মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
—এবং তারা চক্রান্ত করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেছিলেন, আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ। স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, “হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি এবং যারা কুফরী করেছে তাদের মধ্য হতে তোমাকে পবিত্র করছি। আর তোমার অনুসারীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি। অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটছে আমি তা মীমাংসা করে দিব।" (আল-ইমরানঃ ৫৪-৫৫)
—এবং তারা লানতগ্রস্ত হয়েছিল তাদের অংগীকার ভংগের জন্যে, আল্লাহর আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্যে, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্যে এবং আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত তাদের এই উক্তির জন্যে। বরং তাদের কুফরীর কারণে তাতে মোহর মেরে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের অল্প সংখ্যাক লোকই বিশ্বাস করে। এবং তারা লা'নতগ্রস্ত হয়েছিল তাদের কুফরীর জন্যে ও মারয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদের জন্যে। আর আমরা আল্লাহর রাসূল মারয়াম-তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি তাদের এই উক্তির জন্যে। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি, কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা নিশ্চয়ই তার সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি, এবং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। (নিসাঃ ১৫৫-১৫৯)
উপরোক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা আল্লাহ মানুষকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি হযরত ঈসা (আ) কে নিদ্রাচ্ছন্ন করার পরে আসমানে তুলে নেন-এটা সন্দেহাতীতভাবে বিশুদ্ধ মত। ইয়াহুদীরা ঐ যুগের জনৈক কাফির বাদশাহর সাথে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে যে নির্যাতন করতে চেয়েছিল, আল্লাহ তা থেকে তাকে মুক্ত করেন।
হাসান বসরী ও মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ঐ বাদশাহর নাম ছিল দাউদ ইব্ন নুরা। সে ঈসা (আ)-কে হত্যা ও ক্রুশবিদ্ধ করার হুকুম দেয়। হুকুম পেয়ে ইয়াহুদীরা শুক্রবার দিবাগত শনিবার রাত্রে বায়তুল মুকাদ্দাসের একটি কক্ষে ঈসা (আ)-কে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে যখন হত্যার উদ্দেশ্যে তারা কক্ষে প্রবেশ করে তখন আল্লাহ তাআলা কক্ষে বিদ্যমান ঈসা (আ)-এর অনুসারীদের মধ্য হতে একজনের চেহারাকে তার চেহারার সদৃশ করে দেন এবং ঈসা (আ)-কে বাতায়ন-পথে আকাশে তুলে নেন। কক্ষে যারা ছিল তারা ঈসা (আ)-কে তুলে নেয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করছিল। ইতিমধ্যে বাদশাহর রক্ষীরা কক্ষে প্রবেশ করে ঈসা (আ)-এর চেহারা বিশিষ্ট ঐ যুবককে দেখতে পায়। তারা তাকেই ঈসা (আ) মনে করে ধরে এনে শূলে চড়ায় এবং মাথায় কাঁটার টুপি পরায়। তাঁকে অধিক লাঞ্ছিত করার জন্যে তারা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাধারণ নাসারা, যারা ঈসা (আ)-এর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি, তারা ইয়াহুদীদের ঈসা (আ)-কে ক্রুশ বিদ্ধ করার দাবি মেনে নেয়। ফলে, তারাও সত্য থেকে স্পস্ট ও চূড়ান্ত বিভ্রান্তির অতল তলে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই জন্যে আল্লাহ বলেন, “কিতাবীদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি বিশ্বাস করবে।” অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে শেষ যুগে ঈসা (আ) যখন পৃথিবীতে পুনরায় আসবেন তখন তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্বে তখনকার সকল কিতাবীরাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনবে। কেননা তিনি পুনর্বার পৃথিবীতে আসবেন এবং শূকর বধ করবেন, ক্রুশ ধ্বংস করবেন, জিযিয়া কর রহিত করবেন এবং ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন কবুল করবেন না। তাফসীর গ্রন্থে সূরা নিসায় এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এ প্রসংগে যাবতীয় হাদীস আমরা উল্লেখ করেছি এবং এই কিতাবে 'ফিতান ও মালাহিম’ (কিয়ামত পূর্ব বিপর্যয় ও মহাযুদ্ধ) অধ্যায়ে মাসীহুদ দাজ্জাল প্রসংগে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। দাজ্জালকে হত্যার জন্যে ইমাম মাহদীর অবতরণ প্রসংগে যত হাদীস ও রিওয়ায়ত আছে, সবই সেখানে বর্ণনা করা হবে। এখানে আমরা ঈসা (আ)-কে আসমানে উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
ইবন আবি হাতিম ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ যখন ঈসা (আ)-কে আসমানে তুলে নিতে ইচ্ছা করলেন তখন ঘটনা ছিল এই যে, বায়তুল মুকাদ্দাসের একটি কক্ষে ঈসা (আ)-এর বারজন হাওয়ারী অবস্থান করছিলেন। তিনি মসজিদের একটি ঝরনায় গোসল করে ঐ কক্ষে শিষ্যদের নিকট যান। তার মাথার চুল থেকে তখনও পানি ঝরে পড়ছিল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আছে, যে তার প্রতি ঈমান আনার পর বারো (১২) বার আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এরপরে তিনি তাদের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে রাজী আছে যাকে আমার গঠনাকৃতি দ্বারা পরিবর্তন করা হবে এবং আমার স্থলে তাকে হত্যা করা হবে, পরিণামে আমার সাথে সে মর্যাদা লাভ করবে?’ উপস্থিত শিষ্যদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এক যুবক দণ্ডায়মান হলেন। ঈসা (আ) তাঁকে বললেন, ‘বস।’ এরপর তিনি দ্বিতীয় বার একই আহ্বান জানান। এবারও ঐ যুবকটি দণ্ডায়মান হলেন। ঈসা (আ) তাঁকে বসতে বললেন। তৃতীয়বার তিনি আবারও একই আহ্বান রাখেন। ঐ যুবক দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এ জন্যে আমি প্রস্তুত।’ ঈসা (আ) বললেন, ‘তাই হবে, তুমিই এর অধিকারী।’ অতঃপর যুবকটির গঠনাকৃতিকে ঈসার গঠনাকৃতি দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া এবং মসজিদের একটি বাতায়ন পথে ঈসা (আ)-কে আসমানে তুলে নেয়া হয়। এরপর ইয়াহুদীদের একটি অনুসন্ধানকারী দল ঈসা (আ)-কে ধরার জন্যে এসে উক্ত যুবককে ঈসা (আ) মনে করে ধরে নিয়ে আসে ও তাকে হত্যা করে এবং ক্রুশবিদ্ধ করে। জনৈক শিষ্য ঈসা (আ)-এর প্রতি ঈমান আনার পর বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনী ইসরাঈল তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথাঃ-
১. আল-ইয়াকুবিয়্যাঃ এই দল বিশ্বাস করে যে, এতদিন আল্লাহ স্বয়ং আমাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলেন, এখন তিনি আসমানে উঠে গিয়েছেন।
২. আল-নাসতুরিয়্যাঃ এই দলের বিশ্বাস হল, আল্লাহর পুত্র আমাদের মধ্যে এতদিন ছিলেন, এখন তাকে আল্লাহ নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন।
৩. আল মুসলিমুনঃ এই দলের মতে ঈসা (আ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ছিল ততদিন তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন। এখন তাঁকে আল্লাহ নিজের সান্নিধ্যে উঠিয়ে নিয়েছেন।
উক্ত তিন দলের মধ্যে কাফির দুই দল একত্রিত হয়ে মুসলিম দলের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে; ফলে মুসলিম দল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলার পর আল্লাহ্ মুহাম্মাদ (সা)-কে রসুলরূপে প্রেরণ করেন। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, এই দিকে ইংগিত করেই কুরআনে বলা হয়েছে “পরে আমি মুমিনদেরকে শক্তিশালী করলাম তাদের শত্রুদের মুকাবিলায়; ফলে তারা বিজয়ী হল (৬ সাফঃ ১৪)
এ হাদীসের সনদ ইব্ন আব্বাস (রা) পর্যন্ত বিশুদ্ধ এবং মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। ইমাম নাসাঈ আবু কুরায়বের সূত্রে আবু মুআবিয়া থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবন জারীর মুসলিম ইব্ন জানাদার সূত্রে আবু মুআবিয়া থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া আরও অনেক গ্রন্থকার এ হাদীস স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটি সবচেয়ে দীর্ঘায়িতভাবে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবন ইসহাক। তার বর্ণনায় এসেছে, ঈসা (আ) আল্লাহর নিকট তাঁর মত্যুকে পিছিয়ে দেয়ার জন্যে দোয়া করতেন, যাতে তিনি রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেন। দাওয়াতী কাজ সম্প্রসারণ করতে পারেন এবং অধিক পরিমাণ লোক যাতে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে পারে। কথিত আছে, হযরত ঈসা (আ)-এর সান্নিধ্যে বারজন হাওয়ারী ছিলেন; (১) পিতর, (২) ইয়াকুব ইবন যাবদা (সিবদিয়), (৩) ইয়াহনাস (যুহান্না) ইনি ইয়াকুবের ভাই ছিলেন (৪) ইনদারাউস (আন্দ্রিয়), (৫) ফিলিপ, (৬) আবরো ছালমা (বর্তময়), (৭) মথি, (৮) টমাস (থমা), (৯) ইয়াকুব ইবন হালকুবা (আলকেয়), (১০) তাদাউস (থদ্দেয়), (১১) ফাতাতিয়া শিমন ও (১২) (ইয়াহুদা ইস্কারিযোৎ) ইউদাস কারয়া ইউতা [বন্ধনীযুক্ত নামগুলো বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির প্রকাশিত ইনজীল শরীফ থেকে গৃহীত] এই শেষোক্ত ব্যক্তি ইয়াহুদীদেরকে ঈসা (আ)-এর সন্ধান দিয়েছিল। ইবন ইসহাক লিখেছেন, হাওয়ারীদের মধ্যে সারজিস নামক আর এক ব্যক্তি ছিল যার কথা নাসারারা গোপন রাখে। এই ব্যক্তিকেই মাসীহর রূপ দেয়া হয়েছিল। এবং ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নাসারাদের কিছু অংশের মতে যাকে মাসীহর রূপ দেয়া হয় ও ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়, তার নাম জভাস ইবন কারয়া ইউতা।
যাইহাক.....ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ) শামউনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন এবং ইয়াহূদীরা জভাসকে হত্যা করেছিল -যাকে ঈসার অনুরূপ আকৃতি দেয়া হয়েছিল। আহমদ ইবন মারওয়ান বলেন, মুহাম্মদ ইবন জাহম ফাররা থেকে শুনেছেন কুরআনের আয়াত— “তারা চক্রান্ত করেছিল আর আল্লাহ্ও কৌশল অবলম্বল করেছিলেন এবং আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ।” এ সম্পর্কে ফাররা বলেছেন যে, ঈসা (আ) দীর্ঘ দিন তাঁর খালার নিকট থেকে দূরে থাকার পর একদিন খালার বাড়িতে আসেন। তার আগমন দেখে রাস আল জালূত নামক ইয়াহুদী সেখানে উপস্থিত হয় এবং ঈসা (আ)-এর বিরুদ্ধে লোকজনকে জমায়েত করে। ফলে বহু লোক জমায়েত হলো আর তারা দরজা ভেংগে ফেলে এবং রাস আল জালূত ঈসা (আ)-কে ধরে আনার জন্যে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। আল্লাহ ঈসা (আ)-কে তার দৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখেন। কিছু সময় পর সে বেরিয়ে এসে বলল, ঈসাকে ঘরের মধ্যে দেখতে পেলাম না। রাস আল জালুতের সাথে ছিল নাংগা তলোয়ার। এ দিকে আল্লাহ তাকেই ঈসার রূপে রূপান্তরিত করে দিয়েছিলেন। উপস্থিত সবাই বলল, তুমি-ই তো ঈসা। সুতরাং তারা তাকে ধরে হত্যা করল ও শূলে বিদ্ধ করল। এদিকে ইংগিত করেই আল্লাহ বলেছেন: “তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি; কিন্তু তাদের এইরূপ বিভ্রম হয়েছিল।” ইবন জারীর ... ওহব ইবন মুনাববিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আ) সতের জন হাওয়ারী সহ এক ঘরে প্রবেশ করেন। এ অবস্থা তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। যখন তারা দেখে ইয়াহুদীরা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে তখন আল্লাহ তাদের সকলের চেহারাকে ঈসা (আ)-এর চেহারার মত করে দেন। এ দেখে বনী ইসরাঈলরা বলল, তোমরা সবাই যাদু করে আমাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছ। হয় আসল ঈসাকে আমাদের নিকট বের করে দাও, নচেৎ তোমাদের সবাইকে হত্যা করব। তখন ঈসা (আ) সাথীদেরকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছ, যে নিজের প্রাণের বিনিময়ে আজ জান্নাত ক্রয় করবে।’ এক ব্যক্তি বললেন, ‘আমি রাজি আছি।’ এরপর সে ব্যক্তি বনী-ইসরাঈলদের সম্মুখে এসে বললেন, ‘আমিই ঈসা।’ বস্তৃত ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ ঈসা (আ)-এর আকৃতি দান করেছিলেন। তখন তারা তাকে ধরে হত্যা করল ও ক্রুশবিদ্ধ করল। এ জন্যই বনী-ইসরাঈলরা বিভ্রান্ত হয় ও ধারণা করে যে, তারা ঈসা (আ)-কেই হত্যা করেছে। অন্যান্য খ্রীষ্টানরাও এই একই ধারণা পোষণ করে এবং বলে ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ঐ দিনই আল্লাহ ঈসা (আ)-কে আসমানে তুলে নিয়েছিলেন।
.... ওহব থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ যখন ঈসা (আ)-কে জানিয়ে দেন যে, অচিরেই তুমি দুনিয়া থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছ তখন তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। এ সময় তিনি হাওয়ারীগণকে দাওয়াত করেন। তাঁদের জন্যে খাদ্য প্রস্তুত করেন। তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, রাত্রে তোমরা আমার নিকট আসবে, তোমাদের কাছে আমার প্রয়োজন আছে। হাওয়ারীগণ রাত্রে আসলে ঈসা (আ) তাদেরকে নিজ হাতে খানা পরিবেশন করে খাওয়ান। আহার শেষে নিজেই তাঁদের হাত ধুয়ে দেন ও নিজের কাপড় দ্বারা তাদের হাত মুছে দেন। এ সব দেখে হাওয়ারীগণ আশ্চর্যান্বিত হলেন এবং বিব্রত বোধ করলেন। ঈসা (আ) বললেন, ‘দেখ, আমি যা কিছু করব কেউ যদি তার প্রতিবাদ করে তবে সে আমার শিষ্যদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তার কেউ নই।’ তখন তারা তা মেনে নিলেন।
আর ঈসা (আ) বললেন, ‘আমি আজ রাত্রে তোমাদের সাথে যে আচরণ করলাম, তোমাদের সেবা করলাম, খাদ্য পরিবেশন করলাম, হাত ধুয়ে দিলাম, এ যেন তোমাদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকে। তোমরা জান যে, আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। সুতরাং তোমরা একে অপরের উপর নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করবে না। বরং নিজেকে অপরের চাইতে ছোট জ্ঞান করবে। তোমরা তো প্রত্যক্ষ করলে, কিভাবে আমি তোমাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলাম। তোমরাও ঠিক এই ভাবে করবে। আর তোমাদের কাছে আমার যে প্রয়োজন তা হল, তোমরা আমাকে সাহায্য করবে, আমার জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে এবং মনে প্রাণে দোয়া করবে যেন তিনি আমার মৃত্যুকে পিছিয়ে দেন।’ ঈসা (আ)-এর কথা শোনার পর হাওয়ারীগণ যখন দোয়া করার জন্যে প্রস্তুত হলেন এবং নিবিষ্ট চিত্তে দোয়া করতে বসলেন, তখন গভীর নিদ্রা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। ফলে তারা দোয়া করতে সমর্থ হলেন না। ঈসা (আ) তাদেরকে ঘুম থেকে জাগাবার চেষ্টা করেন এবং বলেন, ‘কী আশ্চর্য, তোমরা কি মাত্র একটা রাত আমার জন্যে ধৈর্যধারণ করতে ও আমাকে সাহায্য করতে পারবে না?’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না যে, আমাদের এ কী হল? আমরা তো প্রতি দিন রাত্রে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জেগে থাকি, কথাবার্তা বলি; কিন্তু আজ রাত্রে তার কিছুই করতে পারছি না। যখনই দোয়া করতে যাই তখনই ঘুম এসে মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’ তখন হযরত ঈসা (আ) বললেন, রাখাল মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছে আর বকরীগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ জাতীয় আরও বিভিন্ন কথা তিনি বলতে থাকেন এবং নিজের বিয়োগ ব্যথার কথা ব্যক্ত করেন।
অতঃপর ঈসা (আ) বললেনঃ- ‘আমি তোমাদেরকে একটি সত্য কথা বলছি- তোমাদের মধ্যে একজন আজ মোরগ ডাক দেয়ার পূর্বে আমার সাথে তিনবার বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তোমাদের মধ্যে একজন সামান্য কয়েকটি দিরহামের বিনিময়ে শত্রুদের কাছে আমার সন্ধান বলে দেবে এবং আমার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ ভক্ষণ করবে।’ এরপর তারা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল ও বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। এদিকে ইয়াহুদীরা ঈসা (আ)-কে সন্ধান করে ফিরছে। তারা শামউন নামক এক হাওয়ারীকে ধরে বলল, ‘এই ব্যক্তি ঈসার শিষ্য।’ কিন্তু সে অস্বীকার করে বলল, ‘আমি ঈসার শিষ্য নই।’ এ কথা বললে, তারা শামঊনকে ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে তাকে অন্য ইয়াহুদীরা পাকড়াও করলে সে পূর্বের ন্যায় উত্তর দিয়ে আত্মরক্ষা করল। এমন সময় ঈসা হঠাৎ মোরগের ডাক শুনতে পান। মোরগের ডাক শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং কাঁদতে থাকেন। প্রভাত হওয়ার পর জনৈক হাওয়ারী ইয়াহুদীদের নিকট গিয়ে বলল, ‘আমি যদি তোমাদেরকে ঈসা মাসীহর সন্ধান দিই, তা হলে তোমরা আমাকে কী পুরস্কার দিবে?’ ইয়াহুদীরা তাকে ত্রিশটি দিরহাম দিল। বিনিময়ে সে তাদের নিকট তাঁর সন্ধান বলে দিল। কিন্তু এর পূর্বেই তাকে ঈসার অনুরূপ চেহারা দান করা হয় এবং তাদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলা হয়। ফলে তাকেই তারা পাকড়াও করে রশি দ্বারা শক্ত করে বাঁধল এবং একথা বলতে বলতে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে গেল যে, ‘তুমিই তো মৃতকে জীবিত করতে, জীন-ভূত তাড়াতে, পাগল মানুষকে সুস্থ করে দিতে। এখন এই রশির বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত কর দেখি!’ তারা তার উপর থুথু নিক্ষেপ করল, দেহে কাঁটা ফুটাল এবং যেই ক্রুশে বিদ্ধ করার জন্যে স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে তাকে নিয়ে আসল।
ইতিমধ্যে ঈসা (আ)-কে আল্লাহ নিজ সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছেন এবং ইয়াহুদীরা ঐ চেহারা পরিবর্তিত ব্যক্তিকে ক্রুশবিদ্ধ করল। ক্রুশের উপরে লাশ সাত দিন পর্যন্ত ছিল। এরপর ঈসা (আ)-এর মা এবং অন্য এক মহিলা যে পাগল ছিল এবং যাকে ঈসা (আ) সুস্থ করেছিলেন উভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্রুশবিদ্ধ লোকটির কাছে আসলেন। তখন হযরত ঈসা (আ)-তাঁদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনারা কাঁদছেন কেন?’ তারা বললেন, ‘আমরা তো তোমার জন্যে কাঁদছি।’ ঈসা (আ) বললেন, ‘আমাকে আল্লাহ তাঁর সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছেন এবং উত্তম অবস্থায় রেখেছেন; আর এই যাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে তার ব্যাপারে ইয়াহুদীরা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে।’ অতঃপর তিনি হাওয়ারীদের প্রতি নির্দেশ দিলেন যেন, অমুক স্থানে তারা তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন। নির্দেশ মতে এগারজন হাওয়ারী তথায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন। সেই এক হাওয়ারী অনুপস্থিত থাকে, যে ঈসাকে দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করেছিল এবং ইয়াহুদীদেরকে তার সন্ধান বলে দিয়েছিল; তার সম্পর্কে ঈসা (আ) শিষ্যদের নিকট জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তারা জানাল যে, সে তার কর্মের উপর অনুতপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঈসা (আ) বললেন, ‘যদি সে তওবা করত তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করতেন।’ অতঃপর তিনি ইয়াহইয়া নামক সেই যুবকের কথা জিজ্ঞেস করলেন, যে তাদেরকে অনুসরণ করত। তিনি জানালেন, ‘সে তোমাদের সাথেই আছে।’ এরপর ঈসা (আ) বললেন, ‘তোমরা এখান থেকে চলে যাও; কেননা, অচিরেই তোমরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ভাষায় কথা বলবে। সুতরাং তাদেরকে সতর্ক করবে এবং দীনের দাওয়াত দেবে।’
এই হাদীসের সনদ গরীব ও অভিনব। তবে নাসারাদের বর্ণনা সমূহের মধ্যে এটা অনেকটা বিশুদ্ধ। তারা বলেছে, মসীহ্ মারয়ামের নিকট এসেছিলেন। মারয়াম খেজুর গাছের শাখার কাছে বসে কাঁদছিলেন। ঈসা (আ) তাকে দেহের ক্ষত-বিক্ষত স্থানগুলো দেখান এবং মারয়ামকে জানান যে, তাঁর রূহকে উপরে তুলে নেয়া হয়েছে এবং দেহকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে। নাসারাদের বর্ণিত এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া, অতিরঞ্জিত ও বাতিল। সত্যের পরিপন্থী ও অতিরিক্ত সংযোজন।
ইব্ন আসাকির ইয়াহইয়া ইবন হাবীবের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তিকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, মারয়াম ধারণা করেছিলেন যে, সে তাঁরই পুত্র। তাই তিনি ঘটনার সাত দিন পর বাদশাহর লোকদের নিকট গিয়ে লাশটি নামিয়ে দেয়ার আবেদন জানান। তারা তার আবেদনে সাড়া দেয় এবং সেখানেই লাশটি দাফন করা হয়। তারপর মারয়াম ইয়াহইয়ার মাকে বললেন, ‘চল, আমরা মাসীহর কবর যিয়ারত করে আসি।’ উভয়ে রওয়ানা হলেন। কবরের কাছাকাছি পৌঁছলে মারয়াম ইয়াহইয়ার মাকে বললেন, ‘পর্দা কর!’ ইয়াহইয়ার মা বললেন, ‘কার থেকে পর্দা করব?’ বললেনঃ ‘কেন কবরের কাছে ঐ যে লোকটিকে দেখা যায়, তার থেকে।’ ইয়াহইয়ার মা বললেন, ‘কী বলছ? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’ মারয়াম তখন ভাবলেন, ‘ইনি জিবরাঈল ফেরেশতা হবেন।’ বস্তুত জিবরাঈলকে তিনি বহু পূর্বে দেখেছিলেন।
যা হোক, ইয়াহইয়ার মাকে সেখানে রেখে মারয়াম কবরের কাছে গেলেন। কবরের নিকট গেলে তিনি তাকে চিনতে পান। আর জিবরাঈল বললেন, ‘মারয়াম! কোথায় যাচ্ছ?’ মারয়াম বললেন, ‘মাসীহর কবর যিয়ারত করতে এবং তাকে সালাম জানাতে।’ জিবরাঈল বললেন, ‘মারয়াম! এ তো মাসীহ্ নয়। তাকে তো আল্লাহ তাঁর সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছেন, কাফিরদের হাত থেকে তাকে পবিত্র করেছেন। তবে কবরবাসীকে মসীহর আকৃতি বদলে দেয়া হয়েছে এবং তাকেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে। এর নিদর্শন হচ্ছে এটা যে, ঐ লোকটির পরিবারের লোকজন একে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কোথাও তার সন্ধান পাচ্ছে না এবং তার কি হয়েছে তাও তারা জানে না; এর জন্যে তারা কেবল কান্নাকাটি করে ফিরছে। তুমি অমুক দিন অমুক বাগানের নিকট আসলে মাসীহর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে।’ এ কথা বলে জিবরাঈল সেখান থেকে প্রস্থান করেন।
মারয়াম তার বোনের নিকট ফিরে এসে জিবরাঈলের ব্যাপারে জানালেন এবং বাগানের বিষয়টিও বললেন। নির্দিষ্ট দিনে মারয়াম সেই বাগানের নিকট গেলে সেখানে মাসীহকে দেখতে পান। ঈসা (আ) মাকে দেখতে পেয়ে তার দিকে ছুটে আসেন, মা তাকে জড়িয়ে ধরেন, এবং তার মাথায় চুম্বন দেন। তিনি পূর্বের মত তার জন্যে দোয়া করেন। তারপর বলেন, ‘মা! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাকে হত্যা করতে পারেনি, আল্লাহ আমাকে তাঁর সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছেন এবং আপনার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি দিয়েছেন। অচিরেই আপনার মৃত্যু হবে। ধৈর্য ধরুন ও বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করুন।’ অতঃপর ঈসা ঊর্ধলোকে চলে গেলেন। এরপর মারয়ামের সাথে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ঈসার আর সাক্ষাত হয়নি। রাবী বলেন, ঈসা (আ)-এর ঊর্ধাররাহনের পরে তাঁর মা পাঁচ বছর জীবিত ছিলেন এবং তিপ্পান্ন বছর বয়সকালে তিনি ইনতিকাল করেন।
হাসান বসরী (র) বলেছেন, যে দিন হযরত ঈসা (আ)-কে আসমানে নেয়া হয় সে দিন পর্যন্ত তাঁর বয়স হয়েছিল চৌত্রিশ বছর। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে জান্নাতবাসীদের চুল ছোট হবে, দাড়ি উদ্ধৃত হয়নি তারা এমন যুবকই হবেন। তাদের চোখে সুরমা লাগানো থাকবে ও তাঁরা তেত্রিশ বছরের যুবক হবেন। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতবাসীরা ঈসা (আ)-এর সমবয়সের হবেন এবং ইউসুফ (আ)-এর সৌন্দর্যমণ্ডিত চেহারা লাভ করবেন। হাম্মাদ ইবন সালমা .. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ)-কে যখন আসমানে তুলে নেয়া হয় তখন তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর।
হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে এবং ইয়াকূব ইবন সুফিয়ান ফাসাবী তার ইতিহাস গ্রন্থে ইবন আবি মারয়ামের সূত্রে …... আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমাকে ফাতিমা (রা) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে জানিয়েছেনঃ একজন নবীর পরে যদি আর এক জন নবীর আবির্ভাব হয় তবে পরবর্তী নবীর বয়স পূর্ববর্তী নবীর বয়সের অর্ধেক হয়। নবী (সা) আমাকে আরও বলেছেন যে, ঈসা ইবন মারয়াম একশ বিশ বছর জীবিত ছিলেন। সুতরাং আমি দেখছি, ষাট বছরের মাথায় আমার মৃত্যু হবে। ফাসাবীর বর্ণিত এ হাদীসের সনদ গরীব পর্যায়ের।
ইবন আসাকির বলেন, বিশুদ্ধ মত এই যে, ঈসা (আ) ঐ পরিমাণ বয়স পাননি। এর দ্বারা তাঁর উম্মতের মধ্যে তাঁর অবস্থানকাল বুঝানোই উদ্দেশ্য। যেমন সুফিয়ান ইবন উয়ায়না .. ইয়াহয়া ইবন জা’দা থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ফাতিমা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাকে জানিয়েছেনঃ ঈসা ইবন মারয়াম তার সম্প্রদায়ের মধ্যে চল্লিশ বছর অবস্থান করেছিলেন।
এ হাদীসের সনদ বিচ্ছিন্ন। জারীর ও ছাওরী আমাশের মাধ্যমে ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেনঃ ঈসা (আ) তার সম্প্রদায়ের মধ্যে চল্লিশ বছর অবস্থান করেছিলেন। আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিতঃ হযরত ঈসা (আ)-কে রমযান মাসের বাইশ তারিখের রাত্রে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। হযরত আলী (রা)-ও শত্রুদের বর্শার আঘাত পাওয়ার পাঁচ দিন পর রমযানের বাইশ তারিখ রাত্রে ইনতিকাল করেন।
যাহ্হাক (র) ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ঈসা (আ)-কে যখন আসমানে তুলে নেয়া হয় তখন এক খণ্ড মেঘ তার নিকটবর্তী হয়। তিনি এর উপর বসেন। মা মারয়াম সেখানে উপস্থিত হন। পুত্রকে বিদায় জানান ও কান্নাকাটি করেন। তারপরে তাকে তুলে নেয়া হয়। মারয়াম তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখতে থাকেন। ঊর্ধে উঠার সময় ঈসা (আ) তার মাকে নিজের চাদরখানা দিয়ে যান এবং বলেন, এইটি হবে কিয়ামতের দিনে আমার ও আপনার মধ্যে পরিচয়ের উপায়। শিষ্য শামউনের উদ্দেশ্যে তিনি নিজের পাগড়ীটি নিক্ষেপ করেন। ঈসা যখন উপরের দিকে উঠতে থাকেন তখন মা মারয়াম হাতের আঙ্গুল উঠিয়ে ইংগিতে তাঁকে বিদায় জানাতে থাকেন। যতক্ষণ না তিনি চোখের আড়ালে চলে যান। মারয়াম ঈসাকে অত্যধিক স্নেহ করতেন। কেননা, পিতা না থাকার কারণে ঈসা পিতামাতা উভয়ের ভালবাসা মাকেই দিতেন। সফরে হোক কিংবা বাড়িতে হোক মারয়াম ঈসাকে সর্বদা কাছে রাখতেন, মুহূর্তের জন্যেও দূরে যেতে দিতেন না। জনৈক কবি বলেছেনঃ
وكنت ارى كالموت من بين ساعة - فكيف ببين کان موعده الحشر .
—এক মুহূর্তের বিরহ যেখানে আমার নিকট মৃত্যু যন্ত্রণার ন্যায় কঠিন, সেখানে রোজ হাশর পর্যন্ত দীর্ঘ বিরহ ব্যথা আমি কিভাবে সইব?
ইসহাক ইবন বিশর মুজাহিদ ইবন জুবায়র (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, ইয়াহুদীরা মসীহরুপী যেই ব্যক্তিকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল তাকে তারা আসল মসীহ্ বলেই বিশ্বাস করত। অধিকাংশ নাসারা মূর্খতাবশত এই বিশ্বাসেরই সমর্থক ছিল। এরপর তারা মাসীহর শিষ্য সমর্থকদের উপর ধর-পাকড়, হত্যা ও নির্যাতন আরম্ভ করে। এ সংবাদ রোম অধিপতি ও তদানিন্তন দামিশকের বাদশাহর নিকট পৌঁছে। বাদশাহকে জানানো হয় যে, ইয়াহুদীরা এমন এক ব্যক্তির শিষ্য সমর্থকদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করে, সে মৃত্যকে জীবিত করে, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে এবং আরো অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটায়। ইয়াহুদীরা তার উপর চড়াও হয় এবং তাকে হত্যা করে। তাঁর শিষ্য ও অনুসারীদেরকে লাঞ্ছিত করে ও বন্দী করে রাখে। এ সব কথা শুনে বাদশাহ্ উক্ত নবীর কতিপয় অনুসারীকে তাঁর নিকট আনার জন্যে দূত প্রেরণ করেন।
বাদশাহর দূত কয়েকজন অনুসারীকে সেখানে নিয়ে আসে। এদের মধ্যে ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়্যা এবং শামউন সহ বেশ কিছুলোক ছিলেন। বাদশাহ তাদের নিকট মাসীহর কার্যাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা বিস্তারিতভাবে মাসীহ্ এর কাজকর্ম সম্পর্কে বাদশাহকে অবগত করেন। সবকিছু শুনে বাদশাহ তাদের নিকট মাসীহ্ এর দ্বীন গ্রহণ করেন। তাদের দীনের দাওয়াতের প্রসার ঘটান। এভাবে ইয়াহুদীদের উপরে সত্য বিজয় লাভ করে এবং নাসারাদের বাণী তাদের উপর শ্রেষ্ঠত্বের সম্মানে ভূষিত হয়। অতঃপর বাদশাহ ক্রুশবিদ্ধ লাশের কাছে লোক প্রেরণ করেন। শূল কাষ্ঠ থেকে লাশ নামানো হয় এবং ক্রুশ-ফলকটি নিয়ে আসা হয়। বাদশাহ ক্রুশ ফলককে সম্মান প্রদর্শন করেন। তখন থেকে নাসারা সম্প্রদায় ক্রুশচিহ্নকে সম্মান করতে শুরু করে। এ ঘটনার পর থেকে নাসারা (খ্রষ্টান) ধর্ম রোম সাম্রাজ্যে প্রসার লাভ করে। কিন্তু কয়েকটি কারণে এই বর্ণনাটি সংশয়মুক্ত নয়।
একঃ ইয়াহয়া ইবন যাকারিয়্যা (আ) নবী ছিলেন। ঈসা (আ)-কে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে, এ কথা তিনি স্বীকার করতেন না। কেননা তিনি ছিলেন মা’সুম নবী। ঈসা (আ)-কে নিরাপদ হেফাজতে নেয়া হয়েছে এই সত্যে তিনি বিশ্বাস করতেন।
দুইঃ মাসীহ এর আগমনের তিনশ’ বছর পর রোম সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রবেশ করে, তার পূর্বে নয়। এটাই ঐতিহাসিক সত্য। কেননা রোমে খ্রীষ্টান ধর্ম প্রবেশ করেছিল কুসতুনতীন ইবন কুসতুন-এর শাসনামলে, যিনি ছিলেন কনষ্টানটিনোপল তথা ইস্তাম্বুল শহরের প্রতিষ্ঠাতা। এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।
তিনঃ ইয়াহুদীরা ঐ ব্যক্তিকে শূলে চড়ানোর পর সেই স্থানটিকে একটি ঘৃণিত স্থান হিসেবে ফেলে রাখে। সেখানে তারা ময়লা-আবর্জনা ও মৃত জীবজন্তু নিক্ষেপ করত। সম্রাট কনস্টানটাইনের আমল পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে।
অতঃপর সম্রাট কনস্টানটাইনে মা হায়লানা আল হার্রানিয়া আল-ফুনদুকানিয়া উক্ত ক্রুশবিদ্ধ লোকটিকে মাসীহ্ বলে বিশ্বাস করেন এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন। তিনি সেখানে লোক প্রেরণ করেন। তারা ক্রুশের শূল দণ্ডটি খুঁজে পায়। কথিত আছে, উক্ত শূলদণ্ড যেই কোন রোগী স্পর্শ করলে আরোগ্য লাভ করত। আল্লাহই ভাল জানেন ঘটনা এই রকম হয়েছিল কিনা? কেননা যেই ব্যক্তি শূলে জীবন দিয়ে আত্মোৎসর্গ করেছিল সে একজন নেককার লোক ছিল অথবা হতে পারে এটা সেই যুগের খ্রীষ্টদের জন্যে একটি ফিৎনা বিশেষ। যে কারণে তারা উক্ত দণ্ডকে সম্মান করত এবং স্বর্ণ ও মুক্তা দ্বারা তাকে মুড়িয়ে রেখেছিল। এখান থেকে তারা বরকত ও কল্যাণের প্রতীক হিসেবে ক্রুশটিকে ব্যবহার করা আরম্ভ করে।
এরপর সম্রাটের মা হায়লানার নির্দেশে ঐ স্থানের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করে যেখানে উন্নত মানের পাথর দ্বারা একটি সুশোভিত গীর্জা নির্মাণ করা হয়। বর্তমান কালে যা বায়তুল মুকাদ্দাস শহর নামে খ্যাত। এই শহরটির অপর নাম কুমামা (কুমামা অর্থ আবর্জনা, যেহেতু পূর্বে এখানে আবর্জনা ছিল)। খৃষ্টানরা একে কিয়ামাহ্ও বলে। কেননা, কিয়ামতের দিন এই স্থান থেকে মাসীর দেহ পুনরুত্থিত হবে বলে তাদের বিশ্বাস। সম্রাট জননী হায়লানা অতঃপর নির্দেশ দেন যে, এখন থেকে এই শহরের সমস্ত ময়লা আবর্জনা ও পঁচা-গলা ইয়াহুদীদের কিবলা হিসেবে পরিচিত বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত শুভ্র পাথর (সাখরা)-এর উপর ফেলতে হবে। নির্দেশ মতে সমস্ত আবর্জনা সেখানেই নিক্ষেপ করা অব্যাহত থাকে। অবশেষে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করেন। তিনি স্বয়ং সেখানে গমন করে নিজের চাদর দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাস ঝাড়ু দেন এবং সকল নাপাকী ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেন। অবশ্য তিনি ইয়াহুদীদের কিবলা হিসেবে রক্ষিত পাথরের পেছনে মসজিদের প্রতিষ্ঠা করেন নি বরং তার সামনের দিকে রেখেছেন— যেখানে রাসূল (সা) ইসরার রাত্রে নবীদের সাথে সালাত আদায় করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/489/29
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।