hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১৩৬
বিরোধ মীমাংসার পন্থা
ইসলাম সর্বপ্রথম দাম্পত্য জীবনের সম্ভাব্য সকল প্রকার বিরোধ ও মনোমালিন্য শান্তিপূর্ণভাবে বিদূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নিম্নলিখিত উপায়ে বিরোধসমূহের মীমাংসা করা সম্ভবঃ

(আরবী)

১. স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই উভয়ের অধিকার ও উভয়ের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধসম্পন্ন হতে নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীমের এ মহামূল্য বাণীটি বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছেঃ

হুশিয়ার, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

(আরবী)

পুরুষ দায়ী তার পরিবারবর্গের জন্যে। আর সেজন্যে সে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে।

(আরবী)

স্ত্রী দায়ী তার স্বামীর ঘরবাড়ি ও যাবতীয় আসবাবপত্রের জন্যে এবং সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

বস্তুত এ দায়িত্ববোধ উভয়েরমধ্যে পূর্ণমাত্রায় জাগ্রত থাকলে পারিবারিক জীবনে কখনো ভাঙ্গন বা বিপর্যয় আসতে পারবে না, কখনো তালাকের প্রয়োজন দেখা দেবে না।

২. দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীতে যখনই কোনো প্রকার বিবাদ-বিরাগ বা মনোমালিন্য দেখা দিবে, তখনই তাদের উভয়ের জন্যে এ নসীহত রয়েছে যে, প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে সহ্য শক্তির সংবৃদ্ধি রক্ষা করে, অপরের কোনো কিছু অপছন্দনীয় হলে বা ঘৃণার্হ হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য রক্ষার উদ্দেশ্যে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। কেননা এ কথা সর্বজনবিদিত যে, পুরুষ ও স্ত্রী –স্বভাব-প্রকৃতি, মন-মেজাজ ও আলাপ ব্যবহার ইত্যাদির দিক দিয়ে পুরামাত্রায় সমান হতে পারে না। কাজেই অপরের অসহনীয় ব্যাপার সহ্য করে নেয়ার জন্যে নিজের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করা কর্তব্য।

৩. দাম্পত্য জীবন সংরক্ষণের এ ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয়ে যায়, বিরোধ বিরাগ ও মনোমালিন্যের মাত্রা যদি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতেই থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত মীমাংসার জন্যে উভয়ের নিকটাত্মীদের সাগ্রহে এগিয়ে আসা কর্তব্য। স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্বামীর পক্ষথেকে একজন পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ বিধানের জন্যে ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে চেষ্টা চালাবে। এ যেন পরিবারিক বিরোধ মীমাংসার আদালত এবং এ আদালতের বিচারপতি হচ্ছে এ দু’জন। তারা উভয়ের মনোমালিন্যের বিষয় ও তার মূলীভূত কারণ সতর্কতার সঙ্গে অনুসন্ধান করবে। আর তার সংশোধন করে স্থায়ী মিলমিশ ও প্রেম ভালোবাসা পুনর্বহালের জন্যে চেষ্টা করবে। বস্তু স্বামী-স্ত্রী যদি বাস্তবিকই মিলেমিশে একত্র জীবন যাপনে ইচ্ছুক এবং সচেষ্ট হয় তাহলে সাময়িক ছোটকাট বিবাদ নিজেরাই মীমাংসা করে নিতে পারে। আর বড় কোনো ব্যাপার হলেও তা এ পারিবারিক সালিসী আদালত দ্বারা মীমাংসা করিয়ে নেয়া খুবই সহজ। কুরআন মজীদে নিম্নোক্ত আয়াতে এ ব্যবস্থারই নির্দেশ করা হয়েছেঃ

(আরবী)

যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকোনো বিরোধ মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে বলে ভয় করো, তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তারা দু’জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তাদের সে জন্যে তওফীক দান করবেন।

‘যদি তোমরা ….. ভয় করো’ বলে আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে দেশের শাসক ও বিচারকদের, সমাজের মাতবর-সরদারদের কিংবা স্বামী-স্ত্রীর নিকটাত্মীয় ও মুরব্বীদের। (আরবী) বলা হয়েছেঃ তোমাদের মনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে যদি কোনো প্রকারের সন্দেহের উদ্রেক হয় –সম্পর্ক মধুর নেই বলে ধারণা জন্মে, তাহলে তখন প্রকৃত ব্যাপার তদন্ত করা এবং অবস্থার সংশোধনের জন্যে চেষ্টিত হওয়া অবশ্য কর্তব্য। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে দাম্পত্য জীবনে ভাঙ্গন আসতে পারে এবং তা কিছুতেই কারো কাম্য হতে পারে না –ইসলামও তা পছন্দ করে না আর এ চেষ্টার পদ্ধতি হিসেবে বলা হযেছে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা এমন দু’জন ব্যক্তিকে মাধ্যম ও সালিস হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে, যারা কোনো কথা বলে উভয়কে মানাতে পারবে। এ দুজনকে এদের নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকেই হতে হবে।

(আরবী)

কেননা নিকটাত্মীরাই প্রকৃত অবস্থার গভীরতর রূপের সন্ধান পেতে পারে। সে সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে পারে এবং তারা অবশ্যই উভয়ের মধ্যে মিলমিশ করার জন্যে সর্বাধিক আগ্রহী হয়ে থাকে।

বাইরের লোক এ মীমাংসা কাজে নিয়োগ না করে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই আপন জন নিয়োগের নির্দেশ দেয়ার কারণ যে কি, তা আল্লামা আবূ বকর আল-জাসসাস-এর নিম্নোক্ত কথা থেকে জানা যায়। তিনি এ কারণ দর্শাতে গিয়ে লিখেছেনঃ

(আরবী)

বাইরের অনাত্মীয় লোক বিচারে বসলে তাদের কোনো এ পক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়ার ধারণা হতে পারে; কিন্তু উভয়েরই আপন আত্মীয় যদি এ মীমাংসার ভার গ্রহণ করে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ পক্ষের কথা বলে, তাহলে এ ধরনের কোনো ধারণার অবকাশ থাকে না –এজন্যেই আত্মীয় ও আপন লোককে এ বিরোধ মীমাংসার ভার দিতে বলা হয়েছে।

হযরত আলীর খেদমতে এক দম্পতি বহু সংখ্যক লোক সমভিব্যবহারে উপস্থিত হলে তিনি ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা বললেনঃ এই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছেঃ তার মীমাংসা চাই। তখন হযরত আলী (রা) বললেনঃ উভয়ের আপন আত্মীয় থেকে এক-একজনকে এ বিরোধ মীমাংসায় নিযুক্ত করে দাও। যখন দু’জন লোককে নিযুক্ত করা হলো, তখন হযরত আলী (রা) বললেনঃ তোমাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কতখানি তা জানো? তার পরে তিনি নিজেই বলে দিলেনঃ

(আরবী)

তোমাদের দায়িত্ব হলো, তারা দু’জনে মিলেমিশে একত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতে চাইলে তার ব্যবস্থা করে দেবে। আর যদি মনে করো যে, তারা উভয়েই বিচ্ছিন্ন হতে চায়, তাহলে পরস্পরকে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মিতভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

বিচারকদ্বয় সব কথা শুনে, সব অবস্থা জেনে বুঝে একটি ফয়সালা দেবে ও উভয়কে তা মানবার জন্যে বলবে। কিন্তু যদি তারা উভয় বা একজন তা মানতে রাজি না হয়, তাহলে তাকে ফয়সালা মেনে নেয়ার জন্যে নির্দেশ দিতে হবে। কেননা আয়াতে ব্যবহৃত শব্দনিচয়ের দৃষ্টিতে বলা যায়, এ দু’জন প্রথমত এক এক পক্ষ থে উকীল আর উকীলের কাজ হলো বলা। কিন্তু সে বলায় দি বিরোধের চূড়ান্ত অবসান না হয়, তাহলে তারা দু’জনে বিচারকর্তার মর্যাদা নিয়ে রায় মেনে নেয়ার জন্যে নির্দেশ দেবে। এ নির্দেশ মেনে নিতে উভয়েই বাধ্য। কেননা কুরআন মজীদে তাদের বলা হয়েছে ‘হাকিম’ অর্থাৎ হুকুমদাতা, বিচারক, ফয়সালাকারী। ফিকাহর কিতাবে এ সম্পর্কিত মতভেদ ও প্রত্যেক কথার দলীলের উল্লেখ রয়েছে।

এ ধরনের যাবতীয় চেষ্টা চালানোর পরও যদি মিলেমিশে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকবার কোনো উপায় না বেরোয়, বরং উভয় পক্ষই চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্যে অনমনীয় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ইষলাম তাদের দাম্পত্য জীবনের চূঢ়ান্ত অবসান ঘটাবার –তালাক দেয়ার –অবকাশ দিয়েছে।

ইসলামের এ তালাক দানের একটা নিয়মও বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তা হচ্ছে এই যে, স্বামী-স্ত্রীর ‘তুহর’ (হায়েয না থাকা) অবস্তায় একবার এক তালাক দেবে। এ তালাক লাভের পর স্ত্রী স্বামীর ঘরেই ‘ইদ্দত’ পালন করবে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে না –এরূপ তালাক দান ও ইদ্দত পালনের নিয়ম করার কারণ হলো –এতে করে উভয়েরই স্নায়ু মণ্ডলির সুষ্ঠু এবং তাদের অধিক সুবিবেচক হয়ে ওঠার সুযোগ হবে। চূড়ান্ত বিচ্ছেদের যে কি মারাত্মক পরিণাম তা তারা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারবে। স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম হবে যে, তালাকের পর তাদের সন্তান-সন্ততির ও ঘর-সংসারের কি মর্মান্তি দুর্দশা হতে পারে। ফলে তারা উভয়েই অথবা যে পক্ষ তালাকের জন্যে অধিক পীড়াপীড়ি করেছে –ঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধ-মনোমালিন্য সম্পূর্ণ পরিহার করে আবার নতুনভাবে মিলিত জীবন যাপন করতে রাজি হতে পারে। এ সাময়িক বিচ্ছেদ তাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার তীব্র আকর্ষণও জাগিয়ে দিতে পারে।

যদি তাই হয়, তাহলে এক-এক তালাককে ‘তালাকে রিজয়ী’ বা ‘ফিরিয়ে পাওয়ার অবকাশ পূর্ণ তালাক’ বলা হবে। তিন মাস ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই উভয়ের পুনর্মিলন সাধন করতে হবে। এতে নতুন করে বিয়ে পড়াতে হবে না (যদিও ইমাম শাফেয়ীর মতে মুখে অন্তন ফিরিয়ে নেয়ার কথা উচ্চারণ করতে হবে)।

৫. কিন্তু যদি এভাবে তালাক দেয়ার পর তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে গ্রহণ করা না হয়, তাহলে এ তালাক বায়েন তালাক হয়ে যাবে। তখন যদি ফিরিয়ে নিতে হয়, তাহলে পুনরায় বিয়ে পড়াতে হবে ও নতুন করে দেন-মোহর ধার্য করতে হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী স্বাধীন –সে ইচ্ছা করলে প্রথম স্বামীকে পুনরায় গ্রহণ করতেও পারে, আর ইচ্ছা না হলে সে অপর কোনো ব্যক্তিকে স্বামীত্বে বরণ করে নিতেও পারে। প্রথম স্বামী ও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে কোনোরূপ জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না এবং তার অপর স্বামী গ্রহণের পথে বাধ সাধতেও পারবে না।

৬. এক তালাকের পর ইদ্দতের মধ্যেই স্ত্রীকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয়, আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন যাপন শুরু করার পর আবার যদি বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে প্রথমবার ন্যায় আবার পারিবারিক আদলতের সাহায্যে মীমাংসার জন্যে চেষ্টা করতে হবে। এবারও যদি মীমাংসা না হয় তাহলে স্বামী তখন আর এক তালাক প্রয়োগ করবে। তখনও প্রথম তালাকের নিয়ম অনুযায়ীই কাজ হবে।

৭. দ্বিতীয়বার তালাক দেয়ার পর যদি স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয় আর তারপর বিরোধ দেখা দেয়, তখনো প্রথম দুবারের ন্যায় মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে। আর তা কার্যখর না হলে স্বামী তৃতীয়বার তালাক প্রয়োগ করতে পারে। আর এই হচ্ছে তার তালাক দানের ব্যাপারে চূড়ান্ত ও সর্বশেষ ক্ষমতা। অতঃপর স্ত্রী তার জন্যে হারাম এবং সেও তার স্ত্রীর জন্যে চিরদিনের জন্যে হারাম হয়ে যাবে।

কুরআন মজীদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

তালাক দুবার দেয়া যায়, তার পরে ভালোভাবে স্ত্রীকে গ্রহণ করা হবে, না হয় ভালোভাবে সকল কল্যাণ সহকারে তাকে বিদায় দেয়া হবে।

এ ‘বিদায় করে দেয়া হবে’ থেকেই তৃতীয় তালাক বোঝা গেল। তা মুখে স্পষ্ট উচ্চারনের দ্বারাই হোক, কি এমনি রেখে দিয়ে এক ‘তুহর’ কাল অতিবাহিত করিয়েই দেয়া হোক –উভয়ের পরিণতি একই।

নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ আয়াতে তো মাত্র দুবার তালাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলে তৃতীয় তালাক কোথায় গেল? তখন রাসূলে করীম (ﷺ) বললেনঃ

(আরবী)

‘কিংবা ভালোভাবে বিদায় করে দেয়া হবে’ বাক্যে-ই তৃতীয় তালাকের কথা নিহিত রয়েছে। -আবূ দাউদ।

তালাক ব্যবস্থা

এই তৃতীয় তালাক –তাই যেভাবেই দেয়া হোক –এরপর স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে ও স্ত্রী হিসেবে তাকে নিয়ে বসবাস করতে পারবে না।

এ আয়াত স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছে যে, এক বা দুই তালাক দেয়ার পর স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা হোক, আর তাকে চিরদিনের তরে বিদায় দেয়া হোক –উভয় অবস্থায়ই স্ত্রীর প্রতি ভালো ব্যবহার করতে হবে, তার মান-মর্যাদা ও ইযযত-আবরুর এক বিন্দু ব্যাঘ্যাত করা চলবে না। ফিরিয়ে নিলেও যাতে করে তার স্ত্রীত্বের মর্যাদা ও সম্ভ্রম কিছুমাত্র ব্যাহত হতে না পারে, আর চূড়ান্তভাবে তালাক দিয়ে পরিত্যাগ করা হলেও যাতে তার মান-সম্মান ও নৈতিকতার ওপর কোনো কলঙ্ক আরোপ করা না হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বামীর এ অধিকার নেই যে, এক বা দুই তালাক দেয়ার পর তাকে পুনরায় গ্রহণ করে তাকে লাঞ্চিতা ও অপমানিতা করবে, তেমনি চিরদিনের তরে বিদায় করতে হলেও তার কুৎসা প্রচার করে তার গোপন কথা জনসমাজে বা আদালনের বিচারকমণ্ডলী ও সমবেত জনতার সামনে প্রকাশ করে দিয়ে –অতীত দাম্পত্য জীবনের সব ময়লা আবর্জনা হাটে ঘাটে ধৌত করবে, ভবিষ্যতে অপর কোনো পুরুষ তাকে আগ্রহ ও ভক্তি সহকারে স্ত্রীত্বে বরণ করবে –তার পথ বন্ধ করে দেবে না, এ অধিকার স্বামীকে আদৌ দেয়া যায় না, ইসলামে তা দেয়া হয়নি। অতএব যে ব্যবস্থাধীন তালাক কেবল আদালতেই কার্যকর হতে পারে, আর স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর বা স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর নৈতিক চরিত্রহীনতা ও দাম্পত্য জীবনে অসততার প্রমাণ না দিয়ে তালাক নেয়া বা দেয়া যায় না এবং চিরমুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষেল বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় ব্যভিচারের অভিযোগ আনতে হয়, তা কোনোক্রমেই মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের নীতি হতে পারে না। ইসলাম তালাকের এই পদ্ধতি গ্রহণ করেনি। কুরআন তো এ আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেঃ রাখো তো ভালোভাবে রাখো, না রাখো তো তার কল্যাণ ও মঙ্গলকে অক্ষুণ্ন রেখেই এবং সে কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যেই চির বিদায় করে দাও, যেন সে অন্যত্র তার জুড়ি গ্রহণ করে সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারে এবং তুমিও পারো নতুন স্ত্রী গ্রহণ করে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন অতিবাহিত করার ব্যবস্থা করতে।

এ পর্যায়েই আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেনঃ

(আরবী)

স্বামী ও স্ত্রী যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়ই, তাহলে আল্লাহ তাঁর ঐশ্বর্য ও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে তাদের দুজনকেই নিশ্চিত ও স্বচ্ছন্দ করে দেবেন। আর আল্লাহ তা’আলা বাস্তবিকই বিশালতা দানকারী সুবিজ্ঞ বিজ্ঞানী।

তার মানে, স্বামী-স্ত্রী যদি পারস্পরিক সম্পর্ককে সুষ্ঠু, নির্দোষ ও মাধুর্যপূর্ণ করে নিতে না পারে এবং শেষ পর্যন্ত যদি তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটেই যায়, তাহলে আল্লাহ তাদের পরস্পরকে পরস্পর থেকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেবেন। একজন অপরজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও তারা সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। স্বামী অপর এক স্ত্রী গ্রহণ করে এবং স্ত্রী অপর এক স্বামী গ্রহণ করে সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করবে।

এ আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর তালাক গ্রহণর পরবর্তী মর্মান্তিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়কেই সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে, যেন তারা শরীয়ত অনুযায়ী পারস্পরিক বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কোনোরূপ মর্মজ্বালায় নিমজ্জিত না হয়ে বরং তালাক পরবর্তী বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হয়ে যেন তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। অতীতের কোনো স্মৃতিই যেন তাদের মনকে পীড়িত না করে। নতুন করে যেন তারা বিবাহিত হয়ে সুখময় জীবনের সন্ধান করে। পুরুষ যেন আবার বিয়ে করে গ্রহণ করে অপর এক মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে। মেয়ে লোকটিও যেন নতুন স্বামী গ্রহণ করে এবং এ নতুন সংসারে যেন তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িথ্ব যথাযথরূপে পালন করে। সেক্ষেত্রে যেন উদ্যোগ, আগ্রহ ও আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখা না দেয়। এ আয়াতের মূল বক্তব্য এই।

বস্তুত ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে জীবন নাট্যের চূড়ান্ত অবসান ঘটাবার জন্যে নয়, বরং নতুন করে এক উদ্যমপূর্ণ জীবন শুরু করাবার উদ্দেশ্যে। এ ভাঙ্গন ভাঙ্গনের জন্যে নয়, নতুন করে গড়বার জন্যে। তাই এ ভাঙ্গন কিছুমাত্র দূষণীয় নয়, নয় নিন্দনীয়, অবশ্য যদি তা গ্রহণ করা হয় সর্বশেষ ও চরম উপায় হিসেবে।

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, তালাক ব্যবস্থা যদিও পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের পক্ষে এক অবাঞ্ছনীয় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে সন্তান-সন্ততির পক্ষে তা মর্মান্তিক অবস্থার সৃষ্টি করে। কিন্তু পারিবারিক জীবনের আর এক বৃহত্তর দুর্দশা থেকে নারী-পুরুষ ও সন্তান-সন্ততিকে রক্ষা করার কল্যাণময় উদ্দেশ্যেই ইসলামে এর অবকাশ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইসলামে তালাক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এক চরম অবস্থার প্রতিকারের বিশেষ পন্থা হিসেবে, নিরুপায়ের উপায় হিসেবে। যখন আর কোনো উপায়ই নেই, শান্তিতে বসবাস যখন সম্ভবই হচ্ছে না ঠিক সে অবস্থায় প্রয়োগের জন্যেই এ ব্যবস্থা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন