hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১০৭
মেয়েদের পোশাক ও প্রসাধন
মেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে শরীয়তে নিষেধ করা হনি, অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে সে অনুমতি দুটো শর্তের অধীনঃ

প্রথম শর্ত, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়ানো চলবে না। প্রয়োজন –নিতান্ত অপরিহার্য প্রয়োজন থাকলেই সেই প্রয়োজন পরিমাণ সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারে।

আর দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, নিজের মুখ-মাথা-বুক-পিঠ এবং সমগ্র শরীর ভালোভাবে আবৃত আচ্ছাদিত করে তবে বের হওয়া চলবে। মুখ-বুক উন্মুক্ত রেখে, গায়ের বর্ণ ও যৌবনোজ্জ্বল দেহাবয়ব প্রকাশ করে ঘর থেকে বের হওয়া মেয়েদের জন্যে সুস্পষ্ট হারাম। রাসূলে করীম (ﷺ) এ পর্যায়ে বড় কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন এবং এভাবে চলার মারাত্মক পরিণামের কথাও উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

সেসব নারী যারা পোশাক পরিধান করেও ন্যাংটা, যারা নিজেদের কুকর্মকে অন্য লোকের কাছে জানান দিয়ে চলে, যারা বুক-স্কন্ধ বাঁকা করে একদিকে ঝুঁকিয়ে চলে, যাদের মাথা ষাঁড়ের চুটের মত ডান বামে ঢুলে ঢুলে পড়ে, তারা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বেহেশতের সুগন্ধিও লাভ করতে পারবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যাবে।

‘মুয়াত্তা ইমাম মালিক’-এ স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

বেহেশতের সুগন্ধি পাঁচশ বছর দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা নববী লিখেছেনঃ

(আরবী)

মানে তারা আল্লাহর আনুগত্যের সীমা লংঘন করেছে, যা যা রক্ষা করা ও হেফাযত করা দরকার, তার হেফাযত করেছে, নিজেদের পঙ্কিল ঘৃণার্হ কাজের জানান দেয় অপর লোকদের বুক টান করে পথে-ঘাটে বীরদর্পে চলাফেরা করে, কাঁধ বাঁকা করে হাঁটে আর অসৎ মেয়েদের মতো লোকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে পথ অতিক্রম করে। এসব মেয়েলোক কখনো জান্নাতবাসী হতে পারবে না।

আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ ধরনের কাপড় যে মহিলা পরবে ও যে এভাবে চলাফেরা করবে, সে জাহান্নামী হবে এবং সে জান্নাতের সুগন্ধি পাবেনা –যদিও তা পাঁচশ বছর পথের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে –এ বড় কঠিন ও কঠোর শাস্তির খবর। এ জিনিস প্রমাণ করে যে, হাদীসে যা করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা করা সম্পূর্ণ হারাম।

বর্তমান সময়ে মেয়েরা যেমন মাথার ওপর সবগুলো চুল চাপিয়ে বেঁধে রাখে, যা দেখলে মনে হয় (পুরষদের ন্যায়) মাথায় যেন পাগড়ি বাঁধা হয়েছে, এরূপ চুল বেঁধে রাজপথে ও বাজারে মার্কেটে চলাফেরা করা এ হাদীসে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। এ ধরনের চুল-বাঁধা মাথাকে ষাঁড়ের পিঠে অবস্থিত চুটের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

কাপড় পরেও ন্যাংটা থাকার অর্থে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

মেয়েরা দেহের কতকাংশ আবৃত রাখে আর কতকাংশ রাখে খোলা, উন্মুক্ত, অনাবৃত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য ভিন পুরুষদের সামনে প্রকাশ করা অথবা অত্যন্ত পাতলা কাপড় করে, যার ফলে দেহের কান্তি বাইরে ফুটে বের হয়ে পড়ে।

এসব মেয়েলোকদের কাপড় পরেও ‘ন্যাংটা’ বলে অভিহিত করা যেমন যথার্থ, তেমনি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লামা ইবনে আবদুল বার ও শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ

(আরবী)

কাপড় পরেও ন্যাংটা থেকে যায় যেসব মেয়েলোক, যারা খুব পাতলা মিহিন কিংবা জালের ন্যায় কাপড় পরে, যার নীচের সব কিছু স্পষ্টভাবে দ্রষ্টার চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। অতএব এরা কাপড় পরিহিত হয় নামে মাত্র –বাহ্যত, কিন্তু আসলে এরা ন্যাংটা-উলঙ্গ।

হযরত উসামা ইবনে যায়দ বলেনঃ রাসূলে করীম () আমাকে খুব পাতলা মিহিন এক কিবতী চাদর পরিয়ে দিলেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিলাম। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ কি হলো কিবতী চাদরটি তুমি পরলে না? আমি বললাম, আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিয়েছি। তখন তিনি বললেনঃ

(আরবী)

তোমার স্ত্রীকে বলো, সে যেন সেই কাপড়ের নিচে আর একটি কাপড় পরে। কেননা আমার ভয় হচ্ছে কেবল সেই একটি কাপড় পরলেই তার দেহাবয়ব প্রকাশ হয়ে পড়বে।

এত দ্দেশের মেয়েরা মাড়ির নিচে যেমন ছাড়া পরিধান করে, এখানে ঠিক তা পরবার জন্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লামা আহমাদুল বান্না এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ

(আরবী)

অর্থাৎ মেয়েদের কাপড় যদি মোটা, অমসৃণ ও আঁটসেঁটে হয়, তাহলে দেহাবয়ব তার পূর্ণ আকার-আকৃতিসহ স্পষ্ট দেখা যাবে। আর যদি খুব পাতলা হয়, তাহলে চামড়ার কান্তি বাইরে প্রস্ফুট হয়ে পড়বে। এ কারণে দুরকমেরই কাপড় ব্যবহার করা মেয়েদের জন্যে জায়েয নয়। রাসূলের উপরোক্ত বাণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মেয়েদের এমন কাপড় পড়তে বলা, যা বাহ্যত কেবল কাপড়ই দেখা যাবে, তা প্রশস্ত ও ঢিলে-ঢালা হবে, মোটাহবে এবং এসব কারণে নারীদেহের কোনো অংশ প্রকাশ করবে না, যাতে চামড়ার কান্তি বাইরে থেকে দেখা যাবে।

আধুনিকা মেয়েদের টাইট পোশাক এবং গলা, পিঠ ও পেট ন্যাংটা করে অজন্তা ফ্যাশনে পরা পোশাক এজন্যেই জায়েয নয়। আবদুর রহমানের কন্যা হাফসা হযরত আয়েমার খেদমতে হাজির হয়। সে তখন খুবই পাতলা কাপড় পরিধান করেছিল। তা দেখে হযরত আয়েশা (রা) তার সে পাতলা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে দেন এবং একখানা মোটা গাঢ় কাপড় পড়িয়ে দেন। (আরবী)

যে সব পুরুষ তাদের ঘরের মেয়েদেরকে খুব পাতলা কাপড় পরতে দেয়, এমন কাপড় পরতে দেয় যা পরার পরেও দেহের কান্তি বাইরে ফুটে বের হয় কিংবা দেহের বিশেষ অঙ্গ অনাবৃতই থেকে যায়, হাদীসে সেসব পুরুষের প্রতি অত্যন্ত ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে (আরবী) তারা পুরুষের মতো আর তার মানেঃ

(আরবী)

তারা বাহ্যত পুরুষ হলেও প্রকৃত পক্ষে তারা না নয়। কেননা যথার্থ পুরুষ মানুষ কখনো তাদের স্ত্রী-কন্যা-বোন-নিকটাত্মীয়া প্রভৃতি মেয়েদের এমন কাপড় কখনই পরতে দিতে পারে না, যা তাদের দেহকে ভালোভাবে আবৃত করে না।

বর্তমানে যাদের মেয়েরা টাইট পোশাক পরে, শাড়ি ও ব্লাউজ এমনভাবে পরে যে, বুক-পিঠ-পেট সবই থাকে উন্মুক্ত কিংবা এমন শাড়ি পরে যা দেহের সমস্ত উচ্চ-নীচ সব অঙ্গের আকার-আকৃতি দর্শকের সামনে উদঘাটিত করে তোলে এবং পুরুষের লালসা-পংকিল দৃষ্টিতে করে আকৃষ্ট, তারা যে কি ধরনের পুরুষ তা সহজেই বোঝা যায়। বস্তুত এসব পুরুষের মধ্যে পৌরুষ বা মনুষ্যত্ব নামের কোনো ‘বস্তু’ থাকলে তারা তা কিছুতেই বরদাশত করত না।

বর্তমানে কিছু কিছু মেয়েলোককে অবিকল পুরুষের পোশাকও পরতে দেখা যায়। কিন্তু ইসলামের এ যে কত বড় নিষিদ্ধ কাজ, তা নিম্নোদ্ধৃত হাদীস থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ

(আরবী)

যে মেয়েলোক পুরুষের বেশ ধারণ করবে আর যে সব পুরুষ মেয়েলোকের বেশ ধারণ করবে –তারা কেউই আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়।

এ প্রসঙ্গেই রাসূল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

(আরবী)

যে পুরুষ মেয়েদের পোশাক পরিধান করে, আর যে মেয়েলোক পরে পুরুষের পোশাক, রাসূলে করীম (ﷺ) তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

যে পুরুষ মেয়েদের পোশাক পরিধান করে, আর যে মেয়েলোক পরে পুরুষের পোশাক, রাসূলে করীম (ﷺ) তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ) অভিশাপ বর্ষন করেছেন সেসব পুরুষের ওপর, যারা মেয়েলী পোশাক পরে এবং সেসব মেয়েলোকের ওপর, যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে।

আল্লামা শাওকানী এ প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ পর্যায়ের যাবতীয় হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষদের মেয়েলী বেশ ধারণ এবং মেয়েদের পুরুষালী বেশ ধারণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননাএ কাজে অভিশাপ বর্ষণ করা হয়েছে, আর হারাম কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার অভিশাপ বর্ষণ করা হয় না –সকল বিশেষজ্ঞের এই হচ্ছে সুসংহত অভিমত।

হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মেয়ে আর পুরুষ আল্লাহর দুই স্বতন্ত্র সৃষ্টি। কাজেই প্রত্যেকের জন্যে শোভনীয় বিশেষ পোশাকই তাদের পরিধান করা উচিত, তার ব্যতিক্রম করা হলে আল্লাহর মর্জির বিপরীত কাজ করা হবে। আর তাতেই নেমে আসে আল্লাহর অভিশাপ।

পোশাক সম্পর্কে একটি মূল কথা অবশ্যই সকলকে স্মরণে রাখতে হবে। সে মূল কথাটি বলা হয়েছে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেনঃ

(আরবী)

হে আদম সন্তান, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের জন্যে এমন পোশাক নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে এবং ভূষণও। আর তাকওয়ার পোশাক, সে তো অতি উত্তম-কল্যাণকর। এ হচ্ছে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি। সম্ভবত লোকের এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে।

প্রথমত আয়াতে গোটা মানব জাতিকে –সমস্ত আদম সন্তানদের সম্বোধন করে কথা বলা হয়েছে। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষই এর মধ্যে শামিল অর্থাৎ পরবর্তী কথা সমস্ত মানুষের পক্ষেই অবশ্য পালনীয়।

দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, আল্লাহ পোশাক ও ভূষণ নাযিল করেছেন। পোশাক এমন, যা মানুষের স্ত্রী-পুরুষ –সকলের লজ্জাস্থানসমূহকে পূর্ণ মাত্রায় আবৃত করে, তার কোনো অংশই অনাবৃত-উলঙ্গ থাকে না। আল্লাহ শুধু পোশাকই নাযিল করেন নি সেই সঙ্গে ভূষণ –শোষাও মানুষের জন্যে নাযিল করেছেন। অন্য কথায়, একটা পোশাক পরাই আল্লাহর দৃষ্টিতে যথেষ্ট নয়, যবুথবুভাবে দেহাবয়ব আবৃক করলেই চলবে না, সেই সঙ্গে তাকে ভূষণ –শোভা বৃদ্ধিকারকও হতে হবে।

আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ

(আরবী)

রীশ অর্থ এখানে সৌন্দর্য্যের পোশাক, সৌন্দর্যমণ্ডিত ও শোভা বৃদ্ধিকারী পোশাক।

‘আল কামুস’-এ ‘রীশ’ শব্দের অর্থ লিখেছেন। (আরবী) ‘গৌরবজনক পোশাক’।

তাহলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়ঃ

(আরবী)

আমরা নাযিল করেছি লজ্জাস্থান আবৃতকারী পোশাক এবং গৌরবমণ্ডিত পোশাক, যা পরে তোমরা শোভামণ্ডিত হবে।

আল্লামা বায়যাবীও লিখেছেনঃ (আরবী) রীশ মান সৌন্দর্য, শোভা।

তৃতীয় বলা হয়েছে, তাকওয়া-আল্লাহভীরুতামূলক পোশাকই উত্তম অর্থাৎ পোশাককে প্রথমত লজ্জাস্থান আবরণকারী, লজ্জা নিবারণকারী হতে হবে, দ্বিতীয়ত কেবল লজ্জা নিবারণই আল্লাহর ইচ্ছা নয়, বরং পোশাক হতে হবে শোভা বৃদ্ধিকারী। তৃতীয়, শোভাবর্ধক পোশাক যাই পরা হোক না কেন তার তাকওয়ামূলক, আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পোশাক হতে হবে। তাকওয়া-বিরোধী শোভামণ্ডিত পোশাক আল্লাহর পছন্দ নয়। এদিকে ইঙ্গিত করেই আরব কবি বলেছেনঃ

(আরবী)

ব্যক্তি যখন তাকওয়ামূলক পোশাকই পরল না, তখন সে পোশাক পরেও উলঙ্গে পরিণত হয়ে যায়।

আয়াতের শুরুতে বনী আদম –আদম সন্তানদের সম্বোধন করা হয়েছে, যা স্পস্ট ইঙ্গিত করে বাবা আদম ও মা হাওয়া বিবস্ত্র হয়ে পড়ার ঘটনার দিকে। আর পরবর্তী আয়াতেই কথাটিকে আরো স্পষ্ট করে তোলার জন্যে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

(আরবী)

হে আদম সন্তান, শয়তান যেন তোমাদের বিপদে ফেলে দিতে না পারে, যেমন করে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে বিপদে ফেলেছিল। তখন সে দুজনার পোশাক টেনে ফেলে দিয়েছিল, যেন দুজনেরই লজ্জাস্থান প্রকাশিত ও দৃষ্টিগোচর হয়ে পড়ে।

শয়নাত আদম জাতিকে সর্বপ্রথম যে বিপদে ফেলেছিল, তা হলো আদম-হাওয়া –দুজনারই কাপড় খুলে পড়ে যাওয়া, উলঙ্গ হয়ে পড়া। অতএব তোমরা তাঁদেরই সন্তান বিধায় তোমাদের প্রতিও শয়তান দুশমনি দেখাবে তোমাদেরকে উলঙ্গ করে দিয়ে। অতএব তোমরা সাবধান।

এ আয়াত মানব জাতির জন্যে বড়ই সাবধান বানী, নগ্নতা, অর্ধোলঙ্গ ও কাপড় পরেও না পারার মতোই দেহের সর্বাঙ্গ দেখতে পারা শয়তানেরই প্ররোচনা। অতএব নগ্নতা আর কাপড় পরে থাকা থেকে তোমাদের সাবধান থাকতে হবে। কেননা উলঙ্গ-অর্ধোলঙ্গ হওয়ার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে গুনাহ, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া। বস্তুত লজ্জা-শরম মানুষের প্রকৃতিগত বলেই আদম-হাওয়া সঙ্গে সঙ্গেই গাছের পাতা দিয়ে দেহাবয়ব আবৃত করতে শুরু করেন। বনী আদমেরও বর্তব্য হচ্ছে নগ্নতা ও অর্ধ নগ্নতা পরিহার করে তাকওয়ামূলক পোশাক পরিধান করা।

মেয়েদের সুগন্ধি ব্যবহার সম্পর্কেও আমরা এ পর্যায়ে বিশ্লেষণ করে দেখব। বিশেষ করে ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা মেয়েদের পক্ষে জায়েয নয়। এ সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর বড় কঠোর বাণী উচ্চারিত ও হাদীসের কিতাবসমূহ উদ্ধৃত হয়েছে। একটি হাদীসে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কথা নিম্নোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

যে মেয়েলোক সুগন্ধি (আতর-গোলাপ-সেন্ট ইত্যাদি) লাগিয়ে ঘরের বাইরে লোকদের কাছে যাবে এ উদ্দেশ্যে, যেন তারা সুগন্ধি শুঁকতে পারে, তবে সে ব্যভিচারী গণ্য হবে।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আহমাদুল বান্না লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ হাদীসে সে মেয়েলোক সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর ভাষা প্রয়োগ ও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে, যে বাইরে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করা, তাকে ব্যভিচারিণীও বলা হয়েছে। তার কারণ সুগন্ধির তীব্র ক্রিয়া দ্বারা সে পুরুষদের মনে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলে এবং তার দিকে তাকাবার জন্যে দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আর এ হচ্ছে কার্যত ব্যভিচারের পূর্বাভাষ।

এক হাদীসে দৃঢ় ভাষায় বলা হয়েছে, সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে নামায পড়লে সে নামাযও আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। নামায এবং মসজিদের জন্যে সুগন্ধি লাগানোর ব্যাপারে যখন কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে, তখন বাইরের হাটে-বাজারে, ক্লাবে, রেস্তোরাঁয়, মিটিং-এ পার্টিতে গমনের জন্যে সুগন্ধি ব্যবহার করা যে কতখানি অপরাধ, তা সহজেই অনুমেয়।

এ প্রসঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস হচ্ছে এই –নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

তোমরা আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা খুব সাদাসিধেভাবেই ঘরের বাইরে যাবে।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আবদুল বার লিখেছেনঃ

(আরবী)

মেয়েদের বাইরে যেতে নিষেধ করতে বারণ করা এবং তাদে সুগন্ধি মেখে বের হতে নিষেধ করার কারণ হলো, তাদের সুগন্ধির মাদকতায় পুরুষ লোকদের মন উতলা হয়ে উঠতে পারে।

বলা বাহুল্য, সুগন্ধি বলতে সব রকমের সুগন্ধিই বোঝায়। চোখ ঝলসানো ও চাকচিক্যপূর্ণ পোশাকও এ পর্যায়ে পড়ে।

এ কারণে নবী করীম (ﷺ) সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ

(আরবী)

সাবধান, পুরুষদের সুগন্ধ হচ্ছে এমন জিনিস, যাতে গন্ধ আছে (রং নেই), আর মেয়েদের সুগন্ধ হচ্ছে যাতে রং আছে, গন্ধ নেই।

তার মানে, চারদিকে আলোড়িত করে তোলা সুগন্ধি ব্যবহার করে ঘরের বাইরে যাতায়াত করা মেয়েদের জন্যে জায়েয নয়, এ কারণেই মেয়েদের পক্ষে মেহেন্দি, আলতা, সুরমা ইত্যাদি ধরনের ভালো সৌখিন, রূপচর্চা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির দ্রব্যাদি ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া অন্য কোনো তীব্র সুগন্ধিযুক্ত জিনিস ব্যবহার করা জায়েয নয়।

এ জন্যে রাসূলে করীম (ﷺ) মেয়েদেরকে ‘খেজাব’ ব্যবহার করতে বলতেন। তিনি এক মহিলাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ

(আরবী)

খেজাব লাগাও, তোমরা খেজাব লাগাও না বলে তোমাদেরহাত পুরুষদের হাতের মতোই বর্ণহীন হয়ে থাকে।

হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে –এ মেয়েলোকটি অতঃপর কখনোই হয়ত খেজাব লাগান পরিত্যাগ করেনি।

এমনি অপর একটি মেয়েলোক পর্দার আড়ালে থেকে হাত বাড়িয়ে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নিকট একখানি চিঠি পেশ করে। নবী করীম (ﷺ) সে চিঠি না ধরে বলে উঠলেনঃ

(আরবী)

বুঝতে পারলাম না, এ কি কোনো পুরুষের হাত, না কোনো মেয়েলোকের হাত?

মেয়েলোকটি পর্দার আড়াল থেকেই বলে উঠলঃ মেয়েলোকের হাত। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ

(আরবী))

তুমি যদি মেয়েলোকই হতে, তাহলে তোমার হাতের নখগুলোতে অবশ্যই হেনার রঙ লাগাতে।

‘তুমি যদি মেয়েলোকই হতে’ মানে তুমি মেয়েলোক হয়ে দি মেয়েদের ভূষণ ও সাজসজ্জাকে যথারীতি পালন করে চলতে অর্থাৎ ‘নখ পালিশ’ লানাগো মেয়েদের ভূষণ ও প্রসাধনের মধ্যে গণ্য।

এ থেকে জানা যায় যে, মেয়েদের হাতে-পায়ে মেহেন্দি ও নখে হেনার (মেহেন্দি) রং লাগানো উচিত। বর্তমানে আলতা, নখ-পালিশ ও লিপিস্টিক ব্যবহারেও কোনো দোষ নেই।

বস্তুত মেয়েদের রূপ চর্চা –ইসলামে কিছুমাত্র নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে যে রূপচর্চা বাইরের লোকদের দেখাবার, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ও তাদের মনে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে উন্মাদ করে তোলার উদ্দেশ্য হওয়া একেবারেই উচিত নয়। এ যদি কেউ করে তবে তার এ কাজ নিজের দেহ মনকে পর-পুরুষের কাছে সঁপে দেয়ারই শামিল হবে।

আর তাই হচ্ছে জ্বেনা। তা সবই হওয়া উচিত তার স্বামীর জন্যে, কেবলমাত্র যার পক্ষে তাকে দেখা, তার রূপ ও যৌবন উপভোগ করা ইসলামে হালাল। স্বামীর জন্যে রূপচর্চা করার ব্যাপারে কেবল চাকচিক্যপূর্ণ রঙ ব্যবহারই জায়েয নয়, তারও অধিক ঘরের মধ্যে থেকে তীব্র মন মাতানো সুগন্ধি ব্যবহার করাও জায়েয। এজন্যে উল্লিখিত আলোচনার পর আহমাদুল বান্না লিখেছেনঃ

(আরবী)

মেয়েলোক যখন স্বামীর কাছে থাকবে তখন যে কোনো জিনিস দিয়ে নিজ-ইচ্ছে ও মনোবাঞ্ছনা মতো প্রসাধন করতে পারে।

মেয়েদের পর্দা সহকারে জরুরী কাজ বাইরে বের হওয়য়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাইরের পথে চলাচলের একটা নিয়মও তাদের জন্যে বের করে দেয়া হয়েছে। ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের কখনো পথের মাঝখান দিয়ে ভিন পুরুষদের সাথে ঘষাঘষি করে, ভীড় ঠেলে ধাক্কা খেয়ে চলা উচিত নয়। নবী করীম (ﷺ) একটা মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে লোকদের পথ চলা লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, পথে পুরুষ ও মহিলারা পরস্পরের গা ঘেষে পাশাপাশি চলছে। তখন তিনি মেয়েদের লক্ষ্য করে বললেনঃ

(আরবী)

তোমরা একটু দেরী করো, একটু পিছিয়ে পড়। কেননা পথের মাঝখান দিয়ে চলা তোমাদের উচিত নয়; বরং তোমাদের উচিত পথের একপাশ দিয়ে চলা।

হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নির্দেশের পরে মহিলারা ঠিক পথের কিনারা দিয়ে প্রাচীরের পাশ ঘেষে চলতে আরম্ভ করে। ফলে এ অবস্থাও দেখা যায় যে, মেয়েদের কাপড় পথের কিনারায় প্রাচীরের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ)-এর স্থায়ী রীতি ছিল, তিনি জামা’আতের নামায সম্পূর্ণ করে পুরুষ নামাযীদের নিয়ে এতটুকু সময় দেরী করে মসজিদ থেকে বের হতেন, যার মধ্যে মেয়েরা মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজেদের ঘরে গিয়ে পৌঁছতে পারত। অপর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মসজিদে নববীতে মহিলা নামাযীদের প্রবেশ ও নিষ্কমণের জন্যে একটি আলাদা দরজা করে দেয়া হয়েছিল। (আবূ দাউদ)

বস্তুত মেয়েদের বাইরে পথ চলার ব্যাপারটি মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা শত বোরকা পরে, শরীর-মুখ-মাথা পূর্ণমাত্রায় ঢেকেও যদি তারা ঘরের বাইরে যায়, আর যদি পথিমধ্যেই নানা পুরুষের দ্বারা দলিত মথিত ও মর্দিত হয়, তাহলে সে বোরকা আর দেহাবয়ব আচ্ছাদনের এক কানা-কড়িও মূল্য থাকে না। বিশেষত বর্তমান সময়ের মেয়েদের রাজপথে চলাচলের ধরণ দেখলে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর এ নির্দেশের গুরুত্ব খুবই তীব্রভাবে আমাদের সামনে প্রতিভাত হয়ে ওঠে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন