hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৪৯
বিয়ের বয়স
ছেলে বা মেয়ের বিয়ের জন্যে কোনো বয়স-পরিমাণ নির্দিষ্ট আছে কি? কত বয়স হলে পরে ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়া যেতে পারে, আর কত বয়ষ পূর্ণ না হলে বিয়ে দেয়া উচিত হতে পারে না আধুনিক যুগের সমাজ-মানসে এ এক জরুরী জিজ্ঞাসা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলে ও মেয়ের বিয়ের জন্যে একটা বয়স পরিমাণ আইনের সাহায্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে, এত বয়স না হলে ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেয়া চলবে না, এ সম্পর্কে ইসলামের অভিমত কি?

এই পর্যায়ে হযরত আয়েশা (রা)-র নিম্নোক্ত উক্তি থেকে কিছুটা পথের সন্ধান লাভ করা যায়। তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

রাসূলে করীম (ﷺ) আমাকে বিয়ে করেন যখন আমার বয়স মাত্র ছয় বছর, আর আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধেন যখন আমি নয় বছরের মেয়ে।

অপর এক হাদীসে এক সাহাবীর উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

রাসূলে করীম (ﷺ) হযরত আয়েশাকে বিয়ে করেন, যখন তাঁর বয়স নয়।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেনঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) হযরত আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন যখন তিনি ছোট্ট ছিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর।

নবী করীম (ﷺ) নিজে যখন হযরত আয়েশাকে ছয় কিংবা নয় বছর বয়সে বিয়ে করলেন তখন এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ইসলামে ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্য কোনো নিম্নতম বয়স নির্ধারণ করা হয়নি। যে-কোনো বয়সের ছেলেমেয়েকে যে-কোনো সময় অনায়াসেই বিয়ে দেয়া যেতে পারে।

এই পর্যায়ে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী মনীষী ইবনে বাত্তালের নিম্নোক্ত উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ

(আরবী)

ইসলামের বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, পিতার পক্ষে তার ছোট্ট বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেয়া সম্পূর্ণ জায়েয –বৈধ, যদিও সে মেয়ে দোলনায় শোয়া শিশুই হোক না কেন। তবে তাদের স্বামীদের পক্ষে তাদের নিয়ে ঘর বাঁধা কিছুতেই জায়েয হবে না, যতক্ষণ তারা যৌন সঙ্গম কার্যের জন্যে পূর্ণ যোগ্য এবং পুরুষ গ্রহণ ও ধারণ করার সামর্থ্যসম্পন্না না হচ্ছে।

ইমাম নববী লিখেছেনঃ

(আরবী)

পিতার পক্ষে তার ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে দেয়া জায়েয হওয়া সম্পর্কে সমস্ত মুসলমানই একমত হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে কোনো বয়স নির্দিষ্ট করা চলে না এজন্যে যে, সব মেয়েই স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও দৈহিক শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে সমান হয় না, হয় বিভিন্ন রকমের ও প্রকারের। এমন কি বংশ-গোত্র, পারিবারিক জীবন-মান ও আবহাওয়ার পার্থক্যের দরুনও এদিক দিয়ে মেয়েদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে থাকে। এজন্যে কোনো এক নীতি বা কোনো ধরাবাঁধা কথা এ ব্যাপারে বলা যায় না। তাই বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেনঃ

(আরবী)

মেয়েদের জন্মগত পরিমিতি ও স্বাস্থ্যগত সামর্থ্য, যোগ্যতা এবং ক্ষমতা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

অতএব ঠিক কত বয়সে যে মেয়েদের বিয়ে দেয়া উচিত আর কত বয়সে নয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা এবং এজন্যে কোনো বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়ে তার পূর্বে বিয়ে নিষিদ্ধ করে আইন জারি করা আদৌ যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।

তাছাড়া বিয়ে বলতে কি বোঝায়, তাও ভেবে দেখা দরকার। কেননা ‘বিয়ে’ বলতে যদি স্বামী-স্ত্রী যৌন মিলন ও তদুদ্দেশ্যে ঘর বাঁধা বোঝায়, তাহলে তা যে, ছেলেমেয়ের পূর্ণ বয়স্ক (বালেগ) হওয়ার পূর্বে আদৌ সম্ভব হতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য। আর যদি বিয়ে বলতে শুধু আকদ ও ঈজাব-কবুলমাত্র বোঝায় তাহলে তা যে কোন বয়সেই হতে পারে। এমন কি দোলনায় শোয় বা দুগ্ধপোষ্য শিশুরও হতে পারে তার পিতার নেতৃত্বে। ইসলামী শরীয়তে এ বিয়ে নিষিদ্ধ নয় এবং এতে অশোভনও কিছু নেই।

এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামবিদ ড. মুস্তফা আস-সাবায়ী লিখেছেনঃ

(আরবী)

চারটি মাযহাবের ইজতিহাদী রায় এই যে, ‘বালেগ’ হয়নি –এমন ছোট ছেলেমেয়ের বিয়ে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ও বৈধ।

কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা এবং নবী করীম (ﷺ)-এর যুগে ও তাঁর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ঘটনাবলীর ভিত্তিতে উপরিউক্ত কথার যৌক্তিকতা ও প্রামাণিকতা অনস্বীকার্য।

অবশ্য কিছু সংখ্যক ফিকাহবিদ; যেমন –ইবনে শাবরামাতা ও আল-বাতী উপরিউক্ত কথার বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে ছোট বয়সের ছেলেমেয়ের কোনো রকম বিয়েই আদৌ জায়েয নয়। আর তাদের অভিভাবকগণ তাদের পক্ষ থেকে উকীল হয়ে যেসব বিয়ে সম্পন্ন করে থাকে, তা সম্পূর্ণ বাতিল, তাকে বিয়ে বলে ধরাই যায় না।

বস্তুত শরীয়তে বিয়ের আদেশ এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় বিধান উপদেশ এই শেষোক্ত মতকেই সমর্থন করে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়ার বাস্তব কোনো ফায়দাই নেই, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে ছোট বয়সের বিয়ে ছেলেমেয়েদের নিজেদের জীবনে কিংবা উভয় পক্ষের অলী-গার্জিয়ানদের জীবনে নানা প্রকারের জটিলতারই সৃষ্টি করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। যে বিয়েতে ছেলেমেয়ে বড় হয়ে নিজেদেরকে এমন এক বিয়ের বন্ধনে বন্দী-দশায় দেখতে পায়, যে বিয়েতে তাদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। আবার অনকে বিবাহিত ছেলেমেয়ে বড় ও বয়স্ক হওয়ার পর মন-মেজাজ ও স্বভাব-চরিত্রে পরস্পরে এমন পার্থক্য দেখতে পায়, যাতে করে দাম্পত্য জীবনের প্রতি তারা কোনো আকর্ষণই বোধ করতে পারে না। ফলে উভয় পক্ষের গার্জিয়ানদের মধ্যেও যথেষ্ট তিক্ততা এবং শেষ পর্যন্ত পরস্পরে প্রবল বিরোধ ও প্রকাশ্য শত্রুতা দেখা দেয়াও বিচিত্র কিছু নয়।

প্রাচীনকালে ইসলামী সমাজ-ব্যবস্থার পতন ও ভাঙ্গনের পর এমন এক সময় ছিল, যখন ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের কোনো মতামত নেয়া হতো না, আর তা ব্যক্ত করার জন্যেও অনুকূল পরিবেশ বর্তমান ছিল না। ফলে এ কাজ অলী-গার্জিয়ানরাই নিজেদের একচ্ছত্র অধিকার হিসেবে একান্তভাবে নিজেদের মতে এ কাজ সম্পন্ন করত। শেষ পর্যন্ত তারা এ কাজ ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত ছোট বয়সকলেই সম্পন্ন করে ফেলতে শুরু করল। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত এ ধরনের কাজকে ‘খুব ভালো কাজ’ বলে কখনোই ঘোষণা করেনি, না পারিবারিক ও দাম্পত্য সুখ-শান্তির দৃষ্টিতে এ কাজ কখনো কল্যাণকর হতে পারে। ছোট বয়সের বিয়েতে ছেলেমেয়েদের জীবনে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করা গেছে, তদ্দরুন এর প্রতি বর্তমান সমাজ-মানসে অতি যুক্তিসঙ্গতভাবেই তীব্র ঘৃণা ও প্রতিরোধ জেগে উঠেছে। এ কাজকে আজ কেউই ভালো ও শোভনীয় বা সমর্থনীয় মনের করতে পারছে না।

কিন্তু তাই বলে বিয়ের একটা বয়স নির্দিষ্ট করা এবং তার পূর্বে বিয়ে অনুষ্ঠানকে আইনের জোরে নিষিদ্ধ করে দেয়া, এমন কি যদি কেউ তা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযুক্ত জেল-জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত করা কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। ইসলামী শরীয়তে ছোট বয়সে ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিতে হুকুম করা হয়নি কিংবা স জন্যে উৎসাহও দেয়া হয়নি। কিন্তু এ কাজ যদি কোনো পিতা –গার্জিয়ান করেই –করা অপরিহার্য বলে মনে করে নানা বৈষয়িক বা সামাজিক কারণে, তাহলে তাকে জেল-জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত করার আইন প্রণয়নের অধিকার ইসলামী শরীয়তে কাউকেই দেয়া হয়নি।

বস্তুত ইসলামী আদর্শের দৃষ্টিকোণ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট। ইসলাম ব্যাপারটিকে উন্মুক্ত রেখে গিয়েছে এবং সমাজ-সংস্থার শান্তি-শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে তাই থাকা উচিত সর্বত্র। বিয়ে-শাদী সম্পর্কে ইসলামের সাধারণ আদেশ উপদেশ দাবি করে যে, পূর্ণ বয়সে ও কার্যত যৌন-সঙ্গমে সক্ষম হওয়ার পরই বিয়ে সম্পন্ন হওয়া উচিত। তবে তার পূর্বে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে নিষেধও করা হয়নি। কেননা ব্যাপারটি পিতা ও সমাজের সাধারণ অবস্থার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে যদি কোনো পিতা বা দাদা তার মেয়ে বা নাতনীকে ছোট বয়সে –বালেগা হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দিয়ে দেয় আর বালেগা হওয়ার পর যদি সে স্বামী তার পছন্দ না হয় তাহলে সে সেই বিয়েকে অস্বীকার করতে পারবে –শরীয়তে তার অবকাশ রয়েছে। ইমাম নববী উল্লেখ করেছেনঃ

(আরবী)

ইরাকী ফকীহগণ বলেছেন, ছোট্ট বয়সে বিয়ে দেয়া মেয়ে বালেগা হয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার অধিকার রাখে। (নববী শরহে মুসলিম)

তিনি আরও লিখেছেনঃ

(আরবী)

ইমাম আওযায়ী, আবূ হানীফা ও পূর্ববর্তী ফকীহগণ বলেছেন, ছোট্ট মেয়ে বিয়ে দেয়া সব কর্তৃপক্ষের জন্যেই জায়েয। তবে সে যখন বালেগা হবে, তখন সে বিয়ে রক্ষা করা কি ভেঙ্গে দেয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার তার নিজের। ইমাম আবূ ইউসুফ অবশ্য এ থেকে ভিন্ন মত পোষণ করেন।

এমতাবস্থায় ছোট্ট মেয়ে বিয়ে দেয়ার অনুমতি থাকায় মেয়েদের জন্যে কোনো ক্ষতিকারক হবে না। বালেগা হলে পরে তার বিয়ের প্রকৃত মালিক তো সে নিজেই। ইচ্ছা হলে ভেঙ্গে দিতে পারে। বিয়ের জন্যে ছেলেমেয়ের কোনো বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়ে ইসলাম পিতা বা গার্জিয়ানকে একটা বিশেষ বাধ্যবাধকতার মধ্যে বেঁধে দেয়নি। এ হচ্ছে বিশ্বমানবতার প্রতি ইসলামের বিশেষ অনুগ্রহ।

তাই একথা বলা যায় যে, বিয়ের কোনো বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া, তার পূর্বে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং তার জন্যে দণ্ড দান করা ইসলামের পরিপন্থী। মানবীয় নৈতিকতার দৃষ্টিতেও এ কাজ অত্যন্ত অসমীচীন। ইসলামের কোনো ফিকাহবিদই এ বিষয়টি সমর্থন করেন নি। বরং এ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে ইউরোপীয় সমাজ-আদর্শ এবং সেখান থেকেই এর অনুকূলে মতবাদ ও আইনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে দুনিয়ার বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও রাষ্ট্রে। এ হচ্ছে ইউরোপের সাংস্কৃতিক গোলামীর এক লজ্জ্বাকর দৃষ্টান্ত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন