hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৯৪
সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্য
ব্যক্তির সার্বিক সুস্থতা ও ক্রমপ্রবৃদ্ধির জন্যে তার দেহ ও প্রাণ বা আত্মার ভারসাম্যপূর্ণ উৎকর্ষ একান্তই জরুরী। এ যেমন সত্য, তেমনি একটি জাতির উন্নতি তখনি সম্ভব, যখন তার সংস্কৃতি ও সভ্যতা পুরোপুরি সংরক্ষিত হবে। কেননা সংস্কৃতি হচ্ছে প্রাণ আর সভ্যতা হচ্ছে দেহ। 

অর্থাৎ মানব জীবন দুটি দিক সমন্বিতঃ একটি বস্তুনির্ভর, অপরটি আত্মিক বা আধ্যাত্মিক। এ দুটিরই রয়েছে বিশেষ বিশেষ চাহিদা ও দাবি-দাওয়। সে চাহিদা পরিপূরণে মানুষ প্রতিমুহূর্ত থাকে গভীরভাবে মগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত। একদিকে যদি দৈহিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন তাকে টানে এবং জীবিকার সন্ধানে সে হয় নির্লিপ্ত, তাহলে তার আত্মার দাবি পরিপূরণ ও চরিতার্থতার জন্যে তার মন ও মগজ হয় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তাই মানুষের বস্তুনিষ্ঠ বৈষয়িক প্রয়োজন পূরণের জন্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তার সহায়তা করে। আর ধর্ম-বিশ্বাস, শিল্প-কলা, সৌন্দর্যবোধ ও দর্শন নিবৃত্ত করে তার আত্মার পিপাসা। অন্যকথায়, ব্যক্তিদের সূক্ষ্ণ ও সুকোমল আবেগ-অনুভূতি এবং হৃদয় আত্মার দাবি ও প্রবণতা পূর্ণ করে যেসব উপায়-উপকরণ, তা-ই হচ্ছে সংস্কৃতি। সঙ্গীত, কবিতা, ছবি অংকন, ভাস্কর্য, সাহিত্য, ধর্মবিশ্বাস, দার্শনিক চিন্তা প্রভৃতি এক-একটা জাতির সংস্কৃতির প্রকাশ-মাধ্যম এবং দর্পণ। কোন বাহ্যিক ও বৈষয়িক উদ্দেশ্য লাভের জন্যে এসব তৎপরতা সংঘটিত হয় না। আত্মিক চাহিদা পূরণই এগুলোর আসল লক্ষ্য। এসব সৃজনধর্মী কাজেই অর্জিত হয় মন ও হৃদয়ের সুখানুভূতি-আনন্দ ও উৎফুল্লতা। একজন দার্শনিকের চিন্তা ও মতাদর্শ, কবির কাব্য ও কবিতা, সুরকার ও বাদ্যকারের সুর-ঝংকার-এসবই ব্যক্তির হৃদয়-বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। এসবের মাধ্যমেই তার মন ও আত্মা সুখ-আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করে। এসব মূল্যমান, মূল্যবোধ, হৃদয়ানুভূতি ও আবেগ-উচ্ছ্বাস থেকেই হয় সংস্কৃতির রূপায়ন। কিন্তু সভ্যতার রূপ এ থেকে ভিন্নতর। এখানে সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটা তুলনামূলক পরিচয় দেয়া যাচ্ছেঃ

১. বস্তুনিষ্ঠ জীবনের প্রয়োজন পূরণ ও সাবলীলতা বিধানে যা কিছু সাহায্যকারী তা সভ্যতা নামে অভিহিত।

কিন্তু মন-মানস ও আত্মার কামনা-বাসনা ও সূক্ষ্ণ আবেগ-অনুভূতির চরিতাথর্তার উপায়-উপকরণকেই বলা হয় সংস্কৃতি।

২. বস্তুনিষ্ঠ জীবনের রূঢ় বাস্তব ও প্রকৃত উন্নতির স্তর ও পর্যায়সমষ্টি হচ্ছে সভ্যতা। বিশেষ-নির্বিশেষ সকলের পক্ষেই তার মূল্য ও মান হৃদয়ঙ্গম করা সহজ ও সম্ভব।

কিন্তু সংস্কৃতি অদৃশ্য ধারণা ও মূল্যমান সমষ্টি; তার মূল্যায়ন অতীব দুরূহ কাজ।

৩. সভ্যতা ক্রম-বিকাশমান, প্রতি মুহূর্ত উন্নতিশীল। প্রাচীন মতাদর্শের সাথে তার দূরত্ব ক্রম-বর্ধমান। তা নিত্য-নতুন দিগন্তের সন্ধানী।

কিন্তু সংস্কৃতি প্রাচীনপন্থী। প্রাচীনতম দৃষ্টিকোণ ও মতাদর্শ থেকে নিঃসম্পর্ক হওয়া তার পক্ষে কঠিন।

৪. সভ্যতা দেশের সীমা-বন্ধনমুক্ত- বিশ্বজনীন ভাবধারাসম্পন্ন। প্রায় সব চিন্তা-বিশ্বাসের লোকদের পক্ষেই তা গ্রহণযোগ্য।

কিন্তু সংস্কৃতির ওপর পরিবেশ ও ভৌগোলিক বিশেষত্বের ব্যাপক প্রভাব প্রবর্তিত হয়। অর্থাৎ সংস্কৃতি আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে বহুলাংশে বন্দী; কেবলমাত্র সমমতের লোকদের পক্ষেই তা গ্রহণযোগ্য হয়। যেমন মুসলমান, হিন্দু, খৃস্টান ও বৌদ্ধদের সাংস্কৃতিক মেজাজ-প্রকৃতির ওপর তাদের বিশেষ ধমের্র সর্বাত্মক প্রভাব বিরাজিত। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের একই ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও সংস্কৃতির দিক দিয়ে দুনিয়ার অন্যান্য দেশের মুসলমানদের থেকে বহুলাংশে ভিন্নতর।

৫. সভ্যতা স্থিতিশীল ও দৃঢ়তাপ্রবণ। তার প্রভাব সহজে নিশ্চিহ্ন হবার নয়।

কিন্তু সংস্কৃতি প্রতিক্ষণ, প্রতিমুহূর্তই অস্থায়িত্ব ও ক্ষণভঙ্গুরতার ঝুঁকির সম্মুখীন।

৬. সভ্যতা মানুষের বাহ্যিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। বস্তুগত প্রয়োজনাবলীই তার লীলাক্ষেত্র। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার-উদ্ভাবনী ও বিভিন্ন শৈল্পিক দুর্লভ উপকরণ ও প্রতিষ্ঠানাদি (সভ্যতার মহাকীর্তি) এক দেশ ও জাতি থেকে ভিন্নদেশ ও জাতির মধ্যে চলে যেতে পারে। অনুন্নত জাতিগুলোও তা থেকে উপকৃত হতে পারে। স্বভাব-প্রকৃতিগত পার্থক্য তার পথে বাধা হতে পারেনা। প্রত্যেক ব্যক্তিই তা ব্যবহার করে কল্যাণ লাভ করতে পারে। তার কল্যাণ লাভে কোন প্রতিবন্ধকতাই নেই। বাছাই-প্রক্রিয়াও এখানে অচল।

কিন্তু সংস্কৃতি সাধারণত এক বংশ থেকে তারই অধঃস্তন বংশে উত্তরিত হয়। তা সম্যকভাবে অর্জিত হয় না। বাছাই-প্রক্রিয়া এখানে পুরোপুরি কার্যকর। কেবলমাত্র বিশেষ পরিমণ্ডলের লোকদের পক্ষেই তার কল্যাণ লাভ করা সম্ভব। দার্শনিকসুলভ চিন্তা-গবেষণা ও কবিসুলভ উচ্চমার্গতার অনুভূতি যার-তার পক্ষে আয়ত্তযোগ্য নয়।

৭. সভ্যতা অর্জন করা অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ। সেখানে তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়না। জাপান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে আপন করে নিয়েছে; কিন্তু এ কার্যক্রমের ফলে তার সাংস্কৃতিক কাঠামো খুব শীগ্‌গীর প্রভাবিত হতে পারেনি। উপমহাদেশের জনগণের ওপর ইংরেজের শাসনকার্যের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবে এখানকার সভ্যতা উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানকার সংস্কৃতি তার আসল চরিত্র বা রূপরেখা হারায়নি।

কেননা সংস্কৃতি আভ্যন্তরীণ জীবন-কেন্দ্রিক। অন্তর্নিহিত জীবনই সংস্কৃতির লীলাক্ষেত্র। এই জীবনের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের মাধ্যম হচ্ছে সংস্কৃতি। অর্থাৎ সংস্কৃতি হচ্ছে মন ও মগজ-কেন্দ্রিক- আবর্তন-বিবর্তনের স্বতঃস্ফূর্ত ও উন্মুক্ত বহিঃপ্রকাশ। এই কারণে সংস্কৃতি স্বাধীন-মুক্ত সমাজ-পরিবেশেই যথার্থ উৎকর্ষ লাভ করতে পারে।

মোটকথা, আমরা যা ভাবি, চিন্তা করি, বিশ্বাস করি, তা-ই সংস্কৃতি। হৃদয়ানুভূতি, চিত্তবৃত্তি, আবেগ-উচ্ছ্বাস ও মানসিক ঝোঁক-প্রবণতার সাথে তার নিবিঢ় সম্পর্ক। কেননা এগুলো মানুষের মধ্যে স্বভাবগত ও প্রকৃতিকগতভাবেই বতর্মান। মানব-প্রকৃতি তার সাথে নিঃসম্পর্ক হতে পারে না কখনই। সভ্যতায় রয়েছে মানুষের সামাজিক ও অনৈতিক প্রয়োজনাবলীর প্রশ্ন। মানব জীবন যদি শিল্প-কারখানা ছাড়াই অবাধে চলতে পারে, এবং তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা হতে থাকে, তাহলে তার জন্যে সামান্যতম কাতর হওয়ারও কোন প্রয়োজন বোধ হবে না কারোর।

সভ্যতা ও সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু ঢালাওভাবে এটা ঠিক নয়। তবে এ দুটির মাঝে মূল্যমানের সাদৃশ্য অনস্বীকার্য। মোটরগাড়ি সভ্যতার উৎপাদন। সংস্কৃতি তাতে সৌন্দর্য, শোভনতা ও চিত্ত-বিনোদনমলূলক কারুকাজ ও সূক্ষ্ণ উপকরণাদি বৃ্দ্ধি করেছে। সভ্যতা আকাশচুম্বী প্রাসাদ নির্মাণ করেছে; সংস্কৃতি সে প্রাসাদকে সুদৃশ্য, মহিমামণ্ডিত এবং বিস্ময়কর প্যাটার্নে সুশোভিত করে দিয়েছে। বস্তুত সভ্যতা ও সংষ্কৃতি দুটিই মানব জীবনের মৌলিক প্রয়োজন। যে জাতির জীবনে একসঙ্গে এ দুটিরই সমন্বয় ঘটেনি, তার উন্নতি অসম্ভব। সভ্যতা একটা জাতিকে বস্তুনিষ্ঠ শক্তিতে মহিমাময় করে আর সংস্কৃতি তাকে গতিবান করে নিভুর্ল পথে। মানব সভ্যতার আধুনিক পর্যায়ে এ দুটির মাঝে গভীর একাত্মতা প্রকট। তাই সভ্যতার অর্থে সংস্কৃতি বা সংস্কৃতি অর্থে সভ্যতাকে গ্রহণ করা কিছুমাত্র অশোভন নয়। সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এভাবেই পূর্ণ পরিণতি পযর্ন্ত পৌঁছে গেছে বললেও কিছুমাত্র অত্যুক্তি হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন