hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

পরিবারের ভিত্তি
প্রাচীকাল থেকেই পরিবার দু’টি ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়ে এসেছে। একটি হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি-নিহিত স্বভাবজাত প্রবণতা। এই প্রবণতার কারণেই মানুষ চিরকাল পরিবার গঠন করতে ও পারিবারিক জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছে এবং পরিবারহীন জীবনে মানুষ অনুভব করেছে বিরাট শূন্যতা ও জীবনের চরম অসম্পূর্ণতা। পরিবারহীন মানুষ নোঙরহীন নৌকা বা বৃন্তচ্যুত পত্রের মতোই স্থিতিহীন।

আর দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে সমসাময়িককালের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় পরিবার ছিল বিশাল বিস্তৃত ক্ষেত্র। সমাজ ও জাতি গঠনের জন্যে তা-ই ছিল একমাত্র উপায়। এ কারণে প্রাচীনকালের গোত্র ছিল অধিকতর প্রশস্ত; এতদূর প্রশস্ত যে, নামমাত্র রক্তের সম্পর্কেও বহু এক-একটি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে পারত। এমন কি বাইরে থেকে যে লোকটিকে পরিবারের মধ্যে শামিল করে নেয়া হতো, তাকেও সকলেই উক্ত পরিবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে নিত। পরিবারের নিজস্ব একান্ত আপন লোকদের জান-মাল ও ইযযতের যেমন রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো, সেই বাইরে থেকে আসা লোকটিরও হেফাযত করা হতো অনুরূপ গুরুত্ব সহকারে। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজে ‘মুতাবান্না’ –পালিত পুত্র গ্রহণের রীতি ছিল, একথা সর্বজনবিদিত। ইউরোপে এই সেদিন পর্যন্তও পালিত পুত্রকে আইন সম্মতভাবেই বংশোদ্ভূত সন্তানের সমপর্যায়ভুক্ত মনে করা হতো। রোমান সভ্যতার ইতিহাস এর চেয়েও অগ্রসর। সেখানে জন্তু-জানোয়ারকে পর্যন্ত পরিবারের অংশ বলে মনে করা হতো; মর্যাদা তার যত কমই হোক না কেন। এ থেকে এ সত্য জানতে পারা যায় যে, প্রাচীনকালে অর্থনৈতিক প্রয়োজনেও পরিবারের পরিধি অধিকতর প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল।

সেকালে জীবন-জীবিকার বেশির ভাগই নির্ভরশীল ছিল চতুষ্পদ জন্তু ও কৃষি উৎপাদনের ওপর। এজন্যে প্রত্যেকটি পরিবারই এক বিশেষ ভূখণ্ডের ওপর প্রাচীন নির্মাণ করে নিজেদের এলাকা নির্দিষ্ট ও সুরক্ষিত করে রাখত। সে সীমার মধ্যে অপর কোনো পরিবারের লোক বা জন্তু-জানোয়ার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারত না। এর ফলে বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব-কলহের সৃষ্টি হওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর তাদের বিশেষ কোনো স্থানে একত্রিত ও সম্মিলিত হওয়ার মতো কেন্দ্র বলতে কিছুই ছিল না। তাদের মধ্যে ঐক্যের কোনো সূত্র বর্তমান থাকলেও উপায়-উপাদানের অভাব ও গোত্রীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এদিকে অগ্রসর হওয়ার পথে কঠিন বাঁধা হয়ে দাঁড়াত। এমনকি এক ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে যে-সব গোত্র বাস করত এবং যাদের মধ্যে জীবনের মূল্যমান ছিল এক ও অভিন্ন, তারাও পরস্পরের শত্রু এবং যুধ্যমান ও দ্বন্দ্ব-সংগ্রামশীল হয়ে থাকত। প্রতিটি গোত্র অপর গোত্রকে চরম শত্রুতার দৃষ্টিতে দেখত, পরস্পরের ক্ষতি সাধনের জন্যে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টাই তারা চালাত। মানবতার এই প্রাথমিক স্তরে নিজেও নিজ পরিবার-গোত্রের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে কোনো বিষয় ও সমস্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাও সম্ভব হত না কারো পক্ষে। আর চিন্তা ও কর্মের শত-সহস্র যোজন পার হয়ে আসার পর আজ মানুষও পারছে না আন্তর্জাতিক ও বিশাল মানবতার দৃষ্টিতে চিন্তা করার অভ্যাস করতে।

মানুষের নিকট নিজের জান ও মাল চিরকালই অত্যন্ত প্রিয় সম্পদ। এসবের জন্যেই মানুষ চেষ্টা ও শ্রম করত; সকল প্রকার বিপদ ও ঝুঁকির মুকাবিলা করত এবং তার সংরক্ষণের জন্যে সম্ভাব্য সকল রক্ষা-ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হতো। তাদের প্রিয় জান-প্রাণ সুরক্ষিত রাখার সব উপায় ও পথ অবলম্বন করা হতো। আর এবাবেই তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন-জীবিকার দ্রব্য সামগ্রী সংরক্ষিত হতো।

মানুষ যখন দেখতে পায় যে, তার জান মালে সংরক্ষণ তার পরিবার ও পারিবারিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, বিপদ-মুসিবতে ভারাক্রান্ত সমগ্র পরিবেশের মধ্যেতার পরিবারই হচ্ছে তার একমাত্র আশ্রয় –এ পরিবারই তাকে সর্বতোভাবে সংরক্ষণ করছে, শত্রুদের মুকাবিলায় সব সময়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তার দুঃখ-দরদ ও বিপদ-মুসিবতের বেলায় তার সাথে সমানভাবে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তখন তার পক্ষে পরিবারের সাথে পূর্ণমাত্রায় জড়িত ও একাত্ম হয়ে থাকাই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এক আরব কবি এ কারণেই বলেছেনঃ

(আরবী)

বিপদ-মুসিবতে তার ভাই যখন ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসে, আওয়াজ তোলে, তখন সে তার এ কাজের কোনো যুক্তি খুঁজে বেড়ায় না।

তখন শুধু বলেঃ

(আরবী)

আমি নিকটাত্মীয়তার হক আদায় করেছি, তোমার ভাগ্যের শপথ, যখন কোনো বিপদের ব্যাপার ঘটবে, তখন আমি অবশ্যই উপস্থিত থাকব।

(আরবী)

কোনো কঠিন বিপদকালে আমাকে ডাকা হলে আমি তোমার মর্যাদা রক্ষাকারীদের মধ্যে থাকব, শত্রু তোমার ওপর হামলা করলে আমি তোমার পক্ষে প্রতিরোধ করব।

গোত্র ও পরিবারের এক-একটি ব্যক্তি যখন তার এতখানি সাহায্যকারী ও সংরক্ষক হয়, তখন সে নিজেও পরিবার ও পরিবারের প্রত্যেকের জন্য নিজের সব কিছু কুরবান করতে প্রস্তুত না হয়ে কিছুতেই পারে না। তার বিপদের সময় নিজের জীবন ও প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে সে অবশ্যই প্রস্তুত হবে। আর এ ভাবধারা থেকেই গোত্র ও পারিবারিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার ভাবধারা উৎসারিত হয়; আপন ও পরের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়; তখন নিজ পরিবারের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সুখ্যাতি প্রচার করা হয়; এ হচ্ছে মনের স্বাভাবিক ভাবধারার মূর্ত প্রকাশ। তাদের কীর্তিকলাপ নিয়ে গৌরব করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করাক নিজের সৌভাগ্যের বিষয় বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানকালের রাজনৈতিক ও দলীয় নেতার প্রতি যেরূপ আনুগত্য ও ভক্তি-শ্রদ্ধার অভিব্যক্তি ঘটে, তারই তাগিদে তাদের কীর্তিগাঁথাকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাদের ভুল-ভ্রান্তিকে ভালো অর্থে গ্রহণ করে তাকে সুন্দর ব্যাখ্যার চাকচিক্যময় বেড়াজালে লুকিয়ে রাখার জন্যে প্রাণপণে চেষ্টা করা হয়; সেকালে বংশীয় নেতা ও গোত্রপতিদের সম্পর্কেও গ্রহণ করা হতো অনুরূপ ভূমিকা। কেননা তাদের স্বপ্ন-সাধের বাস্তব প্রতিফলন তারা তাদের মধ্যেই দেখতে পেত। তাদের সাথে বন্ধন স্থাপন করেই তারা নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপায়িত করে তুলত।

এক কথায় বলা যায়, প্রাচীনকালে পরিবার ছিল এ কালের এক-একটি রাজনৈতিক দলের মতোই। এজন্যে সেকালের রাষ্ট্রনীতির বিস্তারিত রূপ আমরা দেখতে পাই সেকালের এক-একটি পরিবার-সংস্থার মধ্যে। সেকালের পরিবার অপর কোনো উচ্চতর উদ্দেশ্য পালনের বাহন ছিল না; বরং পরিবারই ছিল সেখানে মুখ্যতম প্রতিষ্ঠান। মানুষের পরস্পরের মধ্যে সেখানে সম্পর্ক স্থাপিত হতো ‘রেহেম’ ও রক্ত ন্যায়ের ভিত্তি ছিল বংশীয় সম্পর্ক, সেখানে বংশ ও পরিবারের গুরুত্ব যে কত দূর বেশী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা চলে। এরূপ অবস্থায় মানুষ নিজেকে রক্ষা করার জন্যে আলোচ, পানি ও হাওয়ার মতো পরিবার ও পারিবারিক জীবনের সাথে জড়িত হয়ে থাকতে বাধ্য হবে –এটাই স্বাভাবিক। অন্যথায় সে হয় নিজেকে আপন লোকেরই জুলুম-নির্যাতনের তলে নিষ্পিষ্ট করবে অথবা অপর লোকদের দ্বারা হবে সে নির্যাতিত, নিগৃহীত এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে চিরবঞ্চিত।

কিন্তু সভ্যতার যখন ক্রমবিকাশ সংঘটিত হলো, জীবন-জীবিকা ও জীবনযাত্রা নির্বানের জন্য অপরিহার্য অন্যান্যা উপায়-উপাদান ও দ্রব্য-সামগ্রী যখন মানুষ করায়ত্ত করতে সমর্থ হলো তখন বিভিন্ন পরিবার ও গোত্রের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা স্থাপনের নানা পথ ও উপায় উদ্ভাবিত হলো। বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের মধ্যে বংশ ও রক্তের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের একই কেন্দ্রে মিলিত ও একত্রিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হলো। এ অবস্থায় মানুষের মধ্যে একতা ও ঐক্য বিধানের জন্যে কেবল আত্মীয় ও রক্ত সম্পর্কই একমাত্র ভিত্তি হয়ে থাকল না, স্বাভাবিক ও জৈবিক উপায় উপাদানের ঐক্য, ভৌগোলিক সীমা, ভাষা ও বর্ণের অভিন্নতা প্রভৃতি তার স্থান দখল করে বসল। ফলে পরিবার ও গোত্র সম্পর্কিত প্রাচীন ধারণা তলিয়ে যেতে লাগল, আর তার স্থানে জাতীয়তার বীজ বপিত ও অংকুরিত হয়ে ক্রমশ তা বর্ধিত হতে থাকল। পরিবার ও পারিবারিক ব্যবস্থা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। জাতি ও স্বদেশের প্রতি মানুষের লক্ষ্য আরোপিত হলো। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং ঘৃণা শত্রুতার মানদণ্ডও তখন পুরাপুরিভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেল।

এ কারণে পরিবার আজকের দুনিয়ার সমাজ-বিজ্ঞানীদের নিকট অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, পরিবারের বাস্তবিকই কোনো গুরুত্ব আছে কি? আর গুরুত্ব থাকলেও তা কতখানি?

মূলত এ প্রশ্ন অত্যন্ত গভীর সমাজতত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত। এর জবাব না পাওয়া গেলে সমাজের অন্যান্য সমস্যারও কোনো সমাধান লাভ করা সম্ভব হতে পারে না। কাজেই বিষয়টিকে নিম্নোক্তভাবে কয়েকটি দিক দিয়ে বিবেচনা করে দেখতে হবেঃ

১. সমাজের সাফল্য ও উন্নতি লাভের জন্যপরিবার কি সত্যিই জরুরী?

২. পুরুষ ও নারীর মাঝে সম্পর্কের সাধারণ রূপ কি এবং উভয়ের কর্মক্ষেত্রের সীমা কতদূর প্রসারিত?

৩. পরিবারের ক্ষেত্রই বা কতখানি প্রশস্ত?

৪. পরিবারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন