মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলামী শিক্ষা শিক্ষার্থীর স্কন্ধে নিছক তত্ত্ব ও তথ্যের দুর্বহ বোঝা চাপিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয় না; তা শিক্ষার্থীর মনে-মগজে এক বিপ্লবী ভাবধারাও জাগিয়ে দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে শুধু জানাই লক্ষ্য নয়, প্রকৃত বিষয় জানতে হবে, যথার্থ সত্য ও সনাতনকে জানতে হবে এবং সেই জানার পর যে মহাসত্য উদ্ঘাটিত হবে তাকে নিজের জীবনে, সমাজে ও পরিবেশে বাস্তবায়িত করবার জন্যে প্রাণ-পণ চেষ্টা চালাতে হবে। প্রকৃত সত্যকে জানার পর শিক্ষার্থী তার নিজের মন-মগজের- আকীদা-বিশ্বাসের, আমল ও চরিত্রের, নিজের পরিবেশ-পরিমণ্ডলের অবস্থা যাচাই করবে এবং লব্ধ পরম সত্যের পরিপন্থী যেখানে যা কিছু পাওয়া যাবে তা দূর করার জন্যে উদ্বুদ্ধ হবে। অন্যায়, অসত্য, বাতিল ও মিথ্যার সাথে সে সমঝোতা করতে প্রস্তুত হবে না; বরং তার নিজের জানা চূড়ান্ত সত্যের মানদণ্ডে যা কিছু বিপরীত প্রমাণিত হবে তাকে যথানিয়মে দূর করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোই শিক্ষার্থীর অনিবার্য দায়িত্ব বলে মনে করবে। ইসলামের দৃষ্টিতে নিছক শেখা, শিক্ষার নামে কতকগুলো তত্ত্ব ও তথ্যের আবর্জনা পুঞ্জীভূত করে তোলার নাম শিক্ষা নয়। অন্যকথায়, ইসলামের শিক্ষা উদ্দেশ্যহীন নয়, আদর্শহীন নয়, প্রেরণাহীন নয়; তা প্রকৃতপক্ষেই মানুষের জন্যে সঞ্জীবনী সুধা।
ইসলামী শিক্ষার্থীকে একটি ‘মিশন’ দেয়, জীবনের একটা কাজ দেয়, একটা কার্যসূচী দেয়; একটা বিপ্লবী ভাবধারাপূর্ণ আবেদন জন-সমক্ষে পেশ করার জন্যে তা শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম যে ধরণের শিক্ষার তাকীদ করেছে, যে শিক্ষা না থাকার দরুণ তীব্র আপত্তি তুলেছে, তা হল এই শিক্ষা। কুরআন মজীদে প্রশ্ন তোলা হয়েছেঃ
‘‘প্রত্যেক বিচ্ছিন্ন জন-সমষ্টি থেকে কিছুসংখ্যক লোক কেন বের হয়ে যায় না এ উদ্দেশ্যে যে, তারা ‘দ্বীন’ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করবে এবং তারা যখন নিজেদের জনগণের নিকট ফিরে আসবে, তাখন তারা তাদের প্রকৃত ব্যাপার ও পরিণতি সম্পর্কে সাবধান ও সতর্ক করে তুলবে। …….এভাবেই হয়ত তারা সতর্ক ও সত্য পথগামী হয়ে উঠবে।’’ (সূরা তওবাঃ ১২২)
এ আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষা মৌলিক উদ্দেশ্য হল ‘দ্বীন’ সম্পর্কে পরিপূর্ন ও ব্যাপক জ্ঞান অর্জন, দ্বীন সম্পর্কে গভীর ব্যুৎপত্তি ও দক্ষতা লাভ। আর দ্বীন বলতে বুঝায় জীবনের সমগ্র দিক ও বিভাগ-স্রষ্টা, আত্মসত্তা, সৃষ্টিলোক, বিশ্ব নিখিল, সমগ্র প্রাকৃতিক জগত তথা ইহকাল ও পরকাল সংক্রান্ত তাবৎ বিষয়। কিন্তু এই জ্ঞান ও ব্যুৎপত্তি লাভই চরম লক্ষ্য নয়। চরম লক্ষ্য হল সাধারণ মানুষের মধ্যে সে জ্ঞান, তত্ত্ব ও তথ্য প্রচার করা, তাদেরকেও সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত করা এবং তদনুযায়ী জীবন ও সমাজ গঠনের জন্যে তাদেরকে সজাগ ও সক্রিয় করে তোলা।
ইসলামী শিক্ষা দর্শন শিক্ষার্থীদের একটি আহ্বান বাণী শিখিয়ে দেয় এবং সেই আহ্বান লোক সমক্ষে পেশ করার জন্যে অনুপ্রাণিত করে। কুরআনী পরিভাষায় সে আহ্বান দাওয়াতুল হক বা ‘সত্যের আহ্বান’ নাম অভিহিত। এই ‘দাওয়াতের’ মূল্য ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন মজীদ ঘোষণা করেছেঃ
‘‘যে লোক আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান জানাল, নিজে তদনুযায়ী নেক আমল করল এবং উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করল যে, আমি একজন মুসলমান, তার চাইতে উত্তম কথা আর কেউ বলছে না-এর চেয়ে উত্তম ও অধিক কল্যাণকর আহ্বান আর কিছু হতে পারে না।’’ (সূরা হা–মীম আস্–সাজদাহঃ ৩৩)
বস্তুত ইসলামী শিক্ষা-ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাবার এক অতুলনীয় ও অতীব উত্তম মন্ত্রে দীক্ষিত করে। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর প্রথমত এ মহান আহ্বানের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে তার নিজের মনে, জীবনে ও চরিত্রে। অতঃপর তার মন-মানসে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যয়ের দৃঢ়তা, আদর্শিক বলিষ্ঠতা ও নিজের আদর্শিক পরিচয়ে অকুণ্ঠতার সঞ্চার হয়। ফলে সে উদাত্ত কণ্ঠে ‘ইসলামী আদর্শবাদী’ বা ‘ইসলামী আদর্শানুসারী’ মুসলিম রূপে বিশ্বসমাজে নিজেকে পরিচিত করাতে একবিন্দু সংকোচ বা লজ্জাবোধ করে না। যে শিক্ষা মানুষকে মিনমিনে, সংশয়িত, শংকিত, অকর্মণ্য বা অপদার্থ বানিয়ে দেয়, যে শিক্ষা শিক্ষার্থীর চিত্তকে স্বতঃস্ফূর্ত করে না, যে শিক্ষা মানুষের উন্নত স্বভাব ও চরিত্রের সৃষ্টি করেনা, সর্বোপরি যে শিক্ষা তাকে কথা ও কাজে অভিন্ন, অকৃত্রিম, উদার, নির্ভীক ও সাহসী বানায় না, তা তত্ত্ব ও তথ্যে যতই স্ফীত ও সমৃদ্ধ হোক না কেন, শিক্ষার্থীর নামের শেষে যত বড় বড় ডিগ্রীর লেজুড় জুড়ে দেয়া হোক না কেন, তা মানুষের কোন কল্যাণ সাধনে আদৌ সমর্থ হতে পারে না- না ইহকালীন কল্যাণ না পরকালীন।
এরই অনিবার্য পরিণতিতে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতরা বিশ্ব-নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হওয়ার মতো যোগ্যতার অধিকারী হয়। কেননা, যারা মহান আদর্শে নিজেরা উজ্জীবিত হয়ে নির্বিশেষ বিশ্বের সমস্ত মানুষের সামনে সে আদর্শ উপস্থাপন করার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তারাই তো হয় বিশ্ববাসীর শিক্ষাগুরু, পথ-প্রদর্শক ও অগ্রনেতা। আর তারাই হতে পারে বিশ্বের গোটা জনমানবের মাঝে সর্বোত্তম লোক হওয়ার উপযুক্ত দাবিদার। কুরআনের ঘোষণাঃ
‘সর্বোত্তম’ হওয়ার এই কুরআনী ঘোষণা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের কোন অবাঞ্ছিত অহমিকা কিংবা Superiority Complex জাগায় না- জাগায় গভীর আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ব-চেতনা, আদর্শের প্রতি ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও অহংবোধ। আর বিশ্বের নেতৃত্ব দানে এ গুণগুলো একান্তই অপরিহার্য। লোকদের মাঝে এ চেতনা জাগ্রত করাই আয়াতটির লক্ষ্য।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, তা জনগনের মধ্যে পরিপূর্ণ ঐক্য ও একত্ববোধ জাগিয়ে দেয়। এ ঐক্য ও একত্ববোধ তিনটি ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়ঃ
১. ঈমানী ঐক্য ও একত্ব- আকীদা-বিশ্বাস, বিশ্ব-দর্শন ও জীবন-উদ্দেশ্যে অভিন্নতা,
২. কর্মের ঐক্য ও একত্ব- বাস্তব কর্মক্ষেত্রে আঙ্গিকে ও সাংগঠনিক ঐক্য ও একত্ব এবং
৩. মানবীয় ঐক্য ও একত্ব- সব ব্যক্তি মানুষই মৌলিক ও মানবিক দিক দিয়ে অভিন্ন ও সমতুল্য।
এই মনোবৃত্তি ও কার্যধারাই ইসলামী শিক্ষার বিশেষত্ব।
বস্তুত ঈমানী ঐক্য ও একত্বই যে একটা জাতির সর্বাপেক্ষা বড় শক্তি তা সর্বজনবিদিত। ঈমান-আকীদা, ধারণা-বিশ্বাস, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও মনোভাব-মূল্যবোধের অভিন্নতাই বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত লোকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে; তাদের সম্মিলন ও সহযোগিতায় গড়ে ওঠে এক অখণ্ড জনসমাজ। এই সমাজেরই বৃহত্তর রূপকে বলা হয় ‘জাতি’। একটা জাতির আদর্শিক অস্তিত্ব তার লোকদের ঈমান-আকীদা, চিন্তা-বিশ্বাস ও মতবাদ-মনোভাবে পরম ঐক্যের ওপর নির্ভরশীল। যে জাতির লোকজনের মধ্যে এ ঐক্য নেই, সে জাতি ‘জাতি’ নামে অভিহিত হওয়ারই যোগ্য নয়। আর যে জাতির মধ্যে এ ঐক্য ও একত্ব রয়েছে, সে জাতিই বিশ্ব-নেতৃত্বের সুউচ্চ আসনে সমাসীন হওয়ার অধিকারী। মুসলিম ব্যক্তি ও সমাজ সমন্বয়ে একদিন যে জাতি গড়ে উঠেছিল, সে জাতির এই গুণটিই ছিল প্রধান এবং উত্তরকালে এ জাতিই হয়েছিল বিশ্বনেতা। এ জাতির প্রতি কুরআনের নিদের্শ ছিলঃ
‘‘তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর ‘রুজ্জু’ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে। পরে আল্লাহ্ই তোমাদের অন্তরসমূহকে পরস্পর সম্প্রীতিপূর্ণ করে দিলেন; ফলে আল্লাহর অনুগ্রহক্রমেই তোমরা পরস্পরের ভাই হয়ে গেলে।’’ (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৩)
‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে কি বোঝান হয়েছে এ আয়াতে? আল্লাহর রজ্জু হল আল্লাহর কিতাব। এই কিতাব সম্পর্কেই বলা হয়েছে অপর আয়াতেঃ
‘‘আল্লাহ্ই তোমাদের প্রতি আল-কিতাব নাযিল করেছেন তা পূর্বে নাযিলকৃত তওরাত ও ইন্জীলের সত্যতা ঘোষণাকারী, তা জন-মানুষের সংবিধান এবং তা (বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মাঝে) পার্থক্য সৃষ্টিকারী রূপে নাযিল করেছেন।’’ (সূরা আলে ইমরানঃ ৩–৪)
ইসলামী আদর্শের মৌলিক বিশ্বাস ও তার উপদানসমূহ আরো একটি দিক দিয়ে ঐক্য ও একত্বের বাণী বহন করে এনেছে। ইসলামের দাবি এ নয় যে, দুনিয়ায় কখনই কোন দ্বীন আসেনি; বরং তার দাবি হল, মানব সমাজকে ঐক্য ও একত্বের বুনিয়াদে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে মানবসৃষ্টির সূচনা থেকেই খোদায়ী পথ-প্রদর্শনের ধারা সূচিত হয়েছে এবং তা অব্যাহতভাবে চলে এসেছে। আল্লাহর কুরআন এই ধারারই সর্বশেষ নির্দেশিকা। ফলে এই ধারায় কোন অসম্পূর্ণতাই থাকতে পারেনি। উপরি-উদ্ধৃত আয়াত একথাই ঘোষণা করেছে এবং এ ঘোষণায়ও সেই ঐক্য ও একত্বের মহিমাই ঝংকৃত হয়েছে। ইসলামী শিক্ষা দর্শনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যও এখানে যে, তা অপূর্ব ও অভিনব হওয়ার দাবি করে না। তাতে ইতিপূর্বে আসা অপরাপর খোদায়ী বিধানের সত্যতা পূর্ণ মাত্রায় স্বীকৃত। কুরআনের দৃষ্টিতে দুনিয়ার এই সমগ্র মানুষ এক অখণ্ড জাতির অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ জাতীয় একত্ব ও অখণ্ডতা সর্বপ্রযত্নে রক্ষণীয়ঃ
‘‘তোমাদের এই জাতি আসলে এক অখণ্ড জাতি। আর আমি (আল্লাহ) একাই তোমাদের সকলের প্রভু ও মালিক। অতএব তোমরা কেবল এক আমাকেই ভয় ও সমীহ করে চলবে।’’ (সূরা মুমিনুনঃ ৫২)
এরূপই অপর এক আয়াতের শেষ শব্দ হয় ‘ফাঅবুদুন’- ‘অতএব তোমরা কেবলমাত্র আমারই বন্দেগী ও দাসত্ব কবুল কর’। (আল–আম্বিয়াঃ ৯২)
কুরআনের ব্যাখ্যানুযায়ী এ জাতিকে ‘মুসলিম নামে সর্বপ্রথম অভিহিত করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আ.। আমাদের জানা ইতিহাসে তিনিই সব নবী-রাসূলের আদি পিতা। তাওহীদ, রিসালাত ও পরকাল প্রভৃতি বিষয়াদি তিনিই সর্বপ্রথম পেশ করেছেন। আর সর্বশেষ রাসূলের নাম পর্যন্ত পূর্বেকার সব নবী-রাসূল ও খোদায়ী গ্রন্থাদি কর্তৃক ঘোষিত। এ জন্যে তাঁর মুখেই উচ্চারিত হয়েছে বিশ্বমানবের প্রতি এ পরম ঐক্যবানীঃ
‘‘(হে জনসমষ্টি!) তোমরা সকলে এমন একটি মহান বাণীর দিকে এস, যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে সমান ও অভিন্ন। সে বাণী হলঃ আমরা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর বন্দেগী করব না, তাঁর সাথে কাউকেই শরীক করব না এবং আমাদের কেউই আল্লাহকে বাদ দিয়ে পরস্পরকে রব্ব্ রূপে গ্রহণ করবনা। ……তোমরা যদি এ মহান ও কল্যাণকর ঐক্যবাণী গ্রহণ করতে পরাঙ্গাম হও, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো, আমরা কিন্তু এ বাণীতেই আত্মসমর্পিত।’’ (সূরা আলে ইমরানঃ ৬৪)
বস্তুত ইসলামী শিক্ষা-দর্শন এভাবেই চিরন্তন ও শাশ্বত মানবীয় ঐক্য ও একত্বের বাণী প্রচারের মহান দায়িত্ব পালন করেছে। ঈমানী একত্বের এ মহান বাণীতে তার বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে উঠেছ। কেবলমাত্র ঈমান-আকীদা ও আদর্শবাদের ক্ষেত্রেই নয়, সাংগঠনিক দিক দিয়েও ইসলামী শিক্ষা-দর্শন এক পূর্ণতা, ব্যাপকতা ও সামগ্রিকতার প্রবর্তক। এর অংশগুলো পরস্পর এমনভাবে সম্পৃক্ত ও অবিচ্ছিন্ন যে, জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগ নিয়ে তা এক অখণ্ড ঐকিক রচনা করে। তার প্রত্যেকটি দিক অপরটির জন্যে অপরিহার্য। ফলে একদিক রক্ষা করা হলেই দায়িত্ব পালিত হয় না; বরং একসঙ্গে ও একই সময়ে রক্ষা করতে হয় জীবনের সবগুলো দিক ও বিভাগ। এ কারণে কেউ শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ্ব-যাকাত আদায় করেই যথার্থ মুসলিম হতে পারে না- নিছক কতিপয় সামাজিক নিয়মবিধি পালন করেই দায়িত্ব এড়ান সম্ভব হয় না; সমস্ত ও সম্পূর্ণ জীবনটিকেই ইসলামের আওতাভুক্ত করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এ জন্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ
‘‘তোমরা সকলে সম্মিলিতভাবে ইসলামী আদর্শানুগামী হও পরিপূর্ণভাবে এবং জীবনের কোন ক্ষেত্রেই শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না।’’ (সূরা বাকারাঃ ২০৮)
বস্তুত ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা মানবদেহের মতোই এক অবিচ্ছিন্ন সংগঠন উপস্থাপন করেছে। ব্যক্তি ও সমাজ যতক্ষণ পর্যন্ত এ সংগঠনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের ছাঁচে ঢেলে জীবন গঠন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তি ও সমষ্টি জন্যে প্রতিশ্রুত ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ বাস্তবায়িত হতে পারে না। ইবাদত এ জীবন-ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। তার অবিভাজ্যতা ও অখণ্ডতা লক্ষণীয়। রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি নামায পড়ে না, দ্বীন বলতে তার কিছু নেই’। ‘যে লোক যাকাত দেয় না, তার নামাযও গ্রহণীয় নয়’। ‘নামায-রোযা-হজ্জ্ব-যাকাত এ চারটি ফরয সম্পর্কে ইরশাদ হলঃ ‘এর তিনটি পালন করলেই তার দায়িত্ব পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না সব কয়টি আদায় করবে।’
সমাজ জীবনেও এই ঐক্য, একত্ব ও সাদৃশ্য রক্ষা করা অপরিহার্য। রাসূলের সম্মুখে দুইজন স্ত্রীলোকের কথা আলোচিত হয়। তার একজন খুব বেশী বেশী নফল নামায পড়ে; কিন্তু প্রতিবেশীদের জ্বালা-যন্ত্রণা দেয়। আর অপরজন জরুরী নামাযসমূহ আদায় করে (নফল নামায বেশী পড়ে না); কিন্তু প্রতিবেশীদের কোনরূপ কষ্ট দেয় না। রাসূলে করীম (ﷺ) প্রথম স্ত্রী লোককে জাহান্নামী এবং দ্বিতীয়জনকে জান্নাতী বলে ঘোষণা করেন। জীবনের বিশাল ও বিপুল কর্মক্ষেত্রে যে সামঞ্জস্য ও সঙ্গতি অপরিহার্য এবং অসঙ্গতি ও সংকীর্ণতা যে আদৌ থাকা অনুচিত, তারই দ্যোতনা এসব ঘটনায় রয়েছে।
ইসলামী শিক্ষা-দর্শন এই অখণ্ডতা সংস্থাপন করেছে শিক্ষার বিষয়বস্তুতে এবং কর্মজীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে; যদিও জীবনের অস্বাভাবিক বিভাগ-বণ্টনে মানব ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলে কলংকিত ও ভারাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। প্রাচীন গ্রীক, পারসিক ও রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই বিভাগ-বণ্টনের ফলেই মানবজীবন চূর্ণ-বিচূর্ণ ও অসামঞ্জস্যতার আঘাত জর্জরিত। আর্যদের বর্ণবিভেদ, ইয়াহুদীদের ধর্ম ও বৈষয়িক জীবনের বিভিন্নতা, খৃষ্টানদের খোদা ও কাইজারের মধ্যে বিভেদ এবং শেষোক্ত এ দুটি সমাজের বৈরাগ্যবাদ মানবজীবনকে ভিন্ন ভিন্ন অংশে খণ্ডিত করে দিয়েছে। ধর্মীয় জীবন ও বৈষয়িক জীবনকে দুটি স্বতন্ত্র ও পরস্পর বিরোধী ধারায় বিভক্ত করার দরুণ মানবজীবন ও সমাজ দেহ টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। বর্তমান সভ্যতা শেষের দিকে মানবীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার গালভরা বুলি প্রচার করতে শুরু করেছে বটে; কিন্তু জীবন-বুনিয়াদের শতধা-বিভক্তি তার এ বুলিকে প্রহসন ও বিদ্রূপে পরিণত করেছে। অথচ মানুষের দেহ-সত্তা বস্তু ও আত্মার সংমিশ্রণ ও অভিন্নতার এক জ্বলন্ত নিদর্শন; তা মানব-প্রেমের দাবিদার বর্তমান সভ্যতার তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অখণ্ড মানব সত্তার জন্যে অখণ্ড ও অবিভাজ্য জীবন ব্যবস্থা তথা শিক্ষা-দর্শনের প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা আধুনিক সভ্যতার ধারকরা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছে। সেখানে ধর্ম ও কর্মজীবন বিচ্ছিন্ন; নৈতিকতার সাথে অর্থনীতি সংযোগবিহীন; ইহকালের সাথে পরকাল বিবেচনা-বহির্ভূত। এ সভ্যতা তাই মানুষের জীবনের যেমন চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে, এখনকার শিক্ষাব্যবস্থাও ঠিক তেমনি মানুষের জীবনের কোন কল্যাণই আনতে পারেনি। যে শিক্ষা-দর্শন মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরস্পরের পরিপূরক জ্ঞানদানে নিবেদিত, একমাত্র সে শিক্ষা দর্শনই সার্বিকভাবে সমস্ত মানুষের জন্যে কল্যাণবহ। মুসলমান তথা সমগ্র মানুষের জন্যে তাই একমাত্র ইসলামী শিক্ষা-দর্শনই গ্রহণীয়- অন্য কিছু নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/593/43
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।