মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বর্তমান যুগ অর্থনৈতিক যুগ, অর্থের প্রয়োজন আজ যেন পূর্বাপেক্ষা অনেক গুণ বেশি বেড়ে গেছে। অর্থ ছাড়া এ যুগের জীবন ধারণ তো দূরের কথা, শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণও যেন সম্ভব নয় –এমনি এক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে জীবন ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে। তাই পরিবারের একজন লোকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা, এক ব্যক্তির উপার্জনে গোটা পরিবারের সব রকমের প্রয়োজন পূরণ করা আজ যেন সুদূরপরাহত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের লোকদের মনোভাব এমনি। তারা মনে করে, জীবন বড় কঠিন, সংকটময়, সমস্যা সংকুল। তাই একজন পুরুষের উপার্জনের ওপর নির্ভর না করে ঘরের মেয়েদের-স্ত্রীদেরও উচিত অর্থোপার্জনের জন্যে বাইরে বেরিয়ে পড়া। এতে করে একদিকে পারিবারিক প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে স্বামীর সাথে সহযোগিতা করা হবে, জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। অন্যথায় বেচারা স্বামীর একার পক্ষে সংসার তরণীকে সুষ্ঠুরূপে চালিয়ে নেয়া এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বেলাভূমে পৌঁছিয়ে দেয়া কিছুতেই সম্ভব হবে না। আর অন্যদিকে নারীরাও কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের কর্মক্ষমতার স্ফূরণ ও বিকাশ সাধনের সুযোগ পাবে।
এ হচ্ছে আধুনিক সমাজের মনস্তত্ত্ব। এর আবেদন যে খুবই তীব্র আকর্ষণীয় ও অপ্রত্যাখ্যানীয়, তাতে সন্দেহ নেই। এরই ফলে আজ দেখা যাচ্ছে, দলে দলে মেয়েরা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। অফিসে, ব্যবসা কেন্দ্রে, হাসপাতালে, উড়োজাহাজে, রেডিও, টিভি স্টেশনে –সর্বত্রই আজ নারীদের প্রচণ্ড ভীড়।
এ সম্পর্কে দুটি প্রশ্ন অত্যন্ত মৌলিক, একটি পারিবারিক-সামাজিক ও নৈতিক আর দ্বিতীয়টি নিতান্তই অর্থনৈতিক।
নারী সমাজ আজ যে ঘর ছেড়ে অর্থোপার্জন কেন্দ্রসমূহে ভীড় জমাচ্ছে, তার বাস্তব ফলটা যে কী হচ্ছে তা আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। পরিবারের মেয়েরা নিজেদের শিশু সন্তানকে ঘরে রেখে দিয়ে কিংবা ধাত্রী বা চাকর-চাকরাণীর হাতে সঁপে দিয়ে অফিসে, বিপণীতে উপস্থিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে –দিন রাতের প্রায় সময়ই –শিশু সন্তানরা মায়ের স্নেহমায়া থেকে বঞ্চিত থাকবে বাধ্য হচ্ছে আর তারা প্রকৃতপক্ষে লালিত-পালিত হচ্ছে ধাত্রীর হাতে, চাকর-চাকরাণীর হাতে। ধাত্রী আর চাকর-চাকরাণীরা যে সন্তানের মা নয়, মায়ের কর্তব্য সঠিকবাবে পালন করাও তাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় –এ কতা যুক্তি দিয়ে বোঝাবার প্রয়োজন করে না অথচ ছোট ছোট মানব শিশুদের পক্ষে মানুষ হিসেবে লালিত-পালিত হওয়ার জন্যে সবচাইতে বেশি প্রয়োজনীয় হচ্ছে মায়ের স্নেহ-দরদ ও বাৎসল্যপূর্ণ ক্রোড়।
অপরদিকে স্বামীও উপার্জনের জন্যে বের হয়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে স্ত্রীও। স্বামী এক অফিসে, স্ত্রী অপর অফিসে, স্বামী এক কারখানায়, স্ত্রী অপর কারখানায়। স্বামী এক দোকানে, স্ত্রী অপর এক দোকানে। স্বামী এক জায়গায় ভিন মেয়েদের সঙ্গে পাশাপাশি বসে কাজ করছে আর স্ত্রী অপর এক স্থানে ভিন পুরুষদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রুজি-রোজগারে ব্যস্ত হয়ে আছে। জীবনে একটি বৃহত্তম ক্ষেত্রে স্বামী আর স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের বন্ধনে ফাঁটল ধরা –ছেদ আসা যে অতি স্বাভাবিক তা বলে বোঝাবার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে না স্বামীত্ব রক্ষা পায়, না থাকে স্ত্রীর সতীত্ব। উভয়ই অর্থনৈতিক প্রয়োজনের দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল এবং প্রত্যেকেরই মনস্তত্ব সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবধারায় চালিত ও প্রতিফলিত হতে থাকে স্বাভাবিকভাবেই। অতঃপর বাকি থাকে শুধু যৌন মিলনের প্রয়োজন পূরণ করার কাজটুকু। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের পর এ সাধারণ কাজে পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া –বিশেষত বাইরে যখন সুযোগ-সুবিধার কোনো অবধি নেই –তখন একান্তই অবাস্তব ব্যাপার। বস্তুত এরূপ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আকর্ষণ ক্ষীণ হয়ে আসতে বাধ্য। অতঃপর এমন অবস্থা দেখা দেবে, যখন পরিচয়ের ক্ষেত্রে তারা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী হলেও কার্যত তারা এক ঘরে রাত্রি যাপনকারী দুই নারী পুরুষ মাত্র। আর শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তাদের ক্ষেত্রে বিচিত্র কিছু নয়। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি, নির্লিপ্ততা, গভীর প্রেম-ভালোবাসা শূন্য হয়ে এরা বাস্তব ক্ষেত্রে অর্থোপার্জনে যন্ত্র বিশেষে পরিণত হয়ে পড়ে। এ ধরনের জীবন যাপনের এ এক অতি স্বাভাবিক পরিণতি ছাড়া আর কিছু নয়।
একথা সুস্পষ্ট যে, যৌন মিলনের স্বাদ যদিও নারী পুরুষ উভয়েই ভোগ করে, কিন্তু তার বাস্তব পরিণাম ভোগ করতে হয় কেবলমাত্র স্ত্রীকেই। স্ত্রীর গর্ভেই সন্তান সঞ্চারিত হয়। দশ মাস দশ দিন পর্যন্ত বহু কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ সহকারে সন্তান গর্ভে ধারণ করে তাকেই চলতে হয়, সন্তান প্রসব এবং তজ্জতিন কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ তাকেই পোহাতে হয়। আর এ সন্তানের জন্যে স্রষ্টার তৈরী খাদ্য সন্তান জন্মের সময় থেকে কেবলমাত্র তারই স্তনে এসে হয় পুঞ্জীভূত। কিন্তু পুরুষ এসব কিছু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। জনেন্দ্রিয়ে শুক্রকীট প্রবিষ্ট করানোর পর মানব সৃষ্টির ব্যাপারে পুরুষকে আর কোনো দায়িত্বই পালন করতে হয় না। এ এক স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপার, যৌন মিলনকারী কোনো নারীই এ থেকে রেহাই পেতে পারে না।–[বর্তমানে গর্ভ ধারনের এ ঝামেলা থেকে তাদের মুক্ত রাখার জন্যেই আবিস্কৃত ও উৎপাদিত হয়েছে জন্মনিরোধের যাবতীয় আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম। তার সফল ব্যবহার যেসব নারী সক্ষম হয়, কেবল তারাই গর্ভ ধারণ থেকে নিষ্কৃত পেয়ে যায়] এখন এহেন নারীকে যদি পরিবারের জন্যে উপার্জনের কাজেও নেমে যেতে হয়, তাহলে তাকে কতখানি কষ্টদায়ক, কত মর্মান্তিক এবং নারী সমাজের প্রতি কত সাংঘাতিক জুলুম, তা পুরুষরা না বুঝলেও অন্তত নারী সমাজের তা উপলব্ধি করা উচিত।
পারিবারিক জীবনের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ দুটো। একটি হচ্ছে পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ আর অপরটি হচ্ছে মানব বংশের ভবিষ্যৎ রক্ষা। দ্বিতীয় কাজটি যে প্রধানত নারীকেই করতে হয় এবং সে ব্যাপারে পুরুষের করণীয় খুবই সামান্য আর তাতেও কষ্ট কিছুই নেই, আছে আনন্দ-সুখ ও স্ফুর্তি, এ তো সুস্পষ্ট কথা। তা হলে যে নারীকে মানব বংশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্যে এতো দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে, তাকেই কেন আবার অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব বহন করতে হবে? এটা কোন ধরনের ইনসাফ! দুটো কাজের একটি কাজ যে স্বাভাবিক নিয়মে একজনের ওপর বর্তিয়েছে, ঠিক সেই স্বাভাবিক নিয়মেই কি অপর কাজটি অপর জনের ওপর বর্তাবে না? নারীরাই বা এ দুধরনের কাজের বোঝা নিজেদের স্কন্ধে টেনে নিতে ও বয়ে বেড়াতে রাজি হচ্ছে কেন?
