hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবার ও পারিবারিক জীবন

লেখকঃ মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র.)

১৪১
‘হিলা বিয়ে’ জায়েয নয়
পূর্বোক্ত আলোচনায় একথা বলা হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে কিংবা সুন্নতী নিয়মে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে রাখার কোনো উপায় থাকে না। সে তার জন্যে হারাম হয়ে যায়, হারাম হয়ে যায় –বলতে হবে –চিরতরে, তবে শরীয়াত একটি মাত্র উপায়ই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তা হলোঃ

(আরবী)

‘সে স্ত্রীলোকটি অপর স্বামী বিয়ে করবে’। তারপর সে দ্বিতীয় স্বামী যদি তালাক দেয় তারপরে যদি তারা পুনর্মিলিত হতে চায় এবং আল্লাহর বিধান কায়েম রাখতে পারবে বলে যদি মনে করে, তাহলে তাদের দু’জনের পুনরায় বিবাহিত হতে কোনো দোষ নেই।

আল্লামা আ-লুসী আয়াতটুকুর তাফসীর করেছেন এ ভাষায়ঃ

(আরবী)

অর্থাৎ সে স্ত্রীলোকটিকে অপর এক স্বামীর সাথে বিবাহিত হতে হবে এবং তার সাথে সহবাস করবে। এ দৃষ্টিতে শুধু বিয়ের আকদ হওয়াই এ আয়াতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট হবে না।

তিনি আরও লিখেছেনঃ এ আয়াত থেকে একসঙ্গে দুটো কথা জানা গেল। একটি এই যে, অপর এক পুরুষের সাথে বিয়ের ‘আকদ হতে হবে –তা বোঝা গেল (আরবী) শব্দ থেকে। আর দ্বিতীয় এই যে, সে পুরুষের তাথে তার যৌন সঙ্গম অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ কথা জানা গেল (আরবী) শব্দ থেকে।

আর (আরবী) শব্দ থেকে যদি শুধু (আরবী) ‘বিয়ের আকদ’ই অর্থ গ্রহণ করা হয় তাহলে বলতে হবে যে, কুরআনের আয়াত থেকে যদিও শুদু বিয়ের আকদই বোঝায়, কিন্তু এর পরে হাদীস থেকেও বোঝায় যে, শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয়, স্বামী-স্ত্রীর মধুমিলনও অপরিহার্য। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাফায়া নামক এক ব্যক্তির প্রাক্তন স্ত্রী এসে রাসূলে করীমের খেদমতে আরয করলঃ আমি বর্তমানে আবদুর রহমান ইবনে জুবাইর-এর স্ত্রী; কিন্তু তার পুরুষত্ব নেই। এজন্যে আমি আমার প্রথম স্বামীর সাথে আবার বিবাহিতা হতে চাই। তখন নভী করীম (ﷺ) বললেনঃ 

(আরবী)

না, তা পারবে না যতক্ষণ তুমি তোমার বর্তমান স্বামীর মধু পনা করবে এবং সে পান করবে তোমার মধু।

ইকরামা তবেয়ী বলেছেনঃ এ আয়াতটি আয়েশা নাম্নী এক মেয়েলোক সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। তাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তার বর্তমান স্বামীর সাথে যদি তার যৌন সঙ্গম সম্পাদিত হয়ে থাকে এবং অতঃপর সে যদি তাকে তালাক দেয় তাহলে সে প্রাক্তন স্বামীর সাথে নতুন করে বিবাহিতা হতে পারবে। এ হাদীসের বর্ণনা উল্লেখ করে আল্লামা আ-লূসী লিখেছেনঃ

(আরবী)

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, দ্বিতীয় বিবাহকারী ব্যক্তিকে অবশ্য যথাযথভাবে স্বামী হতে হবে।

অর্থাৎ শুধু বিয়ের আকদ হলেই চলবে না, যৌন সঙ্গমও হতে হবে। আর শুধু আকদ ও যৌন সঙ্গম হলেই চলবে না, দ্বিতীয় বিবাহকারীকে পুরাপুরিভাবে স্বামী হতে হবে। তার মানে, তার সাথে এ স্ত্রীলোকটির স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করতে হবে। অস্থায়ী বা এক রাত্রির স্বামী-স্ত্রী নয়, সাধারণ ও স্বাভাবিক নিয়মে যেরূপ স্বামী-স্ত্রীরূপে বসবাস করা হয়, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে তেমনি হতে হবে। তার পরে যদি সে তালাক দেয়, তবেই তার পক্ষে প্রথম স্বামীর নিকট যাওয়ার ও বিবাহিতা হওয়ার সুযোগ হবে।

কিন্তু বর্তমান কালে যেমন সাধারণ রীতি হিসেবে দেখা যায়, কেউ তার স্ত্রীকে রাগের বশবর্তী হয়ে একসঙ্গেই তিন তালাক দিয়ে দিলো, পরে অনুতাপ জাগল, ঘর-সংসারের বিধ্বস্ত রূপ দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল, তখন কোনো বন্ধু-বান্ধব, খালাত ভাই, মামাত ভাইকে ডেকে আকদ করিয়ে এক রাত একত্রে থাকতে দিলো। পরের দিন সকাল বেলায় তার কাছে থেকে তালাক নিয়ে পরে সে নিজেই আবার তাকে বিয়ে করল। এ রীতি কুরআনের পূর্বোক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত নয়, প্রমাণিত নয় কোনো হাদীস থেকে। এ হচ্ছে সম্পূর্ণ মনগড়া, নিজেদের প্রয়োজনে আবিস্কৃত ও উদ্ভাবিত এক জঘন্য পন্থা। পরিভাষায় এরূপ বিয়েকে বলা হয় ‘হিলার বিয়ে’ বা (আরবী)। এ বিয়ের উদ্দেশ্য শুধু অপর একজনের জন্যে স্ত্রী লোকটিকে হালাল করে দেয়ার বাহানা করা। তার মানে এই যে, দ্বিতীয়বারে যে লোক বিয়ে করে তার মনে এ ভাব জাগ্রত থাকে যে, সে এ স্ত্রী-লোকটিকে দাম্পত্য জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করছে না। সে শুধু এক রাতের স্বামী। রাত শেষ হওয়ার পরই সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, যেন অপর একজন তাকে স্থায়ীভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার জন্যে বিয়ে করতে পারে। ঠিক স্ত্রীলোকটির মনেও এ অবস্থা –এ কথাই জাগ্রত থাকে। আর প্রথম স্বামী –যার জন্যে এত কিচু করা হচ্ছে –সেও জানে যে ও মেয়ে-লোকটি আসলে তারই স্ত্রী, মাত্র এক রাতের জন্যে তাকে অপর এক পুরুসের স্ত্রী হিসেবে তার অঙ্কশায়িনী হবার জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। …..বস্তুত এ চিন্তা ও এরূপ কথা যে কত লজ্জাকর, কত জঘন্য, বীভৎস, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এরূপ কাজ কুরআন হাদীস সমর্থিত হতে পারে না, হতে পারে না ইসলামের উপস্থাপিত বিধান। অথচ তাই আজ নিত্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে সমাজের যত্রতত্র, শরীয়তসম্মত (?) বিধান রূপে।

হাদীসের পরিভাষায় এরূপ বিয়ে যে করে, তাকে বলা হয় (আরবী) –যে অপরের জন্যে হালাল করে দেয়ার জন্যে বিয়ে করে হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ

(আরবী)

যে লোক এভাবে হালালকারী হয় এবং যার জন্যে সে হালালকারী হয় –এ উভয়ের ওপরই নবী করীম (ﷺ) লা’নত করেছেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেনঃ

(আরবী)

নবী করীম (ﷺ)-কে হালালকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ না, এরূপ বিয়ে করা যাবে না। বিয়ে হবে শুধু তা-ই, যা অনুষ্ঠিত হবে পারস্পরিক আগ্রহে, যাতে কোনোরূপ ধোঁকাবাজি থাকবে না, যা করলে আল্লাহর কিতাবের সাথে করা হবে না কোনোরূপ ঠাট্ট-বিদ্রূপপূর্ণ আচরণ। আর তার পরে পরস্পরের মধু মিলন হতে হবে।

ইবনে শায়বা ও আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

(আরবী)

আমার কাছে এরূপ হালালকারী ও যার জন্যে হালাল করা হয় তাকে পেশ করা হলেই আমি তাদের দুজনকেই ‘রজম’ বা সঙ্গেসার করব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে দুজনকে শাস্তি দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ (আরবী) ‘কেননা এরা দুজনই জ্বেনাকার’ অর্থাৎ যে হালাল করে সেও জ্বেনা করে; আর যে এরূপ তাকে বিয়ে করে, সেও সাথে জ্বেনাই করে। এজন্যে যে, এ উপায়ের জন্যে মেয়েলোকটি হালাল হয়ে যায়নি।

আর এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ

(আরভী)

আমি একটি মেয়েলোককে বিয়ে করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, আমি তাকে তার স্বামীর জন্যে হালাল করে দেব, সে আমাকে কিছুই আদেশ করেনি এবং কিছুই জানা যায়নি। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

আর এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ

(আরবী)

আমি একটি মেয়েলোককে বিয়ে করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, আমি তাকে তার স্বামীর জন্যে হালাল করে দেব, সে আমাকে কিছুই আদেশ করেনি এবং কিছুই জানা যায় নি। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

তখন জবাবে হযরত ইবনে উমর (রা) বললেনঃ

(আরবী)

না, এরূপ বিয়ে জায়েয নয়। বিয়ে শুধু তাই হবে, যা হবে ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে। তোমার পছন্দ হলে তাকে রেখে দেবে আর পছন্দ না হলে তাকে আলাদা করে দেবে –যদিও এরূপ বিয়েকে আমরা রাসূলে করীম (ﷺ)-এর যমানায় সুস্পষ্ট জ্বেনার মধ্যেই গণ্য করতাম।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ

(আরবী)

তোমাদেরকে ধার করা খাসির বিষয়ে বলব? সাহাবাগণ বললেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ। তখন তিনি বললেনঃ সে হলো হালালকারী। আর হালালকারী ও যার জন্যে হালাল করা হয় –এ দুজনের ওপরই আল্লাহ তা’আলা অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, এক ব্যক্তি স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। অতঃপর সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছে। তার সম্পর্কে আপনি কি বলেন? জবাবে তিনি বললেনঃ

(আরবী)

সেই ব্যক্তি তো আল্লাহর নাফরমানী করেছে, এজন্যে তিনি তাকে লজ্জিত করেছেন। সে শয়তানের আনুগত্য করেছে, ফলে তার জন্যে মুক্তির কোনো পথ রাখা হয়নি।

ইমাম মালিম, আহমদ, সওরী এবং আরো অনেক ফিকহবিদের মতে ‘হালাল’ করার শর্তে কোনো বিয়ে শুদ্ধ হবে না। পূর্বোদ্ধৃত দলীলসমূহের ভিত্তিতেই তাঁরা এ মত কায়েম করেছেন। তবে হানাফী মাযহাবের লোকদের মতে এরূপ বিয়ে মাকরূহ। কিন্তু প্রথমোক্তদের মত যে এ ব্যাপারে খুবই শক্তিশালী এবং অকাট্য দলীলভিত্তিক তাতে সন্দেহ নেই। যে ‘তাহলীল’ বিয়ে এবং ‘হালালকারী’ সম্পর্কে রাসূলে করীম (ﷺ) লা’নত ঘোষণা করেছেন, তাকে শুদু মাকরূহ বলে ছেড়ে দেয়া কিছুতেই সমীচীন হতে পারে না। বস্তুত এ ‘তাহলীল’ বিয়ের সুযোগ নিয়ে সমাজে যে অশ্লীলতার বন্যা প্রবাহিত হয়েছে, তাতে গোটা সমাজটাই পংকিল হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এতে করে তিন তালাকের পর স্ত্রীর হারাম হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিন তালাকের পর এত সহজ স্ত্রী লাভের সুযোগ থাকলে কেউ তিন তালাক দিতে একবিন্দু পরোয়া করবে না। তাই তো দেখা যায়, সমাজের লোকেরা তালাক দিতে গেলেই একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে ফেলে। এর পরে যে স্ত্রীকে চিরদিনের তরে হারাতে হবে এমন কোনো আশংকা বোধও তাদের মনে জাগে না। অথচ শরীয়তের এরূপ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই ছিল এই যে, লোকেরা যেন তিন তালাক না দেয়। যদি দেয়ই, তাহলে যেন বুঝে-শুনেই দেয় এবং দিয়ে যেন তাকে আবার ফিরিয়ে পাওয়ার কোনো আশা না করে। কুরআন এবং হাদীস থেকে একথা স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে। অতএব এর ব্যতিক্রম না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন