hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

৮৯
ইতিহাসে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ
আসলে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দানে ইসলামই অপরাধী (?) নয়; না প্রথম অপরাধী, একমাত্র অপরাধী। এ ব্যাপারে ইউরোপীয় ধর্ম ও সভ্যতার অবদান সর্বাংশে শ্রেষ্ঠ। এ পর্যায়ে আমাদের বক্তব্য এইঃ

১. ইসলামই সর্বপ্রথম একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দান করেনি। প্রাচীন প্রায় সবগুলো জাতি ও সব্যতায় এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। অ্যাসিরীয়, চীনা, ভারতীয়, বেবিলনীয়, অসুরীয় ও মিসরীয় সভ্যতার বহু স্ত্রী গ্রহণ ছিল একটি সাধারণ রেওয়াজ। এদের অধিকাংশের মধ্যে আবার স্ত্রীদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা ছিল না। চীনের ‘লীকী’ ধর্ম একসঙ্গে ত্রিশজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহনের অনুমতি দিয়েছিল একজন পুরুষকে। আর চীনের বড় বড় বাবু লোকদের তো তিন হাজার পর্যন্ত স্ত্রী ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।

২. ইয়াহুদী ধর্মশাস্ত্রে সীমা-সংখ্যাহীন স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি রয়েছে। তওরাত কিতাবে উল্লিখিত নবীগণের প্রত্যেরেই বহুসংখ্যক স্ত্রী ছিল। তাতেই বলা হয়েছে, হযরত সুলায়মানের সাতশতজন ছিল স্বাধীনা স্ত্রী, আর তিনশ ছিল দাসী।

৩. খ্রিষ্ট ধর্মশাস্ত্রে বহু স্ত্রী গ্রহণের কোনো নিষেধবাণীর উল্লেখ নেই। শুধু উপদেশ ছলে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ প্রত্যেক পুরুষের জন্যই তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। এতে করে বড়জোর একজন মাত্র স্ত্রী গ্রহণের দিকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলা যেতে পারে। ইসলামও তাই বলে। তাহলে এজন্যে ইসলামের দোষ দেখাবার যুক্তি থাকতে পারে না।

ইনজিল কিতাবে বহু-বিয়ে নিষেধ করে কোনো স্তোত্র বলা হয়নি। বরং পলিশ-এর কোনো কোনো পুস্তিকায় এমন ধরনের কথা রয়েছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ সঙ্গত। তাতে এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ ‘আর্চবিশপকে অবশ্যই এক স্ত্রীর স্বামী হতে হবে’। তাহলে অন্যদের জন্য একাধিক স্ত্রীর স্বামী হতে কোনো বাধা নেই বলে মনে করা যেতে পারে। আর ইতিহাস প্রমাণ করছে যে, প্রাচীনকালের অনেক খ্রিষ্টানই এমন ছিল, যারা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছিল একই সময়ে। বহু গির্জার পাদ্রীর বহু সংখ্যক স্ত্রী ছিল। আর বিশেষ বিশেষ অবস্থায় বহু সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণ সঙ্গত বলে খ্রিষ্ট যুগের বহু পণ্ডিত ফতোয়াও দিয়েছেন।

পারিবারিক ইতিহাস বিশেষজ্ঞW ester Mark বলেছেনঃ

(আরবী)

গির্জার অনুমতিক্রমে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের রেওয়াজ সপ্তদশ শতক পর্যন্ত চলেছে। আর অনেক অবস্থায় গির্জা ও রাষ্ট্রের হিসাবের বাইরে তার সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যেত।

তাঁর গ্রন্থে আরো বলা হয়েছেঃ

আয়ার্ল্যাণ্ড সম্রাটের দু’জন ছিল স্ত্রী আর দু’জন ছিল দাসী।

শার্লিম্যানেরও দুইজন স্ত্রী ছিল, ছিল বহু সংখ্যক দাসী। তাঁর রচিত আইন থেকে প্রকাশ পায় যে, তাঁর যুগের লোকদে মধ্যে বহু বিবাহ কিছুমাত্র অপরিচিত ব্যাপার ছিল না।

মার্টিন লুথারও বহু বিবাহের যৌক্তিকতা অস্বীকার করতে পারেন নি। কেননা তাঁর মতে তালাক অপেক্ষা একাধিক স্ত্রী রাখাই উত্তম। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভিষ্টা ফিলিয়ার-[১৬১৮ সন জার্মানীর বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ও নওয়াব সামন্তদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং মধ্য ইউরোপের লোকদের ক্রমাগতভাবে ত্রিশ বছর পর্যন্ত এক আত্মঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত করে রাখে। ১৬৪৮ সনে এ যুদ্ধ খুব কষ্টের সঙ্গে বন্ধ করানো হয় এবং পরস্পরে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ফলে এক সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাই ‘ভিষ্টা ফিলিয়া সন্ধি’ নামে অভিহিত।] প্রখ্যাত সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষীরত হওয়ার পর এক প্রস্তাবের মাধ্যমে একজন পুরুষের জন্যে দুজন করে স্ত্রী গ্রহণ জায়েয করে দেয়া হয়। খ্রিষ্টানদের কোনো কোনো শাখায় লোকেরা বরং মনে করে যে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ একান্তই কর্তব্য। ১৫৩১ সনের এক ঘোষণায় সুস্পষ্ট করে বলা হয় যে, সত্যিকার খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীকে অবশ্যই বহু সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণ করতে হবে। প্রট্যাস্টান্ট (খ্রিষ্টানদের এক শাখা)-দের ধারনা ছিল, বহু স্ত্রী গ্রহণ এক পবিত্র আল্লাহরই ব্যবস্থা।

৪. আফ্রিকার কালো আদমীদের মধ্যে যারা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করত, গির্জা তাদের জন্য বহু সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণের অবাধ অনুমতি দিয়েছিল। কেননা প্রথম দিক দিয়ে আফ্রিকায় যখন খ্রিষ্টধর্ম প্রচারিত হচ্ছির ও কালো আদমীরা দলে দলে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছিল, তখন গির্জা কর্তৃপক্ষ চিন্তা করল যে, আফ্রিকার অধিবাসী বহু স্ত্রী গ্রহণের অন্ধভাবে আগ্রহী, তাদের যদি তা করতে নিষেধ করা হয় তাহলে তারা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হবে না –খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে তা হবে বাঁধাস্বরূপ। কাজেই বহু স্ত্রী গ্রহণ করা তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

৫. পাশ্চাত্য খ্রিষ্টান সমাজে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার দরুন –বিশেষত দুই বিশ্বযুদ্ধের পরে –এক জটিল সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার কোনো সমাধানই আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। আর একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি ভিন্ন এ সমস্যার কোনো বাস্তব সমাধানই হতে পারে না। ১৯৪৮ সনে আলমানিয়ার মিউনিখে এক বিশ্ব যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আরব দেশেরও অনেক যুবক তাতে যোগদান করে। এ সম্মেলনের এক বিশেষ অধিবেশনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে আলমানিয়া পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা অস্বাভাবিক রকমে বৃদ্ধিজনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। তার নানাবিধ সমাধান চিন্তা করা হয়। এখানে আরব যুবকদের পক্ষ থেকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব একটি বাস্তব সমাধান হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়। প্রথমে এ প্রস্তাব গৃহীত হলেও পরে সম্মেলনে নানা মতভেদ দেখা দেয়। পরে এ ব্যাপারে সকলেই একমত হয় যে, এ ব্যবস্থা ছাড়া সমস্যার বাস্তব ও কার্যকর আর কোনো সমাধানই নেই –হতেপারে না। পরের বছর আলমানিয়া শাসনতন্ত্রে বহু স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি সংক্রান্ত ধারা সংযোজনের প্রস্তাব ওঠে। (আরবী)

এরপর আলমানিয়া থেকে এক প্রতিনিধি দল মিসরের জামে আজহারে আগমন করে ইসলামের একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বিধান সম্পর্কে সরাকরি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে। হিটলারও চেয়েছিলেন তাঁর দেশে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি আইন চালু করতে; কিন্তু মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তা আর হয়ে ওঠে না।

বহু খ্রিষ্টান মনীষী একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুকূলে অনেক কথা বলেছেন। প্রখ্যাত আলমানিয়া দার্শনিক শোপেন আওয়ার লিখেছেনঃ

পুরুষ ও স্ত্রী সমান মর্যাদার হওয়ার কারণে ইউরোপে বিবাহ সংক্রান্ত আইন অত্যন্ত খারাপ। অথচ আমাদের দায়িত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। কাজেই যতদিন পর্যন্ত মেয়েদেরকে পুরুষের সমান অধিকার দেয়া হবে, তদ্দিন তাদরেকে পুরুষদের মতো বুদ্ধিও দিয়ে দেয়া উচিত।

আমরা যখন মূল বিষয়ে চিন্তা করি, তখন এমন কোনো কারণ খুঁজে পাইনে, যার দরুন পুরুষকে এক স্ত্রীর বর্তমানে দ্বিতীয়াকে গ্রহণ করতে বাধা দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। বিশেষত কারো স্ত্রী যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে কিংবা বন্ধ্যা হয় অথবা কয়েক বছরের দাম্পত্য জীবনের পরই বৃদ্ধা হয়ে যায়, তখন সেই পুরুষকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণে কি করে বাধা দেয়া যেতে পারে। ‘মোরমোন’ খ্রিষ্টানরা এই এক স্ত্রী গ্রহণের রীতি বাতিল না করে কোনো কল্যাণই লাভ করতে পারে না।

বস্তুত একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ব্যাপারে ইসলামের অনুমতিকে আধুনিক পাশ্চাত্যপন্থীরা যতোই ঘৃণার চোখে দেখুন না কেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এর ফলে জাতীয় নৈতিক চরিত্র অনেক উন্নতি লাভ করে, পারিবারিক সম্পর্ক গ্রন্থি সুদৃঢ় হয় এবং নারীকে এক উচ্চ মর্যাদা দান করা সম্ভব এর সাহায্যে, যা ইউরোপীয় সমাজে দেখা যায় না।

উপরের আলোচনা হতে এ কথা সপ্রমাণিত হয়েছে যে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণের রেওয়াজ মানব সমাজে বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে; কম-বেশি ইতিহাসের সকল যুগে, সভ্যতার সকল স্তরে এর প্রচলন রয়েছে। সুসভ্য-অসভ্য, বর্বর ও উন্নত সংস্কৃতিসম্পন্ন সকল জাতিই এ বিষয়ে অভ্যস্ত ছিল। পাক-ভারতের প্রাচীন ইতিহাসেও দেখা যায়, রাজা-মহারাজা ও সম্রাট-বাদশাহদের ছাড়াও অলী-দরবেশ ও মুণি-ঋষিরা পর্যন্ত একাধিক স্ত্রী গ্রহণে অভ্যস্ত। রামচন্দ্রের পিতা মহারাজা দশরথের তিনজন স্ত্রী ছিল –পিটরানী, কৌশল্যা ও রানী সুমিত্রা। শ্রীকৃষ্ণকে অবতার বা স্বয়ং ভগবান বলে ধারণা করা হয়, তারও ছিল অসংখ্য স্ত্রী। লাল লজপত রায় কৃষ্ণ চরিত্রে তাঁর আঠারজন স্ত্রী ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। রাজা পাণ্ডোরও ছিল দু’জন স্ত্রী –কুন্তি আর মাভরী।

ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরাও একাধিক স্ত্রীর স্বামী ছিলেন। নবী-পয়গাম্বরদের তো প্রায় সকলেরই ছিল বহু সংখ্যক স্ত্রী। আর তাঁরপর হযরত হাসান ইবনে আলী, হুসাইন ইবনে আলী, হযরত আবূ সুফিয়ান ইবনে হারিস, সায়াদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, হযরত হামযা, হযরত ইবনে আব্বাস, হযরত বিলাল ইবনে রিবাহ, জায়দ ইবনে হারিস, আবূ হুযায়ফা, উসামা ইবনে জায়দ (রা) প্রমুখ বড় বড় সাহাবীও একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন।

একাধিক স্ত্রী আর বহু সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণের এ ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এ ব্যাপারটি মোটেই সামান্য নয়, প্রকৃতপক্ষে এ এক অনন্য সাধারণ ব্যাপার। সাময়িক উত্তেজনার কিংবা কেবলমাত্র যৌন লালসার যথেচ্ছ চরিতার্থতার উদ্দেশ্যেই ইতিহাসের এ মহামনীষীবৃন্দ এদিকে অগ্রসর হন নি। আসলে মানব প্রকৃতির অন্তস্থলে এর কারণ নিহিত রয়েছে এবং সে কারণ থাকবে, তার প্রভাব বিস্তা করতে থাকবে, যদ্দিন মানুষ থাকবে এ ভূ-পৃষ্ঠে। এর প্রতি একটা ঘৃণার আর ঘৃণা প্রকাশক দুটো কথা, দুটো আইনের ধারার আঘাতেই তা কখনও মিটে যাবে না; বন্ধ হবে না এর সম্ভাবনার দুয়ার।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন