hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৭৬
ইসলামী শিক্ষার পাঠ্য তালিকা
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বস্রষ্টা মহান আল্লাহ তা’আলার একত্ব ও অনন্যতার প্রতি বিশ্বাস ও প্রত্যয়কে মানব মনে ও আত্মায় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, প্রত্যেক ব্যক্তির হৃদয়-মনে আল্লাহর ভয়কে সদা জাগ্রত ও সক্রিয় প্রভাবশালী রাখা ও প্রত্যয়কে জীবন নিয়ন্ত্রণকারী চেতনায় পরিণত করা যেন প্রতিটি মানুষ তার বাস্তব জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর নিষিদ্ধ কোন কাজ সম্পাদন না করে। বস্তুত দ্বীন-ইসলামের মূল লক্ষ্যও এটাই।

এই উদ্দেশ্য লাভের জন্যে প্রয়োজন ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলাম শিক্ষা, যা অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির জন্যে বাধ্যতামূলক। এরূপ শিক্ষালাভ ব্যতীত ব্যক্তির মন-মানস, জীবন, চরিত্র ও বৈষয়িক কর্মতৎপরতা কখনই ইসলামী আদর্শানুযায়ী উত্তীর্ণ হতে পারেনা। ফলে তার শুধু পরকালীন জীবনই নয়, বর্তমান বৈষয়িক জীবনও প্রকৃত তাৎপর্যের দৃষ্টিতে নিতান্তই ব্যর্থ হয়ে যেতে বাধ্য।

ইসলামী শিক্ষাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে- ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত। ব্যক্তিগত পর্যায়ের শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতিটি ব্যক্তিকে গভীরভাবে সুপরিচিত করাঃ

ক. এই বিশ্বলোক এবং এখানকার অপরাপর সৃষ্টিকুলের সাথে তার সম্পর্ক,

খ. জীবনের কর্মকাণ্ডে তার ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও কর্তব্য,

গ. অন্যান্য মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য,

চ. বিশ্বলোক প্রপঞ্চ অনুধাবন এবং তার পিছনে সদা কার্যকর নিয়মাবলী পুংখানুপুংখ রূপে অধ্যয়ন,

ছ. মহান স্রষ্টার সৃষ্টিধর্মী বুদ্ধিমত্তা বা কৌশল, যা মানুষের সৃষ্টিকর্মে পুরোপুরি ব্যবহৃত হয়েছে- গভীরভাবে অনুধাবন।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে অনুরূপ এক পাঠ্যতালিকা রচনা করা এবং আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিম্নশ্রেণী থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তা পড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রকৃত মুসলিম নাগরিক তৈরীর জন্যে একান্তই আবশ্যক এবং সে রূপ একটি পাঠ্য তালিকা আমরা কুরআন মজীদকে ভিত্তি করে সহজেই রচনা করতে পারি।

এ পর্যায়ের পাঠ্যতালিকায় এমন বিষয়াদি শামিল করতে হবে, যা শিক্ষার্থীর হৃদয় মনে মহান আল্লাহ সম্পর্কে এক সুস্পষ্ট ধারণার সৃষ্টি করবে; এই দুঢ় প্রত্যয় জন্মাবে যে, তিনি এক, একক ও লা-শরীক। তিনিই সমগ্র সৃষ্টিলোকের একমাত্র স্রষ্টা, রক্ষাকর্তা, পরিচালক ও শিক্ষাদাতা এবং প্রতিটি জীব ও প্রাণীর রিযিকদাতা। কেবল তিনিই মানুষের একমাত্র মা’বুদ, তিনি ছাড়া আর কেউই মা’বুদ নেই- হতে পারেনা। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি শাশ্বত-চিরন্তন। তিনিই একমাত্র আশ্রয়দাতা, ক্ষমাকারী, প্রার্থনা কবুলকারী ও বিপদ থেকে উদ্ধারকারী।

কুরআন মজীদের এই পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক আয়াত রয়েছে। সে আয়াতসমূহ একত্রে পড়ানো ও সূক্ষাতিসূক্ষ্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাঠদান আল্লাহ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও দৃঢ়প্রত্যয়ের সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট হতে পারে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ একটি আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারেঃ

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ

‘‘স্মরণ করো তোমার রব্ব যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি মানুষকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করব, যখন তাকে পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবয়ব দান করলাম এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দিলাম, তখন সকলেই-সবকিছুই তার জন্যে সিজদায় পতিত হন।’’ (সূরা সা–দঃ ৭১–৭২)

এ আয়াতের সাহায্যে আল্লাহ, মালায়িকা বা ফেরেশতা, কাদামাটি দিয়ে প্রথম মানুষটির সৃষ্টি, তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দেয়া এবং সবকিছুরই তার আনুগত্য স্বীকার সম্পর্কিত বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এ থেকে মানুষ সম্পর্কে এই জ্ঞান লাভ করা যায় যে, মানব দেহ মাটির মৌলিক উপাদানে তৈরী হলেও তা একান্তভাবে জড় পদার্থ নয়, তাতে রয়েছে আল্লাহর দেয়া বিশেষ রূহ-যা নিছক জীবন বা প্রাণই নয়-আত্মাও। তাই মানুষ জড় (Matter) ও চেতনা (Spirit) উভয়ের সমন্বিত এমন এক বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন সত্তা, যার আনুগত্য করতে- বরং সঠিক কথায় তার হাতে ব্যবহৃত হতে প্রস্তুত গোটা সৃষ্টিলোক। ফলে মানুষ সৃষ্টির জড়বাদী ধারণা সম্পূর্ণ বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ পাশ্চাত্যের মানব সম্পর্কিত ধারণা একান্তই ভুল। সেই সঙ্গে মানুষের আত্মাসর্বস্ব সৃষ্টির ধারণাও কিছুমাত্র সত্য নয়।

অনুরূপভাবে এই বিশ্বলোকে মানুষের প্রকৃত মর্যাদা আমরা নিঃসন্দেহে নির্ধারণ করতে পারি আল্লাহর ঘোষণা (আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে যাচ্ছি) থেকে। অর্থাৎ মানুষ দুনিয়ার অন্যান্য সব জীব-জন্তু-প্রাণীর মত লক্ষ্যহীন ও দায়িত্বহীন নয়- নয় কোন স্বেচ্ছাচারী সত্তা, বরং তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর এবং উন্নততর এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সে মর্যাদা হচ্ছে, এই পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুাযায়ী কার্যসম্পাদন করাই মানুষের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে সব কিছুই তার সহযোগী।

পরবর্তী বাক্যাংশ থেকে আমরা মানুষের প্রয়োজনীয় জ্ঞানের উৎস সম্পর্কেও জানতে পারি যে, সে জ্ঞান আল্লাহর দেয়া শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত, উত্তরকালে বা ওহীর মাধ্যমে সময়-সময়ে মানুষকে দান করা হয়েছে ফলে মানুষের জ্ঞানের উৎস দু’টি। একটি স্বভাবজাত বা বংশানুক্রমিক আর অপরটি ওহী।

মানুষের জীবন-লক্ষ্য সম্পর্কে আমরা স্থির-নিশ্চিত ধারণা গ্রহণ করতে পারি সূরা আয-যারিয়াতে ৬৫ নম্বর আয়াত থেকে। সেই সাথে মানুষের পরিণতি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি সূরা মরিয়মের শেষ তিন আয়াত থেকেঃ

إِن كُلُّ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آتِي الرَّحْمَٰنِ عَبْدًا لَّقَدْ أَحْصَاهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدًّا وَكُلُّهُمْ آتِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْدًا

‘‘আসমান ও জমিনে বসবাসকারী সকলেই মহান দয়াবানের সমীপে একান্ত দাস হিসেবেই আসবে। তিনি তাদের বেষ্টন করে রেখেছেন এবং তাদের ভালোভাবে গণনা করে রেখেছেন। আর তারা সকলেই কিয়ামতের দিন তার সমীপে একক ও নিঃসঙ্গভাবে আসবে।’’ (সূরা মরিয়ামঃ ৯৩–৯৫)

তাই ইসলামী শিক্ষার পাঠ্য-সূচীতে মানুষের ব্যক্তিগত-ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি শামিল থাকা উচিত। প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতার মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমিক ধারায় শামিল থাকতে হবে।

এ শিক্ষায় ব্যক্তি-স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব ও জবাবদিহির পূর্ণাঙ্গ ধারণার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জানাতে হবে, ভাল কি, মন্দ কি, হালাল কি, হারাম কি, কোন্ কাজ কিভাবে করলে পরকালে শান্তি বা শাস্তি হবে। এ ফলে তার মধ্যে চিন্তার স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ শক্তি ও বাছাই করার যোগ্যতা বাড়বে। তাদেরকে ভাল স্বভাব-চরিত্র এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কেও শিক্ষাদান জরুরী, যেন তারা এ ক্ষেত্রে উন্নত মানের শোভন ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। সুস্বাস্থ্য রক্ষার দিকেও তাদেরকে সচেতন বানাতে হবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরতে হবে। এ পর্যায়ে উল্লেখ্য আয়াতঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘‘হে ঈমানদার লোকেরা! এই মদ্য, জুয়া, আস্তানা ও পাশা- এ সবই না-পাক শয়তানী কাজ। তোমরা ইহা পরিহার কর। আশা করা যায় যে, তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে।’’ (সূরা মায়িদাঃ ৯০)

এই দৃষ্টিতে দুনিয়ার খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানবান ও সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি করতে হবে যে, আল্লাহ্ কর্তৃক নিষিদ্ধ খাদ্য-পানীয় ও ব্যবহার্য জিনিস দ্বারা মানুষ সাময়িকভাবে আনন্দ-স্ফূর্তি বা সুখ পেলেও পরিণামে তা মানব জীবনে নিয়ে আসে গভীর দুঃখ ও বেদনা, সামাজিকতার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে তিক্ততা, শত্রুতা ও বিবাদ-বিসম্বাদ।

শিক্ষার্থীদের চিন্তা স্বাধীনতা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং যুক্তিবিদ্যা শেখাতে হবে, যা নিহিত রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টিকর্মে। বিশ্বলোক, বিশ্বলোকে নিহিত প্রকাশমানত (Phenomenon), প্রকৃতিতে নিহিত রহস্য-জ্ঞান ও নিয়মাদি কুরআনের উপস্থাপনকে অনুসরণ করে তাদেরকে বোঝাতে হবে। বিশ্বলোক আল্লাহর কুদরাত, অনুগ্রহ ও মুজিযা কিভাবে কাজ করছে, সে বিষয়ে তাদের সচেতন বানাতে হবে। প্রকৃতিতে বিরাজিত আল্লাহর নিদর্শনাদিরও বিশদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকা আবশ্যক পাঠ্য-তালিকায়।

ইসলামী পাঠ্যতালিকা চিন্তা স্বাধীনতাকে উদ্বোধিত করবে। যখন তাকে ভালো-মন্দ ও হালাল-হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান পরিবেশন করা যাবে, তখন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সে নিজের জীবনকে সঠিক পথে চালাতে সক্ষম হবে। সে একজন দায়িত্ব-সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠতে পারবে। কাজেই বিবেক-বুদ্ধির দিক দিয়ে প্রতিটি মানুষকেই স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল বা পর-মুখাপেক্ষীহীন করে গড়ে তোলা এবং গড়ে উঠতে পূর্ণ সহযোগিতা দান একান্তই আবশ্যক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন