মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়ার যে ব্যবস্থা ইসলামে করা হয়েছে, তা থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, বিযের ব্যাপারে শরীয়তের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে পুরুষের পক্ষে ভাবী স্ত্রী এবং মেয়েদের পক্ষে ভাবী স্বামীকে বাছাই করার –মনোনীত করার স্থায়ী অধিকার রয়েছে। কুরআন মজীদে পুরুষদের সম্বোধন করে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
অনন্তর তোমরা বিয়ে করো যেসব মেয়েলোক তোমাদের জন্যে ভালো হবে ও ভালো লাগবে।
অর্থাৎ রূপ-সৌন্দর্য, জ্ঞান-বুদ্ধি ও পারিবারিক ব্যবস্তাপনা ও কল্যাণ ক্ষমতার দিক দিয়ে যে সব মেয়ে তোমাদের নিজেদের জন্যে ভালো বিবেচিত হবে –মনমতো হবে, তোমরা তাদের বিয়ে করো।
অথবা এর অর্থঃ
(আরবী)
তবে বিয়ে করো সেসব মেয়ে, যারা তোমাদের জন্যে পাক-পবিত্র, যারা তোমাদের জন্যে হালাল, নিষিদ্ধ নয়, যারা তোমাদের জন্যে হবে কল্যাণকর ও পবিত্র।
এ আয়াতে বিয়ের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তার দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত বিয়ে করবে সেসব মেয়েলোক, যা হালাল, মুহাররম নয়। কেননা কতক মেয়েলোককে যেমন রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়া ও ভিন্ন ধর্মের মেয়েলোক –বিয়ে করা শরীয়ত স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ তাদের ছাড়া প্রায় সব মেয়েলোকই এমন যাদের মধ্য থেকে যে-কাউকে বিয়ে করা যেতে পারে।
আর দ্বিতীয় দিক হচ্ছে এই যে, বিয়ের জন্যে একটি মেয়েলোক হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং তাকে অবশ্য দুটি দিক দিয়ে যোগ্য হতে হবে। প্রথম দিক এই যে, সে নিজে হবে পবিত্র, চরিত্রবতী, কল্যাণময়ী। সর্বদিক দিয়ে ভালো। আর দ্বিতীয় দিক এইযে, যে পুরুষ তাকে বিয়ে করবে, তার জন্যেও সে হবে প্রেমময়ী, কল্যাণময়ী সর্বগুণে গুণান্বিত ও তার মনমত মনোনীত। এ ধরনের মেয়ে বাছাই করেবিয়ে করারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপরোক্ত আয়াতে। আর এসব কথা নিহিত রয়েছে আয়াতের (আরবী) শব্দের মধ্যে। অন্যথায় শুধু (আরবী) –‘মেয়েলোক বিয়ে করো’ বলে দেয়াই যথেষ্ট ছিল। এ জন্যে শায়খ মুহাম্মদ নববী এ আয়াতের তাফসীর লিখেছেন নিম্নোক্ত ভাষায়ঃ
(আরবী)
অর্থাৎ অপরিচিতা বা সম্পর্কহীনা মেয়েলোকদের মধ্যে যাদের প্রতি তোমাদের মন আকৃষ্ট হয় এবং যাদের পেলে তোমাদের দিল সন্তুষ্ট, আনন্দিত হবে ও যাদের ভালো বলে গ্রহণ করতে পারবে, তোমরা তাদেরকেই বিয়ে করো।
উপরন্তু বিভিন্ন তাফসীরে এ আয়াতটির নাযিল হওয়ার যে উপলক্ষ বর্ণিত হয়েছে, সে দৃষ্টিতেও আয়াতটির উপরোক্ত অর্থ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এ আয়াতের শানে নুজুল হচ্ছে –লোকেরা বাপ-দাদার লালিতা-পালিতা ইয়াতীম মেয়েদের বিয়ে করত শুধু তাদের রূপ-যৌবন ও ধন-মালের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে। ফলে বিবাহিত জীবনে তার প্রতি দেখাত মনের বিরাগ, উপেক্ষা ও অযত্ন। কেননা মেয়েটিকে মনের আকর্ষণে ও ভালো লাগার কারণে বিয়ে করা হয়নি, করা হয়েছে অন্যসব জিনিস –রূপ, যৌবন ও ধনমাল সামনে রেখে, সেগুলো অবাধে ভোগ করার সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে। এ কারণে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি যে জুলুম ও অবিচার হতো, তারই নিরসন ও বিদূরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা এ নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই যাকে বিয়ে করা হচ্ছে, তার নিজস্ব গুণ-গরিমার কারণেই তাকে বিয়ে করা উচিত। অপর কোনো লক্ষ্য থাকা উচিত নয় বিয়ের পেছনে। বস্তুত নিছক টাকা পয়সা লাভ কিংবা একজন নারীর নিছক রূপ-যৌবন-ভোগের লালসায় পড়ে যেসব বিয়ে সংঘটিত হয়, তা কিছু কাল যেতে না যেতেই কিংবা লক্ষ্যবস্তুর ভোগ-সম্ভোগে তৃপ্তি লাভের পরই সে বিয়ে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য। এর বাস্তব দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই আমাদের সমাজে।
পূর্বেই বলেছি, কনে বাছাই করার যে অধিকার এ আয়াতে পুরুষদের দেয়া হয়েছে, তা কেবল পুরুষদের জন্যেই একচেটিয়া অধিকার নয়। বরং পুরুষদের ন্যায় কনেরও অনুরূপ অধিকার রয়েছে। ‘বর’ বাছাই করে খরিদ করা হয়, তখন বিয়ের মতো একটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সারা জীবনের ব্যাপার খুব সহজেই সম্পন্ন হওয়া ও হতে দেয়া উচিত হতে পারে না। বরং যথাসম্ভব জানা-শুনা করে, খবর নিয়ে দেখে-শুনে ও ছাঁটাই-বাঁছাই করেই এ কাজ সম্পন্ন হওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর। আর এর অধিকার কেবল পুরুষদেরই একচেটিয়াভাবে হতে পারে না। এ অধিকার তাদের ন্যায় নারীদেরও অবশ্যই থাকতে হবে এবং ইসলাম তা দিয়েছে। পুরুষ যেমন নিজের দিক দিয়ে বিচার-বিবেচনা করবে কনেকে, তেমনি কনেরও উচিত অনুরূপভাবে বুঝে-শুনে একজনকে স্বামীরূপে বরণ করা। এজন্যে বিবাহেচ্ছু নর-নারীর ইচ্ছা, পছন্দ ও মনোনয়ন এবং সন্তোষে অভিমত বা সমর্থন ব্যক্ত করার গুরুত্ব সর্বজন স্বীকৃত। ইসলামী শরীয়তেও উপযুক্ত বয়সের ছেলেমেয়েকে অন্যান্য কাজের ন্যায় বিয়ের ব্যাপারেও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। পিতামাতা ও অন্যান্য নিকটাত্মীয় লোকেরা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ অবশ্যই দেবে; কিন্তু তাদের মতই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ও একমাত্র শক্তি (Only factor) হতে পারে না। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতোই ছেলেমেয়েদেরকে কোথাও বিয়ে করতে বাধ্য করতেও পারে না। বয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে তাদের সুস্পষ্ট মত ছাড়া সম্পন্ন হতেই পারে না। নবী করীম (ﷺ) এই পর্যায়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা যেমন খুব স্পষ্ট তেমনি অত্যন্ত জোরালো।
(আরবী)
পূর্বে বিবাহিত এখন জুড়িহীন ছেলেমের বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যাবে এবং পূর্বে অবিবাহিত ছেলেমেয়ের বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে স্পষ্ট অনুমতি পাওয়া যাবে”? তখন তিনি বললেন, জিজ্ঞেস করার পর তার চুপ থাকাই তার অনুমতি।
এ হাদীসের ওপর ভিত্তি করেই ইমাম আবূ হানিফা (রহ) বলেছেনঃ
(আরবী)
অলী পূর্বে বিবাহিত ও অবিবাহিত ছেলেমেয়েকে কোনো নির্দিষ্ট ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারে না। অতএব পূর্বে বিবাহিত ছেলেমেয়ের কাছ থেকে বিয়ের জন্যে রীতিমত আদেশ পেতে হবে এবং অবিবাহিত বালেগ ছেলেমেয়ের কাছ থেকে যথারীতি অনুমতি নিতে হবে।
ইমাম আবূ হানীফা উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে এতদূর বলেছেন যে, কোনো পূর্ন বয়স্ক ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্না মেয়ে অলীর অনুমতি ব্যতিরেকে নিজ ইচ্ছায় কোথাও বিয়ে করে বসলে সে বিয়ে অবশ্যই শুদ্ধ হবে। যদিও ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে অলীর অনুমতির অপেক্ষায় সে বিয়ে মওকুফ থাকবে। আর ইমাম শাফিয়ী, মালিক ও আহমাদ বলেছেনঃ
(আরবী)
কেবলমাত্র মেয়ের অনুমতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হতে পারে না।
কেননা রাসূলে করীম (ﷺ) অন্যত্র বলেছেনঃ
(আরবী)
অলীর অনুমতি ছাড়া বিয়েই হতে পারে না।
কিন্তু পূর্বোক্ত হাদীস দ্বারা তাদের এ মত খণ্ডিত হয়ে যায়। বিশেষত এই শেষোক্ত হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম বুখারী ও ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন প্রমুখ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এ হাদীস সম্পর্কে বলেছেনঃ
(আরবী)
অলীর মত ছাড়া বিয়ে হতে পারে না। এ ধরনের শর্তের কোনো হাদীসই সহীহ নয়।
আর তিরমিযী শরীফে এই পর্যায়ে যে হাদীষটি উদ্ধৃত হয়েছে তা হচ্ছেঃ
(আরবী)
পূর্বে বিবাহিতা ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের বিয়ে সম্পর্কে মত জানানোর ব্যাপার তাদের অলীর চেয়েও বেশি অধিকারসম্পন্ন। আর পূর্বে অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের নিকট তাদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের মতামত অবশ্যই জানতে চাওয়া হবে এবং তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতি নামান্তর।
আর দ্বিতীয় হাদিসটি হচ্ছেঃ
(আরবী)
পূর্বে বিবাহিত ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অলী অপেক্ষাও বেশী অধিকার রাখে। আর পূর্বে অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে, তবে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতিজ্ঞাপক।
হাদীসসমূহের ভাষা, শব্দ, সুর ও কথা বিশেষ লক্ষণীয়। বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা স্ত্রীলোকদেরকে মতামত জ্ঞাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন নি; বরং তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ ও মতামতকে পূর্ণ মাত্রায় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাদের মরজী ছাড়া কোনো পুরুষের সাথে জবরদস্তি তাদের বিয়ে দেয়া ইসলামী শরীয়তে আদৌ জায়েয নয়।
এ ব্যাপারে অলী-গার্জিয়ানদের কর্তব্য হচ্ছে ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের মতামত জেনে নেয়া এবং তারপরই বিয়ের কথাবার্তা চালানো বা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
কিন্তু ইসলামে যেখানে মেয়ের মতের গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে, সেখানে তাদের স্বাভাবিক লজ্জা-শরমকেও কোনো প্রকারে ক্ষুণ্ন হতে দেয়া হয়নি। এজন্যে পূর্বে বিয়ে হয়নি –এমন মেয়ের (বাকরার) অনুমতি দানের ক্ষেত্রে চুপ থাকাকেও ‘মত’ বলে ধরে নেয়া হয়েছে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী লিখেছেনঃ
(আরবী)
ইমাম আবূ হানীফার মতে পূর্বে-অবিবাহিতা পূর্ণ বয়স্কা মেয়েকে অলীর মতে বিয়ে করতে বাধ্য করা অলীর পক্ষে জায়েয নয়। তাই তার কাছে যখন অনুমতি চাওয়া হবে, তখন যদি সে চুপ থাকে কিংবা হেসে ওঠে তাহলে তার মত আছে ও অনুমতি দিচ্ছে বলে বোঝা যাবে।
কিন্তু পূর্বে বিয়ে হওয়া (সাইয়েবা) মেয়ের পুনর্বিবাহের প্রশ্ন দেখা দিলে তখন সুস্পষ্ট ভাষায় তার কাছ থেকে এজন্যে আদেশ পেতে হবে।
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী লিখেছেনঃ
(আরবী)
পূর্বে বিবাহিতা মেয়ে মত জানাবার ব্যাপারে বেশি অধিকারসম্পন্না –এ কথার অর্থ এই যে, মত জানানোর অধিকারে সেও শরীক রয়েছে। আর তার মানে, তাকে কোনো বিয়েতে রাজি হতে জোর করে বাধ্য করা যাবে না; স্বামী নির্বাচন নির্ধারণে সে-ই সবচেয়ে বেশি অধিকারী।
এ ব্যাপারে মেয়ের মতের গুরুত্ব যে কতখানি, তা এক ঘটনা থেকে স্পষ্ট জানতে পারা যায়। হযরত খানসা বিনতে হাজাম (রা)-কে তাঁর পিতা এক ব্যক্তির নিকট বিয়ে দেন। কিন্তু এ বিয়ে খানসার পছন্দ হয় না। তিনি রাসূলের দরবারে হাযির হয়ে বললেনঃ
(আরবী)
তাঁর পিতা তাঁকে বিয়ে দিয়েছেন, তিনি পূর্ব বিবাহিত; তিনি এ বিয়ে পছন্দ করেন না।
হাদীস বর্ণনাকারী বলেনঃ (আরবী) রাসূলে করীম (ﷺ) তাঁর এ কথা শুনে তাঁর বিয়ে প্রত্যাহার ও বাতিল করে দেন।
ইমাম আবদুর রাজ্জাক এ ঘটনাটিকে অন্য ভাষায় বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা হচ্ছে, একজন আনসারী খানসাকে বিয়ে করেন। তিনি ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হন, অতঃপর তাঁর বাবা তাঁকে অপর এক ব্যক্তির নিকট বিয়ে দেন। তখন তিনি রাসূলের দরবারে হাযির হয়ে বললেনঃ
(আরবী)
আমার পিতা আমাকে বিয়ে দিয়েছেন অথচ আমার সন্তানের চাচাকেই আমি অধিক ভালোবাসি (তার সাথেই আমি বিয়ে বসতে চাই)।
তখন নবী (ﷺ) তাঁর বিয়ে ভেঙ্গে দেন।
এ পর্যায়ে আর একটি ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। হযরত জাবির বলেনঃ
(আরবী)
এক ব্যক্তি তাঁর ‘বাকেরা’ মেয়েকে বিয়ে দেন তার বিনানুমতিতে। পরে সে নবী করীমের নিকট হাজির হয় ও অভিযোগ দায়ের করে। ফলে নবী করীম (ﷺ) তাদের বিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেনঃ
(আরবী)
একটি পূর্ব-অবিবাহিতা মেয়েকে তার পিতা এমন একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল, যাকে সে পছন্দ করে না। পরে রাসূলে করীম (ﷺ) সে মেয়েকে বিয়ে বহাল রাখা-না-রাখা সম্পর্কে পূর্ণ ইখতিয়ার দান করেন।
অপর একটি ঘটনা থেকে জানা যায়, চাচাতো ভাইয়ের সাথে পিতা কর্তৃক বিয়ে দেয়া কোনো মেয়ে রাসূলের দরবারে হাযির হয়ে বললঃ
(আরবী)
আমার পিতা আমাকে তার ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। সে নীচ শ্রেণীর লোক; আমাকে বিয়ে করে তার নীচতা দূর করতে চায়।
এ অবস্থায় রাসূলে করীম (ﷺ) তাকে বিয়ে বহাল রাখা-না-রাখার স্বাধীনতা দান করেন। তারপরে মেয়েলোকটি বলেঃ
(আরবী)
আমি তো পিতার করা বিয়েতেই অনুমতি দিয়েছি।
কিন্তু তবু এ অভিযোগ নিয়ে আসার উদ্দেশ্য হলোঃ
(আরবী)
আমি চাই যে, মেয়েলোকেরা একথা ভালো করে জেনে নিক যে, বিয়ের ব্যাপারে বাপদের কিছুই করণীয় নেই।
এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বয়স্কা মেয়েদের বিয়েতে তাদের নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও পছন্দ-অপছন্দ হচ্ছে শেষ কথা। পিতা বা কোনো অলীই কেবল তাদের নিজেদেরই ইচ্ছায় বিয়ে করতে কোনো মেয়েকে বাধ্য করতে পারে না। এজন্যে রাসূল করীম (ﷺ) সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেনঃ
(আরবী)
মেয়েদের বিয়েতে তাদের কাছ থেকে তোমরা আদেশ পেতে চেষ্টা করো। ইয়াতীম মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারেও এই নির্দেশই প্রযোজ্য ও কার্যকর। হাদীসে এ সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। রাসূলে করীম (ﷺ) বলেছেনঃ
(আরবী)
ইয়াতীম মেয়ের কাছে তার নিজের বিয়ের ব্যাপারে স্পষ্ট আদেশ পেতে হবে। জিজ্ঞেস করা হলে সে যদি চুপ থাকে, তবে সে অনুমতি দিয়েছে বলে বুঝতে হবে। আর সে যদি অস্বীকার করে, তবে তাকে জোরপূর্বক বাধ্য করা যাবে না।
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
ইয়াতীম মেয়েকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতিরেকে বিয়ে দেয়া যেতে পারে না।
এ হলো সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে ইসলামের মৌলিক বিধান ও দৃষ্টিকোণ। নারী পুরুষের জীবনের বৃহত্তর ও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে বিয়ে। ইসলাম তাতে উভয়কে যে অধিকার ও আজাদি দিয়েছে, তা বিশ্বমানবতার প্রতি এক বিপুল অবদান, সন্দেহ নেই। কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়, বর্তমান অধঃপতিত ও বিপর্যস্ত মুসলিম সমাজে ছেলেমেয়েদের এ অধিকার ও আজাদি বাস্তা ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এর অপর একটি দিক বর্তমানে খুবই প্রাবল্য লাভ করেছে। আধুনিক ছেলেমেয়েরা তাদের বিয়ের ব্যাপরে বাপ-মা-গার্জিয়ানদের কোনো তোয়াক্কাই রাখে না। তাদের কোনো পরোয়াই করা হয় না। ‘বিয়ে নিজের পছন্দে ঠিক’ এ কথার সত্যতা অস্বীকার করা হচ্ছে না, তেমনি একথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আধুনিক যুবক-যুবতীরা যৌবনের উদ্দাম স্রোতের ধাক্কায় অবাধ মেলামেশার গড্ডালিকা প্রবাহে পড়ে দিশেহারা হয়ে যেতে পারে এবং ভালো-মন্দ, শোভন-অশোভন বিচারশুন্য হয়ে যেখানে-সেখানে আত্মদান করে বসতে পারে। তাই উদ্যম-উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থা বিচার-বিবেচনারও বিশেষ প্রয়োজন। কেননা বিয়ে কেবলমাত্র যৌন প্রেরণার পরিতৃপ্তির মাধ্যম নয়; ঘর, পরিবার, সন্তান, সমাজ, জাতি ও দেশ সর্বোপরি নৈতিকতার প্রশ্নও তার সাথে গভীরভাবে জড়িত। তাই বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের পিতা বা অলীর মতামতের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। ইমাম নববী উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় যে মত দিয়েছেন, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেছেনঃ
(আরবী)
হাদীসে উক্ত ‘সবচেয়ে বেশি অধিকার’ কথাটিতে শরীকদারী রয়েছে। তার মানে, মেয়ের নিজের বিয়ের ব্যাপারে যেমন তার অধিকার রয়েছে, তেমনি তার অলীরও অধিকার রয়েছে। তবে পার্থক্য এই যে, মেয়ের অধিকার অলীর অধিকার অপেক্ষা অধিক তাগিতপূর্ণ ও কার্যকর। তাই অলী যদি কোনো কুফু’তেও মেয়ের বিয়ে দিতে চায়, আর সে মেয়ে তা গ্রহণ করতে রাজি না হয়, তাহলে তাকে জোর করে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু মেয়ে নিজে যদি কোনো কুফু’তে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে; কিন্তু অলী তাতে বাধ্য না হয়; তাহলে অলী তাকে তা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করতে পারে।
কেননা সাধারণত অলী-পিতা-দাদা নিজেদের ছেলেমেয়ের কখনো অকল্যাণকামী হতে পারে না। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পিতামাতার মতের গুরুত্ব কিছুতেই অস্বীকার করা চলে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/505/52
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।