hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১১৫
সন্তানের বিপদ
গর্ভস্থ সন্তানের ওপর নানারূপ বিপদ আসতে পারে। তার মধ্যে অনেকগুলো নৈসর্গিক, অনেকগুলো গর্ভবতী স্ত্রীলোকের স্বাস্থ্যগত কারণে। আবার পিতামাতার ইচ্ছাকৃত বিপদ আসাও অসম্ভব নয়। সে বিপদ কয়েক রকমের হতে পারে। পিতামাতা গর্ভপাতের ব্যবস্থা করতে পারে, পারে এমন অবস্থা করতে যার ফলে গর্ভের সন্তান অঙ্কুরিতই হতে পারবে না, গর্ভসঞ্চার হওয়াই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

সন্তান যাতে জন্মাতে না পারে তার জন্যে প্রাচীনকাল থেকে নানা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, নানা প্রকারের উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রাচীন কালের লোকেরা এ উদ্দেশ্যেই আজল করত। আজল মানেঃ

(আরবী)

পুরুষাঙ্গ স্ত্রী অঙ্গের ভেতর থেকে বের করে নেয়া, যেন শুক্র স্ত্রী-অঙ্গের ভেতর স্খলিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে স্খলিত হয়।

জাহিলিয়াতের যুগে লোকেরা এ কাজ করত গর্ভ সৃষ্টি না হয় –এ উদ্দেশ্যে। যদিও তার ফলে গর্ভসঞ্চারিত হবে না –তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। জাহিলিয়াতের যুগে সন্তানের আধিক্য কিংবা আদৌ সন্তান হওয়া থেকে বাঁচার জন্যে লোকেরা সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে অথবা কিছুটা বড় হলে তাকে হত্যা করত। কেবল কন্যা সন্তানই নয়, পুত্র সন্তানকেও এ উদ্দেশ্যে হত্যা করা হতো।

বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যুগে এ উদ্দেশ্যে বহু উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। যৌন অঙ্গে হালকা-পাতলা রবারের টুপি পরাবার রেওয়াজ চলছে। যৌন মিলনের পর নানা কসরত করে গর্ভ সঞ্চারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, নানা ঔষধ ব্যবহার করে সন্তানকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার ব্যবস্থাও আজ করা হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়, গর্ভ নিরোধের প্রাচীন ও আধুনিক যত ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে ও হচ্ছে সবই গর্ভস্থ সন্তানের পক্ষে –তথা মানব বংশের পক্ষে কঠিন বিপদ বিশেষ।

গর্ভনিরোধ, গর্ভপাত, ভ্রূণ হত্যা কিংবা সদ্যপ্রসূত সন্তান হত্যা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চিকিৎসা বিজ্হানের দৃষ্টিতে এর প্রয়োজন হলে অন্য কথা এবং তা নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো দিক দিয়েই এ কাজকে সমর্থন করা হয়নি। নৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক –সর্বোপরি মানবিক সকল দিক দিয়েই এ কাজ শুধু অবাঞ্ছিতই নয়, অত্যন্ত মারাত্মক। যে পিতামাতা নিজেরাই নিজেদের সন্তানের জানের দুশমন হয়ে দাঁড়ায়, তারা যে গোটা মানব জাতির দুশমন এবং কার্যত সে দুশমনি করতে একটুও দ্বিধা করছে না। কেননা নিজ ঔরসজাত, নিজ গর্ভস্থ বা গর্ভজাত সন্তানকে নিজেদের হাতেই হত্যা করার জন্যে প্রথমত নিজেদের মধ্যে অমানুষিক নির্মমতা, কঠোরতা ও নিতান্ত পশুবৃত্তির উদ্ভব হওয়া আবশ্যক, অন্যথায় এ রকম কাজ কারো দ্বারা সম্ভব হতে পারে না, তা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। ব্যক্তির এ নির্মমতা ও কঠোরতাই সংক্রমিত হয়ে গোটা জাতিকে গ্রাস করে, গোটা জাতির প্রতিই তা শেষ পর্যন্ত আরোপিত হয়। বস্তুত নিজেদের সন্তান নিজেরাই ধ্বংস করে –এর দৃষ্টান্ত প্রাণী জগতে কোথাও পাওয়া যায় না।

প্রাচীনকালে আরব সমাজে ‘আজল’ করার যে প্রচলন ছিল, ইসলাম তা সমর্থন করেনি। এ সম্পর্কে হাদীসে বিস্তারিত তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। এখানে তার সম্যক আলোচনা পেশ করা যাচ্ছে।

হযরত জাবির (রা) বলেনঃ

(আরবী)

আমরা রাসূলের জীবদ্দশায় ‘আজল’ করতাম অথচ তখন কুরআন নাযিল হচ্ছিল।

অর্থাৎ কুরআন মজীদে আজল সম্পর্কে কোনো নিষেধবাণী আসেনি। আর রাসূলে করীমও তা নিষেধ করেন নি।

হযরত আবূ সাঈদ বলেনঃ

(আরবী)

আমরা রাসূলে করীম (ﷺ)-এর সঙ্গে বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে বের হয়ে গেলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক আরবকে বন্দী করে নিলাম, তখন আমাদের মদ্যে স্ত্রীলোকদের প্রতি আকর্ষণ জাগে, যৌন ক্ষুধাও তীব্র হয়ে ওঠে এবং এ অবস্থায় ‘আজল’ করাকেই আমরা ভালো মনে করলাম। তখন এ সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেনঃ তোমরা যদি তা করো তাতে তোমাদরে ক্ষতি কি? কেননা আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করবেন তা তিনি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং তা অবশ্যই সৃষ্টি করবেন।

নবী করীম (ﷺ) ‘আজল’ সম্পর্কে বলেছেনঃ

(আরবী)

তুমি কি সৃষ্টি করো? তুমি কি রিযিক দাও? তাকে তার আসল স্থানেই রাখো; আসল স্থানে সঠিকভাবে তাকে থাকতে দাও। কেননা এ ব্যাপারে আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালা রয়েছে।

উপরে বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবূ সাঈদ বর্ণিত হাদীসে যেখানে (আরবী) “তোমাদের কি ক্ষতি হয়” বলা হয়েছে, সেস্থলে বুখারী এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে উদ্ধৃত ভাষ্য হচ্ছে (আরবী) না, তোমাদের এ কাজ না করাই কর্তব্য।

ইবনে সিরীন-এর মতে এ বাক্যে ‘আজল’ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ না থাকলেও এ যে নিষেধেরই একেবারে কাছাকাছি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আর হাসানুল বাসরী বলেছেনঃ

(আরবী)

আল্লাহর শপথ, রাসূলের এ কথায় আজল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভৎসনা ও হুমকি রয়েছে।

ইমাম কুরতুবী বলেছেনঃ সাহাবিগণ রাসূলে করীম (ﷺ)-এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন। ফলে এ অর্থ দাঁড়ায় –রাসূলে করীম (ﷺ) যেন বলেছেনঃ

(আরবী)

তোমরা আজল করো না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য।

বাক্যের শেষাংশে প্রথমাংশের তাগিদস্বরূপ বলা হয়েছে। হযরত জাবির বলেছেনঃ নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে একজন আনসারী এসে বললেনঃ

(আরবী)

আমার কাছে একটি ক্রীতদাসী রয়েছে এবং আমি তার থেকে আজল করি।

তখন নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ

(আরবী)

আল্লাহ যা করার ইচ্ছে করেছেন, তা বন্ধ করার সাধ্য আজলের নেই।

জুজামা বর্ণিত হাদীসে নবী করীম (ﷺ) ‘আজল’ সম্পর্কে বলেছেনঃ

(আরবী)

নিশ্চয়ই এ হচ্ছে গোপন নরহত্যা।

হযরত আবূ সাঈদ বর্ণিত এক হাদীসে এ কথাটিকে ইহুদীদের উক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইহুদীদের একথা শুনে নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

ইহুদীরা মিথ্যা বলেছে, আল্লাহ যদি কোনো কিছু সৃষ্টি করতেন চান, তবে তাতে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই।

হযরত আবূ সাঈদ থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসের শেষাংশে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত কথা উদ্ধৃত হয়েছেঃ

(আরবী)

কিয়ামত পর্যন্ত যত প্রাণীই জন্ম নেবার রয়েছে, তা অবশ্য অবশ্যই জন্ম নেবে।

ইমাম তাহাভী বলেছেনঃ জুজামার হাদীসে প্রথমকার অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। কেননা প্রথম দিক দিয়ে আহলি কিতাবদের অনুসরণে অনেক কাজ করা হতো, তার পরে প্রকৃত বিষয় সম্পর্কে ওহী নাযিল হলে পরে রাসূলে করীম (ﷺ) ইহুদীদের এ কথাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু ইবনে রুশদ ও ইবন আরাবী বলেছেনঃ নবী করীম (ﷺ) ইহুদীদের অনুসরণ করে কোনো জিনিস হারাম করবেন এবং পরে আবার তাদের মিথ্যাবাদী বলবেন, তা বিশ্বাস করা যায় না। জুজামার হাদীসকে অনেক মুহাদ্দিসই সহীহ ও গ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। আর তার বিপরীত অর্থের হাদীস সনদের দুর্বলতার কারণে দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন।

বিশেষত এ কারণেও জুজামার হাদীস গ্রহণ করা দরকার যে, জুজামা মক্কা জয়ের বছর ইসলাম কবুল করেছেন বিধায় তাঁর বর্ণিত হাদীস এ পর্যায়ে সর্বশেষ এবং অন্য হাদীসকে বাতিল করে দিয়েছে।

জুজামা বর্ণিত হাদীসকে ভিত্তি করে ইবরাহীম নখয়ী, সালেম ইবনে আবদুল্লাহ, আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ এবং তায়ূস প্রমুখ তাবেয়ী মত প্রকাশ করেছেন যে, আজল করা মাকরূহ। এর কারণস্বরূপ তাঁরা বলেছেনঃ

(আরবী)

যেহেতু আজল করাকে রাসূলে করীম (ﷺ) হত্যা-অপরাধের সমতুল্য করে দিয়েছেন। তবে পার্থক্য এই যে, তা হচ্ছে গোপন হত্যা। কেননা যে লোক আজল করে, সে তা করেই সন্তান হওয়ার আপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এ কারণেই ‘আজল’-কে ‘ছোট হত্যা’ বলা হয়েছে। আর ‘বড় হত্যা’ হচ্ছে জীবন্ত অবস্তায় কবরে পুঁতে দেয়া।

আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম বলেছেনঃ

আজল করলে আর গর্ভ সঞ্চারে আশংকা থাকে না এবং এতে বংশ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইহুদীদের এ ধারণাকেই রাসূলে করীম (ﷺ) মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

আল্লাহই যদি সৃষ্টি করতে চান তাহলে আজলের ফলে গর্ভ সঞ্চার হওয়া বন্ধ হতে পারে না। আল্লাহই যদি সৃষ্টি করার ইচ্ছা না করে থাকেন তাহলে ‘আজল’ করলে তাতে গোপন হত্যা হবে না।

‘আজল’ করলে গর্ভ সঞ্চারের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং গর্ভ সঞ্চার না হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত হওয়া যায় –একথা যে একেবারেই ঠিক নয়, তা রাসূলে করীম (ﷺ)-এর অপর একটি বাণী থেকেও অকাট্য প্রমাণিত হয়। এক ব্যক্তি ‘আজল’ করা সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি বললেনঃ

(আরবী)

যে শুক্রে সন্তান হবে তা যদি তুমি প্রস্তরের ওপরও নিক্ষেপ করো, তা হলে আল্লাহ তা’আলা তা দিয়েও সন্তান পয়দা করবেন।

আর জুজামার হাদীসে ‘আজল’কে গোপন হত্যা বলে অভিহিত করার কারণ এই যে, গর্ভ সঞ্চার হওয়ার ভয়ে লোকেরা ‘আজল’ করে। ফলে যা উদ্দেশ্য –সন্তান হওয়া –তাকে সন্তান হত্যার পর্যায়ের কাজ বলে ধরে নেয়া হয়েছে, যদিও এ দুটোর মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। প্রকাশ্য হত্যার উদ্দেশ্য এবং কাজ এক ও অভিন্ন আর ‘আজল’ ও হত্যায় কেবল উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে ঐক্য রয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন