মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
উপরে পিতামাতার প্রতি সন্তানের হক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কিন্তু ইসলামে যেহেতু কোনো ক্ষেত্রেই একতরফা হক ধার্য করা হয়নি বরং সেই সঙ্গে অন্যদের প্রতি কর্তব্যের কথাও বলা হয়েছে, তাই কেবল পিতামাতার ওপরই সন্তানের হক নেই, সন্তানের ওপরও রযেছে পিতামাতার হক এবং এ হক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ –এতদূর গুরত্বপূর্ণ যে, কুরআন মজীদে এ হকের স্থান হচ্ছে মানুষের ওপর আল্লাহর হকের পরে-পরেই।
সূরা বনী ইসরাঈলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
আদেশ করেছেন –ফয়সালা করে দিয়েছেন –তোমাদের আল্লাহ যে, তোমরা কেবল সেই আল্লাহ ছাড়া আর কারোই বন্দেগী ও দাসত্ব করবে না। আর পিতামাতার সাথে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করবে। তাদের একজন বা দুইজনই যদি তোমাদের কাছে বার্ধক্যে পৌঁছায় তাহলে তখন তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ভৎসনা করো না। বরং তাদের জন্যে সম্মানজনক কথাই বলো। আর তাদের দুজনার জন্যেই দো’আ করো এই বলে যে, হে পরোয়ারদেগার, আমার পিতামাতার প্রতি রহমত নাযিল করো, যেমন করে তারা দুজনই আমাকে আমার ছোট অবস্থায় লালন-পালন করেছে।
এ আয়াত প্রথমে তওহীদ –আল্লাহকে সর্বতোভাবে এক ও লা-শরীক বলে স্বীকার করার নির্দেশ এবং এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর একবিন্দু বন্দেগী করতে সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই এবং পরে পরেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করার। এ দুটো নির্দেশ এক সঙ্গে ও পরপর দেয়ার মানেই এই যে, প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও পিতামাতা দুজনেরই বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ও লালন-পালনকারী তো আল্লাহ এবং বান্দার ওপর সর্বপ্রথম হক তাঁরই ধার্য হবে। কিন্তু আল্লাহ যেহেতু এ কাজ সরাসরি নিজে করেন না, করেন পিতামাতার মাধ্যমে, কাজেই বান্দার ওপর আল্লাহর হকের পরপরই পিতামাতার হক ধার্য হবে।
অতঃপর পিতামাতার হক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ পিতামাতা দুজনই কিংবা তাদের একজনও যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন সন্তান যেন তাঁকে বা তাঁদের দুর্বহ বোঝা বলে মনে না করে এবং তাদের সাথে কথাবার্তা ও ব্যবহারেও যেন কোনো অনমনীয় মনোভাব প্রকাশ না পায়। তাঁদের মনে কোনোরূপ কষ্ট দেয়া চলবে না, তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না যার ফলে তাঁদের মনে কষ্ট বা আঘাত লাগতে পারে। এমন কথাও বলা যাবে না, যাতে করে মনে ব্যাথা পেয়ে বলে উঠবে ‘উহ’। পক্ষান্তরে সন্তানও যেন পিতামাতার কোনো কাজে, কথায় ও ব্যবহারে ‘উহ’ করে না ওঠে, মন আঘাত অনুভব যেন না করে। তেমন কিছু ঘটলেও তা মনে স্থান দেবে না। কোনোরূপ বিরক্তি প্রকাশ করবে না, কোনোরূপ অপমানকর বা বেআদবী সূচক আচরণ তাঁদের প্রতি প্রদর্শন করবে না।
এখানে যেসব কাজ না করতে বলা হয়েছে, কুরআন মজীদ কেবল এ নেতিবাচক কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি –এতটুকু বলাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়নি, বরং ইতিবাচক কতগুলো নির্দিষ্ট কাজের নির্দেশও দিয়েছে। বলেছেঃ তাঁদের জন্যে সম্মানজনক কথা বলো, তাঁদের প্রতি বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করো, তাঁদের খেদমতের জন্য বিনয়-নম্রতা মিশ্রিত দু’খানি হাত নিয়োজিত করে দাও। সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেছেনঃ পিতামাতার সাথে কথা বলোঃ
(আরবী)
যেমন করে অপরাধী ক্রীতদাস কথা বলে রুঢ় ভাষী মনিবের সামনে।
আর মুজাহিদ বলেছেনঃ
(আরবী)
পিতামাতা তোমার সামনে বার্ধক্যে পৌঁছলে তাঁদেরকে ময়লার মধ্যে ফেলে রাখবে না এবং যখন তাদের পায়খানা-পেশাব সাফ করবে তখনো তাঁদের প্রতি কোনোরূপ ক্ষোভ দেখাবে না, অপমানকর কথা বলবে না –যেমন করে তাঁরা তোমার শিশু অবস্থায় তোমার পেশাব-পায়খানা সাফ করত, ঠিক তেমনি দরদ দিয়ে করবে।
এরপর বলা হয়েছেঃ পিতামাতার খেদমতের জন্যে তোমাদের বিনয়ের হাত বিছিয়ে দাও। মানে সব সময় বিনয় সহকারে তাদের খেদমতে লেগে থাকো। কোনো সময়ই তা ত্যাগ করো না। তা থেকে বিরত থেকো না। যদি কিছু খেদমত করতে পার, তবে সেজন্যে মনে কোনো গৌরব অহংকার বোধ এবং পিতামাতার ওপর অনুগ্রহ দেকাবার চেষ্টা করো না, বরং মনে অনুভব করতে থাকো যে, যা কিছু খেদমত করছ, তা যথেষ্ট নয়, আরো বেশি খেদমতের প্রয়োজন এবং এ তোমার কর্তব্য। আর তুমি এ খেদমত করে পিতামাতার প্রতি কোনো অনুগ্রহ করছ না, করছ তোমার কর্তব্য পালন। আর তাতেও থেকে যাচ্ছে অসম্পূর্ণতা, থেকে যাচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি। ঠিক যেমনটি খেদমত হওয়া উচিত, তা যেন হচ্ছে না, হতে পারছে না, এমনি একটি অনুভূতি থাকাই উচিত। তোমার মনে জাগ্রত থাকবে তাঁদের অপরিসীম স্নেহ-যত্নের কথা এবং তাঁদের বার্ধক্যজনিত অক্ষমতা ও মুখাপেক্ষিতার কথা। এ থেকে তোমাদের এ নসীহত গ্রহণ করা উচিত যে, এককালে তুমি নিজে ছিলে যাদের প্রতি মুখাপেক্ষী, কালের আবর্তনে আজ তারাই আদর যত্নের মুহতাজ হয়ে পড়েছে। এই হচ্ছে আল্লাহর বিধান। এ অমোঘ বিধান অনুযায়ী তোমরাও বার্ধক্যে পড়ে তোমাদের সক্ষম পুত্রদের খেদমতের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে পারো।
সূরা আল-বাকারার একটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করো না –ইবাদত বন্দেগী করো না এবং পিতামাতার সাথে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করবে।
সূরা আল-আনকাবুত-এ বলা হয়েছেঃ
(আরবী()
মানুষ সাধারণকে তাদের পিতামাতার সঙ্গে ইহসান করতে নির্দেশ দিয়েছি।
‘ইহসান’ শব্দের মূল হচ্ছে ‘হুসনুন’, মানে (আরবী) ‘চরম পর্যায়ের ও পরম মানের সর্বোত্তম ভালো কাজ করা, ভালো ব্যবহার করা’। এ সব আয়াতেই পিতামাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শ্রদ্ধা-ভক্তি রাখা, ভালো ব্যবহার করা ও তাঁদের হক আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সব জায়গাতেই প্রথমে আল্লাহর প্রতি মানুষের কর্তব্য এবং তারপরই পিতামাতার প্রতি কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে।
সূরা আল-আহকাফ-এ বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
এবং আমরা সাধারণভাবে সব মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তাদের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবার। কেননা তাদের মায়েরা খুবই কষ্ট সহকারে তাদের গর্ভে ধারণ করেছে, বহন করেছে এবং আরো কষ্ট সহকারে তাদের প্রসব করেছে।
সূরা লুকমান-এ আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করতে এবং তা যে মস্ত বড় জুলুম, তা বলার পরই বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
এবং সব মানুষকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি তাদের পিতামাতা সম্পর্কে বিশেষ করে তাদের মায়েরা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাদের গর্ভে ধারণ করেছে ও বহন করেছে। (দুর্বলতার কষ্ট পর পর ভোগ করেছে), আর দু বছরকাল তাদের স্তন দিয়ে দুধ খাওয়ানোর কাজ সম্পন্ন করেছে। অতএব তুমি আমার ও তোমাদের পিতামাতার শোকর আদায় করো, মনে রেখো, শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই তোমাদের সকলেরই ফিরে আসতে হবে চূড়ান্ত পণিতির জন্যে।
এসব আয়াতেই একবাক্যে সন্তানের প্রতি পিতামাতার অসীম ও অসাধারণ অনুগ্রহের কথা বলে তাদের প্রতি সর্বতোভাবে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ পর্যায়ে শেষ কথা বলা হয়েছে এই যে, এসব এবং এ ধরনের অন্যান্য ক্ষণস্থায়ী ও সাময়িক খেদমতের কাজ করলেই পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না; বরং তাদের ইহকালীন-পরকালীন কল্যাণের জন্যে আল্লাহর কাছে অবিরত দো’আও করতে থাকতে হবে। সে দো’আর ভাষাও আল্লাহই শিখিয়ে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছেঃ
(আরবী)
হে আল্লাহ পরোয়ারদিগার, আমার পিতামাতার প্রতি রহমত নাযিল করো, যেমন করে তারা দুজনে আমাকে আমার ছোট অবস্থায় লালন-পালন করেছে।
তার মানেঃ আমি যখন শিশু ছিলাম, তখন আমার কিছুই করবার ক্ষমতা ছিল না, তখন এই পিতামাতাই স্নেহ-যত্নপূর্ণ লালন-পালন আমি লাভ করেছিলাম বলেই এ দুনিয়ায় আমার বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে। তখন –আমার সে অক্ষমতার সময়ে যেমন তাদের লালন-পালন আমার জন্যে অপরিহার্য ছিল, আজ তারা তেমনি অক্ষম হয়ে পড়েছে, এখন তাদের প্রতি রহমত করা –হে আল্লাহ –তোমারই ক্ষমতাধীন।
রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
পিতা বেহেশত প্রবেশের মাধ্যম। অতএব তুমি চাইলে তাঁর সেই মধ্যস্থতাকে রক্ষা করতে পার, তাঁকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে পারো, আর চাইলে তা নষ্টও করে দিতে পারো।
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভ পিতার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে, আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি-আক্রোশ ক্রোধ –পিতার অসন্তুষ্টির কারণে হয়ে থাকে।
রাসূলে করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ
(আরবী)
হে রাসূল, সন্তানের ওপর তাদের পিতামাতার অধিকার কি?
জবাবে তিনি এরশাদ করলেনঃ
(আরবী)
তারা দু’জনই হচ্ছে তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম।
মানে জান্নাত কিংবা জাহান্নাম তাদের কারণেই লাভ হওয়া সম্ভব হবে তোমার পক্ষে।
রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
যে লোক পিতামাতার ব্যাপারে আল্লাহর অনুগত হয় (আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পিতামাতার খেদমত করে), তার জন্যে বেহেশতের দুটি দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। -একজন হলে একটি দ্বার উন্মুক্ত হবে। আর যদি কেউ পিতামাতার ব্যাপারে আল্লাহর নাফরমান হয়ে যায় (আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে) তবে তার জন্যে জাহান্নামের দুটো দুয়ারই খুলে যাবে আর একজন হলে একটি দুয়ার খুলবে।
অতঃপর এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! পিতামাতা যদি সন্তানের ওপর জুলুম করে আর তার ফলে সন্তানরা তাদের নাফরমানী করে বা তাদের সম্পর্কচ্ছেদ করে, তবুও কি সন্তানদের জাহান্নামে যেতে হবে?
এর জবাবে রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ
(আরবী)
হ্যাঁ, পিতামাতা যদি সন্তানের ওপর জুলুম করে, তবুও তাদের নাফরমানী করলে জাহান্নামে যেতে হবে।
হযরত আবূ বাকরা বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলা চাইলে যত গুনাহ এবং যে কোন গুনাহই মাফ করে দেবেন। তবে পিতামাতার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের নাফরমানী করলে তিনি তা কখনও মাফ করবেন না। কেননা, এর শাস্তি মৃত্যুর পূর্বেই এ দুনিয়ায়ই শিগগীর করে দেয়া হবে।
তবে এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছ থেকে একসঙ্গে একটি সাবধান বাণী ও একটি আশার বাণী শোনানো হয়েছে। কথাটি সূরা বনী ইসরাঈলের প্রথমোদ্ধৃত আয়াতের পরেই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত ভাষায়ঃ
(আরবী)
তোমাদের আল্লাহ তোমাদের মনের অবস্থা ও ভাবধারা সম্পর্কে খুব ভালো ও সবচেয়ে বেশি অবহিত রয়েছেন। তোমরা যদি নেককার হও –হতে চাও তাহলে তিনি তওবাকারী ও পিতামাতার হক আদায়ের জন্যে মনে-প্রাণে লোকদের ক্ষমা করে দেবেন।
এখানে এক সঙ্গে দুটি কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে সাবধান বাণী, আর তা হচ্ছে, ‘তোমরা যারা পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, ভালো সম্পর্ক রেখে চলো, তাদের হক আদায় করো এবং তাদের খেদমত করো, তারা কিরূপ মনোভাব নিয়ে তা করছে, তা আল্লাহর কিছুমাত্র অবিদিত নয়, বরং তিনি খুব ভালোভাবেই তা জানেন। এখন তোমরা যদি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ভয়ে এবং আল্লাহর আদেশ পালন একান্তই কর্তব্য –এ বোধ ও বিশ্বাস এবং আন্তরিক অনুভূতি ও নিষ্ঠা সহকারে এ কাজ করো, তাহলে তার উপযুক্ত পুরস্কার অবশ্যই তোমরা আল্লাহর কাছে পাবে। আর আল্লাহও সে পুরস্কার তোমাদের দেবেন তাঁর প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে। যদি কোনো বৈষয়িক স্বার্থ বা অসদুদ্দেশ্যে করো, তাহলে আল্লাহর কাছে তাও লুকানো যাবে না –তাঁর কাছে তোমরা কিছুই পাবে না।
আর দ্বিতীয় কথা যা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে আশার বাণী এবং এ আশার বাণী উচ্চারিত হয়েছে তাদের জন্যে যারা এদ্দিন ধরে পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আসছে, তাদের হক আদায় করেনি। বলা হয়েছে, তোমরা যদি এখন অনুতপ্ত হয়ে থাকো তোমাদের এ অন্যায় ও নাফরমানী কাজের জন্যে এবং এখন তওবা করতে রাযী হও, আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করতে ও তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করে নেককার ও সদাচারী হতে চাও, তবে আল্লাহ তোমাদের তওবা কবুল করবেন, তোমাদের মাফ করে দেবেন।
সে সঙ্গে একথাও বোঝা যায় যে, ঐকান্তিক নিষ্ঠা সহকারে পিতামাতার খেদমত করলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে যায় এবং যদি তা আদৌ ইচ্ছাকৃত না হয়, তবে আল্লাহ তাও অবশ্যই মাফ করে দেবেন।
সূরা আন-নিসা তে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
এবং কেবলমাত্র আল্লহার দাসত্ব করবে তোমরা, তাঁর সাথে একবিন্দু জিনিসকেও শরীক গণ্য করবে না। আর ভালো ব্যবহার করবে পিতামাতার সাথে, নিকটাত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে, আত্মীয়-প্রতিবেশীর সাথে, পাশের প্রতিবেশির সাথে এবং পার্শ্বচরের সাথে, পথিক ও দাস-দাসীদের সাথে।
এখানেও বান্দাদের ওপর আল্লাহর হক প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, দাসত্ব কবুল করবে কেবলমাত্র এক আল্লাহর। তার পরে পরেই বলা হয়েছে পিতামাতার হক-এর কথা। শুধু তাই নয়, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, সহায় সম্বলহীন পথিক এবং দাসদাসীদের নিয়ে পিতামাতা যে সমাজ, সে সমাজের প্রতিও বান্দাদের কর্তব্য রয়েছে। তবে এ পর্যায়ে পিতামাতার স্থান সর্বোচ্চ।
হাদীসে এ বিষয়ে বিশেষ তাগিদ রয়েছে। রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কোন কাজ?
জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ
(আরবী)
ঠিক সময়মত নামায পড়াই তাঁর কাছে অধিক প্রিয় কাজ।
এরপর কোন কাজ অধিক পছন্দনীয় জিজ্ঞেস করা হলে রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ (আরবী) –‘পিতামাতার প্রতি ভালো ব্যবহার করা’।
পিতামাতার মধ্যে আবার মা’র অধিকার সম্পর্কে কুরআন হাদীসে অধিক বেশি তাগিদ রয়েছে।
সূরা লুকমান-এ বলা হয়েছে।
এবং মানুষকে আমি নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার সম্পর্কে বিশেষ করে তার মা, সে-ই তাকে গর্ভে ধারণ করেছে, প্রসব করেছে দুর্বলতার ওপর আবার এক দুর্বল অবস্থার মধ্যে এবং দু’বছর মেয়াদ পর্যন্ত দুধ সেবন করিয়ে তা সম্পূর্ণ করেছে। কাজেই হে মানুষ! তুমি আমার ও তোমার পিতামাতার শোকর আদায় করো। জেনে রাখো, শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই সবাইকে প্রত্যাবর্তন করতে হবেঃ
আর সূরা আল-আহকাফ-এ বলা হয়েছেঃ
এবং মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। বিশেষত তার মা তাকে খুবই কষ্ট সহকারে গর্ভে ধারণ ও বহন করেছে এবং খুবই কষ্ট সহকারে তাকে প্রসব করেছে। এভাবে তাকে গর্ভে ধারণে এবং দুধ খাওয়ায়ে লালন-পালনে ত্রিশটি মাস অতিবাহিত হয়ে থাকে।
এ দুটি আয়াতেই মূলত পিতামাতা –উভয়ের প্রতিই ভারো ব্যবহারের সুস্পষ্ট নির্দেশ উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তার পরই মা সম্পর্কে বিশেষ তাগিদ এবং সেই সঙ্গে মা’র অপরিসীম কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষার উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মা-বাপ উভয়ের সাথেই সন্তানকে ভালো ব্যবহার করতে হবে, উভয়েরই অনস্বীকার্য হক রয়েছে সন্তানের ওপর। কিন্তু তাদের মায়ের হক অনেক বেশি। মা’র হক-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ এই যে, সন্তানকে গর্ভে ধারণ, প্রসব করা ও দুধ খাওয়ায়ে লালন পালন করায় মায়ের শ্রম অসীম, অবর্ণনীয় ও প্রত্যক্ষ। হাদীসে মা সম্পর্কে এমনি ধরনের তাগিদ রয়েছে। এক ব্যক্তি রাসূলে করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলঃ
(আরবী)
হে রাসূল, আমার উত্তম সাহচর্য পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকারী কে?
রাসূল বললেনঃ (আরবী) –তোমার ‘মা’ তার পরে কে –পর পর তিনবার জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনবারই উত্তর হয় –‘তোমার মা’। চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলে রাসূল বললেনঃ (আরবী) ‘তোমার বাবা’। (বুখারী, মুসলিম)
এ হাদীস সম্পর্কে কাযী ইয়াজ লিখেছেনঃ
(আরবী)
অধিকাংশ মনীষীর মতে সন্তানের কাছে মা বাবার চেয়ে বেশি ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী।
কাজেই-
(আরবী)
মা ও বাবার হক যখন পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবে –এক সঙ্গে দু’জনারই হক আদায় করা সম্ভব হবে না তখন মা’র হকই হবে অগ্রবর্তী।
উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে মনীষীগণ বলেছেনঃ
(আরবী)
একথা প্রমাণ করে যে, বাবার সন্তুষ্টি অপেক্ষা মা’র সন্তুষ্টি অগ্রবর্তী –সর্বপ্রথম দেখার জিনিস। ইবনে বাত্তাল বলেছেনঃ এর অর্থ এই যে, বাবার যা পাওনা, মা’র পাওনা তার তিন গুণ।
হারেস মুহাসিবী বলেছেনঃ এ মতের ওপরই মুসলিম উম্মতের ইজমা হয়েছে।
অপর এক হাদীসে রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
যে লোক তার পিতামাতা দুজনকেই কিংবা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অতচ খেদমত করে জান্নাতবাসী হওয়ার অধিকারী হতো না, তার মতো হতভাগ্য আর কেউ নয়।
কেননা এরূপ অবস্থায় দু’জনের বা একজনের আন্তরিকভাবে খেদমত করেই বেহেশত লাভ অনিবার্য হয়ে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/505/125
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।