hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)

৮৪
সাহিত্যে প্রগতি
সাহিত্য চিরকালই প্রগতিশীল। প্রগতি সাহিত্যের মৌলিক ধর্ম-স্বাভাবিক প্রবণতা। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক-এক সময় এক-একজন দিক্পালের আবির্ভাব ঘটে, যিনি সাহিত্যকে নব ধারায় প্রবাহিত করেন। ফলে সাহিত্যে যেমন গতানুগতিকতা টিকতে পারে না, তেমনি থাকেনা স্থবিরতা ও অনগ্রসরতা। সাহিত্যে সৃষ্ট হয় নবতর রস ও প্রবাহ। কেননা কোন সাহিত্যিকই সাধারণভাবে প্রগতি-বিরোধী হন না। কাল ও প্রেক্ষিতের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ-বিকাশের সঙ্গে তাল রেখে নিত্য-নব উন্মেষিত ভাবধারাকে সম্বল করে তিনি সৃষ্টি করেন নবতর সাহিত্য। পদ্ধতি, স্টাইল ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে ভিন্নতা ও পাথর্ক্য সাহিত্যের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করে তোলে। ফলে সাহিত্য অতীতকে অনেক পশ্চাতে ফেলে সম্মুখের দিকে এগিয়ে যায় দ্রুত গতিতে। তাই সাহিত্যে প্রগতি অনস্বীকার্য।

তবে প্রগতি সম্পকির্ত ধারণা সব সময় একইভাবে অনড় ও স্থিতিশীল থাকেনা। তা চিরকালই পরিবতির্ত হয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও পরিবর্তিত হতে থাকবে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে আজ যেসব মূল্যমানের প্রশংসায় সমাজ উচ্চকণ্ঠ, আকামীকালকেই তা হতে পারে পরিত্যক্ত। সাহিত্যে যৌনতার চর্চা অতি প্রাচীন; কিন্ত তার সীমালঙ্ঘনমূলক বা অত্যধিক প্রয়োগ সুস্থ মন-মানসিকতার অনিবাযর্ভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে; ফলে ক্রমে তা সাহিত্যের অঙ্গন থেকে বিলীন হয়ে যায়, যেমন ফাল্গুনের ছোঁয়ায় গাছ থেকে ঝরে পড়ে পুরাতন পত্রপল্লব। তা কোন স্থায়ী মূল্যমানের ধারক হয়না বলে শ্রেয়বোধের তাড়নায় আপনা-আপনি খসে পড়তে বাধ্য হয়।

এক কালে ‘শিল্পের জন্যেই শিল্প’ এই দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল সাধারণভাবে কবি-সাহিত্যিকদের ‘মটো’। পরবর্তীকালে তা পরিত্যক্ত হয় এবং সে স্থান দখন করে নেয় ‘শিল্প জীবনের জন্যে’- এই আদর্শ। কিন্তু সূক্ষ্ণ বিচারে উভয় আদশর্ই অসম্পূর্ণ এবং অযথার্থ। কাযর্কারণের এই জগতে কোন জিনিসই নিজের ‘কারণ’ হতে পারেনা। প্রতিটি সাহিত্য-কর্ম অবশ্যই লক্ষ্যাভিসারী হয়ে থাকে- তা অনুভবযোগ্য হোক আর না-ই হোক। দ্বিতীয়ত বিশ্বলোকের হুবহু চিত্রাঙ্কন এবং ঘটনাবলীর যথাযথ বণর্নাকে কখনই সাহিত্য নামে অভিহিত করা যায় না। তাতে শিল্পীর নিজস্ব ভাবধারা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার প্রতিফলন একান্তই অনিবার্য। কোন পাঠকই ঘটনার যথাযথ প্রতিবেদনকে সহিত্যের যথাযথ মানে উন্নীত বলে স্বীকার করত রাজী হবেন না যতক্ষণ না তাতে সাহিত্যস্রষ্টার কল্পনার চিত্তাকর্ষক রং মিশ্রিত হয়। একজন সুসাহিত্যিক শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হতে পারেননা যে, ‘বস্তুটি কি’ বরং কি হওয়া উচিত বা কি হতে পারতো তা বলাও তাঁর নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন। এটা তাঁর গভীর মননশীলতা ও চিন্তাশীলতার বিশেষত্ব। অন্যকথায় সাহিত্য জীবনের শুধু দর্পনই নয়, তা জীবন-কাফেলার পথ-প্রদর্শকও। জীবনের গতির সাথে তাল রেখে চলাই তাঁর ধর্ম নয়, জীবনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বও তারই। নিছক বস্তুনিষ্ঠ রচনার প্রাচীরের ওপর আসীন হয়েই প্রগতি বিপ্লব বা পশ্চাদপদতার ছবি তোলা যেতে পারে না। সমাজের পরিবর্তনকামী সাহিত্যই জীবন্ত ও শাশ্বত।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, সৌন্দর্যবোধ, কল্পনাপ্রবণতা, ব্যবহারিকতা, বাস্তবতা ও সামষ্টিকতা একই সত্যের বিভিন্ন প্রকাশ মাত্র। এগুলোর সাযুজ্যই শিল্প বা সাহিত্যকে পূর্ণ রূপে ও উচ্চ মানে উন্নীত করতে পারঙ্গম। একজন সফল সাহিত্যিক বা শিল্পী আমাদের সৌন্দর্য-বোধকে শুধ চরিতার্থ করেন না, আমাদের চিন্তার রুচিশীলতা ও কর্মের প্রেরণাকেও গতিশীল রাখেন। আমরা যেমন ‘কাল’কে প্রভাবিত করি, তেমনি কালও প্রভাবিত হয় আমাদের দ্বারা। সফল সাহিত্যিক কাল-স্রোতে ভেসে যাওয়াতেই মনুষ্যত্বের সার্থকতা নিহিত বলে মনে করেন না; বরং কাল-স্রোতের গতি পরিবর্তন করে তাকে স্বনির্ধারিত লক্ষ্যপানে প্রবাহিত করাকে নিজের একটা বড় কর্তব্য বলেও মনে করেন।

চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে অতিশয় গুরুত্বের অধিকারী। স্বাধীনতা ব্যক্তির জন্মগত অধিকার, তা-ও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু স্বাধীনতার যথার্থ তাৎপর্য অনুধাবন এবং তার নীতিমালা ও রূপরেখা নির্ধারণ যার-তার কর্ম নয়। Freedom means resonsibility বা ‘স্বাধীনতার অর্থ দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়নতা’ একথা অবশ্যই স্বীকৃত।

এইদৃষ্টিতে বলা যায়, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও হৃদয়াবেগ প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রত্যেক সাহিত্যিকেরই মৌলিক অধিকার বিশেষ, একথা সত্য; কিন্তু তা একটা নিয়মতান্ত্রিকতা ও নৈতিকতার বিধান দ্বারা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। মানব জীবনে এমন সব অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রে ঘটে, যা পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ করা হলে আমাদের সৌন্দর্যবোধ ও সূক্ষ্ণ হৃদয়াবেগ নিঃসন্দেহে ক্ষুণ্ন ও আহত হবে। অতএব যে বক্তব্য কেবল পাশবিক কামনা-বাসনাকেই উত্তেজিত করে, তা কখনোই সার্থক ও স্থায়ী মূল্যমানসম্বলিত সাহিত্য পদবাচ্য হতে পারে না। কিন্তু তাই বলে সাহিত্যে যৌন-সম্পর্কের একদম প্রবেশাধিকার থাকবেনা, এমন কথা নয়। অনেক সময় রোমান্টিক গল্প, উপন্যাস বা কবিতায় যৌন-সম্পর্কের প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কেননা আমাদের জীবন-বৃক্ষের শিকড় যৌন কামনার মৃত্তিকা-গভীরে বিস্তীর্ণ হয়ে আছে। কিন্তু সাহিত্যে যৌন-সম্পর্ককে উপস্থাপন করতে হবে অত্যন্ত শালীন ও রুচিসম্মতভাবে, তার অশ্লীল ও নগ্নভাবে উপস্থাপন সাহিত্যের মান সংরক্ষণে কখনই সহায়ক হতে পারে না। [নরনারীর যৌন সম্পর্কের বিষয় পবিত্র কুরআনেও উল্লেখিত হয়েছে। সে উল্লেখ এতই শালীন ও শোভন যে, তা পাঠক চিত্তে কোনরূপ ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেনা। আমাদের সাহিত্য চর্চায়ও কুরআনের এই দৃষ্টিভঙ্গিই অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।– সম্পাদক]

আসলে মানব জীবনের অন্যান্য সব দিকের ন্যায় সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ঐতিহ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। ঐতিহ্যকে বাদ দিযে যে সাহিত্য, তা যেমন কালজয়ী হয়না, তেমনি তা মানুষের কোনরূপ কল্যাণ সাধনে কিংবা মানব মনে কোন মহৎ প্রেরণা ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতে বাধ্য। মানুষের ঐতিহ্য তার অস্তিত্ব ও ইতিহাসের মূলদর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তার অস্তিত্বের মূলদর্শন হলঃ মানুষ এই বিশ্বলোকে উদ্দেশ্যমূলক এক বিশেষ সৃষ্টি। এখানে তার বিশেষ মর্যাদা তার এই বিশেষ জন্ম-সত্যেরই স্বাভাবিক ফসল। কাজেই বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক সৃষ্টি হওয়ার কারণে সে উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে তার গোটা জীবনই নিবেদিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার সাহিত্য যখন সে উদ্দেশ্যের পরিপূরক হয়ে দেখা দিবে তখনই মানব সমাজে তা সাগ্রহে গৃহীত ও আদৃত হবে এবং গণ-মানুষের জন্যে অফুরন্ত কল্যাণ বয়ে আনবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে সাহিত্য মানুষের এ ভাবধারার পরিপোষক নয়, যে সাহিত্য মানুষকে হিংস্রতা পাশবিকতা বা লালসার প্রতিমূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করে, সমাজে নিয়ম-শৃংখলার পরিবর্তে উচ্ছৃংখলতা ও বিপর্যয়ের ইন্ধন যোগায়, তা মানবোপযোগী সাহিত্য হতে পারে না। যেসব রচনা মানুষের মধ্যে যৌন আবেগকে বল্গাহীন করার প্রয়াস পায়, যেসব কবিতা বা গল্প মানুষের স্বাভাবিক লজ্জাশীলতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলে, তাকে নাস্তিকতা ও খোদাদ্রোহিতায় উদ্বুদ্ধ করে, সে সাহিত্য মানুষের কল্যাণের সঠিক বাহন বলে স্বীকৃতি পেতে পারে না।

এই প্রেক্ষিতে সাহিত্যকে অতি সহজে এবং অনিবার্যভাবে দু’ভাগে ভাগ করতে হয়। একটি গঠনমূলক সাহিত্য আর অপরটি বিপর্যয়মূলক সাহিত্য। প্রথমটি মানব-প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে ইতিহাসে মানবতার বিরাট কল্যাণ সৃষ্টিকারী সাহিত্য রূপে চিহ্নিত এবং চিরস্থায়ী মূল্যমানসম্পন্ন আর দ্বিতীয় প্রকারের সাহিত্য যৌন উত্তেজক মাদকের ন্যায় ধ্বংসের কাজ করে এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে; মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি, সুস্থ মন-মানস, পরিচ্ছন্ন চিন্তাধারা এবং পরিশীলিত রুচিবোধকে ক্ষতবিক্ষত করে। তাই প্রথমোক্ত সাহিত্যের সাথে তার নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠতা খুবই স্বাভাবিক; কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের সাহিত্যের সাথে তার স্থায়ী কোন একাত্মতা অকল্পনীয়।

সাহিত্যের একটা সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকা একান্তই আবশ্যক। লক্ষ্য না থাকলে যে সাহিত্য সৃষ্টি হবে তা ঝরা পাতার মতই ক্ষয়িষ্ণু। বায়ুপ্রবাহে তা একদিক থেকে অন্য দিকে, ওপর থেকে নিচের দিকে তাড়িত হতে বাধ্য। তা বল্গাহীন অশ্বের মত যেদিকে ইচ্ছা উদ্দাম গতিতে ছুটতে শুরু করবে এবং যেখানে ইচ্ছা মুখ লাগিয়ে দিয়ে যা-ইচ্ছা গ্রাস করবে। তার যা ভালো লাগবে, তাতেই সে মন লাগাবে এবং তার প্রশংসায় চারদিক মুখরিত করে তুলবে। তা যেন পাল তোলা নৌকা-হাওয়ার গতিই তার মূল গতি। এই সাহিত্য মানুষকে কোন শাশ্বত মূল্যমান দিতে সম্পূর্ণ অক্ষম বলে তা বিস্মৃতির অতল তলে ডুবে যেতে বাধ্য।

বস্তুত সাহিত্য মানব জীবনের জন্যে অতীব মূল্যবান সম্পদ। সাহিত্য মানুষ ব সমাজের প্রতিবিম্বই শুধু নয়, তা মানুষের চরিত্রও। তাই প্রগতির নামে সাহিত্যকে কলূষিত করার অধিকার কারোরই থাকতে পারে না। কেননা সাহিত্যকে কলুষিত করার অর্থ মানব চরিত্রকে ধ্বংস করা।

বর্তমান সময়ে সাহিত্য কোন্ ভূমিকা পালন করছে তা বিচার করে দেখা একান্তই কর্তব্য। এখনকার সৃজনশীল সাহিত্য যদি বাস্তবিকই মানুষের জন্যে কোন কল্যাণময় অবদান রাখতে অক্ষম হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সেই দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা তো সাহিত্যিকদের দায়িত্ব। একথা সংশ্লিষ্ট সকলেরই স্মরণ করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন