hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৭৪
ইসলামী শিক্ষা জাতীয় মুক্তির সোপান
পূর্বেকার আলোচনায় আমি একথা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা পেয়েছি যে, আমাদের বর্তমান জাতীয় শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় শিক্ষা নয়; এ শিক্ষা বিদেশী ও বিজাতীয়-আমাদের আদর্শিক ও রাজনৈতিক দুশমনদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা মাত্র। এই শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা উপমহাদেশের অপরাপর ধর্মাবলম্বীরা উপকৃত হয়েছে কি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা তাদের বিবেচ্য। কিন্তু একজন মুসিলম হিসেবে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে, এই শিক্ষাব্যবস্থা উপমহাদেশের মুসলমানদের শুধু মারাত্মক ক্ষতিই করেনি, তাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্য সম্পদ-তাদের ঈমান ও চরিত্রকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছে; তাদের জাতিসত্তার মূল ভিত্তিটাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। আমরা একটি আদর্শ-ভিত্তিক জাতি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে আমরা আদর্শহারা, আদর্শ-বিচ্যুত ও আদর্শ-বঞ্চিত। আমরাই ছিলাম দুনিয়ার সেরা চরিত্রবান জনগোষ্ঠী। কিন্তু ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা আমাদের চরিত্রকে সম্পূর্ণরূপে কলুষিত করেছে। চরম নৈতিক বিপর্যয় এনে দিয়েছে আমাদের জীবনের সর্বদিকে।

জাতি হিসেবে আমরা আজ এক কঠিন বিভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা চিন্তার ভারসাম্য পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা একদিকে বলছেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি একান্তই অপরিহার্য; এজন্যে প্রথমিক স্তর থেকেই কুরআন পাঠ ও তরজমা শিক্ষা দিয়ে আধ্যাত্মিক ভাবধারা সৃষ্টি করতে হবে ছাত্রদের মধ্যে। কিন্তু তাঁরাই আবার কোন সঙ্গীত আসরে গানের সুরমাধুর্যে মুগ্ঘ হয়ে ও দিক-দিশা হারিয়ে ঘোষনা করেনঃ প্রাথমিক স্তরেই সঙ্গীত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যদিকে আবার কোন নৃত্যশিল্পীর জন্মোৎসবে যোগ দিয়ে তারা অকপটে বলে ফেলেনঃ নৃত্যশিক্ষা অবশ্যই শিক্ষার অংশ রূপে বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব কথাবার্তার মাধ্যমে দুনিয়ার সামনে তাঁরা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, একটি মুসলিম দেশের মুসলমান ছেলেমেয়ের শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের কোন নীতি বা আদর্শ নেই; কর্তাব্যক্তিরা যখন যেটা ভাল লাগে, তখন সেটারই জয়গান করেন এবং সেটাকেই শিক্ষার অঙ্গরূপে শামিল করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। এ থেকে তো এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, চিন্তার দিক দিয়ে আমরা সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছি। এমনকি, এরূপ একটি দেউলিয়া জাতি যে দুনিয়ায় বেশী দিন নিজেদের অস্তিত্বটুকুও টিকিয়ে রাখতে পারেনা-প্রাকৃতিক নিয়মে বরং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই অবধারিত, তা বুঝবার মত কাণ্ডজ্ঞানও আমাদের কর্তা-ব্যক্তিদের নেই। এরকম ঘোষণাকারীরা আসলে বানরের উপযুক্ত বংশধরের ভূমিকাই পালন করছে। যে যেরকম নাচায়, সেই রকমই এরা নাচে; যে যেরকম ঘোষণা আমাদের দ্বারা দেয়াতে চায়, এরা নির্লজ্জভাবে সেই রকম ঘোষণাই মুখে উচ্চারণ করে। এই প্রেক্ষিতেই বলতে চাই, জাতীয় জীবনে নৃত্য আর সঙ্গীত নিশ্চয়ই এমন কোন প্রয়োজনীয় শিক্ষা নয়, যা না দিলে জাতি চরম দুর্দশার মধ্যে পড়ে যাবে। এযাবত তো ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এগুলোই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে জাতির দুর্দশা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া একবিন্দু লাঘব হয়নি; বরং সত্যকথা এই যে, নাচ আর গান শিখিয়েই জাতির নব্য বংশধরদের চরিত্রকে কলুষিত করা হয়েছে। তারা সাধারণ মানবীয় লজ্জা-শরমও হারিয়েছে, সমাজে নৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যারা এখনো এই বংশধরদেরকে সঙ্গীত নৃত্যকলা শিক্ষা দিতে চায়, তারা এজাতিকে চিরদিন ‘কলা’ই দেখাবে, তার একবিন্দু কল্যাণ সাধন করতে পারবেনা।

বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলমান। এদেশে কিছু সংখ্যক অমুসলিমও বাস করে বটে; কিন্তু তাই বলে সেই স্বল্প সংখ্যক অমুসলিমের দোহাই দিয়ে যারা দেশের বিপুল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘মুসলিম’ রূপে বিবেচনা করতে ও বিশেষভাবে তাদের সার্বিক কল্যাণের চিন্তা করতে প্রস্তুত নয়, তারা আসলে মুসলিম নামধারী হয়েও মুসলমানদের দুশমন। এই দুশমনির তাগিদেই তারা মুসলিম সমাজে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র দর্শন আওড়ায়। কিন্তু এই দর্শনটি যে মূলত মুসলিমদের মুসলমানিত্ব খতম করার লক্ষ্যে প্রচারিত, তাদেরকে ‘অমুসলিম’ বানানোর কুটিল উদ্দেশ্যে রচিত এবং দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তা আজ আর কারোর বুঝতে বাকী নেই। তাই এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সচেতন মুসলমানদের প্রধান ও প্রথম কর্তব্য।

একথা অনস্বীকার্য যে, মুসলিম সন্তানদেরকে প্রকৃত মুসলিম রূপে গড়ে তুলতে হলে দেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আগাগোড়া নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্রমবিকাশ অনুপাতে ইসলামের বিশ্বদর্শন, মানব-দর্শন ও সমাজ-দর্শন সংক্রান্ত জ্ঞান পরিকল্পিত শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পরিবেশনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা করতে হবে সহজ থেকে ক্রমশ কঠিন ও উচ্চতর মানে। শিক্ষার স্তর যত উচ্চ হবে জ্ঞানের মানও সেই অনুপাতে উচ্চ হতে থাকবে। অতীব সহজ-সরল বিষয় ক্রমশ উচ্চ মানে উন্নীত হয়ে জটিল ও সূক্ষ্ণ রূপ ধারণ করবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতি এবং গ্রহণ ও ধারণ ক্ষমতার সথে পুরামাত্রায় সামঞ্জস্য রক্ষা করে জ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন ব্যাপকতা ও গভীরতা আনতে হবে, তেমনি আনতে হবে জটিলতা ও সূক্ষ্ণতার উচ্চমান। শিক্ষার্থীদের বয়সের সাথেও বিষয়বস্তুতে অবশ্যই সামঞ্জস্যশীল হতে হবে।

প্রাথমিক স্তরে উপরোক্ত তিন পর্যায়ে জ্ঞানের সাথে স্থূল পরিচিতি দানই যথেষ্ট। তাতে শিক্ষার্থীদের মনে বিষয়গুলো আরও গভীর, সূক্ষ্ণ ও বিস্তৃতভাবে জানবার আগ্রহের সৃষ্টি হবে।

এ জ্ঞান-দান পদ্ধতিকে একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বোঝানো যেতে পারে। এদেশের একজন অধিবাসী কারোর মুখে মক্কা শরীফের কথা শুনল। সে জানতে পারল মক্কা শরীফ নামে একটা শহর আছে; সেখানে কাবা ঘর অবস্থিত। অতঃপর পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তক পড়ে মক্কা শহরের ইতিবৃত্ত ও বিস্তারিত বিবরণ জানল। মক্কা থেকে ফিরে আসা লোকদের মুখে সে আরও বিস্তারিতভাবে অনেক কথা জেনে নিল। তারপর একসময় সে নিজেই মক্কায় উপস্থিত হল এবং নিজ চোখে মক্কা শহর, কাবা গৃহ ও অন্য সব কিছু দেখতে পেল। এভাবে বলা যায়, মক্কা সম্পর্কে সে লোকটির জ্ঞানের তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় শুধু জানা বা শোনা জ্ঞান। দ্বিতীয় পর্যায় সুদৃঢ় ও প্রত্যয়পূর্ণ জ্ঞান-‘ইলমে ইয়াকী’। আর তৃতীয় অর্থাৎ সর্বশেষ বা সর্বোচ্চ পর্যায় প্রত্যক্ষদর্শনের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান-‘আইনুল ইয়াকীন’।

একটি বিষয়ের জ্ঞানকে প্রথমিক স্তর থেকে ক্রমান্বয়ে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহজ-সরল থেকে ক্রমশ ব্যাপক, সূক্ষ্ণ ও জটিল পর্যায়ে উন্নীত করা এবং শিক্ষার্থীর বয়োবৃদ্ধির ক্রমিক ধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার অনুধাবন, গ্রহণ ও ধারণ ক্ষমতার ক্রমবিকাশের সাথে মিল রেখে পরিবেশন করাই ইসলামের শিক্ষা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অনুসরণ করা না হলে শিক্ষার্থীর মানসিক কথা জ্ঞানগত বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। প্রকৃতির বিধানও তা-ই।

এই পর্যায়ে স্মর্তব্য, সাধারণ শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে অজানাকে জানা। কিন্তু ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু অজানাকে জানাই নয়, বরং সব চাইতে বেশী অজানা অথচ সর্বাধিক প্রয়োজনীয় জ্ঞাতব্য হচ্ছে আল্লাহকে জানা। আল্লাহকে জানা যায় তাঁর ঘোষিত গুণাবলীর সাথে গভীর ও ব্যাপক পরিচিতি লাভের মাধ্যমে, আল্লাহর সৃষ্টি তত্ত্ব ও সৃষ্টি-কৌশল এবং বিশ্বলোককে জানার সাহায্যে। বিশ্বলোককে যথার্থভাবে জানতে না পারলে মানুষ নিজেকেও জানতে পারে না। আর মানুষ নিজেকে যদি যথার্থভাবে জানতে না পারেন, তাহলে তার জন্ম ও জীবনটাই অর্থহীন।

তাই ইসলামী শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রথমেই শামিল হতে হবে মহান আল্লাহর গুণাবলী জানা-তাঁর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি তথা আদেশ ও নিষেধগুলো জানা। সেই সাথে বিশ্ব-প্রকৃতি ও মানুষের জীবন-মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং একদিকে আল্লাহ ও অপরদিকে বিশ্বলোক ও তার মধ্যকার যাবতীয় জিনিসের সাথে মানুষের সম্পর্কের স্বরূপ ও আচরণ-বিধি ইত্যাদি জানাও আবশ্যিক বিষয় রূপে গণ্য থাকবে। ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষণীয় বিষয়ের এই ব্যাপকতা একান্তই অপরিহার্য। যে শিক্ষা ব্যবস্থা উক্ত বিষয়গুলো এইবিন্যাস সহকারে শিক্ষাদান করছে না, তা ইসলামী শিক্ষা নয়-তা নয় মুসলমানদের গ্রহণযোগ্য শিক্ষা ব্যবস্থা। এরূপ শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে আমাদের দেশে চালু নেই। বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় হয়ত অনেক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার আয়োজন রয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নামে অনেক তথ্য শেখানো হচ্ছে; কিন্তু উপরিউক্ত জরুরী বিষয়গুলো উক্তরূপ বিন্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গি সহকারে শিক্ষা দান করা হয় না বলেই তা সাধারণভাবে মানুষের এবং বিশেষভাবে মুসলমানদের কোন কল্যাণেই আসেনা, বরং মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অতএব, বর্তমানে প্রচলিত এই অকল্যাণকর এবং মারাত্মক ক্ষতিকর শিক্ষা ব্যবস্থাকে খতম করে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা অবিলম্বে প্রবর্তন করাই জনকল্যাণকামী যে কোন সরকারের কর্তব্য। বাংলাদেশের মুসলিম জনতার এটাই ঐকান্তিক দাবি।

এই ভূখণ্ডের মুসলিম জনতার পক্ষ থেকে ইংরেজ শাসন আমল, পাকিস্তান আমল, এবং বর্তমান বাংলাদেশ আমলে বার বার এখানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যে সম্ভাব্য সকল উপায়েই দাবি জানানো হয়েছে। এ জন্যে অসংখ্য সভা-সম্মেলন, সেমিনার, আলোচনা সভা ও বিক্ষোভ মিছিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এইসব দাবি-দাওয়া উক্ত তিন আমলের কর্তৃপক্ষকে ইসলামী শিক্ষা প্রবর্তনে রাজী করাতে সক্ষম হয়নি। শাসকরা গণদাবির প্রতি কোন গুরুত্বই দেয়নি। তারা মুখে ওয়াদা করলেও সে ওয়াদার বার বারই খেলাফ করা হয়েছে। গণদাবিকে পাশ কাটানোর জন্যে তারা সুস্পষ্টভাবে মুনাফেকী করেছে। ইসলামী জনতাকে নির্লজ্জভাবে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। এ দিক দিয়ে পরাধীন আমল ও স্বাধীন আমলের মধ্যে কোনই পার্থক্য হয়নি।

বৃটিশ আমলে ইসলামী শিক্ষা প্রবর্তিত না হওয়ার বোধগম্য কারণ হল ইংরেজ শাসকরা তা কিছুতেই করতে পারে না। কেননা এদেশে যে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রাচীন মুসলিম শাসন কাল থেকে চলে এসেছিল তাকে সম্পূর্ণ উৎখাত করে নিজেদের মনোপুত দর্শন ও অসদুদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই তারা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল। তারা মুসলিম সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের পরিকল্পিত শিক্ষা প্রদান করে তাদেরকে ‘খৃষ্টান’ বা ‘অমুসলিম’ বানাতে চেয়েছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান আমলে এই দাবি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার সুস্পষ্ট কারণ ছিল, শাসকবর্গ ও শিক্ষা বিভাগীয় কর্তারা ছিলেন বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁরা কি করে তাঁদের মন-মানস ও চরিত্রের বিপরীত ইসলামী শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে পারেন তাঁদেরই সন্তানকে? আর শেষ কালে স্বাধীন বাংলাদেশেও এই দাবি অস্বীকৃত হওয়ার কারণ হল, স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান মুহুর্ত পর্যন্ত দেশের শাসন ক্ষমতা ও শিক্ষা বিভাগীয় কর্তৃত্ব এমন লোকদেরই কুক্ষিগত রয়েছে যারা নিজেরাই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, বৃটিশের অন্ধ গোলাম এবং নিজেদেরকে ডারউইনী দর্শন অনুযায়ী লাঙুলবিহীন বানরের বংশধর বলে বিশ্বাস করেন। কাজেই এহেন শাসকরা ‘পরাধীন’ বা প্রায়-স্বাধীন এবং স্বাধীন-এই তিনও অবস্থায় একই প্রকারের ভূমিকা পালন করবে, তাতে আর সন্দেহ কি?

কিন্তু বর্তমান সময়ের ব্যর্থতা যে এর পূর্বের দুই আমলের ব্যর্থতার তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা বিদেশী বা বিধর্মীরা যে এদেশের মুসলিম জনগণের দাবির প্রতি কোন গুরুত্ব দেবে না, তা সহজেই বোঝা যায়। পাকিস্তান আমলের ব্যর্থতাও কম বেদনাদায়ক নয়। কেননা পাকিস্তান অর্জিতই হয়েছিল ইসলামী রাষ্ট্র তথা ইসলামী তাহ্‌যীব ও তামাদ্দুন কায়েমের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে, এটা সকলেরই জানা ছিল। তখনকার প্রকৃত শাসকরা বাংলাদেশী ছিলেন না বটে, কিন্তু মুসলমান তো ছিলেন! সে হিসেবে পাকিস্তান আমলেই ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা ছিল তাদের দ্বীনি দায়িত্ব। আর সর্বশেষে বাংলাদেশের ব্যর্থতা সর্বাধিক দুঃখজনক এই কারণে যে, এখানকার শাসকরা সকলেই এদেশী-বিদেশী নয়। এ দেশীয় শাসকরা এই দেশেরই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত, ঐকান্তিক ও ঐক্যবদ্ধ দাবি মানবে না, তা কিভাবে কল্পনা করা যেতে পারে! শাসকরা সব সময়ই ‘গণতন্ত্র’ ‘গণতন্ত্র’ বলে চিৎকার করেন। দেশের জনগণের দাবি অনুযায়ী কাজ করাই নাকি গণতন্ত্র। তা হলে জনগণের ঐক্যবদ্ধ দাবি দেশী শাসকদের দ্বারা অস্বীকৃত হলে সেটাকে কিভাবে ‘গণতন্ত্র’ বলা যেতে পারে? তার অর্থ, বাংলাদেশের শাসকরা ‘গণতন্ত্রের’ বুলি কপচালেও কার্যত তা অনুসরণ করতে প্রস্তুত নন।আসলে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করাই হচ্ছে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের যথার্থ রূপ। এটাই ম্যাকিয়াভেলীয় শাসন-নীতি। কিন্ত কথা এখানেই শেষ নয়। এদেশের শাসকরা তো মুসলিমও। শুধু মুসলিমই নন, তাঁরা নাম পড়লে তাঁদেরকে ‘নামাযী’ এবং হজ করলে তাদেরকে ‘হাজী’ না বললে রীতিমত অসন্তুষ্ট হয়ে বসেন। তাঁরা যখন বলেঃ ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’ কিংবা ‘এ দেশ পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান হিসেবে ইসলামকে বাস্তবায়িত করা হবে’ তখন এদেশের মুসলিম জনতা শুধু খুশীই হয়না, রীতিমত আশাবাদী হয়ে ওঠে। তাই শাসকরা যখন বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী আদর্শ রূপায়িত হবে, নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা হবে ইত্যাদি, তখন তাকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু কাযর্ত যখন দেখা যায় যে, তাদেরই মতো বানর বংশজাত ছেলে-পেলেদের ইট-পাটকেল পড়লে তারা তাদের বলা সব কথা রীতিমত ভুলে যান, তখন চরমভাবে হতাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

এই প্রেক্ষিতে আমি দেশবাসীর নিকট চূড়ান্তভাবে বলতে চাই, যারা নিজেদেরকে বানর বংশজাত বলে বিশ্বাস করে এসেছে তাদের দ্বারা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন সম্ভব নয়। আসলে অতীতের ন্যায় এখনও আমরা মারাত্মক ধরণের গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। বানর-বংশজাত লোকদের কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি না পেলে এ গোলকধাঁধাঁ হতে নিষ্কৃতি লাভ কোনদিন সম্ভব হবে না। অতএব মুসলিম জনগণের জন্য একটিমাত্র পথই এখন খোলা আছে আর তা হচ্ছে চূড়ান্তভাবে ইসলামী বিপ্লব সংঘটন। এই আবর্জনার স্তূপ থেকে এদেশকে- এদেশের মানুষকে মুক্তি দিতে পারে, দিতে পারে ইসলামী শিক্ষা, ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, ইসলামী শাসন পদ্ধতি, ইসলামী অর্থনৈতিক ইনসাফ ও নিরাপত্তা এবং ইসলামী সংস্কৃতি একটি সফল ইসলামী বিপ্লব।

এই কথা দেশবাসীর পক্ষে যত শীঘ্র অনুধাবন করা সম্ভব হবে তত শীঘ্রই ইসলামী বিপ্লবের পথ উন্মুক্ত হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন