hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

১৬
হযরত দানিয়াল (আ)-এর বিবরণ
ইবন আবিদ দুনয়া ........ আবদুল্লাহ ইবন হুজায়ল থেকে বর্ণনা করেন যে, বুখত নসর দু’টি সিংহ ধরে একটি কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে এবং নবী দানিয়ালকে এনে ঐ দু’টি সিংহের মধ্যে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সিংহ দু’টি তার উপর কোনরূপ আক্রমণ করেনি। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই অবস্থান করার পর মানুষের জৈবিক চাহিদা অনুযায়ী তার খাদ্য পানীয়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে নবী আরমিয়াকে দানিয়ালের জন্যে খাদ্য পানীয় প্রস্তুত করতে বলেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি থাকি বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকায়, আর দানিয়াল আছেন সুদূঢ় ইরাকের বাবিল শহরে। সেখানে আমি কিভাবে খাদ্য পানীয় পৌঁছাব?’ আল্লাহ বললেন, ‘হে আরমিয়া, আমি তোমাকে যা আদেশ করেছি, তুমি তা-ই কর; প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীসহ তোমাকে সেখানে পৌঁছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা শীঘ্রই আমি করছি।’ আরমিয়া (আ) খাদ্য তৈরি করলেন। তারপর এমন একজনকে প্রেরণ করা হলো, যিনি খাদ্য পানীয়সহ আরমিয়াকে উক্ত কূপের পাড়ে পৌঁছিয়ে দিলেন। দানিয়াল ভিতর থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কে?’ আরমিয়া (আ) নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন- ‘আমি আরমিয়া।’ দানিয়াল (আ) বললেন, ‘কেন আপনি এখানে এসেছেন?’ আরমিয়া (আ) জানালেন, ‘আপনার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন।’ দানিয়াল (আ) বললেন, ‘তা হলে আমার প্রভু আমাকে স্মরণ করেছেন?’ আরমিয়া বললেন, ‘জ্বী হ্যাঁ।’ তখন বলে উঠলেনঃ ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যাকে কেউ স্মরণ করলে তিনি তাকে ভুলেন না; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, আহ্বান করলে তিনি সে আহ্বানে সাড়া দেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যার প্রতি কেউ নির্ভরশীল হলে তিনি তাকে অন্যের দিকে ঠেলে দেন না; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি উত্তম কাজের উত্তম বিনিময় দান করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি ধৈর্যের বিনিময়ে মুক্তি দান করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন? সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের বিশ্বাস ও কর্মদ্যোম শিথিল হয়ে পড়লে দৃঢ়তা দান করেন; সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের সকল উপায় শেষ হবার পর একমাত্র ভরসা স্থল।’

ইউনুস ইবন বুকায়র ....... আবুল আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন তুস্তর শহর জয় করি, তখন হরমুনের বাড়িতে একটি খাটের উপর একটি মৃত দেহ দেখতে পাই। তার লাশের শিয়রের কাছে একটি আসমানী কিতাব। আমরা তা নিয়ে আসি এবং হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবকে দেখাই। তিনি হযরত কা’বকে ডেকে তার দ্বারা তা’ আরবীতে অনুবাদ করান। আবুল আলিয়া বলেন, ‘আরবদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ঐ কিতাবখানার অনূদিত কপি পাঠ করি, যেভাবে আমি কুরআন পাঠ করে থাকি।’ খুলদ ইবন দীনার বলেন, ‘আমি আবুল আলিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, তাতে কী লেখা ছিল? তিনি বললেন, তাতে লিখিত ছিল তোমাদের কর্মকাণ্ড, ঘটনাবলী, কথাবার্তা ও পরবর্তীকালে ঘটতব্য সার্বিক অবস্থা।’ আমি বললাম, ‘আপনারা সে লোকটিকে কী করলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা দিনের বেলা তেরটি কবর খুঁড়লাম এবং রাত্রিকালে একটি কবরে তাকে দাফন করে সবক’টি কবর একই রূপ করে দিলাম। এ ব্যবস্থা করলাম যাতে সাধারণ লোক তার কবরের সন্ধান না পায় এবং কবর খুঁড়ে না ফেলে।’

বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, ‘মানুষ তার কাছে কী প্রত্যাশা করে?’ আবুল আলিয়া বললেন, ‘বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে লোকজন এ খাট নিয়ে ময়দানে এসে বৃষ্টি কামনা করতো এবং এর ফলে বৃষ্টিপাত হত।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ মৃত লোকটিকে জানেন কি?’ আবুল আলিয়া বললেন, ‘তার নাম দানিয়াল বলে শোনা যায়।’ রাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তিনি কত বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন?’ আবুল আলিয়া বললেন, ‘তিনশ’ বছর পূর্বে।’ রাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে তার মৃতদেহের কোন পরিবর্তন হয়েছিল কি?’ আবুল আলিয়া বললেন, ‘না, তবে মাথার পিছনের দিকের কয়েকটি চুলের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।’ নবীদের দেহ মাটিতেও পঁচে না এবং জীবজন্তুও খায় না। এ ঘটনাটি আবুল আলিয়া থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। তবে তার মৃত্যু তারিখ যদি তিনশ’ বছর পূর্বে হওয়া সঠিক হয় তা হলে তিনি নবী নন, বরং কোন পুণ্যবান ব্যক্তি হবেন। কেননা, সহীহ বুখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা) ও ঈসা ইব্‌ন মারয়ামের মধ্যে অন্য কোন নবীর আগমন ঘটেনি। আর এ দুই নবীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান চারশ’ বছর। কারও মতে ছয়শ’ বছর, কারও মতে ছয়শ’ বিশ বছর। কোন কোন লেখক ঐ ব্যক্তির মৃত্যু আটশ’ বছর পূর্বে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।

ঐতিহাসিক মতে দানিয়ালের মৃত্যুও প্রায় এই সময়ে হয়েছিল। এ হিসাব অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি দানিয়ালও হতে পারেন, বা অন্য কোন নবীও হতে পারেন, কিংবা কোন নেককার লোকও হতে পারেন। তবে দানিয়াল হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। কেননা দানিয়াল নবীকেই পারস্য সম্রাট ধরে নিয়ে বন্দী করে রেখেছিল। আবুল আলিয়া থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তিটির নাক এক বিঘত লম্বা ছিল। আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তার নাক এক হাত লম্বা ছিল। এ দিকে লক্ষ্য করলে বলা যেতে পারে যে, এ লাশ বহু পূর্বের, দূর অতীতের কোন নবীর লাশ।

আবু বকর ইবন আৰিদ্দুনয়া ....... তাঁর রচিত ‘কিতাবু আহকামিল কুনূর’ গ্রন্থে আবুল আশ’আছের বরাতে লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ নবী দানিয়াল আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন যে, তার দাফনকার্য যেন উম্মতে মুহাম্মাদীর হাতে সুসম্পন্ন হয়। পরবর্তীকালে আবু মূসা আশআরীর হাতে তুস্তর নগরী বিজিত হলে তাঁর লাশ একটি সিন্দুকের মধ্যে দেখতে পান। এ সময় তার দেহের শিরা ও কাঁধের মোটা রগ দু’টি নড়াচড়া করছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করিয়ে দেবে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে।” হারকুস নামক এক ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করেছিলেন। আবু মূসা (রা) হযরত উমর (রা)-কে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তখন হযরত উমর (রা) পত্র মারফত তাঁকে জানান যে, দানিয়ালকে ওখানে দাফন কর এবং হারকূসকে আমার নিকট পাঠিয়ে দাও- কেননা, নবী করীম (সা) তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন। বর্ণিত সূত্রে হাদীছটি মুরসাল এবং এর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

ইবন আবিদ দুনিয়া ..... আম্বাসা ইবন সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু মূসা মৃত দানিয়ালের সাথে একখানা আসমানী কিতাব, চর্বি ভর্তি একটি কলস, কিছু সংখ্যক দিরহাম ও তার ব্যবহৃত আংটি পান। এরপর হযরত উমর (রা)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করে আবু মুসা (রা) পত্র লিখেন। হযরত উমর (রা) চিঠির মাধ্যমে আবূ মূসাকে জানান, আসমানী কিতাবখানা আমাদের নিকট পাঠিয়ে দাও, চর্বির কিছু অংশ আমাদের জন্য পাঠাও এবং অবশিষ্ট অংশ থেকে আরোগ্য লাভের জন্যে মুসলমানদেরকে তোমার পক্ষ থেকে ব্যবহার করতে দাও, আর দিরহামগুলো তাদের মাঝে বণ্টন কর এবং আংটিটি তুমি ব্যবহার কর! ভিন্ন সূত্রে ইবন আবিদ দুনিয়া থেকে বর্ণিত, আবু মূসা (রা) যখন দানিয়ালের লাশ পেলেন, তখন তিনি তা জড়িয়ে ধরেন, ও চুম্বন করেন। অতঃপর তিনি হযরত উমর (রা)-কে এ বিষয়ে অবহিত কবেন এবং জানান যে, তার লাশের সাথে প্রায় দশ হাজার দিরহাম মূল্যের ধন-সম্পদ পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন লোক তাথেকে ধার নেয় এবং পরে ফেরত দিয়ে যায়। কেউ ফেরত না দিলে রোগে আক্রান্ত হয়। তার পাশে আতর ভর্তি একটি কৌটাও রয়েছে। হযরত উমর (রা) আবু মুসাকে জানান যে, তাকে বরই পাতা মিশানো পানি দ্বারা গোসল করিয়ে, কাফন পরিয়ে দাফন কর এবং তাঁর কবরটি এমনভাবে গোপন রাখ যেন কেউ তার সন্ধান না পায়। মালামাল সম্পর্কে জানান যে, সেগুলো বায়তুলমালে জমা কর, আতরের কৌটা পাঠিয়ে দাও এবং আংটিটি তুমি নিজে ব্যবহার কর।

আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁর নির্দেশক্রমে চারজন বন্দী নদীর মধ্যে বাঁধ দিয়ে তার তলদেশে কবর খুঁড়ে সেখানে হযরত দানিয়ালের লাশ দাফন করে। পরে আবু মূসা (রা) ঐ চার বন্দীকে ডেকে এনে হত্যা করে দেন।[সম্ভবত এরা ছিল মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদী] ফলে আবু মূসা আশআরী (রা) ব্যতীত উক্ত কবরের সন্ধান জানার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকল না। ইবন আবিদ দুনিয়া ........ আবুয-যিনাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবু মূসা আশআরীর পুত্র আবু বুরদার হাতে একটি আংটি দেখেছি, যাতে দুটি সিংহ এবং সিংহদ্বয়ের মাঝে জনৈক ব্যক্তির চিত্র অংকিত রয়েছে; আর সিংহ দু’টি ঐ লোকটিকে জিহ্বা দ্বারা চাটছে! আবু বুরদা বললেন, এটি ঐ লোকটির আংটি-যাকে এই শহরের লোকে দানিয়াল নামে জানে! তাকে দাফন করার সময় আবু মূসা (রা) তা নিজের কাছে তুলে রাখেন।

আবু বুরদা বলেন, আবু মূসা আশআরী (রা) উক্ত জনপদের লোকজনের নিকট আংটিতে অংকিত এ চিত্রের কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, দানিয়ালের আবির্ভাবকালে দেশের যিনি শাসনকর্তা ছিলেন, তার নিকট জ্যোতিষী ও গণকদল এসে ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, অমুক রাত্রে আপনার রাজ্যে এমন একজন শিশুর জন্ম হবে, যে এ রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

রাজা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! ঐ রাত্রে যত শিশুর জন্ম হবে, আমি তাদের সকলকে হত্যা করব।’ বাস্তবে রাজা তাই করলেন। অবশ্য, শিশু দানিয়ালকে রাজার লোকজন সিংহ পালের মধ্যে নিক্ষেপ করে চলে যায়। কিন্তু সিংহ তার কোন ক্ষতি করল না; বরং দু’টি সিংহ শিশুটিকে জিহ্বা দ্বারা চেটে সুস্থ রাখে। অতঃপর শিশুটির মাতা এসে সন্তানকে এ অবস্থায় দেখে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এভাবে আল্লাহ দানিয়ালকে রক্ষা করেন এবং স্বীয় ইচ্ছা কার্যকরী করেন। আবু মূসা (রা) বলেন, ঐ জনপদের লোকজন জানায় যে, দানিয়ালের প্রতি আল্লাহর এ অনুগ্রহ স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্যে দানিয়াল তার আংটিতে নিজেকে সিংহদ্বয়ের চাটারত অবস্থা চিত্ৰাংকিত করে রাখেন। এ বর্ণনার সূত্রটি হাসান পর্যায়ের।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন