hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৩৬
বিয়ের উদ্দেশ্য
বিয়ে এবং বিবাহিত জীবন যাপনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। দুনিয়ার কোনো কাজই সুস্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া সম্পাদিত হয় নি। কুরআন মজীদে বিয়ের উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে। কুরআনের এতদসম্পর্কিত আয়াতসমূহকে সামনে রেখে চিন্তা করলে পরিস্কার মনে হয়, কুরআনের দৃষ্টিতে বিয়ের উদ্দেশ্য নানাবিধ। এর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাশী নৈতিক চরিত্র, পবিত্র পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত রাখতে পারা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে মনের গভীর প্রশান্তি ও স্থিতি লাভ এবং তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে পারিবারিক জীবন যাপন করে সন্তান জন্মদান, সন্তান লালন-পালন ও ভবিষ্যত সমাজের মানুষ গড়ে তোলা। নিম্নোক্ত কুরআন ভিত্তিক আলোচনা থেকে এসব উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

সূরা আন-নিসা’র এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

এই মুহাররম মেয়েলোক ছাড়া অন্য সব মেয়েলোক বিয়ে করা তোমাদের জন্যে জায়েয –হালাল করে দেয়া হয়েছে এই উদ্দেশ্যে যে, তোমরা তোমাদের ধন-মালের বিনিময়ে তাদের লাভ করতে চাইবে নিজেদের চরিত্র দুর্জয় দুর্গের মতো সুরক্ষিত রেখে এবং বন্ধনহীন অবাধ যৌন চর্চা করা থেকে বিরত থেকে। 

এ আয়াত থেকে প্রথম জানা গেল যে, নির্দিষ্ট কতকজন মেয়েলোক বিয়ে করা ও তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। সেই হারাম বা মুহাররম মেয়েলোক কয়জন ছাড়া আর সব মেয়েলোকই বিয়ে করা পুরুষের জন্যে হালাল। দ্বিতীয়ত এসব হালাল মেয়েলোক তোমরা গ্রহণ করবে ‘মোহরানা’ স্বরূপ দেয়া অর্থের বিনিময়ে বিয়ে করে। তৃতীয়ত মোহরানা ভিত্তিক বিয়ে ছাড়া অন্য কোনোভাবে এই হালাল মেয়েদের সাথেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারা যায় না এবং পঞ্চমত এভাবে বিয়ে করে নৈতিক চরিত্রের এক দুর্জয় দুর্গ –পরিবার-রচনা করা যায় এবং অবাধ যৌন চর্চার মতো চরিত্রহীনতার কাজ থেকে নিজকে বাঁচানো যায়। আর বিয়ের উদ্দেশ্যও এই যে, তার সাহায্যে স্বামী-স্ত্রীর নৈতিক চরিত্রের দুর্গকে দুর্জয় করতে হবে এবং অবাধ যৌন চর্চা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে।

সূরা আন-নিসা’র অপর এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

তোমরা মেয়েদের অভিভাবক মুরুব্বীদের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করো, অবশ্য অবশ্যই তাদের দেন-মোহর দাও, যেন তারা তোমাদের বিয়ের দুর্গে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে এবং অবাধ যৌন চর্চায় লিপ্ত হয়ে না পড়ে। আর গোপন বন্ধুত্বের যৌন উচ্ছৃংখলতায় নিপতিত না হয়।

এ আয়াত যদিও ক্রীতদাসদাসীদেরকে বিয়ে দেয়া সম্পর্কে, কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে এ আয়াত থেকে বিয়ের উদ্দেশ্য জানা যায়। আর তা হচ্ছে, বিয়ে করে পরিবার-দুর্গ রচনা করা, জ্বেনা-ব্যভিচার বন্ধ করা, গোপন বন্ধুত্ব করে যৌন স্বাদ আস্বাদন করার সমস্ত পথ বন্ধ করা। আর এসব কেবল বিয়ে করে পারিবারিক জীবন যাপনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। পূর্বোক্ত আয়াতে পুরুষদের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে আর এ আয়াতে সাধারণভাবে সকল শ্রেণীর মেয়েদের নৈতিক চরিত্র রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে এবং দুটো আয়াতেই পরিবারের দুর্জয় দুর্গ রচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইমাম রাগেব লিখেছেনঃ

(আরবী)

বিয়েকে দুর্গ বলা হয়েছে, কেননা তা স্বামী-স্ত্রীকে সকল প্রকার লজ্জাজনক কুশ্রী কাজ থেকে দুর্গবাসীদের মতোই বাঁচিয়ে রাখে।

নারী-পুরুষ কেবলমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই পরস্পর মিলিত হবে। তাহলেই উভয়ের চরিত্র ও সতীত্ব পূর্ণ মাত্রায় রক্ষা পাবে। এ দুটো আয়াতেই বিয়েকে (আরবী) ‘দুর্গ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। দুর্গ যেমন মানুষের আশ্রয়স্থল, শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা, বিয়ের ফলে রচিত পরিবারও তেমনি স্বামী-স্ত্রীর নৈতিক চরিত্রের পক্ষে একমাত্র রক্ষাকবচ। মানুষ বিবাহিত হলেই তার চরিত্র ও সতীত্ব রক্ষা পেতে পারে –অবশ্য যদি সে পরিবার সুরক্ষিত দুর্গের মতোই দুর্ভেদ্য ও রুদ্ধদ্বার হয়। মোটকথা, নৈতিক চরিত্র সংরক্ষণ ও পবিত্রতা –সতীত্বের হেফাযত হচ্ছে বিয়ের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য।

নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ

(আরবী)

যে লোক কিয়ামতের দিন পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন চরিত্র নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবার বাসনা রাখে, তার কর্তব্য হচ্ছে (স্বাধীন মহিলা) বিয়ে করা।

অর্থাৎ বিয়ে হচ্ছে চরিত্রকে পবিত্র রাখার একমাত্র উপায়। বিয়ে না করলে চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশংকা প্রবল হয়ে থাকে। মানুষ আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমা লংঘন করে পাপের পংকিল আবর্তে পড়ে যেতে পারে যেকোনো দুর্বল মুহুর্তে।

বাস্তবিকই যে লোক তার নৈতিক চরিত্রকে পবিত্র রাখতে ইচ্ছুক, বিয়ে করা ছাড়া তার কোনোই উপায় নেই। কেননা এই উদ্দেশ্যে বিয়ে করলে সে এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহায্য লাভ করতে পারবে। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে একথা প্রমাণিত হয়। রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

তিন ব্যক্তির সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে পড়ে। তারা হলোঃ

১. যে দাস নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় (আজকাল বলা যায়, কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তার ঋণ আদায় করতে দৃঢ়সংকল্প);

২. যেলোক বিয়ে করে নিজের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়; আর

৩. যে লোক আল্লাহর পথে জিহাদে আত্মসমর্পিত।

বস্তুত নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করা কিছুমাত্র সহজসাধ্য কাজ নয়। বরং এ হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসাধ্য ব্যাপার। কেননা এজন্যে প্রকৃতি নিহিত দুষ্প্রবৃত্তিকে –যৌন লালসা শক্তিকে –দমন করতে হবে। আর এ যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সে লোক পাশবিকতার নিম্নতম পঙ্কে নেমে যাবে। কাজেই যদি কেউ এ থেকে বাঁচতে চায়, আর এ বাঁচার উদ্দেশ্যেই যদি বিয়ে করে –স্ত্রী গ্রহণ করে, তবে আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা সে অবশ্যই লাভ করবে। আর আল্লাহর এই সাহায্যেই সে লোক বিয়ের মাধ্যমে স্বীয় নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করতে সফলকাম হবে।

কেবলমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই যে সতীত্ব ও নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করা যেতে পারে, কুরআন মজীদে তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

(আরবী)

স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ, আর তোমরা হচ্ছ তাদের জন্যে পোশাকবৎ।

অর্থাৎ পোশাক যেম করে মানবদেহকে আবৃত করে দেয়, তার নগ্নতা ও কুশ্রীতা প্রকাশ হতে দেয় না এবং সব রকমের ক্ষতি-অপকারিতা থেকে বাঁচায়, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্যে ঠিক তেমনি। কুরআন মজীদেই পোশাকের প্রকৃতি বলে দেয়া হয়েছে এ ভাষায়ঃ

(আরবী)

নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের জন্যে পোশাক নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে।

পূর্বোক্ত আয়াতে স্বামীকে স্ত্রীর জন্যে পোশাক বলা হয়েছে। কেননা তারা দুজনই দুজনের সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ঢাকবার ও যৌন-উত্তেজনার পরিতৃপ্তি সাধনের বাহন। ইমাম রাগেব লিখেছেনঃ

(আরবী)

পোশাক বলতে স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে (আর স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে) মনে করা হয়েছে। কেননা এ স্বামী ও স্ত্রী একদিকে নিজে নিজের জন্যে পোশাকবৎ আবার প্রত্যেকে অপরের জন্যেও তাই। এরা কেউই কারো দোষ জাহির হতে দেয় না –যেমন করে পোশাক লজ্জাস্থানকে প্রকাশ হতে দেয় না।

বিয়ের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী-পুরুষের হৃদয়াভ্যন্তরস্থ স্বাভাবিক প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসারদাবি পূরণ এবং যৌন উত্তেজনার পরিতৃপ্তি ও স্তিতি বিধান। কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

এবং আল্লাহর একটি বড় নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদেরই মধ্য থেকে জুড়ি গ্রহণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যেন তোমরা সে জুড়ির কাছ থেকে পরম পরিতৃপ্তি লাভ করতে পার। আর তোমাদের মধ্যে তিনি প্রেম-ভালোবাসা ও দরদ-মায়া ও প্রীতি-প্রণয় সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

‘তোমাদেরই মধ্য থেকে’ অর্থঃ

(আরবী)

তোমাদেরই স্বজাতির মধ্য থেকে; অপর জাতির লোককে নয়।

অর্থাৎ মানব-মানবীরজুড়ি মানব-মানবীকে বানাবার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে। নিম্নস্তরের বা উচ্চস্তরের অপর কোনো জাতির মধ্য থেকে জুড়ি গ্রহণের নিয়ম করা হয়নি।

এ আয়াতে জুড়ি গ্রহণের বা বিয়ে করার উদ্দেশ্যস্বরূপ বলা হয়েছেঃ যেন তোমরা সে জুড়ির কাছ থেকে পরম পরিতৃপ্তি ও গভীর শান্তি-স্বস্তি লাভ করতে পার। তার মানে, স্বামী-স্ত্রীর মনের গভীল পরিতৃপ্তি –শান্তি স্বস্তি লাভ হচ্ছে বিয়ের উদ্দেশ্য। আর এ বিয়ের মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব-ভালোবাসা জন্ম নিতে পেরেছে। আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা করে ইমাম আলূসী লিখেছেনঃ

(আরবী)

অর্থাৎ তোমাদের জন্যে আল্লাহ তা’আলা শরীয়তের বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা –বিয়ের মাধ্যমে তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব-প্রেম-প্রণয় এবং মায়া-মমতা দরদ-সহানুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন, অথচ পূর্বে তোমাদের মাঝে না ছিল তেমন কোন পরিচয়, না নিকটাত্মীয় বা রক্ত-সম্পর্কের কারণে মনের কোনোরূপ সুদৃঢ় সম্পর্ক।

হযরত হাওয়া ও হযরত আদমের প্রথম সাক্ষাত হয়, তখন হযরত আদম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবী) ‘তুমি কে?’ তিনি বললেনঃ

(আরবী)

আমি হাওয়া, আমাকে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন এ উদ্দেশ্যে যে, তুমি আমার নিকট পরিতৃপ্তি ও শান্তি লাভ করবে। আর আমি পরিতৃপ্তি ও শান্তি লাভ করব তোমার কাছ থেকে।

অতএব এ থেকে আল্লাহর বিরাট সৃষ্টি ক্ষমতা ও অপরিসীম দয়া-অনুগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। সূরা আল আ’রাফ-এর নিম্নোক্ত আয়াতেও এ কথাই বলা হয়েছে গোটা মানব জাতি সম্পর্কেঃ

(আরবী)

সেই আল্লাহই তোমাদেকে সৃষ্টি করেছেন একটিমাত্র মানবাত্মা থেকে এবং তার থেকেই বানিয়েছেন তার জুড়ি, যেন সে তার কাছে পরম সান্ত্বনা ও তৃপ্তি লাভ করতে পারে।

এখানে পরম শান্তি ও তৃপ্তি বলতে মনের শান্তি ও যৌন উত্তেজনার পরিতৃপ্তি ও চরিতার্থতা বোঝানো হয়েছে। বস্তুত মনের মিল, জুড়ির প্রতি মনের দুর্নিবার আকর্ষণ এবং যৌন তৃপ্তি হচ্ছে সমগ্র জীবন ও মনের প্রকৃত সুখ ও প্রশান্তি লাভের মূল কারণ। তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মানে চরম অতৃপ্তি ও অশান্তির ভিতরে জীবন কাটিয়ে দেয়া। মনের প্রশান্তি ও যৌন তৃপ্তি যে বাস্তবিকই আল্লাহর এক বিশেষ দান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্যে ঈমানদার স্ত্রী-পুরুষের কর্তব্য হচ্ছে এ প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তিকে আল্লাহর সন্তোষ এবং তাঁরই দেয়া বিধান অনুসারে লাভ করতে চেষ্টা করা। এ আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির সৃষ্টি ও প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, এই দুনিয়ায় মানুষের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব যেমন এক স্বাভাবিক ব্যাপার, জুড়ি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও তেমনি এক প্রকৃতিগত সত্য, এ সত্যকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না। এজন্যে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করার পরই তার থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন। এ জুড়ি যদি বানানো না হতো, তাহলে প্রথম মানুষের জীবন অতৃপ্তি আর একাকীত্বের অশান্তিতে দুঃসহ হয়ে উঠত। আদিম মানুষের জীবনে জুড়ি গ্রহনের এ আবশ্যকতা আজও ফুরিয়ে যায় নি। প্রথম মানুষ যুগলের ন্যায় আজিকার মানব-দম্পতিও স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মুখাপেক্ষী। আজিকার স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের কাছ থেকে লাভ করে মনের প্রশান্তি ও যৌন তৃপ্তি, পায় কর্মের প্রেরণা। একজনের মনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ ভারাক্রান্ততা অপরজনের নির্মল প্রেম-ভালবাসার বন্যাস্রোতে নিঃশেষ ধুয়ে মুছে যায়। একজনের নিজস্ব বিপদ-দুঃখও অন্যজনের নিকট নিজেরই দুঃখ ও বিপদরূপে গণ্য ও গৃহীত হয়। একজনের যৌন লালসা-কামনা উত্তেজনা অপরজনের সাহায্যে পায় পরম তৃপ্তি, চরিতার্থতা ও স্থিতি।

এসব কথা থেকে প্রমাণিত হলো যে, মানুষের –সে স্ত্রী হোক কি পুরুষ –যৌন উত্তেজনা পরিতৃপ্তি লাভ এবং তার উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতিবিধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে জুড়ি গ্রহণ বা বিয়ে ও বিবাহিত জীবন। যৌন উত্তেজনা মানুষকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সময় পুরুষ নারীর দিকে এবং নারী পুরুসের দিকে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকে পড়ে। তখন একজন অপরজনের নিকট স্বীয় স্বাভাবিক শক্তি ও বৈশিষ্ট্যের দরুন মনোবাঞ্ছা পূরনের নিয়ামত হয়ে থাকে। এজন্যে রাসূলে করীম (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, এরূপ অবস্থায় পুরুষ যেন স্বীয় (বিবাহিতা) স্ত্রীর কাছে চলে যায়।

তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

কোনো নারী যখন তোমাদের কারো মনে লালসা জাগিয়ে দেয়, তখন সে যেন তার নিজের স্ত্রীর কাছে চলে যায় এবং তার সাথে মিলিত হয়ে স্বীয় উত্তেজনার উপশম করে নেয়। এর ফলে সে তার মনের আবেগের সান্ত্বনা লাভ করতে পারবে এবং মনের সব অস্থিরতা ও উদ্বেগ মিলিয়ে যাবে।

ইমাম নববী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ

(আরবী)

যে লোক কোনো মেয়েলোক দেখবে এবং তার ফলে তার যৌন প্রবৃত্তি উত্তেজিত হয়ে উঠবে, সে যেন তার স্ত্রীর কাছে আসে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়। এর ফলে তার যৌন উত্তেজনা সান্ত্বনা পাবে, মনে পরম প্রশান্তি লাভ হবে, মন-অন্তর তার বাঞ্ছা ও কামনা লাভ করে এককেন্দ্রীভূত হতে পারবে।

বিয়ে এবং বিবাহিত জীবনের তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান লাভ।

কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

এখন সময় উপস্থিত, স্ত্রীদের সাথে তোমরা এখন সহবাস করতে পার –তাই তোমরা করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা কিছু নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তাই তোমরা সন্ধান করো, তাই লাভ করতে চাও।

এখানে যে (আরবী) ‘মুবাশিরাত’-এর অনুমতি দেয়া হয়েছে, তার মানে হচ্ছে (আরবী) একজনের শরীরের চামড়ার সাথে অপরজনের দেহের চামড়াকে লাগিয়ে দেয়া, মিশিয়ে দেয়া। আর এর লক্ষ্যগত অর্থ হচ্ছেঃ (আরবী) স্ত্রী সহবাস –সঙ্গম, যার জন্যে স্বামীর দেহের চামড়াকে স্ত্রীর দেহের চামড়ার সাথে মিলিয়ে-মিশিয়ে দিতে হয়’। আর ‘আল্লাহ যা তোমাদের জন্যে নির্ধারণ করেছেন’ বলে দুটি কথা বরতে চাওয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে রমযান মাসের রাত্রি বেলায় স্ত্রী-সহবাসের অনুমতি দান। কেননা এ আয়াত সেই প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয়েছে। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে সন্তান লাভ। কেননা স্ত্রী-সহবাবের মূল লক্ষ্য হলো সন্তান তোমার জন্যে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে, স্ত্রী-সহবাসের মূলে নিছক যৌন উত্তেজনার পরিতৃপ্তি আর লালসার চরিতার্থ তাই কখনো স্ত্রী সহবাসের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। এজন্যে যে ধরনের যৌন-উত্তেজনা পরিতৃপ্তির ফলে সন্তান লাভ হয় না যেমন পুংমৈথুন বা হস্তমৈথুন –তাকে শরীয়তে হারাম করে দেয়া হয়েছে। আর যে ধরনের স্ত্রী-সহবাসের ফলে সন্তান লাভ সম্ভব হয় না কিংবা সন্তান হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কিংবা স্ত্রী-সহবাস হওয়া সত্ত্বেও সন্না হতে পারে না, শরীয়তে তাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এজন্যেই সূরা বাকারার নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেতে গমন করো –যেভাবে তোমরা চাও –পছন্দ করো।

এ আয়াতে স্ত্রীদেরকে কৃষির ক্ষেত বলা হয়েছে। অতএব স্বামীরা হচ্ছে এ ক্ষেতের চাষী। চাষী যেমন কৃষিক্ষেতে শ্রম করে ও বীজ বপন করে ফসলের আশায়, তেমনি স্বামীদেরও কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রী-সহবাস করে এমনভাবে বীজ বপন করা, যাতে সন্তানের ফসল ফলতে পারে –সন্তান লাভ সম্ভব হতে পারে।

কুরআনের এ দৃষ্টান্তমূলক কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রণিধানযোগ্য। চাষী বিনা উদ্দেশ্যে কখনো কষ্ট স্বীকার করে ও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জমি চাষ করে না, কেবলমাত্র মনের খোশ খেয়ালের বশবর্তী হয়ে কেউ এ কাজে উদ্যোগী হয় না। এ কাজ করে একটি মাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে আর তা হচ্ছে ফসল লাভ। কুরআনের ভাষায় স্বামীরাও এমনি উদ্দেশ্যপূর্ণ চাষী –সন্তান ফসলের চাষাবাদকারী। স্ত্রীদের যৌন অঙ্গ হচ্ছে তার কাছে চাসের জমিস্বরূপ আর স্ত্রীর যৌন অঙ্গে শুক্র প্রবেশ করানো হচ্ছে চাষীর জমিতে শস্য বীজ বপন করার মতো। চাষী যেমন এই সমস্ত কাজ ফসলের আমায় করে, স্বামীদেরও উচিত সন্তান লাভের আশায় স্ত্রী-সঙ্গম করা। কেবল যৌন স্পৃহা পরিতৃপ্তির উদ্দেশ্যে এ কাজ হওয়া উচিত নয়। বরং এই সন্তান-ফসল লাভের উদ্দেশ্যেই বিয়ে করতে হবে। স্ত্রী গ্রহণ ও তার সাথে সঙ্গম করতে হবে। অতএব বিয়র একটি চরমতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান লাভ। এ কথাই আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে আয়াতের পরবর্তী অংশেঃ

(আরবী)

এবং তোমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্যে কাজ করো।

অর্থাৎ এ স্ত্রী-সহবাস দ্বারা সন্তান লাভ করার আশা মনে মনে পোষণ করতে থাকো।

এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রীলোক কেবলমাত্র যৌন লালসা পরিতৃপ্তির মাধ্যম বা উপায় নয়, স্ত্রী গ্রহণ ও তার সাথে মিলে পারিবারিক জীবন যাপনের এক মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সে উদ্দেশ্যর মধ্যে সন্তান লাভ –ভবিষ্যৎ মানব বংশকে রক্ষা করা –হচ্ছে অন্যতম। মানব সমাজের কুরআন ভিত্তিক ইতিহাস থেকেই জানা যায়, স্ত্রীলোক গ্রহণ করে বিবাহিত ও পারিবারিক জীবন যাপন করার ফলেই দুনিয়ায় মানব জাতির এই বিপুল বিস্তার সম্ভব হয়েছে। এ কারণেই স্বাভাবিকভাবে রমনীর মনে সন্তান লাভের দুর্বার আকাঙ্খা বিদ্যমান থাকে। এমন কি আজকাল বন্ধ্যা নারীরাও টেষ্ট টিউবের সাহায্যে সন্তান লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ব্রিস্টলের লেসলী ব্রাউন নামের জনৈক বন্ধ্যা রমণী টেষ্ট টিউবের সাহায্যে দুই বার গর্ভবতী হয়ে দুটি সন্তানের জননী হয়েছে। আর মানব বংশের এই ধারা বৃদ্ধির স্থায়িত্বের জন্যেই বিয়ে করাকে অপরিহার্য কাজ বলে ঘোষিত হয়েছে। বিয়ে ব্যতীত নারী পুরুষের যৌন মিলন নিষিদ্ধ –হারাম করে দেয়া হয়েছে। কেননা তা মানুসের নৈতিক চরিত্রের পক্ষে যেমন মারাত্মক, তেমনি তার ফলে মান বংশের পবিত্রতা রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে ভবিষ্যত সমাজ গঠন বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। ইউরোপে মেয়েদের ‘বয় ফ্রেণ্ড’ ‘ছেলে বন্ধু’ ও ছেলের ‘গার্ল ফ্রেণ্ড’ ‘মেয়ে বান্ধবী’ গ্রহনের এবং রক্ষিতা রাখার অবাধ সুযোগ দিয়ে যেমন সুস্পষ্ট ব্যভিচারের পথ খুলে দেয়া হয়েছে, তেমনি তা ভবিষ্যত বংশের পবিত্রতাকেও বিনষ্ট করে ফেলেছে। এর ফলে সাময়িকভাবে যৌন পরিতৃপ্তি লাভ হতে পারে বটে, কিন্তু একজন নারীর পক্ষে একজন পুরুষের স্থায়ী জীবন সঙ্গীনি হওয়ার সৌভাগ্য লাভ সম্ভব হয় না, বংশের ধারাও সুষ্ঠুভাবে রক্ষা পেতে পারে না। এর ফলে তাই ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব এত বেশি। ইসলামের বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুসের এক স্থায়ী বন্ধন। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের মিলন এমন কোনো ক্রীড়া নয়, যা দু’দিন খেলা হলো, তারপর যে যার পথে চম্পট দিয়ে চলে গেল। এ জন্যে কুরআনে বিবাহিতা স্ত্রীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

এবং বিবাহিতা স্ত্রীলোকেরা তাদের স্বামীদের নিকট থেকে শক্ত ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে।

ইসলামে বিয়ে এমনি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই বাস্তব অনুষ্ঠান। এ প্রতিশ্রুতি সহজে ভঙ্গ করা যেতে পারে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন