hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১৩৮
তালাক দানের ক্ষমতা কার?
উপরের আলোচনায় একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ইসলামে তালাক দেয়ার কাজ কেবল স্বামীর, এ ক্ষমতাও একান্তভাবে স্বামীকেই দেয়া হয়েছে। স্বামী যদ্দিন ইচ্ছা একজন স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে রাখতে পারে। আর যখন ইচ্ছা –কারণ কিছু থাক বা নাই থাক –স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বিদায়করে দিতে পারে। এ ইখতিয়ারও স্বামীরই রয়েছে। কিন্তু ইসলামের এরূপ বিধান কেন? স্ত্রীকে এ ব্যাপারে কোনা ইখতিয়ার দেয়া হয়নি কেন? এতে করে স্ত্রী দাম্পত্য জীবনকে স্বামীর দয়া-অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীলা করে দেয়া হয়নি –আর এটাই কি ইনসাফ? বিষয়টি বিশদ আলোচনা সাপেক্ষ। তালাক দানের ক্ষমতা কাকে দেয়া যেতে পারে তা সাধারণ বুদ্ধিতে আমরা নিম্নোক্ত পাঁচটি সম্ভাবনাকে সম্মুখে রেখে বিবেচনা করতে পারিঃ

১. তালাক দানের ক্ষমতা কেবলমাত্র স্ত্রীকে দেয়া;

২. তালাক দানের কাজটি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে সম্পন্ন হওয়ার ব্যবস্থা করা;

৩. তালাক দানের ক্ষমতা প্রয়োগ কেবলমাত্র বিশেষ সরকারী বিভাগ কর্তৃক সম্পন্ন হওয়ার ব্যবস্থাকরা;

৪. তালাক দানের ক্ষমতা কেবলমাত্র স্বামীর হাতে ন্যস্ত করা;

৫. তালাক দানের ক্ষমতা যদিও দূড়ান্তভাবে স্বামীকে দেয়া হবে কিন্তু সে সঙ্গে স্ত্রীকেও ক্ষেত্র ও অবস্থান বিশেষ তালাক গ্রহণের সুযোগ দেয়া।

এ পাঁচটি ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা বিস্তরিত আলোচনা করে দেখতে চাইঃ

১. কেবলমাত্র স্ত্রীকে তালাক দানের ক্ষমতা দেয়ার উপায় নেই। কেননা এতে করে স্বামীকে কঠিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করে দেয়া হবে। আর পারিবারিক জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও ভঙ্গুরতা প্রবল হয়ে দেখা দেবে। তালাকে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতি সাধন হয় কেবল স্বামীর –স্ত্রীর নয় বরং স্ত্রী তো নিত্য নতুন স্বামী গ্রহণের সুযোগ পেলে প্রতিবারে নতুন করে দেন-মোহর পেয়ে আর্থিক দিক দিয়ে বড়ই লাভবান হতে পারবে। নিত্য নতুন সাজসজ্জা, নিত্য নতুন ঘরবাড়ি ও নিত্য নতুন পুরুষের ক্রোড় লাভের সুযোগ পাবে। ক্ষতির দিকটি সম্পূর্ণই পড়বে স্বামী বেচারার ভাগ্যে। কেননা দেন-মোহর ও যাবতীয় খরচ তাকেই বহন করতে হয়। কাজেই তালাক দানের ক্ষমতা কেবল স্ত্রীর হাতে থাকলে স্বামীর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে তা প্রয়োগ করে নতুন স্বামী গ্রহণ করার জন্যে চলে যেতে পারবে। আর তখন এ ক্ষমতার অপপ্রয়োগের আশংকাও খুব তীব্র হয়ে দেখা দেবে। স্ত্রীলোকের মন-মেজাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল, স্পর্শকাতর, ক্রোধান্ধ। পরিণাম সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তায় অক্ষম। স্বামী তার সাথে সামান্য ব্যাপার নিয়ে একটু মতভেদ করলেই স্ত্রী অতিষ্ট হয়ে তালাক দিয়ে ফেলবে এবং নতুন স্বামীর সন্ধানে বের হয়ে পড়বে।

২. স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতিক্রমে তালাক দেয়ার ব্যবস্থা করা হলে তালাক দানের ব্যাপারটি অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে; যদিও ইসলাম পারস্পরিক বোঝাপড়া করাকে নিষেদ করেনি। কিন্তু তাই বলে বোজাপড়া ও স্ত্রীর সম্মতি ব্যতিরেকে তালাক দিলে তালাক সিদ্ধ হবে না, এমন শর্ত ইসলামে করা হয়নি। কেননা এরূপ শর্ত করা হলে স্ত্রী স্বামীর সাথে ইচ্ছাপূর্ভক অমানুষিক ও অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেও তালাকের পরিণাম থেকে রেহাই পেয়ে যেতে পারে। এরূপ অবস্থায় বহু সংখ্যক স্বামীরই দাম্পত্য জীবন মারাত্মকরূপে বিষাক্ত ও দুঃসহ হয়ে পড়ত। তাছাড়া স্ত্রী তো ঘরবাড়ির ব্যয়ভার বহন করে না, স্বামীকেও কোনো অর্থ দিয়ে সাহায্য করে না, করতে বাদ্য নয়, এজন্যে তার কোনো দায়িত্ব নেই। এমতাবস্থায় সে কেন তালাকে সম্মতি দেবে? আর তখন স্বামীকেই বা কি করে এমন স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতে বলা যায়, যে তাকে ভালোবাসে না? শুধু তাই নয় –ঘৃণা করে, আদৌ সহ্য করতে পারে না অথচ তালাক নিতেও সম্মত নয়?

৩. সরকারী ব্যবস্থাপনায় তালাক ঘটানো সম্পূর্ণ ইউরোপীয় রীতি। এর ক্ষীত ও কদর্যতা এখন দুনিয়ার মানুষের সামনে প্রকট হয়ে পড়েছে। কেননা তা করা হলে উভয়কেই দাম্পত্য জীবনের কলুষতাকে হাটের মাঝখানে তুলে ধরতে হবে, প্রত্যেককেই অপর পক্ষের নৈতিক দোষ, কলংক ও দুর্বলতা প্রমাণিত করতে হবে বিচারকদের সামনে। আর একাজে যে সামাজিক নৈতিকতা ও সংহতি-স্থিতির পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক, তা বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না।

৪. তালাকদানের ক্ষমতা কেবল স্বামীর হাতে ন্যস্ত করা হলে সেটা হবে সত্যই এক স্বভাবসম্মত ব্যবস্থা। কেননা পারিবারিক জীবনের সব রকমের দায়দায়িত্ব প্রধানক তাকেই বহন করতে হয়। আর্থিক প্রয়োজন তাকেই পূরণ করতে হয়। সে ইচ্ছা করে বারে বার নতুন বিয়ে করে দেন-মোহর দেয়ার, বিয়ে-উৎসবের খরচ বহন করার ঝুঁকি গ্রহণ করতে সহজে রাজি হতে পারে না। সে একবারের বিয়েকে স্থায়ী করে রাখার জন্যে চেষ্টিত হবে প্রাণপণে। আরসে তালাক দিতে রাজি হলেও তাহবে ঠিক তখন, যখন স্ত্রীর সাথে একত্রে ঘর করার আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট নেই।

অপরদিকে, পুরুষরা সাধারণত্যশক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে। পারিবারিক জীবন যত ঝড়-ঝাপটাই আসুক, যতই কষ্ট হোক, যতই জটিলতা দেখা দিক, বাইরের কিংবা ভিতরে, সবই সে অকাতরে সইতে পারে। সয়ে থাকে। তার পক্ষে তালাকের জন্যে তৈরী হওয়া কেবল তখনই সম্ভব, যখন দাম্পত্য জীবন সব রকমের সুখ-শান্তি ও সৌবাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত তালাক দেয়ার ও নতুন করে বিয়ে করে ঘরে আনার পরিণাম, দাম্পত্য সুখ ও আর্থিক ব্যয় বহনের দিক দিয়েও সে সব সময়ই সজাগ থাকে। কাজেই তার পক্ষে যখন-তখন তালাক দানের ক্ষমতা প্রয়োগ হওয়া সহজ মনে করা যেতে পারে না, অন্তত যদ্দিন একত্রে মিলেমিশে ও সুখে থাকার শেষ আশাটুকু নিভে না যাবে।

প্রশ্ন করা যেতে পারে, স্বামী সব সময় এ চরম অবস্থায় পড়েই তালাক দানের ক্ষমতা প্রয়োগ করে না, বরং প্রায়ই দেখা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে সামান্য ঝগড়াঝাটি ও কলহের দরুন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়, একান্তই অকারণে স্ত্রীকে শুধু কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তালাক দেয় অথবা এও দেখা যায় যে, নিত্য নতুন বধুয়ার মধু লুণ্ঠনের সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে স্বামী তার এক স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছে, ফলে এ স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে নানাভাবে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত ও অপদস্ত হচ্ছে। এর প্রতিবধান কি করা যেতে পারে?

এর জবাবে বলা যায়, দুনিয়ার যে কোনো ব্যবস্থাই খারাপভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ক্ষমতাবান ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন ও দায়িত্বজ্ঞানশূন্য হয়, তাহলে তার পক্ষে সবক্ষেত্রে সীমা লংঘন করে যাওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ অবস্তা এই যে, স্বামী স্ত্রীর তুলনায় অধিক দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হয়ে থাকে, ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাকেই বেশি করে ভাবতে হয় –অন্তত স্ত্রীর তুলনায়। তাই এ সাধারণ অবস্থাকে সামনে রেখেই বিধান হিসেবে তালাক দানের ক্ষমতা মূলত স্বামীর হাতেই অর্পন করা হয়েছে। বস্তুত নিয়ম কখনো ব্যর্থ যায় না। প্রত্যেক সাধারণ নিয়মকে যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্যে অনুরূপ ব্যক্তি-চরিত্র ও সমাজ পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়। আর এজন্যে দীর্ঘ সময় চেষ্টা-সাধনা ও যত্নের প্রয়োজন। তালাক দানের সুযোগ ও স্বামীর ক্ষমতা একটা সাধারণ নিয়ম; কিন্তু স্বামীর চরিত্রহীনতা, অশিক্ষা ও কুসংস্কারের দরুন কিছু লোক যদি এ সুযোগের অপব্যবহার করে, তাতে আসল মূলনীতির কোনো দোষ নেই। আর প্রত্যেক সাধারণ নীতির প্রয়োগে কারো না কারো কিছু-না-কিছু অসুবিধা কিংবা ক্ষতি সাধিত হয়েই থাকে। এটাও বিচিত্র কিছু নয়। কাজেই বৃহত্তর কল্যাণের দৃষ্টিতেই সাধারণ নীতির যথার্থতা বিচার করতে হবে। উপরোক্ত ক্ষতি ও অকল্যাণের দিকটির সংশোধন করা গলে পুরুষকে তালাক দানের ক্ষমতা দেয়াই যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হবে। এ কারণেই ইসলামে তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্বামীকে দেয়া হয়েছে।

কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

সে যার হাতে বিয়ের মূল গ্রন্থি নিবদ্ধ রয়েছে।

তাফসীরে মাযহারী এর অর্থ লিখেছেঃ

(আরবী)

স্বামীই হচ্ছে বিয়ের বন্ধন ও সে বন্ধন খোলার কর্তৃত্বের অধিকারী।

তাবারানী ও বায়জাবীতেও এ অর্থই বর্ণিত হয়েছে। সায়ীদ ইবনে সুমাইয়্যিব, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, শা’বী, শুরাইহ, মুজাহিদ ও আবূ হানীফা প্রমুখ এ মত প্রকাশ করেছেন। (আরবী)

আল্লামা আ-লুসী এ ব্যাখ্যা সম্পর্কে লিখেছেনঃ

(আরবী)

আয়াতের এ ব্যাখ্যা রাসূল থেকে বর্ণিত, বর্ণিত হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে রাসূলে করীম (ﷺ)-এরই কাছ থেকে তাঁরই কথা হিসেবে আর সাহাবীদের এক জামা’আতও এ মতই পোষণ করতেন।

এ পর্যায়ে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে –এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরয করলেনঃ

(আরবী)

হে রাসূল! আমার মালিক ও মনিব তার দাসীকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছিল। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। এ কথা শুনে নবী করীম (ﷺ) মুসলিম জনগণকে একত্রিক করলেন এবং মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। বললেনঃ তোমাদের কি হয়েছে। তোমাদের এক-একজন তার দাসের কাছে তার দাসীকে বিয়ে দেয়। আর তার পরে তাদের দুজনের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। জেনে রাখ, তালাক দেয়ার ইখতিয়ার তার, যে বিয়ে করেছে।

বস্তুত কুরআন ও হাদীসের এসব দলীল এবং মনীষীদের ব্যাখ্যা ও সমর্থন এ পর্যায়ের অকাট্য দলীল। এ দলীলসমূহ অতীব স্পষ্ট। এর অন্য কোনোরূপ ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। এসব মিলে এক সঙ্গে একথা প্রমাণ করে যে, তালাক দেয়ার ক্ষমতা ও অধিকার কেবলমাত্র স্বামীর। এমন কি রাসূলের পক্ষেও স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার ছিল না। অতএব দুণিয়ার কোনো দেশের কোনো সরকার বা সরকারী পদাধিকারী কোনো ব্যক্তির, আদালতের কোনো বিচারপতির কিংবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের কোনো চেয়ারম্যানের –নিজ ইচ্ছেমতো তালাক দেয়ার কোনো অধিকার থাকতে পারে না। অবশ্য যদি স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কই খারপা হয়ে যায়, কেউ যদি কারো অধিকার আদায় না করে, তাহলে সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারার কথা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ব্যাপার।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন