hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

২৮
ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ নারী
কুরআন মজীদে মহিলাদের দুটি আদর্শ নারীর চরিত্র পেশ করা হয়েছে এবং দুনিয়ার ঈমানদার নারীদেরকে তাদের আদর্শ চরিত্রের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

তার মধ্যে একটি আদর্শ হচ্ছে ফিরাঊনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম। ফিরাঊন ছিল আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রকাশ্য দুশমন। কিন্তু তার স্ত্রী ছিলেন আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি পূর্ণ ও মজবুত ঈমানদার। ফিরাঊনের ন্যায় প্রচণ্ড প্রতাপশালী সম্রাটের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এবং অত্যন্ত কুফরী পরিবেশে থেকেও তিনি আন্তরিক নিষ্ঠা সহকারে আল্লাহকে ভয় করতেন, তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করে চলতেন। এত বড় সম্রাটের স্ত্রী হওয়াকে তিনি নিজের জন্যে সামান্য গৌরবের বিষয় বলেও মনে করতেন না। বরং রাতদিন আল্লাহর নিকট এই আল্লাহ-বিরোধী সম্রাটের আধিপত্য থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্যে কাতর কণ্ঠে দো’আ করতে থাকতেন। ফিরাঊনের নাফরমানীর কারণে গোটা জাতির ওপর আল্লাহর যে গজব ও অভিশাপ বর্ষিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল, তা থেকেও তাঁর নিকট পানাহ চাইতেন। কুরআন মজীদে এই আল্লাহ বিশ্বাসী মহিলাকে দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছেঃ

(আরবী)

আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার লোকদের জন্যে ফিরাঊনের স্ত্রীকে দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করেছেন। সে (স্ত্রী) দো’আ করলঃ ‘হে আল্লাহ! আমার জন্যে তোমার নিকট জান্নাতে একখানি ঘর নির্মাণ করো এবং ফিরাঊন ও তার কার্যকলাপ থেকে আমাকে মুক্তি দাও, মুক্তি দাও জালিম লোকদের নির্যাতন থেকে’।

এ দৃষ্টান্ত সম্পর্কে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ

(আরবী)

মু’মিন লোকদের প্রকৃত অবস্থা কি হতে পারে তা দেখার ও তার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করবার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা ফিরাঊনের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেছেন। সেই সঙ্গে আল্লাহর আনুগত্যে দৃঢ়তা দেখানো, দ্বীন ইসলামকে সর্বাবস্থায় আঁকড়ে ঘরে থাকার এবং কঠোর দুর্বিষহ অবস্থায়ও ধৈর্য ধারণ করার উৎসাহ দান করা হয়েছে এ উপমা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। পরন্তু দেখানো হয়েছে যে, কুফরী শক্তির যতই দাপট ও প্রতাপ হোক, তা ঈমানদার লোকদের একবিন্দু ক্ষতি করতে পারবে না, যেমন ফিরাঊনের মতো একজন বড় কাফেরের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সে তার স্ত্রীর একবিন্দু ক্ষতি করতে পারে নি, বরং তিনি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান সহকারেই নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে চলে যেতে পেরেছেন।

দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হচ্ছে, হযরত মরিয়মের চরিত্র। তিনি ছিলেন পবিত্রতা, সতীত্ব এবং আল্লাহ-ভীরুতার জ্বলন্ত প্রতীক। আল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ

(আরবী)

আল্লাহ তা’আলা দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইমরান-কন্যা মরিয়মের কথা। সে তার সব শংকাপূর্ণ স্থান (যৌন অঙ্গ) সমূহের পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। তখন আমি (আল্লাহ) তার মধ্যে আমার থেকে রূহ ফুঁকে দিলাম এবং সে তার আল্লাহর সব কথা ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা মেনে নিয়েছে। বস্তুত সে ছিল তার আল্লাহর আদেশ পালনকারী বিনয়ী লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহর হুকুম পালন, বিনয় ও আল্লাহ-ভীরুতার বাস্তব প্রতীক হিসেবে ওপরের আয়াতদ্বয়ের যেমন দুটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে, অনুরূপভাবে উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে দুটি খারাপ চরিত্রের নারীর দৃষ্টান্তও উল্লেখ করা হয়েছে অপর আয়াতে। তাদের এক দৃষ্টান্ত প্রসঙ্গে হযরত নূহ ও হযরত লতু নবীর স্ত্রীদ্বয়ের উল্লেখ হয়েছে। দুজনের প্রতিই আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ ছিল, দুজনকেই আল্লাহর বিধান মুতাবেক জীবন যাপন করতে এবং তাদের স্বামীদ্বয় যে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাতে যদি তারা তাঁদের সাহায্য ও সহযোগিতা করত –সব রকমের দুঃখ-কষ্টে তাঁদের অকৃত্রিম সহচারী ও সঙ্গিনী হত, তাহলে তাদের স্বামীদ্বয়ের মতো আল্লাহর নিকট তাদেরও মর্যাদা হতো। কিন্তু তারাতা করেনি। তারা বরং এ ব্যাপারে নিজ নিজ স্বামীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের কাজকে তারা অতি হীন ও নগণ্য মনে করেছে। তাদের দুশমনদের সাথে তারা গোপনে হাত মিলিয়েছে। ফলে নবীদ্বয়ের দুঃখ ও বেদনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই কারণে জাতির ফাসিক-ফাজির লোকেরা আল্লাহর যে আযাবে নিমজ্জিত হয়েছে, তারাও সেই আযাবে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কুরআন মজীদের নিম্নোদ্ধৃত আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

আল্লাহ কাফেরদের অবস্থা বোঝাবার জন্যে নূহ ও লুতের স্ত্রীদ্বয়ের দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেছেন। এই দুজন মেয়েলোক ছিল আমার দুই নেক বান্দার স্ত্রী। তারা দুজনই নিজ নিজ স্বামীর সাথে খেয়ানতের অপরাধ করেছে। কিন্তু নেক স্বামীদ্বয় তাদের জন্যে আল্লাহর আযাবের মুকাবিলায় কোনো উপকারে আসেনি। বরং তাদে দুজন (স্ত্রীদ্বয়)-কেও আদেশ করা হলোঃ তোমরা অন্যান্যদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো।

কুরআন মজীদে এ পর্যায়ে তৃতীয় যে দৃষ্টান্তের উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো আবূ লাহাবের স্ত্রীর কথা। আবূ লাহাব ছিল ইসলাম-বিরোধী কুফরী আদর্শের একজন বড় নেতা। আর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর ইসলামী দাওয়াত ও আন্দোলনের সে ছিল অতি বড় দুশমন। তার স্ত্রী ছিল বড় খবীস প্রকৃতির, হীন ও নিকৃষ্ট চরিত্রের এক দুর্দান্ত মেয়েলোক। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর বিরোধিতা করত প্রাণপণে। তাদের এ বিরোধীতা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণের ওপর ভিত্তিশীল ছিল না, ছিল না কোনো নীতির ভিত্তিতে। বরং এ বিরোধিতা ছিল অনেকটা ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও আক্রোশ পর্যায়ে। অপরদিকে আবূ লাহাবের স্ত্রী ছিল অত্যন্ত আধুনিক। তার বিলাস-ব্যসনের জন্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে দেয়ার জন্যে সে স্বামীর ওপর প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করত। আবূ লাহাব নিতান্ত বোকার মতো স্ত্রীর যাবতীয় দাবি-দাওয়া পূরণের জন্যে ন্যায়-অন্যায় নির্বিচারে নানাবিধ উপায় অবলম্বন করত। এতবড় একজন সমাজপতি হওয়া সত্ত্বেও হাজীদের পরিচর্যার জন্যে সংগৃহিত অর্থ বিনষ্ট ও আত্মসাত করত। এমন কি, আল্লাহর ঘরে রক্ষিত স্বর্ণ চুরি করত বলে অনেকেই তার প্রতি সন্দেহ পোষণ করত। তার এসব অসদাচরণের একমাত্র কারণ ছিল তার প্রিয়তমা স্ত্রীর অবাঞ্ছিত বিলাস-ব্যসনের আবদার রক্ষা। এ ধরনের একটি নারী গোটা জাতির পক্ষেও বিপজ্জনক হতে পারে। এ কারণে কুরআন মজীদে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে এ নারীর উল্লেখ করা হয়েছে। আর তার দুষ্কৃতকারী স্বামীর মর্মান্তিক পরিণতির ব্যাপারে তাকেও সমানভাবে অংশীদার বানানো হয়েছে। কুরআনে তার নির্মম পরিণতির যে চিত্র অংকন করা হয়েছে, তা হচ্ছে এমন এক নারী, যে গলায় রশি ঝুলিয়ে বনে-জঙ্গলে কাষ্ঠ আহরণ করে বেড়াচ্ছে এবং সে ইন্ধন সংগ্রহ করে আগুনকে দ্বিগুণভাবে তেজস্বী করে জ্বালিয়েছে। এ আগুনেই জ্বলছে তার নিজের স্বামী। কেননা আবূ লাহাবের জাহান্নামে যাওয়ার যাবতীয় কারণ এ দুনিয়ায় সেই উদ্ভাবন করেছিল। কুরআনে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

আবূ লাহাব ধ্বংস হোক, -আর তার সব ক্ষমতা প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হলো সে নিজে ধ্বংস হলো। না তার ধন-সম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারল, না তার হারাম-হালাল উপার্জন। সে শীঘ্রই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করবে। তার স্ত্রীও তারই সঙ্গে –যার কাজ ছিল কেবল ইন্ধন সংগ্রহ করা –তার গলদেশে ঝুলতে থাকবে মোটা পাকানো রশি।

অর্থাৎ ঘুষ খেয়ে পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে হরণ করে এবং খেয়ানত করে আব লাহাব যে সব মূল্যবান অলংকার বানিয়ে তার স্ত্রীকে দিত, কিয়ামতের দিন তা-ই তার গলায় বড় বড় রশি হয়ে ঝুলতে থাকবে। বস্তুত মরণকালেও যে পাকানো রশি দ্বারা জালানী কাঠ বেঁধে আনতো তার গলায় ঐ রশির ফাঁস লেগে তার মৃত্যু হয়েছিল।

কুরআন মজীদে উল্লিখিত বিভিন্ন নারীর এ দৃষ্টান্ত দুনিয়ার নারীকুলের জন্যে যেমন বিশেষ অনুসরণীয় ও উপদেশ গ্রহণের স্থল, তেমনি দুনিয়ার স্বামীকুলের জন্যেও এর মধ্যে রয়েছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, রয়েছে উপদেশ গ্রহণের উন্নত শিক্ষা। এ আলোচনার মাধ্যমে কুরআন নারীকুরের সামনে নৈতিকতার একটি মান –একটি নৈতিক লক্ষ্য সংস্থাপন করেছে। যে সব মহিলা দ্বীনদার, কিন্তু স্বামীরা ফাসেক-ফাজের –দ্বীন-ইসলামের বিরোধী কিংবা তার পক্ষে নয়, তাদের জন্যেও যেমন এখানে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রয়েছে, তেমনি সব কাফের, চরিত্রহীন ও আল্লাহ-দ্রোহী নারীদের জন্যেও এতে রয়েছে নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা করে কল্যাণের পথ এ দুনিয়ায়ই গ্রহণ করার উপযুক্ত শিক্ষা, যাদের স্বামীরা বড় দ্বীনদার পরহেযগার। দুনিয়ার স্বামীকুল সম্পর্কেও এই একই কথা।

স্বামী যদি বেঈমান হয়, আর স্ত্রী হয় ঈমানদার, আল্লাহভীরু, তাহলে এ কারণেই স্বামীর পক্ষে পরকালীন মুক্তি লাভ সম্ভব হবে না। আর এরূপ অবস্থায়ও যে স্ত্রীলোকদের পক্ষে দ্বীন পালন করা উচিত, স্বামীর অন্যায় কাজের সমর্থন করতে গিয়ে নিজেদেরকেও জাহান্নামী করা স্ত্রীর পক্ষে উচিত কাজ নয়, আর তা যে সম্ভব, তার বাস্তব দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুরআনে উল্লিখিত ফিরাউনের স্ত্রী –আছিয়া।

পক্ষান্তরে বেঈমান স্ত্রীদের স্বামীরা যদি নবীও হয়, তবু কেবলমাত্র এই বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রেহাই দেবেন –এরূপ ধারণা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন