হয়তো চৌদ্দশ বছর পূর্বের যামানায় এটা কার্যকর হয়ে থাকবে। এখন এ আদেশ অচল।

আপনি দেখতে পেলেন, প্রচলিত লেজুড়-সর্বস্ব ইসলামী শিক্ষা শিক্ষার্থীর মন-মগজে কিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল। ঐ শিক্ষার্থীকে যদি ইসলামের অর্থনীতি পড়িয়ে দেয়া হতো- যদি বুঝিয়ে দেয়া হতো সুদকে বাদ দিয়েও অর্থনৈতিক লেনদেন সম্ভব আর সে লেনদেন বর্তমান পদ্ধতি হতে বহুতর উন্নত ফল দান করবে, তাহলে সে বেঈমানের ন্যায় ঐরূপ উদ্ভট কথা বলতে পারতনা কিছুতেই।

আমাদের দেশে প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষা যদিও একদিক দিয়ে কুরআন-হাদীসের জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তবুও বড়ই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, এ শিক্ষা জাতির পথ-নির্দেশ করতে সক্ষম হচ্ছেনা; জীবন পরিক্রমাকে পারছেনা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এ শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামকে অত্যন্ত পঙ্গু ও খোঁড়া হিসেবে পেশ করছে। ইসলাম যে সামগ্রিক জীবন-বিধান এবং যুগ-সমস্যার একমাত্র সমাধান- এ কথা বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষা মাধ্যমে- মাদ্রাসা হতে পাশ করে যারা বেরুচ্ছে, তারা জাতির নেতৃত্বদানে অক্ষমতা প্রদর্শন করছে। তাই আমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলামের পরিচয় পাচ্ছি না তাদের মধ্যে- না তাদের জ্ঞানে, না তাদের কর্মজীবনে।

তাই আমাদের শিক্ষা-সমস্যার একমাত্র সমাধান হল এই যে, প্রচলিত দুটি শিক্ষাব্যবস্থাকে একত্রিত করে এমন একটি শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যেখানে একটি স্বাধীন মুসলিম দেশের শিক্ষার্থীরা চলতি দুনিয়ার সর্বস্তরে নিজেদের আসন গেড়ে বসতে পারে। আমাদের জাতীয় আদর্শ যে ইসলাম, শিক্ষা সংস্কারের নামে সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ইংরেজ আমাদের দেশে কতকগুলো কেরাণী তৈরী করতে চেয়েছিল। তারা আরো চেয়েছিল- এ দেশের লোকেরা বংশ পরিচয়ে মুসলমান থাকে থাকুক; কিন্তু মন-মানসে ও চিন্তাধারায় তারা যেন অমুসলিম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এ উদ্দেশ্যে তারা যে শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করেছিল, তাতে তারা সফল হয়েছিল। 

তারা এখন নেই সত্য; কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা আজো বিরাজ করছে আমাদের মধ্যে। আমরা রাজনৈতিক গোলামী হতে মুক্ত; কিন্তু মানসিক গোলামী হতে আজও আমরা মুক্ত হতে পারিনি। আমরা আজও ইংরেজের চোখ দিয়ে জগত ও জীবনকে দেখছি। ইংরেজের মগজ দিয়ে এগুলোকে বুঝতে ও জীবনের আচরণ স্থির করতে চেষ্টা করছি। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে!

এ পর্যায়ে শেষ কথা হলঃ আমরা যারা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করতে পারছিনা, তাদের জন্যে একমাত্র উপায় হল এই যে, আমাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে তাকে কার্যকর করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আর সেই সঙ্গে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেলে আমাদের এই বাস-ভূমিতে সত্যিকারের ইসলামী শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করা মোটেই অসম্ভব হবে বলে মনে করি না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন