hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১৭
পরিবার-বিরোধী যুক্তির জবাব
পরিবার-বিরোধীদের উক্ত রূপ কথাগুরোর বিস্তারিত জবাব তো এ গ্রন্থের প্রতি পৃষ্ঠায়ই দেয়া হবে।তবে এখানে একত্রে ও সংক্ষেপে এক-একটি যুক্তির জবাব দেয়া হচ্ছে।

১.প্রথম যুক্তি হিসেবে বলা কথাগুলো প্রকৃত ব্যাপার ভুল দৃষ্টি-ভঙ্গিতে পর্যবেক্ষণের মারাত্মক ফল, সন্দেহ নেই। নিজেরই ঘর ও পরিবারের কাজে-কর্মে ব্যতিব্যস্ত থাকা যে নারীর অসহায়তার প্রমাণ নয়, তা সকলেই বুঝতে পারেন। এজন্যে সমাজ-পরিবেশে নারীর কোনো লাঞ্ছনা হতে পারে না, না এজন্যে তাকে ঘৃণা করা যেতে পারে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে যেমন রুজী-রোজগারের উদ্দেশ্যে চেষ্টা করতে বাধ্য, অনুরূপভাবে তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, তৃপ্তি ও নিশ্চিন্ততা সুষ্ঠু নিরবচ্ছিন্ন জীবন যাপন ও উপার্জিত ধন-সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যয়-বণ্টন করতে পারার ওপর নির্ভরশীল। এক ব্যক্তি কেবল উপার্জন করতে সক্ষম, কিন্তু সে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ, অবুঝ। আর এক ব্যক্তির অর্থ উপার্জন করার কোনো যোগ্যতাই নেই। পরিণামের দৃষ্টিতে দু’জনার মধ্যে কোনো পার্থক্যই খুঁজে পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় ব্যক্তি যেমন উপার্জনহীন হওয়ার কারণে নিজের প্রয়োজন পূরণে অক্ষম, প্রথম ব্যক্তিও ঠিক তেমনি স্বীয় অযোগ্যতা ও কু-অভ্যাসের কারণে বিপদ আপনের সম্মুখীন হতে বাধ্য।

পরিবার সংস্থা মূলত নারী ও পুরুষের সম্মিলিত ও পরস্পরের সম-অধিকারসম্পন্ন এক যৌথ প্রতিষ্ঠান। এখানে উভয়ই একত্রে সম্মিলিত জীবন যাপন করে। এ সম্মিলিত জীবনে পুরুষ ঘরের বাইরের কাজ-কর্মের জন্য দায়িত্বশীল, আর স্ত্রী ঘরের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক –ঘরের রানী। এখানে একজনের ওপর অপরজনের মৌলিক শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্যের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। একটি প্রাসাদ রচনার জন্যে যেমন দরকার ইঁটের, তেমনি প্রয়োজন চুনা-সুরকি বা সিমেন্ট-বালির। যদি বলা যায়, ইঁট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান; তাহলে জিজ্ঞাস্য হবে, কেবল ইঁটই কি পারবে বিরাট বিরাট প্রাসাদ নির্মাণ করতে? …..পারিবারিক জীবন প্রাসাদ রচনায় নারী ও পুরুষের ব্যাপারটি ঠিক এমনি। একটি সুন্দর পরিবার গঠনে যেমন পুরুষের যোগ্যতা-কর্মক্ষমতার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি অপরিহার্য নারীর বিশেষ ধরনের যোগ্যতা ও কর্ম-প্রেরণার –যা অন্য কারো মধ্যে পাওয়া যাবে না।

২. দ্বিতীয় যুক্তি সম্পর্কে বলা যায়, যে-সমাজ নারীর পক্ষে অর্থোপার্জনের সকল দ্বারই চিররুদ্ধ কেবল সে-সমাজ সম্পর্কেই একথা খাটে। কেননা সেখানে নারীর অস্তিত্ব কেবলমাত্র পুরুষের পাশবিক বৃত্তির চরিতার্থতার উদ্দেশ্যই একান্তভাবে নিয়োজিত থাকে। নারী সেখানে না কোনো জিনিসের মালিক হতে পারে, না পারে কোনো ব্যাপারে নিজের মত খাটাতে। কিন্তু এখানে আমরা যে সমাজ-পরিবারের ব্যবস্থা পেশ করতে যাচ্ছি, তার সম্পর্কে একথা কিছুতেই সত্য ও প্রযোজ্য হতে পারে না। কেননা ইসলাম নারীকে ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার দেয়, মীরাসের অংশও সে আইনত লাভ করে থাকে। কিন্তু নারীর দৈহিক গঠন ও মন-মেজাজের বিশেষ রূপ ও ধরন রয়েছে, যা পুরুষ থেকে ভিন্নতর। এ কারণে অর্থোপার্জনের মতো কঠিন ও কঠোর কাজের দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয়নি। পুরুষই তার যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে দায়ী হয়ে থাকে। বিশেষত ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় নারী এক দায়িত্বপূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিতা। অর্থোপার্জনের চিন্তা-ভাবনা ও খাটা-খাটনীর সাথে তার কোনো মিল নেই, শুধু তাই নয়, তা করতে গেলে নারী তার আসল দায়িত্ব পালনেই বরং ব্যর্থ হতে বাধ্য।

অন্য এক দিক দিয়েও বিষয়টির পর্যালোচনা করা যেতে পারে। প্রকৃত ব্যাপারকে ভুল দৃষ্টিতে বিচার করলে সঠিক ফল লাভ সম্ভব হতে পারে না। অতীতে নারী অর্থনৈতিক ব্যাপারে পুরুষের মুখাপেক্ষী ছিল বলেই যে সে পুরুসের অধীন বা দাসী হয়ে থাকতে বধ্য হতো এমন কথা বলা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয় –পারিবারিক জীনের বহুতর ঘটনা এর তীব্র প্রতিবাদ করছে।

চিন্তা করা যায়, যে নারীর স্বামী পঙ্গু, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, পরিবারের প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের সম্পূর্ণ অক্ষম, তাকে কোন জিনিস প্রেম-ভালোবাসা ওসেবা-যত্নের বন্ধনে বেঁধে রাখে? কেন সে এমন অপদার্থ স্বামীকে ফেলে চলে যায় না, এ হেন স্বামীর জন্যকেন সে নিজ জীবনের আরাম আয়েশপূর্ণ উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে পর্যন্ত অকাতরে কুরবান করছে? একটি নারী দুনিয়ার সব ধন-দৌলত, সুখ-সম্ভোগ ও আরাম-আয়েশের ওপর পদাঘাত করেও বিয়ে সম্পর্ককে কেন বাঁচিয়ে রাখে, স্বামীকেই গ্রহণ করে? যে-সমাজ নারীকে আনন্দ স্ফুর্তি সুখ-সম্ভোগের গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়ার সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধে করে দিচ্ছে, সেখানেও কেন এরূপ ঘটনা সাধারণভাবেই ঘটছে? –কি তার ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে?

বাস্তব দৃষ্টিতে চিন্তা করলে দেখা যাবে, স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের তত বেশী ভূমিকা নেই, যত আছে অন্যান্য কার্যকারণের। তা না হলে দাম্পত্য জীবনে এমন সব ঘটনা নিত্য ঘটছে, যার দরুন এ সম্পর্কই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া ছিল অতি স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে অর্থনৈতিক ভিত্তিতে দুজনকে একত্রিত করার কোনো কারণই দৃষ্টিগোচর হয় না বলে সে দাম্পত্য জীবন অটুটই থেকে যায়।

স্বামী-স্ত্রীর মিলনের আসল কারণ হচ্ছে প্রেম-ভালোবাসা, অন্তরের স্বতঃস্ফুর্ত দরদ ও প্রণয়-প্রীতি, যা স্বভাবতই দুজনার মধ্যে বিরাজ করছে। স্বামী ও স্ত্রী উভয় পরস্পরের জন্যে যে অপরিসীম ভালোবাসাও তীব্র আকর্ষণ বোধ করে, পারিবারিক জীবন-সংস্থা তারই স্থিতিস্থাপকতা বিধান করে। তারা এ জিনিসকে সাময়িকভাবে একত্রিত হওয়ার ভিত্তি বানাতে কখনো রাজি হতে পারে না। বরং তাদের জীবনে এমন কতগুলো লক্ষ্যও উদ্দেশ্য উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হতে থাকে, যার পরিপূরণের জন্যে তাদের সমগ্র জীবনকে অকাতরে ও ঐকান্তিকভাবে লাগিয়ে দেয়। তারা একটি নবতর বংশ সৃষ্টি করাই দায়িত্বই পালন করে না, তাদের লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষা দান করে, সমাজের একটা কল্যাণকর অংশে পরিণত করার কাজও তারা-ই করে। এসব উদ্দেশ্য স্বামী-স্ত্রীকে নিছক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও অনেক ঊর্ধ্বে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

৩. তৃতীয় যুক্তিটি মানবীয় অনুভূতি ও আন্তরিক ভাবধারার ভুল ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল। সন্তানের প্রতি স্নেহ-বাৎসল্যের পশ্চাতেও কোন অর্থনৈতিক স্বার্থবোধ নিহিত রয়েছে বলে ধরে নিলে বলতে হয়, ধনী লোকদের মনে সন্তান কামনা বলতে কিছুই থাকা উচিত নয়। আর সন্তান হলে তাদের জন্যে কোন স্নেহ-মায়াও থাকা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তো তা নয়। যে শিশু পঙ্গু, অন্ধ, যার থেকে কোনো প্রকারের অর্থনৈতিক স্বার্থ লাভের একবিন্দু আশা থাকে না, বরং বাপ-মায়ের ওপর যে কেবল বোঝা হয়েই রয়েছে, এমন সন্তানকে বাপ-মা কেন বুকে জড়িয়ে রাখে? তার খবরাখবরের জন্যে তার সেবা-শুশ্রূসা ও তাকে আদর-যত্ন করার জন্যে পিতা মাতা কেন সতত উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে? সে অনেক টাকা রোজগার করে বাপ-মাকে সাহায্য করবে, এমন কোন আশা কেউ পোষণ করে কি? –বিবেকের কাছে এ যুক্তিটি আদৌ টিকে না।

প্রকৃত ব্যাপার এই যে, সৃষ্টিকর্তা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানব বংশকে ও গোটা সৃষ্টিলোককে বাঁচিয়ে রাখতে চান, এজন্যে প্রত্যেকটি সৃষ্টির মধ্যেই এমন কিছু স্বাভাবিক দাবি ও প্রবণতা রেখেছেন, যা তাকে আত্মসচেতন করে বাঁচিয়ে রাখে এবং তার নিজের ধ্বংসের পূর্বেই তার স্থলাভিষিক্ত, তার বংশধর তৈরী করতে তাকে বাধ্য করে। এই স্বাভাবিক ভাবধারা নিঃশেষ হয়ে গেলে কোনো সৃষ্টিকেই তার চূড়ান্ত নিশ্চিহ্নতা থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়। শূন্যলোকের স্বাধীন মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ায় যে পাখি, তাকেও এই স্বভাবগত দাবির জন্যেই খড়কুটো আহরণ করে নীড় রচনা করতে হয় এবং স্বাভাবিক কারণেই স্বীয় বংশধরের জন্যে আবাসকেন্দ্র গড়ে তুলতে সাধ্য হতে হয়। তার পরও তাকে সে বংশধরদের বাঁচিয়ে রাখা –লালন পালন করার জন্যে, শত্রুদের হামলা থেকে তাদের রক্ষা করার জন্যে সতত ব্যস্ত হয়ে থাকতে হয়। গোটা সৃষ্টিলোকেরই এই অবস্থা। আর এই সবই যদি নিতান্ত স্বভাবগত প্রবণতার কারণেই হয়ে থাকে, তাহলে মানুষের এ স্বাভাবিক প্রবণতা ও তৎপ্রসূত কাজকে অর্থনৈতিক কারণমূলক মনে করা হবে কেন, -কোন যুক্তিতে?

৪. চতুর্থ যুক্তির জবাবে বলতে হচ্ছে, পারিবারিক ব্যবস্থা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। এ উদ্দেশ্যের বাস্তবিকই যদি কোন গুরুত্ব থেকে থাকে আর মানবতার কল্যাণের জন্যেই তার বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে থাকে, তাহলে এ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয় যেসব অবস্থা, তা মানবতার পক্ষে কিছুতেই কল্যাণকর হতে পারে না। কোনো প্রতিষ্ঠান (Institution) কায়েম করাই কোনো উদ্দেশ্য হতে পারে না, মানবতার দুঃখ-দরদ ও যন্ত্রণা-লাঞ্ছনা বিদূরণই হচ্ছে আসল লক্ষ্য। কোনো প্রতিষ্ঠান এ উদ্দেশ্যের প্রতিবন্ধক হলে তার মূলোৎপাটনই বাঞ্ছনীয়। সন্তান ও পিতা-মাতার পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করা ও তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ এনে দেয়ার জন্যে আজ যে-সব প্রতিষ্ঠান দাঁড় করা হয়েছে, পারিবারিক ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কায়েম রেখে সে সব প্রতিষ্ঠানকে কল্যাণকর ভূমিকায় নিয়োজিত করা যায় কিনা, তাও তো গভীরভাবে ভেবে দেখা আবশ্যক। এ যদি সম্ভবই না হয়, তাহলে বলতে হবে, মানুষ প্রথমে পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, তারপরে তার কৃত্রিম বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে –শূন্যস্থান পূরণের জন্যে মাত্র –এসব প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানো হয়েছে। বস্তুত পরিবার ব্যবস্থাকে যথাযথ কায়েম রেখেও এসব প্রতিস্ঠানকে ভবিষ্যৎ মানব বংশের জন্যে কল্যাণকর বানানো যেতে পারে –কিংবা পরিবার ব্যবস্থার অনুকূলে এ ধরনের নবতর আরো অনেক প্রতিষ্ঠান কায়েম করা যেতে পারে –তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

৫. পঞ্চম যুক্তিটি এমন যা পেশ করতে আধুনিক যুগের লজ্জাবনত হওয়া উচিত বলেই মনে করি। বর্তমান যুগে যেভাবে শিশু-সন্তানদের লালন-পালন করা হচ্ছে, তার বীভৎস পরিণতি দুনিয়ার সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রকৃত মনুষ্যত্বের দিকে এগিয়ে দেয়ার পরিবর্তে নিতান্ত পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে। আজকের মানুষের হিংস্রতা ও বর্বরতা জঙ্গলের রক্তজীবী পশুকেও লজ্জা দেয়। আজকের মানব সমাজ জাহান্নামে পর্যবসিত হয়েছে। তার একটি মাত্রই কারণ এবং তা হচ্ছে এই যে, মানুষকে ভালোবাসা, দরদ, প্রীতি, সহানুভূতি প্রভৃতি সুকোমল ভাবধারা থেকে বঞ্চিত করে দিলে তখন আর মানুষ মানুষ থাকবে না, জংগলের হিংস্র জন্তু ও তার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না –এই কথাটি আজ সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত। অথচ মানুষের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না –এই কথাটি আজ সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত। অথচ মানুষের স্বভাবগত এই প্রেম-ভালোবাসা, দরদপ্রীতি স্বাভাবিকভাবে লালিত-পালিত হলে তা মানুষকে ফেরেশতার চেয়েও অধিক মহিমান্বিত বানিয়ে দিতে পারে। আইনের কঠোর শাসন দিয়ে মানুষকে বন্দী জানোয়ার তো বানানো যেতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব নয়। মায়ের মমতা ও স্নেহময় ক্রোড়ই তা জাগাতে পারে। মা তার মমতাসিক্ত দৃষ্টি দিয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে মনুষ্যত্বের এমন উচ্চতর জ্ঞান শিক্ষা দিতে পারে, এমন সব মহৎ গুণে তাকে ভূষিত করতে পারে, যা এখনকার কোনো ট্রেনিং কেনদ্র আর কোনো গবেষণাগারও করতে পারবে না। বস্তুত মা শিশুকে কেবল স্তনই দেয় না, প্রতি মুহুর্তের সাহচর্যে অলক্ষ্যে এমন সব ভাবধারা মগজে বসিয়ে দেয়, যার দরুন এক ক্ষীণ, দুর্বলপ্রাণ শিশু জীবিত থাকে, লালন-পালনে ক্রমশ বর্ধিত হয়ে ওঠে। মায়ের ঘুমপাড়ানি গান শিশুর চোখে কেবল ঘুমই এনে দেয় না, শত্রুতা, ঘৃণা, হিংসা ও মানসিক কুটিলতাকেও স্নেহ-মমতার নির্মল স্রোতধারায় ভাসিয়ে দেয়।

আজকের মা-বাপ খুব ব্যস্ত –এতদূর ব্যস্ত যে, নিজ ঔরসজাত আর গর্ভজাত সন্তানেরও লালন-পালন করার একবিন্দু অবসর পায় না –এ একটি ভিত্তিহীন কথা। মানুষ আজ প্রকৃতই ব্যস্ত নয়, ব্যস্ততার বিলাসিতায় দিগভ্রান্ত মাত্র, যার কারনে মানুষের আসল কর্তব্য আজ উপেক্ষিত হচ্ছে, পাশ কাটাতে চেষ্টা করা হচ্ছে নিতান্ত অবহেলায়। মানুষ আজ দুনিয়ায় অমূলক ভোগ-সম্ভোগের গড্ডালিকা প্রবাহে নিরুদ্দেশের পানে ছুটে চলছে। সকলকে বঞ্চিত করে সকলের ভাগের সব কিছু একাই লুটে পুটে নেয়ার উদ্দাম নেশায় আজকের মানুষ দিশেহারা। ফলে তার আসল মানবীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্যায়ভাবে বর্জিত, অবহেলিত। পরিবার ও পারিবারিক জীবনের প্রতি আজকের মানুষের বিরাগের মূল কারণই হচ্ছে এই। বিবাহিত হয়ে দায়িত্বশীল জীবনের বোঝা আজকের মানুষ মন-মেজাজের কাছে যেন একান্তই দুর্বহ হয়ে পড়েছে। তাই সে পরিবারের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আযাদ ও মুক্ত দিনাতিপাত করতেই অধিকতর আগ্রহী। এজন্যেই সে নিজ ঔরসজাত –গর্ভজাত সন্তানকে নার্সারী হোমে পাঠিয়ে দিয়ে সব ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে চাচ্ছে। একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার দায়িত্ব না নিয়ে রক্ষিতা আর পতিতা দ্বারা –পাশবিক বৃত্তি চরিতার্থ করে যাচ্ছে।

একটু সহজ দৃষ্টিতে বিচার করলেই দেখা যাবে, পরিবার অতি ক্ষুদ্র ও হালকা একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র। তার অবশ্য কিছু বাধ্যবাধকতা আছে, আছে কিছু দাবি ও দায়দায়িত্ব। লালন-পালন ও সংগঠনের জন্যে তার নিজস্ব কতগুলো বিশেষ নিয়ম-প্রণালীও রয়েছে। যারা পারিবারিক জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত, তারা সেসব সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম। আর তারাই সেসবের মনস্তাত্ত্বিক ও অভ্যন্তরীণ ভাবধারাকে যথাযথ রক্সা করে তার লালন-পালনের কর্তব্যও সঠিকভাবে পালন করতে পারে। পক্ষান্তরে রাষ্ট্র হচ্ছে একটি ব্যাপক বড় ও ভারী প্রতিষ্ঠান, যাকে প্রধানত আইন ও শাসনের ভিত্তিতেই চলতে হয়। এখন পরিবারকে ভেঙ্গে দিয়ে যদি গোটা রাষ্ট্রকে একটি পরিবারে পরিণত করে দেয়া হয়, তাহলে পরিবারের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক যে আন্তরিকতা ও দরদ-প্রীতির ফল্গুধারা প্রবাহিত তা নিঃশেষে ফুরিয়ে যাবে। রাষ্ট্র পরিবারের আইন-বিধানের প্রয়োজন তো পূরণ করতে পারে; কিন্তু নিকটাত্মীয় ও রক্ত সম্পর্কের লোকদের পারস্পরিক আন্তরিক ভাবধারার বিকল্প সৃষ্টি করতে সক্ষম নয় কোনক্রমেই।

মানুষের প্রকৃতিই এমনি যে, তাকে যতদূর সীমাবদ্ধ পরিবেশের মধ্যে রেখে লালন-পালন করা হবে, তার অভ্যন্তরীণ যোগ্যতা-প্রতিভা তত বেশী বিকাশ স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা লাভ করতে সক্ষম হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে অগ্রসর হয়েই মানুষ বৃহত্তর দায়িত্ব পালনের যোগ্য হতে পারে। পরিবার ব্যবস্থাকে খতম করে দিয়ে মানব সন্তানকে যদি রাষ্ট্রের বিশাল উন্মুক্ত পরিবেশে সহসাই নিক্ষেপ করে দেয়া হয়, তাহলে তার পক্ষে সঠিক যোগ্যতা নিয়ে গ ওঠা কখনই সম্ভব হবে না। পরন্তু পরিবারকে রাষ্ট্রীয় প্রভাবের বাইরে যথাযথভাবে রক্ষা করা হলে তা মানব বংশের জন্যে এক উপযুক্ত প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র (Training centre) হতে পারে, যার ফলে উত্তরকালে তারাই রাষ্ট্রের বিরাট দায়িত্ব পালনের যোগ্যতায় ভূষিত হবার সুযোগ পাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন