মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
পূর্বেই আলোচনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেয়েদের আসল স্থানই হচ্ছে তার ঘর। এমন কি নামাযের জন্যে তাদের বাইরে যাওয়াও দরকারী নয়, পছন্দনীয় নয়। তবে ঘরের মধ্যে অবরোধবাসীনী হয়ে থাকাও ইসলামের কোনো বিধান নয়। প্রয়োজন হলে, নিরুপায় হলে তারা অবশ্য ঘরের বাইরে যেতে পারে, কিন্তু যেতে হবে পূর্ণাবয়ব আবৃত করে, পুরামাত্রায় পর্দা রক্ষা করে। এখন প্রশ্ন এই, নামাযও তেমন কোনো প্রয়োজন কিনা, যার জন্যে ঘর থেকে মসজিদে কিংবা ময়দানে যাওয়া যেতে পারে। এ সম্পর্কে সম্যক আলোচনা আমরা এখানে পেশ করতে চাই।
মেয়েদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে তিন ধরনের হাদীস একই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে। এক ধরনের হাদীসে মেয়েদের মসজিদে যেতে নিষেধ না করতে আদেশ করা হয়েছে। তার মানে সে হাদীসসমূহ মসজিদে মেয়েদের যাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট অনুমতি রয়েছে। যেমন নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
তোমরা আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।
অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ আল্লাহর বাঁদীদেরকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করো না।
হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
কোনো ব্যক্তিই যেন তার পরিবার-পরিজনকে মসজিদে যেতে কখনোই নিষেধ না করে।
তখন আবদুল্লাহ ইবনে উমরের বিলাল নামক এক পুত্র বলে উঠলঃ আমরা তো নিষেধ করবই। তখন ইবনে উমর বললেনঃ
আমি তো তোমাকে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর হাদীস শোনাচ্ছি, আর তার মুকাবিলায় তুমি এ ধলনের কথাবার্তা বলছ?
(আরবী)
হাদীস বর্ণনাকারী বলেন যে, এ ঘটনার পর হযরত ইবনে উমর তাঁর এ পুত্রের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত আর কথা বলেন নি।
এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
মেয়েরা মসজিদে যাওয়ার জন্যে তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তোমরা তাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অধিকার ভোগ তেকে নিষেধ করো না।
হাদীসের ভাষা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মেয়েদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর সে যাওয়ার অধিকার তারা ভোগ ও ব্যবহার করতে চাইলে তা থেকে তাদের বঞ্চিত রাখার অধিকার কারোরই নেই।
বুখারী উদ্ধৃত এক হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, বিশেষ করে রাতের বেলা যদি মেয়েরা মসজিদে যেতে চায়, তাহরে তাদের নিষেধ করা নিষেধ।
নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
তোমাদের মেয়েরা যতি রাতের বেলা মসজিদে যাওয়ার জন্যে তোমাদের কাছে অনুমতি চায়, তবে অনুমতি দাও।
অনুমতি চাইলে অনুমতি দিতে নবী করীম (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলে করীম (ﷺ)-এর এ নির্দেশ কি অবশ্য পালনীয় –অথবা পালনীয় নয়? দ্বিতীয়ত প্রথম দিকে উল্লিখিত হাদীসসমূহে রাতের বেলার কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু বুখারী উদ্ধৃত এ হাদীসে রাতের বেলার শর্ত রয়েছে। তার মানে, রাতের বেলা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তখন মেয়েদেরকে বিশেষভাবে এ অনুমতি দিতে স্বামী বা ঘরের মুরব্বী অবশ্যই বাধা হবে।
দ্বিতীয় ধরনের হাদীস থেকে জানা যায় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে মেয়েদের মসজিদে যেতে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। এ ধরনের এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
কোনো মেয়েলোক সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে গেলে আল্লাহ তার নামায কবুল করবেন না, যতক্ষণ সে ফরয গোসলের মতো গোসল করে সেই সুগন্ধি দূর করে নামাযে না দাঁড়াবে অর্থাৎ সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে গেলেও নামায পড়লে সেই নামায আল্লাহর দরবারে কখনো কবুল হবে না।
এক হাদীসে মহিলাদের লক্ষ্য করে রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
তোমাদের কেউ যখন এশার নামাযের জন্যে ঘর থেকে বের হবে, তখন সুগন্ধি স্পর্শ পর্যন্ত করবে না।
আর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
আকর্ষণীয় সুগন্ধি না দিয়ে যেন মেয়েরা ঘরের বাইরে যায়।
আর তৃতীয় ধরনের হাদীসে মেয়েদের নামাযের জন্যে মসজিদ অপেক্ষা তাদের ঘরের অন্ধকারাচ্ছন্ন কুঠরীই অধিক ভালো বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যার দুটি হাদীস উপরে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এ সব ধরনের হাদীস সামনে রেখে মেয়েদের নামাযের জন্যে মসজিদে গমন সম্পর্কে শরীয়তের লক্ষ্য জানবার জন্যে মুহাদ্দিস ও ইসলামী মনীষীবৃন্দ চেষ্টা-গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁদের গবেষণার সারাংশ এখানে উদ্ধৃত করা যাচ্ছে।
প্রখ্যাত ‘হিদায়া’ গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
নামাযের বিভিন্ন জামা’আতে মেয়েলোকদের শরীক হওয়া ‘মাকরূহ’।
কোন মেয়ের শরীক হওয়া মাকরূহ? এ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেন, যুবতী মেয়েদের পক্ষে শরীক হওয়া মাকরূহ। আর ‘নামাযের জামা’আত’ বলতে জুম’আ, ঈদ, সূর্যগ্রহণ, ইস্তিসকা, পানির জন্য প্রার্থনা প্রভৃতি নামাযে যেসব প্রকাশ্য জামা’আত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, তা সবই এর মধ্যে শামিল। ইমাম শাফেয়ীর মত হচ্ছেঃ
(আরবী)
নামাযের জন্যে মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়া মুবাহ।
হানাফী মাযহাবের মনীষীদের দৃষ্টিতে তা জায়েয নয়। তার কারণ দর্শাতে গিয়ে তাঁরা বলেছেনঃ
(আরবী)
কেননা মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়াই হচ্ছে নৈতিক বিপদের কারণ, আর তাই হচ্ছে হারাম কাজের নিমিত্ত। আর যাই হারাম কাজ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়, তাই হারাম।
এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বলা যায়, যারা এ কাজকে মাকরূহ বলেছেন, সে মাকরূহ মানেই হচ্ছে হারাম –বিশেষ করে বর্তমান যুগ-সমাজে। কেননা এ সমাজে বিপদের কারণ সর্বত্র ও সর্বাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা এও বলেছেন যেঃ
(আরবী)
বৃদ্ধা মেয়েলোকদের পক্ষে ফজর, মাগরিব ও এশার জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্যে বাইরে যাওয়ার কোনো দোষ নেই। কেননা তাদের ব্যাপারে পূর্ণ নৈতিক নিরাপত্তা বিদ্যমান। আর এ মত হচ্ছে কেবল ইমাম আবূ হানীফার।
কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মদের মতে বৃদ্ধা মেয়েরা তো সব রকমের নামাযের জামা’আতেই শরীক হতে পারে। কেননা তাদের প্রতি পুরুষ লোকদের আগ্রহ-কৌতুহল কম হওয়ার কারণে কোন বিপদের আশংকা থাকবার কথা নয়।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মেয়েদের অনুমতি দেয়াই বাঞ্ছনীয়, যে কাজে তার ফায়দা, তা থেকে তাকে নিষেধ করা যায় না। এ কথা তখনকার জন্যে, যখন বাইরে গেলে মেয়েদের ওপর কোনো বিপদ ঘটার কিংবা মেয়েদের নিয়ে অপর কোনো বিপদ সংঘটিত হওয়ার কোনোই আশংকা বা ভয়=ভীতি থাকবে না।
এ কথারই প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে হযরত আয়েশা (রা)-এর নিম্নোদ্ধৃত বাণী। তিনি বলেছেনঃ
(আরবী)
এ মেয়েরা কি নতুন চাল-চলন গ্রহণ করেছে, তা যদি রাসূলে করীম (ﷺ) দেখতে পেতেন, তাহলে তিনি এদেরকে মসজিদে যেতে অবশ্যই নিষেধ করতেন, যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনী ইসরাইলের মেয়েদের।
ইমাম মালিক (রহ) বলেছেনঃ
(আরবী)
মসজিদে যাওয়ার অনুমতি সংক্রান্ত এ হাদীসের মতো অন্যান্য হাদীসে কেবলমাত্র বৃদ্ধাদের সম্পর্কেই প্রযোজ্য।
কিন্তু ইমাম নববী বলেছেনঃ
(আরবী)
মেয়েদের জন্যে –সে বৃদ্ধাই হোক না কেন –নিজেদের ঘরের তুলনায় আর কোনো জায়গা কল্যাণকর হতে পারে না -নেই।
তিনি প্রথম প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন হযরত ইবনে মাসঊদের নিম্নোদ্ধৃত কথা। তিনি বলেছেনঃ
(আরবী)
মেয়েদের আপাদমস্তকই পর্দার জিনিস। তাদের ঘরের গোপন কোঠায় থাকাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের পক্ষে অধিক উপযোগী। কেননা তারা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাদের পিছু নেয়।
একটি মেয়েলোক হযরত ইবনে মাসউদের কাছে জুম’আর দিন মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বললেনঃ
আজকের যুগে মেয়েদের ঈদের নামাযের জন্যে বের হয়ে যাওয়া আমি পছন্দ করিনে। যদি কোনো স্ত্রীলোক বের হতেই জিদ ধরে তবে তার স্বামীর উচিত তাকে অনুমতি দেয়া এই শর্তে যে, সে তার পুরানো পোশাক পরে যাবে এবং অলংকারাদি পরে যাবে না। আর সেভাবে বের হতে রাজি না হলে সুসাজে সজ্জিতা হয়ে যেতে স্বামী নিষেধ করতে পারে। (আরবী)
আল্লামা শাওকানী এ পর্যায়ের যাবতীয় হাদীস একসঙ্গে সামনে রেখে আলোচন্য বিষয়টি সম্পর্কে লিখেছেনঃ
এ হাদীসসমূহ একসঙ্গে প্রমাণ করে যে, দুই ঈদের নামাযে মেয়েদের ময়দানে বের হয়ে যাওয়া শরীয়তসম্মত কাজ, এতে কুমারী বা অকুমারী, যুবতী আর বৃদ্ধা মেয়েদের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই –যদি না সে ইদ্দত পালতে রত কিংবা তার বের হয়ে আসার কোনো বিপদ বা তার নিজের কোনো ওযর-অসুবিধা থাকে। (আরবী)
অতঃপর তিনি মুসলিম মনীষীদের এ পর্যায়ে দেয়া মত উল্লেখ করেছেন। তার একটি মত হচ্ছে এই যে, মেয়েদের বের হওয়ার জন্যে অনুমতি চাইলে পর অনুমতি দেয়া সম্পর্কে রাসূলের নির্দেশ পালন মুস্তাহাব। আর এ মুস্তাহাব বৃদ্ধ-যুবতী সব মেয়ের পক্ষেই। হাম্বলী মাযহাবের আবূ হামেদ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম জুরজানীও এ মত প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় মত হচ্ছে –যুবতী ও বৃদ্ধাদের মধ্যে অবশ্য পার্থক্য করতে হবে। তৃতীয় মত হচ্ছে, মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া জায়েয, মুস্তাহাব নয় –ইবনে কুদামাহ উদ্ধৃত কথার বাহ্যিক অর্থ এই। চতুর্থ, মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া মাকরূহ। এ কথাটি ইমাম আবূ ইউসুফের এবং তা ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন সওরী ও ইবনুল মুবারক থেকে। ইবনে শায়বা নখয়ীর মত উদ্ধৃত করে বলেছেন, যুবতী মেয়েদের ঈদের নামাযে যাওয়া মাকরূহ।
পঞ্চম মতঃ
(আরবী)
ঈদের নামাযের জন্যে বাইরে যাওয়া মেয়েদের বিশেষ অধিকার রয়েছে।
কাযী ইয়ায হযরত আবূ বকর, হযরত আলী ও হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে এ মত বর্ণনা করেছেন। ইবনে শায়বা হযরত আবূ বকর ও হযরত আলী (রা)-এর নিম্নোদ্ধৃত কথাটির উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেনঃ
(আরবী)
দুই ঈদের নামাযের জন্যে প্রত্যেক সক্ষম মেয়েলোকেরই যাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এটা ন্যায্যা অধিকার।
আল্লামা শাওকানী বলেন, যাঁরা এ কাজকে মাকরূহ বা হারাম বলেন, তাঁদের কথা মেনে নিলে সহীস হাদীসকে অযৌক্তিক মত দ্বারা বাতিল করে দেয়া হয়। কেননা সহীহ হাদীসে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতি চাইলে স্বামী বা গার্জিয়ান অনুমতি দিতে বাধ্য এবং সেজন্যে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নির্দেশ রয়েছে। আর যারা যুবতী ও বৃদ্ধা মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং বৃদ্ধাদের জন্যে বাইরে যাওয়া জায়েয –যুবতীদের পক্ষে জায়েয নয় বলে রায় দিয়েছেন, তাঁরাও সর্ববাদীসম্মত সহীহ হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন অথচ তা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। (আরবী)
ইমাম তিরমিযী উম্মে আতীয়াতা বর্ণিত হাদীসটি উদ্ধৃত করে লিখেছেনঃ
(আরবী)
উম্মে আতীয়াতা বর্ণিত হাদীসটি অতি উত্তম এবং সহীহ সনদে বর্ণিত।
তারপর লিখেছেনঃ
(আরবী)
মনীষীদের একদল এ হাদীস অনুযায়ী মত দিয়েছেন এবং মেয়েদেরকে দুই ঈদের নামাযের জন্যে ময়দানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আর কেউ কেউ তা অপছন্দ করেছেন।
পূর্বে উদ্ধৃত হাদীসসমূহের দৃষ্টিতে হযরত আয়েশার আশংকাবোধকে কোনো গুরুত্ব দেয়া যায় না, অন্তত কেবলমাত্র ঈদের নামাযের জন্যে বের হওয়ার ব্যাপারে। কেননাঃ
(আরবী)
হযরত আয়েশা এ কথাটি বলেছিলেন নিজস্ব ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে। এ কারণেই তাঁর কথার ধরন এমনি হয়েছে যে, রাসূল যদি এ অবস্থা দেখতে পেতেন, তাহলে তিনি নিষেধ করতেন। আর তাঁর নিজস্ব ধারণা-অনুমান শরীয়তের কোনো প্রমাণ হতে পারে না।
আল্লামা আহমাদুল বান্না ‘মুসনাদে আহমাদ’-এ উদ্ধৃত এ সম্পর্কিত যাবতীয় হাদীস সামনে রেখে বলেছেনঃ
এসব হাদীসই নামাযের জন্যে মসজিদে গমন মেয়েদের জন্যে জায়েয বলে প্রমাণ করে। তবে তা শর্তহীন নয়। দ্বিতীয়, এতে নিষেধও রয়েছে –যদি মেয়েরা তীব্র সংক্রামক সুগন্ধি ব্যবহার করে নামাযের জন্যে যার (তবে তা জায়েয হবে না)। তৃতীয়, যদি কোনো মেয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে কোনো না কোনো প্রয়োজনে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করতে বাধ্য হয়, তবে তাও সে করতে পারে। আর চতুর্থ এই যে, মেয়েরা নামাযের জামা’আতে সকলের পিছনের কাতারে দাঁড়াবে এবং পুরুষদের বের হওয়ার বহু পূর্বেই তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যাবে। (আরবী)
বস্তুত সমাজ-চরিত্র ও সমাজ-পরিবেশ যতই খারাপ হোক না কেন, এ সব শর্তের ভিত্তিতে মেয়েদের মসজিদে যাওয়া ও ঈদের নামাযের জামা’আতে শরীক হওয়া কোনোক্রমেই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হতে পারে না।
কার কারণ এই যে, বহু সংখ্যক সহীহ হাদীসে ঈদের জামা’আতে সব শ্রেণীর মহিলার উপস্থিতি হওয়া সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর স্পষ্ট নির্দেশ উল্লিখিত হয়েছে। এখঅনে ‘মুসনাদে আহমাদ’ থেকে এ পর্যায়ের কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করা যাচ্ছেঃ
(আরবী)
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেনঃ নবী করীম (ﷺ) দুই ঈদের জামা’আতে নিজে বের হয়ে যেতেন এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকেও বের করে নিতেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ
(আরবী)
নবী করীম (ﷺ) তাঁর মেয়েদের ও স্ত্রীদের দুই ঈদের নামাযের জন্যে বের হয়ে যেতে হুকুম দিতেন।
উমরা বিনতে রওয়া আল-আনসারী নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
প্রত্যেক কোমরবন্ধ পরিহিতা মেয়েলোকেরই ঈদের ময়দানে বের হয়ে যাওয়া ওয়াজিব।
হযরত উম্মে আতীয়াতা বলেনঃ
(আরবী)
রাসূলে করীম (ﷺ) আমাদেরকে সব যুবতী মেয়ে পর্দানশীল ও হায়েয-সম্পন্ন মেয়েকেই ঈদের ময়দানে বের করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ
(আরবী)
রাসূলে করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ মেয়েরা কি ঈদের জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্যে ঘর থেকে বের হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। তার নিজের কাপড় না থাকলে তার কোনো সখীর কাপড় পরে বের হবে।
এ সব হাদীস সনদের দিক দিয়ে যেমন নিঃসন্দেহ, কথার দিক দিয়েও তেমনি অকাট্য, সুস্পষ্ট। এসব হাদীস যে কোনো ঈমানদার ব্যক্তির মন কাঁপিয়ে না দিয়ে পারে না। বর্তমানে মুসলিম সমাজে এসব হাদীস সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। অতএব শরীয়তের নিয়ম-নীতি পালনের মধ্যে দিয়ে ঈদের ময়দানে এক পাশে মেয়েদের জন্যে যদি পূর্ণ পর্দার ব্যবস্থা করা হয় তবে তাতে সমাজের মেয়েরা কেন শরীক হবে না বা হতে পারবে না এবং শরীক হলে তা দোষের হবে কেন –তা সত্যিই বোঝা যাচ্ছে না।
শুধু ঈদের নামাযই নয়, পর্দা রক্ষা করে মুসলিম মহিলারা সব রকমের জাতীয় কল্যাণমূলক অনুষ্ঠানে ও সভা-সম্মেলনে দাওয়াতেও শরীক হতে পারে। এ পর্যায়ে বুখারী শরীফে উদ্ধৃত একটি দীর্ঘ হাদীসের একাংশ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
যুবতী পুরাবাসিনী ও ঋতুবতী মেয়েলোক ঈদের নামাযের জন্যে অবশ্যই ঘরের বাইরে যাবে। তবে ঋতুবতী মেয়েরা নামাযে শরীক হবে না। তারা অবশ্যই উপস্থিত হবে সব রকমের জাতীয় কল্যাণমূলক কাজে ও অনুষ্ঠানে, মুসলমানদের সামগ্রিক দো’আ প্রার্থনার অনুষ্ঠানে, দাওয়াত ও যিয়াফতে।
এ হাদীসের ভিত্তিতে নববী লিখেছেনঃ
(আরবী)
সব কল্যাণকর কাজে ও সমাবেশে, মুসলমানদের সামষ্টিক দো’আ প্রার্থনা মজলিসে দ্বীনী ইলম চর্চা ও ইসলামী বিষয়ে আলোচনা সভায় মেয়েদের শরীক হওয়া যে খুবই ভালো ও পছন্দনীয় কাজ, তা এ হাদীস থেকেই প্রমাণিত হয়।
(আরবী)
আমাদের এমন মেয়ে, যার মুখ ঢাকা চাদর বা বোরকা নেই, সে কি করবে?
জবাবে রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ
এরূপ অবস্থায় তার কোনো বোন তার নিজের বোরকা তাকে পরিয়ে দেবে।
একথা থেকে দুটি কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি এই যে, এ ধরনের অনুষ্ঠানাদিতে সব মেয়েলোকেরই –এমন কি যারা সাধারণত ঘর থেকে বেরই হয় না, যারা পুরাবাসিনী, তাদেরও হাজির হওয়া উচিত। আর দ্বিতীয় এই যে, মেয়েরা ঘর থেকে বের হলেই তাকে মুখাবয়ব অবশ্যই ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে। মুখ খোলা রেখে, বুক পিঠ না ঢেকে ঘর থেকে বের হতে পারবেনা। এভাবে ঢাকবার কাপড় –বোরকা –কোনো মেয়ের যদি নাও থাকে, তাহলে অন্য মেয়েলোকের কাছ থেকে তা ধার করে নেবে। আর এক্ষেত্রে যারই বোরকা আছে –সে সময় তার প্রয়োজন না থাকলে প্রয়োজনশীল অপর বোনকে তা অবশ্যই ধার দেবে। কোনো মেয়েলোকই যাতে করে খোলা মুখে ও খোলা বুক-পিঠ নিয়ে বাইরে বের না হয়, তার জন্যেই এ ব্যবস্থা।
রাসূলে করীম (ﷺ)-এর যুগে মেয়েরা ঈদের নামাযে রীতিমত শরীক হতেন এবং তিনি মেয়েদেরকে স্বতন্ত্রভাবে একত্র করে ওয়াজ-নসীহত করতেন। হাদীসে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেনঃ
(আরবী))))))
আমি রাসূলে করীম (ﷺ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি খোতবা দেয়ার আগেই নামায পড়ে নিতেন। এমনি একদিন তিনি নামায পড়ালেন, পড়ে খোতবা দিলেন। পরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, নামাযের জন্যে সমবেত মহিলাদের তিনি স্বীয় ভাষণ শোনাতে পারেননি। তাই তিনি পরে তাদের কাছে উপস্থিত হলেন এবং তাদের নসীহত করলেন –দ্বীন ইসলামের জন্যে দান করতে ও রীতিমত যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন।
এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছেঃ
(আরবী)
মেয়েরা যখন পুরুষদের সাথে নামায কিংবা অন্য কোনো সমাবেশে উপস্থিত হতো, তখন তারা পুরুষদের থেকে খানিকটা দূরে স্বতন্ত্র স্থানে আসন গ্রহণ করত। আর তা করত কোনো নৈতিক বিপদ, চোখাচোখি কিংবা খারাপ চিন্তা উদ্ভব হওয়ার ভয় থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/505/105
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।