ইসলাম এ না-ইনসাফী করতে রাজি নয়। তাই ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় গোটা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব একমাত্র পুরষের। দুটি কাজ দু’জনের মধ্যে যে স্বাভাবিক নিয়মে বণ্টিত হয়ে আছে ইসলাম সে স্বাভাবিক বণ্টনকেই মেনে নিয়েছে। শুধু মেনে নেয়নি, সে বণ্টনকে স্বাভাবিক বণ্টন হিসাবে স্বীকার করে নেয়ায়ই বিশ্বমানবতার চিরকল্যাণ নিহিত বলে ঘোষণাও করেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী মহাসম্মানিত মানুষ, তাদরে নারীত্ব হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান, সবচেয়ে সম্মানার্হ। আল্লাহ তা’আলা তাদের এ সম্মান ও মর্যাদা নিহিত রেখেছেন তাদের কাছে অর্পিত বিশেষ আমানতকে সঠিকভাবে রক্ষার কাজে। এতেই তাদের কল্যাণ, গোটা মানবতার কল্যাণ ও সৌভাগ্য। নারীর কাছে অর্পিত এ আমানত সে রক্ষা করতে পারে কোনো পুরুষের স্ত্রী হয়ে, গৃহকর্ত্রী হয়ে, মা হয়ে। এ ক্ষেত্রেই তার প্রকৃত ও স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব। নারীকে যদি পরিবারের সুরক্ষিত ভিত্তিভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যদি দেয়া যায় তার সব অধিকার, সঠিক মর্যাদা যথাযথভাবে ও পরিপূর্ণ মাত্রায়, তবেই নারীর জীবন সুখ-সম্ভারে সমৃদ্ধ হতে পারে। নারী যদি সফল স্ত্রী হতে পারে, তবেই সে হতে পারে মানব সমাজের সর্বাধিক মূল্যবান ও সম্মানীয় সম্পদ। তখন তার দরুন একটা ঘর ও সংসারই শুধু প্রতিষ্ঠিত ও ফুলে ফলে সুশোভিত হবে না, গোটা মানব সমাজও হবে যারপরনাইভাবে উপকৃত।
অনুরূপভাবে নারী যদি মা হতে পারে, তবে তার স্থান হবে সমাজ-মানবের শীর্ষস্থানে। তখন তার খেদমত করা, তার কথা মান্য করার ওপরই নির্ভরশীল হবে ছেলে সন্তানদের জান্নাত লাভ। ‘মায়ের পায়ের তলায়ই রয়েছে সন্তানের বেহেশত’।
নারীকে এ সম্মান ও সৌভাগ্যের পবিত্র পরিবেশ থেকে টেনে বের করলে তার মারাত্মক অকল্যাণই সাধিত হবে, কোনো কল্যাণই তার হবে না তাতে।
তবে একথাও নয় যে, নারী অর্থোপার্জনের কোনো কাজই করতে পারবে না। পারবে, কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তার সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার পর; তাকে উপেক্ষা করে, পরিহার করে নয়।
ঘরের মধ্যে থেকেও মেয়েরা অর্থোপার্জনের অনেক কাজ করতে পারে এবং তা করে স্বামীর দুর্বহ বোঝাকে পারে অনেকখানি হালকা বা লাঘব করতে। কিন্তু এটা তার দায়িত্ব নয়, এ হবে তার স্বামী-প্রীতির অপূর্ব দৃষ্টান্ত।
কিন্তু আবার স্মরণ করতে হবে যে, সফল স্ত্রী হওয়াই নারী জীবনের আসল সাফল্য। সে যদি ঘরে থেকে ঘরের ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুরূপে চালাতে পারে, সন্তান লালন-পালন, সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষাদান, সামান্য ও সাধারণ রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনও পূরণ করতে পারে, তবে স্বামী-প্রীতি আর স্বামীর সাথে সহযোগিতা এর চাইতে বড় কিছু হতে পারে না। স্বামী যদি স্ত্রীর দিক দিয়ে পূর্ণ পরিতৃপ্ত হতে পারে, ঘরের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কে হতে পারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত, তাহলে সে বুকভরা উদ্দীপনা আর আনন্দ সহকারে দ্বিগুণ কাজ করতে পারবে। স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতা এর চাইতে বড় আর কি হতে পারে।
নারী স্ত্রী হয়ে কেবল সন্তান উৎপাদনের নির্জিব কারখানাই হয় না, সে হয় সব প্রেম-ভালোবাসা ও স্নেহ মমতার প্রধান উৎস, স্বামী ও পুত্র কন্যা সমৃদ্ধ একটি পরিবারের কেন্দ্রস্থল। বাইরের ধন-ঐশ্বর্যের ঝংকার অতিশয় সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের চাকচিক্য আর হাস্য-লাস্যের চমক-ঠমক, গৃহাভ্যন্তরস্থ এ নিবিড় সুখ ও শান্তির তুলনায় একেবারেই তুচ্ছ, অতিশয় হীন ও নগণ্য। এ দুয়ের মাঝে কোনো তুলনাই হতে পারে না।
আজকের দিনে যেসব নারী গৃহকেন্দ্র থেকে নির্মূল হয়ে বাইরে বের হয়ে পড়েছে, আর ছিন্ন পত্রের মতো বায়ূর দোলায় এদিক থেকে সেদিকে উড়ে চলেছে, আর যার কাছে হচ্ছে ধর্ষিতা, লাঞ্ছিতা –তারা কি পেয়েছে কোথাও নারীত্বের অতুলনীয় সম্মান? পেয়েছে কি মনের সুখ ও শান্তি? যে টুপি অল্প মূল্যের হয়েও মাথায় চড়ে শোভাবর্ধন করতে পারে, তা যদি স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তবে ধূলায় লুণ্ঠিত ও পদদলিত হওয়া ছাড়া তার কি গতি হতে পারে?
বস্তুত বিশ্বমানবতার বৃহত্তম কল্যাণ ও খেদমতের কাজ নারী নিজ গৃহাভ্যন্তরে থেকেই সম্পন্ন করতে পারে। স্বামীর সুখ-দুঃখের অকৃত্রিম সাথী হওয়া, স্বামীর হতাশাগ্রস্থ হৃদয়কে আশা আকাংক্ষায় ভরে দেয়া এবং ভবিষ্যৎ মানব সমাজকে সুষ্ঠুরূপে গড়ে তোলার কাজ একজন নারীর পক্ষে এ ঘরের মধ্যে অবস্থান করেই সম্ভব। আর প্রকৃত বিচারে এই হচ্ছে নারীর সবচাইতে বড় কাজ। এতে না আছে কোনো অসম্মান, না আছে লজ্জা ও লাঞ্ছনার কোনো ব্যাপার। আর সত্যি কথা এই যে, বিশ্বমানবতার এতদাপেক্ষা বড় কোনো খেদমতের কথা চিন্তাই করা যায় না। এ কালের যেসব নারী এ কাজ করতে রাজি নয় আর যে সব পুরুষ নারীদের এ কাজ থেকে ছাড়িয়ে অফিসে কারখানায় আর হোটেল-রেস্তোরাঁয় নিয়ে যায়, তাদের চিন্তা করা উচিত, তাদের মায়েরাও যদি এ কাজ করতে রাজি না হতো, তাহলে এ নারী ও পুরুষদের দুনিয়ায় আসা ও বেঁচে থাকাই হতো সম্পূর্ণ অসম্ভব।
তাই ইসলাম নারীদের ওপর অর্থোপার্জনের দায়িত্ব দেয়নি, দেয়নি পরিবার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের কর্তব্য। তা সত্ত্বেও যে নারী গৃহকেন্দ্র অস্বীকার করে বাইরে বের হয়ে আসে, মনে করতে হবে তার শুধু রুচিই বিকৃত হয়নি, সুস্থ মানসিকতা থেকেও সে বঞ্চিতা।
সামাজিক ও জাতীয় কাজে-কর্মে নারী-বিনিয়োগের ব্যাপারটি কম রহস্যজনক নয়। এ ধরনের কোনো কাজে নারী-বিনিয়োগের প্রশ্ন আসতে পারে তখন, যখন সমাজের পুরুষ শক্তিকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে। তার পূর্বে পুরুষ-শক্তিকে বেকার করে রেখে নারী নিয়োগ করা হলে, না বেকার সমস্যা সমাধান হতে পারে, না পারে নতুন দাম্পত্য জীবনের সূচনা, নতুন ঘর-সংসার ও পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত করতে। কেননা সাধারণত কোনো সভ্য সমাজেই নারীর রোজগার করে পুরুষদের খাওয়ায় না, পুরুষরাই বরং নারীদের ওপর ঘর-সংসারের কাজ-কর্ম ও লালন-পালনের ভার দিয়ে তাদের যাবতীয় অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। বিশেষত পুরুষরা যদি বাইরের সমাজের কাজ না করবে, জরুরী-রোজগারের কাজে না লাগবে, তাহলে তারা করবেটা কি! স্ত্রীর রোজগারে যেসব পুরুষ বসে খায়, তারা নিষ্কর্মা থেকে কর্মশক্তির অপচয় করে। এভাবে নারীর পরিবর্তে পুরুষকে নিয়োগ করা হলে একদিকে যেমন জাতির বৃহত্তর কর্মশক্তির সঠিক প্রয়োগ হবে, বেকার সমস্যার সমাধান হবে, তেমনি হবে নতুন দম্পতি ও নতুন ঘর-সংসার-পরিবার প্রতিষ্ঠা। এক-একজন পুরুষের উপার্জনে খেয়ে পরে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারবে বহু নর, নারী, শিশু। এতে করে পুরুষদের কর্মশক্তির যেমন হবে সুষ্ঠু প্রয়োগ, তেমনি নারীরাও পাবে তাদের স্বভাব-প্রকৃতি ও রুচি-মেজাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ। এভঅবেই নারী আর পুরুষরা বাস্তবভাবে হতে পারে সমাক শংকটের সমান ভারপ্রাপ্ত চাকা। যে সমাজে এরূপ ভারসাম্য স্থাপিত হয়, সে সমাজ শকট (গাড়ি) যে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ও দ্রুতগতিতে মঞ্জিলে মকসুদ পানে ধাবিত হতে পারে, পারে শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির উচ্চমত প্রকোষ্ঠে আরোহণ করতে, তা কোনো সমাজ অর্থনীতিবিদই অস্বীকার করতে পারেনা।
তাই এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে যে, সামাজিক ও জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে নারীদের ভীড় জমানো কোনো কল্যাণই বহন করে আনতে পারে না –না সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিতে, না নিতান্ত অর্থনৈতিক বিচারে।
এ নীতিগত আলোচনার প্রেক্ষিতে আধুনিক ইউরোপের এক বাস্তব দৃষ্টান্ত পেশ করা কম রুচিকর হবেনা।
এক বিশেষ রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে, লণ্ডন শহরে ৭৫৭৩টি পানশালা রয়েছে। আর সেখানে কেবল মদ্যপায়ী পুরুষরাই ভীড় জমায় না, বিলাস-স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া বহু নারীও সেখানে পদধুলি দিতে কসুর করে না। লন্ডনে নারী মদ্যপায়িনীর সংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্তমানে তাদের জন্যে বিশেষ পানশালা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে। কিন্তু নারীদের জন্যে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত এ পানশালা সমূহে কেবলমাত্র সাদাসিধে গৃহকর্ত্রীরাই এসে থাকে। বিলাসী যুবতী ও চটকদার সিক মেয়েরা কিন্তু সাধারণ পানশালাতেই উপস্থিত হয়। নারীদের মদ্যপান স্পৃহার এ তীব্রতা প্রথমে গুরুতর বলে মনে করা হয়নি। বরং মনে করা হয়েছে, তাদের এ কাজ থেকে বিরত রাখতে চাইরে ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হবে। কিন্তু মদাসক্ত ও অভ্যস্ত মদ্যপায়িনী নারীদের স্বামীর এখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তারা তাদের স্ত্রীদের এ মদাসক্তির ফলে তাদের দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন ধ্বংশোন্মখ হতে দেখতে পাচ্ছে। তারা অনুভব করছে –পুরুষদের তুলনায় নারীরা অধিক আবেগপ্রবণ ও অটল স্বভাবের হয়ে থাকে। ফলে তারা খুব সহজেই অভ্যস্ত মদ্যপায়িনীতে পরিণত হচ্ছে। আর তাদের স্বাস্থ্য বিনষ্ট হচ্ছে, পারিবারিক বাজেট শূন্য হয়ে যাচ্ছে এবং সর্বোপরি ঘর-সংসারের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
এ মদ্যপায়ী নারীদের অধিকাংশই হচ্ছে তারা, যারা শহরের বিভিন্ন অফিসে নানা কাজে নিযুক্ত রয়েছে। তাদের অফিস গমনের ফলে অফিসের নির্দিষ্ট সময় তাদের ঘর-সংসার তাদের প্রত্যক্ষ দেখাশোনা, পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। অফিসের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তারা পানশালায় গমন করে। আর রাতের বেশির ভাগ সময়ই তারা অতিবাহিত করে মদের নেশায় মত্ত হয়ে। ফলে না থাকে তাদের স্বামীদের প্রতি কোনো আগ্রহ আকর্ষণ ও কৌতুহল, না শিশু সন্তানদের জন্য কোনো মায়া-মমতা তাদের মনে।
এসব স্ত্রী স্বামীরই নিজেদের সন্ধ্যাকালীন ও নৈশ একাকীত্ব ও নিঃসংগতাকে ভরে তোলে, সরল ও রঙীন করে তোলে নৈশ ক্লাবে গমন করে। ফলে এদের সন্তানদের মনে মা-বাবা ও নৈতিক মূল্যমানের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাভক্তি থাকতে পারে না। বর্তমান ইউরোপের নতুন বংশধররা যে সামাজিক পারিবারিক বন্ধনের বিদ্রোহী হয়ে উঠছে, শত্রু হয়ে উঠছে নৈতিকতা শালীনতা পবিত্রতার, আসলে তারা পূর্বোক্ত ধরনের মদ্যপায়ী মা-বাবার ঘরেই জন্ম গ্রহণ করেছে। বর্তমান ইউরোপ এ ধরনের নৈতিকতার সব বাঁধন বিধ্বংসী ময়লার স্রোতে রসাতলে ভেসে যাচ্ছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় সম্পদ শক্তি এটম বোমা ও হাইড্রোজেন বোমাও এ স্রোতকে রুখতে পারে না, ঠেকাতে পারে না ইউরোপ-আমেরিকার নিশ্চিত ধ্বংসকে। (দৈনিক কুহিস্তান, লাহোর, দৈনিক দাওয়াত, দিল্লী-১৩-৪-৬৫ইং)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/505/109
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।