hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১০০
ঘরের অভ্যন্তরে পর্দা
ঘরের অভ্যন্তরেও নারী-পুরুষের জন্যে পর্দার ব্যবস্থা রয়েছে। এ পর্যায়ে নারী-পুরুষের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতের একটি সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

বাবা, চাচা-মামা, নিজ সন্তান, সহোদর ভাই, ভাই-পো, বোন-পো, মুসলিম মহিলা ও দাসদাসীদের সাথে দেখা দেয়ার কোনো দোষ নেই।

এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা আলুসী লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা আলুসী লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ আয়াতে যাদের থেকে পর্দা করা ওয়াজিব নয়, তাদের কথা বলা হয়েছে।

লিখেছেনঃ

(আরবী)

বাহ্যত এর অর্থ হচ্ছে এদের পর্দা না করলে কোনো দোষ নেই।

মুজাহিদ বলেছেনঃ

(আরবী)

এর অর্থ এই যে, আয়াতে উদ্ধৃত ব্যক্তিদের সামনে মুখাবরণ উন্মুক্ত করলে ও সৌন্দর্যের অলংকারাদি জাহির করলে কোনো দোষ হবে না।

সূরা আন-নূর-এ একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতেঃ

(আরবী)

এবং মেয়েলোকেরা –তাদের স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, গর্ভজাত ছেলে-সন্তান, স্বামীর পুত্র, সহোদর ভাই, ভাই-পো, বোন-পো, বোন-পো, মেলা-মেশার মেয়েলোক, দাস, মেয়েদের প্রতি কোনো প্রয়োজন রাখে না। এমন সব পুরুষ এবং যেসব ছেলেপেলে এখনও মেয়েদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ও সচেতন হয়নি –এদের ছাড়া আর কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।

আয়াদের প্রত্যেকটি শব্দই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।

মেয়েরা তাদের নিজ নিজ স্বামীকে দেখা দিতে পারবে, নিজের রূপ-সৌন্দর্য দেখাতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, স্বামীর পক্ষে তার সমগ্র দেহকে –দেহের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা সম্পূর্ণ জায়েয। নারী রূপ-সৌন্দর্য যৌবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ও চরম লক্ষ্যই তাই। তারী তার স্বামীকে তা দেখাতে –দেখতে দিতে বাধ্য। দেখতে দিতে না চাইলে স্বামী বল প্রয়োগ করার অধিকার রাখে। যদিও স্ত্রীর যৌন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত কারো মতে অশোভন, কারো মতে মাকরূহ আর কারো মতে হারাম।

২. কেবল বাবাকেই নয়, বাবার বাবা, তার বাবার ভাই, মায়ের ভাই ইত্যাদিকেও দেখা দেয়া জায়েয। কেবল নিজের বাবা-দাদাই নয়, মায়ের বাবাকেও দেখা দিতে পারে। দুধ বাবাকেও দেখা দেয়া জায়েয। হযরত আয়েশার দুধবাপ ছিল আবূ কুয়াইস। সে হযরত আয়েশার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইরে তিনি বললেনঃ

(আরবী)

তাঁর সাথে দেখা দেয়ার ব্যাপারে রাসূলের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার আগে আমি তাঁকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেব না।

পরে রাসূরে করীম (ﷺ)-কে তাঁর কথা বলা হলে তিনি বলেনঃ

(আরবী)

হ্যাঁ, তাকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দাও, কেননা সে তো তোমার চাচা হয়। (বুখারী)

৩. স্বামীর পিতা –শ্বশুরকেও দেখা দেয়া জায়েয।

৪. নিজ গর্ভজাত ছেলে-সন্তান, তাদের ছেলে-সন্তান।

৫. আপন সহোদর ভাই, পিতার দিকে বৈমাত্রেয় ভাই, মায়ের দিকে বৈপিত্রেয় ভাই এবং দুধ-ভাইও তার মধ্যে শামিল।

৬. এসব ভাইয়ের ছেলে-সন্তান, তাদের সন্তান।

৭. বোনের ছেলে-সন্তান, তাদের সন্তান।

৮. সাধারণ মেলামেশার মেয়েলোক, যাদের সঙ্গে দিনরাত দেখা-সাক্ষাত হয়েই থাকে কিংবা যাদেরকে ঘরের ভিতরে কাজ-কর্ম করানোর উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। কাফির ও ফাসিক মেয়েদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করা মুসলিম মহিলাদের জন্যে জায়েয নয়। কেননা তাতে করে পর্দার মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে যিম্মী ও গায়র যিম্মীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যিম্মী মেয়েলোক মুসলিম মহিলাকে দেখতে পারে কিনা, এ সম্পর্কে দুটি মত রয়েছে। ইমাম গাযালীর মতে, অন্য মুসলিম মহিলার মতো যিম্মী মেয়েলোকও দেখতে পারে। আর ইমাম বগবীর মতে এ দেখা জায়েয নয়। ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেনঃ

(আরবী)

খেদমত করার সময় মুসলিম মহিলাদের দেহের যে অংশ সাধারণত প্রকাশ হয়ে পড়ে তা দেখা যিম্মী মেয়েলোকের পক্ষে হারাম, এ হচ্ছে অধিক সত্য ও সহীহ মত। তবে যিম্মী মেয়েলোকেরা নিজের মুনিব মহিলাকে দেখতে পারে। সহীহ হাদীসে উম্মুল মু’মিনীনের কাছে যিম্মী মেয়েলোকের অনুপ্রবেশের যে কথা উল্লিখিত যিম্মী মেয়েলোকেরা নিজের মুনিব মহিলাকে দেখতে পারে। সহীহ হাদীসে উম্মুল মু’মিনীনের কাছে যিম্মী মেয়েলোকের অনুপ্রবেশের যে কথা উল্লিখিত হয়েছে, তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, খেদমতের জন্যে যে অংশ প্রকাশ হয়ে পড়ে তা দেখা জায়েয।

ইমাম রাযী ও ইবনুল আরাবীর মতে যিম্মী মেয়েলোকও মুসলিম মহিলার মতোই। কুরআনের (আরবী) বলে সব মেয়েলোকই বোঝানো হয়েছে। কেননা মুসলিম মহিলাদের পক্ষে যিম্মী মেয়েলোকদের দেখা না দিয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ইবনুল আরাবী লিখেছেনঃ

(আরবী)

আমার বিবেনায় বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এই যে, সব মেয়েলোকদের সাথেই মুসলিম মেয়েরা দেখা-সাক্ষাত করতে পারে।

৯. দাস-দাসীদের সাথে দেখা-সাক্ষাত জায়েয, তারা কাফির হলেও নিষেধ নেই। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম শাফেয়ীর একটি কথা এই যে, মেয়ে-মালিকের দৃষ্টি ক্রীতদাস ভিন পুরুষদের মতই। সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রথমে বলেছিলেনঃ (আরবী) মেয়ে-মালিকের পক্ষে দেখা দেয়ার ব্যাপার ক্রীতদাসীদের মতোই। কিন্তু পরে তিনি তাঁর এ মত প্রত্যাহার করেছেন এবং বলেছেনঃ

(আরবী)

সূরা নূর-এর আয়াত থেকে তোমাদের ভুল ধারণা হওয়া উচিত নয়, কেননা তা হচ্ছে ক্রীতদাসীদের সম্পর্কে, ক্রীতদাসদের সম্পর্কে নয়।

আর এর কারণস্বরূপ তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

ক্রীতদাসেরা তো বলদের ন্যায়। মেয়ে-মালিকের তারা স্বামীও নয়, মুহাররমও নয় অথচ যৌন উত্তেজনার উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক, আর মোটামুটিভবে এ নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ে তো হতেই পারে।

এতদসত্ত্বেও কুরআনে ব্যবহৃত শব্দ স্পষ্টভাবে পুরুষ স্ত্রী –অন্য কথায় দাস-দাসী –উভয়ের সাথেই সমানভাবে দেখা-সাক্ষঅতের অনুমতি প্রমাণ করে। এ পর্যায়ে হযরত আনাস বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ্য। একদা রাসূলে করীম (ﷺ) একটি ক্রীতদাসসহ হযরত ফাতিমার ঘরে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখতে পেলেনঃ ফাতিমা এমন একখানি কাপড় পড়ে আছে, যা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খুলে যায় আর পা ঢাকা হলে মাথা অনাবৃত হয়ে পড়ে। তখন নবী করীম (ﷺ) হযরত ফাতিমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ

(আরবী))

তোমার কোনো অসুবিধে নেই। এ দাসটি হচ্ছে তোমার বাবা তুল্য এবং তোমার গোলাম।

এ থেকে মেয়ে-মালিকের পক্ষে তার ক্রীতদাসকে দেখা দেয়ায় কোনো দোষ নেই বলেই স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে।

১০. মেয়েদের প্রতি যেসব পুরুষ কোনো প্রয়োজন রাখে না –এমন সব অধীনস্থ লোকের দেখা দেয়াও জায়েয। এরা হচ্ছে সে সব লোক, যারা ঘরের বাড়তি খাবার খেতে আসে, কেননা তারা নিজেরা উপার্জন করতে অক্ষম। এরা মেয়েদের দিকে কোনো যৌন প্রয়োজন বোধ করে না, বরং কাজকর্ম করে দেয়, কথাবার্তা শোনে। এরা হচ্ছে বিগত যৌবন বৃদ্ধ, আধাবৃদ্ধ লোক।

মুজাহিদ বলেছেনঃ

(আরবী)

মেয়েদের প্রতি প্রয়োজন রাখে না –এমন পুরুষ হচ্ছে তারা, যারা মেয়েদের ব্যাপারই বুঝে না, জানে না এমন সোজা-সোজা ও সাদাসিধে লোক।

১১. সেসব ছেলেপেলে, যারা এখনো মেয়েলোকদের যৌনত্বের কোনো বোধ লাভ করেনি, যাদের মধ্যে যৌন বোধ এখনো জাগ্রত হয়নি, যে সব কিশোরের মনে নারীদের প্রতি এখনো কোনো কৌতুহল ও ঔৎসুক্য জাগেনি, তারাও এর মধ্যে শামিল।

এসব পুরুষ লোকের সঙ্গে পর্দানশীল মেয়েরাও অবাধে দেখা সাক্ষাত করতে পারে, এদের সামনে সাজ-সজ্জা ও প্রসাধন করেও আসতে পারে। শরীয়তে তার পূর্ণ ও স্পষ্ট অনুমতি রয়েছে। কেননা পর্দানশীল মেয়েদেরও এ ধরনের পুরুষদের সাথে দিন-রাত দেখা-সাক্ষাতের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয়ত এ ধরনের পুরুষদের কাছ থেকে মেয়েদের কোনো নৈতিক বিপর্যয় –কোনো অঘটন ঘটার আশংকা নেই বললেও চলে। আর আশংকা না থাকারও কারণ এই যে, এরা হচ্ছে নিতান্ত আপন লোক। আত্মীয়তা, নৈকট্য, রক্ত সম্পর্ক ইত্যাদি বিপর্যয়ের পথের প্রধানতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এদের জণ্যে সাধারণত খোলা থাকে মেয়েদের যেসব দেহাঙ্গ, তা দেখায় কোনো দোষ নেই, আর তা হচ্ছে মুখমণ্ডল, মাথা, পা-হাটু, দুই হাত। কিন্তু এদের জন্যেও বুক, পিঠ ও পেট এবং নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত এলাকার কিছু অংশ দেখা আদৌ জায়েয নয়। কেননা এসব অঙ্গ সাধারণত উন্মুক্ত থাকে না, বস্ত্রাবৃত থাকাই স্বাভাবিক এবং এসব অঙ্গই প্রধানত যৌন আবেদনকারী।

এ ব্যবস্থা দ্বারা মেয়েদের জন্যে একটি পরিবেষ্টনী নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো। সেখানে তারা স্বাধীনভাবে ও দ্বিধা-সংকোচহীন হয়ে বিচরণ করতে পারে। বাস্তব জীবনের প্রয়োজনের তাগিত যেসব পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাত একান্তই অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের পথে ইসলামী শরীয়তে কোনোই বাধা আরোপ করা হয়নি বরং অবাধ অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর বাইরের পুরুষদের সাথে দেখা-সাক্ষাত আদৌ জায়েয নয়; সাধারণত চার কোনো প্রয়োজনও দেখা দেয় না। আর অপ্রয়োজনীয় দেখা-সাক্ষাত নারী-পুরষের জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এজন্যে তা বর্জন করা প্রত্যেক ঈমানদার মহিলার কাছেই তার ঈমান ও ইসলামী বিধানের ঐকান্তিক দাবি।

মেয়ে-পুরুষদের এ পর্দা রক্ষার্থেই সাধারণ পুরুষদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন আগাম জানান না দিয়ে অপর কারো ঘরে প্রবেশ না করে। বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের ঘর ছাড়া অপর লোকের ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের আগমন সম্পপের্ক পরিচিতি করিয়ে নেবে এবং ঘরের লোকদের প্রতি সালাম পাঠাবে। এ নীতি অবলম্বন করা তোমাদের জন্যে কল্যাণবহ, সম্ভবত তোমরা এ উপদেশ গ্রহণ করবে ও এ অনুযায়ী কাজ করবে। 

এ আয়াত নাযিল হওয়ার উপলক্ষ এই ছিল যে, একজন মহিলা সাহাবী রাসূলে করীম (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হয়ে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আমার ঘরে এমন অবস্থায় থাকি যে, তখন আমাকে সেই অবস্থায় কেউ দেখতে পায় তা আমি মোটেই পছন্দ করিনে –সে আমার ছেলে-সন্তানই হোক কিংবা পিতা, অথচ এ অবস্তায়ও তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে। এখন আমি কি করব? এরপরই এ আয়াতটি নাযিল হয়। বস্তুত আয়াতটিতে মুসলিম নারী-পুরুষের পরস্পরের ঘরে প্রবেশ করার প্রসঙ্গে এক স্থায়ী নিয়ম পেশ করা হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের ঘরে সাধারণত খোলামেলা অবস্থায়ই থাকে। ঘরে প্রবেশ করার তো কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।। কেননা বিনানুমতিতে ও আগাম জানান না দিয়ে কেউ যদি কারো ঘরে প্রবেশ করে তবে ঘরের মেয়েদেরকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখা, তাদের দেহের যৌন অঙ্গের ওপর নজর পড়ে যাওয়া খুবই সম্ভব। তাদের অঙ্গে চোখাচোখি হতে পারে। তাদের রূপ-যৌবন দেখে পুরুষ দর্শকের মনে যৌন লালসার আগুন জ্বলে ওঠতে পারে। আর তারই পরিণামে এ মেয়ে-পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দিতে পারে। মেয়েদের যৌন অঙ্গ ঘরের আপন লোকদের দৃষ্টি থেকে এবং তাদের রূপ-যৌবন ভিন পুরুষের নজর থেকে বাঁবাচার উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা পেশ করা হয়েছে।

জাহিলিয়াতের যুগে এমন হতো যে, কারো ঘরের দুয়ারে গিয়ে আওয়াজ দিয়েই টপ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করত, মেয়েদেরকে সামলে নেবারও সময় দেয়া হতো না। ফলে কখনো ঘরের মেয়ে পুরুষকে একই শয্যায় কাপড় মুড়ি দেয়া অবস্থায় দেখতে পেত, মেয়েদেরকে দেখত অসংবৃত বস্ত্রে। এজন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ

(আরবী)

তোমাদেরকে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর যদি তোমাদেরকে ফিরে যেতে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই ফিরে যাবে। এ হচ্ছে তোমাদের জন্যে অধিক পবিত্রতর নীতি। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত রয়েছেন।

হযরত আনাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

হে প্রিয় পুত্র, তুমি যখন তোমার ঘরের লোকদের সামনে যেতে চাইবে, তখন বাইরে থেকে সালাম করো। এ সালাম করা তোমার ও তোমার ঘরের লোকদের পক্ষে বড়ই বরকতের কারণ হবে।

কারো ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, না প্রথমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে, এ নিয়ে দু’রকমের মত পাওয়া যায়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রথমে অনুমতি চাইবে, পরে সালাম দেবে। কিন্তু একথা ভিত্তিহীন। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই যে প্রথমে তাই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কুরআনে তো কি কি করতে হবে তা এক সঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে। এখানে পূর্বাপরের বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই। বিশেষত বিশুদ্ধ হাদীসে প্রথমে সালাম করার ওপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

কালদা ইবনে হাম্বল (রা) বলেনঃ আমি রাসূলের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু প্রথমে সালাম করিনি বলে অনুমতিও পাইনি। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ

(আরবী)

ফিরে যাও, তারপর এসে প্রথমে বলো আসসালামু আলাইকুম, তার পরে প্রবেশের অনুমতি চাও।

হযরত জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

যে লোক প্রথমে সালাম করেনি, তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিও না।

হযরত জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী) –কথা বলার পূর্বে সালাম দাও।

হযরত আবূ মূসা আশ’আরী ও হুযায়ফা (রা) বলেছেনঃ

(আরবী)

মুহাররম মেয়েলোকদের কাছে যেতে হলেও প্রথমে অনুমতি চাইতে হবে।

এক ব্যক্তি রাসূলে করীম (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ

(আরবী) –আমার মায়ের ঘরে যেতে হলেও কি আমি অনুমতি চাইব?

রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ অবশ্যই। সে লোকটি বললঃ আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি –তবুও? রাসূল (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অনুমতি চাইবে। সেই ব্যক্তি বললঃ আমি তো তার খাদেম। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ

(আরবী)

অবশ্যই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাইবে, তুমি কি তোমারমাকে ন্যাংটা অবস্থায় দেখতে চাও –তা-ই অপছন্দ করো?

তার মানে, অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মাটে ন্যাংটা অবস্থায় দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম করতে হবে এবং পরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হবে। এ ফিরে যাওয়া অধিক ভালো, সম্মানজনক প্রবেশের জন্যেকাতর অনুনয়-বিনয় করার হীনতা থেকে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হাদীসের ইলম লাভের জন্যে কোনো কোনো আনসারীর ঘরের দ্বারদেশে গিয়ে বসে থাকতেন, ঘরের মালিক বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি প্রবেশের অনুমতি চাইতেন না। এ ছিল উস্তাদের প্রতি ছাত্রের বিশেষ আদব, শালীনতা।

কারো বাড়ির সামনে গিয়ে প্রবেশ-অনুমতির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে দরজার ঠিক সোজাসুজি দাঁড়ানোও সমীচীন নয়। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে নজর করতেও চেষ্টা করবে না। নবী করীম (ﷺ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর বলেনঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) যখন কারো বাড়ি বা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেন, তখন অবশ্যই দরজার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন না। বরং দরজার ডান কিংবা বাম পাশে সরে দাঁড়াতেন এবং সালাম করতেন।

এক ব্যক্তি রাসূলে করীমের বিশেষ কক্ষপথে মাথা উঁচু করে তাকালে রাসূলে করীম (ﷺ) তখন ভিতরে ছিলেন এবং তাঁর হাতে লৌহ নির্মিত চাকুর মতো একটি জিনিস ছিল। তখন তিনি বললেনঃ

(আরবী)

এ ব্যক্তি বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখবে তা আগে জানতে পারলে আমি আমার হাতের এ জিনিসটি দ্বারা তার চোখ ফুটিয়ে দিতাম। এ কথা তো বোঝা উচিত যে, এ চোখের দৃষ্টি বাঁচানো আর তা থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যেই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাওয়ার রীতি করে দেয়া হয়েছে।

এ সমএর্ক হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে স্পষ্ট, আরো কঠোর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

কেউ যদি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায় আর তুমি যদি পাথর মেরে তার চোখ ফুটিয়ে দাও, তাহলে তাতে তোমার কোনো দোষ হবে না।

অনুমতি না পাওয়া গেলে কিংবা ঘরে কোনো পুরুষ লোক উপস্থিত নেইবলে যদি ঘর থেকে চলে যেতে বলা হয় তাহলে অনুমতি প্রার্থনাকারীকে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। তার সেখানে আরো দাঁড়ানো এবং কাতর কণ্ঠে অনুমতি চাইতে থাকা সম্পূর্ণ গর্হিত কাজ।

তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলেই এরূপ করতে হবে। হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী একবার হযরত উমর ফারূকের দাওয়াত পেয়ে তাঁর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনবার সালাম করার পরও কোনো জবাব না পাওয়ার কারণে তিনি ফিরে চলে গেলেন। পরে সাক্ষাত হলে হযরত উমর ফারূক বললেনঃ

(আরবী) –তোমাকে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তুমি আমার ঘরে আসলে না কেন?

তিনি বললেনঃ

(আরবী)

আমি তো এসেছিলাম, আপনার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনবার সালামও করেছিলাম। কিন্তু কারো কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি ফিরে চলে এসেছি। কেননা নবী করীম (ﷺ) আমাকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কারো ঘরে যাওয়ার জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েও না পেলে সে যেন ফিরে যায়। (বুখারী, মুসলিম)

ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ

(আরবী)

তিনবার সালাম করার মধ্যে প্রথমবার হলো তার আগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়বার সালাম প্রবেশ অনুমতি লাভের জন্যে এবং তৃতীয়বার হচ্ছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা।

কেননা তৃতীয়বার সালাম দেয়ার পরও ঘরের ভেতর থেকে কারো জবাব না আসা সত্যই প্রমাণ করে যে,ঘরে কেউ নেই, অন্তত ঘরে এমন কোনো পুরুষ নেই, যে তার সালামের জবাব দিতে পারে।

আর যদি কেউ ধৈর্য ধরে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়েই থাকতে চায়, তবে তারও অনুমতি আছে, কিন্তু শর্ত এই যে, দুয়ারে দাঁড়িয়েই অবিশ্রান্তভাবে ডাকা-ডাকি ও চিল্লচিল্লি করতে থাকতে পারবে না। একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশেঃ

(আরবী)

তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষায় থাকত যতক্ষণ না তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছ, তাহলে তাদের জন্যে খুবই কল্যাণকর হতো।

আয়াতটি যদিও বিশেষভাবে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর প্রসঙ্গে; কিন্তু এর আবেদন ও প্রয়োজন সাধারণ। কোনো কোনো কিতাবে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) –যিনি ইসলামের বিষয়ে মস্তবড় মনীষী ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন –হযরত উবাই ইবনে কা’আবের বাড়িতে কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করতেন। তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে ডাক দিতেন না, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন না। যতক্ষণ না হযরত উবাই নিজ ইচ্ছেমতো ঘর থেকে বের হতেন, ততক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে থাকতেন। (আরবী)

পুরুষ উপস্থিত নেই –এমন ঘরের মেয়েদের কাছ থেকে যদি কোনো সাধারণ দরকারী জিনিস পেতে হয়; কিংবা একান্তই জরুরী কোনো কথা, কোনো সংবাদ জানতে হয়, তাহলে পর্দার আড়ালে বাইরে দাঁড়িয়েই তাঁদের নিকট চাইবে। বস্তুত এ নীতি তোমাদের ও তাদের দিলের পবিত্রতা রক্ষার পক্ষে অধিকতর উপযোগী, অনুকূল।

আয়াতটি যদিও স্পষ্ট রাসূলে করীমের বেগমদের সম্পর্কে অবতীর্ণ এবং এ নির্দেশও বিশেষভাবে রাসূলের বেগমদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু এ আয়াতেরও একটি সাধারণ আবেদন রয়েছে এবং এ নির্দেশও সাধারণ মুসলিম সমাজের মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। কেননা, তাদের কাছ থেকে কিছু পেতে হলেও তো সে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়েই চাইতে হবে এবং বিনানুমতিতে তাদের ঘরেও প্রবেশ করা যাবে না।

উপরের উদ্ধৃত নির্দেশসমূহ পুরুষদের লক্ষ্য করেই বর্ণিত হয়েছে; কিন্তু তাই বলে মেয়েরা তার বাইরে নয়, তাদের পক্ষে এর কোনোটিই নয় লংঘনীয়। মেয়েদের লক্ষ্য করে আরো অতিরিক্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন মেয়েরা তা পালন করে নিজদেদের পরপুরুষের দৃষ্টি ও আকর্ষণের পংকিলতা থেকে পূর্ণমাত্রায় রক্ষা করতে পারে।

মেয়েদের পক্ষে যদি বাইরের পুরুষদের সাথে কথা বলা একান্তই জরুরী হয়ে পড়ে এবং তা না বলে কোনো উপায়ই না থাকে, তাহলে কথা বলতে হবে বৈ কি; কিন্তু সেজন্যেও কিছুটা স্পষ্ট নিয়ম-নীতি রয়েছে, যা লংঘন করা কোনো ঈমানদার মহিলার পক্ষেই জায়েয নয়।

কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

তোমরা যদি সত্যিই আল্লাহ ভীরু হয়ে থাক, তাহলে কস্মিনকালেও নিম্নস্বরে কথা বলবে না। কেননা সেরূপ কথা বললে রোগগ্রস্ত মনের লোক লোভী ও লালসা-কাতর হয়ে পড়বে। আর তোমরা প্রচলিত ভালো কথাই বলবেঃ

‘নিম্নস্বরে কথা বলবে না’ মানেঃ

(আরবী)

তোমাদের কথাকে বিনয় নম্রতাপূর্ণ ও নারীসুলভ কোমল ও নরম করে বলবে না, যেমন করে সংশয়পূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন ও চরিত্রহীনা মেয়েলোকেরা বলে থাকে।

কেননা এ ধরনের কথা শুনলে লালসাকাতর ব্যক্তিরা খুবই আশাবাদী হয়ে পড়ে। তাদের মনে মনে এ লোভ জাগে যে, হয়ত এর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে। কেবল মেয়েদেরই নয়, পুরুষদেরও অনুরূপ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিহায়া কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) পুরুষকে তার নিজের স্ত্রী ছাড়া ভিন মেয়েলোকের খুব নরম সুরে ও লালসা পিচ্ছিল কণ্ঠস্বরে কথা বলতে নিষেধ করেছেন, যে কথা শুনে সেই মেয়েলোকের মনে কোনো লালসা জাগতে পারে।

‘মানসিক রোগাক্রান্ত লোকেরা লালসাকাতর হতে পারে’ –একথা বলার বিশেষ কারণ হচ্ছে এই যে, ভিন মেয়েলোকের কাছ থেকে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন সম্ভবনার আশা করা কেবল এ ধরনের লোকদের পক্ষেই সম্ভব। ঈমানদার লোক কখনো এরূপ হয় না।

(আরবী)

কেননা কামিল ঈমানদার ব্যক্তির দিল ঈমানের প্রভাবে শান্ত-তৃপ্ত-সমাহিত। সে সব সময় আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণাবলী দেখতে পায় –মনে রাখে। ফলে সে আল্লাহর হারাম করা কোনো কিছু পেতে লোভ করেনা। কিন্তু যার ঈমান দুর্বল, যার দিলে মুনাফিকী রয়েছে, সে-ই কেবল হারাম জিনিসের প্রতি লোভাতুর হয়ে থাকে।

কিন্তু যে মেয়েলোকের সাথে কথা বলা হচ্ছে, সে যদি স্পষ্ট ভাষায় ও অকাট্য শব্দে ও স্বরে কাটাকাটিভাবে জরুরী কথা কয়টি বলে দেয়, তাহলে এ মানসিক রোগাক্রান্ত লোকেরা লোভাতুর হবে না, তারা নিরাশ হয়েই চলে যেতে বাধ্য হবে। আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ

(আরবী)

লোকদের সাথে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর মিহি করে বলো না। যেমন সন্দেহপূর্ণ চরিত্রের মেয়েরা করে থাকে। কেননা এ ধরনের কথা বলাই অনেক সময় বিরাট নৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে থাকে।

শয়তান প্রকৃতির ও চরিত্রহীন লোকেরা নারী শিকারে বের হয়ে সাধারণত সেসব জায়গায়ই ঢু মারে, যেখান থেকে কিছুটা সুযোগ লাভের সম্ভাবনা মনে হয়। আর এ উদ্দেশ্যে স্বামী কিংবা বাড়ির পুরুষদের অনুপস্থিতি তারা মহা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। নারী শিকারীর এ ধরনের মৃগয়া কেবল সেখানেই সার্থক হয়ে থাকে, যেখানে নারী নিজে দুর্বলমনা, প্রতিরোধহীন, যে শিকার হবার জন্যে –পর পুরুষের হাতে ধরা দেবার জন্যে কায়মনে প্রস্তুত হয়েই থাকে। নারীদেরকে সাবধান ও সতর্ক করে তোলবার জন্যেই আল্লাহর এ নির্দেশবাণী অবতীর্ণ হয়েছে। অপরদিকে সাধারণভাবে সব পুরুষকেই রাসূলে করীম (ﷺ) স্বামী বা বাড়ির পুরুষের অনুপস্থিতিতে ঘরের মেয়েদের সাথে কথা বলতেই নিষেধ করেছেন। হযরত আমর ইবনুল আস (রা) বর্ণনা করেছেনঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) মেয়েলোকদের সাথে তাদের স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

মেয়েরা যদি ভিন পুরুষের সাথে কতা বলতে বাধ্যই হয়, না বলে যদি কোনো উপায়ই না থাকে, তাহলে কুরআনের নির্দেশ হচ্ছেঃ

(আরবী) –খুব ভাল ও প্রচলিত ধরনের কথা বলবে।

এ আয়াতাংশের তাফসীরে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ

(আরবী)

তারা বলবে সাধারণভাবে লোকদের কাছে পরিচিত ও প্রচলিত কথা, যার মধ্যে সন্দেহ-সংশয়ের লেশমাত্র থাকবে না এবং যা হবে শরীয়তের রীতিনীতি অনুযায়ী, যে কথা শুনে শ্রোতা অপছন্দও কিচু করবে না এবং পাপী ও চরিত্রহীন লোকেরা অবৈধ সম্পর্কের লোভে লালায়িতও হবে না।

সে সঙ্গে একথাও মনে রাখা আবশ্যক যে, মেয়েদের সাধারণ কথাবার্তা খুবই নিম্নস্বরে হওয়া বাঞ্চনীয়। উচ্চৈস্বরে বা তীব্র কণ্ঠে কথা বলা মেয়েদের শোভা পায় না। দ্বিতীয়ত উচ্চৈস্বরে কথা বললে দূরের লোকের পর্যন্ত তার কথা শুনতে পাবে। পূর্বোক্ত আয়াতেরই ব্যাখ্যায় আল্লামা আবূ বকর আল-জাসসাস লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, মেয়েদের কন্ঠস্বর উচ্চ হবে না, অন্য লোকরা তাদের কণ্ঠস্বর শুতনে পাবে না –এই হচ্ছে মেয়েদের জন্যে অতি উত্তম নীতি।

বস্তুত একথা ভুল যেতে পারে না যে, মেয়েদের শরীরের ন্যায় তাদের কণ্ঠস্বরও পর্দায় রাখতে হবে। দেহকে যেমন ভিন পুরুষের সামনে অনাবৃত করা যায় না, কণ্ঠস্বরকেও তেমনি ভিন পুরুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করানো যায় না। ইমাম ইবনুল হাম্মাম বলেছেনঃ

(আরবী) –নিশ্চয়ই মেয়েলোকের সুরেলা কন্ঠস্বর ভিন পুরুষ থেকে লুকোবার জিনিস। ঠিক এজন্যেই নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

নামাযে ইমামের ভুল হলে সেই জামা’আতে শরীক পুরুষেরা তাকবীর বলবে আর মেয়েরা হাত মেরে শব্দ করবে।

এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, মেয়েদের কণ্ঠস্বর অবশ্য গোপনীয়, ভিন পুরুষ থেকে তা অবশ্যই লুকোতে হবে। (আবরী)

এরই ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, মেয়েরা নামাযে যদি উচ্চৈস্বরে কুরআন পাঠ করে তবে তাতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। (আরবী)

শুধু কণ্ঠস্বরই নয়, মেয়েদের অলংকারাদির ঝংকারও ভিন পুরুষদের কর্ণকুহর থেকে গোপন করতে হবে। কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

এবং তারা যেন নিজেদের পা মাঠির ওপর শক্ত করে না ফেলে, কেননা তাতে করে তাদের গোপনীয় অলংকারাদির ঝংকার শুনিয়ে দেয়া হবে।

আর জাহিলিয়াতের যুগে মেয়েরা পায়ে পাথরকুচি ভরে মল পরত আর তারা যখন চলাফেরা করত, তখন শক্ত করে মাটিতে পা ফেলত। এতে পা ঝংকার দিয়ে উঠত। এ আয়াতে তা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

ইমাম বায়যাবী লিখেছেনঃ

(আরবী)

অলংকারাদি জাহির করার ব্যাপারে একটা পূর্ণমাত্রার নিষেধ এবং মেয়েদের কণ্ঠস্বর উচ্চ করা যে নিষেধ, তাও এ থেকে প্রমাণিত।

কেননা অলংকারের ঝংকার শুনতে পেলেও ভিন পুরুসের মনে অতি সহজেই যৌন আকর্ষণ জেগে ওঠে। তাই নিখুঁত পর্দা রক্ষার জন্যে অলংকারের ঝংকারও পরপুরুষ থেকে লুকোতে হবে। আল্লামা যামাখশারী এ আয়াতের ভিত্তিতে লিখেছেনঃ

(আরবী)

মেয়েদেরকে যখন অলংকারের শব্দ জাহির করতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন জানা গেল যে, অলংকার ব্যবহারের অঙ্গসমূহ গোপন করা আরো বেশি করে নিষিদ্ধ হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন