মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
উপরে আমরা এ কথা প্রমাণিত করেছি যে, মেয়েদের যে একান্তভাবে ঘরের অভ্যন্তরেই বসে থাকতে হবে দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা, সারা মাস বছর, সমগ্র জীবন, আর ঘর থেকে তারা আদৌ বাইরে বেরুতেই পারবে না, নিতান্ত প্রয়োজনেও নয়, এমন কথা কুরআন মজীদে বলা হয়নি, রাসূলে করীম (ﷺ) বলেন নি। সাহাবী, তাবেয়ীন ও পরবর্তীকালের মুজতাহিদীন –কেউই সে মত প্রকাশ করেননি। তাঁরা সকলেই কুরআন থেকে একথাই বুঝেছেন যে, মেয়েদের ঘর থেকে বাইরে যেতে নিষেধ নেই। তবে নিষেধ হচ্ছে বাইরে গিয়ে তাদের পর্দা নষ্ট করা, রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং পুরুষদের মনে নিদ্রাতুর যৌন পশুকে প্রচণ্ড হুংকারে ক্ষিপ্ত করে দেয়া। এ না করলে তাদের বাইরে যেতে –প্রয়োজন মতো ঘর থেকে বের হতে, এমনকি দোকানে-বাজারে যেতে, রাস্তাঘাটে চলতে কোনোই দোষ নেই। তবে শর্ত এই যে, তা অবশ্যই বিনা কারণে আর বিনা প্রয়োজনে হবেনা; শুধু ঘুরেফিরে হাওয়া খেয়ে গাল-গল্প বেড়ানোর উদ্দেশ্যে হবে না।
প্রয়োজনে আর জরুরী কাজে ঘর থেকে বেরুতে হলে মেয়েদের সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে তার সর্বাঙ্গ পূর্ণ মাত্রায় আবৃত করা। কুরআন মজীদে নিম্নোক্ত আয়াতে ঘরের বাইরে মেয়েদের অবশ্য পালনীয় হিসেবে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
হে নবী, তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুসলিম মেয়েলোকদের বলো, তারা যেন সকলেই ঘরের বাইরে বের হওয়াকালে তাদের মাথার ওপর তাদের চাদর ঝুলিয়ে দেয়। এভাবে বের হলে তাদরে চিনে নেয়া খুব সহজ হবে। ফলে তাদের কেউ জ্বালাতন করবে না। আল্লাহ প্রকৃতই বড় ক্ষমাশীল, দয়াবান।
আয়াতে উদ্ধৃত শব্দ (আরবী) বহু বচন। এক বচনে (আরবী) ‘জিলবাব’ বলা হয়ঃ
(আরবী)
যে কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ঢাকা হয়।
আল্লামা রাগিব ইসফাহানী লিখেছেনঃ
(আরবী)
জিলবাব হচ্ছে কোর্তা ও ওড়না –যা দিয়ে শরীর ও মাথা আবৃত করা হয়।
যে কাপড় উপর থেকে নিচের দিকে পরে সমস্ত আবৃত করা হয়, তাই জিলবাব।
ইবনে জুবাইর বলেছেনঃ (আরবী) ‘বোরকা’, কেউ বলেছেনঃ (আরবী) চাদর, যা সমস্ত দেহ পেচিয়ে পরা হয়।
আল্লামা যামাখশারী লিখেছেনঃ
(আরবী)
‘জিলবাব’ হচ্ছে একটি প্রশস্ত কাপড় –তা উড়না-দোপাট্টা থেকেও প্রশস্ত অথচ চাদরের তুলনায় ছোট। মেয়েরা তা মাথার উপর দিয়ে পরে, আর তা ঝুলিয়ে দেয়, তার দ্বারা বক্ষদেশ আবৃত রাখে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেনঃ
(আরবী)
জিলবাব হচ্ছে এমন চাদর, যা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ঢেকে দেয়।
মুফাসসিরদের মতেঃ
(আরবী)
মেয়েরা পরিধেয় কাপড়ের উপরে যা পরে তাই জিলবাব। এক কথায় এ কালের ‘বোরকা’।
হযরত ইবনে আব্বাস এ আয়াত সম্পর্কে বলেছেনঃ
(আরবী)
আল্লাহ তা’আলা মু’মিন মেয়েলোকদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যখন তাদের ঘর থেকে বের হবে, তখন তাদের মাথার উপর দিয়ে চাদর দ্বারা মুখমণ্ডলকে ঢেকে নেবে এবং একটি মাত্র চোখ খোলা রাখবে –এ অত্যন্ত জরুরী।
অপর এক বর্ণণা মতে ইবনে আব্বাস ও মুজাহিদ বলেছেনঃ
(আরবী)
স্বাধীনা –ক্রীতদাসী নয় –এমন মেয়েলোক যখন ঘর থেকে বাইরে যাবে, তখন তাদের মুখমণ্ডল ও মাথা আবৃত করে নেবে।
এ আয়াত বলে দিচ্ছে যে, যুবতী মেয়েদেরকে ভিন পুরুষ থেকে নিজেদের মুখমণ্ডলকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আবূ উবায়দা বলেছেনঃ
(আরবী)
মু’মিন মেয়েদের আদেশ করা হয়েছে, তারা যেন তাদের মুখমণ্ডল ও মাথা পূর্ণ মাত্রায় ঢেকে রাখে, তবে একটি মাত্র চোখ খোলা রাখতে পারে। এ থেকে জানা যাবে যে, তারা স্বাধীন মহিলা-ক্রীতদাসী নয়।
ইবনুল আরাবী লিখেছেনঃ
(আরবী)
মেয়েরা তাদের মুখমণ্ডলকে এমনভাবে ঢাকবে যে, বাম চক্ষু ছাড়া তাদের শরীরের অপর কোনো অংশ দেখা যাবে না।
অন্য আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
এবং মেয়েরা তাদের অলংকার ভিন পুরুষের সামনে প্রকাশ করবে না, তবে যা আপনা থেকে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তা প্রকাশ হতে দিতে নিষেধ নেই এবং তাদের বক্ষদেশের উপর উড়না-দোপাট্টা ফেলে রাখবে।
এ আয়াতের তরজমা ইমাম ইবনে কাসীর লিখেছেন নিম্নোক্ত ভাষায়ঃ
(আরবী)
অর্থাৎ মেয়েরা তাদের অলংকারাদি ভিন পুরুষদের সামনে প্রকাশ করবে না, তবে যা লুকানো সম্ভব হবে না তার কথা ভিন্ন।
জীনাত দুরকমের। একটি হচ্ছে সৃষ্টিগত আর অপরটি উপার্জনগত। সৃষ্টিগত সৌন্দর্য বলতে বোঝায় মুখমণ্ডল চেহারা (Anearance)। কেননা তাই হচ্ছে সমস্ত রূপ ও সৃষ্টিগত সৌন্দর্যের মূল উৎস কেন্দ্র। নারী জীবনের মাহাত্ম, মাধুর্য এখানেই নিহিত। আর দ্বিতীয় হচ্ছে উপার্জিত সৌন্দর্য।
(আরবী)
যা মেয়েরা তাদের সৃষ্টিগত রূপ-সৌন্দর্যকে অধিকতর সুন্দর করে তোলবার জন্যে কৃত্রিমভাবে গ্রহণ করে, যেমন কাপড়, অলংকারাদি, সুরমা মাখা চোখ, রং, খেজাব, মেহেন্দি।
এ দু’রকমের জিনাতকেই বাইরের লোক –ভিন পুরুষদের সামনে প্রকাশ করতে আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছেঃ
(আরবী) ‘তবে যা’ আপনা থেকে প্রকাশিত হয়। ইমাম ইবনে কাসীরের তরজমা অনুযায়ী ‘যা লুকানো সম্ভব হয় না’ –যা জাহির হতে না দিয়ে পারা যায় না, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কি?
ইবনুল আরাবী বলেছেনঃ প্রথমে যা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং পরে যা প্রকাশ হতে না দিয়ে পারা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এ দুটো এক জিনিস নয়। দুটো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জিনিস হতে হবে, তাহলে পরবর্তী জীনাত কি, যা জাহির না করে পারা যায় না, যা গোপন রাখা সম্ভব হয় না। এ সম্পর্কে তিনটি মত রয়েছে।
এক –তা হচ্ছে কাপড়। কেননা মেয়েরা বোরকা পরেও বাইরে বের হলে অন্তত তার বোরকার বাইরের দিকটি লোকদের সামনে প্রকাশমান হবেই; তা তো আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
দুই –সুরমা ও অঙ্গুরীয়। এ হচ্ছে ইবনে আনাসের মত।
তিন –মুখমণ্ডল ও দুই হস্ত।
ইবনুল আরাবী বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মত আসলে একই। কেননা সুরমা মুখের দিকে ব্যবহার হয়, আর অঙ্গুরীয় ব্যবহার করা হয় হাতের দিকে –আঙ্গুলে।
যাঁদের মতে মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় প্রকাশ নিষেধের আওতার মধ্যে গণ্য নয়, বরং এ দুটো ভিন পুরুষের সামনে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন, তাঁরাও সুরমা মাখা চোখ মুখ আর অঙ্গুরীয় পরা হাত ভিন পুরুষের সামনে জাহির করা জায়েয মনে করেন না। যে মুখে ও হাতে তা না থাকবে, তাই শুধু বের করা চলবে। যদি সুরমা ও অঙ্গুরীয় ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা অবশ্যই ভিন পুরুষের দৃষ্টি থেকে লুকোতে হবে। তখন তা প্রথম পর্যায়ের অলংকারের মধ্যে গণ্য হবে, তা লুকানো ওয়াজিব।
আর ভেতর দিকের জীনাত হচ্ছে কানবালা, কণ্ঠহার, বাজুবন্দ আর পায়ের মল ইত্যাদি। ইমাম মালিকের মতে মুখ চুলের রং বাইরের দিকে ‘জীনাত’ নয়, হাতের চুড়ি-বালা ইত্যাদি সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা) বলেছেনঃ
(আরবী)
তা বাহ্যিক জীনাতের মধ্যে গণ্য, কেননা তা দুই হাতে পড়া হয়।
আর মুজাহিদ বলেছেনঃ
(আরবী)
তা লুকিয়ে রাখার মতো ভেতর দিকের জীনাত। কেননা, তা কব্জাদ্বয়ের বাইরের জীনাত।
আর রং যদি পায়ে লাগানো হয়, তবে তা অবশ্যই গোপনীয় জীনাতের মধ্যে গণ্য হবে। অতএব রং –আলতা পরা পা ভিন পুরুষকে দেখানো যাবে না।
মনে রাখা আবশ্যক যে, এখানে এসব জীনাত ভিন পুরুষদের সামনে প্রকাশ করতে নিষেধ করার মানে কেবল জীনাত না দেখানোই নয়, বরং এ সব জীনাত যেসব অঙ্গে –দেহের যে সব জায়গায় –পরা হয়, তাও ভিন পুরষের দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লামা কাসেমী লিখেছেনঃ
(আরবী)
আয়াতে কেবল জীনাতের (অলংকার) উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন অঙ্গে তা পরা হয় তার উল্লেখ করা হয়নি, গোপনীয়তা ও সংরক্ষণের অধিক প্রয়োজনীয়তা বোঝাবার জন্যে মাত্র। কেননা এ অলংকারগুলো দেহের এমন সব অঙ্গে পরা হয়, যার দিকে কেবল মুহাররম পুরুষ ছাড়া আর কারো তাকানো হালাল নয়।
তার মানে এই যে, এসব অলংকারের দিকেই যখন ভিন পুরুষের নজর পড়া –নজর পড়তে দেয়া নিষেধ, তখন তা যেসব অঙ্গে পরা হয়েছে, তার দিকে তাকানো বা তাকানোর সুযোগ দেয়া আরো বেশি নিষিদ্ধ হবে।
আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপত্তী লিখেছেনঃ
(আরবী);
কোন স্বাধীন –ক্রীতদাসী নয় –এমন মহিলার পক্ষে নিজ স্বামী ও মুহাররম পুরুষ ছাড়া অন্য কারো সামনে তার মুখমণ্ডল প্রকাশ করা আদৌ জায়েয নয়। কেননা নারীর সাধারণ ও আসল সৌন্দর্যই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে তার মুখমণ্ডলে। এ কারণে একজন নারীর দেহ অপেক্ষা মুখমণ্ডল দেখায় নৈতিক বিপদ ঘটার সর্বাধিক আশংকা বিদ্যমান।
নবী করীম (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত বাণী থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। বলেছেনঃ
(আরবী)
নারীর আপাদমস্তক –পূর্ণাবয়বই হচ্ছে গোপন করার জিনিস। এ কারনে সে যখন ঘরের বাইরে যায়, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে পিছু লয়।
এ হাদীসের ভিত্তিতে পানিপত্তী লিখেছেনঃ
(আরবী)
এ হাদীস থেকে প্রমাণ করছে যে, নারীর সমগ্র শরীরই হচ্ছে গোপন রাখার বস্তু। তবে নিতান্ত প্রয়োজনের সময় তা প্রযোজ্য নয়। এ ব্যাপারে সকল ইসলামবিদ সম্পূর্ণ একমত।
সে প্রয়োজন কি হতে পারে, যখন নারীর কোনো না কোনো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়া অপরিহার্য হয়। এ সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা যেতে পারে। যেমন কোনো যুবতী নারীর এমন কোনো পুরুষ নেই, যে তার হাট-বাজারের প্রয়োজন পূরণ করে দিতে পারে, জরুরী জিনিস ঘরে এনে দিতে পারে। তখন সে বোরকা পরে শুধু পথ দেখার কাজ চলে চোখের জায়গায় এমন ফাঁক রেখে ঘরের বাইরে যাবে এবং প্রয়োজনীয় জায়গায় গিয়ে দরকারী জিনিসপত্র খরিদ করে ফিরে আসবে। যদি তার বোরকা না থাকে, না থাকে তা যোগার করার সামর্থ্য, তাহলে সে যে কোনো একখানা কাপড় দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পূর্ণাবয়ব আবৃত করে নিয়ে বের হবে।
এছাড়া দুটো ক্ষেত্র আছে, যখন ভিন পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল কিংবা দেহের কোনো না কোনো অঙ্গ প্রকাশ করতে হয়, যেমন ডাক্তার-চিকিৎসকের সামনে অথবা আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো বিষয়ে জবানবন্দী বা সাক্ষ্য দেয়ার সময়ে। তখন মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করাসর্ববাদী সম্মতভাবে জায়েয।
তাহলে আল্লাহর বাণী –‘তবে যা আপনা থেকে প্রকাশ হয়ে পড়ে’ কথাটির দুটো অর্থ দাঁড়াল। একটি এই যে, নারীর দেহের পূর্ণাবয়ব পর্দা, অতএব তা ভালো করে আবৃত করেইঘরের বাইরে বের হবে। তখন সে বোরকা বা যে চাদর –কাপড় দিয়ে সর্বাঙ্গ ঢাকা হলো, তার বাইরের দিক ভিন পুরুষ দেখলে কোনো দোষ হবে না। কেননা তা লুকানো তো আর সম্ভব নয়। এখন তা দেখেও যদি কোনো পুরুষ কাবু হয়ে পড়ে, তবে তাকে ‘পুরুষ’ মনে করাই বাতুলতা। অন্তত তাতে নারীর কোনো ক্ষতি নেই,তার কোনো গুনাহ হবে না।
আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, দেহের যে অঙ্গ প্রকাশ না করে পারা যায় না, যা লুকিয়ে রাখার উপায় নেই –বিশেষ প্রয়োজনের দৃষ্টিতে, যেমন ডাক্তারের কাছে দেহের বিশেষ কোনো রোগাক্রান্ত অঙ্গ প্রকাশ করা, ইনজেকশন দেয়া, অপারেশন করা কিংবা রোগ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে তা দেখানো কোনোদোষ নেই, সে নির্দিষ্ট স্থান এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণের সীমা পর্যন্ত –তার বাইরে নয়। অথবা যেমন সাক্ষ্য দেয়া বা জবানবন্দী শোনানোর জন্যে বিচারকের কাছে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ দুটো কথাই আল্লাহর বাণী (আরবী) ‘তবে যা জাহির হয়ে পড়া’র মধ্যে শামিল এবং তা প্রকাশ করা সম্পূর্ণ জায়েয। আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ
(আরবী)
মেয়েলোক কোন সৌন্দর্যই প্রকাশ করবে না। তার সৌন্দর্যের সব জিনিসই আবৃত করে রাখবে। প্রয়োজনের কারণে যা প্রকাশ না করে পারা যায় না, তা-ই বাদ পড়বে।
বলা বাহুল্য, এসব আলোচনাই স্বাধীনা রমনী সম্পর্কে, ক্রীতদাসীদের সম্পর্কে নয় এবং নয় বৃদ্ধা, বিগতা যৌবনা নারীদের সম্পর্কে। কুরআন মজীদেই বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
যেসব মেয়েলোক ঋতুশ্রাব ও সন্তান প্রসব থেকে চূড়ান্ত অবসর গ্রহণ করেছে, যারা বিয়ের বা স্বামী সহবাসের কোনো আশা পোষণ করে না, তাদের দেহাবরণ পরিত্যাগ করলে তাতে কোনো গুনাহ হবে না। তবে সে অবস্থায়ও তাদের সৌন্দর্য আর অলংকার প্রদর্শন করে বেড়ানো চলবে না। আর তারা যদি তা থেকেও পবিত্রতা অবলম্বন করে ও তা পরিহার না করে, তবে তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর, মঙ্গলজনক। আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।
আল্লামা আলূসীর মতে এরা হচ্ছে (আরবী) বৃদ্ধা। আর বৃদ্ধাদের অধিক উপবেশনকারী বলাহয়েছে এ কারণে যেঃ
(আরবী)
কেননা তারা বার্ধক্যের কারণে বেশি সময় বসেই কাটায়।
রবী’আ বলেছেনঃ
(আবরী)
যে সব বৃদ্ধা, যাদের দেখলে পুরুষেরা ঘৃণা বোধ করে, তাদের জন্যে এ হুকুম। যাদের রূপ-সৌন্দর্য অধিক বয়স্কা হওয়া সত্ত্বেও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের জন্যে এ আয়াত প্রযোজ্য।
আল্লামা পানিপত্তী লিখেছেনঃ
(আরবী)
বৃদ্ধাদের বাইরের আচ্ছাদন পরিহার করার ব্যাপারে পুরুষদের সৌন্দর্য দেখাবার ইচ্ছা না হওয়াকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা থেকে বোঝা গেল যে, যে বৃদ্ধা সৌন্দর্য প্রদর্শনের ইচ্ছা পোষণ করে, তার পক্ষে বাইরের আচ্ছঅদন পরিহার করা হারাম।
পর্দার নির্দেশ নাযিল হওয়ার উপলক্ষ হিসেবে মুজাহিদ সূত্রে নিম্নোক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ একবার নবী করীম (ﷺ) খাবার খাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে শরীক ছিল কিছু সংখ্যক সাহাবী। হযরত আয়েশা (রা)-ও তাঁদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তির হাত হযরত আয়েশার হাতে লেগে যায় এবং নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে ব্যাপারটি খুবই খারাপ বিবেচিত হয়। এর পরই পর্দার আয়াত নাযিল হয়। (আরবী)
পর্দার এ নির্দেশ মেয়েলোক ও পুরুষ লোকের মাঝখানে এক স্থায়ী অন্তরাল দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ অন্তরাল ভাঙ্গতে পারা যায় প্রথমে মুহাররম সম্পর্কের দরুন আর দ্বিতীয় বিয়ের সম্বন্ধের দ্বারা। অন্যথায় এ অন্তরাল অন্য কোনভাবে ভঙ্গ করা শুধু ইসলামী শরীয়তের বিধানই নয়, মানব-মানবীর স্বভাব-প্রকৃতির ওপরও একান্তই অন্যায়-অনাচার বটে। ঘরের বাইরে পূর্ণাবয়ব আচ্ছাদিত করে বের হওয়ার সংক্রান্ত উক্ত আয়াত ও আহকাম নাযিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল –আরবের অবাধ নীতিতে চলতে অভ্যস্ত মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে গিয়ে তাদের মাথার উপর কালো চাদর ফেলে তা দিয়ে সমস্ত মাথা, মুখমণ্ডল ও সমগ্র শরীর পূর্ণমাত্রায় আবৃত করে নিতে শুরু করে দিয়েছে। নারী সমাজে এক আদর্শিক বিপ্লবের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেল। উলঙ্গ, অর্ধ-উলঙ্গ আর রূপ-যৌবন প্রকাশকারী পোশাক সাধারণভাবে বর্জিত হলো, কোনো মেয়েই তা পরে ঘরের বাইরে যেতে রাজি হচ্ছিল না। উচ্ছৃঙ্খলতা ও নির্লজ্জলতা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হলো। এ আয়াত অনুযায়ী সে কালে মেয়েদের আদত ছিল একটা বড় আকারের চাদর দিয়ে মাথা, মুখমণ্ডল ও সমস্ত দেহাবয়ব আবৃত করা। বলা যায়, এ চাদরই ক্রমবিবর্তনের ধারায় বর্তমান সভ্যতায় এসে বোরকা’র রূপ পরিগ্রহ করেছে। অতএব একালে কুরআনের এ নির্দেশ পালনের জন্যে মুসলিম মেয়েদেরকে বোরকা পরেই ঘর থেকে বের হতে হবে। অনাগত ভবিষ্যতে ক্রমবিবর্তনের পরবর্তী কোন স্তরে পৌঁছে বোরকা যদি এমন কোনো রূপান্তর গ্রহণ করে যা দিয়ে আরো উন্নত ও সুন্দরভাবে মাথা, মুখমণ্ডল ও সমগ্র দেহ আচ্ছাদিত করা যেতে পারে তবে তাইহ বে সে সমাজের জিলবাব এবং তা পরেই কুরআনের এ আয়াত অনুযায়ী মেয়েদেরকে প্রয়োজনে বাইরে যেতে হবে। এক কথায়, বিগতা যৌবনা নয় –এমন সব মুসলিম মেয়েকেই সব সমাজে, সব দেশে, সব রকমের আবহাওয়ায় এবং ইতিহাসের সব পর্যায় ও স্তরেই মাথা, মুখমণ্ডল ও সমগ্র দেহাবয়ব আবৃত করা না হলে মুসলিম মহিলা বলে অভিহিত হওয়ার কোনো অধিকারই তার থাকবে না এ আয়াত অনুযায়ী।
বস্তুত যেসব মেয়ে বোরকা পরে সমস্ত শরীর, মুখ ও মাথা আবৃত করে ঘর থেকে বের হয়, তাদের দেখলে বুঝতে পারা যায় যে, এরা পর্দানশীল মহিলা। দুষ্ট চরিত্রের বখাটে চরিত্রের লোকেরা তাদেরকে চরিত্রবতী ও সতীত্বসম্পন্না মেয়ে মনে করে তাদের সম্পর্কে নৈরাশ্য পোষণ করতে বাধ্য হয়। ফলে কেউ তাদের পছু নেবে না, তাদের আকৃষ্ট করার জন্যে কিংবা নিজেদেরকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলবার জন্যে চেষ্টাও করবে না।
আল্লাহর বাণীঃ
(আরবী) –অংশে একথাই বলে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু যারা উলঙ্গ, অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে বোরকা ছাড়াই নিজেদের মাথা, গলা, বুক ও বাহুযুগল উন্মুক্ত রেখেই রাস্তা-ঘাটে, দোকানে, পার্কে- হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলাফেরা করে, তাদের সম্পর্কে দুষ্ট লোকদের মনে এর বিপরীত ধারণা জাগ্রত হবে। তারা এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে আলাপ পরিচয় করবে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করবে, নিজেদেরকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে এবং তাদের সাথে অবাধ ও অবৈধ প্রণয় চর্চা করতে চেষ্টা করবে নিরতিশয় আগ্রহ সহকারে। কেননা তাদের উক্তরূপ অবস্থায় রাস্তায় বের হওয়ার মানেই হচ্ছে তারা অপর যে কোনো পুরুষের কাছে ধরা দিতে কিছুমাত্র অরাজি নয়। অন্তত কেউ যদি তাদের পেতে চায়, তবে তারা কিছুমাত্র আপত্তি জানাবে না। বরং স্পষ্ট মনে হয়, তারা তাদের রূপ-যৌবনের মধুকেন্দ্রের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দুনিয়ার সব মধু মস্ফিকাকে। উলঙ্গভাবে চলাফেরাকারী মেয়েদের শতকরা আশিভাগের অবস্থাই যে এমনি, তা আজকের কোনো সমাজচরিত্রবিদই অস্বীকার করতে পারবে না। সমাজবিদ আবূ হায়ান একথাই বলেছেনঃ
(আরবী)
কেননা পূর্ণমাত্রায় পর্দা ও শালীনতা রক্ষাকারী মেয়েলোক দেখলে তার দিকে কেউই অগ্রসর হতে সাহস পাবে না। কিন্তু উলঙ্গভাবে চলা-চলকারী মেয়েদের কথা আলাদা। কেননা তাদের প্রতি তো লোকেরা বড়ই আশা-আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, হাজার দু’হাজার, কি ছ’হাজার বছর আগেকার জাহিলিয়াতে এবং এ যুগের অত্যাধুনিক (Ultra modern) জাহিলিয়াতে একাকার হয়ে একই খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দুয়ের মাঝে মৌলিক কোনোই পার্থক্য নেই, না স্বভাব-প্রকৃতি, না বাহ্যিক প্রকাশে, অনুষ্ঠানে। আসল কথাও তাই। জাহিলিয়াতের সে যুগে আর এ যুগে যেমন কোনোই তারতম্য নেই, ইসলামেও নেই তেমনি পার্থক্য সেকালে ও একালে। অন্য কথায় ইসলামও পুরাতন, যত পুরাতন মানবতা। আধুনিক জাহিলিয়াতও তেমনি পুরাতন, যত পুরাতন শয়তানের ইবলিশী ভূমিকা। কাজেই যারা উলঙ্গভাবে যত্রতত্র চলাফেরা –অবাধ মেলা-মেশা ও যুব সম্মেলন করে ছেলে-মেয়েদের ফষ্টি-নষ্টির অবাধ সুযোগ করে দেয়া অত্যাধুনিক সভ্যতার অবদান বলে মনে করে, আর মনে মনে গৌরব বোধ করেঃ আমরা আর সেকেলে নই, মধ্যুগের ঘুণেধরা সংস্কৃতি (?) মেনে আমরা চলছি না, আমরা একান্তই আধুনিক-আধুনিকা –তারা যে কতখানি বোকা, নির্বোধ ও স্থূল জ্ঞানসম্পন্ন ও সূক্ষ্ম জ্ঞান বঞ্চিত তা জাহিলিয়াতের ইতিহাসই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। তারা অজ্ঞানতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে মোটেই বুঝতে পারছে না যে, তারা যা কিছু করছে, তার কোনোটাই নতুন নয়, নয় আনকোরা এবং এসব করে তারা মোটেই আধুনিক হওয়ার প্রমাণ দিতে পারছে না,বরং তারাও যে পুরাতন –অতি পুরাতন –ঘুণে ধরা সংস্কৃতিরই অন্ধ অনুসারী, এতটুকু বুঝবার ক্ষমতাও তারা হারিয়ে ফেলেছে পাশ্চাত্য নগ্নতার প্রতি আকর্ষণ ও ইষলামের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ পোষনের কারণেই মাত্র –এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/505/104
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।